বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

কাপাসিয়ায় যুবকে কুপিয়ে হত্যা

আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১১:০৪ পিএম

এলাকায় মাদক কারবার, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে গাজীপুরের কাপাসিয়ার সনমানিয়া ইউনিয়নের বড়কান্দা গ্রামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার রাতে স্থানীয় আড়াল বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত জাহিদুল ইসলাম (২৮) ওই গ্রামের মৃত হারিছউদ্দিন ও সনমানিয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রোকেয়া বেগমের ছেলে।

নিহত জাহিদুলের স্ত্রী শিফা আক্তার জানান, গত শুক্রবার বিকেলে ভাত খাওয়ার পর মুন্না ও মইনুল নামে জাহিদুলের দুই বন্ধু তাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। পরে রাত ১০টার দিকে ফোনে জানতে পারেন তার স্বামীকে কারা যেন কুপিয়ে স্থানীয় আড়াল বাজারের উত্তরপাশে খাঁনবাড়ি এলাকায় ফেলে রেখেছে। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরে সেখানে নিয়ে গেলে রাত ১২টায় তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরো জানান, তার স্বামী বাড়িতে এসে এক মুহূর্তের জন্যও অবস্থান করতে পারতেন না। তার বন্ধু মইনুল, মুন্না, সৈকত ও মারুফ রাত বিরাতে যখন তখনই তাকে ফোনে করে ডেকে নিয়ে যেত। গত রমজান মাসেও তারা জাহিদুলকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। অনেক ধস্তাধস্তি করে সেখান থেকে সে প্রাণে বেঁচে আসে।

স্থানীয় দক্ষিণগাঁও গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, সনমানিয়া ইউনিয়নে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিষয়টি খুবই বেপরোয়া। এই এলাকায় মারুফ-বাবু গ্রুপ, মইনুল গ্রুপ এবং আমির হোসেন গ্রুপ নামে তিনটি গ্রুপ রয়েছে। তাদের ভয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষ সব সময় আতঙ্কে থাকে। যে কোনো সময় তারা যে কাউকে মেরে ফেলতে পারে। তাদের কোনো কাজের প্রতিবাদ এলাকার মানুষ করতে পারেন না। এমনকি স্থানীয় আড়াল পুলিশ ফাড়ির সদস্যরাও বেশ কয়েকবার তাদের হামলার শিকার হয়েছেন। তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে গত দুই মাস আগেও রাতের বেলা কুপাকুপির ঘটনায় এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছে। জাহিদুলের হত্যার ঘটনাটিও ওই গ্রুপগুলোর ভাগভাটোয়ারা ও দ্বন্দ্বের জেরেই ঘটেছে বলে অভিযোগ।

ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য তৌহিদুজ্জামান সরকার তপন জানান, রাত সাড়ে দশটার দিকে আহত জাহিদুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর আড়াল পুলিশ ফাঁড়ির দুইজন সদস্য ফাঁড়িতে ফেরার পথে বর্ণমালা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ওই মাদক কারবারী ও সন্ত্রাসীদের ধাওয়ার শিকার হয়েছেন। পরে স্থানীয় জনতা ও অপর পুলিশদের সহযোগিতায় সনমানিয়া এলাকার আব্দুল গাফফার নামে এক মাদক কারবারিকে আটক করেন। এ সময় অপর দুইজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

অপর একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি স্থানীয় জাহানারা বেগম নামে এক নারীর বাড়ি নির্মাণ কাজ থেকে আদায়কৃত চাঁদাবাজির ৫০ হাজার টাকা ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে জাহিদুলের সাথে মইনুল, মুন্না, সৈকত ও মারুফের কয়েকদিন যাবৎ বিরোধ চলছিল। এ টাকা দিতে গড়িমসি করায় তারা জাহিদুলকে গত শুক্রবার বিকেলে ডেকে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মীমাংসা না হওয়ায় রাত সাড়ে নয়টার সময় আড়াল বাজারের উত্তর পাশে নিয়ে তারা তাকে কুপিয়ে একটি পাটক্ষেতে ফেলে রাখে।

কাপাসিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, যারা হত্যা করেছে এবং যিনি নিহত হয়েছেন তারা সবাই একই চক্রের সদস্য। তারা ওই এলাকায় মাদক কারবার, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। নিজেদের মাঝে ভাগভাটোয়ারার দ্বন্দ্বে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত