রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ভাড়া বাড়াতে চান বাসমালিকরা

আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ০৭:২৫ এএম

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সড়কপথে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনের ভাড়া বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। গত রবিবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলমের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এই আবেদন করা হয়। দেশ রূপান্তরের হাতে আসা ওই চিঠিতে বলা হয়, বাস, মিনিবাস, ট্রাক, পিকআপ, মিনি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং প্রাইমমুভারসহ (পণ্যবাহী পরিবহন) সব ধরনের যানবাহনের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ৬ আগস্ট ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ৮০ থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে সময় শুধু ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ভিত্তিতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস এবং মিনিবাসের ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ২.২০ টাকা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া যথাক্রমে ২.৪০ টাকা ও ২.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে, ওই সময় গাড়ির টায়ার-টিউব, লুব্রিকেন্ট, ব্রেকসু এবং অন্যান্য খুচরা যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া, ট্রাক, পিকআপ, মিনি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইমমুভারের (পণ্যবাহী পরিবহন) ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা না থাকায় এসব যানবাহনের ভাড়া সমন্বয় বা বৃদ্ধি করা হয়নি।

সমিতির দাবি, ডলারের দাম এক বছরের ব্যবধানে ৮৪ থেকে ১২১ টাকায় উন্নীত হওয়ায় পরিবহন খাতে ব্যবহৃত আমদানি করা যন্ত্রাংশের দাম প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে। এর মধ্যে টায়ার-টিউব, লুব্রিকেন্ট, ইঞ্জিনের যন্ত্রপাতি, ব্রেকসুসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। ফলে পরিবহন মালিকরা ব্যবসা পরিচালনায় ক্রমবর্ধমান আর্থিক চাপের মুখে পড়ছেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এ বিষয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র পাঠানো হয়েছিল; কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই মালিক সমিতি যৌক্তিক হারে ভাড়া পুনর্নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি জোরালো অনুরোধ জানিয়েছে।

গত রবিবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে মালিক সমিতি ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি উপস্থাপন করে। তারা জানায়, ডলারের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি করা যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধি এবং পরিচালনব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারা সংশোধনের প্রস্তাবও বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। সমিতির দাবি, বর্তমান ভাড়ার হারে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন।

বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী সভাপতি এম এ বাতেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ানো এবং পরিবহনের যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমরা ইতিমধ্যেই ব্যাপক চাপের মধ্যে আছি। এর মধ্যে আবার নতুন বাজেটে পরিবহন খাতে বাড়তি ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাব করা হচ্ছে। আমরা ভাড়া বাড়াতে চাই না, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব খরচ সমন্বয় না করলে আমাদের লোকসান আরও বাড়বে।’

সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, ডলারের দাম বাড়ানো, আমদানি করা যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধি এবং ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে মালিকদের ব্যবসা পরিচালনা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া, বাজেটে নতুন ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাব তাদের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কেউ কেউ বলছেন, বাসের সেবার মান বাড়ানোর আগে ভাড়া বৃদ্ধি যৌক্তিক নয়।

এই পরিস্থিতিতে সরকার, পরিবহন মালিক সমিতি এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতির মধ্যে একটি সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। ভাড়া পুনর্নির্ধারণের পাশাপাশি বাসের সেবার মান উন্নত করা এবং পরিবহন খাতে স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। এতে করে মালিক ও যাত্রী উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ভাড়া বৃদ্ধির আবেদন এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিক্রিয়া পরিবহন খাতের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো সামনে নিয়ে এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে পরিবহন খাতে স্থিতিশীলতা এবং যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব।

বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঢাকার সড়কে চলাচলকারী বেশিরভাগ বাসের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এসব লক্কড়ঝক্কড় বাসে যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তিনি মনে করেন, এ ধরনের বাস অপসারণ না করে ভাড়া বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

দূরপাল্লার কিছু বাসের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি প্রস্তাব দেন, নতুন ও মানসম্পন্ন বাস নামানো হলে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত