বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ধনকুবেরের ক্ষমতার বাসনা

আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:১২ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি অনেক দিন ধরেই দুটি দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেশটির রাজনৈতিক দল বলতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকে মূলত এই দুটি দল-রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল খোলার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রযুক্তি ব্যবসায়ী ও বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক। তার এই ইঙ্গিতে যুক্তরাষ্ট্রে বেশ হইচই পড়েছে। এবার সেই আলোচনা আরও উস্কে দিয়েছেন মাস্ক। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ২৫০তম স্বাধীনতা দিবসে নিজের মালিকানাধীন সমাজমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস হলো দ্বিদলীয় (কেউ কেউ বলবেন একদলীয়) ব্যবস্থা থেকে স্বাধীনতা চান কি না, তা জিজ্ঞাসা করার উপযুক্ত সময়! ‘পোস্টের শেষাংশে তিনি’ ‘আমাদের কি আমেরিকা পার্টি তৈরি করা উচিত?’ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে হ্যাঁ না ভোট দেওয়ার অপশনও জুড়ে দিয়েছেন। পোস্টটি করার প্রায় ২০ ঘণ্টা পর দেখা যায় এতে ভোট দিয়েছেন ১১ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন, ‘না’ ভোট বাকি ৩৫ শতাংশের।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই নিজের অতি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে পাশে রেখেছিলেন মাস্ককে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলেছে বাস্তবতাও। ট্রাম্প প্রশাসনের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব ছেড়েছেন কিছুদিন আগে। এরপর থেকে সেই মাস্ক এখন হয়ে উঠেছেন ট্রাম্পের বড় সমালোচক, কিছু ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষও। এমনকি এক সময়ের মিত্রের সঙ্গে বাকযুদ্ধেও জড়িয়েছেন মাস্ক। অনেক দরকষাকষি, আলোচনা-সমালোচনা ও জল ঘোলা করার পর গত ৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সরকারি খরচ ও কর সংক্রান্ত ট্রাম্পের ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ পাস হয়েছে। একে অসামান্য অর্জন হিসেবে দেখছেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকরাও বলছেন, এই বিল পাসের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও নিজের নির্ধারণ করা লক্ষ্য পূরণে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন ট্রাম্প। কিন্তু মিত্র মাস্কের সঙ্গে ট্রাম্পের দূরত্ব তৈরি হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ এই বিলটিই। ট্রাম্পের ভাষায়, এই বিশাল ও অসাধারণ বিলের প্রতিবাদ জানিয়েই সরকারি কর্মদক্ষতা দপ্তর প্রধানের চাকরি থেকে ইস্তফা দেন মাস্ক। অথচ, এই মাস্ককে তিনিই ডেকে এনে এই পদে বসিয়েছিলেন। মাস্ক বলেছিলেন, এই ব্যয়বহুল অভ্যন্তরীণ খরচ বিল কংগ্রেসে পাস হলে তার একদিন পরই তিনি ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন। কথাটা খানিকটা রেখেছেন মাস্ক। গত ৩ জুলাই বিল পাস হওয়ার পরদিনই নিজের ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের বিষয়ে সরব হয়েছেন টেসলা-প্রধান। দুই প্রধান রাজনৈতিক দল তথা ডেমোক্রটিক ও রিপাবলিকান পার্টির আধিপত্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বের করে আনতে মাস্কের এই প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত হালে পানি পাবে কি না তা নিয়েও বিশ্লেষকদের মধ্যে সংশয় আছে। ইতিহাস বলছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তৃতীয় কোনো দল এখনো সাফল্য পায়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাস্তবতার নিরিখে যুক্তরাষ্ট্রের দুই-দলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতি অন্য কোনো দল তেমন চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারেনি। তাদের মতে, আর্থিক ও আইনগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন দল গঠন করা বেশ কঠিন। প্রার্থী পেতেও নতুন দলকে হিমশিম খেতে হবে। ভোটার-সমর্থক পাওয়া তো আরও পরের বিষয়। সেই ধারা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে সত্যিই নতুন দল গঠন এবং ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের আধিপত্য ভেঙে তৃতীয় পক্ষ তৈরি করার এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবেন কি না, সেই উত্তর পাওয়া যাবে সময়ের অপেক্ষায় থেকেই।

এই বাস্তবতার কারণেই হয়তো মাস্কের পরিকল্পনায় আছে আরেকটি বিষয়। নতুন দল গঠনের বিষয়ে ভোটাভুটির পোস্ট দেওয়ার কিছু সময় পরই তিনি আরেকটি এক্স পোস্টে লেখেন, এটি কার্যকর করার উপায় হলো মাত্র দুই বা তিনটি সিনেট আসন এবং আট থেকে ১০টি হাউজ ডিস্ট্রিক্টের ওপর লেজার-ফোকাস করা। আইনসভার মার্জিনের সীমা খুবই কম থাকায় বিতর্কিত আইনগুলোর ওপর সিদ্ধান্তমূলক ভোট হিসেবে কাজ করার জন্য সেটি যথেষ্ট হবে যাতে নিশ্চিত করা যায় যে সেগুলো জনগণের প্রকৃত ইচ্ছাপূরণ করছে। মূলত, কংগ্রেসে কোনো বিল পাস করতে গেলে কয়েকটি ভোটের ব্যবধানে পাস হওয়ার বিষয়টিকে লক্ষ্যবন্তু বানাতে চাইছেন মাস্ক। অর্থাৎ, ভোটের ফল বদলে দেয় যে অল্প কয়েকটি ভোট সেই সংখ্যক জনপ্রতিনিধি মাস্ক তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত