
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
বর্তমান সময়টা তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। দেশের আর্থিক লেনদেন বর্তমানে প্রযুক্তিকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন অ্যাপে ঘরে বসেই ব্যাংকিং লেনদেন সম্পন্ন করা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চালু করা এনপিএসবি বা আরটিজিএস গেটওয়ের কথাই ধরেন। কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ব্যাংকে চলে যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। ইসলামী ব্যাংকের কার্ড দিয়ে অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে মুহূর্তেই। সামনে ট্যাপ অ্যান্ড গো আসবে, হাতে পরার ঘড়ির মধ্যে ভার্চুয়াল কার্ড আসবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকরা অতি সহজেই ব্যাংকিং কার্যাবলি সম্পন্ন করতে পারছেন। ক্যাশলেস সোসাইটি বাস্তবায়নে আধুনিক ব্যাংকব্যবস্থার বিকল্প নেই। আগে ব্যাংকসেবা গ্রহণ করতে হলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা নিত হতো। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল ব্যাংকব্যবস্থা চালু হওয়ায় ঘরে বসেই ব্যাংকসেবা গ্রহণ করা যায়। ইসলামী ব্যাংক ২০১৪ সালে খিদমাহ নামে শরিয়াহভিত্তিক ক্রেডিট কার্ড চালু করে। বর্তমানে বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডসেবা অফার করছে। ক্রেডিট কার্ডে দেশে প্রতি মাসে ২৫-২৭ বিলিয়ন টাকা লেনদেন হচ্ছে। আমাদের দেশে টিআইএন রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৮ লাখ। অন্যদিকে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষের সংখ্যার বিচারে কার্ড সংখ্যা ঠিকই আছে। ক্রেডিট কার্ড পুরোপুরি জামানতবিহীন ঋণ হলেও ঋণশোধের হার বেশ ভালো। তবে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারকারী বিভাগীয় শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর বাইরে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পর্যাপ্ত প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সেবা ও সুযোগের অনুপস্থিতি। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকব্যবস্থা এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তিসমৃদ্ধ টেকসই ব্যাংকব্যবস্থায় ক্রেডিট কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সেবার গ্রাহক দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে।
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মওলা বলেন, চাইলেই যে কেউ ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন না। আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার প্রমাণ দেখালে তবেই ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড দেবে। এ ক্ষেত্রেও আবার পেশাগত দিক বিবেচনায় নানা মানদণ্ড রয়েছে। যেমন ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বয়স হতে হবে অন্তত এক বছর, যাতে অন্তত ১০ লাখ টাকার লেনদেন হতে হবে। এর পাশাপাশি প্রয়োজন হবে টিআইএন সার্টিফিকেট, ক্ষেত্রবিশেষে ট্রেড লাইসেন্স ও রেফারেন্স এবং চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে ছয় মাসের ব্যাংক হিসাব দেখাতে হবে। মাসিক বেতন হতে হবে ২০ হাজার টাকার বেশি। চাকরির বয়সও ছয় মাসের কম হওয়া চলবে না। অন্য পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে যে পেশায় আছেন, সেখানকার আইডি কার্ড বা এমন কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। আপনি সব দিক থেকে যোগ্য হলে ব্যাংক উদ্যোগী হয়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
এখন ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে গেলে শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন সনদ দেখালে হয় না। টিআইএনের বিপরীতে আপনি নিয়মিত রিটার্ন জমা দিচ্ছেন কি না তারও প্রমাণপত্র দেখাতে হয়। নতুন এ বিধান চালুর ফলে ক্রেডিট কার্ড নেওয়া একটু কঠিন হয়েছে। তবে যারা ক্রেডিট কার্ড নিতে ইচ্ছুক তারা পরিপূর্ণ নিয়মাচার মেনে কার্ডের জন্য আবেদন করছে। আয়কর বিবরণী বাধ্যতামূলক করায় আগের তুলনায় ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকের সংখ্যা কিছু কমেছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর নানান সুবিধা রয়েছে। যত খরচ করছেন তার ওপর পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়। সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত দিন চার্জমুক্ত ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সেবা বা পণ্য কেনার জন্য একসঙ্গে পুরোটা খরচ করতে হয় না। কয়েক মাস ধরে ধাপে ধাপে অর্থ পরিশোধ করা যায়। হোটেলের ভাড়া বা বিমানের টিকিট ক্রেডিট কার্ডে পরিশোধ করলে অনেক সময় ছাড় পাওয়া যায়। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি বা চুরি করে অর্থ তোলা বেশ কঠিন। ডেবিট কার্ডের চেয়ে এর নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো। নগদ টাকার সুবিধা গ্রহণ করলেও একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মুনাফা হার থাকে শূন্য শতাংশ। নির্ধারিত সময় পার হলে মুনাফা কেটে নেওয়া হয়। অবশ্য কোনো কোনো ব্যাংকের নিয়ম-কানুনের জটিলতা ও লুকায়িত চার্জের কারণে গ্রাহকদের মনে এক ধরনের ভীতিও কাজ করে। ফলে অনেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে আগ্রহী হন না।
সারা দেশে ক্রেডিট কার্ড ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংকের এই এমডি বলেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ ও জেলা সদর এলাকাগুলোতে এখনো ক্যাশ লেনদেনের প্রাধান্য বেশি। ইসলামী ব্যাংকের দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা শাখাসমূহ থেকে গ্রাহকদের ক্যাশলেস লেনদেনের বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। নগদ লেনদেনের নেতিবাচক দিক ও ডিজিটাল লেনদেনের সুবিধার বিষয়ে গ্রাহকদের সচেতন করা হচ্ছে। সাধারণত শহরের জনগোষ্ঠী গ্রামের মানুষের তুলনায় প্রযুক্তি ও পরিষেবাবিষয়ক জ্ঞানে এগিয়ে থাকে। শহরের বড় শপিং মলগুলোতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা যায়। যার কারণে শহরে বসবাস করা গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ডের যথাযথ ব্যবহারের সুযোগ পান। ডিজিটাল ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে গ্রাম থেকে শহরে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। আশা করা যাচ্ছে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সামনের দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে।
গ্রাহকের জীবন সহজীকরণে ক্রেডিট কার্ডের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, একসময় ক্রেডিট কার্ড আভিজাত্যের প্রতীক হলেও বর্তমানে এটি জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। চলে এসেছে সাধারণের নাগালের মধ্যে। মানুষের মধ্যে কার্ডকে জনপ্রিয় করতে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দিয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। হঠাৎ জরুরি টাকার প্রয়োজনে ক্রেডিট কার্ড বড় সমাধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া ইলেকট্রনিক, আসবাবপত্র, পোশাক, গাড়ি, ভোগ্যপণ্যসহ অনেক কিছু বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনা যাচ্ছে। দামি পণ্যের ক্ষেত্রে কিস্তির সুবিধাও রয়েছে। হাসপাতালের বিলও দেওয়া যাচ্ছে ক্রেডিট কার্ডে। পকেটে টাকা না থাকলেও সমস্যা নেই, একটি ক্রেডিট কার্ড থাকলেই খাওয়া-দাওয়া কিংবা বাস-ট্রেন-বিমানের টিকিট কেনাও সহজ হয়ে গেছে। প্রতিটি কার্ড ব্যবহারের জন্য বার্ষিক একটা ফি দিতে হয় গ্রাহকদের। তবে কার্ড থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করলে সেই ফি থেকে মুক্তি মিলে। ইসলামী ব্যাংক কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। ব্র্যান্ডের পোশাক, ইলেকট্রনিক, জুতা, হোটেল-রিসোর্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য বা সেবা কিনলে ছাড় মিলছে। প্রতি মাসে কার্ডের বিল জমা দেওয়াটা অনেকের কাছেই ঝামেলা পূর্ণ মনে হয়। অর্থ জমা দেওয়ার শেষের দিনগুলোতে ব্যাংকে প্রচুর ভিড় থাকে। তবে সময়ের ব্যবধানে ইসলামী ব্যাংকে এ কাজও সহজ হয়েছে। ব্যাংকের কার্ডের বিল বর্তমানে ডিজিটাল সেবা ও মোবাইল আর্থিক সেবা বা এমএফএসের মাধ্যমে ঘরে বসেই জমা দেওয়া যাচ্ছে। আবার অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও কার্ডের বিল দেওয়া যায়। সুতরাং অকপটে বলা যায়, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে মানুষের জীবনে গতিময়তা এসেছে।
ক্রেডিট কার্ডে খেলাপির হারও কম। ২০২২ সালের জুনে এ হার ছিল ৪ শতাংশ, যেখানে ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি প্রায় দ্বিগুণ।
ক্রেডিট কার্ডে বার্ষিক ফি ও মুনাফা হার নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে মনিরুল মওলা বলেন, ইসলামী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের নিয়মকানুন গ্রাহকদের জন্য অনেক সহজ করা হয়েছে। আমাদের কার্ডে কোনো লুকায়িত চার্জ নেই। এ ক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনায় আমাদের মুনাফার যৌক্তিক পর্যায়ে রয়েছে। সাধারণ মানুষের কার্ডের প্রতি এক ধরনের ভীতি কাজ করে। ব্যাংকিং চ্যানেলের নানা ডকুমেন্টশন, নানান চার্জের চাপ এ সেবা সর্বজনীন করার পথে মূল অন্তরায়। এ ভীতি কাটিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের কার্ডের প্রতি আকৃষ্ট করাই ক্রেডিট কার্ডের বাজারে বড় প্রতিবন্ধকতা। এ ছাড়া এর খরচ সর্বসাধারণের নাগালের মধ্যে রাখাটাও এ সেক্টরে বড় চ্যালেঞ্জ বটে। ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের জনপ্রিয়তা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার কম থাকলে গ্রাহক এটি ব্যবহারে আগ্রহী হবে। আর যদি সুদের হার বেশি থাকে তাহলে মানুষ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার থেকে দূরে সরে যাবে। এ জন্য ক্রেডিট কার্ডের বিস্তারে সুদের হার সহনীয় পর্যায়ে থাকা আবশ্যক বলে মনে করেন বেসরকারি খাতের ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমরানুল হক। একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দেশ রূপান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক এ জেড ভূঁইয়া আনাস।
দেশ রূপান্তর : করোনার সময় দেশের ব্যাংক খাতে প্রযুক্তির বিস্তার ঘটেছে। প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে আপনারা কী পরিমাণ এগিয়েছেন?
এমরানুল হক : করোনার সময় আমরা ডিজিটাল নির্ভর হয়ে পড়েছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিটালের বিস্তার ঘটেছে। করোনা পুরো পৃথিবীকে ঘরে বসেই অফিস (ওয়ার্ক ফর হোম) করার বিষয়টি শিখিয়েছে। এ বিষয়টি আগে কেউ জানত না। শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, অন্যান্য খাতেও সে সময় বাসায় বসে অফিস করতে হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের কোথাও কোথাও এটা এখনো চলমান রয়েছে। ওয়ার্ক ফর হোম আমাদের পরিচালন খরচ কমিয়ে দিয়েছে। আগে আমরা সবগুলো সভাই সশরীরে উপস্থিত থেকে করতাম। এখন অনলাইনে করার কারণে যেভাবে আমাদের পরিচালন খরচ কমে যাচ্ছে ঠিক একই ভাবে আমাদের সময়ও বেঁচে যাচ্ছে। সভায় উপস্থিত হওয়ার যানজটের ভোগান্তি নেই, যাতায়াত খরচও নেই।
এ ছাড়া আমরা গ্রাহকের সুবিধা এবং কর্মীদের সুবিধার জন্য সে সময় অনেকগুলো ডিজিটাল প্রোগ্রাম নিয়ে এসেছি। আগে অ্যাকাউন্ট খুলতে সব গ্রাহককে ব্যাংকে আসতে হতো। এখন ঢাকা ব্যাংকের ‘ইজি ব্যাংক’ অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহক ঘরে বসেই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। ঢাকা ব্যাংক নামে আমাদের আরেকটা অ্যাপস আছে, যার মাধ্যমে আমরা অন্যান্য সার্ভিসও দিচ্ছি। এই অ্যাপসের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ডের আবেদন, ঋণের আবেদনসহ অন্য কাজগুলো করা হয়। এ ছাড়া ট্রেড বিজনেস বা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য আমরা একটি অ্যাপস নিয়ে এসেছি। যাতে গ্রাহক ব্যাংকে না এসেই তার অফিস বা বাসা থেকে এর কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। এ ছাড়া ন্যারো সেভিংস ও ই-ঋণ নামে আমাদের আরও দুটি অ্যাপ রয়েছে। ই-ঋণের মাধ্যমে গ্রাহক ব্যাংকে না এসেই ঋণ নিতে পারছে। তবে এই অ্যাপে আমরা ৩ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকি। এই ঋণ পরিশোধ করতে হয় ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে। এতে আমাদের কোনো কর্মীকে ব্যবহারও করতে হচ্ছে না। সম্পূর্ণ ডিজিটাল মাধ্যমেই এসব কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। এতে ঋণখেলাপি হওয়ার আশঙ্কাও কম। করোনা কমে গেলেও গ্রাহকরা এসব অ্যাপের সুবিধা নিচ্ছেন। এতে গ্রাহককে যেভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করতে হচ্ছে না, ঠিক একই ভাবে আমাদেরও পরিচালন খরচ কমে আসছে। এ জন্য ঢাকা ব্যাংক সব সময় প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে থাকে।
দেশ রূপান্তর : কার্ডভিত্তিক লেনদেনে আপনাদের অবস্থান কেমন?
এমরানুল হক : আমাদের কার্ডভিত্তিক লেনদেন বাড়ছে। গত চার বছরে আমাদের কার্ডের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০০৫-০৬ সালের দিকে আমরা কার্ড বিক্রি শুরু করেছিলাম। সে সময় থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমরা যে পরিমাণ কার্ড বিক্রি করেছি, ২০১৯-২২ সাল পর্যন্ত সমপরিমাণ কার্ড বিক্রি করেছি। আমাদের প্রচারণা ও পরিশ্রম পাশাপাশি গ্রাহকরা কার্ডের ব্যবহারের ভালো দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন হচ্ছেন। এটা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
দেশ রূপান্তর : বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন বাড়ছে। গত মার্চে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ক্রেডিট কার্ডে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় ক্রেডিট কার্ডের ভবিষ্যৎ কেমন?
এমরানুল হক : বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। পুরো বিশ^ই এখন ক্যাশলেস হয়ে যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ এখন ক্যাশ গ্রহণ করতে চায় না। মার্কেটে কেনাকাটায় বা ট্যাক্সির ভাড়া কোনো ক্ষেত্রেই ক্যাশ গ্রহণ করতে চায় না। আমারাও ধীরে ধীরে সেদিকে যাচ্ছি। আগে অনেকেই মনে করত ক্রেডিট কার্ড নিলে খরচ বেড়ে যাবে বা ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার বেশি। এখন মানুষ ধীরে ধীরে ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ড থাকলে মানুষকে ক্যাশ নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে না। পাশাপাশি টাকা না থাকলে গ্রাহক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে পারছেন। এই বিল পরিশোধে গ্রাহক ২০ থেকে ২২ দিন সময়ও পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কোনো সুদও দিতে হয় না। অনেকেই এই সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় পৃথিবী যেদিকে যাচ্ছে, আমরাও সেদিকেই যাচ্ছি। ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে। ধীরে ধীরে এর ব্যবহার এবং সংখ্যা দুটোই বাড়বে।
দেশ রূপান্তর : কারা ক্রেডিট কার্ড বেশি ব্যবহার করছে বলে আপনার মনে হয়?
এমরানুল হক : এখন সব শ্রেণির লোকজনই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন; বিশেষ করে যারা বেতনভোগী ও ব্যবসায়ী তারা ক্রেডিট কার্ড বেশি ব্যবহার করেন। এমনকি বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্যও আমরা ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছি। কারও ১৮ বছর পার হলে তার আয় অথবা তার ফ্যামিলির অবস্থান দেখে আমরা তাদেরও ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছি।
দেশ রূপান্তর : ক্রেডিট কার্ড মানুষকে ঋণগ্রস্ত করে তোলে বলে অভিযোগ আছে। আপনি কী মনে করেন?
এমরানুল হক : এটা নির্ভর করবে গ্রাহকের মাইন্ড সেটের ওপর। কোনো গ্রাহক যদি মনে করেন তারা এটি ঋণ নেওয়ার জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন, তাহলে এটি ভুল হবে। আমি মনে করি, সবার মাথায় রাখা উচিত ক্রেডিট কার্ড মানুষের জীবনকে সচ্ছল নয়, সহজ করে। যদি কেউ এটিকে সচ্ছলতার জন্য ব্যবহার করেন, তাহলে এটি তার জন্য ঋণগ্রস্ত করে তোলার ঝুঁকি তৈরি করে দিতে পারে। ক্রেডিট কার্ড গ্রাহককে অবশ্যই নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। তিনি এমন পরিমাণ টাকা নেবেন, যাতে পরিশোধ করতে পারেন। পাশাপাশি কোন সময়ের মধ্যে পরিশোধ করবেন, এটাও তার প্ল্যানিংয়ে থাকতে হবে। এই প্ল্যানিং যদি থাকে তাহলে ক্রেডিট কার্ড তার জীবনকে সহজ করে তুলবে। ক্রেডিট কার্ড বিতরণের পর রেজাল্ট যদি ভালো আসে তাহলে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। যদি রেজাল্ট খারাপ দেখা যায় তাহলে ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে সাবধানতা বেশি অবলম্বন করবে।
দেশ রূপান্তর : সুদের হার ক্রেডিট কার্ডের বিস্তারে বাধা কি না?
এমরানুল হক : এখন ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ১২ শতাংশের ওপরে নেওয়া যায় না। একসময় অনেক ব্যাংক এসব সুদের হার ২০, ২২ এমনকি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত নিয়েছে। এটা আমি মনে করি ঠিক নয়। যেহেতু এতে ঝুঁকি বেশি, দ্রুত প্রভিশনিং হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে অন্যান্য ঋণের তুলনায় সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ শতাংশ বেশি সুদ ধরা যেতে পারে। এমন কিছু করা উচিত নয় যেন গ্রাহক এটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন; অর্থাৎ অন্যান্য ঋণের তুলনায় ক্রেডিট কার্ডের সুদ কোনোভাবেই দ্বিগুণ হওয়া উচিত নয়। ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার যদি ভালো হয় বা কম হয়, তাহলে গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ডের প্রতি আগ্রহী হবেন। যদি সুদের হার আকাশছোঁয়া হয় বা বেশি হয় তাহলে এর থেকে মানুষ দূরে সরে যাবে। এ জন্য এটি সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত। তাহলে অনেকেই আগ্রহী হবেন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে।
দেশ রূপান্তর : বিভিন্ন অফারের কারণে আপনাদের ক্রেডিট কার্ডের বিস্তার ঘটছে কি না?
এমরানুল হক : আমরা সাধারণত ফেস্টিভ্যালের সময় অফার দিয়ে থাকি; অর্থাৎ রোজা, ঈদ, বৈশাখ বা অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এসব অফার দিয়ে থাকি। তখন ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। অনুষ্ঠান বা ঈদের সময় মানুষ এমনিতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বেশি করে। পাশাপাশি যদি অফার দেওয়া হয় তাহলে তার আরও বেশি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়। একটা সাধারণ মাসে ক্রেডিট কার্ডের যে পরিমাণ ব্যবহার হয়, যখন অফার দেওয়া হয় তখন সাধারণ সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ, আড়াই গুণ বা কোনো কোনো সময় তিন গুণ হয়ে যায়।
একটা সময় পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড শুধু উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। লংকাবাংলাই সর্বপ্রথম মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য ক্রেডিট কার্ড নিয়ে আসে। গত কয়েক বছরে এটি নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেও ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন আমরা গ্রামপর্যায়ে ক্রেডিট কার্ড পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেশ রূপান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের এসইভিপি ও হেড অব রিটেইল বিজনেস খোরশেদ আলম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দেশ রূপান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক এ জেড ভূঁইয়া আনাস
খোরশেদ আলম বলছিলেন, আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা ডিজিটাল হচ্ছে। আমরা বহুদূর এগিয়েছি। এটি বাড়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ডিজিটাল লেনদেন দুভাবে ভাগ করা যায়। একটি পেমেন্ট সিস্টেম, অন্যটি ফান্ড ট্রান্সফার। এর মধ্যে ফান্ড ট্রান্সফার ভালোই হচ্ছে। গার্মেন্টস সেক্টর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলেও এ লেনদেন শুরু হয়েছে ব্যাপকহারে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন দ্রুতই বাড়ছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে লেনদেনের ৮০ শতাংশ হবে ডিজিটাল। কয়েক দিন আগে আমরা গ্রাহককে চেকের মাধ্যমে পেমেন্ট করতাম। বর্তমানে সেটি ডিএফটিএম মাধ্যমে পরিশোধ করছি। ডিজিটাল লেনদেনে আমরা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি এগিয়েছি। এখনো আমাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, আমাদের মার্চেন্ট লেভেল যেভাবে আধুনিক হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হয়নি।
অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ক্রেডিট কার্ডে পিছিয়ে আছে। যদিও এখন তা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। দেশে এ ধরনের কার্ডের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খোরশেদ আলম বলেন, জনসংখ্যার বিচারে অনুযায়ী কার্ডের সংখ্যা কম। আগামীতে এটিকে বাড়িয়ে অন্তত চার কোটিতে নিয়ে যেতে হবে। ক্রেডিট কার্ড কম হওয়ার পেছনে যারা ইস্যু করছেন, তাদের গাফিলতি রয়েছে। যদিও এর পেছনে ব্যাংকগুলো ঝুঁকি বিবেচনা করছে। ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো পুরাতন গ্রাহক ও যাদের হ্যান্ডসাম স্যালারি আছে তাদের বেছে নিচ্ছেন। এজন্য যে গ্রাহককে ব্যাংকগুলো ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিতে চায় না আমরা তাদেরই টার্গেট করেছি। বিশেষ করে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার। আমাদের দেখে অনেক ব্যাংক এখন শিক্ষকদের টার্গেট করে কাজ করছে।
ইন্টার্ন ডাক্তারদের আমরা কার্ড দিয়েছি। দশম থেকে দ্বাদশতম গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদেরও আমরা কার্ড দিয়েছি। এমনকি যাদের মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা তারাও আমাদের কার্ড পেয়েছেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সরকারি চাকরিজীবী, ব্যাংকাররাই মূলত ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক। তাদের লক্ষ্য করে যদি আমরা কাজ করতে পারি তাহলে ক্রেডিট কার্ডের বাজার আরও বড় হবে। ক্রেডিট কার্ড যদি আপনি যথাযথভাবে ব্যবহার করেন, সময়মতো বিল পরিশোধ করেন তাহলে আপনি কখনই বিপদে পড়বেন না। কিন্তু যদি ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা নিয়ে আপনি জমি কেনেন কিংবা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান করেন, তাহলে আপনি কার্ডের বিল দিতে সমস্যায় পড়বেন এবং এটি আপনার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
আগে একটা ধারণা ছিল যে, এলিট শ্রেণির মানুষজনই শুধু কার্ড ব্যবহার করবেন। কিন্তু সেটি এখন পরিবর্তন হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে গ্রামাঞ্চলেও ক্রেডিট কার্ড পৌঁছে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করছি।
ক্রেডিট কার্ডে সুবিধা প্রসঙ্গে খোরশেদ আলম বলেন, ভোগ্যপণ্যের সব প্রোডাক্ট আপনি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিনতে পারবেন। মাছ, মাংস, ওষুধ, ঘরের আসবাবপত্র, এমনকি পার্লারে বিল পরিশোধও করা যায়। বিয়ের সময় অনেকেই অর্থসংকটে পড়েন। সে ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিতে পারছেন। আমাদের শিখা কার্ড রয়েছে। কাস্টমারদের ন্যানো লোন দেওয়ার জন্য কাজ করছি। কারও পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে তার ডাক্তারের খরচ মেটানো, অপারেশন করাতে হলে আমরা সেই সুবিধাও দিয়ে থাকি। আমরা বিভিন্ন সেক্টরের লোকজনের সঙ্গে এগ্রিমেন্ট করেছি। যদি কেউ আমাদের কার্ড দিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো লেনদেন করে তাহলে সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের পার্সেন্টেজ হারে ডিসকাউন্ট সুবিধা দিয়ে থাকি, শূন্য শতাংশ সুদে। ক্রেডিট কার্ড এমন একটি প্রোডাক্ট, আপনি চাইলে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ব্যবহার করতে পারবেন।
অনেক সময় আমরা বিভিন্ন অফার বা বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকি। লেনদেনের টাকা প্রতি মাসে বেতন থেকেও অল্প অল্প করে কেটে নেওয়ার সুবিধা রেখেছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সে পুরো টাকাটা পরিশোধ করে দিলে কোনো সুদ থাকবে না। কোনো কার্ডহোল্ডার যদি রেগুলার তারিখে পরিশোধ করে দেন তাহলে তিনি ঋণগ্রস্ত হবেন না। তারাই শুধু ঋণগ্রস্ত হন যারা টাকা খরচ করছেন আবার সময়মতো ঋণ পরিশোধ করছেন না।
ক্রেডিট কার্ডে খেলাপি প্রসঙ্গে লংকাবাংলার এ কর্মকর্তা বলেন, বরাবরই আমাদের কার্ডে খেলাপির হার ৮ শতাংশের মধ্যে ছিল। কিন্তু কভিডের মধ্যে এটি বেড়ে যায়। অনেক কার্ডধারী রয়েছেন যারা করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন। তারা চাকরি হারানোর আগে প্রত্যেক মাসে কার্ড থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন এবং সেটি স্যালারি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করতে পেরেছেন। তাদের অনেকের চাকরি হারিয়ে বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ খেলাপি হয়ে গেছেন। কেউ হয়তো করোনায় মারা গেছেন কিংবা কারও হয়তো বেতন কমে যাওয়ার কারণে খেলাপি হয়ে পড়েছেন। অবশ্য এ বছরের জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসেই খেলাপির পরিমাণ কমছে।
কার্ডের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে খোরশেদ আলম বলেন, ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে সার্ভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে আমরা যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করি সেটার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আমাদের একটি দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি ইউনিট আছে। তারা প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে ঝুঁকি প্রশমনের কাজ করছে। এখন পর্যন্ত আমাদের ক্রেডিট কার্ডে কোনো ধরনের সাইবার হামলা কিংবা এ ধরনের কোনো কিছু হয়নি। তবে ছোটখাটো জালিয়াতির কিছু ঘটনা ঘটেছে। এজন্য আমরা প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের সচেতন করছি কার্ডের পিন কারও সঙ্গে যাতে শেয়ার করা না হয়। এমনকি লংকাবাংলা থেকে ফোন দেওয়া হলেও দেবেন না। লংকাবাংলা কখনই গ্রাহকের কাছে পিন চাইবে না। তবে কেউ কেউ লংকাবাংলার কাস্টমার কেয়ারের নাম ভাঙিয়ে গ্রাহকদের ফোন করে পিন নম্বর চায়। এজন্যই আমরা গ্রাহকদের সতর্ক করছি যে কাউকে পিন নম্বর না দেওয়ার জন্য। সম্প্রতি আমরা কার্ডের বিল জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্ড নম্বরের পরিবর্তে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর তৈরি করেছি। এতে গ্রাহক সেই অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহার করে টাকা জমা দেবেন। এতে অন্য কেউ গ্রাহকের কার্ড নম্বর জানতে পারবে না।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী জাফর আলম।
দেশ রূপান্তর : দেশের আর্থিক লেনদেন কতটা ডিজিটাল হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
জাফর আলম : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দেশে ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে, যেখানে দৈনিক মোট লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ৪৮ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে যুক্ত আছে। যদিও এ সংখ্যা খুবই কম। তবে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। গত মার্চেই ৪ লাখ নতুন গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এই হিসাবে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ নতুন গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হচ্ছেন। দেশে প্রায় ৩ কোটি ডেবিট কার্ড ও ২২ লাখ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী আছেন। এসবের সঙ্গে এটিএম, পস, সিআরএম, সিডিএম, আরটিজিএস, ইএফটিএন ইত্যাদির ব্যবহার ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করছে বলে আমি মনে করি। আসলে প্রযুক্তিকে আমাদের ধারণ করতে হবে। এ হিসেবে আমরা যথাযথভাবে এগোচ্ছি বলে মনে হয়।
দেশ রূপান্তর : লেনদেনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সম্পন্ন হচ্ছে ক্রেডিট কার্ডে। এই সেবার ভবিষ্যৎ কেমন?
জাফর আলম : বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানুষজন তাৎক্ষণিক টাকার চাহিদা মেটাচ্ছে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। এখন কার্ডে ব্যাংকের বুথ থেকে নগদ টাকা তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের কেনাকাটা ও সেবার মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে। আর কোনো মুনাফা বা সুদ ছাড়া টাকা পরিশোধে সর্বনিম্ন ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ দিন পর্যন্ত সময় মিলছে। এসব কারণে দেশে দিনে দিনে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনও।
দেশ রূপান্তর : দেশে ডেবিট কার্ডের তুলনায় ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা অনেক কম। এর কারণ কী?
জাফর আলম : ডেবিট কার্ড দিয়ে নিজের ব্যাংক হিসাবের টাকা খরচ করা হয়। আর বেশির ভাগ ব্যাংক হিসাব খোলার সঙ্গেই গ্রাহকদের ডেবিট কার্ড দিয়ে থাকেন। ক্যাশ টাকা বহনের ঝামেলা মানুষ এখন এড়িয়ে চলতে চায়। আর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে গ্রাহকদের ব্যাংকের টাকা খরচ করতে হয়। ক্রেডিট কার্ডের খরচ করা টাকার ওপর মুনাফা বা সুদ গুনতে হয়। তাই দেশে ডেবিট কার্ডের তুলনায় ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা কম।
দেশ রূপান্তর : আয়কর বিবরণী জমা বাধ্যতামূলক করায় ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর ওপর কোনো প্রভাব ফেলছে কি না?
জাফর আলম : ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে গ্রাহকদের আয়কর বিবরণী জমা বাধ্যতামূলক করা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর ফলে কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না।
দেশ রূপান্তর : কোন শ্রেণি-পেশার গ্রাহক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন? শহরের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক সীমাবদ্ধ কেন? পুরো দেশে ক্রেডিট কার্ড ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না কেন?
জাফর আলম : চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ আর্থিকভাবে সচ্ছল যেকোনো মানুষ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। শহরের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা বেশি। আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে শহরের বসবাসকারী মানুষই সাধারণত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। এসআইবিএল সব সময় ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকবান্ধব। গ্রাহকের বিভিন্ন সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা সর্বদা ভালো কিছু করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের মার্চেন্ট আউটলেটে ডিসকাউন্ট, ইএমআই ও শূন্য শতাংশ আই পে সুবিধা চালু আছে। আরও বেশি সুবিধা দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আমাদের কার্ডসেবা প্রদানের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। মানুষ এখন নগদ টাকা বহন করতে চায় না। গ্রামেও এর চাহিদা তৈরি হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ইসলামি শরিয়াহসম্মত ও সুদমুক্ত কার্ড হওয়ায় আমাদের কার্ডের বাজার সম্প্রসারণে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি, আগামীতে আমাদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা আরও বাড়বে। সেই টার্গেট নিয়েই আমরা কাজ করছি।
দেশ রূপান্তর : ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকের নিরাপত্তা কতটা? গ্রাহকের কী ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন?
জাফর আলম : এসআইবিএল শরিয়াহভিত্তিক একটি আধুুনিক ব্যাংক। এর ক্রেডিট কার্ডও সম্পূর্ণ শরিয়াহ কমপ্লায়েন্ট। গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ডের সঙ্গে সাপ্লিমেন্টারি কার্ড নিতে পারেন, যা বিনা মূল্যেই দেওয়া হয়। এসআইবিএলের ক্রেডিট কার্ড অত্যন্ত সুরক্ষিত ও ই-কমার্স লেনদেনও টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন দ্বারা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। এসআইবিএলের ক্রেডিট কার্ড শরিয়াহসম্মত ও সুদমুক্ত হওয়ায় এর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। সমাজে সর্বস্তরের গ্রাহক আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। আমরা স্বল্প আয়ের চাকরিজীবীদের জন্য ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছি।
দেশ রূপান্তর : এসআইবিএলের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা কী?
জাফর আলম : তুলনামূলকভাবে আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে প্রফিট রেট, ফি ও অন্যান্য চার্জ অনেক কম। শরিয়াহসম্মত হওয়ায় আমাদের কার্ডে কোনো হিডেন চার্জ নেই। গ্রাহকরা বাংলাদেশের যেকোনো এটিএম থেকে কম খরচে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তুলতে পারেন। সব ধরনের পিওএস (পয়েন্ট অব সেল) মেশিনে আমাদের কার্ড ব্যবহার করা যায়। এসআইবিএলের কার্ডে বিভিন্ন নির্বাচিত মার্চেন্ট আউটলেটে প্রায় সময়ই বিভিন্ন ধরনের ইএমআই সুবিধায় শূন্য শতাংশ আই-পে সুবিধা দেওয়া হয়, যা গ্রাহককে সহজেই আকৃষ্ট করছে। এ ছাড়া এসআইবিএলের ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট সিস্টেমও অত্যন্ত নমনীয়, অর্থাৎ গ্রাহকরা পেমেন্ট দিতে সর্বোচ্চ ৫০ দিন পর্যন্ত মুনাফা ফ্রি সময় পান। এই সময়ের মধ্যে পেমেন্ট দিলে কোনো ধরনের মুনাফা চার্জ ধার্য করা হয় না। গ্রাহকরা কার্ড দিয়ে ব্যালান্স ট্রান্সফারের সুবিধা ভোগ করতে পারছেন খুব সহজেই। সেই সঙ্গে তারা বিভিন্ন নির্বাচিত আউটলেটে ডিসকাউন্টসহ ইএমআই সুবিধাও পাচ্ছেন। ব্যাংকের প্লাটিনাম কার্ডধারীদের জন্য বিনা মূল্যে প্রায়োরিটি পাস কার্ড দেওয়া হয়, যা দিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বলাকা ভিআইপি লাউঞ্জে ও বিশ্বব্যাপী নির্বাচিত লাউঞ্জে বিনা মূল্যে প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়া যায়। গ্রাহকরা এসআইবিএলের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দেশে ও বিদেশে এটিএম থেকে নগদ উত্তোলনের সুযোগ পান। বর্তমান সময়ে ক্রেডিট কার্ড হলো বিপদের বন্ধু। কারণ আমাদের কার্ড দিয়ে গ্রাহক প্রয়োজনের মুহূর্তে যখন-তখন যেকোনো সময়ে এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারছেন। বিভিন্ন পিওএস মেশিনে ব্যবহার করতে পারছেন, দেশে ও দেশের বাইরে ই-কমার্স লেনদেন করতে পারছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডিসকাউন্ট, ইএমআই ও শূন্য শতাংশ আই-পে সুবিধা পাচ্ছেন, ব্যালান্স ট্রান্সফারের মাধ্যমে কার্ড থেকে টাকা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নিয়ে নগদ ব্যবহার করতে পারছেন। কাজেই এসআইবিএলের ক্রেডিট কার্ড আসলেই মানুষের বিপদের বন্ধু, সব সময়ের সঙ্গী।
দেশ রূপান্তর : বিভিন্ন উৎসবে গ্রাহকদের নানা অফার দিচ্ছেন। এতে ব্যবসা কতটা বাড়ে?
জাফর আলম : আসলে ব্যবসা বাড়ার সঙ্গে এসব অফারের সম্পর্ক নেই। গ্রাহকদের সুবিধার্থে এ ধরনের অফার দেওয়া হয়ে থাকে। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন শপিং মল, ইলেকট্রনিক ও ফার্নিচার শোরুম, হোটেল ও রেস্তোরাঁর সঙ্গে চুক্তি করছি। গ্রাহকরা তাদের কেনাকাটায় আরও বেশি ডিসকাউন্ট, ইএমআই ও শূন্য শতাংশ আই-পে সুবিধা পেতে পারেন, সে ব্যাপারে কাজ করছে এসআইবিএল। এসআইবিএলের গ্রাহক তাদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা এবং প্রয়োজন মেটাতে পারছেন।
দেশ রূপান্তর : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জাফর আলম : আপনাদেরও ধন্যবাদ।
ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংক এখন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে। বাংলাদেশে ইস্যুকৃত মোট ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ২২ লাখ কিন্তু একক (ইউনিক) গ্রাহক সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। ক্রেডিট কার্ড পুরোপুরি জামানতবিহীন পার্সোনাল ঋণ হলেও ঋণ পরিশোধের হার খুব সন্তোষজনক। গ্রাহক পর্যায়ে একটি ক্রেডিট কার্ড দিতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কিছু অত্যাবশ্যক কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এটিকে ঋণ হিসেবে না দেখে লাইফস্টাইল পণ্য হিসেবে দেখে এর আবশ্যকীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করা হলে ক্রেডিট কার্ড ব্যাপ্তি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তখন নিম্ন আয়ের মানুষরাও ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন, যা ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে যেমন পিওএস, এটিএম, সিআরএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কিউআর কোড ইত্যাদি। বিগত বছরগুলোতে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা, ২০২২ সালে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তাই বলা যায়, প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে প্রথাগত আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা।
তুলনামূলক কম ব্যবহারকারী
আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম। দেশে ইস্যুকৃত ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ৩ কোটি ১০ লাখ যেখানে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যার মধ্যে যে বড় ব্যবধান, এর প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এছাড়া রয়েছে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা।
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে হলে আগে কার্ড ব্যবহারের ইকোসিস্টেম প্রসারিত করতে হবে। কিউ-আরকোড এবং অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন বৃদ্ধি পেলে পুরো দেশে ক্রেডিট কার্ড তথা সামগ্রিকভাবে কার্ডের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়বে।
ব্যবহারকারী কারা
ব্যাংকগুলো চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ী উভয় শ্রেণির গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে, তবে এক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঋণের সহজলভ্যতা এবং সুবিধাজনক পরিশোধ ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল অফার যেমন ইএমআই, ক্যাশব্যাক ডিসকাউন্টসহ বাই ওয়ান গেট ওয়ান, ইন্স্যুরেন্স, রিওয়ার্ড পয়েন্ট, মিট অ্যান্ড গ্রিট, লাউঞ্জ সুবিধা ইত্যাদি।
ঋণ শোধের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়
ক্রেডিট কার্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য পণ্য হয়ে উঠেছে। এটি নিতে হলে ঋণ পরিশোধের যোগ্যতার প্রমাণের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও দাখিল করতে হয়। দেশে এখন রিটার্ন জমা দেওয়ার হার বেড়েছে। সবাই প্রতি বছর তার আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। কিন্তু অনেকে অসাবধানতাবশত আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না। তাছাড়া অনেকের করযোগ্য আয় না থাকায় তারাও রিটার্ন জমা দেয় না। যা ক্রেডিট ইস্যু করার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করছে বলে মনে করি।
জীবন সহজ করছে ক্রেডিট কার্ড
ক্রেডিট কার্ড আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটির ব্যবহারও অত্যন্ত সহজ। ক্রেডিট কার্ড বিলম্বিত বিল পরিশোধের ভিত্তিতে কাজ করে, যার অর্থ আপনি এখন আপনার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করে অর্থ ব্যয় করতে পারেন এবং পরে তা সুবিধামতো সময়ে পরিশোধ করতে পারেন। ব্যবহৃত অর্থ গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট হয় না। এভাবে গ্রাহক প্রতিবার তার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল করে তুলেছে। একজন গ্রাহক যদি নিয়মিত সঠিক সময়ে তার ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করেন তাহলে কখনোই সেই গ্রাহক ঋণগ্রস্ত হবেন না। ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী মনিটরিং ও রিকভারি ব্যবস্থা থাকার কারণে এই সেক্টরের খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলক অনেক কম।
নিরাপত্তায় প্রয়োজন সচেতনতা
ডিজিটাল পেমেন্টগুলো সাধারণত বিভিন্ন ব্যবহারিক কারণে অফলাইন পেমেন্টের চেয়ে বেশি নিরাপদ। যেমন নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি না থাকা, চুরি, জালিয়াতির আশঙ্কা কম থাকা। ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকের যে ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন
কার্ড নম্বর, কার্ডের পেছনের ৩ সংখ্যার কার্ড ভেরিফিকেশন ভ্যালু (CVV2), ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP), মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং নিরাপত্তা পিন কারও সঙ্গে বিনিময় না করা।
সন্দেহজনক কোনো ওয়েবসাইটে ই-কমার্স লেনদেন থেকে বিরত থাকা ও কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকা।
সন্দেহজনক কোনো ই-মেইল অথবা এসএমএসে থাকা লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা।
সাইবার সংক্রান্ত ঝুঁকি বিবেচনায় ডিজিটাল ডিভাইসের সব সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা এবং নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
যেকোনো সন্দেহজনক লেনদেন অতিসত্বর ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চ অথবা ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
কার্ড হারানোর পরপরই ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
সাধারণত, অধিকাংশ ব্যাংকই নির্দিষ্ট লেনদেনের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করে দিয়ে থাকে, যার ফলে এটি গ্রাহকের ওপর বাড়তি কোনো চাপ সৃষ্টি করে না। ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রেডিট কার্ডের সুদের হারের তুলনায় বাংলাদেশে তা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। তবে ব্যাংকগুলো সেটেলমেন্টের দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনাসুদে বিল পরিশোধের সুযোগ দিয়ে থাকে। তাই যদি কোনো গ্রাহক বুঝে সচেতনভাবে নিয়মিত বিল পরিশোধ করে তবে এটা কিন্তু গ্রাহকদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ।
গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন উৎসবে নানা ধরনের অফার দিয়ে থাকে যার ফলে গ্রাহক বেশি বেশি লেনদেন করতে উদ্বুদ্ধ হয় যা ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।