কেন্দ্রীয় অনুবাদ সংস্থা কেন প্রয়োজন
ফিরোজ আহমেদ | ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
জ্ঞানের ইতিহাসের বড় অংশজুড়ে আসলে রয়েছে অনুবাদেরই ইতিহাস। অনুবাদ সেই মাধ্যম, যার সাহায্যে একটি সভ্যতার অর্জিত জ্ঞান সমকালীন অন্য একটি সভ্যতা অর্জন করে, এমনকি বহু শত বা সহস্র বছর পরেকার সভ্যতাকেও আলোড়িত করে। অন্তত একটা অপূর্ব উদাহরণের কথা বলতে পারি। রাজা রামমোহন রায় আরবিতে অনূদিত অ্যারিস্টটলের বই পড়েছিলেন তার কৈশোরে। গ্রিক দর্শন এভাবে আরবি অনুবাদের হাত ধরে পৃথিবীর আরেক প্রান্তের একটি প্রাণকে আলোড়িত করেছিল।
একটা সভ্যতা যখন এই অর্থে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে যে, অন্যতর সভ্যতা ও সংস্কৃতিগুলোর সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করতে হয়, তার চেয়ে প্রবীণতর সভ্যতাগুলোর কাছ থেকে অভিজ্ঞতা ধার নিতে হয়। এই যোগাযোগ ও জ্ঞান আহরণের মধ্যে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রযুক্তি নয়, ধর্ম-দর্শন, চিন্তা ও সংস্কৃতির চাহিদাও রয়েছে। খুব পরিচিত উদাহরণটার কথাই বলা যাক, প্রাচীন চীন ও তিব্বত প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অজস্র সংস্কৃত ও পালি গ্রন্থের অনুবাদ করেছে ধর্ম ও দর্শনের প্রয়োজন মেটাতে, অতীশ দীপঙ্কের মতো শাস্ত্রজ্ঞ এই প্রয়োজনে হিমালয় পাড়ি দিয়েছেন, এবং একইভাবে উল্টোদিক থেকেও ফা হিয়েন বা হিউয়েন সাং-এর মতো অজস্র চীনা পর্যটক হিমালয়ের দেয়াল অতিক্রম করেছেন।
সম্ভবত এই দিক দিয়ে এ যাবৎকালের সবচেয়ে আলোচিত ও যুগান্তরকারী ভূমিকা রেখেছিল বাইতুল হিকমা বা অনুবাদে যাকে প্রজ্ঞাগৃহ বলা যেতে পারে, মধ্যযুগের সেই আব্বাসীয় উদ্যোগটি। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বা অন্তত পৃষ্ঠপোষকতায় জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে খুবই নবীন একটি সভ্যতা জ্ঞানবিজ্ঞানে কত দ্রুত অন্যদের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারে, ছাপিয়েও যেতে পারে, তার এই দৃষ্টান্তটির সঙ্গে বাইতুল হিকমার নামটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত আছে। এখানকার নিয়োগপ্রাপ্ত পণ্ডিত ব্যক্তিরা সংস্কৃত, পালি, লাতিন, গ্রিক, সিরীয়, আর্মানীয়, হিব্রুসহ বিশিষ্ট সব ভাষার অজস্র গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। এর পরের প্রজন্মে আরব জগৎ মৌলিক জ্ঞান তৈরি করা শুরু করল দর্শন, গণিত, অধিবিদ্যা, রসায়ন, প্রকৃতিবিজ্ঞান, শারীরতত্ত্ব, ভূগোল, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানসহ বলা চলে তখনকার দুনিয়ার জ্ঞানের সবগুলো পরিচিত শাখায়।
অনুবাদের এই আলোড়ন দুভাবে ঘটে। একটা হলো রাজক্ষমতা নিজ দেশের পরিচয়কে সংহত ও প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। এর উদাহরণ এই বাংলাতেই আছে। বিখ্যাত সেই উদাহরণ হলো হোসেন শাহি রাজবংশের আমলে বাংলার বিকাশ।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা যেমন এই কাজগুলোতে ছিল, তেমনি ছিল বহু অজস্র ব্যক্তিগত উদ্যোগ। কিন্তু বলাই বাহুল্য, প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থনের কারণেই ব্যক্তিদের মধ্যেও প্রেরণা ও চাহিদা, উভয়টিই বহু গুণ শক্তিশালী ছিল। ফরাসি পণ্ডিত ভলতেয়ার যে ব্রিটিশ পণ্ডিত রজার বেকনকে (১২১৯-১২৯২) আধুনিক বিজ্ঞানের প্রবর্তক বলে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন, তার জীবনের বড় অংশটি কেটেছে আরবি অজস্র গ্রন্থ, বিশেষ করে আলোকবিদ্যার গ্রন্থসমূহ লাতিন ভাষায় অনুবাদে। বস্তুত আরবি ভাষায় অনূদিত এই বিপুল জ্ঞানের ভাণ্ডারই পরবর্তীকালে লাতিন ভাষায় আরেক দফা অনুবাদের মাধ্যমে ইউরোপীয় রেনেসাঁ বা নবজাগরণের সূত্রপাত ঘটায়। উল্লেখ্য, অজস্র গ্রন্থের মতো প্লেটো বা অ্যারিস্টটলের মতো গ্রিক দার্শনিকদের লেখাপত্রও আরবি থেকেই তখন লাতিনে অনূদিত হয়েছে, এগুলো লাতিন জগতে এক রকম হারিয়েই গিয়েছিল। ইতিহাসে এই অধ্যায়টি ‘রিডিসকভারি অব অ্যারিস্টটল’ হিসেবে পরিচিত। এরপর আরও একদফা অনুবাদের ঢেউ গিয়েছে লাতিন থেকে ফরাসি, ইংরেজি, জার্মান ইত্যাদি জাতীয় ভাষায় অনুবাদের, এবং তার মধ্য দিয়েই জাতিরাষ্ট্র হিসেবে আধুনিক ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো আকার পেয়েছে।
২.
আধুনিক যুগে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে অনুবাদ কীভাবে ঘটে, তার অনন্য নজির মিলবে চিনুয়া আচেবের বলা একটা গল্পে। ১৯৮১ সালে আচেবে জাপান ভ্রমণে যান। আশ্চর্য হয়ে তিনি দেখতে পান, জাপানিরা ইংরেজি নয়, জাপানি ভাষাতেই দর্শন কিংবা পদার্থবিদ্যার মতো গভীর বিষয়ে পারস্পরিক যোগাযোগ করেন। ওয়াজেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক কিনিচিরো তোবা এই বিষয়টা কীভাবে সম্ভব হলো, সেটা বুঝিয়ে বললেন কয়েক বাক্যের একটি গল্পে :
‘আমার দাদা টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮৮০ দশকের শুরুর দিককার স্নাতক। তার খেরোখাতা ভর্তি ছিল ইংরেজিতে। আমার পিতা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯২০-এর দশকের স্নাতক, আর তার খেরোখাতার আধাআধি ছিল ইংরেজিতে, বাকি আধখানা জাপানি ভাষায়। এক প্রজন্ম পর আমি যখন স্নাতক হই, আমার সবটা টোকাটুকি হয়েছিল জাপানি ভাষায়। এভাবে আমাদের নিজেদের ভাষার মাধ্যমে পশ্চিমা সভ্যতাকে পুরোটা আত্মস্থ করতে লেগেছিল তিনটি প্রজন্ম।’
শুধু জাপানিরা নন, প্রায় একই কাজ সম্পন্ন করেছে চীন, কোরিয়াসহ গত শতকে জাতীয় অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হওয়া সবগুলো জাতি। এবং বিশেষভাবেই চোখে পড়বে এই জাতীয় সক্ষমতা তৈরিতে ব্যর্থ এশিয়া ও আফ্রিকার প্রতিটি জাতির অভিজাত ও ক্ষমতাবান অংশের মধ্যে ইংরেজি কিংবা ফরাসি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় ভাষার ওপর নির্ভরতা।
৩.
বহু জাতির মধ্যে অনুবাদের এই কাজে রাষ্ট্রের উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হবে মাতৃভাষায় এই অনুবাদের কাজটি সম্পন্ন করা। একটা অনুবাদ সংস্থার মূল দায়িত্ব হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বইগুলোর একটা তালিকা নির্মাণ করা। এই অগ্রাধিকার বাছাই করার ক্ষেত্রে যেমন পদার্থ-রসায়ন-অর্থনীতির মতো প্রায়োগিক বিদ্যার প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি রয়েছে দর্শন, ধর্মতত্ত্ব ও সংস্কৃতিরও চাহিদা। খুব ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটি বিভাগে যে গ্রন্থগুলোর নাম দেওয়া হয় পাঠ্যবই বা সুপারিশ করা বই হিসেবে, তার বড় অংশই ইংরেজি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সমাজতত্ত্ববিষয়ক সমকালীন শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলোর একটা বড় অংশ এখনো বাংলায় অনূদিত হয়নি। বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে প্রাসঙ্গিক অজস্র গ্রন্থ এখনো আরবি, ফার্সি, পালি, ইংরেজিসহ বহু জাতির গ্রন্থে রয়েছে। এমনকি মধ্যযুগে বাংলা ভ্রমণ করা ইউরোপীয় বহু পর্যটকের রচনাও ইংরেজিতেও অনূদিত হয়নি। ফলে রাষ্ট্রীয় এই অনুবাদ সংস্থাটি শুধু যে ইংরেজি ভাষায় গুরুত্ব দেবে না, তা-ই নয়, অন্যান্য ভাষায়ও রচিত গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানবিজ্ঞানকে বাংলা ভাষায় আনার উদ্যোগ তাকে সংগঠিতভাবে গ্রহণ করতে হবে। আবার জ্ঞানের যে শাখাগুলোতে দ্রুত বদল আসে, কেননা সেগুলো খুবই প্রায়োগিক, নতুন নতুন জ্ঞান সেখানে প্রতিনিয়ত নির্মিত হয়, সেই বিষয়গুলোতেও বাস্তব কারণেই বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। পদার্থ, প্রকৌশল, রসায়ন, গণিতের মতো বিষয়গুলো এই ধারার অন্তর্গত।
প্রাচীন আমলে খানিকটা স্বতঃস্ফূর্ত বা বিচ্ছিন্নভাবে ঘটত বলেই এই কাজগুলোতে দশকের পর দশক, এমনকি প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে যেত। এখন কিন্তু এই কাজগুলোকে অনেক গোছানো এবং অনেক পরিকল্পিতভাবেই করা সম্ভব। ওপরে জাপানি সেই অর্থনীতিবিদ, কিনিচিরো তোবা যে অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন, তার চেয়েও কম সময়েই এটা অর্জন করা সম্ভব এ কারণেই যে, এখন লক্ষ্য ও পদ্ধতি সম্পর্কে সুসম্পূর্ণ একটা ধারণা আমাদের আছে। আরও বিশেষ করে উল্লেখ্য যে, বিচ্ছিন্নভাবে এই ঘটনাগুলো অনেক অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সিকি, আধা ইত্যাদি করে হয়েছে। ফলে ভাষার অভিজ্ঞতার আনুষ্ঠানিক জমাখাতায় খুব কম জমলেও এক রকম যোগ্যতা এরই মধ্যে তৈরিও হয়েছে। সেই ঊনিশ শতকে রাজেন্দ্রলাল মিত্র,
কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালীবর বেদান্তবাগীশ, রামকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, সজ্ঞীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ বসু, হেমচন্দ্র বিদ্যারতœ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রমুখ ব্যক্তিরা ‘সারস্বত সমাজ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাংলা ভাষায় বিদেশি জ্ঞানকে আত্মস্থ করার জন্য, সেই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে অল্প বয়সে যুক্ত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়গুলোতে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের পাশাপাশি একটা কেন্দ্রীয় অনুবাদ পর্ষদ বা সংস্থার মনোনীত বইগুলো অনুবাদের জন্য পদোন্নতিসহ অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়া হলে ‘সারস্বত সমাজ’-এর সেই দেড়শত বছর পুরনো স্বপ্নটা এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব। শুধু প্রয়োজন এগুলোকে টাকা কামানোর খনি না বানিয়ে উদ্যমী ও যোগ্য ব্যক্তিদের যথাযথ স্থানে বসানো।
৪.
বাংলাদেশে এখনো এমন উদ্যোগ ব্যক্তিগত কিংবা যৌথ উদ্যোগে থেমে থেমে হচ্ছে, সেটা মিথ্যা নয়। কিন্তু যেটা নেই, সেটা হলো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সামগ্রিক একটা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ, এবং লুণ্ঠনের প্রকল্প না করে সেটির বাস্তবায়ন। এই লেখাটা শেষ করতে চাই তেমনি একটি অসাধারণ উদ্যোগের মৃত্যুর কাহিনী বর্ণনা করে।
১৯৮০ দশকে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক একটা অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ে একটা পর্ষদ গঠন করে তারা চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রধান পাঠ্যবইগুলোকে বাংলায় অনুবাদ করার একটা দুঃসাহসী কাজে হাত দেন। অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের অনেকেরই কারিগরি জ্ঞান থাকলেও ভাষাজ্ঞানে দুর্বলতা ছিল, কাজেই সেই সম্পাদনাতেও তারা বিশেষ মনোযোগ দেন। একে একে তারা অনুবাদ করে ফেলেন ডেভিডসনের ‘টেক্সট বুক অব মেডিসিন’ আর কানিংহামের ‘অ্যানাটমি’ এই দুটো বিশাল মোটা বই। সম্পাদনায় ছিলেন আহমদ রফিক, সাঈদ হায়দার আর শুভাগত চৌধুরী। বাংলা একাডেমি সেই বই দুটো প্রকাশ করে। কিন্তু মেডিকেল কলেজগুলো সেই বইটিকে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে গ্রহণ করতে বা প্রচার করতে বা স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
ফলাফল হলো বিপুল এই পরিশ্রম পুরোটাই অপচয়ের খাতায় চলে যাওয়া। অথচ আমাদের আগে ও পরে অনেক জাতি মাতৃভাষায় প্রকৌশল এবং চিকিৎসাশাস্ত্রকে অনুবাদ করেছে। মাতৃভাষায় পড়ার কারণেই তাদের নিজ নিজ বিষয়ে ব্যুৎপত্তি গভীরতর হয়েছে।
অনেকেই খেয়াল করেছেন, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও উন্নয়ন যজ্ঞের আড়ালে এখন একটা একটা দালানকোঠার জঙ্গলে পরিণত হচ্ছে। নির্মাণ ও নিয়োগ-বাণিজ্যে উপাচার্যদের ঘুষ ও দুর্নীতির ভাগবাটোয়ারার খবর জাতিকে লজ্জিত করেছে। বারোশো, চৌদ্দশো কোটি টাকা এসব অঙ্ক আজকাল ডালভাতেই পরিণত হয়েছে। প্রকল্পের এই রমরমার যুগে অনুবাদ কেন্দ্র গড়ে তোলার কোনো উদ্যোগ দেখিনি। তেমনটা ভুলক্রমে তারা যদি নিতেনও, এই বিপুল দুর্নীতি আর অদক্ষতমদের শীর্ষস্থানে বসানোর আমলে কোনো ভালো ফল পাওয়ার আশা করাটা বাতুলতা। কিন্তু তার পরও, যদি কোনো দিন সুদিন আসে, মাতৃভাষায় বিশ্বজ্ঞানের চাহিদা সৃষ্টি হয়, তখন বাস্তবায়ন করার আশাতেই এই পরিকল্পনাগুলো ভেবে রাখতে ক্ষতি নেই।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক সংগঠক
শেয়ার করুন
ফিরোজ আহমেদ | ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

জ্ঞানের ইতিহাসের বড় অংশজুড়ে আসলে রয়েছে অনুবাদেরই ইতিহাস। অনুবাদ সেই মাধ্যম, যার সাহায্যে একটি সভ্যতার অর্জিত জ্ঞান সমকালীন অন্য একটি সভ্যতা অর্জন করে, এমনকি বহু শত বা সহস্র বছর পরেকার সভ্যতাকেও আলোড়িত করে। অন্তত একটা অপূর্ব উদাহরণের কথা বলতে পারি। রাজা রামমোহন রায় আরবিতে অনূদিত অ্যারিস্টটলের বই পড়েছিলেন তার কৈশোরে। গ্রিক দর্শন এভাবে আরবি অনুবাদের হাত ধরে পৃথিবীর আরেক প্রান্তের একটি প্রাণকে আলোড়িত করেছিল।
একটা সভ্যতা যখন এই অর্থে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে যে, অন্যতর সভ্যতা ও সংস্কৃতিগুলোর সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করতে হয়, তার চেয়ে প্রবীণতর সভ্যতাগুলোর কাছ থেকে অভিজ্ঞতা ধার নিতে হয়। এই যোগাযোগ ও জ্ঞান আহরণের মধ্যে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রযুক্তি নয়, ধর্ম-দর্শন, চিন্তা ও সংস্কৃতির চাহিদাও রয়েছে। খুব পরিচিত উদাহরণটার কথাই বলা যাক, প্রাচীন চীন ও তিব্বত প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অজস্র সংস্কৃত ও পালি গ্রন্থের অনুবাদ করেছে ধর্ম ও দর্শনের প্রয়োজন মেটাতে, অতীশ দীপঙ্কের মতো শাস্ত্রজ্ঞ এই প্রয়োজনে হিমালয় পাড়ি দিয়েছেন, এবং একইভাবে উল্টোদিক থেকেও ফা হিয়েন বা হিউয়েন সাং-এর মতো অজস্র চীনা পর্যটক হিমালয়ের দেয়াল অতিক্রম করেছেন।
সম্ভবত এই দিক দিয়ে এ যাবৎকালের সবচেয়ে আলোচিত ও যুগান্তরকারী ভূমিকা রেখেছিল বাইতুল হিকমা বা অনুবাদে যাকে প্রজ্ঞাগৃহ বলা যেতে পারে, মধ্যযুগের সেই আব্বাসীয় উদ্যোগটি। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বা অন্তত পৃষ্ঠপোষকতায় জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে খুবই নবীন একটি সভ্যতা জ্ঞানবিজ্ঞানে কত দ্রুত অন্যদের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারে, ছাপিয়েও যেতে পারে, তার এই দৃষ্টান্তটির সঙ্গে বাইতুল হিকমার নামটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত আছে। এখানকার নিয়োগপ্রাপ্ত পণ্ডিত ব্যক্তিরা সংস্কৃত, পালি, লাতিন, গ্রিক, সিরীয়, আর্মানীয়, হিব্রুসহ বিশিষ্ট সব ভাষার অজস্র গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। এর পরের প্রজন্মে আরব জগৎ মৌলিক জ্ঞান তৈরি করা শুরু করল দর্শন, গণিত, অধিবিদ্যা, রসায়ন, প্রকৃতিবিজ্ঞান, শারীরতত্ত্ব, ভূগোল, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানসহ বলা চলে তখনকার দুনিয়ার জ্ঞানের সবগুলো পরিচিত শাখায়।
অনুবাদের এই আলোড়ন দুভাবে ঘটে। একটা হলো রাজক্ষমতা নিজ দেশের পরিচয়কে সংহত ও প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। এর উদাহরণ এই বাংলাতেই আছে। বিখ্যাত সেই উদাহরণ হলো হোসেন শাহি রাজবংশের আমলে বাংলার বিকাশ।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা যেমন এই কাজগুলোতে ছিল, তেমনি ছিল বহু অজস্র ব্যক্তিগত উদ্যোগ। কিন্তু বলাই বাহুল্য, প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থনের কারণেই ব্যক্তিদের মধ্যেও প্রেরণা ও চাহিদা, উভয়টিই বহু গুণ শক্তিশালী ছিল। ফরাসি পণ্ডিত ভলতেয়ার যে ব্রিটিশ পণ্ডিত রজার বেকনকে (১২১৯-১২৯২) আধুনিক বিজ্ঞানের প্রবর্তক বলে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন, তার জীবনের বড় অংশটি কেটেছে আরবি অজস্র গ্রন্থ, বিশেষ করে আলোকবিদ্যার গ্রন্থসমূহ লাতিন ভাষায় অনুবাদে। বস্তুত আরবি ভাষায় অনূদিত এই বিপুল জ্ঞানের ভাণ্ডারই পরবর্তীকালে লাতিন ভাষায় আরেক দফা অনুবাদের মাধ্যমে ইউরোপীয় রেনেসাঁ বা নবজাগরণের সূত্রপাত ঘটায়। উল্লেখ্য, অজস্র গ্রন্থের মতো প্লেটো বা অ্যারিস্টটলের মতো গ্রিক দার্শনিকদের লেখাপত্রও আরবি থেকেই তখন লাতিনে অনূদিত হয়েছে, এগুলো লাতিন জগতে এক রকম হারিয়েই গিয়েছিল। ইতিহাসে এই অধ্যায়টি ‘রিডিসকভারি অব অ্যারিস্টটল’ হিসেবে পরিচিত। এরপর আরও একদফা অনুবাদের ঢেউ গিয়েছে লাতিন থেকে ফরাসি, ইংরেজি, জার্মান ইত্যাদি জাতীয় ভাষায় অনুবাদের, এবং তার মধ্য দিয়েই জাতিরাষ্ট্র হিসেবে আধুনিক ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো আকার পেয়েছে।
২.
আধুনিক যুগে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে অনুবাদ কীভাবে ঘটে, তার অনন্য নজির মিলবে চিনুয়া আচেবের বলা একটা গল্পে। ১৯৮১ সালে আচেবে জাপান ভ্রমণে যান। আশ্চর্য হয়ে তিনি দেখতে পান, জাপানিরা ইংরেজি নয়, জাপানি ভাষাতেই দর্শন কিংবা পদার্থবিদ্যার মতো গভীর বিষয়ে পারস্পরিক যোগাযোগ করেন। ওয়াজেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক কিনিচিরো তোবা এই বিষয়টা কীভাবে সম্ভব হলো, সেটা বুঝিয়ে বললেন কয়েক বাক্যের একটি গল্পে :
‘আমার দাদা টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮৮০ দশকের শুরুর দিককার স্নাতক। তার খেরোখাতা ভর্তি ছিল ইংরেজিতে। আমার পিতা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯২০-এর দশকের স্নাতক, আর তার খেরোখাতার আধাআধি ছিল ইংরেজিতে, বাকি আধখানা জাপানি ভাষায়। এক প্রজন্ম পর আমি যখন স্নাতক হই, আমার সবটা টোকাটুকি হয়েছিল জাপানি ভাষায়। এভাবে আমাদের নিজেদের ভাষার মাধ্যমে পশ্চিমা সভ্যতাকে পুরোটা আত্মস্থ করতে লেগেছিল তিনটি প্রজন্ম।’
শুধু জাপানিরা নন, প্রায় একই কাজ সম্পন্ন করেছে চীন, কোরিয়াসহ গত শতকে জাতীয় অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হওয়া সবগুলো জাতি। এবং বিশেষভাবেই চোখে পড়বে এই জাতীয় সক্ষমতা তৈরিতে ব্যর্থ এশিয়া ও আফ্রিকার প্রতিটি জাতির অভিজাত ও ক্ষমতাবান অংশের মধ্যে ইংরেজি কিংবা ফরাসি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় ভাষার ওপর নির্ভরতা।
৩.
বহু জাতির মধ্যে অনুবাদের এই কাজে রাষ্ট্রের উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হবে মাতৃভাষায় এই অনুবাদের কাজটি সম্পন্ন করা। একটা অনুবাদ সংস্থার মূল দায়িত্ব হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বইগুলোর একটা তালিকা নির্মাণ করা। এই অগ্রাধিকার বাছাই করার ক্ষেত্রে যেমন পদার্থ-রসায়ন-অর্থনীতির মতো প্রায়োগিক বিদ্যার প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি রয়েছে দর্শন, ধর্মতত্ত্ব ও সংস্কৃতিরও চাহিদা। খুব ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটি বিভাগে যে গ্রন্থগুলোর নাম দেওয়া হয় পাঠ্যবই বা সুপারিশ করা বই হিসেবে, তার বড় অংশই ইংরেজি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সমাজতত্ত্ববিষয়ক সমকালীন শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলোর একটা বড় অংশ এখনো বাংলায় অনূদিত হয়নি। বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে প্রাসঙ্গিক অজস্র গ্রন্থ এখনো আরবি, ফার্সি, পালি, ইংরেজিসহ বহু জাতির গ্রন্থে রয়েছে। এমনকি মধ্যযুগে বাংলা ভ্রমণ করা ইউরোপীয় বহু পর্যটকের রচনাও ইংরেজিতেও অনূদিত হয়নি। ফলে রাষ্ট্রীয় এই অনুবাদ সংস্থাটি শুধু যে ইংরেজি ভাষায় গুরুত্ব দেবে না, তা-ই নয়, অন্যান্য ভাষায়ও রচিত গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানবিজ্ঞানকে বাংলা ভাষায় আনার উদ্যোগ তাকে সংগঠিতভাবে গ্রহণ করতে হবে। আবার জ্ঞানের যে শাখাগুলোতে দ্রুত বদল আসে, কেননা সেগুলো খুবই প্রায়োগিক, নতুন নতুন জ্ঞান সেখানে প্রতিনিয়ত নির্মিত হয়, সেই বিষয়গুলোতেও বাস্তব কারণেই বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। পদার্থ, প্রকৌশল, রসায়ন, গণিতের মতো বিষয়গুলো এই ধারার অন্তর্গত।
প্রাচীন আমলে খানিকটা স্বতঃস্ফূর্ত বা বিচ্ছিন্নভাবে ঘটত বলেই এই কাজগুলোতে দশকের পর দশক, এমনকি প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে যেত। এখন কিন্তু এই কাজগুলোকে অনেক গোছানো এবং অনেক পরিকল্পিতভাবেই করা সম্ভব। ওপরে জাপানি সেই অর্থনীতিবিদ, কিনিচিরো তোবা যে অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন, তার চেয়েও কম সময়েই এটা অর্জন করা সম্ভব এ কারণেই যে, এখন লক্ষ্য ও পদ্ধতি সম্পর্কে সুসম্পূর্ণ একটা ধারণা আমাদের আছে। আরও বিশেষ করে উল্লেখ্য যে, বিচ্ছিন্নভাবে এই ঘটনাগুলো অনেক অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সিকি, আধা ইত্যাদি করে হয়েছে। ফলে ভাষার অভিজ্ঞতার আনুষ্ঠানিক জমাখাতায় খুব কম জমলেও এক রকম যোগ্যতা এরই মধ্যে তৈরিও হয়েছে। সেই ঊনিশ শতকে রাজেন্দ্রলাল মিত্র,
কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালীবর বেদান্তবাগীশ, রামকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, সজ্ঞীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ বসু, হেমচন্দ্র বিদ্যারতœ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রমুখ ব্যক্তিরা ‘সারস্বত সমাজ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাংলা ভাষায় বিদেশি জ্ঞানকে আত্মস্থ করার জন্য, সেই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে অল্প বয়সে যুক্ত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়গুলোতে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের পাশাপাশি একটা কেন্দ্রীয় অনুবাদ পর্ষদ বা সংস্থার মনোনীত বইগুলো অনুবাদের জন্য পদোন্নতিসহ অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়া হলে ‘সারস্বত সমাজ’-এর সেই দেড়শত বছর পুরনো স্বপ্নটা এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব। শুধু প্রয়োজন এগুলোকে টাকা কামানোর খনি না বানিয়ে উদ্যমী ও যোগ্য ব্যক্তিদের যথাযথ স্থানে বসানো।
৪.
বাংলাদেশে এখনো এমন উদ্যোগ ব্যক্তিগত কিংবা যৌথ উদ্যোগে থেমে থেমে হচ্ছে, সেটা মিথ্যা নয়। কিন্তু যেটা নেই, সেটা হলো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সামগ্রিক একটা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ, এবং লুণ্ঠনের প্রকল্প না করে সেটির বাস্তবায়ন। এই লেখাটা শেষ করতে চাই তেমনি একটি অসাধারণ উদ্যোগের মৃত্যুর কাহিনী বর্ণনা করে।
১৯৮০ দশকে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক একটা অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ে একটা পর্ষদ গঠন করে তারা চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রধান পাঠ্যবইগুলোকে বাংলায় অনুবাদ করার একটা দুঃসাহসী কাজে হাত দেন। অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের অনেকেরই কারিগরি জ্ঞান থাকলেও ভাষাজ্ঞানে দুর্বলতা ছিল, কাজেই সেই সম্পাদনাতেও তারা বিশেষ মনোযোগ দেন। একে একে তারা অনুবাদ করে ফেলেন ডেভিডসনের ‘টেক্সট বুক অব মেডিসিন’ আর কানিংহামের ‘অ্যানাটমি’ এই দুটো বিশাল মোটা বই। সম্পাদনায় ছিলেন আহমদ রফিক, সাঈদ হায়দার আর শুভাগত চৌধুরী। বাংলা একাডেমি সেই বই দুটো প্রকাশ করে। কিন্তু মেডিকেল কলেজগুলো সেই বইটিকে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে গ্রহণ করতে বা প্রচার করতে বা স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
ফলাফল হলো বিপুল এই পরিশ্রম পুরোটাই অপচয়ের খাতায় চলে যাওয়া। অথচ আমাদের আগে ও পরে অনেক জাতি মাতৃভাষায় প্রকৌশল এবং চিকিৎসাশাস্ত্রকে অনুবাদ করেছে। মাতৃভাষায় পড়ার কারণেই তাদের নিজ নিজ বিষয়ে ব্যুৎপত্তি গভীরতর হয়েছে।
অনেকেই খেয়াল করেছেন, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও উন্নয়ন যজ্ঞের আড়ালে এখন একটা একটা দালানকোঠার জঙ্গলে পরিণত হচ্ছে। নির্মাণ ও নিয়োগ-বাণিজ্যে উপাচার্যদের ঘুষ ও দুর্নীতির ভাগবাটোয়ারার খবর জাতিকে লজ্জিত করেছে। বারোশো, চৌদ্দশো কোটি টাকা এসব অঙ্ক আজকাল ডালভাতেই পরিণত হয়েছে। প্রকল্পের এই রমরমার যুগে অনুবাদ কেন্দ্র গড়ে তোলার কোনো উদ্যোগ দেখিনি। তেমনটা ভুলক্রমে তারা যদি নিতেনও, এই বিপুল দুর্নীতি আর অদক্ষতমদের শীর্ষস্থানে বসানোর আমলে কোনো ভালো ফল পাওয়ার আশা করাটা বাতুলতা। কিন্তু তার পরও, যদি কোনো দিন সুদিন আসে, মাতৃভাষায় বিশ্বজ্ঞানের চাহিদা সৃষ্টি হয়, তখন বাস্তবায়ন করার আশাতেই এই পরিকল্পনাগুলো ভেবে রাখতে ক্ষতি নেই।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক সংগঠক