ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে ছিল চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তান। সে হামলার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। এবার পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত তিনজনের সবাই পাকিস্তানি নাগরিক বলে দাবি করেছেন ভারতীয় তদন্তকারীরা।
তারা আরও বলেছেন, তিনজনই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়্যেবার সদস্য। হামলাকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে দুজন স্থানীয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এমন দাবি করেছে। মামলাটির তদন্ত করছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ।
এর আগে পুলিশ তিনজন সন্দেহভাজনের স্কেচ প্রকাশ করেছিল। তখন তারা বলেছিল, তিন সন্দেহভাজনের দুজন পাকিস্তানি নাগরিক এবং একজন স্থানীয় বাসিন্দা। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের তিনজনই পাকিস্তানি নাগরিক বলে ভারত যে দাবি করেছে, তা নিয়ে পাকিস্তান এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এর আগে পাকিস্তান পেহেলগামে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।
বৈসরণ নামের একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকায় এই হামলা হয়েছিল। এ হামলার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছিল, যা দুই দেশকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধে জড়িয়েছে। দুই দেশই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করলেও অঞ্চলটিকে ভাগাভাগি করে নিয়ন্ত্রণ করে তারা।
নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালায়। এ সময় কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। তবে তিন হামলাকারীর কেউই এখনো ধরা পড়েনি। এক বিবৃতিতে এনআইএ বলেছে, হামলাকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা গত ২২ এপ্রিলের হামলার আগে জেনেশুনেই তিন সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে একটি ঝুপড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তবে কখন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানানো হয়নি। আটক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। লস্কর-ই-তাইয়্যেবার প্রক্সি শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ শুরুতে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তা প্রত্যাখ্যান করে।
হামলার কয়েক দিনের মধ্যে ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে। এটি হলো পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিন ধরে চলা পানিবণ্টন চুক্তি। এর জবাবে ইসলামাবাদ ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি থেকে সরে যায়। দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে মতবিরোধ সমাধানের লক্ষ্যে চুক্তিটি হয়েছিল।
এরপর গত ৭ মে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। পরে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘাত চলতে থাকে।
এনআইএ শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, পেহেলগামে হামলায় জড়িত তিনজনই বিদেশি। হামলার পর কাশ্মীরজুড়ে ব্যাপক তল্লাশি ও আটক অভিযান চালানো হলেও এখন পর্যন্ত জঙ্গিরা ধরা পড়েনি। তবে এনআইএর নতুন দাবির বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি পাকিস্তান। তবে আগেই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল দেশটি।