সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো গুগল পে

আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ১১:৩৪ পিএম

দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো গুগলের ডিজিটাল সেবা-গুগল ওয়ালেট, যা সাধারণভাবে ‘গুগল পে’ নামে পরিচিত। গুগল, মাস্টারকার্ড ও ভিসার সহযোগিতায় সিটি ব্যাংক পিএলসি এই ডিজিটাল লেনদেন সেবা চালু করল। এখন থেকে সিটি ব্যাংকের গ্রাহকরা তাদের মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ডটি গুগল ওয়ালেট-এ সংযুক্ত করে ‘গুগল পে’ ব্যবহার করে দ্রুত, নিরাপদ এবং স্পর্শবিহীন পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারবেন।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত গুগল পে-এর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বিশেষ অতিথি হিসেবে সেখানে ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) ট্র্যাসি অ্যান জ্যাকবসন ও সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হোসেন খালেদ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন, গুগল পেমেন্টস-এর গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজার শাম্মী কুদ্দুস, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, ভিসা বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সাব্বির আহম্মেদসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সিটি ব্যাংক বলছে, এই সেবার গ্রাহকরা এখন থেকে দেশে কিংবা বিদেশে এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) লেনদেন করতে সক্ষম এমন পস টার্মিনালে শুধুমাত্র তাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোন স্পর্শ করেই সহজে এবং ঝামেলাহীনভাবে লেনদেন শেষ করতে পারবেন। গুগল পে-তে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত এনক্রিপসন প্রযুক্তি, যা গ্রাহকের তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এর মধ্য দিয়ে গ্রাহকের হাতে থাকা স্মার্টফোনই হয়ে উঠবে তার ‘ডিজিটাল ওয়ালেট’, ফলে গ্রাহককে আর আলাদা করে কোনো প্লাস্টিক কার্ড বহন করা লাগবে না। আকাশ পথে যাতায়াত থেকে শুরু করে কেনাকাটা কিংবা সিনেমা, সবকিছুতেই মোবাইল ফোনেই হবে লেনদেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের মুদ্রার মান দেশীয়ভাবে নির্ধারিত হবে এবং কোনো অযৌক্তিক কারণে এক পয়সাও অবমূল্যায়নের সুযোগ নেই। দুবাই থেকে আমাদের টাকার মান নির্ণয় হবে না। এটা আগেও বলেছিলাম এখনো বলছি। সেখান থেকে ডলারের দর নির্ধারণ করবেন এটা মানা হবে না, এটা আমার প্রতিশ্রুতি ছিল। সেটা হতে দেইনি আমরা। তবে ফের যদি দেশে বিশৃঙ্খলা হয় তাহলে আবারও চলে আসবে ওই সময়, নষ্ট হয়ে যাবে সব। দুবাইয়ে বসে আবারও টাকার অবমূল্যায়ন হবে, বাজার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে অন্যের হাতে।

গভর্নর আরও জানান, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই এখন প্রধান লক্ষ্য। এজন্য আগামী জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেজড সুপারভিশন) কার্যক্রম শুরু হবে। এরই মধ্যে ২০টি ব্যাংকে সুপারভিশন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও কিছু সময় লাগবে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ আসবে, বকেয়া পরিশোধ করেছি। দেশি-বিদেশিদের বিচরণ ক্ষেত্র হবে বাংলাদেশ। তবে ভুল উপস্থাপন করা যাবে না। বিদেশিরা টেকনোলজি আনেন, সাপোর্ট দেন তারা। আমাদের পোর্ট নিয়ে তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন হয়েছে। যদি বিদেশিরা আমাদের পোর্ট পরিচালনা করেন তাহলে আগামী ১০ বছর পরে আমরা তাদের টেকনোলজি শিখে অন্য দেশের পোর্ট পরিচালনা করতে পারব।

আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার বিষয়ে তিনি জানান, কয়েকটি ব্যাংক মার্জারের আওতায় আসবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তিনি আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, আপনাদের স্বার্থ সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকবে। যে ব্যাংকে আছেন, সেখানেই থাকুন।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব বাংলাদেশের ভবিষ্যৎমুখী ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গঠনের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন। এই উদ্ভাবনী সেবা আমাদের গ্রাহকদের জন্য নিয়ে আসতে পেরে আমরা গর্বিত।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত