অবাঙালির বাংলা ভাষার রূপরেখার খোঁজে
সুমন সাজ্জাদ | ৬ মার্চ, ২০২২ ০০:০০
বাংলা ভাষার অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ কাঠামোকে বুঝতে চেয়েছেন এমন বিদেশির সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু কখন থেকে শুরু হলো তাদের বাংলা বিষয়ক অনুশীলন? কী তাদের বিদ্যাচর্চার ধরন? ‘বিদেশি’ বলতে কাদের বোঝাব? এইসব প্রশ্নের জবাব আমাদের কাছে অনেকটাই আবছায়ায় ঢাকা। তাছাড়া বাংলা অঞ্চলে ইউরোপীয় জাতিগুলোর আগে আসা অন্যান্য সময়ের বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়গুলোর বাংলা চর্চার ধরন সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ প্রামাণিক বৃত্তান্ত আমাদের হাতে নেই। কিন্তু আমরা যদি বাংলা ভাষার প্রয়োগ ও অনুশীলনের সমগ্র রূপরেখাকে স্পষ্ট করে নিতে চাই, তাহলে এইসব প্রশ্নের মোকাবিলা করা অত্যন্ত জরুরি কাজ।
স্থানীয় মুসলমান সমাজ গঠনের আগ পর্যন্ত বহিরাগত মুসলমান জাতি ও গোষ্ঠী নিশ্চিতভাবেই বিদেশি। বিভিন্ন শাসক গোষ্ঠীর ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, মুসলমানরা বাংলা অঞ্চলের পন্ডিতি ভাষা সংস্কৃতকে আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করেনি। তারা বরং সংস্কৃত থেকে স্থানীয় ভাষায় সাহিত্য অনুবাদের প্রতি মনোযোগী হয়েছিল। এই তথ্য আমাদের দুটো ধারণা দেয়; এক. বাংলা ভাষা সম্পর্কে মুসলমান শাসক গোষ্ঠীর আগ্রহ তৈরি হয়েছিল; দুই. সংস্কৃতের তুলনায় বাংলা ভাষাকে তারা অধিকতর সহজ ভাষা রূপে গণ্য করেছিল।
স্থানিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থান বদলের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের কোনো-না-কোনো পর্বে বহিরাগত মুসলমানরা বাংলা শিখেছিল। বাংলা তখনো একটি অবিকশিত ভাষা। আগন্তুক মুসলমানদের প্রভাব এবং স্থানীয় মুসলমানদের তৎপরতায় বাংলা ভাষার ভিত্তি মজবুত হয়ে উঠেছে। কিন্তু এসব স্বীকৃতি সত্ত্বেও মুসলমান শাসকদের ভাষা বিষয়ক উদ্যোগকে সক্রিয় বাংলা চর্চা বলা যায় না। প্রকৃতপক্ষে শাসক-ভাষা ও সংস্কৃতি সূত্রে আসা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বাংলা চর্চার প্রামাণিক তথ্য ও নিদর্শন ইতিহাসে অনুপস্থিত।
বাংলা ভাষাচর্চার ভিত্তিমূলে বড়সড় প্রভাব ফেলেছে ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠী। বাণিজ্য, ধর্মপ্রচার ও শক্তিবিস্তারের সংলগ্ন কাজ হিসেবে স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতিগুলোকে তারা মনোযোগের সঙ্গে বুঝতে চেয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা দৃঢ় হওয়ার সমান্তরালে আয়তন ও বৈচিত্র্যে বিস্তৃত হয়েছে তাদের বাংলা চর্চার ধরন। ভাষা শেখার স্তরেই কেবল তারা সীমাবদ্ধ থাকেনি; ধর্মশাস্ত্রীয় গ্রন্থের অনুবাদ, অভিধান ও ব্যাকরণ প্রণয়নের মতো উচ্চাভিলাষী কাজগুলোও সম্পন্ন হয়েছে তাদের উদ্যোগে।
পর্তুগিজরা বাংলা ভাষায় হাজির করেছে রোমান ক্যাথলিক গ্রন্থের অনুবাদ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অনুমান, ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের আগে দোমিনিক দে সুজা নামক এক যাজক বাংলা ভাষায় খ্রিস্টধর্মীয় পুস্তক অনুবাদ করেছিলেন। বাংলাদেশের ভাওয়াল অঞ্চলে অবস্থানকালে ম্যানুয়েল দ্যা আস্সুম্পসাঁউ লিখেছেন মৌলিক শাস্ত্রীয় পুস্তক কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ (১৭৩৪)। বইটি মূলত রোমান-ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাস ও কৃত্যের ব্যাখ্যামূলক উপস্থাপনা। সংলাপ ও আখ্যানধর্মী এই বইয়ের ভাষারীতিতে ভাওয়াল অঞ্চলের ছাপ পড়েছে। আস্সুম্পসাঁউয়ের অভিধানেও গৃহীত হয়েছে এ অঞ্চলের শব্দ। তিনি বাংলা ভাষার একটি ব্যাকরণ লিখেছিলেন। যার আদর্শ ছিল লাতিন, সংস্কৃত ও পর্তুগিজ ব্যাকরণ। আসসুম্পসাঁউয়ের ধারণা, বাংলা ভাষা বিশুদ্ধ নয়, হিন্দুস্তানি ও সংস্কৃতের মিশ্রণ। তার বইগুলোকে অন্তত দুটো দিক থেকে বিবেচনা করতে হবে। প্রথমত, বাংলা ভাষার কালানুক্রমিক ও কালকেন্দ্রিক ইতিহাসের নমুনা; দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টীয় তত্ত্ব-সাহিত্য রচনার আরম্ভবিন্দু। পূর্ববাংলার বাংলা ভাষা প্রসঙ্গে যাদের প্রবল আগ্রহ, তারা অনায়াসে ফিরে তাকাতে পারেন আস্সুম্পসাঁউ প্রদর্শিত প্রাচীন নমুনায়।
বাংলা ভাষাচর্চা ব্যাপকভাবে বদলাতে আরম্ভ করেছে ব্রিটিশপর্বে। এ সময় বাংলা চর্চার ধরন ছিল : জনপরিসর, ব্যক্তিক ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। জনপরিসরের বাংলা চর্চা একেবারেই অনানুষ্ঠানিক; সাধারণত স্থানীয় মুনসিদের মাধ্যমে বিদেশিরা বাংলা শিখত। ব্যক্তিক পরিসরে বাংলা শেখার কাজটি ছিল বিদেশিদের মর্জিনির্ভর। আগ্রহের বশে তারা বাংলা শিখেছে, বাংলা নিয়ে ভেবেছে। কোম্পানি আমলে ভাষা শেখার জন্য বাড়তি অর্থযোগও ঘটত। বাঙালিদের জন্য ইংরেজি শেখার বই লিখতে গিয়েও কেউ কেউ বাংলা চর্চায় মনোনিবেশ করেছে। সে রকম একটি বই জন মিলারের দ্যা টিউটর বা সিক্ষ্যাগুরূ । প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরে বাংলা বিষয়ক আয়োজন ছিল বিস্তৃত ও ব্যাপক; শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সূত্রে এই চর্চা ইতিহাসে স্থায়ী একটি স্থান দখল করে নিয়েছে।
জনপরিসর, ব্যক্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলন পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার নয়। একটির সঙ্গে অন্যটির নানামাত্রিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম হেস্টিংসের ভাবনা ছিল ইংরেজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যেন বাংলা বলতে, পড়তে ও বুঝতে পারে। সে লক্ষ্যে তিনি ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেডকে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ লেখার জন্য অনুরোধ জানালেন। সেটি প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত করা হলো প্রাচ্যবিদ চার্লস উইলকিন্সকে; পঞ্চানন কর্মকারের সহায়তায় তিনি তৈরি করলেন বাংলা হরফের টাইপ। মুদ্রিত পুস্তক রূপে বেরিয়ে এলো হ্যালহেডের ব্যাকরণ। অর্থাৎ, একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে ইংরেজি আইনের অনুবাদ করেছিলেন জোনাথন ডানকান। তার লেখা চারটি বইয়ের কথা জানা যায়। ঐতিহাসিক মহলে ডানকানের বাংলা বিষয়ে অনেক উচ্চ প্রশংসা প্রচলিত। তিনি যথাসম্ভব সহজ ও বোধগম্য বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। কোম্পানির আরও কয়েক জন কর্মকর্তা আইন অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন জর্জ চার্লস মেয়ার, জর্জ ফ্রেডারিক চেরি, নিল বেঞ্জামিন এডমনস্টোন প্রমুখ। এদের বাংলা জ্ঞান ও অনুবাদ বিষয়ে গোলাম মুরশিদ বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, সে কালের প্রথা অনুযায়ী বাঙালি মুনসিরাই হয়তো অনুবাদগুলো করেছেন, সাহেবরা তত্ত্বাবধান করেছেন মাত্র।
আইন অনুবাদক হেনরি পিটস ফরস্টার একটি অভিধান প্রণয়ন করেছিলেন। দুই খন্ডে প্রকাশিত এই অভিধানের ভূমিকায় ফরস্টার বাংলার দুটো রীতির কথা উল্লেখ করেছেন : পোলাইট বা মার্জিত ও ভালগার বা জনভাষা। জনভাষার রূপটিকে তিনি বলেছেন ‘নিম্ন বাংলা’। ফরস্টার বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্যকে বুঝতে চেয়েছেন সংস্কৃতের প্রেক্ষাপটে। আর তাই তার অভিধানে দেখা যাচ্ছে সংস্কৃত শব্দের আধিক্য।
বিদেশিদের বাংলা চর্চায় সব চেয়ে পরিচিত নাম উইলিয়াম কেরি। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পুস্তকগুলো কেরি-বন্দনায় মুখর। বাংলা ভাষা বিষয়ে কেরির আগ্রহ ও কাজ এই অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। ধারণা করা হয়, মাতৃভাষার মতো করেই কেরি বাংলা বলতে পারতেন। তার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বাংলায় বাইবেল অনুবাদের ইতিহাস; সঙ্গী ছিলেন জোসুয়া মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ড। ত্রয়ী প্রতিভার গুণে শ্রীরামপুর মিশন হয়ে উঠেছিল বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার একটি শক্তিশালী কেন্দ্র। বাংলা ভাষার কল্যাণ কামনায় তারা এইসব উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, ব্যাপারটি তেমন নয়। বৈষয়িক ভাগ্যবদল ও খ্রিস্টধর্ম প্রচার ছিল তাদের মৌল উদ্দেশ্য। অন্য সবার চেয়ে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দিক থেকে এগিয়ে ছিলেন উইলিয়াম কেরি। শ্রীরামপুর মিশন, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও এশিয়াটিক সোসাইটি এই তিন প্রধান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজে তার বুদ্ধিবৃত্তিক আভিজাত্য তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
ইউরোপীয় ও নেটিভ শিক্ষার্থীদের জন্য জন মেনডিস সংকলন করেছিলেন বাংলা-ইংরেজি ও ইংরেজি-বাংলা অভিধান। ধর্মযাজক উইলিয়াম মর্টনের অভিধানের বাংলা নাম ছিল দ্বিভাষার্থকাভিধান (১৮২৮)। অভিধানটিতে আছে বাংলা শব্দের সমার্থক রূপ। পাশাপাশি যোগ করা হয়েছে ইংরেজি অর্থ ও সমার্থক শব্দ। মর্টন কর্তৃক সংকলিত প্রবাদ পুস্তকের নাম দৃষ্টান্তবাক্য সংগ্রহ (১৮৩২)। বাংলা অঞ্চলের মৌখিক সংস্কৃতি বিষয়ক চর্চায় বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রণযুগে বাংলা কথ্য ভাষার রূপ কেমন ছিল তার হদিস দেয় মটর্নের প্রবাদসংগ্রহ।
গ্রেভস চেম্বার্স হটন সংকলন করেছিলেন A Dictionary, Bengali and Sanskrit (১৮৩৩) নামক একটি অভিধান। হটন ইংরেজি ভাষায় বাংলা শব্দের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। ১৮৩৭ সালে পিএস ডি রোজারিওর অভিধানে সংকলিত হয়েছিল ইংরেজি শব্দের বাংলা ও হিন্দুস্তানি সমার্থক শব্দ। প্রাসঙ্গিক অর্থ ও ব্যাখ্যাগুলো লেখা হয়েছিল বাংলা ও হিন্দুস্তানি ভাষায়, কিন্তু লেখার হরফ ছিল রোমান।
বিদ্যায়তনিক চর্চা, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও আয়োজনের মাধ্যমে বাংলার স্থিরতা বিধানের কথা বলেছিলেন জন বিমস। সংস্কৃত শব্দের বোঝা চাপিয়ে কিংবা আভিধানিক শব্দের প্রয়োগ বাড়িয়ে বাংলা ভাষাকে জনবিচ্ছিন্ন করে তোলার বিপক্ষে ছিলেন তিনি। ইংরেজি ভাষায় বিমস একটি বাংলা ব্যাকরণ লিখেছিলেন; এ বইয়ে তার প্রধান লক্ষ্য ছিল কথ্য বাংলা। অন্যদিকে আঞ্চলিক ভাষার প্রতি দৃষ্টি দিয়েছিলেন জর্জ গ্রিয়ার্সন। তার মতে, লেখা ও পড়ার ক্ষেত্রে বাঙালি সংস্কৃতের কাছে ঋণী। কিন্তু বলার সময় তাদের উচ্চারণ বদলে যায়। সাহিত্যিক বাংলায় সংস্কৃত আরোপণের ফলে বাংলা হয়ে উঠেছে ‘সংস্কৃতের দাস’। গ্রিয়ার্সন মনে করেন, এর জন্য উনিশ শতকের কলকাতাকেন্দ্রিক পন্ডিতরাই দায়ী।
বিদেশিদের বাংলা চর্চার পরিসর দীর্ঘ। বিচিত্র চিন্তা ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তারা বাংলা শিখেছে। এর ফলে বাংলা ভাষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নাকি সমৃদ্ধ হয়েছে? এরকম একটি প্রশ্ন অনেকের মধ্যে দোলা দেয়। নেতি-ইতির বৈপরীত্যমূলক অবস্থান থেকে এ সন্দেহের মীমাংসা ঘটবে না। কারণ ভাষা ও সংস্কৃতির চলমান প্রবাহে দ্বন্দ্ব-মধুর সম্পর্ক চিরায়ত ঘটনা। তবে এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, উনিশ শতকে ইউরোপীয় পন্ডিতদের বাংলাচর্চা বাংলা ভাষার সংস্কৃতায়নকে বহুগুণে উসকে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পরবর্তী কালের লিখিত বাংলা ভাষায়; সেই ঘোর কাটাতে সময় লেগেছে কয়েক দশক।
মোটা দাগে বলা যায়, শাসক সংস্কৃতির কাছে বাংলা ভাষা ছিল ভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতিকে জানার একটি মাধ্যম। কেবল বাংলা নয়, হিন্দি, উর্দু, গুজরাটি, মারাঠি, গারো, সাঁওতালি প্রভৃতি ভাষার প্রতিও তাদের দৃষ্টি পড়েছিল। শাসনের লক্ষ্যে শাসিতকে জানার তাগিদ অনেক পুরনো। উপনিবেশবাদের ইতিহাসে ভিন্নভাষী ‘অপর’রা বরাবরই আকর্ষণীয় বস্তু। জ্ঞানের প্রতি মননশীল আগ্রহও অনেক ভাবুককে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের দিকে চালিত করেছে।
প্রাসঙ্গিকভাবে টমাস ওয়েলবোর্ন ক্লার্ক, এডয়ার্ড সি ডিমক, ডেভিড কফ, উইলিয়াম রাদিচে, ফাদার মারিনো রিগন, মুচকুন্দ দুবে, ক্লিনটন সিলি, হান্স হার্ডার প্রমুখের অংশগ্রহকে আমাদের মনে রাখতে হবে। প্রকৃতপক্ষে বিদেশিদের বাংলা চর্চা দাবি করে ইতিহাসের স্বতন্ত্র বয়ান। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্রমধারা বুঝতে চাইলে এই বয়ানের ছায়ায় আমাদের কিছুটা আশ্রয় গ্রহণ করতেই হবে।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন
সুমন সাজ্জাদ | ৬ মার্চ, ২০২২ ০০:০০

বাংলা ভাষার অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ কাঠামোকে বুঝতে চেয়েছেন এমন বিদেশির সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু কখন থেকে শুরু হলো তাদের বাংলা বিষয়ক অনুশীলন? কী তাদের বিদ্যাচর্চার ধরন? ‘বিদেশি’ বলতে কাদের বোঝাব? এইসব প্রশ্নের জবাব আমাদের কাছে অনেকটাই আবছায়ায় ঢাকা। তাছাড়া বাংলা অঞ্চলে ইউরোপীয় জাতিগুলোর আগে আসা অন্যান্য সময়ের বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়গুলোর বাংলা চর্চার ধরন সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ প্রামাণিক বৃত্তান্ত আমাদের হাতে নেই। কিন্তু আমরা যদি বাংলা ভাষার প্রয়োগ ও অনুশীলনের সমগ্র রূপরেখাকে স্পষ্ট করে নিতে চাই, তাহলে এইসব প্রশ্নের মোকাবিলা করা অত্যন্ত জরুরি কাজ।
স্থানীয় মুসলমান সমাজ গঠনের আগ পর্যন্ত বহিরাগত মুসলমান জাতি ও গোষ্ঠী নিশ্চিতভাবেই বিদেশি। বিভিন্ন শাসক গোষ্ঠীর ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, মুসলমানরা বাংলা অঞ্চলের পন্ডিতি ভাষা সংস্কৃতকে আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করেনি। তারা বরং সংস্কৃত থেকে স্থানীয় ভাষায় সাহিত্য অনুবাদের প্রতি মনোযোগী হয়েছিল। এই তথ্য আমাদের দুটো ধারণা দেয়; এক. বাংলা ভাষা সম্পর্কে মুসলমান শাসক গোষ্ঠীর আগ্রহ তৈরি হয়েছিল; দুই. সংস্কৃতের তুলনায় বাংলা ভাষাকে তারা অধিকতর সহজ ভাষা রূপে গণ্য করেছিল।
স্থানিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থান বদলের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের কোনো-না-কোনো পর্বে বহিরাগত মুসলমানরা বাংলা শিখেছিল। বাংলা তখনো একটি অবিকশিত ভাষা। আগন্তুক মুসলমানদের প্রভাব এবং স্থানীয় মুসলমানদের তৎপরতায় বাংলা ভাষার ভিত্তি মজবুত হয়ে উঠেছে। কিন্তু এসব স্বীকৃতি সত্ত্বেও মুসলমান শাসকদের ভাষা বিষয়ক উদ্যোগকে সক্রিয় বাংলা চর্চা বলা যায় না। প্রকৃতপক্ষে শাসক-ভাষা ও সংস্কৃতি সূত্রে আসা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বাংলা চর্চার প্রামাণিক তথ্য ও নিদর্শন ইতিহাসে অনুপস্থিত।
বাংলা ভাষাচর্চার ভিত্তিমূলে বড়সড় প্রভাব ফেলেছে ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠী। বাণিজ্য, ধর্মপ্রচার ও শক্তিবিস্তারের সংলগ্ন কাজ হিসেবে স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতিগুলোকে তারা মনোযোগের সঙ্গে বুঝতে চেয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা দৃঢ় হওয়ার সমান্তরালে আয়তন ও বৈচিত্র্যে বিস্তৃত হয়েছে তাদের বাংলা চর্চার ধরন। ভাষা শেখার স্তরেই কেবল তারা সীমাবদ্ধ থাকেনি; ধর্মশাস্ত্রীয় গ্রন্থের অনুবাদ, অভিধান ও ব্যাকরণ প্রণয়নের মতো উচ্চাভিলাষী কাজগুলোও সম্পন্ন হয়েছে তাদের উদ্যোগে।
পর্তুগিজরা বাংলা ভাষায় হাজির করেছে রোমান ক্যাথলিক গ্রন্থের অনুবাদ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অনুমান, ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের আগে দোমিনিক দে সুজা নামক এক যাজক বাংলা ভাষায় খ্রিস্টধর্মীয় পুস্তক অনুবাদ করেছিলেন। বাংলাদেশের ভাওয়াল অঞ্চলে অবস্থানকালে ম্যানুয়েল দ্যা আস্সুম্পসাঁউ লিখেছেন মৌলিক শাস্ত্রীয় পুস্তক কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ (১৭৩৪)। বইটি মূলত রোমান-ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাস ও কৃত্যের ব্যাখ্যামূলক উপস্থাপনা। সংলাপ ও আখ্যানধর্মী এই বইয়ের ভাষারীতিতে ভাওয়াল অঞ্চলের ছাপ পড়েছে। আস্সুম্পসাঁউয়ের অভিধানেও গৃহীত হয়েছে এ অঞ্চলের শব্দ। তিনি বাংলা ভাষার একটি ব্যাকরণ লিখেছিলেন। যার আদর্শ ছিল লাতিন, সংস্কৃত ও পর্তুগিজ ব্যাকরণ। আসসুম্পসাঁউয়ের ধারণা, বাংলা ভাষা বিশুদ্ধ নয়, হিন্দুস্তানি ও সংস্কৃতের মিশ্রণ। তার বইগুলোকে অন্তত দুটো দিক থেকে বিবেচনা করতে হবে। প্রথমত, বাংলা ভাষার কালানুক্রমিক ও কালকেন্দ্রিক ইতিহাসের নমুনা; দ্বিতীয়ত, খ্রিস্টীয় তত্ত্ব-সাহিত্য রচনার আরম্ভবিন্দু। পূর্ববাংলার বাংলা ভাষা প্রসঙ্গে যাদের প্রবল আগ্রহ, তারা অনায়াসে ফিরে তাকাতে পারেন আস্সুম্পসাঁউ প্রদর্শিত প্রাচীন নমুনায়।
বাংলা ভাষাচর্চা ব্যাপকভাবে বদলাতে আরম্ভ করেছে ব্রিটিশপর্বে। এ সময় বাংলা চর্চার ধরন ছিল : জনপরিসর, ব্যক্তিক ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। জনপরিসরের বাংলা চর্চা একেবারেই অনানুষ্ঠানিক; সাধারণত স্থানীয় মুনসিদের মাধ্যমে বিদেশিরা বাংলা শিখত। ব্যক্তিক পরিসরে বাংলা শেখার কাজটি ছিল বিদেশিদের মর্জিনির্ভর। আগ্রহের বশে তারা বাংলা শিখেছে, বাংলা নিয়ে ভেবেছে। কোম্পানি আমলে ভাষা শেখার জন্য বাড়তি অর্থযোগও ঘটত। বাঙালিদের জন্য ইংরেজি শেখার বই লিখতে গিয়েও কেউ কেউ বাংলা চর্চায় মনোনিবেশ করেছে। সে রকম একটি বই জন মিলারের দ্যা টিউটর বা সিক্ষ্যাগুরূ । প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরে বাংলা বিষয়ক আয়োজন ছিল বিস্তৃত ও ব্যাপক; শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সূত্রে এই চর্চা ইতিহাসে স্থায়ী একটি স্থান দখল করে নিয়েছে।
জনপরিসর, ব্যক্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলন পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার নয়। একটির সঙ্গে অন্যটির নানামাত্রিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম হেস্টিংসের ভাবনা ছিল ইংরেজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যেন বাংলা বলতে, পড়তে ও বুঝতে পারে। সে লক্ষ্যে তিনি ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেডকে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ লেখার জন্য অনুরোধ জানালেন। সেটি প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত করা হলো প্রাচ্যবিদ চার্লস উইলকিন্সকে; পঞ্চানন কর্মকারের সহায়তায় তিনি তৈরি করলেন বাংলা হরফের টাইপ। মুদ্রিত পুস্তক রূপে বেরিয়ে এলো হ্যালহেডের ব্যাকরণ। অর্থাৎ, একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে ইংরেজি আইনের অনুবাদ করেছিলেন জোনাথন ডানকান। তার লেখা চারটি বইয়ের কথা জানা যায়। ঐতিহাসিক মহলে ডানকানের বাংলা বিষয়ে অনেক উচ্চ প্রশংসা প্রচলিত। তিনি যথাসম্ভব সহজ ও বোধগম্য বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। কোম্পানির আরও কয়েক জন কর্মকর্তা আইন অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন জর্জ চার্লস মেয়ার, জর্জ ফ্রেডারিক চেরি, নিল বেঞ্জামিন এডমনস্টোন প্রমুখ। এদের বাংলা জ্ঞান ও অনুবাদ বিষয়ে গোলাম মুরশিদ বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, সে কালের প্রথা অনুযায়ী বাঙালি মুনসিরাই হয়তো অনুবাদগুলো করেছেন, সাহেবরা তত্ত্বাবধান করেছেন মাত্র।
আইন অনুবাদক হেনরি পিটস ফরস্টার একটি অভিধান প্রণয়ন করেছিলেন। দুই খন্ডে প্রকাশিত এই অভিধানের ভূমিকায় ফরস্টার বাংলার দুটো রীতির কথা উল্লেখ করেছেন : পোলাইট বা মার্জিত ও ভালগার বা জনভাষা। জনভাষার রূপটিকে তিনি বলেছেন ‘নিম্ন বাংলা’। ফরস্টার বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্যকে বুঝতে চেয়েছেন সংস্কৃতের প্রেক্ষাপটে। আর তাই তার অভিধানে দেখা যাচ্ছে সংস্কৃত শব্দের আধিক্য।
বিদেশিদের বাংলা চর্চায় সব চেয়ে পরিচিত নাম উইলিয়াম কেরি। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পুস্তকগুলো কেরি-বন্দনায় মুখর। বাংলা ভাষা বিষয়ে কেরির আগ্রহ ও কাজ এই অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। ধারণা করা হয়, মাতৃভাষার মতো করেই কেরি বাংলা বলতে পারতেন। তার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বাংলায় বাইবেল অনুবাদের ইতিহাস; সঙ্গী ছিলেন জোসুয়া মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ড। ত্রয়ী প্রতিভার গুণে শ্রীরামপুর মিশন হয়ে উঠেছিল বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার একটি শক্তিশালী কেন্দ্র। বাংলা ভাষার কল্যাণ কামনায় তারা এইসব উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, ব্যাপারটি তেমন নয়। বৈষয়িক ভাগ্যবদল ও খ্রিস্টধর্ম প্রচার ছিল তাদের মৌল উদ্দেশ্য। অন্য সবার চেয়ে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দিক থেকে এগিয়ে ছিলেন উইলিয়াম কেরি। শ্রীরামপুর মিশন, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও এশিয়াটিক সোসাইটি এই তিন প্রধান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজে তার বুদ্ধিবৃত্তিক আভিজাত্য তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
ইউরোপীয় ও নেটিভ শিক্ষার্থীদের জন্য জন মেনডিস সংকলন করেছিলেন বাংলা-ইংরেজি ও ইংরেজি-বাংলা অভিধান। ধর্মযাজক উইলিয়াম মর্টনের অভিধানের বাংলা নাম ছিল দ্বিভাষার্থকাভিধান (১৮২৮)। অভিধানটিতে আছে বাংলা শব্দের সমার্থক রূপ। পাশাপাশি যোগ করা হয়েছে ইংরেজি অর্থ ও সমার্থক শব্দ। মর্টন কর্তৃক সংকলিত প্রবাদ পুস্তকের নাম দৃষ্টান্তবাক্য সংগ্রহ (১৮৩২)। বাংলা অঞ্চলের মৌখিক সংস্কৃতি বিষয়ক চর্চায় বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রণযুগে বাংলা কথ্য ভাষার রূপ কেমন ছিল তার হদিস দেয় মটর্নের প্রবাদসংগ্রহ।
গ্রেভস চেম্বার্স হটন সংকলন করেছিলেন A Dictionary, Bengali and Sanskrit (১৮৩৩) নামক একটি অভিধান। হটন ইংরেজি ভাষায় বাংলা শব্দের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। ১৮৩৭ সালে পিএস ডি রোজারিওর অভিধানে সংকলিত হয়েছিল ইংরেজি শব্দের বাংলা ও হিন্দুস্তানি সমার্থক শব্দ। প্রাসঙ্গিক অর্থ ও ব্যাখ্যাগুলো লেখা হয়েছিল বাংলা ও হিন্দুস্তানি ভাষায়, কিন্তু লেখার হরফ ছিল রোমান।
বিদ্যায়তনিক চর্চা, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও আয়োজনের মাধ্যমে বাংলার স্থিরতা বিধানের কথা বলেছিলেন জন বিমস। সংস্কৃত শব্দের বোঝা চাপিয়ে কিংবা আভিধানিক শব্দের প্রয়োগ বাড়িয়ে বাংলা ভাষাকে জনবিচ্ছিন্ন করে তোলার বিপক্ষে ছিলেন তিনি। ইংরেজি ভাষায় বিমস একটি বাংলা ব্যাকরণ লিখেছিলেন; এ বইয়ে তার প্রধান লক্ষ্য ছিল কথ্য বাংলা। অন্যদিকে আঞ্চলিক ভাষার প্রতি দৃষ্টি দিয়েছিলেন জর্জ গ্রিয়ার্সন। তার মতে, লেখা ও পড়ার ক্ষেত্রে বাঙালি সংস্কৃতের কাছে ঋণী। কিন্তু বলার সময় তাদের উচ্চারণ বদলে যায়। সাহিত্যিক বাংলায় সংস্কৃত আরোপণের ফলে বাংলা হয়ে উঠেছে ‘সংস্কৃতের দাস’। গ্রিয়ার্সন মনে করেন, এর জন্য উনিশ শতকের কলকাতাকেন্দ্রিক পন্ডিতরাই দায়ী।
বিদেশিদের বাংলা চর্চার পরিসর দীর্ঘ। বিচিত্র চিন্তা ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তারা বাংলা শিখেছে। এর ফলে বাংলা ভাষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নাকি সমৃদ্ধ হয়েছে? এরকম একটি প্রশ্ন অনেকের মধ্যে দোলা দেয়। নেতি-ইতির বৈপরীত্যমূলক অবস্থান থেকে এ সন্দেহের মীমাংসা ঘটবে না। কারণ ভাষা ও সংস্কৃতির চলমান প্রবাহে দ্বন্দ্ব-মধুর সম্পর্ক চিরায়ত ঘটনা। তবে এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, উনিশ শতকে ইউরোপীয় পন্ডিতদের বাংলাচর্চা বাংলা ভাষার সংস্কৃতায়নকে বহুগুণে উসকে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পরবর্তী কালের লিখিত বাংলা ভাষায়; সেই ঘোর কাটাতে সময় লেগেছে কয়েক দশক।
মোটা দাগে বলা যায়, শাসক সংস্কৃতির কাছে বাংলা ভাষা ছিল ভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতিকে জানার একটি মাধ্যম। কেবল বাংলা নয়, হিন্দি, উর্দু, গুজরাটি, মারাঠি, গারো, সাঁওতালি প্রভৃতি ভাষার প্রতিও তাদের দৃষ্টি পড়েছিল। শাসনের লক্ষ্যে শাসিতকে জানার তাগিদ অনেক পুরনো। উপনিবেশবাদের ইতিহাসে ভিন্নভাষী ‘অপর’রা বরাবরই আকর্ষণীয় বস্তু। জ্ঞানের প্রতি মননশীল আগ্রহও অনেক ভাবুককে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের দিকে চালিত করেছে।
প্রাসঙ্গিকভাবে টমাস ওয়েলবোর্ন ক্লার্ক, এডয়ার্ড সি ডিমক, ডেভিড কফ, উইলিয়াম রাদিচে, ফাদার মারিনো রিগন, মুচকুন্দ দুবে, ক্লিনটন সিলি, হান্স হার্ডার প্রমুখের অংশগ্রহকে আমাদের মনে রাখতে হবে। প্রকৃতপক্ষে বিদেশিদের বাংলা চর্চা দাবি করে ইতিহাসের স্বতন্ত্র বয়ান। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্রমধারা বুঝতে চাইলে এই বয়ানের ছায়ায় আমাদের কিছুটা আশ্রয় গ্রহণ করতেই হবে।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়