বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

আন্তর্জাতিক মহলে ধরনা

আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫৯ এএম

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়ে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছে ভোটের দাবিতে অনড় থাকা একাধিক রাজনৈতিক দল। আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে তারা। আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ বাড়াক, চায় ভোটের পক্ষে থাকা বিএনপিসহ একাধিক দল। এতে সুফলও আসতে শুরু করেছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। দেশের নির্বাচনাকাঙ্ক্ষী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের ভূমিকা বেশি আশা করছে। এ তিন দেশের সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে নতুন মাত্রায় যোগাযোগও করা হচ্ছে দলগুলোর পক্ষ থেকে।

সূত্র জানায়, বিএনপির নেতৃত্বে ছোট শক্তির একাধিক রাজনৈতিক দল প্রভাবশালী এ দেশগুলোর সঙ্গে নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে দেনদরবার শুরু করেছে। নির্বাচন ইস্যুতে দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজ করছে একাধিক রাজনৈতিক দল।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের বিষয়ে যতটা না আগ্রহী তার চেয়ে বেশি আগ্রহী সংস্কারে। তাদের সঙ্গে বিএনপি ও তাদের সঙ্গে থাকা দলগুলোর মতপার্থক্য ক্রমেই বাড়ছে।

জানা গেছে, বিএনপি ও তাদের সঙ্গে থাকা একাধিক দল নির্বাচন ইস্যুতে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টাও করছে। এজন্য দেশের ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে নির্বাচনের আবশ্যকতা নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন দলগুলোর নেতারা। তারা এ আলাপে নির্বাচন ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সুগম হবে না বলে জানাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মহলে ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির রাজনীতি শুরু করা দলগুলো বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলের নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের দাবিতে দেশেও সোচ্চার থাকতে হবে। নির্বাচনের গুরুত্ব বুঝিয়ে বিদেশিদেরও সজাগ রাখতে হবে। নির্বাচন আদায়ে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে দলগুলো।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন আদায়ে দেশি-বিদেশি চাপে সরকারকে কাবু করার বিকল্প পথ নেই। আন্তর্জাতিক চাপও অব্যাহত রাখতে হবে, দেশীয় জনমতও গড়ে তুলতে হবে। বুদ্ধিজীবী, সুশীলসমাজসহ পেশাজীবী সংগঠনগুলোর ভেতর থেকেও জোরালোভাবে নির্বাচনের দাবি তুলে আনতে হবে। চাপবিহীন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের পথে হাঁটবে না। এটি এখন দেশের সবার কাছেই পরিষ্কার। গত দশ মাসে সরকার যেভাবে গড়িমসি করে চলেছে, নির্বাচন প্রশ্নেও সরকার তাই করবে। নির্বাচন আদায়ে নানা কৌশলে এগোতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হোক, চায় আন্তর্জাতিক মহল। গত ২৬ জুন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়েছে।’ সেখানে উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সে বৈঠকে সবার আগে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে যাচ্ছে, এজন্য সবার একটা স্বস্তি ও সন্তুষ্টি আছে। বড় বড় শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ী নেতারা নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দেশ থেকে বক্তব্য-বিবৃতিও আসতে শুরু করেছে।’

গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন যত শিগগির সম্ভব বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ মর্মে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে টেলিফোন আলাপ হয়েছে বলে জানান। শিগগির বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে খুব চমৎকার পরিবেশে কথাবার্তা হয়েছে। আমি সামনে বসা ছিলাম। সংস্কার কার্যক্রমে তাদের সমর্থনের কথা বলা হয়েছে এবং যত শিগগির সম্ভব নির্বাচন করা হোক, এ কথাও তিনি (রুবিও) বলেছেন। দুপক্ষের কথাবার্তাই আন্তরিক পরিবেশে হচ্ছিল। তাদের জানানো হয়েছে যে, যত শিগগির সম্ভব নির্বাচন করা হবে।’

একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে শিগগির গণতান্ত্রিক শাসন ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। গত ২৬ জুন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন মিলার। বৈঠক শেষে আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেক কিছু অপেক্ষা করছে একটি নির্বাচিত সরকারের ওপর। তাদের কর্মকাণ্ড আগামী দিনে কী হবে, স্বল্পমেয়াদি-দীর্ঘমেয়াদি অনেক সিদ্ধান্তই আছে। এসব একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে করতেই স্বস্তিবোধ করে সবাই। এসব বিষয়ে আমাদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’

চলতি বছরের প্রথমদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রথম মন্তব্য করেন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইরিক গারসেটি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দুই দেশই যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে গণতন্ত্র দেখতে চায়। গণতন্ত্রই বাংলাদেশে নতুন অধ্যায় খুলে দিতে পারে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউআইওএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত