
আশির দশকের গোড়া থেকে শুরু হওয়া দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিক যেমন বেড়েছে, তেমনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারও বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্যসেবার ৬৫-৬৭ শতাংশই দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাডব্যাংক। বাকি ৩৩-৩৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে সরকারি হাসপাতাল।
এ ছাড়া গত ২২-২৩ বছরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বেড়েছে ৮১০ শতাংশ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৮৯৫ শতাংশ। এ সময় এসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শয্যা বেড়েছে ৮২৫ শতাংশ।
এ সময় সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। ২০০০ সালের আগে দেশের সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি ৩৭ শতাংশ মানুষের আস্থা ছিল। সেটা এখন কমে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ধীরে ধীরে মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার দিকে ঝুঁকেছে।
১৯৯৭ সালে যেখানে মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেতে পকেট থেকে ব্যয় করত ৫৬ শতাংশ অর্থ, সেটা এখন বেড়ে ৬৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে এ সময় সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় ৩৬ থেকে কমে ২৩ শতাংশ হয়েছে।
দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের এমন প্রসারকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এ খাতের বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশের মানুষের জন্য যে পরিমাণ ও ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দরকার, সরকার তা পূরণ করতে পারছে না। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত সেই অভাব পূরণ করছে। এতে একদিকে যেমন দেশেই সব ধরনের চিকিৎসা পাচ্ছে মানুষ, তেমনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া কমেছে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে দেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের অবদান আছে। এখন যদি দেশে বেসরকারি হাসপাতাল না থাকত, তাহলে সরকারি হাসপাতাল কি আমাদের সব চিকিৎসার সংকুলান করতে পারত? নিশ্চয় না। তাহলে রোগীরা কোথায় যেত? হয় বিদেশে, নতুবা সরকারি খাতে সেবার পরিমাণ আরও বাড়াতে হতো। মোটকথা, দেশে স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের প্রয়োজন আছে এবং তারা সেবাও দিচ্ছে।’
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন বেসরকারি খাত থেকেই বেশি স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে। তবে এই সেবা নিতে গিয়ে ব্যক্তির পকেট থেকে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। তার পরও মানুষ এই ব্যয় করছে কারণ সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি তাদের আস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তারা মনে করে বেশি টাকা খরচ করলে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাবে। সেটা করতে গিয়ে কষ্ট করে হলেও বেসরকারি খাত থেকেই বেশি স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে।’
স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের অবদান ৬৫-৬৭ শতাংশ
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের উদ্যোক্তা ও স্বাস্থ্য খাতের গবেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্যসেবার ৬৫-৬৭ শতাংশ আসছে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত থেকে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিসিডিওএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. এবিএম হারুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের অবদান অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার ৬৫ শতাংশ দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বাকিটা দিচ্ছে সরকারি খাত।’ শমরিতা হাসপাতাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. হারুন বলেন, ‘এই খাত থেকে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে, যা জিডিপিতে অবদান রাখছে।’
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশে ১৫ শতাংশ মানুষ সরকারি খাত থেকে চিকিৎসা নেয়। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের চেম্বার থেকে নেয় ২৫ শতাংশ। বাকি যারা তারা কোয়াকের (ফার্মেসির দোকান ও হাতুড়ে চিকিৎসক) কাছে যায়। সে অর্থে বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসাসেবা নেয় বেসরকারি খাত থেকে।’
অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান কত জানতে চাইলে এই স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, ‘আমরা পকেট থেকে চিকিৎসার জন্য যে ব্যয় করছি, সেটাই দেশের জিডিপিতে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের অবদান। এখন আমরা স্বাস্থ্যসেবা নিতে ব্যক্তির পকেট থেকে (আউট অব পকেট) ব্যয় করছি প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। বেসরকারি খাত হয়ে সেটাই জিডিপিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ওষুধ, ডাক্তারের চেম্বার ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের ব্যয় আছে।’
বিদেশ যাওয়া কমছে, হচ্ছে সব ধরনের চিকিৎসা
দেশে এখন হৃদরোগ, ক্যানসার ও মস্তিষ্কের চিকিৎসা, কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও গবেষকরা। পাশাপাশি চিকিৎসার মান বাড়ায় রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে বলে মনে করেন তারা।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান বৃদ্ধির কারণে বাইরে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে এখনো যাচ্ছে। ধনীরা আগেও যেত, এখনো যায়। কিন্তু যাদের অতটা সচ্ছলতা নেই, তারা খুব কষ্ট করে পাশের দেশ ভারতে চলে যাচ্ছে। নতুন করে এখন মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে আগে থেকেই যায়। এই বিদেশ যাওয়া রোধ করতে হলে দেশের চিকিৎসার প্রতি আস্থার জায়গা ফেরাতে হবে। চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যকার সম্পর্ক ভালো করতে হবে।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, দেশে ভালোমানের হাসপাতাল থাকলে বিদেশে যাওয়া কমবে। যেগুলো জটিল রোগী, অনেক দিন ধরে অসুখে-বিসুখে ভুগছে, এখানে সেবা পাচ্ছে না, তারা বিদেশ যাবে। কিন্তু হঠাৎ করে দেখা দেওয়া রোগের চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। যাদের টাকা আছে, তারা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে, সেবাও পাচ্ছে। আমাদের এখানে যা আছে সেটা আরও কীভাবে ভালো করা যায়, সেটা চিন্তা করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি দুই জায়গায় দুর্বলতা আছে। সেটা কাটাতে হবে।
শুরুটা আশির দশকের গোড়ার দিকে
স্বাস্থ্যসেবা গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার শুরু আশির দশকের গোড়ার দিক থেকে। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই খাত এখন দেশের মানুষের চিকিৎসাসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে ডা. এবিএম হারুন বলেন, ২০০০ সালের আগে মাত্র কয়টা বেসরকারি হাসপাতাল ছিল। এখন তো প্রায় ১৫ হাজার হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ক্যানসার, কিডনি, গলব্লাডার, হার্ট, ব্রেইন, লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপনসহ সব ধরনের রোগের চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালে হচ্ছে। উপজেলা পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতাল হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষায়ও বেসরকারি খাত অবদান রাখছে।
এ খাতের অন্যতম এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত এত উন্নতি হয়েছে যে ৯৫ শতাংশ চিকিৎসা এখানেই সম্ভব। মাত্র ৫ শতাংশের জন্য বাইরে যেতে হয়। তবে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়ন হয়েছে একান্তই ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সেবা দিতে গিয়ে, সরকারের যে সহযোগিতা প্রয়োজন সেটা পাই না। সরকার ট্যাক্স ও বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসের বিল বাড়াচ্ছে। এসব কারণে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এটা এই খাতের প্রসারে সংকট।’
অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের প্রসারটা শুরু এই সেঞ্চুরির গোড়ার দিক থেকেই। তবে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাও সব জায়গায় ও সব সেবার প্রসার ঘটেনি। সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না করে ঢাকার বাইরেও করতে হবে।
হাসপাতাল বেড়েছে ৮১০% ও শয্যা ৮২৫%
দেশ রূপান্তরকে দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত বুধবারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬৪৩টি। এ ছাড়া সরকারি সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আরও ২ হাজার ২৭৭টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে। এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে শয্যা রয়েছে ৭১ হাজার। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে ৫ হাজার ৫৭৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শয্যা রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৮৩। এর বাইরে সারা দেশে নিবন্ধিত বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ১০ হাজার ৭২৭টি ও ব্লাডব্যাংক আছে ১৪০টি।
সে হিসেবে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৯ গুণ ও সরকারি শয্যার তুলনায় বেসরকারি শয্যা প্রায় দেড় গুণ বেশি।
বর্তমানে সরকারি আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১ হাজার ১০১টি ও বেসরকারি আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৯৭৩টি।
এ ছাড়া বর্তমানে দেশে সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে ৪ হাজার ৩৫০টি ও ৭২ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৪০০টি আসন রয়েছে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকারিতে প্রায় ৪০ ও ৬০ শতাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছে।
এ ছাড়া দেশের ১১টি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে মাত্র ৬৬০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে পরিচালিত একই ধরনের ২০০টি প্রতিষ্ঠানে ৪ হাজার ৩৪১ জন শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ ২০০৫ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে দেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছিল মাত্র ৬১৩টি, শয্যাসংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৩৭১। আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছিল ১ হাজার ৪২টি।
সে হিসেবে গত ২২-২৩ বছরে দেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ৮১০, শয্যা ৮২৫ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৮৯৫ শতাংশ বেড়েছে।
মানুষ কেন ঝুঁকছে বেসরকারি হাসপাতালে
অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, সরকারি হাসপাতালে রোগীদের চাপ বেশি। সেবা নিতে বেশ সময় লাগে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে গেলেই স্বাস্থ্যসেবা মেলে। এসব ঝামেলা এড়াতে কষ্ট হলেও টাকার বিনিময়ে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা পেতে বেসরকারি হাসপাতালেই যাচ্ছে।
এই গবেষক আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের অবকাঠামোগত উন্নতি ও সিস্টেমেও মানুষ প্রভাবিত হয়। সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু সেখানকার বাহ্যিক ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধা মানুষকে টানতে পারছে না। সরকারি হাসপাতালে রোগীন অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক, টেকনোলজিস্টের সংখ্যাও কম। এসব কারণেই বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষ বেশি ঝুঁকছে।
এই চিকিৎসক বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন চিকিৎসক অনুপাতে তিনজন নার্স ও পাঁচজন টেকনোলজিস্ট থাকবেন। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র উল্টো। আমরা শুধু চিকিৎসক বানাচ্ছি, কিন্তু নার্সের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। এ কারণে সরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবা সহজ হচ্ছে না। গোছানোভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার পরও সরকারি খাতে মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এখন উপজেলা পর্যন্ত চিকিৎসক পাওয়া যায়। অন্যদিকে, বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে গুণগত মান বেড়েছে। তবে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দক্ষতার ক্ষেত্রে সংকট কিছুটা রয়ে গেছে। এসব ঘাটতি পূরণে সবাই মিলে নজরদারি বাড়াতে পারলে ভালো হয়।
দেখভাল ও নজরদারির পরামর্শ
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বেসরকারি খাতের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এই খাতে স্বাস্থ্যসেবা কতটুকু বাড়ানো উচিত, সেটা বিবেচনায় রাখা উচিত। তিনি বলেন, ‘আমরা কি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাত লাগামহীন বাড়াব এবং এই বাড়ানোর ভবিষ্যৎ পরিণতি কী সেই জায়গাটা চিন্তা করা উচিত। যে বেসরকারি খাত গড়ে উঠেছে, সেই বেসরকারি খাত গুণগত সেবা দিচ্ছে কি না সেটাও দেখতে হবে। এখানে সবাই আসতে চাইলেও তাদের সবাইকে হাসপাতাল করতে দেওয়া উচিত না। যাচাই-বাছাই করে অনুমতি দেওয়া উচিত।’
এই গবেষক আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে বেসরকারি ভালো হাসপাতাল যেমন আছে, তেমনি ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতাল-ক্লিনিকও আছে। সবগুলো মান রক্ষা করতে পারছে না। এখানে ডাক্তারের রোগী দেখা ও সময় দেওয়া নিয়ে সমস্যা আছে। এখানে সেবার দামও বেশি। এসব বিবেচনায় নিতে হবে।
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় ভালো অবদান রাখছে। এই খাতের পরিধি অনেক বেড়েছে। এখানে তারা অনেক ভালো হাসপাতাল তৈরি করেছে। যেখানে মানুষ উন্নত চিকিৎসাও পাচ্ছে। বাইপাস সার্জারিসহ অনেক কঠিন সার্জারিও তারা করছে। যে সেবাটা মানুষ দেশের বাইরে থেকে নেয়, এখন সেটা দেশেই পাচ্ছে।
বেসরকারি খাত শুধু বড় হাসপাতালই তৈরি করেনি; তারা এই হাসপাতালের মাধ্যমে সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবা ছড়িয়ে দিয়েছে। জেলা, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে তারা।
সব চিকিৎসা সরকার দিতে পারে না। কারণ ১৭ কোটি মানুষের চিকিৎসা দিতে সরকারকে অনেক বেগ পেতে হয়। এই বেসরকারি খাতের মাধ্যমে তারা সরকারের স্বাস্থ্যসেবার কাজকেও অনেকটা লাঘব করে দিচ্ছে।
আরেকটা দিক হলো, তারা অনেক মেডিকেল কলেজও স্থাপন করেছে। সেখানে অনেক চিকিৎসক তৈরি হচ্ছেন। যারা দেশের সেবা করছেন, বিদেশেও যাচ্ছেন, চাকরি করছেন। তারা নার্সিং ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে। সেখানে নার্স তৈরি হচ্ছেন।
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছে। ৬০-৭০টি মেডিকেল কলেজ, শত শত ডায়াগনস্টিক সেন্টার করেছে, কয়েক হাজার হাসপাতাল করেছে। সেখানে মানুষ সেবা পাচ্ছে। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে।
করোনার সময়ও তারা ভালো ভূমিকা রেখেছে। করোনা পরীক্ষার জন্য তারা অসংখ্য ল্যাব তৈরি করেছিল। সেসব ল্যাবে লোকজন টেস্ট করতে পারছেন। তারা করোনার চিকিৎসা দিয়েছে। অনেক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) প্রয়োজন ছিল। তারা সেটারও ব্যবস্থা করেছে।
আবার অন্যদিকও আছে। সেখানটায় তাদের শোধরাতে হবে। যেমন তারা চার্জটা বেশি রাখে। আমি মনে করি যেন চার্জটা অতিরিক্ত না রাখা হয়, সেটা তাদের দেখা প্রয়োজন। অনেক সময় ভুল চিকিৎসাও হয়। সেটাও আমাদের শোধরাতে হবে, ঠিক করতে হবে। অনেক সময় অতিরিক্ত টেস্ট দেয় ও তাতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে টেস্টের হয়তো প্রয়োজন নেই, তারপরও টেস্ট দিয়ে দিল। ওষুধ বেশি দিল, অত ওষুধের হয়তো দরকার নেই। আমি মনে করি এদিকে তাদের অনেকটা ইমপ্রুভ করতে হবে।
এ ছাড়া অনেক জায়গায় অপারেশন করে, হয়তো সেখানে অপারেশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা নেই। এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
দেশের জিডিপিতে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুভাবেই অবদান আছে। তারা আয় করে। সে আয় থেকে ট্যাক্স দেয়। সেই ট্যাক্স সরাসরি জিডিপিতে অবদান রাখে। আরেকটা হলো, আপনি যদি ভালো স্বাস্থ্যসেবা দেন, মানুষ সুস্থ থাকে, তাহলে মানুষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও তারা বেশি উৎপাদনশীল হয়। এতে যে যেখানেই থাকুক না কেন, দেশের জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন অফিসে কাজকর্ম দ্রুতগতিতে হবে, শিল্পের উৎপাদন ভালো হবে, কৃষিতে উৎপাদন ভালো হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। এসব তো সরাসরি জিডিপিতে অবদান রাখে। আর যদি জাতি অসুস্থ থাকে, বেশি লোক অসুস্থ থাকে, চিকিৎসা না পায়, তখন তো অর্থনৈতিক উন্নয়ন কমে যাবে।
ভালো হাসপাতাল তৈরি হলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মানুষ কম যাবে। সেই টাকা দেশেই থাকবে। এসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা তো পড়াশোনা করে ও ডাক্তার হয়। আবার বিদেশ থেকেও অনেক ছাত্রছাত্রী আসে। তারা এসব প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করে। তাতে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। সেটাও দেশের জিডিপির জন্য একটা ভালো ভূমিকা রাখে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আমি মনে করি সবমিলে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত ভালো।
সরকার বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন পর্যায়ে যে ট্যাক্স (কর) নির্ধারণ করে, সেটা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী করে। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে সরকারের যেসব সার্ভিস গ্রহণ করবে, সেসবের জন্য তো পয়সা দিতে হবে। প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সময় যন্ত্রপাতির ওপর ট্যাক্স কমানো হয়েছে। চিকিৎসা-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ওপর তো ট্যাক্স কম ধরা হয়েছে। কাজেই সরকার তো তাদের সাহায্য করছেই।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের এক নতুন পালক যোগ করল ইউনাইটেড হসপিটাল। ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারের স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল’ (জেসিআই) স্বীকৃতি অর্জন করেছে। আর এই অর্জনটি আরও গুরুত্ব বহন করছে কারণ প্রথমবারের মতো জেসিআই সার্ভেতে অংশগ্রহণ করে নির্ধারিত ১ হাজার ২৭১টি মান ও মাপকাঠির প্রত্যেকটিতে ইতিবাচক ফলাফল (জিরো নট মেট) অর্জন করেছে ইউনাইটেড হসপিটাল, যা শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও বিরল। আর তাই ইউনাইটেড হসপিটাল অঙ্গীকার করে ‘স্বাস্থ্যসেবায় জিরো কম্প্রোমাইজ’।
জেসিআই হচ্ছে এমন একটি স্বীকৃতি যেটিকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার স্বর্ণমান হিসেবে ধরা হয়। এই স্বীকৃতিটি সেই হাসপাতালগুলোকেই দেওয়া হয়, যারা রোগীদের জন্য আপসহীন স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। এই মর্যাদা অর্জন করতে হাসপাতালগুলোকে হাজারেরও বেশি কঠোর মান বজায় রাখতে হয়। জেসিআই স্বীকৃতি একটি হাসপাতালের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার প্রতিফলন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই স্বীকৃতি অর্জন একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, অন্যদিকে রোগীর নিরবচ্ছিন্ন সেবা, নিরাপদ চিকিৎসা প্রদান করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে প্রথমসারির স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউনাইটেড হসপিটালের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগীর সুরক্ষা ও যত্নের গুণমান রক্ষা করা। জেসিআই স্বীকৃতি প্রমাণ করে ইউনাইটেড হসপিটাল বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। তারা এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করছে, যা তাদের রোগী ও কর্মীদের জন্য ঝুঁকি কমিয়ে আনছে। জেসিআই স্বীকৃতি অর্জন করতে গিয়ে ইউনাইটেড হসপিটাল দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের ধারায় অবদান ও পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মান রক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করেছে।
ইউনাইটেড হসপিটালের জেসিআই অর্জনের নেপথ্যের যাত্রা অনেক দিন ধরেই চলমান, যেটি এই হসপিটালের ক্রমাগত উন্নতির সাক্ষীস্বরূপ। হাসপাতালটি কৌশলগতভাবে অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছে। যে কারণে সেবার মান আরও উন্নত, সম্প্রসারিত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। হাসপাতালটি সেবার মান উন্নীতকরণের প্রচেষ্টায় সেবার প্রতিটি ধাপে আমূল পরিবর্তন এনেছে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড হসপিটালে প্রায় ছয় লাখ মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে আর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল প্রফেশনাল এবং সেবাদাতার হাতেই নিশ্চিত হচ্ছে এই জেসিআই মানের স্বাস্থ্যসেবা।
ইউনাইটেড হসপিটালের ভিশন হচ্ছে দেশের সব জায়গায় সর্বস্তরের মানুষের জন্য, তাদের সাধ্যের মধ্যে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি দেশের চিকিৎসা খাতকে সমৃদ্ধ করা। যে কথাই বারবার ব্যক্ত করেছেন ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন হাসান রশীদ ও ইউনাইটেড হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান।
আমরা যদি রোগীদের দিক থেকে দেখি, কীভাবে এই স্বীকৃতিটি উচ্চমানের সেবা নিশ্চিত করছে, আমাদের কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে যেগুলো সরাসরি রোগীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হসপিটালে প্রবেশ থেকে শুরু করে চিকিৎসা শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রোগীকে দেওয়া সেবাগুলোর টাইম ট্র্যাক নিশ্চিত করে রোগীর সঠিক চিকিৎসা। হসপিটালে ভর্তির সময় ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য ফল প্রিভেনশন ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়, সঙ্গে নিশ্চিত করা হয় রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট সার্ভিস। হুইলচেয়ারে বসা রোগীদের জন্য বিশেষ প্রবেশ থেকে শুরু করে বাথরুমে হ্যান্ডেল এবং রয়েছে হুইলচেয়ার নিয়ে প্রবেশ করার মতো বাথরুমও। ইউনাইটেড হসপিটালে রোগীদের পড়ে যাওয়া ঠেকাতে ও প্রবেশের পর থেকে রোগীর যতœ নিশ্চিত করতে দক্ষ নার্সিংব্যবস্থা রয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে রোগীর কক্ষ এবং বাথরুমের মেঝেতে লক্ষ রাখে, যাতে সেগুলো পরিষ্কার এবং শুকনো থাকে।
হসপিটালে ভর্তি হওয়ার পর একজন রোগী ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকে। আর রোগী যদি ইমার্জেন্সিতে আসে সে ক্ষেত্রে জেসিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী ১৫ মিনিটের মধ্যে তার প্রাথমিক অ্যাসেসমেন্ট নিশ্চিত করা হয়। ইমার্জেন্সিতে রোগীর দ্রুত মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চসংখ্যক ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন। ইউনাইটেড হসপিটাল সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনার পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে রোগীদের সুস্থ করে তোলার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
হসপিটালে ভর্তি প্রতিটি রোগী দিনে সাতবার খাবার পেয়ে থাকে এবং সঠিক চিকিৎসা প্রটোকল নিশ্চিত করার জন্য একজন সার্টিফায়েড ডায়েটিশিয়ানের চার্ট অনুযায়ী খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন করা হয়।
ইউনাইটেড হসপিটালের ডাক্তারের দেওয়া সব ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের ব্র্যান্ড নামের পরিবর্তে জেনেরিক নাম ব্যবহার করা হয়, যা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। হসপিটালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ সরবরাহের সময় একজন ‘এ’ গ্রেড ফার্মাসিস্ট ওষুধের ডোজ, সুবিধা-অসুবিধা ও সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে অবগত করেন। ওষুধের গুণগতমান ও কার্যকারিতা বজায় রাখতে এই মডেল ফার্মেসিতে প্রত্যেকটি ওষুধ কোল্ড চেইন মেনে সংরক্ষণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। ওষুধের প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে সংগ্রহ থেকে শুরু করে গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যেকটি স্তরে সঠিকভাবে এই চেইন মেনে চলা হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা পরীক্ষাও করা হয়। হসপিটালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম মানা হয়। এ ছাড়া ওষুধের আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত ধারা অনুযায়ী ডোজেজ লেবেলিং করা হয়, পাশাপাশি যেসব ডোজে উচ্চ সতর্কতা মানা জরুরি সেগুলোতে বিশেষ লেবেলিং ট্যাগ লাগানো হয়। এখানে জরুরি ওষুধের ১০০% সরবরাহ থাকে এবং ওষুধ সংরক্ষণের জন্য মানসম্পন্ন ফ্রিজের ব্যবস্থা রয়েছে।
ইউনাইটেড হসপিটাল প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মেডিকেল রেকর্ড সংরক্ষণ করে। যদি কোনো রোগীর কাছ থেকে তথ্য হারিয়ে যায়, তিনি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করার পর তার মেডিকেল রেকর্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
ইউনাইটেড হসপিটালে একটি সেন্ট্রাল স্টেরাইল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্ট (সিএসএসডি) রয়েছে, হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় যাতে কোনো ধরনের সংক্রমণ না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এই ইউনিটটি স্টেরিলাইজেশন ও হসপিটালের সব জায়গায় যেকোনো সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিসপত্র ফেলে দেওয়ার জন্য ইউনাইটেড হসপিটালে নিয়মিত অডিট হয়ে থাকে।
কীভাবে একটি জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতাল অন্য যেকোনো হাসপাতালের তুলনায় সেবার মানের দিক থেকে অনেক এগিয়ে, চলুন সে সম্পর্কে জেনে নিই। এখানে জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতালের মাত্রাগুলো কী কী এবং আপনি কীভাবে বুঝতে পারবেন যে আপনি সর্বোচ্চ সেবা পাবেন সে সম্বন্ধে জানতে পারবেন। যে তথ্যগুলো আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি, সেগুলো ছাড়াও এখানে আরও কিছু বিষয় রয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে ইউনাইটেড হসপিটাল তাদের সেবার মান উন্নত করেছে।
ইউনাইটেড হসপিটাল জেসিআই মান অনুযায়ী মৃত্যুর হার কমাতে ও রোগীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ইউনাইটেড হসপিটালে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার শূন্য শতাংশ, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।
একজন রোগীর হাসপাতালে অবস্থান একটি নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি হওয়া উচিত নয়। বৈশ্বিক মান অনুযায়ী এটি পাঁচ দিন, তবে এটি প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তিত হয়। ইউনাইটেড হসপিটাল দ্রুত এবং কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিতের মাধ্যমে রোগীর সুবিধার্থে হসপিটালে তাদের অবস্থানের সময় যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করে।
জেসিআই মান অনুযায়ী প্রতিটি রোগীর আগমনের সময় থেকে খুব কম সময়ের মধ্যে (সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট) একজন নার্স এবং পরে একজন ডাক্তারের দ্বারা রোগীর মূল্যায়ন খুব যতœসহকারে করা উচিত। ইউনাইটেড হসপিটাল ধারাবাহিকভাবে এই পদ্ধতি খুব কঠোরভাবে অনুসরণ করে আসছে।
ইউনাইটেড হসপিটাল সঠিক পোস্ট সার্জিক্যাল চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছে। সঠিক, নির্ভুল ও সংক্রমণমুক্ত অস্ত্রোপচার নিশ্চিতের মাধ্যমে রোগীদের আবার ফেরত আসা প্রতিরোধ করা হয়। প্রায় শতভাগ অস্ত্রোপচার সঠিক প্রস্তুতির সঙ্গে টাইম-আউট (অস্ত্রোপচারে টাইম-আউট হলো একটি সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি, যা অপারেশন শুরু করার আগে সঠিক রোগী, পদ্ধতি এবং স্থান নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ভুল সাইট, ভুল পদ্ধতি এবং ভুল ব্যক্তির অস্ত্রোপচার প্রতিরোধের জন্য একটি নিরাপত্তাব্যবস্থা) পদ্ধতি মেনে ও বৈশ্বিক মান অনুসরণ করে করা হয়। অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইউনাইটেড হসপিটাল কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সঠিক রোগ নির্ণয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষার মান নিশ্চিতকরণের একটি চাবিকাঠি।
ইউনাইটেড হসপিটালের ওঝঙ স্বীকৃত ল্যাবরেটরি রয়েছে, যেখান থেকে সার্বক্ষণিক সেবা পাওয়া যায়। ২০১৪ সাল থেকে টানা আইএসও স্বীকৃতি পেয়ে আসছে এই ল্যাব, যেটি নিশ্চিত করে এই হসপিটালের রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা। হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে একসঙ্গে ২২ জনকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন স্বনামধন্য চিকিৎসকরা। জরুরি প্রয়োজনে এখানে মাত্র তিন ঘণ্টায় ব্লাড টেস্ট করা সম্ভব।
জেসিআই স্বীকৃতি ইউনাইটেড হসপিটালে রোগীদের সেবাদানের জন্য উচ্চমান ও নিরাপদ যত্ন প্রদানে তাদের প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ হিসেবে দেখা যায়। হাসপাতালটি ক্রমাগত সেবার মান উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। জেসিআই স্বীকৃতি তার কৃতিত্বের একটি স্মারক। যেসব স্বাস্থ্যসেবার জন্য মানুষ বিদেশে যাচ্ছে, তাদের জন্য বিকল্প হতে পারে ইউনাইটেড হাসপাতাল।
বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিতে যারা উদ্যোগ নিয়ে অগ্রগণ্য হয়েছেন তাদেরই একজন মো. লোকমান হোসেন। ১৯৯৫ সালে গড়ে তোলেন মিরপুর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। পরে যার নামকরণ করা হয় আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড। এরপর দিনে দিনে আলোক হেলথ কেয়ারের শাখা-প্রশাখা বিকশিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় রয়েছে মিরপুর-১০-এ ১০০ শয্যার হাসপাতাল ও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর পাশাপাশি পল্লবী, মিরপুর-১, কচুক্ষেত, মহাখালী ও টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে আলোকের শাখা রয়েছে। সেই সঙ্গে টাঙ্গাইলে একটি ফাউন্ডেশন হাসপাতালও পরিচালিত হচ্ছে। নির্মাণাধীন রয়েছে আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার। দেশের চিকিৎসাসেবার সার্বিক পরিস্থিতি ও বেসরকারি খাত নিয়ে আলোক হেলথ কেয়ারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. লোকমান হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের ফারুক হোসাইন।
দেশ রূপান্তর : দেশের চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের অবদান কতটুকু?
মো. লোকমান হোসেন : সরকার একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তৈরি করেছে। আমরা বেসরকারিভাবে এত প্রান্তিক পর্যায়ে যেতে পারিনি। তবে দেশের স্বাস্থ্যসেবার বড় একটা অংশ বেসরকারিভাবে দেওয়া হয়ে থাকে।
দেশ রূপান্তর : মোট চিকিৎসাসেবার কতটুকু বেসরকারি চিকিৎসা খাত থেকে আসে?
লোকমান হোসেন : মোট চিকিৎসাসেবার প্রায় ৭০ শতাংশ বেসরকারিভাবে হয়ে থাকে। আপনারা দেখবেন উপজেলা বা উপশহরগুলোতে বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ সেবা পেয়ে আসছে।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে আছে?
লোকমান হোসেন : দেশের উচ্চবিত্তরা এখনো চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। এর ফলে প্রতি বছর দেশ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ চিকিৎসাব্যবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এখন সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে রোগের সুচিকিৎসা মিলছে। সরকারের পাশাপাশি আমরা যদি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হাসপাতাল বানাতে পারতাম, তাহলে ভালো হতো। আমাদের হাতেগোনা কিছু হাসপাতাল আছে, সেখানেও কিন্তু পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। আমাদের যে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনা আছে এতে মানুষ সন্তুষ্ট হচ্ছে না। এর কারণ সংখ্যায় কম। সরকারি হাসপাতালে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। বেসরকারিতে আমরা যারা ভালো করছি সেখানেও ভিড়। তাই যাদের টাক-পয়সা আছে তারা বাইরে চলে যাচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসা নিতে প্রতি বছর কী পরিমাণ রোগী দেশের বাইরে যায়? এতে কত টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে? এই বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কী করতে পারে ও করছে?
লোকমান হোসেন : চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা। বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রতি বছর এর চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় হচ্ছে। সরকারের সুপরিকল্পনা ও বেসরকারি খাত-সহায়ক নীতিমালা এই চিত্রকে পাল্টে দিতে পারে। চিকিৎসার জন্য প্রতি বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই বিশাল অঙ্কের টাকাটা যদি আমরা সেভ করতে চাই, তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মতো আরও ১০টি ইউনিভার্সিটি আমাদের দরকার। প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহরে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল হতে পারে।
দেশ রূপান্তর : অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে রয়েছে?
লোকমান হোসেন : এখন দেশেই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা দেশের স্বাস্থ্যসেবাতেই আস্থা রাখছেন। পাশের দেশের সঙ্গে আমাদের দেশে স্বাস্থ্য খাতে খরচ তুলনা করলে কম। আর মান দিন দিন আরও বাড়ছে আমাদের।
দেশ রূপান্তর : জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি হাসপাতালের অবদান কতটুকু? বিনিময়ে বেসরকারি খাত কী পাচ্ছে সরকার থেকে?
লোকমান হোসেন : দেশে আধুনিক সেবা দেওয়ার মাধ্যমে বিদেশে অর্থ চলে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে। যার ইতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে। তবে কী পরিমাণ আর্থিক অবদান আমাদের রয়েছে সেটি সঠিকভাবে বলতে পারছি না। তবে আমরা সেবার পরিধি বাড়াতে চাই। এজন্য যেমন আমাদের এ মুহূর্তে প্রয়োজন একটি পরিশীলিত স্পেস বা প্লট। আমরা ছিন্নবিচ্ছিন্ন জায়গায় সেবা দিয়ে আসছি। আলোকের এখন দরকার পাঁচ একর জায়গা। তাহলে আগামী দশ বছরের মধ্যে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি ও বিশ্বমানের হাসপাতাল আমি তৈরি করতে পারব। কিন্তু সেই জায়গাটা আমার নেই। তাহলে সরকারের কোনো জায়গা থাকলে সেটা যদি আমাকে দিত, তাহলে ভালো হতো। সেখানে যদি সরকার শর্ত দেয় যে, মেডিকেল কলেজের একটা অংশে জনগণকে ফ্রি সার্ভিস দিতে হবেÑ তাতেও কোনো সমস্যা নেই। আমি তো জনগণের সেবা করতে চাই, সেই সুযোগটা দরকার। এর বাস্তবায়নের ফলে যেটা হবে, যেসব মানুষ বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে তাদের আমি দেশেই সেবা দিতে পারব।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় সরকারি নিয়মনীতি ঠিক আছে কি না? নাকি কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে? লোকমান হোসেন : নিয়মনীতি তো আছেই। বেসরকারি খাত যাতে এগিয়ে যায়, সরকার সেদিকে খেয়াল তো রাখছেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের ট্যাক্সের ব্যাপারে সরকার আরেকটু শিথিল হলে ভালো হয়।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন আছে। অনেকেই বলে থাকেন সেখানে রোগীদের গলা কাটার মতো অর্থ আদায় করা হয়। বেসরকারি চিকিৎসা ব্যয় কি মানুষের নাগালের মধ্যে আছে?
লোকমান হোসেন : বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসার ব্যয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। সরকার শতভাগ বিনামূল্যে সেবা দেয়। অন্যদিকে আমরা যখন টাকা নিই, তখনই মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। উন্নতবিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। সেখানে লাখ লাখ মানুষ ইন্স্যুরেন্সে টাকা দেয়, আর তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয় তারা সেবা পায়। এখন নিম্ন আয়ের মানুষ টাকার জন্য সেবা নিতে পারছে না, উচ্চবিত্তরা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর আমরা মাঝপর্যায়ে যারা আছে তাদের সেবা দিচ্ছি। তাই উন্নত দেশের মতো আমাদেরও ইন্স্যুরেন্সের মধ্যে আসতে হবে। তবে পাশের দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় কম।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী ধরনের সংকট হচ্ছে?
লোকমান হোসেন : বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা করতে গিয়ে সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যায় না। আমরা বেসরকারিভাবে মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছি। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন সকালে কিন্তু আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাচ্ছি না। দেশের অধিকাংশ ডাক্তারের চিন্তা থাকে তারা সরকারি চাকরি করবেন। আমাদেরও কমতি আছে, বেসরকারিভাবে তাদের চাকরির নিরাপত্তা দিতে পারিনি। আমরা যদি সরকারের চেয়ে বেশি বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দিই তারপরও তারা আমাদের নিরাপদ মনে করছেন না। তাদের জন্য ওই আস্থার জায়গাটা আমরা অর্জন করতে পারিনি। ফলে সরকারি ডাক্তাররা সকালে সরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন, আবার বিকেলে আমাদের এখানে আসছেন। বিকেলে এসে বা সন্ধ্যায় এসে তারা আমাদের প্রতিষ্ঠানে সেবা দিচ্ছেন। এটা কিন্তু শোভনীয় নয়।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসকদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা দিতে আগ্রহী করতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?
লোকমান হোসেন : কীভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিতে সরকারকেও কাজ করতে হবে। যেমন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে। এটি খুবই কার্যকর উদ্যোগ। পাশাপাশি আমরা যারা বেসরকারিভাবে কাজ করি, আমাদের আয়ের একটা অংশ জনশক্তি তৈরিতে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের আয়ের ৫ শতাংশ যদি আমরা জনশক্তি উন্নয়নে ব্যবহার করি, তাহলে সরকারের যে লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসাসেবাকে আরও এগিয়ে নিতে আপনার পরিকল্পনা কী?
লোকমান হোসেন : চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞান-সংশ্লিষ্ট মানবসম্পদ তৈরি করতে চাই। এজন্য একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার চিন্তা আছে। নিজে চিকিৎসক না হলেও আমি দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবার সঙ্গে আছি। আমি মনে করি, একজন মানুষ সুস্থ হলেই সুন্দর পৃথিবী গড়তে পারবে। আমার লক্ষ্য হলো একটি গুণগত মানের মেডিকেল কলেজ করা। আরেকটি হলো আমি বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল করতে চাই। আস্থা অর্জন করে দেশের টাকা যে বিদেশে চলে যাচ্ছে এটি রোধ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে চাই।
বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী। স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি হাসপাতালের অবদান ও মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা সেসব নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
দেশ রূপান্তর : দেশের স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের অবদান কতটুকু?
ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী : সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলো দেশের স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। গত এক দশকে অথবা এক যুগে যদি বলা হয়, উন্নত বিশে^র সব চিকিৎসা-সুবিধা বাংলাদেশে বিদ্যমান। একসময় শুধু একটা এনজিওগ্রাম করার জন্য পাশের ভারত অথবা বিদেশে যেতে হতো। কিন্তু এখন দেশে অর্ধশতাধিক পূর্ণাঙ্গ কার্ডিয়াক সেন্টার রয়েছে। একদম ছোট নার্সিং হোম থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হাসপাতাল দেশে রয়েছে, যেসব হাসপাতাল শুধু বিদেশেই দেখা যায়। সুতরাং বেসরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
দেশ রূপান্তর : মোট চিকিৎসাসেবার কতটুকু দেয় বেসরকারি চিকিৎসা খাত?
ডা. আশীষ : মোট চিকিৎসাসেবার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ অবদান বেসরকারি খাতের। কারণ সরকারের যে সেবা ও যে শয্যাসংখ্যা তা দিয়ে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং এতে বেসরকারি খাত বিরাট ভূমিকা পালন করছে।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী ধরনের সংকট হচ্ছে?
ডা. আশীষ : চিকিৎসাসেবায় আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে হাসপাতালে রোগীদের অনাকাক্সিক্ষত স্বজনদের কারণে। প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন এসে ঝামেলা করছে। বিদেশে হাসপাতালে একদম একান্ত স্বজন ছাড়া কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। সেই সঙ্গে বেসরকারি চিকিৎসা খাতে ব্যাংকঋণের অর্থ সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে হয়। একদম সাধারণ ব্যবসায়ীদের মতো আমাদের ঋণের বোঝা বহন করতে হয়। চিকিৎসা খাত হয়েও আমরা কোনো প্রকার বিশেষ সুবিধা পাই না। এমনি বিদ্যুৎ বিল, পানির বিলসহ যাবতীয় বিলও ব্যবসায়ীদের মতো আমাদের পরিশোধ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যদি বিদেশের মতো আমাদের জন্যও ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবার দিক বিবেচনা করা হয় তাহলে সেবার মান উন্নত হবে, কোনো বিঘœ ঘটবে না।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি চিকিৎসা খাতে সরকার কীভাবে সহযোগিতা করছে? এই সহযোগিতা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত কি না?
ডা. আশীষ : সরকার আমাদের দেখভাল করছে, এ বিষয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে একমত এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে সর্বদা প্রস্তুত। কিন্তু এখানে সহযোগিতা আরও বাড়ানো উচিত। মেডিকেল যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়া দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে এবং পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির প্রয়োজন। হাসপাতালগুলোতে টহল থাকা দরকার, যাতে রোগীর অনাকাক্সিক্ষত স্বজনরা হাসপাতালে এসে পরিবেশের বিঘœ ঘটাতে না পারে। পাশাপাশি চিকিৎসক এবং কাজের পরিবেশ যেন নিশ্চিত হয়। পাশর্^বর্তী দেশগুলোতে কিন্তু চিকিৎসা কিংবা চিকিৎসাসেবা দানকারী কোনো কর্মীকে যদি গালমন্দ কিংবা আঘাত করা হয় তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। এসব দেশে আইন আছে। আমরাও চাই দেশে চিকিৎসাসেবায় কোনো দুর্বৃত্তায়ন যেন না ঘটে। এ ব্যাপারে সরকারের গভীর দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় সরকারি নিয়মনীতি ঠিক আছে, নাকি কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে?
ডা. আশীষ : এখানে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক শাখাটি রয়েছে, সেটির নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। কারণ নিম্নমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। নিম্নমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের অনুমোদন দেওয়া না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি, দেশের সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব হাসপাতালগুলোর নেতিবাচক নিউজকে অতিরঞ্জিত করে ছাপা ঠিক নয়। পাশাপাশি ইতিবাচক খবরও ছাপা দরকার। অতিরিক্ত নেতিবাচক সংবাদের কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাত ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
বিদেশে চিকিৎসা কিংবা স্বাস্থ্যসেবা হচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। আমাদের দেশে আমরা মানুষকে স্বল্পমূল্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি। মানুষের দোরগোড়ায় ডাক্তার রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে ডাক্তার রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে রোগী এলে আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং ও টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন চলছে? ডা. আশীষ : এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত। এখানে ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ নেই। কোনো একসময় ছিল শুধু পয়েন্ট থাকলেই ভর্তি হওয়া যেত। কিন্তু এখন জাতীয়ভাবে মেধাতালিকার মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার একই সময় একই দিনে পরীক্ষা হয়। এ বছর থেকে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর কনফার্ম করে লিস্ট পাঠিয়ে দিচ্ছে মেডিকেল কলেজগুলোতে যে ৬০ জন ছাত্র ভর্তি হবে। কোনো ছাত্র যদি অন্য কোনো মেডিকেলে যেতে চায়, তখন যে শূন্যস্থানটি হয় সে ক্ষেত্রে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো সুযোগ নেই পরিবর্তন করার। সেটিও অটো মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ায় মেডিকেল কলেজের নীতিমালায় হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি খাতে প্রতি বছর কী পরিমাণ চিকিৎসক ও নার্স তৈরি হচ্ছে?
ডা. আশীষ : বেসরকারি খাতে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার চিকিৎসক এবং ৩০ হাজারের বেশি নার্স তৈরি হচ্ছে; বিশেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা নার্সের সংখ্যা সরকারির চেয়ে কয়েকগুণ।
দেশ রূপান্তর : জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি হাসপাতালের অবদান কতটুকু? বিনিময়ে বেসরকারি খাত কী পাচ্ছে সরকারের কাছ থেকে?
ডা. আশীষ : জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি হাসপাতাল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। অনেক চিকিৎসক একসময় বিদেশ চলে যেতেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারি চাকরিতে যাদের প্রমোশন হচ্ছে না কিংবা বঞ্চিত মনে করছেন, তারা বেসরকারিতে অনেক উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন। তাদের কষ্টার্জিত অর্থ আবার দেশেই বিনিয়োগ হচ্ছে। বেসরকারি খাত সরকারের সহযোগিতা পেলেও গেলেও মাঝে মাঝে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমাদের নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়। যেমন কভিডের সময় দুই তিন ধাপে কভিড টেস্টের মূল্য কমানো হয়েছে। ডেঙ্গুর সময়ও সরকার কয়েক দফায় খরচ বেঁধে দিয়েছে। যদিও এতে আমাদের অনেকাংশে মুনাফা কমে যায়। তবু আমরা জনগণের স্বার্থে কিংবা সরকারকে সহযোগিতা করতে সাড়া দিই।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে। চিকিৎসা ব্যয় কি মানুষের নাগালের মধ্যে?
ডা. আশীষ : আগেই বলেছি, বাংলাদেশে এখন উন্নত বিশ্বের সব চিকিৎসাসেবা বিদ্যমান। সুতরাং ভালো মানের যে হাসপাতালগুলো রয়েছে, বিশেষ করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চিকিৎসাব্যবস্থা দিয়ে যাচ্ছে। আমি যদি ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কথা বলি তো, আমাদের একটি ৫০০ শয্যার অনুমোদিত হাসপাতাল রয়েছে, যার মধ্যে ৩৫০ শয্যার হাসপাতাল অপারেশনে রয়েছে। আমাদের এখানে ওয়ান স্টপ কার্ডিয়াক সেন্টার রয়েছে, যেখানে মধ্যরাতে এবং ভোররাতেও প্রাইমারি পিসিআই করা হয়। আমরা ট্রমা এবং অ্যাকসিডেন্ট ম্যানেজমেন্টের জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছি, কমপ্লিকেটেড প্রেগনেন্সি এবং নিওনেটাল আইসিইউ, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, আইসিইউতে ২৪ ঘণ্টা স্পেশালিস্ট রয়েছেন। আমাদের সার্বক্ষণিক ডায়ালাইসিস বিদ্যমান। আমি আবারও বলছি, পৃথিবীর সবচেয়ে কম খরচে বাংলাদেশে চিকিৎসা হয়। যাদের আর্থিক সমস্যা আছে, যারা নিম্নবিত্ত তাদের অতিরিক্ত খরচ থেকে পরিত্রাণ দিতে স্বাস্থ্যবীমা চালু করা প্রয়োজন।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসা নিতে প্রতি বছর কী পরিমাণ রোগী দেশের বাইরে যায়। এতে কত টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কী করতে পারে এবং করছে?
ডা. আশীষ : বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কী করতে পারে তা এককথায় বলা কঠিন। কারণ কিছু মানুষ রয়েছে যারা হাঁচি-কাশির জন্যও বিদেশে যায়, এটা তাদের প্রেস্টিজ ইস্যু। আমরা এমনও দেখেছি যেসব রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে হাজারের ঘরে করা যায়, সেগুলো বিদেশে গিয়ে লাখ বা কোটির ঘরে মানুষ খরচ করে আসে। বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসা কিন্তু উন্নত বিশ্বের সব সুবিধাসম্পন্ন। অথচ আমি এমনও মানুষ দেখেছি যিনি তার মাকে বিদেশ থেকে ৬টি কেমোথেরাপি দিয়ে এনেছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে। এর সঙ্গে থাকা, খাওয়া বা প্লেন ভাড়া তো বাদই দিলাম। এই একই চিকিৎসা বাংলাদেশে মাত্র কয়েক লাখ টাকায় করা যায়। বেসরকারি হাসপাতালকে আরও বেশি পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে, তবে সেই সঙ্গে দেশের মানুষেরও আমাদের প্রতি আস্থা দেখাতে হবে। আমার খুব অবাক লাগে যে দেশের মানুষ নিজের দেশের ডাক্তারের ওপর ভরসা না করে বিদেশের ডাক্তারের ওপর ভরসা রাখছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট ও হতাশার। বাংলাদেশের মানুষকে নিশ্চয়তা দিতে চাই যে প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী হাসপাতাল দেশে রয়েছে এবং এখানে বিশ্বমানের চিকিৎসা হয়। কিছু কিছু অঙ্গ প্রতিস্থাপন যেমন লিভার, কিডনি বা হার্টের জন্য রোগীরা বিদেশে গেলেও এখন এই চিকিৎসা দেশেই শুরু হয়েছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনটিও শিথিল করা হয়েছে। বাংলাদেশে মাত্র দুই লাখ টাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন হয়। কিন্তু একই চিকিৎসা কলকাতায় করতে গেলেও বোধ হয় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে দেশে চিকিৎসা খরচ অনেকটাই নাগালের মধ্যে। আমি জনগণকে অনুরোধ করব, আপনারা দেশের চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রাখুন। অবশ্যই স্বাস্থ্যবীমা করবেন।
দেশ রূপান্তর : অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে রয়েছে?
ডা. আশীষ : লন্ডনে যদি একটা মানুষের হঠাৎ করে শরীর খারাপ হয়, তবে তাদের যে ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার সার্ভিস রয়েছে, তাদের নিয়মে প্রথম একজন জেনারেল প্র্যাকটিশিয়ানের (জিপি) কাছে যেতে হবে এবং তার অনুমতি ব্যতীত চাইলেও কেউ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে পারবেন না। হ্যাঁ, বেসরকারি চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসাব্যয় কল্পনাতীত। উদাহরণ দিয়ে বলি, আমার একজন আত্মীয়কে একজন অর্থোপেডিক সার্জনের কাছে নিয়ে গেলাম। ভিজিট হিসেবে তাকে ২৫০ পাউন্ড দিতে হয়েছে, যার বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। অথচ বাংলাদেশে ডাক্তারভেদে ভিজিট ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকা। সুতরাং দেশে কতটা কম খরচে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়।
চিকিৎসাসেবায় শুধু একা ডাক্তারের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে জড়িত নার্স, পিসিএ, ক্লিনার, অ্যাম্বুলেন্স, ড্রাইভার। সবাইকে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা। তাই সরকার, সাধারণ মানুষ সবাইকে আন্তরিক হতে হবে যাতে স্বাস্থ্য খাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
চট্টগ্রামে অপারেশনের পর রোগীর শরীরের অংশবিশেষে ক্যানসারের জীবাণু রয়েছে কি না পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হতো টেস্টের জন্য। আর সেই রিপোর্ট আসতে সময় লাগত ১০ থেকে ১৫ দিন। এ সময়টায় রোগীদের খুব টেনশনে থাকতে হতো। এই টেনশন দূর করতে এপিক হেলথ কেয়ারে দুই বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে হিস্টোপ্যাথলজি ল্যাব। আর এতে এখন তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে পরীক্ষার রিপোর্ট। ঢাকামুখী নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা এখন সম্ভব। এর পথ দেখিয়েছে ‘এপিক হেলথ কেয়ার’।
এপিক হেলথ কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক টিএম হান্নান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন রোগী আমাদের কাছে হিস্টোপ্যাথলিজ টেস্টের জন্য আসে। চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম আমরাই এ ধরনের টেস্ট চালু করলেও এখন আরও দুটি প্রাইভেট হাসপাতালে এই টেস্ট করা যায়।’
২০১৫ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান গেটের বিপরীত পাশে ‘এপিক হেলথ কেয়ার’ নামক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছিল। এটি গড়ে তোলার ইতিহাস চমকপ্রদ। মূলত তা বাণিজ্যিক স্থাপনা হিসেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে প্রথম তিনতলা বাণিজ্যিক এবং তারপর ওপরের দিকে নবমতলা পর্যন্ত ছিল আবাসিক। কিন্তু রিয়েল এস্টেট শিল্পে তখন মন্দাভাব চলছিল। আর তখন ফ্ল্যাট বিক্রি করতে না পেরে এপিক প্রপার্টিজ কর্তৃপক্ষ সেখানে ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়। শুধু পরিকল্পনা নিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি তারা দ্রুত বাস্তবায়নও করে। রিয়েল এস্টেট শিল্পের মন্দার যুগে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে তোলে আধুনিক মানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এটা যে আধুনিক মানের এবং বিশে^র সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম তা টের পাওয়া যায় ২০১৮ সালে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি আইএসও সনদ পায়। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আইএসও সনদ নেই। ফলে দেশের বাইরে চট্টগ্রামের ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট আমলে নেওয়া হতো না। এপিক হেলথ কেয়ার সেই যোগ্যতা অর্জন করে।
করোনাকালে সবাই যখন ঘরে বসে ছিল, তখন এপিক হেলথ কেয়ার হোম সার্ভিসের মাধ্যমে ঘর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করত। নগরবাসীকে সেবা দিতে সেই যে এগিয়ে চলা শুরু করে এরই ধারাবাহিকতায় তারা নগরীর আন্দরকিল্লায় আরেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্বগেটে আরও একটি চালু করে।
প্রতিদিন কী পরিমাণ রোগী সেবা নিতে আসে জানতে চাইলে এপিক হেলথ কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক টিএম হান্নান বলেন, ‘এখন প্রায় দুই হাজার রোগী হয় প্রতিদিন। এসব রোগী ১০টি বিভাগে প্রায় তিন হাজার ধরনের ল্যাব টেস্ট করে থাকে। এ ছাড়া এখানে ৭০ জন ডাক্তারের চেম্বারও রয়েছে।’
দক্ষ জনবল পাওয়া যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। আমরা ঢাকা থেকে ল্যাব টেকনোলজিস্ট এনে নিয়োগ দিয়েছি।’ এপিকে দিন দিন সেবাপ্রার্থী বাড়ছে। মামুন হোসাইন মামুন নামে হালিশহর হাউজিং এস্টেটের ‘জে’ ব্লকের বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে সবার জন্য সব পরীক্ষায় ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট রয়েছে। অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিচিত থাকলে কিংবা কোনো ডাক্তার সুপারিশ করলে ডিসকাউন্ট সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে গণহারে সবাই পেয়ে থাকে।’
সরাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা তারেকুল ইসলাম এসেছিলেন এমআরআই করাতে। তিনি বলেন, ‘এখানকার মেশিনগুলো নতুন হওয়ায় রিপোর্ট পরিষ্কার আসে বলে শুনেছি। তাই এখানে পরীক্ষা করতে এলাম।’
যেহেতু ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে রোগীদের টেস্ট দেওয়া হয়ে থাকে। তাই ভালো মানের ডাক্তার চেম্বার না থাকলে রোগীরা সেসব ডাক্তারের কাছে যাবে না আর ল্যাব টেস্টও সেখানে করাবে না। কিন্তু এখানে ভালো মানের ডাক্তারদের চেম্বার থাকাও রোগী বাড়ার অন্যতম কারণ বলে জানান এপিক হেলথ কেয়ারের কর্মকর্তারা।
২০০৩ সালে এপিক প্রপার্টিজ আবাসন ব্যবসায় আত্মপ্রকাশ করার পর নগরীতে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। এসব প্রকল্পে আড়াই হাজারের বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। এসবের বাইরে বর্তমানে ১৫টি প্রকল্প (রেডি ও চলমান) রয়েছে, যেখানে বিক্রয়যোগ্য অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে ২০০-এর বেশি। এপিক সৃষ্টির পর থেকেই ক্রিটিক্যাল ডিজাইনে আগ্রহী ছিল এবং এখনো সেই অবস্থায় রয়েছে। এপিকের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো পাহাড়ে ভবনের ডিজাইন ও এর সফল বাস্তবায়ন।
আবাসনে যে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামে সদর্পে এগিয়ে রয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্যসেবায় কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দিতেই আমাদের হেলথ সেক্টরের যাত্রা। আর যাত্রার পর থেকে আমাদের আর পেছনে তাকাতে হয়নি।’
কিন্তু হেলথ সেক্টরে আপনারা ল্যাব টেস্টের ক্ষেত্রে করপোরেট গ্রাহক গড়ে তুলেছেন। এটার উদ্দেশ্য কী ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান আমাদের করপোরেট গ্রাহক। এই করপোরেট গ্রাহকদের প্রায় অনেকেই ভিআইপি। বিশে^র বিভিন্ন দেশে ল্যাব টেস্ট করানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গ্রাহকদের সুপারিশগুলো আমাদের ল্যাবের উন্নতির জন্য কাজে লেগেছে। এতে পর্যায়ক্রমে গ্রাহকও বেড়েছে।’
এপিক প্রপার্টিজের আওতায় বিডকো, এপিক এগ্রো, এপিক এনার্জি, এপিক হেলথ কেয়ার, হোটেল সি ইন, এপিক ইঞ্জিনিয়ারিং ‘এন’ আর্কিটেক্টস, এপিক রেডিমিক্স অ্যান্ড কনক্রিট নামে প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কুমিল্লার বটগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নুরুল হক। আলেমদের অবস্থান সুসংহত করাসহ জেলার মাদ্রাসাগুলোকে একতাবদ্ধ রাখা ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। সাদাসিধে চলাফেরায় অভ্যস্ত আশি বছর বয়সী এই আলেম বেশ কয়েকটি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বোখারি শরিফের দরস দেন। তার বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লিখেছেন শামসুদ্দীন সাদী
অলি-আউলিয়ার পুণ্যভূমি বারো আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ঊর্বর ভূমিতে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য বুজুর্গ ও গাউস কুতুব। ভিনদেশ থেকেও আগমন ঘটেছে বহু বুজুর্গের। যাদের পুণ্য পরশে পত্র-পল্লবে সেজে উঠেছে বাংলার মাটি। তাদের উদার মানবতা, চরিত্রের মাধুর্য, মহানুভবতা, মানবপ্রেম ও মহান আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা ভিন্নধর্মীদের আকৃষ্ট করেছে। ফলে ইসলাম এদেশের মাটির বুকে সুদৃঢ়ভাবে শেকড় গেড়েছে। এখনো সারা দেশে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য আলেম ও বুজুর্গ। তাদেরই একজন মাওলানা নুরুল হক। দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কুমিল্লার প্রবীণ মুরব্বি। কুমিল্লা জেলার বটগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস।
আশি বছর বয়সী প্রবীণ এই আলেমের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে আনুমানিক ১৯৪১ সালে, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাতবাড়িয়া দাতামা গ্রামে। পিতা সোনা মিয়া ছিলেন অত্যন্ত দীনদার, আমানতদার ও বিশ্বস্ত মানুষ। মাতা জোবায়দা খাতুন ছিলেন দীনদার নামাজি ও পর্দানশিন নারী।
শৈশবে এক বুজুর্গের হাতে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি। গ্রামের মসজিদের ইমাম আমির উদ্দীন মাস্টার ছিলেন তার প্রথম শিক্ষক। প্রথাগত আলেম না হলেও আমির উদ্দীন মাস্টার শরিয়ত পালনে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। কোনো ধরনের অনৈসলামিক কার্যকলাপ তিনি সহ্য করতেন না। তার একান্ত চাওয়া ছিল, এলাকার মানুষ দীনের পথে ইসলামের পথে চলুক। সব ধরনের বেদআত ও পাপের কাজ থেকে দূরে থাকুক। এমন মান্যবর বুজুর্গের হাতে তিনি আলিফ বা-তা-সা ও বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন।
মক্তবের বাল্যশিক্ষার পর স্কুলে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। মা-বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দুই বছর পড়াশোনা বন্ধ থাকে। দুই বছর পর দাতামা পশ্চিম পাড়ার ছেলামত উল্লাহ বেপারির বাড়িতে পড়ালেখার ব্যবস্থা হয়। তিনি, তার জীবনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মাওলানা আবদুল ওয়াহাব (রহ.)-সহ আরও কজন ছিলেন এখানকার সহপাঠী। এখানে তাদের শিক্ষক ছিলেন একজন বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুল হাকিম (রহ.)।
আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় জোলাই ইসলামিয়া মাদ্রাসায়। তৎকালে অত্র এলাকায় জোলাই মাদ্রাসার পড়াশোনার সুনাম-সুখ্যাতি ছিল। শরহে জামি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ভর্তি হন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায়। দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই পড়াশোনা করেন। দাওরায়ে হাদিস শেষ করার পর হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই তাফসিরুল কোরআনের ওপর এক বছরের বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন। এ সময় তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় জগদ্বিখ্যাত বহু মনীষীর শিষ্যত্ব লাভ করেন।
তার কর্মজীবনের সূচনা হয় গোপালগঞ্জে এক আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে। সেখানে পনেরো বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা করেন। পরে সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন নিজ জেলা কুমিল্লায়। কুমিল্লার প্রাচীন মাদ্রাসা বটগ্রাম হামিদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের কয়েক বছর পর সহকারী মুহতামিম, এর কয়েক বছর পর ১৯৯০ সালে মুহতামিম নিযুক্ত হন। তখন থেকে অদ্যাবধি এই গুরুদায়িত্ব পালন করছেন।
আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকতার (সুলুক-তাসাউফ) পথে বহু বুজুর্গের সান্নিধ্য পেয়েছেন। অনেকের কাছ থেকে খেলাফতও লাভ করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়ালেখা কালেই মেখল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হামিউস সুন্নাহ মুফতি ফয়জুল্লাহ (রহ.)-এর কাছে বায়াত (শিষ্যত্ব গ্রহণ) হন। তার ইন্তেকালের পর হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা তওবার রাজনীতির প্রবর্তক মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন। হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) তখন বার্ধক্যজনিত কারণে শয্যাশায়ী। তাই তারই নির্দেশে শর্শদি মাদ্রাসার আউয়ালের কাছ থেকে সবক গ্রহণ করেন। হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর ফেনী ওলামা বাজার মাদ্রাসার মুহতামিম বরেণ্য বুজুর্গ হজরত মাওলানা আব্দুল হালিম (রহ.)-এর হাতে বায়াত হন এবং তার থেকেই খেলাফত লাভ করেন। এছাড়া হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা পলাশের হুজুরের কাছ থেকেও এজাজত লাভ করেন।
এক সময় কুমিল্লা জেলাজুড়ে ছিল শিরক-বেদআতের গয়রহ দাপট। নানা বেদআতে সয়লাব ছিল কুমিল্লা শহর। কওমি মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসায় পড়–য়া আলেম-উলামাদের নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হতো। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হতো মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে। কিন্তু সংঘবদ্ধতার অভাবে শিরক-বেদআত দূর করা ও কওমি মাদ্রাসার অবস্থান ও গুরুত্ব তুলে ধরার কোনো সুযোগ ছিল না। এই শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে জেলার চিন্তাশীল আলেমরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কুমিল্লা জেলা কওমি মাদ্রাসা সংগঠন।’ জেলার ছোট-বড় প্রায় সব মাদ্রাসা এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত। কাসিমুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা আশরাফ আলী (রহ.), বরুড়া মাদ্রাসার মুফতি আব্দুল ওয়াহাব (রহ.), রানীর বাজার মাদ্রাসার মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব (রহ.) এবং বটগ্রাম মাদ্রাসা থেকে মাওলানা নুরুল হক এই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কুমিল্লা জেলায় কওমি আলেমদের সুসংহত অবস্থান তৈরি হয়। কওমি শিক্ষার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা বন্ধ হয়। জেলার প্রাণকেন্দ্রে এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে থাকে। দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামারা আমন্ত্রিত হন। জেলার মাদ্রাসাসমূহকে একতাবদ্ধ রাখা ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সংগঠনের অবদান রয়েছে। বর্তমানে তিনি এই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এতসব গুরুদায়িত্ব পালন করার পরও সরল জীবনের এক মূর্তপ্রতীক তিনি। বিরোধপূর্ণ বিষয় থেকে সযতেœ নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। তার চলাফেরা একেবারে সাদাসিধে। পোশাক-আশাকে বিলাসিতা নেই। সাধারণ পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ক্ষেতখামারে কাজ করেন। পানি সেচ দেন। ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও লিল্লাহিয়াতের (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব কিছু করা) জীবন্ত নমুনা। কয়েকটি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে পড়াচ্ছেন হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বোখারি শরিফ।
মাওলানা নুরুল হকের জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দাওয়াত ইলাল্লাহ তথা আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা। দীনের কথা শোনানো। ইসলামের পথে চলতে উদ্বুব্ধ করা। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে আনাচে-কানাচে তিনি এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ান। দিনরাত ছুটে বেড়ান মাহফিল থেকে মাহফিলে। কিছুটা আঞ্চলিক ভাষায় বয়ান করেন তিনি। যে কারণে সর্বসাধারণ সহজেই তার বয়ানের মর্মবাণী হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন। আলেম থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই মুগ্ধমনে তার বয়ান শুনেন। তার বয়ানে খোঁজে পান জীবন পথের পাথেয়।
ইসলামের সৌন্দর্য, পারিবারিক জীবন, আখেরাতে ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির পথ-পদ্ধতি হলো তার বয়ানের বিষয়বস্তু। ইসলাম যে জীবনমুখী ধর্ম, ইসলামে কোনো বৈরাগ্য নেই তার জীবনে ও বয়ানে বারবার বিষয়টি ফুটে ওঠে। দুনিয়ার কাজকর্মও যে দীনের অংশ এবং তাতেও যে অফুরন্ত সওয়াব লুকিয়ে আছে নানা উপমার মাধ্যমে তিনি সেগুলো স্পষ্ট করেন। গতানুগতিক ওয়াজ মাহফিলের বাইরে বিশেষ ইসলাহি মাহফিলও করেন। ভক্ত মুরিদানের আমল আখলাকের খোঁজ-খবর নেন। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুরিদানের আমলি উন্নয়নের চেষ্টা করেন।
বহু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তিনি জড়িত। নিজ গ্রামে দাতামা মাদ্রাসা, ধনাইতরী নূরানী মাদ্রাসা, সুলতানপুর কারিয়ানা মাদ্রাসাসহ আরও অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অসংখ্য মাদ্রাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এখনো অনেক মাদ্রাসার নীতিনির্ধারণী কমিটি তথা মজলিসে শুরার সভাপতি ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক মাদ্রাসার সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন।
প্রতিটি কাজে তিনি কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণ করেন। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটেন। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছেন। কথিত আছে, বেপর্দা ও গোনাহ থেকে বাঁচতেই তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটেন। অবসর সময়ে ঘরোয়া কাজে সহযোগিতা করেন। কিতাব অধ্যয়ন করেন। ধ্যানে ডুবে থাকেন। সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সময় দেন। ১০ ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। ছেলেদের অনেকে আলেম হয়েছেন, বাকিরা পড়াশোনা করছেন।
একনিষ্ঠ ও দরদি মানব-দুর্ভিক্ষের এই দুঃসময়ে মাওলানা নুরুল হক আমাদের জন্য এক বটবৃক্ষ। তার ছায়া আমাদের জন্য রহমত। কেবল কুমিল্লার জন্য নয়, সারা দেশের জন্যই তিনি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন বহু বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব সারা দেশে ছড়িয়ে আছেন, যারা আমাদের অগোচরেই হারিয়ে যান। মৃতুর পর হয়তো সংবাদ পাই। জীবিত থাকতে তাদের থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ আমাদের হয় না। এ ধারার পরিবর্তন দরকার। আল্লাহতায়ালা এই মহীরুহ ব্যক্তিত্বসহ অন্যদের ছায়া আমাদের ওপর দীর্ঘায়িত করুন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
রাজধানীর ঢাকা কলেজের একটি আবাসিক হলে এক সাংবাদিককে আটকে রেখে ১৫ ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার রাতে কলেজটির শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে নির্যাতনের ওই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওবায়দুর সাঈদ।
তিনি একই কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি। কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বেও আছেন ওবায়দুর। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা কলেজ প্রশাসন।
নির্যাতনের শিকার ওবায়দুর সাঈদ জানান, ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য ফয়সাল আহমেদকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তাকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সভাপতি রাউফুর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে এই নির্যাতন চলে। খবর পেয়ে ১৫ ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা গিয়ে ওবায়দুরকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
ওবায়দুর সাইদ জানান, তিনি শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর তার কক্ষে আসে একই হলের ছাত্রলীগ নেতা রাউফুর রহমান সোহেল ও তার কয়েকজন অনুসারী। এ সময় সোহেল ওবায়দুরের বুকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। এরপর মুখে ও কানে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ফয়সালকে নির্যাতনের খবর কোন কোন পত্রিকায় পাঠানো হয়েছে। এরপর সোহেল ওবায়দুরের গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে তার মোবাইল ফোনের লক খুলতে বাধ্য করে। পরে ওই মোবাইলের স্ক্রিন থেকে কলেজের সাবেক ও বর্তমান সাংবাদিকদের যোগাযোগের মেসেঞ্জার গ্রুপ ও সাংবাদিক সমিতির গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে হওয়া কথোপকথনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে।
এর আগে গত বুধবার গেস্ট রুমে (হলের অতিথি কক্ষে রাজনৈতিক বৈঠক) যেতে দেরি করায় ইংরেজি বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং ডেইলি বাংলাদেশ ও প্রতিদিনের ক্যাম্পাসের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদকে বেধড়ক পেটায় ছাত্রলীগ নেতারা। এ ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় বিভিন্ন সাংবাদিক ও ছাত্রসংগঠন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক ছাত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সোহেলের হাত থেকে ওবায়দুরকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সোহেলের হিংস্র আচরণের কাছে আমরা অসহায়। বাধা দিতে গেলে সে আমাদেরও মারতে আসে। পরদিন দুপুরে ওবায়দুর বারবার জুমার নামাজ পড়তে যেতে চেয়েছে, কিন্তু ওকে নামাজও পড়তে দেওয়া হয়নি। রুমে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়। ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় নির্যাতনের পর ওকে বের করে নেওয়া হয় প্রিন্সিপালের রুমে।’
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতের পর ওবায়দুরের মোবাইল ফোন এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামীকাল (আজ রবিবার) রিপোর্ট জমা দেবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।