প্রায়ই দেশের সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তিতে পড়েন। কখনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের কশাঘাত, কখনো বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, আবার কখনো পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি। দীর্ঘ সময় জুড়ে এমন বাস্তবতায় তারা দিশেহারা হয়ে যান। তারা জানেন না, এ থেকে কীভাবে নিষ্কৃতি মিলবে? এমন কোনো পথের দিশা কেউ দেখান না, যাতে সাধারণ মানুষ একটু স্বস্তিতে জীবনযাপন করবে। এটাই যেন তাদের নিয়তি। প্রতিবছর বাজেট হয়। দ্রব্যমূল্য বাড়ে। বিশেষ করে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন যা প্রয়োজন। তার ওপর যখন তারা দেখেন, চলাচলের ক্ষেত্রেও তাদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে, তখন প্রচ- অসহায়ত্ব গ্রাস করে তাদের। সেই অবস্থা থেকে কবে যে নিষ্কৃতি মিলবে কেউ জানে না।
আবার নতুন করে বাসভাড়া বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, সড়কপথে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনের ভাড়া বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। সমিতির দাবি, ডলারের দাম এক বছরের ব্যবধানে ৮৪ থেকে ১২১ টাকায় উন্নীত হওয়ায় পরিবহন খাতে ব্যবহৃত আমদানি করা যন্ত্রাংশের দাম প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে। এর মধ্যে টায়ার-টিউব, লুব্রিকেন্ট, ইঞ্জিনের যন্ত্রপাতি, ব্রেকসু-সহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। ফলে পরিবহন মালিকরা ব্যবসা পরিচালনায় ক্রমবর্ধমান আর্থিক চাপের মুখে পড়ছেন। রবিবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে মালিক সমিতি ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি উপস্থাপন করে। তারা জানায়, পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু কখনো শোনা যায়নি, জনগণের কথা ভেবে তারা, সবকিছু যখন কমতে থাকে, বাসভাড়া কমিয়েছেন অন্তত নিকট অতীতে তেমন দৃষ্টান্ত নেই।
বাসমালিকরা সাধারণত জ্বালানি তেল, যন্ত্রাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বৃদ্ধির কারণে বাসভাড়া বাড়াতে চান। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এর ওপর গণপরিবহন খাতে নতুন করে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্ধিত এই করের বোঝা মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। বর্ধিত কর কার্যকর হলে যাত্রীদের ভাড়া বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এটাই সত্য হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, ডলারের দাম বাড়ানো, আমদানি করা যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধি এবং ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে মালিকদের ব্যবসা পরিচালনা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া, বাজেটে নতুন ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাব তাদের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কেউ কেউ বলছেন, বাসের সেবার মান বাড়ানোর আগে ভাড়া বৃদ্ধি যৌক্তিক নয়। এনবিআর বলছে, ‘এই কর সমন্বয়ের সুযোগ আছে। পরিবহন-মালিকরা প্রতিবছর যে বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেন তার সঙ্গে তা সমন্বয় করা যাবে। কাজেই তাদের ওপর বাড়তি করের চাপ আসবে না। ভাড়া বাড়ানোর কথা নয়।’
তারপরও এমন পরিস্থিতিতে সরকার, পরিবহন মালিক সমিতি এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতির মধ্যে একটি সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। ভাড়া পুনর্নির্ধারণের পাশাপাশি বাসের সেবার মান উন্নত করা এবং পরিবহন খাতে স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। এতে করে মালিক ও যাত্রী উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবে। সবার প্রথমে ভাবা উচিত, দেশের সাধারণ মানুষের কথা। যদি তারাই সুস্থমতো না বাঁচেন, তাহলে সমাজে কোনোভাবেই স্থিরতা আসবে না। তখন অস্থিরতা আরও বাড়বে। যে কারণে, কোনো সমস্যাকে জটিল হিসেবে বিবেচনার সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, সমস্যার আগেই সমাধান লুকিয়ে থাকে। শুধু ঠা-া মাথায় তাকে খুঁজে নিতে হয়। অযথা জনগণকে হয়রানির মধ্যে ফেলে, একচেটিয়া লাভের কথা চিন্তা করলে, চূড়ান্ত বিবেচনায় কোনো লাভ হবে না। অবশ্যই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে যাতে কোনো পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বাস মালিক সমিতিকে বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করতে হবে। অবশ্যই তারা ব্যবসা টিকিয়ে রেখেই একটি সুন্দর সমাধানে যেতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।