বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঝুঁকিতে সৈকত

আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ০৭:৪২ এএম

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি কেটে একটি কৃত্রিম খাল তৈরি করেছে দুটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। প্রাকৃতিকভাবে পানি চলাচলের স্বাভাবিক পথ বন্ধ করে সমুদ্রধারের বিচ প্যাসেফিক ও ডিভাইন ইকো রিসোর্ট নামের দুটি প্রতিষ্ঠান ওই বাঁধ তৈরির পর কৃত্রিম খালটি খনন করেছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে সৈকত দ্বিখন্ডিত হওয়ার পাশাপাশি সৈকত জুড়ে গর্ত ও গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়েছে; যা পর্যটকদের নিরাপদ সমুদ¯স্নানে ঝুঁকি তৈরি করছে। কৃত্রিম খাল দিয়ে নামা হোটেল-মোটেল জোনের ময়লাযুক্ত পানি দূষিত করছে পানি ও পরিবেশ। এ ছাড়া বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সৈকত দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

গতকাল সোমবার দুপুরে খালটি নিয়ে কথা হয় পর্যটনসংশ্লিষ্ট কয়েক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, হোটেল-মোটেল জোনের কিছু অংশের পানি ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পেছনের সীমানার পাশ দিয়ে

প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ছড়া দিয়ে চলাচল করত। ওই ছড়ার পানি প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের সামনে দিয়ে সাগরে গিয়ে মিশত। কিন্তু ক্যাফে মালিক পক্ষ ছড়াটি বন্ধ করে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ তৈরি করেছে। এতে ডিভাইন ইকো রিসোর্টের সামনে পানি জমে বড় ও গভীর ডোবার সৃষ্টি হয়। পরে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানার কোণ ঘেঁষে বালিয়াড়ি কেটে তৈরি করে খালটি।

ভারী বর্ষণে ঢলের পানি খালটি দিয়ে সাগরে নামছে। আবার জোয়ার-ভাটার সময় পানির তোড়ে খালটির পরিধি দিন দিন বাড়ছে। এতে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছে অবিচ্ছিন্ন সৈকত। প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফে ও ডিভাইন ইকো রিসোর্টের নিয়োগ করা শ্রমিকরা এই কৃত্রিম খালটি খনন করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানিয়েছেন, দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত স্বার্থে এমন বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এতে হোটেল-মোটেল জোনের ময়লাযুক্ত পানি প্রতিনিয়ত সাগরে মিশে যাওয়ার পাশাপাশি ভারী বর্ষণে খালটি বড় আকার ধারণ করছে। এ নিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সৈকত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পাশাপাশি সাগরের পরিবেশ দূষণ আর সৌন্দর্যহানির কবলে পড়েছে। এ ছাড়া কৃত্রিম খাল দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি প্রবাহিত হওয়ায় সমুদ্রতটে তৈরি হয়েছে স্থায়ী গর্ত ও গুপ্তখাল, যা পর্যটকদের নিরপত্তাঝুঁকি তৈরি করছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন দীপক শর্মা।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দায়িত্ব পালনকারী সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর জানিয়েছেন, সম্প্রতি বর্ষায় সৈকতের বিভিন্ন স্থানে গর্ত এবং গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়েছে। এতে সমুদ্র¯œানে যাওয়া ৮ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত বর্ষার সময় আশপাশের এলাকা থেকে নেমে আসা ঢলের পানি এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় তৈরি হয় গর্ত ও গুপ্তখালের। এমন পরিস্থিতিতে সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের মাঝামাঝি এলাকায় কৃত্রিম খালটির কারণে গর্ত ও গুপ্তখাল সৃষ্টির আশঙ্কা ব্যাপক হয়ে উঠেছে। এই খালটির কারণে সৈকতের বালিয়াড়ি জুড়ে ভাঙনের মাত্রাও বেড়েছে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের জেনারেল ম্যানজার জাবেদ ইকবাল জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনে পানি চলাচল করায় তার সামনে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙন রোধ এবং পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রাকৃতিক ছড়ায় বাঁধ তৈরি করেছেন।

তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে কেন পানি যাবে। তাই বাঁধ দিয়েছি। তবে খালটি কারা খনন করেছেন আমি জানি না।

ডিভাইন ইকো রিসোর্টের মালিক পক্ষের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সেলিম জানান, প্রাকৃতিকভাবে যে পথে পানি নেমে যেত যেখানে একটি বাঁধ তৈরি হয়েছে। এতে তাদের প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন বিকল্প পথে পানি যাচ্ছে। এটি কৃত্রিমভাবে খনন করা হলেও তারা এটার সঙ্গে জড়িত নন। কারা করেছে তাও জানেন না।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন জানান, বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব মূলত কক্সবাজার পৌরসভা ও উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের। তারপরও অবৈধ পন্থায় কেউ কিছু খোঁজ খবর নিয়ে জানালে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত