ইসলাম মানুষকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে। জাগিয়ে তুলেছে আত্মমর্যাদাবোধ। দেখিয়েছে আত্মনির্ভরতা ও হালাল জীবিকার পথ। ইসলাম চায় প্রতিটি মানুষ সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করুক। পরিশ্রম করুক এবং নিজের উপার্জনে গর্ববোধ করুক। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে জীবনের শুরু থেকেই কর্মমুখী ছিলেন। কখনো তিনি ব্যবসা করেছেন, আবার কখনো গবাদিপশু চরিয়েছেন। তার জীবনযাপন ও সাহাবায়ে কেরামকে দেওয়া নির্দেশনা যুগে যুগে পরিশ্রমী মুসলিম সমাজের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক আনসারি ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে কিছু সাহায্য প্রার্থনা করে। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার ঘরে কি কিছু নাই? সে বলে হ্যাঁ, একটি কম্বল আছে, যার অর্ধেক আমি পরিধান করি এবং বাকি অর্ধেক বিছিয়ে শয়ন করি। আর আছে একটি পেয়ালা, যাতে আমি পানি পান করি। তিনি বলেন, উভয় বস্তু আমার নিকট নিয়ে আস। সে তা আনয়ন করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তা স্বহস্তে ধারণপূর্বক (নিলামের ডাকের মতো) বলেন, কে এই দুটি ক্রয় করতে ইচ্ছুক? এক ব্যক্তি বলে, আমি তা এক দিরহামের বিনিময়ে গ্রহণ করতে চাই। অতঃপর তিনি বলেন, এক দিরহামের অধিক কে দেবে? তিনি দুই বা তিনবার এইরূপ উচ্চারণ করেন। তখন এক ব্যক্তি বলে, আমি তা দুই দিরহামের বিনিময়ে গ্রহণ করব। তিনি সেই ব্যক্তিকে তা প্রদান করেন এবং বিনিময়ে দুটি দিরহাম গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তা আনসারির হাতে তুলে দিয়ে বলেন, এর একটি দিরহাম দিয়ে কিছু খাদ্য ক্রয় করে তোমার পরিবার-পরিজনদের দাও। আর বাকি এক দিরহাম দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার নিকট আস। লোকটি কুঠার কিনে আনলে রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বহস্তে তাতে হাতল লাগিয়ে তার হাতে দিয়ে বলেন, এখন তুমি যাও এবং জঙ্গল হতে কাঠ কেটে এনে বিক্রি করো। আর আমি যেন তোমাকে পনেরো দিন না দেখি। অতঃপর সে চলে যায় এবং কাঠ কেটে এনে বিক্রয় করতে থাকে। অতঃপর সে (পনেরো দিন পর) আসল। সে তখন প্রাপ্ত হয়েছিল দশটি দিরহাম যা দিয়ে সে কিছু কাপড় এবং কিছু খাদ্য ক্রয় করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ভিক্ষাবৃত্তির চাইতে এটা তোমার জন্য উত্তম। কেননা ভিক্ষাবৃত্তির ফলে কেয়ামতের দিন তোমার চেহারা ক্ষত-বিক্ষত হতো। ভিক্ষা চাওয়া তিন শ্রেণির ব্যক্তি ব্যতীত অন্যদের জন্য হালাল নয়। ধুলা-মলিন নিঃস্ব ভিক্ষুকের জন্য, প্রচণ্ড ঋণের চাপে জর্জরিত ব্যক্তির জন্য এবং যার ওপর দিয়ত (রক্তপণ) আছে অথচ তা পরিশোধের অক্ষমতার কারণে নিজের জীবন বিপন্ন। এ ধরনের ব্যক্তিরা ভিক্ষা করতে পারে। (আবু দাউদ ১৬৪১) এই হাদিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শিক্ষা পাওয়া যায়।
জীবিকা উপার্জনে মনোযোগী হওয়া : প্রত্যেকটি মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো কর্মমুখী জীবনধারার প্রতি উদ্বুদ্ধ হওয়া। নিজের মেধা ও পরিশ্রমের উপার্জনকে মর্যাদার মনে করা। যুগে যুগে নবী রাসুলগণ বিভিন্ন হালাল পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, নিজ হাতে উপার্জিত জীবিকার খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। (সহিহ বুখারি ২০৭২)
আত্মসম্মান নিয়ে জীবনযাপন করা : একজন প্রকৃত মুসলিম নিজ হাতে উপার্জন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এতে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি আত্মসম্মান বজায় থাকে। পক্ষান্তরে ভিক্ষা মানুষের মর্যাদা হরণ করে। ব্যক্তিত্বকে ধ্বংস করে।
অভ্যাসগত ভিক্ষাবৃত্তি হারাম : ভিক্ষাবৃত্তি শরিয়তে কেবল নির্দিষ্ট ও জরুরি পরিস্থিতিতেই বৈধ। কিন্তু আজকাল সুস্থ স্বাভাবিক অনেক নারী-পুরুষ ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত। এই লজ্জাবোধহীনভাবে ভিক্ষাবৃত্তি স্পষ্টত হারাম। সাম্প্রতিক সময়ে সমাজে কর্মবিমুখতা ও নির্ভরশীলতার যে দুর্বৃত্তি ছড়িয়ে পড়েছে তা প্রতিরোধ করতে হলে এই হাদিসের শিক্ষা জীবনে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সেøাগান হোক, নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা, মেহনত করো সবে।