২০২১ সালে শেষবার নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে খেলেছিল বাংলাদেশ। উজবেকিস্তানে সেই বাছাইয়ের গ্রুপের দুই ম্যাচেই বাংলাদেশকে পেতে হয়েছিল বড় হারের তেতো স্বাদ। প্রথমে জর্ডান ও পরে ইরানের কাছের ব্যবধান একই ৫-০। সেই দুঃস্মৃতি ভুলতে গত রাতে মিয়ানমার রওনা হয়েছে বাংলাদেশ। হ্যাঁ, এই বাংলাদেশকে চার বছর আগের বাংলাদেশের সঙ্গে মেলানো যাবে না। এই চার বছরে বাংলাদেশ দুবার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়েছে। র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে শিখেছে। তাই আরেকটি সিংহের খাঁচায় প্রবেশের আগে বাংলাদেশের মেয়েরা দিচ্ছেন লড়াইয়ের প্রত্যয়।
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশের অভিযান শুরু হবে ২৯ জুন। স্বাগতিক মিয়ানমার ছাড়াও সি গ্রুপে অপর দুই দল বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তান। র্যাংকিংয়ের হিসেবে মিয়ানমার এই গ্রুপের ফেভারিট। এর পরেই আছে বাহরাইন। তবে তুর্কমেনিস্তান আছে বাংলাদেশের নিচে। তো, এই গ্রুপের সেরা হতে হলে প্রথম দুই ম্যাচেই এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষদের হারাতে হবে বাংলাদেশকে। ২৯ জুন বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ৩৫ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনের বিপক্ষে। এরপর ২ জুলাই স্বাগতিক মিয়ানমারের কাছে পরীক্ষা দিতে হবে যারা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ৭৩ ধাপ। ৫ জুলাই গ্রুপের শেষ ম্যাচে র্যাংকিংয়ে ১৩ ধাপ পেছানো তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে খেলবে পিটার বাটলারের শিষ্যরা।
তৃতীয়বারের মতো এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালের আগে তারা ২০১৩ সালে বাছাই খেলতে গিয়েছিল জর্ডানে। তিন ম্যাচেই যথারীতি হারতে হয়েছিল তাদের। থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ইরানের বিপক্ষে কোনো গোল করার বিপরীতে হজম করতে হয়েছিল ১৫ গোল। অর্থাৎ বাছাইয়ের পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশ কোনো গোল তো করেইনি, হজম করেছে ২৫ গোল।
এবার সেই দুঃস্মৃতি ভুলতে বাংলাদেশকে আরাধ্য গোলের দেখা পেতে হবে। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের বিশ্বাস তার শিষ্যদের কিছু একটা করার সামর্থ্য আছে, ‘আমার মনে হয় আত্মবিশ্বাস আর অহংকারের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম মিল আছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে কিছুটা আগ্রাসী মনোভাব থাকা ভালো, যতক্ষণ না সেটা সীমা ছাড়িয়ে যায়। আর কোচ হিসেবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করাই আমার কাজ। এই তিন ম্যাচে আমরা আন্ডারডগ হিসেবে খেলব। আমি বিশ্বাস করি যদি সবাই নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেয় তাহলে আমাদের সুযোগ থাকবে। অনেক তরুণ খেলোয়াড় এসেছে, যাদের সময় দিলে দলকে এমন জায়গায় শক্তিশালী করবে, যেখানে আমরা তুলনামূলক দুর্বল। আমাদের সেটা পুষিয়ে নিতে হবে শক্তি দিয়ে, কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। সবচেয়ে জরুরি হলো একটা পরিকল্পনা নিয়ে খেলা যাতে প্রতিপক্ষের সমস্যা হয়।’
বাটলারের এই দলে তারুণ্যের জয়জয়কার। অভিজ্ঞ সাবিনা খাতুন, মাসুরা পারভীন, সানজিদা, কৃষ্ণারানীদের কোচ ছিটকে দিয়ে আস্থা রাখছেন তারুণ্যে, ‘সবচেয়ে বড় কথা, যখন আপনি তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দেবেন, সেটা তাদের উড়তে শেখাবে। আপনি যদি তাদের ডানা চেপে ধরেন, তারা কখনো উড়তে শিখবে না। তারা সবাই শেখার পথে আছে। এটা একটা যাত্রা। আর বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের জন্য এটা সত্যিই রোমাঞ্চকর একটি যাত্রা। হয়তো কেউ কেউ একমত হবেন না, কিন্তু আমি এটাই বিশ্বাস করি।’
মিয়ানমারের বিপক্ষে বাংলাদেশের অতীত পরিসংখ্যান ভালো নয়। বাহরাইনও শক্তিতে অনেক এগিয়ে। বাটলার বলেন, ‘আমি অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। ২০২৪ সালের সাফ জয়ের অভিজ্ঞতা ছিল দুর্দান্ত। তবে এখন আমরা বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলব। এটা ‘সিংহের গুহা’-তে ঢোকার মতো। আমাদের নিজেদের মেলে ধরতে হবে। আমরা ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে পারফর্ম করেছি কিন্তু ওগুলো ইতিহাস। এখন সামনে তাকাতে হবে। বাহরাইনের খেলা বিশ্লেষণ করেছি। তারা সরাসরি খেলে, শারীরিকভাবে শক্তিশালী, গভীর থেকে ডিফেন্স করে। তারপরও ২৯ জুন ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত আপনি নিশ্চিত করে এই ম্যাচ নিয়ে কোনো অনুমান করতে পারবেন না।’
আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত আসরের টিকিট পেতে হলে বাংলাদেশকে হতে হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ অধিনায়ক আফিদা খন্দকারের বিশ্বাস কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ খেলবে চূড়ান্ত পর্বে, ‘অবশ্যই আমরা স্বপ্ন দেখি কোয়ালিফাই করার, ফাইনাল পর্বে খেলার। মিয়ানমারে গিয়ে আমরা যেন কোয়ালিফাই করতে পারি। বাহরাইন, তুর্কমেনিস্তান, মিয়ানমারের সঙ্গে খেলব, লড়াই করব। ইনশাল্লাহ লড়াই করে যাতে আমরা অস্ট্রেলিয়া যেতে পারি।’