বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

হাদিস বর্ণনায় শীর্ষে যে সাহাবি

আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৫:৫৯ এএম

আবু হুরায়রা (রা.) একনিষ্ঠ জ্ঞানপিপাসু সাহাবি ছিলেন। তিনি কঠোর সাধনায় পরিণত হয়েছিলেন হাদিস শাস্ত্রের সম্রাট হিসেবে। রাসুল (সা.)-এর সাহাবিদের মধ্যে তিনিই হাদিস বর্ণনায় শীর্ষস্থানে রয়েছেন। তার বর্ণনাকৃত হাদিসের সংখ্যা ৫ হাজার ৩৭৪টি। শুধু সহিহ বোখারিতে তার সনদে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৪৪৮টি আর সহিহ মুসলিমে ৫৪৫টি। আবু হুরায়রা (রা.) অষ্টম হিজরির শেষের দিকে ইসলাম গ্রহণ করেন।

তিনি ইসলামের টানে মাতৃভূমি ইয়েমেন ছেড়ে মদিনায় চলে আসেন। পরিবারের একমাত্র সদস্য ছিলেন তার মা। মায়ের প্রতি তার ভক্তি, ভালোবাসা ও টান ছিল অন্যরকম। আবু হুরায়রা (রা.) দিন-রাত রাসুল (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা আসহাবে সুফফায় পড়ে থাকতেন। ইলম অর্জন করতেন। তখনো তার মা ইসলাম গ্রহণ করেননি। এটা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমার মাকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানাতাম। তিনি মুশরিকা ছিলেন। একদিন আমি তাকে ইসলাম কবুলের জন্য আহ্বান জানালাম। তখন তিনি রাসুল (সা.) সম্পর্কে আমাকে এমন কথা শোনালেন, যা আমার কাছে খুবই অপ্রিয় ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসুল (সা.)-এর কাছে আসলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি মাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আসছিলাম আর তিনি অস্বীকার করে আসছিলেন। এরপর তাকে আজ দাওয়াত দেওয়াতে তিনি আমাকে আপনার সম্পর্কে এমন কথা শোনালেন, তা আমি পছন্দ করি না। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন তিনি যেন আবু হুরায়রার মাকে হেদায়েত দান করেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আবু হুরায়রার মাকে হেদায়েত দান করো।’

আবু হুরায়রা বলেন, তার দোয়ার কারণে আমি খুশিমনে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি ঘরের দরজায় পৌঁছলাম, তখন তা বন্ধ দেখতে পেলাম। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে বললেন, আবু হুরায়রা একটু দাঁড়াও। তখন আমি পানির কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বললেন, এরপর আমার মা গোসল করলেন এবং গায়ে চাদর পরলেন আর তড়িঘড়ি করে ওড়না জড়িয়ে নিলেন। এরপর ঘরের দরজা খুলে দিলেন। এরপর বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসুল। (সহিহ মুসলিম)

ইসলাম গ্রহণের আগে আবু হুরায়রা (রা.)-এর নাম ছিল আবদে শামস। ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল (সা.) তার নাম দেন আবদুর রহমান। তার উপনাম আবু হুরায়রা তথা বিড়ালওয়ালা বা বিড়ালের মালিক। তিনি এ নামেই বিশ্বের মুসলমানদের কাছে পরিচিত। ইমাম তিরমিজি (রহ.) আবদুল্লাহ ইবনে রাফে (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি ‘আবু হুরায়রা’ উপনামে কেন ভূষিত হলেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, একদা তিনি বিড়ালের একটি বাচ্চা জামার হাতার মধ্যে রাখলেন। রাসুল (সা.) তা দেখে বললেন, ‘আবু হুরায়রা’ (বিড়ালওয়ালা)। এরপর তিনি এ নামে প্রসিদ্ধ হয়ে যান। (আল-ইসাবাহ)

আবু হুরায়রা (রা.) অষ্টম হিজরির শেষদিকে ইসলাম গ্রহণ করেও ইলমের ময়দানে অনেক ঊর্ধ্বে পৌঁছে যান। অথচ রাসুল (সা.)-এর স্নেহধন্য অসংখ্য সাহাবি ছিলেন।

এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রা.)-এর বর্ণনা রয়েছে। তিনি বলেন, মানুষজন বলে যে, আবু হুরায়রা বেশি হাদিস বর্ণনা করে থাকেন। তারা আরও বলেন, মুহাজির ও আনসার সাহবিদের কী হলো যে, তারা আবু হুরায়রার মতো এত হাদিস বর্ণনা করে না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমার মুহাজির ভাইদের বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আনসার ভাইদের তাদের ক্ষেত-খামার ও বাগানের কাজকর্ম ব্যতিব্যস্ত রাখত। আমি ছিলাম একজন মিসকিন লোক। পেটে যা জুটত, খেয়ে না খেয়ে তাতেই তুষ্ট হয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর দরবারে পড়ে থাকতাম। তাই লোকেরা যখন অনুপস্থিত থাকত, আমি হাজির থাকতাম। লোকেরা যা ভুলে যেত, আমি তা স্মরণ রাখতাম।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত