বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

এসএমই খাতের উন্নয়নে বাজেট ও নীতি সহায়তা

আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩০ এএম

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উন্নয়নে বাজেটে নীতি সহায়তা দিচ্ছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানেও এসএমই খাত বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অর্থনীতিবিদ কে এ এস মুরশিদের নেতৃত্বে যে টাস্কফোর্স প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছিল, সেখানেও এসএমই ও সিএসএমই খাতের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

গত ২ জুন টেলিভিশন ভাষণে বাজেট উত্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক্কলন অনুযায়ী বাংলাদেশের জিডিপিতে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএসএমই) অবদান প্রায় ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সম্ভাবনাময় এ খাতের বিকাশে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে এ খাতের বিকাশে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, ২৫ হাজার উদ্যোক্তাকে দক্ষতামূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান, বিভাগীয় শহরে এসএমই প্রোডাক্ট ডিসপ্লে ও সেলস সেন্টার স্থাপন, জেলা শহরে আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন, সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ প্রতিষ্ঠা, নারী উদ্যোক্তাসহ প্রান্তিক পর্যায়ের সিএমএসএমই খাতের ১০ হাজার উদ্যোক্তার মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৩ হাজার নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে করপোরেট ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

বাজেটে এই পদক্ষেপের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন নীতি দলিলেও এসএমই ও এমএসএমই (ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি) খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের গোড়ার দিকে প্রণীত টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে একটি অধ্যায় রাখা হয়েছে এ খাতের ওপর। ওই প্রতিবেদনের পঞ্চম অধ্যায়ের পুরোটা জুড়ে এ খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

টাস্কফোর্স প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, এমএসএমই খাত অর্থনীতিতে সম্ভাব্য যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তার গুরুত্ব বিবেচনায় পঞ্চম অধ্যায়ে খাতটির চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিতকরণে তীক্ষè পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করা হয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত সংস্কারের সুপারিশ দেওয়া হয়। এ খাতের উন্নততর প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রয়োজন। সার্বিক বিবেচনায় এসএমই সেলকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি ‘উইং’ অথবা বিভাগ হিসেবে উন্নীত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশনের সংস্কার সাধন করে এটিতে আরও কার্যকর নেতৃত্বেও সন্নিবেশ ঘটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ফাউন্ডেশনের সামগ্রিক কার্যক্রমের ব্যাপ্তি বিবেচনায় সেখানে একটি ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ সেন্টার স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। এসএমই আইনের সঙ্গে একটি বিধিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি আইনটি আরও সহজীকরণের ওপর জোর দেওয়া এবং উদ্ভাবনী অর্থায়ন উদ্যোগের অনুসন্ধান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এসএমই খাতের পণ্য বিপণন সহজ করতে ভারতের রাজধানীতে স্থাপিত দিল্লি হাটের সফলতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এসএমই খাতের পণ্য বিক্রির জন্য পরীক্ষামূলকভাবে বছরব্যাপী রাজধানীতে ‘ঢাকা হাট’ নামক একটি বাজার স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। দক্ষতাভিত্তিক কর্মসংস্থান, প্রবৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে উদগ্রীব হওয়ার জন্য একটি আইসিটিনির্ভর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবলোপন হচ্ছে বৃহৎ এমএসএমইর একক শ্রেণিবিন্যাস থেকে চ্যালেঞ্জ, অর্থায়ন ও সম্প্রসারণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার চাহিদার প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে এমএসএমইগুলোকে ছোট এবং আরও যুক্তিসংগত বিভাগে বিভক্ত করা, যাতে এ খাতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা যায়। সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে এই অনুশীলনটি পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধানের জন্য এটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত