মস্তিষ্কের সুস্থতায় শরীরচর্চা
আশরাফুল আলম | ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
শিক্ষার্থীদের জন্য শরীরচর্চা খুবই প্রয়োজনীয়। নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে নানাভাবে মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদি উপকার হয়। জানাচ্ছেন আশরাফুল আলম
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি : নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ধীরে ধীরে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। স্মরণশক্তির ওপর ব্যায়ামের তাৎক্ষণিক প্রভাবও আছে। একদল জার্মান গবেষক গবেষণা করে দেখেছেন, বিদেশি ভাষা শেখার সময় সাইক্লিং করলে বা হাঁটলে ওই ভাষার শব্দ মনে থাকার প্রবণতা অনেক বেশি।
মনোযোগ বৃদ্ধি : শরীরচর্চা মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নেদারল্যান্ডসের স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর এ নিয়ে গবেষণা করা হয়। সেই গবেষণায় দেখা যায়, এরোবিক বা কার্ডিও এক্সারসাইজ অর্থাৎ যে ব্যায়ামগুলো আমাদের হৃদপি-ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে সেগুলো মনোযোগ বৃদ্ধিতেও দারুণ সহায়ক।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি : নিয়মিত শরীরচর্চা শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্ককেও ক্রিয়াশীল করে তোলে।
শরীরচর্চার ফলে শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যক্ষমতা যেমন বাধা এড়িয়ে চলা, একসঙ্গে একাধিক কাজ করার ক্ষমতা, কোনো কিছু মনে রাখার ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি : শরীরচর্চা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো চাপের মধ্যে যদি একটু ব্যায়াম করা হয় তবে তা ওই চাপ থেকে একটু স্বস্তি দেয়। ব্যায়াম বিষণœতাও দূর করে। ব্যায়াম মস্তিষ্কের এন্ড্রোফিন নামক হরমোন ক্ষরণ করে যা আমাদের মনে সুখভাব সৃষ্টি করে।
সৃজনশীলতা বৃদ্ধি : ব্যায়ামের মাধ্যমে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। গবেষক লরেঞ্জা কলযাটো’র মতে ‘প্রতিদিন ব্যায়াম করা সৃজনশীলতা বৃদ্ধির একটি সহজ ও সঠিক উপায়।’ তিনি একটি গবেষণা করেন যেটি পরিচালিত হয়েছিল কিছু ক্রীড়াবিদ ও কিছু সাধারণ মানুষের ওপর। তিনি এলোমেলোভাবে ৪৮ জন ক্রীড়াবিদ বাছাই করেন যারা সপ্তাহে অন্তত চারবার ব্যায়াম করে। একইভাবে তিনি ৪৮ জন সাধারণ মানুষ বাছাই করেন যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না। তাদের বলা হয় লেখা ছাড়া কলমের আর কী কী ব্যবহার হতে পারে তা লিখতে। আরেকটি পরীক্ষা হিসেবে তাদের তিনটি শব্দ দিয়ে বলা হয় তিনটি শব্দের সঙ্গেই যুক্ত করা যায় এমন একটি শব্দ বের করতে। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, যেসব মানুষ সপ্তাহে অন্তত চারদিন ব্যায়াম করেছেন অর্থাৎ ক্রীড়াবিদরা সাধারণ মানুষের তুলনায় ভালো করেছেন। এ থেকেই বুঝা যায়, ব্যায়াম সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মস্তিষ্কের বিশ্রাম : ব্যায়াম মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন পরিমিত মাত্রায় ব্যায়াম ঘুমের ওষুধের মতো কাজ করে, এমনকি ইনসোমনিয়া রোগীর ক্ষেত্রেও। প্রতিদিন ঘুমের ৫-৬ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করলে তা শরীরকে উদ্দীপ্ত করে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। পরে যখন আবার শরীর আগের অবস্থায় ফিরে আসে তখন শরীর সংকেত পাঠায় যে তার বিশ্রাম প্রয়োজন। এভাবে ব্যায়াম ঘুমাতে সাহায্য করে। আর ঘুম মানেই মস্তিষ্কের বিশ্রাম। এভাবেই ব্যায়াম মস্তিষ্ককে বিশ্রামের সুযোগ করে দেয়। ফলে মস্তিষ্ক ভালো ও কর্মক্ষম থাকে।
শেয়ার করুন
আশরাফুল আলম | ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

শিক্ষার্থীদের জন্য শরীরচর্চা খুবই প্রয়োজনীয়। নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে নানাভাবে মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদি উপকার হয়। জানাচ্ছেন আশরাফুল আলম
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি : নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ধীরে ধীরে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। স্মরণশক্তির ওপর ব্যায়ামের তাৎক্ষণিক প্রভাবও আছে। একদল জার্মান গবেষক গবেষণা করে দেখেছেন, বিদেশি ভাষা শেখার সময় সাইক্লিং করলে বা হাঁটলে ওই ভাষার শব্দ মনে থাকার প্রবণতা অনেক বেশি।
মনোযোগ বৃদ্ধি : শরীরচর্চা মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নেদারল্যান্ডসের স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর এ নিয়ে গবেষণা করা হয়। সেই গবেষণায় দেখা যায়, এরোবিক বা কার্ডিও এক্সারসাইজ অর্থাৎ যে ব্যায়ামগুলো আমাদের হৃদপি-ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে সেগুলো মনোযোগ বৃদ্ধিতেও দারুণ সহায়ক।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি : নিয়মিত শরীরচর্চা শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্ককেও ক্রিয়াশীল করে তোলে।
শরীরচর্চার ফলে শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যক্ষমতা যেমন বাধা এড়িয়ে চলা, একসঙ্গে একাধিক কাজ করার ক্ষমতা, কোনো কিছু মনে রাখার ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি : শরীরচর্চা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো চাপের মধ্যে যদি একটু ব্যায়াম করা হয় তবে তা ওই চাপ থেকে একটু স্বস্তি দেয়। ব্যায়াম বিষণœতাও দূর করে। ব্যায়াম মস্তিষ্কের এন্ড্রোফিন নামক হরমোন ক্ষরণ করে যা আমাদের মনে সুখভাব সৃষ্টি করে।
সৃজনশীলতা বৃদ্ধি : ব্যায়ামের মাধ্যমে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। গবেষক লরেঞ্জা কলযাটো’র মতে ‘প্রতিদিন ব্যায়াম করা সৃজনশীলতা বৃদ্ধির একটি সহজ ও সঠিক উপায়।’ তিনি একটি গবেষণা করেন যেটি পরিচালিত হয়েছিল কিছু ক্রীড়াবিদ ও কিছু সাধারণ মানুষের ওপর। তিনি এলোমেলোভাবে ৪৮ জন ক্রীড়াবিদ বাছাই করেন যারা সপ্তাহে অন্তত চারবার ব্যায়াম করে। একইভাবে তিনি ৪৮ জন সাধারণ মানুষ বাছাই করেন যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না। তাদের বলা হয় লেখা ছাড়া কলমের আর কী কী ব্যবহার হতে পারে তা লিখতে। আরেকটি পরীক্ষা হিসেবে তাদের তিনটি শব্দ দিয়ে বলা হয় তিনটি শব্দের সঙ্গেই যুক্ত করা যায় এমন একটি শব্দ বের করতে। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, যেসব মানুষ সপ্তাহে অন্তত চারদিন ব্যায়াম করেছেন অর্থাৎ ক্রীড়াবিদরা সাধারণ মানুষের তুলনায় ভালো করেছেন। এ থেকেই বুঝা যায়, ব্যায়াম সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মস্তিষ্কের বিশ্রাম : ব্যায়াম মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন পরিমিত মাত্রায় ব্যায়াম ঘুমের ওষুধের মতো কাজ করে, এমনকি ইনসোমনিয়া রোগীর ক্ষেত্রেও। প্রতিদিন ঘুমের ৫-৬ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করলে তা শরীরকে উদ্দীপ্ত করে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। পরে যখন আবার শরীর আগের অবস্থায় ফিরে আসে তখন শরীর সংকেত পাঠায় যে তার বিশ্রাম প্রয়োজন। এভাবে ব্যায়াম ঘুমাতে সাহায্য করে। আর ঘুম মানেই মস্তিষ্কের বিশ্রাম। এভাবেই ব্যায়াম মস্তিষ্ককে বিশ্রামের সুযোগ করে দেয়। ফলে মস্তিষ্ক ভালো ও কর্মক্ষম থাকে।