
বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিতে যারা উদ্যোগ নিয়ে অগ্রগণ্য হয়েছেন তাদেরই একজন মো. লোকমান হোসেন। ১৯৯৫ সালে গড়ে তোলেন মিরপুর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। পরে যার নামকরণ করা হয় আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড। এরপর দিনে দিনে আলোক হেলথ কেয়ারের শাখা-প্রশাখা বিকশিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় রয়েছে মিরপুর-১০-এ ১০০ শয্যার হাসপাতাল ও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর পাশাপাশি পল্লবী, মিরপুর-১, কচুক্ষেত, মহাখালী ও টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে আলোকের শাখা রয়েছে। সেই সঙ্গে টাঙ্গাইলে একটি ফাউন্ডেশন হাসপাতালও পরিচালিত হচ্ছে। নির্মাণাধীন রয়েছে আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার। দেশের চিকিৎসাসেবার সার্বিক পরিস্থিতি ও বেসরকারি খাত নিয়ে আলোক হেলথ কেয়ারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. লোকমান হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের ফারুক হোসাইন।
দেশ রূপান্তর : দেশের চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের অবদান কতটুকু?
মো. লোকমান হোসেন : সরকার একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তৈরি করেছে। আমরা বেসরকারিভাবে এত প্রান্তিক পর্যায়ে যেতে পারিনি। তবে দেশের স্বাস্থ্যসেবার বড় একটা অংশ বেসরকারিভাবে দেওয়া হয়ে থাকে।
দেশ রূপান্তর : মোট চিকিৎসাসেবার কতটুকু বেসরকারি চিকিৎসা খাত থেকে আসে?
লোকমান হোসেন : মোট চিকিৎসাসেবার প্রায় ৭০ শতাংশ বেসরকারিভাবে হয়ে থাকে। আপনারা দেখবেন উপজেলা বা উপশহরগুলোতে বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ সেবা পেয়ে আসছে।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে আছে?
লোকমান হোসেন : দেশের উচ্চবিত্তরা এখনো চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। এর ফলে প্রতি বছর দেশ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ চিকিৎসাব্যবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এখন সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে রোগের সুচিকিৎসা মিলছে। সরকারের পাশাপাশি আমরা যদি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হাসপাতাল বানাতে পারতাম, তাহলে ভালো হতো। আমাদের হাতেগোনা কিছু হাসপাতাল আছে, সেখানেও কিন্তু পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। আমাদের যে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনা আছে এতে মানুষ সন্তুষ্ট হচ্ছে না। এর কারণ সংখ্যায় কম। সরকারি হাসপাতালে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। বেসরকারিতে আমরা যারা ভালো করছি সেখানেও ভিড়। তাই যাদের টাক-পয়সা আছে তারা বাইরে চলে যাচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসা নিতে প্রতি বছর কী পরিমাণ রোগী দেশের বাইরে যায়? এতে কত টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে? এই বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কী করতে পারে ও করছে?
লোকমান হোসেন : চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা। বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রতি বছর এর চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় হচ্ছে। সরকারের সুপরিকল্পনা ও বেসরকারি খাত-সহায়ক নীতিমালা এই চিত্রকে পাল্টে দিতে পারে। চিকিৎসার জন্য প্রতি বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই বিশাল অঙ্কের টাকাটা যদি আমরা সেভ করতে চাই, তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মতো আরও ১০টি ইউনিভার্সিটি আমাদের দরকার। প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহরে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল হতে পারে।
দেশ রূপান্তর : অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে রয়েছে?
লোকমান হোসেন : এখন দেশেই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা দেশের স্বাস্থ্যসেবাতেই আস্থা রাখছেন। পাশের দেশের সঙ্গে আমাদের দেশে স্বাস্থ্য খাতে খরচ তুলনা করলে কম। আর মান দিন দিন আরও বাড়ছে আমাদের।
দেশ রূপান্তর : জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি হাসপাতালের অবদান কতটুকু? বিনিময়ে বেসরকারি খাত কী পাচ্ছে সরকার থেকে?
লোকমান হোসেন : দেশে আধুনিক সেবা দেওয়ার মাধ্যমে বিদেশে অর্থ চলে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে। যার ইতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে। তবে কী পরিমাণ আর্থিক অবদান আমাদের রয়েছে সেটি সঠিকভাবে বলতে পারছি না। তবে আমরা সেবার পরিধি বাড়াতে চাই। এজন্য যেমন আমাদের এ মুহূর্তে প্রয়োজন একটি পরিশীলিত স্পেস বা প্লট। আমরা ছিন্নবিচ্ছিন্ন জায়গায় সেবা দিয়ে আসছি। আলোকের এখন দরকার পাঁচ একর জায়গা। তাহলে আগামী দশ বছরের মধ্যে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি ও বিশ্বমানের হাসপাতাল আমি তৈরি করতে পারব। কিন্তু সেই জায়গাটা আমার নেই। তাহলে সরকারের কোনো জায়গা থাকলে সেটা যদি আমাকে দিত, তাহলে ভালো হতো। সেখানে যদি সরকার শর্ত দেয় যে, মেডিকেল কলেজের একটা অংশে জনগণকে ফ্রি সার্ভিস দিতে হবেÑ তাতেও কোনো সমস্যা নেই। আমি তো জনগণের সেবা করতে চাই, সেই সুযোগটা দরকার। এর বাস্তবায়নের ফলে যেটা হবে, যেসব মানুষ বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে তাদের আমি দেশেই সেবা দিতে পারব।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় সরকারি নিয়মনীতি ঠিক আছে কি না? নাকি কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে? লোকমান হোসেন : নিয়মনীতি তো আছেই। বেসরকারি খাত যাতে এগিয়ে যায়, সরকার সেদিকে খেয়াল তো রাখছেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের ট্যাক্সের ব্যাপারে সরকার আরেকটু শিথিল হলে ভালো হয়।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন আছে। অনেকেই বলে থাকেন সেখানে রোগীদের গলা কাটার মতো অর্থ আদায় করা হয়। বেসরকারি চিকিৎসা ব্যয় কি মানুষের নাগালের মধ্যে আছে?
লোকমান হোসেন : বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসার ব্যয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। সরকার শতভাগ বিনামূল্যে সেবা দেয়। অন্যদিকে আমরা যখন টাকা নিই, তখনই মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। উন্নতবিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। সেখানে লাখ লাখ মানুষ ইন্স্যুরেন্সে টাকা দেয়, আর তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয় তারা সেবা পায়। এখন নিম্ন আয়ের মানুষ টাকার জন্য সেবা নিতে পারছে না, উচ্চবিত্তরা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর আমরা মাঝপর্যায়ে যারা আছে তাদের সেবা দিচ্ছি। তাই উন্নত দেশের মতো আমাদেরও ইন্স্যুরেন্সের মধ্যে আসতে হবে। তবে পাশের দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় কম।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী ধরনের সংকট হচ্ছে?
লোকমান হোসেন : বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা করতে গিয়ে সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যায় না। আমরা বেসরকারিভাবে মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছি। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন সকালে কিন্তু আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাচ্ছি না। দেশের অধিকাংশ ডাক্তারের চিন্তা থাকে তারা সরকারি চাকরি করবেন। আমাদেরও কমতি আছে, বেসরকারিভাবে তাদের চাকরির নিরাপত্তা দিতে পারিনি। আমরা যদি সরকারের চেয়ে বেশি বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দিই তারপরও তারা আমাদের নিরাপদ মনে করছেন না। তাদের জন্য ওই আস্থার জায়গাটা আমরা অর্জন করতে পারিনি। ফলে সরকারি ডাক্তাররা সকালে সরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন, আবার বিকেলে আমাদের এখানে আসছেন। বিকেলে এসে বা সন্ধ্যায় এসে তারা আমাদের প্রতিষ্ঠানে সেবা দিচ্ছেন। এটা কিন্তু শোভনীয় নয়।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসকদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা দিতে আগ্রহী করতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?
লোকমান হোসেন : কীভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিতে সরকারকেও কাজ করতে হবে। যেমন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে। এটি খুবই কার্যকর উদ্যোগ। পাশাপাশি আমরা যারা বেসরকারিভাবে কাজ করি, আমাদের আয়ের একটা অংশ জনশক্তি তৈরিতে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের আয়ের ৫ শতাংশ যদি আমরা জনশক্তি উন্নয়নে ব্যবহার করি, তাহলে সরকারের যে লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসাসেবাকে আরও এগিয়ে নিতে আপনার পরিকল্পনা কী?
লোকমান হোসেন : চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞান-সংশ্লিষ্ট মানবসম্পদ তৈরি করতে চাই। এজন্য একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার চিন্তা আছে। নিজে চিকিৎসক না হলেও আমি দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবার সঙ্গে আছি। আমি মনে করি, একজন মানুষ সুস্থ হলেই সুন্দর পৃথিবী গড়তে পারবে। আমার লক্ষ্য হলো একটি গুণগত মানের মেডিকেল কলেজ করা। আরেকটি হলো আমি বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল করতে চাই। আস্থা অর্জন করে দেশের টাকা যে বিদেশে চলে যাচ্ছে এটি রোধ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে চাই।
আশির দশকের গোড়া থেকে শুরু হওয়া দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিক যেমন বেড়েছে, তেমনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারও বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্যসেবার ৬৫-৬৭ শতাংশই দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাডব্যাংক। বাকি ৩৩-৩৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে সরকারি হাসপাতাল।
এ ছাড়া গত ২২-২৩ বছরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বেড়েছে ৮১০ শতাংশ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৮৯৫ শতাংশ। এ সময় এসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শয্যা বেড়েছে ৮২৫ শতাংশ।
এ সময় সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। ২০০০ সালের আগে দেশের সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি ৩৭ শতাংশ মানুষের আস্থা ছিল। সেটা এখন কমে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ধীরে ধীরে মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার দিকে ঝুঁকেছে।
১৯৯৭ সালে যেখানে মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেতে পকেট থেকে ব্যয় করত ৫৬ শতাংশ অর্থ, সেটা এখন বেড়ে ৬৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে এ সময় সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় ৩৬ থেকে কমে ২৩ শতাংশ হয়েছে।
দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের এমন প্রসারকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এ খাতের বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশের মানুষের জন্য যে পরিমাণ ও ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দরকার, সরকার তা পূরণ করতে পারছে না। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত সেই অভাব পূরণ করছে। এতে একদিকে যেমন দেশেই সব ধরনের চিকিৎসা পাচ্ছে মানুষ, তেমনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া কমেছে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে দেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের অবদান আছে। এখন যদি দেশে বেসরকারি হাসপাতাল না থাকত, তাহলে সরকারি হাসপাতাল কি আমাদের সব চিকিৎসার সংকুলান করতে পারত? নিশ্চয় না। তাহলে রোগীরা কোথায় যেত? হয় বিদেশে, নতুবা সরকারি খাতে সেবার পরিমাণ আরও বাড়াতে হতো। মোটকথা, দেশে স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের প্রয়োজন আছে এবং তারা সেবাও দিচ্ছে।’
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন বেসরকারি খাত থেকেই বেশি স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে। তবে এই সেবা নিতে গিয়ে ব্যক্তির পকেট থেকে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। তার পরও মানুষ এই ব্যয় করছে কারণ সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি তাদের আস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তারা মনে করে বেশি টাকা খরচ করলে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাবে। সেটা করতে গিয়ে কষ্ট করে হলেও বেসরকারি খাত থেকেই বেশি স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে।’
স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের অবদান ৬৫-৬৭ শতাংশ
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের উদ্যোক্তা ও স্বাস্থ্য খাতের গবেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্যসেবার ৬৫-৬৭ শতাংশ আসছে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত থেকে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিসিডিওএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. এবিএম হারুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের অবদান অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার ৬৫ শতাংশ দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বাকিটা দিচ্ছে সরকারি খাত।’ শমরিতা হাসপাতাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. হারুন বলেন, ‘এই খাত থেকে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে, যা জিডিপিতে অবদান রাখছে।’
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশে ১৫ শতাংশ মানুষ সরকারি খাত থেকে চিকিৎসা নেয়। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের চেম্বার থেকে নেয় ২৫ শতাংশ। বাকি যারা তারা কোয়াকের (ফার্মেসির দোকান ও হাতুড়ে চিকিৎসক) কাছে যায়। সে অর্থে বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসাসেবা নেয় বেসরকারি খাত থেকে।’
অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান কত জানতে চাইলে এই স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, ‘আমরা পকেট থেকে চিকিৎসার জন্য যে ব্যয় করছি, সেটাই দেশের জিডিপিতে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের অবদান। এখন আমরা স্বাস্থ্যসেবা নিতে ব্যক্তির পকেট থেকে (আউট অব পকেট) ব্যয় করছি প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। বেসরকারি খাত হয়ে সেটাই জিডিপিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ওষুধ, ডাক্তারের চেম্বার ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের ব্যয় আছে।’
বিদেশ যাওয়া কমছে, হচ্ছে সব ধরনের চিকিৎসা
দেশে এখন হৃদরোগ, ক্যানসার ও মস্তিষ্কের চিকিৎসা, কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও গবেষকরা। পাশাপাশি চিকিৎসার মান বাড়ায় রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে বলে মনে করেন তারা।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান বৃদ্ধির কারণে বাইরে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে এখনো যাচ্ছে। ধনীরা আগেও যেত, এখনো যায়। কিন্তু যাদের অতটা সচ্ছলতা নেই, তারা খুব কষ্ট করে পাশের দেশ ভারতে চলে যাচ্ছে। নতুন করে এখন মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে আগে থেকেই যায়। এই বিদেশ যাওয়া রোধ করতে হলে দেশের চিকিৎসার প্রতি আস্থার জায়গা ফেরাতে হবে। চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যকার সম্পর্ক ভালো করতে হবে।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, দেশে ভালোমানের হাসপাতাল থাকলে বিদেশে যাওয়া কমবে। যেগুলো জটিল রোগী, অনেক দিন ধরে অসুখে-বিসুখে ভুগছে, এখানে সেবা পাচ্ছে না, তারা বিদেশ যাবে। কিন্তু হঠাৎ করে দেখা দেওয়া রোগের চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। যাদের টাকা আছে, তারা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে, সেবাও পাচ্ছে। আমাদের এখানে যা আছে সেটা আরও কীভাবে ভালো করা যায়, সেটা চিন্তা করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি দুই জায়গায় দুর্বলতা আছে। সেটা কাটাতে হবে।
শুরুটা আশির দশকের গোড়ার দিকে
স্বাস্থ্যসেবা গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার শুরু আশির দশকের গোড়ার দিক থেকে। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই খাত এখন দেশের মানুষের চিকিৎসাসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে ডা. এবিএম হারুন বলেন, ২০০০ সালের আগে মাত্র কয়টা বেসরকারি হাসপাতাল ছিল। এখন তো প্রায় ১৫ হাজার হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ক্যানসার, কিডনি, গলব্লাডার, হার্ট, ব্রেইন, লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপনসহ সব ধরনের রোগের চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালে হচ্ছে। উপজেলা পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতাল হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষায়ও বেসরকারি খাত অবদান রাখছে।
এ খাতের অন্যতম এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত এত উন্নতি হয়েছে যে ৯৫ শতাংশ চিকিৎসা এখানেই সম্ভব। মাত্র ৫ শতাংশের জন্য বাইরে যেতে হয়। তবে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়ন হয়েছে একান্তই ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সেবা দিতে গিয়ে, সরকারের যে সহযোগিতা প্রয়োজন সেটা পাই না। সরকার ট্যাক্স ও বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসের বিল বাড়াচ্ছে। এসব কারণে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এটা এই খাতের প্রসারে সংকট।’
অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের প্রসারটা শুরু এই সেঞ্চুরির গোড়ার দিক থেকেই। তবে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাও সব জায়গায় ও সব সেবার প্রসার ঘটেনি। সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না করে ঢাকার বাইরেও করতে হবে।
হাসপাতাল বেড়েছে ৮১০% ও শয্যা ৮২৫%
দেশ রূপান্তরকে দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত বুধবারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬৪৩টি। এ ছাড়া সরকারি সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আরও ২ হাজার ২৭৭টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে। এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে শয্যা রয়েছে ৭১ হাজার। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে ৫ হাজার ৫৭৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শয্যা রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৮৩। এর বাইরে সারা দেশে নিবন্ধিত বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ১০ হাজার ৭২৭টি ও ব্লাডব্যাংক আছে ১৪০টি।
সে হিসেবে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৯ গুণ ও সরকারি শয্যার তুলনায় বেসরকারি শয্যা প্রায় দেড় গুণ বেশি।
বর্তমানে সরকারি আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১ হাজার ১০১টি ও বেসরকারি আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৯৭৩টি।
এ ছাড়া বর্তমানে দেশে সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে ৪ হাজার ৩৫০টি ও ৭২ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৪০০টি আসন রয়েছে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকারিতে প্রায় ৪০ ও ৬০ শতাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছে।
এ ছাড়া দেশের ১১টি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে মাত্র ৬৬০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে পরিচালিত একই ধরনের ২০০টি প্রতিষ্ঠানে ৪ হাজার ৩৪১ জন শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ ২০০৫ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে দেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছিল মাত্র ৬১৩টি, শয্যাসংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৩৭১। আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছিল ১ হাজার ৪২টি।
সে হিসেবে গত ২২-২৩ বছরে দেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ৮১০, শয্যা ৮২৫ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৮৯৫ শতাংশ বেড়েছে।
মানুষ কেন ঝুঁকছে বেসরকারি হাসপাতালে
অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, সরকারি হাসপাতালে রোগীদের চাপ বেশি। সেবা নিতে বেশ সময় লাগে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে গেলেই স্বাস্থ্যসেবা মেলে। এসব ঝামেলা এড়াতে কষ্ট হলেও টাকার বিনিময়ে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা পেতে বেসরকারি হাসপাতালেই যাচ্ছে।
এই গবেষক আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের অবকাঠামোগত উন্নতি ও সিস্টেমেও মানুষ প্রভাবিত হয়। সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু সেখানকার বাহ্যিক ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধা মানুষকে টানতে পারছে না। সরকারি হাসপাতালে রোগীন অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক, টেকনোলজিস্টের সংখ্যাও কম। এসব কারণেই বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষ বেশি ঝুঁকছে।
এই চিকিৎসক বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন চিকিৎসক অনুপাতে তিনজন নার্স ও পাঁচজন টেকনোলজিস্ট থাকবেন। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র উল্টো। আমরা শুধু চিকিৎসক বানাচ্ছি, কিন্তু নার্সের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। এ কারণে সরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবা সহজ হচ্ছে না। গোছানোভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার পরও সরকারি খাতে মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এখন উপজেলা পর্যন্ত চিকিৎসক পাওয়া যায়। অন্যদিকে, বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে গুণগত মান বেড়েছে। তবে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দক্ষতার ক্ষেত্রে সংকট কিছুটা রয়ে গেছে। এসব ঘাটতি পূরণে সবাই মিলে নজরদারি বাড়াতে পারলে ভালো হয়।
দেখভাল ও নজরদারির পরামর্শ
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বেসরকারি খাতের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এই খাতে স্বাস্থ্যসেবা কতটুকু বাড়ানো উচিত, সেটা বিবেচনায় রাখা উচিত। তিনি বলেন, ‘আমরা কি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাত লাগামহীন বাড়াব এবং এই বাড়ানোর ভবিষ্যৎ পরিণতি কী সেই জায়গাটা চিন্তা করা উচিত। যে বেসরকারি খাত গড়ে উঠেছে, সেই বেসরকারি খাত গুণগত সেবা দিচ্ছে কি না সেটাও দেখতে হবে। এখানে সবাই আসতে চাইলেও তাদের সবাইকে হাসপাতাল করতে দেওয়া উচিত না। যাচাই-বাছাই করে অনুমতি দেওয়া উচিত।’
এই গবেষক আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে বেসরকারি ভালো হাসপাতাল যেমন আছে, তেমনি ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতাল-ক্লিনিকও আছে। সবগুলো মান রক্ষা করতে পারছে না। এখানে ডাক্তারের রোগী দেখা ও সময় দেওয়া নিয়ে সমস্যা আছে। এখানে সেবার দামও বেশি। এসব বিবেচনায় নিতে হবে।
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় ভালো অবদান রাখছে। এই খাতের পরিধি অনেক বেড়েছে। এখানে তারা অনেক ভালো হাসপাতাল তৈরি করেছে। যেখানে মানুষ উন্নত চিকিৎসাও পাচ্ছে। বাইপাস সার্জারিসহ অনেক কঠিন সার্জারিও তারা করছে। যে সেবাটা মানুষ দেশের বাইরে থেকে নেয়, এখন সেটা দেশেই পাচ্ছে।
বেসরকারি খাত শুধু বড় হাসপাতালই তৈরি করেনি; তারা এই হাসপাতালের মাধ্যমে সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবা ছড়িয়ে দিয়েছে। জেলা, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে তারা।
সব চিকিৎসা সরকার দিতে পারে না। কারণ ১৭ কোটি মানুষের চিকিৎসা দিতে সরকারকে অনেক বেগ পেতে হয়। এই বেসরকারি খাতের মাধ্যমে তারা সরকারের স্বাস্থ্যসেবার কাজকেও অনেকটা লাঘব করে দিচ্ছে।
আরেকটা দিক হলো, তারা অনেক মেডিকেল কলেজও স্থাপন করেছে। সেখানে অনেক চিকিৎসক তৈরি হচ্ছেন। যারা দেশের সেবা করছেন, বিদেশেও যাচ্ছেন, চাকরি করছেন। তারা নার্সিং ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে। সেখানে নার্স তৈরি হচ্ছেন।
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছে। ৬০-৭০টি মেডিকেল কলেজ, শত শত ডায়াগনস্টিক সেন্টার করেছে, কয়েক হাজার হাসপাতাল করেছে। সেখানে মানুষ সেবা পাচ্ছে। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে।
করোনার সময়ও তারা ভালো ভূমিকা রেখেছে। করোনা পরীক্ষার জন্য তারা অসংখ্য ল্যাব তৈরি করেছিল। সেসব ল্যাবে লোকজন টেস্ট করতে পারছেন। তারা করোনার চিকিৎসা দিয়েছে। অনেক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) প্রয়োজন ছিল। তারা সেটারও ব্যবস্থা করেছে।
আবার অন্যদিকও আছে। সেখানটায় তাদের শোধরাতে হবে। যেমন তারা চার্জটা বেশি রাখে। আমি মনে করি যেন চার্জটা অতিরিক্ত না রাখা হয়, সেটা তাদের দেখা প্রয়োজন। অনেক সময় ভুল চিকিৎসাও হয়। সেটাও আমাদের শোধরাতে হবে, ঠিক করতে হবে। অনেক সময় অতিরিক্ত টেস্ট দেয় ও তাতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে টেস্টের হয়তো প্রয়োজন নেই, তারপরও টেস্ট দিয়ে দিল। ওষুধ বেশি দিল, অত ওষুধের হয়তো দরকার নেই। আমি মনে করি এদিকে তাদের অনেকটা ইমপ্রুভ করতে হবে।
এ ছাড়া অনেক জায়গায় অপারেশন করে, হয়তো সেখানে অপারেশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা নেই। এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
দেশের জিডিপিতে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুভাবেই অবদান আছে। তারা আয় করে। সে আয় থেকে ট্যাক্স দেয়। সেই ট্যাক্স সরাসরি জিডিপিতে অবদান রাখে। আরেকটা হলো, আপনি যদি ভালো স্বাস্থ্যসেবা দেন, মানুষ সুস্থ থাকে, তাহলে মানুষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও তারা বেশি উৎপাদনশীল হয়। এতে যে যেখানেই থাকুক না কেন, দেশের জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন অফিসে কাজকর্ম দ্রুতগতিতে হবে, শিল্পের উৎপাদন ভালো হবে, কৃষিতে উৎপাদন ভালো হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। এসব তো সরাসরি জিডিপিতে অবদান রাখে। আর যদি জাতি অসুস্থ থাকে, বেশি লোক অসুস্থ থাকে, চিকিৎসা না পায়, তখন তো অর্থনৈতিক উন্নয়ন কমে যাবে।
ভালো হাসপাতাল তৈরি হলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মানুষ কম যাবে। সেই টাকা দেশেই থাকবে। এসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা তো পড়াশোনা করে ও ডাক্তার হয়। আবার বিদেশ থেকেও অনেক ছাত্রছাত্রী আসে। তারা এসব প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করে। তাতে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। সেটাও দেশের জিডিপির জন্য একটা ভালো ভূমিকা রাখে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আমি মনে করি সবমিলে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত ভালো।
সরকার বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন পর্যায়ে যে ট্যাক্স (কর) নির্ধারণ করে, সেটা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী করে। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে সরকারের যেসব সার্ভিস গ্রহণ করবে, সেসবের জন্য তো পয়সা দিতে হবে। প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সময় যন্ত্রপাতির ওপর ট্যাক্স কমানো হয়েছে। চিকিৎসা-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ওপর তো ট্যাক্স কম ধরা হয়েছে। কাজেই সরকার তো তাদের সাহায্য করছেই।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের এক নতুন পালক যোগ করল ইউনাইটেড হসপিটাল। ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারের স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল’ (জেসিআই) স্বীকৃতি অর্জন করেছে। আর এই অর্জনটি আরও গুরুত্ব বহন করছে কারণ প্রথমবারের মতো জেসিআই সার্ভেতে অংশগ্রহণ করে নির্ধারিত ১ হাজার ২৭১টি মান ও মাপকাঠির প্রত্যেকটিতে ইতিবাচক ফলাফল (জিরো নট মেট) অর্জন করেছে ইউনাইটেড হসপিটাল, যা শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও বিরল। আর তাই ইউনাইটেড হসপিটাল অঙ্গীকার করে ‘স্বাস্থ্যসেবায় জিরো কম্প্রোমাইজ’।
জেসিআই হচ্ছে এমন একটি স্বীকৃতি যেটিকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার স্বর্ণমান হিসেবে ধরা হয়। এই স্বীকৃতিটি সেই হাসপাতালগুলোকেই দেওয়া হয়, যারা রোগীদের জন্য আপসহীন স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। এই মর্যাদা অর্জন করতে হাসপাতালগুলোকে হাজারেরও বেশি কঠোর মান বজায় রাখতে হয়। জেসিআই স্বীকৃতি একটি হাসপাতালের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার প্রতিফলন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই স্বীকৃতি অর্জন একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, অন্যদিকে রোগীর নিরবচ্ছিন্ন সেবা, নিরাপদ চিকিৎসা প্রদান করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে প্রথমসারির স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউনাইটেড হসপিটালের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগীর সুরক্ষা ও যত্নের গুণমান রক্ষা করা। জেসিআই স্বীকৃতি প্রমাণ করে ইউনাইটেড হসপিটাল বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। তারা এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করছে, যা তাদের রোগী ও কর্মীদের জন্য ঝুঁকি কমিয়ে আনছে। জেসিআই স্বীকৃতি অর্জন করতে গিয়ে ইউনাইটেড হসপিটাল দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের ধারায় অবদান ও পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মান রক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করেছে।
ইউনাইটেড হসপিটালের জেসিআই অর্জনের নেপথ্যের যাত্রা অনেক দিন ধরেই চলমান, যেটি এই হসপিটালের ক্রমাগত উন্নতির সাক্ষীস্বরূপ। হাসপাতালটি কৌশলগতভাবে অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছে। যে কারণে সেবার মান আরও উন্নত, সম্প্রসারিত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। হাসপাতালটি সেবার মান উন্নীতকরণের প্রচেষ্টায় সেবার প্রতিটি ধাপে আমূল পরিবর্তন এনেছে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড হসপিটালে প্রায় ছয় লাখ মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে আর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল প্রফেশনাল এবং সেবাদাতার হাতেই নিশ্চিত হচ্ছে এই জেসিআই মানের স্বাস্থ্যসেবা।
ইউনাইটেড হসপিটালের ভিশন হচ্ছে দেশের সব জায়গায় সর্বস্তরের মানুষের জন্য, তাদের সাধ্যের মধ্যে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি দেশের চিকিৎসা খাতকে সমৃদ্ধ করা। যে কথাই বারবার ব্যক্ত করেছেন ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন হাসান রশীদ ও ইউনাইটেড হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান।
আমরা যদি রোগীদের দিক থেকে দেখি, কীভাবে এই স্বীকৃতিটি উচ্চমানের সেবা নিশ্চিত করছে, আমাদের কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে যেগুলো সরাসরি রোগীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হসপিটালে প্রবেশ থেকে শুরু করে চিকিৎসা শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রোগীকে দেওয়া সেবাগুলোর টাইম ট্র্যাক নিশ্চিত করে রোগীর সঠিক চিকিৎসা। হসপিটালে ভর্তির সময় ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য ফল প্রিভেনশন ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়, সঙ্গে নিশ্চিত করা হয় রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট সার্ভিস। হুইলচেয়ারে বসা রোগীদের জন্য বিশেষ প্রবেশ থেকে শুরু করে বাথরুমে হ্যান্ডেল এবং রয়েছে হুইলচেয়ার নিয়ে প্রবেশ করার মতো বাথরুমও। ইউনাইটেড হসপিটালে রোগীদের পড়ে যাওয়া ঠেকাতে ও প্রবেশের পর থেকে রোগীর যতœ নিশ্চিত করতে দক্ষ নার্সিংব্যবস্থা রয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে রোগীর কক্ষ এবং বাথরুমের মেঝেতে লক্ষ রাখে, যাতে সেগুলো পরিষ্কার এবং শুকনো থাকে।
হসপিটালে ভর্তি হওয়ার পর একজন রোগী ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকে। আর রোগী যদি ইমার্জেন্সিতে আসে সে ক্ষেত্রে জেসিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী ১৫ মিনিটের মধ্যে তার প্রাথমিক অ্যাসেসমেন্ট নিশ্চিত করা হয়। ইমার্জেন্সিতে রোগীর দ্রুত মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চসংখ্যক ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন। ইউনাইটেড হসপিটাল সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনার পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে রোগীদের সুস্থ করে তোলার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
হসপিটালে ভর্তি প্রতিটি রোগী দিনে সাতবার খাবার পেয়ে থাকে এবং সঠিক চিকিৎসা প্রটোকল নিশ্চিত করার জন্য একজন সার্টিফায়েড ডায়েটিশিয়ানের চার্ট অনুযায়ী খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন করা হয়।
ইউনাইটেড হসপিটালের ডাক্তারের দেওয়া সব ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের ব্র্যান্ড নামের পরিবর্তে জেনেরিক নাম ব্যবহার করা হয়, যা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। হসপিটালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ সরবরাহের সময় একজন ‘এ’ গ্রেড ফার্মাসিস্ট ওষুধের ডোজ, সুবিধা-অসুবিধা ও সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে অবগত করেন। ওষুধের গুণগতমান ও কার্যকারিতা বজায় রাখতে এই মডেল ফার্মেসিতে প্রত্যেকটি ওষুধ কোল্ড চেইন মেনে সংরক্ষণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। ওষুধের প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে সংগ্রহ থেকে শুরু করে গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যেকটি স্তরে সঠিকভাবে এই চেইন মেনে চলা হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা পরীক্ষাও করা হয়। হসপিটালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম মানা হয়। এ ছাড়া ওষুধের আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত ধারা অনুযায়ী ডোজেজ লেবেলিং করা হয়, পাশাপাশি যেসব ডোজে উচ্চ সতর্কতা মানা জরুরি সেগুলোতে বিশেষ লেবেলিং ট্যাগ লাগানো হয়। এখানে জরুরি ওষুধের ১০০% সরবরাহ থাকে এবং ওষুধ সংরক্ষণের জন্য মানসম্পন্ন ফ্রিজের ব্যবস্থা রয়েছে।
ইউনাইটেড হসপিটাল প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মেডিকেল রেকর্ড সংরক্ষণ করে। যদি কোনো রোগীর কাছ থেকে তথ্য হারিয়ে যায়, তিনি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করার পর তার মেডিকেল রেকর্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
ইউনাইটেড হসপিটালে একটি সেন্ট্রাল স্টেরাইল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্ট (সিএসএসডি) রয়েছে, হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় যাতে কোনো ধরনের সংক্রমণ না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এই ইউনিটটি স্টেরিলাইজেশন ও হসপিটালের সব জায়গায় যেকোনো সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিসপত্র ফেলে দেওয়ার জন্য ইউনাইটেড হসপিটালে নিয়মিত অডিট হয়ে থাকে।
কীভাবে একটি জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতাল অন্য যেকোনো হাসপাতালের তুলনায় সেবার মানের দিক থেকে অনেক এগিয়ে, চলুন সে সম্পর্কে জেনে নিই। এখানে জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতালের মাত্রাগুলো কী কী এবং আপনি কীভাবে বুঝতে পারবেন যে আপনি সর্বোচ্চ সেবা পাবেন সে সম্বন্ধে জানতে পারবেন। যে তথ্যগুলো আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি, সেগুলো ছাড়াও এখানে আরও কিছু বিষয় রয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে ইউনাইটেড হসপিটাল তাদের সেবার মান উন্নত করেছে।
ইউনাইটেড হসপিটাল জেসিআই মান অনুযায়ী মৃত্যুর হার কমাতে ও রোগীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ইউনাইটেড হসপিটালে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার শূন্য শতাংশ, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।
একজন রোগীর হাসপাতালে অবস্থান একটি নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি হওয়া উচিত নয়। বৈশ্বিক মান অনুযায়ী এটি পাঁচ দিন, তবে এটি প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তিত হয়। ইউনাইটেড হসপিটাল দ্রুত এবং কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিতের মাধ্যমে রোগীর সুবিধার্থে হসপিটালে তাদের অবস্থানের সময় যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করে।
জেসিআই মান অনুযায়ী প্রতিটি রোগীর আগমনের সময় থেকে খুব কম সময়ের মধ্যে (সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট) একজন নার্স এবং পরে একজন ডাক্তারের দ্বারা রোগীর মূল্যায়ন খুব যতœসহকারে করা উচিত। ইউনাইটেড হসপিটাল ধারাবাহিকভাবে এই পদ্ধতি খুব কঠোরভাবে অনুসরণ করে আসছে।
ইউনাইটেড হসপিটাল সঠিক পোস্ট সার্জিক্যাল চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছে। সঠিক, নির্ভুল ও সংক্রমণমুক্ত অস্ত্রোপচার নিশ্চিতের মাধ্যমে রোগীদের আবার ফেরত আসা প্রতিরোধ করা হয়। প্রায় শতভাগ অস্ত্রোপচার সঠিক প্রস্তুতির সঙ্গে টাইম-আউট (অস্ত্রোপচারে টাইম-আউট হলো একটি সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি, যা অপারেশন শুরু করার আগে সঠিক রোগী, পদ্ধতি এবং স্থান নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ভুল সাইট, ভুল পদ্ধতি এবং ভুল ব্যক্তির অস্ত্রোপচার প্রতিরোধের জন্য একটি নিরাপত্তাব্যবস্থা) পদ্ধতি মেনে ও বৈশ্বিক মান অনুসরণ করে করা হয়। অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইউনাইটেড হসপিটাল কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সঠিক রোগ নির্ণয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষার মান নিশ্চিতকরণের একটি চাবিকাঠি।
ইউনাইটেড হসপিটালের ওঝঙ স্বীকৃত ল্যাবরেটরি রয়েছে, যেখান থেকে সার্বক্ষণিক সেবা পাওয়া যায়। ২০১৪ সাল থেকে টানা আইএসও স্বীকৃতি পেয়ে আসছে এই ল্যাব, যেটি নিশ্চিত করে এই হসপিটালের রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা। হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে একসঙ্গে ২২ জনকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন স্বনামধন্য চিকিৎসকরা। জরুরি প্রয়োজনে এখানে মাত্র তিন ঘণ্টায় ব্লাড টেস্ট করা সম্ভব।
জেসিআই স্বীকৃতি ইউনাইটেড হসপিটালে রোগীদের সেবাদানের জন্য উচ্চমান ও নিরাপদ যত্ন প্রদানে তাদের প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ হিসেবে দেখা যায়। হাসপাতালটি ক্রমাগত সেবার মান উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। জেসিআই স্বীকৃতি তার কৃতিত্বের একটি স্মারক। যেসব স্বাস্থ্যসেবার জন্য মানুষ বিদেশে যাচ্ছে, তাদের জন্য বিকল্প হতে পারে ইউনাইটেড হাসপাতাল।
বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী। স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি হাসপাতালের অবদান ও মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা সেসব নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
দেশ রূপান্তর : দেশের স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের অবদান কতটুকু?
ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী : সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলো দেশের স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। গত এক দশকে অথবা এক যুগে যদি বলা হয়, উন্নত বিশে^র সব চিকিৎসা-সুবিধা বাংলাদেশে বিদ্যমান। একসময় শুধু একটা এনজিওগ্রাম করার জন্য পাশের ভারত অথবা বিদেশে যেতে হতো। কিন্তু এখন দেশে অর্ধশতাধিক পূর্ণাঙ্গ কার্ডিয়াক সেন্টার রয়েছে। একদম ছোট নার্সিং হোম থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হাসপাতাল দেশে রয়েছে, যেসব হাসপাতাল শুধু বিদেশেই দেখা যায়। সুতরাং বেসরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
দেশ রূপান্তর : মোট চিকিৎসাসেবার কতটুকু দেয় বেসরকারি চিকিৎসা খাত?
ডা. আশীষ : মোট চিকিৎসাসেবার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ অবদান বেসরকারি খাতের। কারণ সরকারের যে সেবা ও যে শয্যাসংখ্যা তা দিয়ে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং এতে বেসরকারি খাত বিরাট ভূমিকা পালন করছে।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী ধরনের সংকট হচ্ছে?
ডা. আশীষ : চিকিৎসাসেবায় আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে হাসপাতালে রোগীদের অনাকাক্সিক্ষত স্বজনদের কারণে। প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন এসে ঝামেলা করছে। বিদেশে হাসপাতালে একদম একান্ত স্বজন ছাড়া কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। সেই সঙ্গে বেসরকারি চিকিৎসা খাতে ব্যাংকঋণের অর্থ সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে হয়। একদম সাধারণ ব্যবসায়ীদের মতো আমাদের ঋণের বোঝা বহন করতে হয়। চিকিৎসা খাত হয়েও আমরা কোনো প্রকার বিশেষ সুবিধা পাই না। এমনি বিদ্যুৎ বিল, পানির বিলসহ যাবতীয় বিলও ব্যবসায়ীদের মতো আমাদের পরিশোধ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যদি বিদেশের মতো আমাদের জন্যও ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবার দিক বিবেচনা করা হয় তাহলে সেবার মান উন্নত হবে, কোনো বিঘœ ঘটবে না।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি চিকিৎসা খাতে সরকার কীভাবে সহযোগিতা করছে? এই সহযোগিতা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত কি না?
ডা. আশীষ : সরকার আমাদের দেখভাল করছে, এ বিষয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে একমত এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে সর্বদা প্রস্তুত। কিন্তু এখানে সহযোগিতা আরও বাড়ানো উচিত। মেডিকেল যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়া দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে এবং পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির প্রয়োজন। হাসপাতালগুলোতে টহল থাকা দরকার, যাতে রোগীর অনাকাক্সিক্ষত স্বজনরা হাসপাতালে এসে পরিবেশের বিঘœ ঘটাতে না পারে। পাশাপাশি চিকিৎসক এবং কাজের পরিবেশ যেন নিশ্চিত হয়। পাশর্^বর্তী দেশগুলোতে কিন্তু চিকিৎসা কিংবা চিকিৎসাসেবা দানকারী কোনো কর্মীকে যদি গালমন্দ কিংবা আঘাত করা হয় তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। এসব দেশে আইন আছে। আমরাও চাই দেশে চিকিৎসাসেবায় কোনো দুর্বৃত্তায়ন যেন না ঘটে। এ ব্যাপারে সরকারের গভীর দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় সরকারি নিয়মনীতি ঠিক আছে, নাকি কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে?
ডা. আশীষ : এখানে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক শাখাটি রয়েছে, সেটির নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। কারণ নিম্নমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। নিম্নমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের অনুমোদন দেওয়া না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি, দেশের সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব হাসপাতালগুলোর নেতিবাচক নিউজকে অতিরঞ্জিত করে ছাপা ঠিক নয়। পাশাপাশি ইতিবাচক খবরও ছাপা দরকার। অতিরিক্ত নেতিবাচক সংবাদের কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাত ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
বিদেশে চিকিৎসা কিংবা স্বাস্থ্যসেবা হচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। আমাদের দেশে আমরা মানুষকে স্বল্পমূল্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি। মানুষের দোরগোড়ায় ডাক্তার রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে ডাক্তার রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে রোগী এলে আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং ও টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন চলছে? ডা. আশীষ : এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত। এখানে ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ নেই। কোনো একসময় ছিল শুধু পয়েন্ট থাকলেই ভর্তি হওয়া যেত। কিন্তু এখন জাতীয়ভাবে মেধাতালিকার মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার একই সময় একই দিনে পরীক্ষা হয়। এ বছর থেকে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর কনফার্ম করে লিস্ট পাঠিয়ে দিচ্ছে মেডিকেল কলেজগুলোতে যে ৬০ জন ছাত্র ভর্তি হবে। কোনো ছাত্র যদি অন্য কোনো মেডিকেলে যেতে চায়, তখন যে শূন্যস্থানটি হয় সে ক্ষেত্রে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো সুযোগ নেই পরিবর্তন করার। সেটিও অটো মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ায় মেডিকেল কলেজের নীতিমালায় হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি খাতে প্রতি বছর কী পরিমাণ চিকিৎসক ও নার্স তৈরি হচ্ছে?
ডা. আশীষ : বেসরকারি খাতে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার চিকিৎসক এবং ৩০ হাজারের বেশি নার্স তৈরি হচ্ছে; বিশেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা নার্সের সংখ্যা সরকারির চেয়ে কয়েকগুণ।
দেশ রূপান্তর : জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি হাসপাতালের অবদান কতটুকু? বিনিময়ে বেসরকারি খাত কী পাচ্ছে সরকারের কাছ থেকে?
ডা. আশীষ : জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি হাসপাতাল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। অনেক চিকিৎসক একসময় বিদেশ চলে যেতেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারি চাকরিতে যাদের প্রমোশন হচ্ছে না কিংবা বঞ্চিত মনে করছেন, তারা বেসরকারিতে অনেক উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন। তাদের কষ্টার্জিত অর্থ আবার দেশেই বিনিয়োগ হচ্ছে। বেসরকারি খাত সরকারের সহযোগিতা পেলেও গেলেও মাঝে মাঝে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমাদের নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়। যেমন কভিডের সময় দুই তিন ধাপে কভিড টেস্টের মূল্য কমানো হয়েছে। ডেঙ্গুর সময়ও সরকার কয়েক দফায় খরচ বেঁধে দিয়েছে। যদিও এতে আমাদের অনেকাংশে মুনাফা কমে যায়। তবু আমরা জনগণের স্বার্থে কিংবা সরকারকে সহযোগিতা করতে সাড়া দিই।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে। চিকিৎসা ব্যয় কি মানুষের নাগালের মধ্যে?
ডা. আশীষ : আগেই বলেছি, বাংলাদেশে এখন উন্নত বিশ্বের সব চিকিৎসাসেবা বিদ্যমান। সুতরাং ভালো মানের যে হাসপাতালগুলো রয়েছে, বিশেষ করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চিকিৎসাব্যবস্থা দিয়ে যাচ্ছে। আমি যদি ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কথা বলি তো, আমাদের একটি ৫০০ শয্যার অনুমোদিত হাসপাতাল রয়েছে, যার মধ্যে ৩৫০ শয্যার হাসপাতাল অপারেশনে রয়েছে। আমাদের এখানে ওয়ান স্টপ কার্ডিয়াক সেন্টার রয়েছে, যেখানে মধ্যরাতে এবং ভোররাতেও প্রাইমারি পিসিআই করা হয়। আমরা ট্রমা এবং অ্যাকসিডেন্ট ম্যানেজমেন্টের জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছি, কমপ্লিকেটেড প্রেগনেন্সি এবং নিওনেটাল আইসিইউ, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, আইসিইউতে ২৪ ঘণ্টা স্পেশালিস্ট রয়েছেন। আমাদের সার্বক্ষণিক ডায়ালাইসিস বিদ্যমান। আমি আবারও বলছি, পৃথিবীর সবচেয়ে কম খরচে বাংলাদেশে চিকিৎসা হয়। যাদের আর্থিক সমস্যা আছে, যারা নিম্নবিত্ত তাদের অতিরিক্ত খরচ থেকে পরিত্রাণ দিতে স্বাস্থ্যবীমা চালু করা প্রয়োজন।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসা নিতে প্রতি বছর কী পরিমাণ রোগী দেশের বাইরে যায়। এতে কত টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কী করতে পারে এবং করছে?
ডা. আশীষ : বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কী করতে পারে তা এককথায় বলা কঠিন। কারণ কিছু মানুষ রয়েছে যারা হাঁচি-কাশির জন্যও বিদেশে যায়, এটা তাদের প্রেস্টিজ ইস্যু। আমরা এমনও দেখেছি যেসব রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে হাজারের ঘরে করা যায়, সেগুলো বিদেশে গিয়ে লাখ বা কোটির ঘরে মানুষ খরচ করে আসে। বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসা কিন্তু উন্নত বিশ্বের সব সুবিধাসম্পন্ন। অথচ আমি এমনও মানুষ দেখেছি যিনি তার মাকে বিদেশ থেকে ৬টি কেমোথেরাপি দিয়ে এনেছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে। এর সঙ্গে থাকা, খাওয়া বা প্লেন ভাড়া তো বাদই দিলাম। এই একই চিকিৎসা বাংলাদেশে মাত্র কয়েক লাখ টাকায় করা যায়। বেসরকারি হাসপাতালকে আরও বেশি পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে, তবে সেই সঙ্গে দেশের মানুষেরও আমাদের প্রতি আস্থা দেখাতে হবে। আমার খুব অবাক লাগে যে দেশের মানুষ নিজের দেশের ডাক্তারের ওপর ভরসা না করে বিদেশের ডাক্তারের ওপর ভরসা রাখছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট ও হতাশার। বাংলাদেশের মানুষকে নিশ্চয়তা দিতে চাই যে প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী হাসপাতাল দেশে রয়েছে এবং এখানে বিশ্বমানের চিকিৎসা হয়। কিছু কিছু অঙ্গ প্রতিস্থাপন যেমন লিভার, কিডনি বা হার্টের জন্য রোগীরা বিদেশে গেলেও এখন এই চিকিৎসা দেশেই শুরু হয়েছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনটিও শিথিল করা হয়েছে। বাংলাদেশে মাত্র দুই লাখ টাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন হয়। কিন্তু একই চিকিৎসা কলকাতায় করতে গেলেও বোধ হয় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে দেশে চিকিৎসা খরচ অনেকটাই নাগালের মধ্যে। আমি জনগণকে অনুরোধ করব, আপনারা দেশের চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রাখুন। অবশ্যই স্বাস্থ্যবীমা করবেন।
দেশ রূপান্তর : অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে রয়েছে?
ডা. আশীষ : লন্ডনে যদি একটা মানুষের হঠাৎ করে শরীর খারাপ হয়, তবে তাদের যে ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার সার্ভিস রয়েছে, তাদের নিয়মে প্রথম একজন জেনারেল প্র্যাকটিশিয়ানের (জিপি) কাছে যেতে হবে এবং তার অনুমতি ব্যতীত চাইলেও কেউ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে পারবেন না। হ্যাঁ, বেসরকারি চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসাব্যয় কল্পনাতীত। উদাহরণ দিয়ে বলি, আমার একজন আত্মীয়কে একজন অর্থোপেডিক সার্জনের কাছে নিয়ে গেলাম। ভিজিট হিসেবে তাকে ২৫০ পাউন্ড দিতে হয়েছে, যার বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। অথচ বাংলাদেশে ডাক্তারভেদে ভিজিট ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকা। সুতরাং দেশে কতটা কম খরচে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়।
চিকিৎসাসেবায় শুধু একা ডাক্তারের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে জড়িত নার্স, পিসিএ, ক্লিনার, অ্যাম্বুলেন্স, ড্রাইভার। সবাইকে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা। তাই সরকার, সাধারণ মানুষ সবাইকে আন্তরিক হতে হবে যাতে স্বাস্থ্য খাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
চট্টগ্রামে অপারেশনের পর রোগীর শরীরের অংশবিশেষে ক্যানসারের জীবাণু রয়েছে কি না পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হতো টেস্টের জন্য। আর সেই রিপোর্ট আসতে সময় লাগত ১০ থেকে ১৫ দিন। এ সময়টায় রোগীদের খুব টেনশনে থাকতে হতো। এই টেনশন দূর করতে এপিক হেলথ কেয়ারে দুই বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে হিস্টোপ্যাথলজি ল্যাব। আর এতে এখন তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে পরীক্ষার রিপোর্ট। ঢাকামুখী নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা এখন সম্ভব। এর পথ দেখিয়েছে ‘এপিক হেলথ কেয়ার’।
এপিক হেলথ কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক টিএম হান্নান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন রোগী আমাদের কাছে হিস্টোপ্যাথলিজ টেস্টের জন্য আসে। চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম আমরাই এ ধরনের টেস্ট চালু করলেও এখন আরও দুটি প্রাইভেট হাসপাতালে এই টেস্ট করা যায়।’
২০১৫ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান গেটের বিপরীত পাশে ‘এপিক হেলথ কেয়ার’ নামক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছিল। এটি গড়ে তোলার ইতিহাস চমকপ্রদ। মূলত তা বাণিজ্যিক স্থাপনা হিসেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে প্রথম তিনতলা বাণিজ্যিক এবং তারপর ওপরের দিকে নবমতলা পর্যন্ত ছিল আবাসিক। কিন্তু রিয়েল এস্টেট শিল্পে তখন মন্দাভাব চলছিল। আর তখন ফ্ল্যাট বিক্রি করতে না পেরে এপিক প্রপার্টিজ কর্তৃপক্ষ সেখানে ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়। শুধু পরিকল্পনা নিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি তারা দ্রুত বাস্তবায়নও করে। রিয়েল এস্টেট শিল্পের মন্দার যুগে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে তোলে আধুনিক মানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এটা যে আধুনিক মানের এবং বিশে^র সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম তা টের পাওয়া যায় ২০১৮ সালে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি আইএসও সনদ পায়। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আইএসও সনদ নেই। ফলে দেশের বাইরে চট্টগ্রামের ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট আমলে নেওয়া হতো না। এপিক হেলথ কেয়ার সেই যোগ্যতা অর্জন করে।
করোনাকালে সবাই যখন ঘরে বসে ছিল, তখন এপিক হেলথ কেয়ার হোম সার্ভিসের মাধ্যমে ঘর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করত। নগরবাসীকে সেবা দিতে সেই যে এগিয়ে চলা শুরু করে এরই ধারাবাহিকতায় তারা নগরীর আন্দরকিল্লায় আরেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্বগেটে আরও একটি চালু করে।
প্রতিদিন কী পরিমাণ রোগী সেবা নিতে আসে জানতে চাইলে এপিক হেলথ কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক টিএম হান্নান বলেন, ‘এখন প্রায় দুই হাজার রোগী হয় প্রতিদিন। এসব রোগী ১০টি বিভাগে প্রায় তিন হাজার ধরনের ল্যাব টেস্ট করে থাকে। এ ছাড়া এখানে ৭০ জন ডাক্তারের চেম্বারও রয়েছে।’
দক্ষ জনবল পাওয়া যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। আমরা ঢাকা থেকে ল্যাব টেকনোলজিস্ট এনে নিয়োগ দিয়েছি।’ এপিকে দিন দিন সেবাপ্রার্থী বাড়ছে। মামুন হোসাইন মামুন নামে হালিশহর হাউজিং এস্টেটের ‘জে’ ব্লকের বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে সবার জন্য সব পরীক্ষায় ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট রয়েছে। অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিচিত থাকলে কিংবা কোনো ডাক্তার সুপারিশ করলে ডিসকাউন্ট সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে গণহারে সবাই পেয়ে থাকে।’
সরাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা তারেকুল ইসলাম এসেছিলেন এমআরআই করাতে। তিনি বলেন, ‘এখানকার মেশিনগুলো নতুন হওয়ায় রিপোর্ট পরিষ্কার আসে বলে শুনেছি। তাই এখানে পরীক্ষা করতে এলাম।’
যেহেতু ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে রোগীদের টেস্ট দেওয়া হয়ে থাকে। তাই ভালো মানের ডাক্তার চেম্বার না থাকলে রোগীরা সেসব ডাক্তারের কাছে যাবে না আর ল্যাব টেস্টও সেখানে করাবে না। কিন্তু এখানে ভালো মানের ডাক্তারদের চেম্বার থাকাও রোগী বাড়ার অন্যতম কারণ বলে জানান এপিক হেলথ কেয়ারের কর্মকর্তারা।
২০০৩ সালে এপিক প্রপার্টিজ আবাসন ব্যবসায় আত্মপ্রকাশ করার পর নগরীতে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। এসব প্রকল্পে আড়াই হাজারের বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। এসবের বাইরে বর্তমানে ১৫টি প্রকল্প (রেডি ও চলমান) রয়েছে, যেখানে বিক্রয়যোগ্য অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে ২০০-এর বেশি। এপিক সৃষ্টির পর থেকেই ক্রিটিক্যাল ডিজাইনে আগ্রহী ছিল এবং এখনো সেই অবস্থায় রয়েছে। এপিকের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো পাহাড়ে ভবনের ডিজাইন ও এর সফল বাস্তবায়ন।
আবাসনে যে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামে সদর্পে এগিয়ে রয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্যসেবায় কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দিতেই আমাদের হেলথ সেক্টরের যাত্রা। আর যাত্রার পর থেকে আমাদের আর পেছনে তাকাতে হয়নি।’
কিন্তু হেলথ সেক্টরে আপনারা ল্যাব টেস্টের ক্ষেত্রে করপোরেট গ্রাহক গড়ে তুলেছেন। এটার উদ্দেশ্য কী ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান আমাদের করপোরেট গ্রাহক। এই করপোরেট গ্রাহকদের প্রায় অনেকেই ভিআইপি। বিশে^র বিভিন্ন দেশে ল্যাব টেস্ট করানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গ্রাহকদের সুপারিশগুলো আমাদের ল্যাবের উন্নতির জন্য কাজে লেগেছে। এতে পর্যায়ক্রমে গ্রাহকও বেড়েছে।’
এপিক প্রপার্টিজের আওতায় বিডকো, এপিক এগ্রো, এপিক এনার্জি, এপিক হেলথ কেয়ার, হোটেল সি ইন, এপিক ইঞ্জিনিয়ারিং ‘এন’ আর্কিটেক্টস, এপিক রেডিমিক্স অ্যান্ড কনক্রিট নামে প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের জামালপুর ইউনিয়নের শ্রীকলা গ্রামে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল দেড় বছরের রুহান। গত মঙ্গলবার বাড়ির উঠানে খেলা করছিল শিশুটি। পরে বাড়িতে না দেখে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তাকে পাশের পুকুরে ভাসতে দেখেন স্বজনরা। পুকুর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুহানকে মৃত ঘোষণা করেন।
একইদিন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আউশকান্দি ইউনিয়নের সদরাবাদ গ্রামে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো সদরাবা গ্রামের মালেক মিয়ার ছেলে ইকবাল হোসেন, বাবুল হোসেনের ছেলে রাফি আহমেদ। পরিবারের সদস্যদের অগোচরে বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যায় ইকবাল ও রাফি। খোঁজখুঁজির একপর্যায়ে পুকুরে তাদের লাশ দেখতে পান স্বজনরা।
দেশে কোনো না কোনো প্রান্তে প্রতিদিনই এরকম ঘটনা ঘটছে। গত এক মাসে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা একশর বেশি। চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬১।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো দুর্ঘটনার মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু তালিকার প্রথম দিকেই থাকবে। এটি একটি অবহেলাজনিত জাতীয় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও তথ্য জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, বছরে ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ হাজার ৪৩৮ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসব মৃত্যুর ৮৮ শতাংশই বাড়ি থেকে ২০ মিটারের মধ্যে ঘটে। পানিতে ডোবার ঘটনা বেশি ঘটে মিঠাপানিতে, যেমন বাড়ির পাশের পুকুর-দীঘি-ডোবায়। খেলতে খেলতে কিংবা গ্রামাঞ্চলে হাত-মুখ ধুতে গিয়েও পানিতে ডুবে মৃত্যুর অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার কখন ডুবে যাওয়া শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে একই সঙ্গে দুজন বা তারও বেশি মৃত্যুর ঘটনাও আছে। এ ছাড়া নদী বা খালে ডুবেও মৃত্যুর ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে কাজ করছে গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’। সংবাদপত্রে প্রকাশিত পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা। সংগঠনটির হিসাবে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত পানিতে ডুবে ৩ হাজার ৮৪৬ জন মারা গেছে। এর ৮৮ শতাংশই ৫-৯ বছর বয়সী শিশু।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, ২০২০ সালে মৃত্যু হয়েছিল ৮০৭ জনের। এর মধ্যে ৫ বছরের শিশু রয়েছে ২৬০টি। এর পরেই আছে ৫-৯ বছর বয়সী ২৮৭, ১০-১৪ বছর বয়সী ১০৬, ১৫-১৮ বছর বয়সী ৩০ জন। আর ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে মৃত্যু ছিল প্রায় দ্বিগুণ। ওই বছর পানিতে ডুবে মারা গেছে ১ হাজার ৩৪৮ জন। এর মধ্যে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৯৭। তার পরেই আছে ৫-৯ বয়সী ৩৮৭, ১০-১৪ বছর বয়সী ১০৬ ও ১৫-১৮ বছর বয়সী ৪৩ জন। এ ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী তরুণ মারা গেছে ২১৫ জন।
২০২২ সালে মারা গেছে ১ হাজার ১৩০ জন। এ সময় অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ৫৬৬ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে ৫-৯ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ৩৬৩ জন। এরপরই ১০-১৪ বছর বয়সী ৯৩, ১৫-১৮ বছর বয়সী ৩৮ ও ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৬৭ জন মারা গেছে।
২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে দেশে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৬১ জন। এর মধ্যে ২৯০ জনের বয়স ছিল ৫ বছরের মধ্যে। ৫-৯ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ১৯৪ জন। ১০-১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৪৮। ১৫-১৮ বছর বয়সী রয়েছে ৯ জন। এ ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী মারা গেছে ১৩ জন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব বিভাগেই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার প্রায় কাছাকাছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম বিভাগে। এরপরের অবস্থান ঢাকা বিভাগের। এ বিভাগে রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি জেলায় গড়ে ৪০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
বছর জুড়ে পানিতে ডুবে শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়। এ সময় বর্ষার কারণে পুকুর, খাল-বিল ও নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে শিশুমৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে। পানির উৎস বাড়ির যত কাছাকাছি থাকে, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি ততই বেড়ে যায়।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে ‘সমষ্টি’র পরিচালক মীর মাসরুর জামান রনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় আমরা যে তথ্য পাই সেখান থেকে এ প্রতিবেদন তৈরি করা। বাস্তবে চিত্র আরও ভয়াবহ। মাত্র ২৫ শতাংশ মৃত্যুর সংবাদ আমরা পেয়ে থাকি।’
তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ হচ্ছে পারিবারিক অসচেতনতা ও অবহেলা। শুধু বড় জলাশয় বা পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয় বিষয়টা এমন নয়। অনেক সময় বালতির পানিতে ডুবেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে পরিবার বা বাবা-মায়ের অসচেতনতার কারণে। ছয় বছরের বেশি বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। অথচ এ বয়সের শিশুদের সাঁতার শেখানোর কথা। যদি তারা সাঁতার জানত তাহলে এ মৃত্যু অনেকাংশে কমে আসত।
বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুকে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। শিশু নিরাপত্তায় পাইলট প্রকল্পে পানিতে ডুবে মৃত্যুও বিবেচনা করলেও সরকারের বাস্তবায়িত প্রকল্প এখনো সীমিত। গত বছর সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযতœ কেন্দ্রের মাধ্যমে ‘শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’ নামে কর্মসূচি নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘ইনটেগ্রেটেড কমিউনিটি বেইজড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম-সেইফ ফ্যাসিলিটিজ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারা দেশে ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় আট হাজার শিশুযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করা হবে। এসব যতœকেন্দ্রে কাজ পাবে ১৬ হাজার গ্রামীণ নারী। প্রতিটি যতœকেন্দ্রে ২৫ শিশুকে ভর্তি করা হবে। একই সঙ্গে ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে।
মীর মাসরুর জামান বলেন, ‘শিশুমৃত্যু ঠেকাতে হলে শহর থেকে গ্রামপর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেখানে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অথবা কমিউনিটির নেতাদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে।’
তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু কমানোকে গুরুত্ব দিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অধীনে প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। যদিও এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বেশিদিন হয়নি। প্রয়োজনে এ ধরনের প্রকল্পকে সরকারীকরণ করতে হবে।
শিশু-কিশোর সংগঠক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর বাইরেও খাল-বিল, জলা, ডোবা-পুকুর এখন যথেষ্ট রয়েছে। ফলে পানির সঙ্গে এ দেশের মানুষের মিলেমিশে বসবাস করতে হবে। এজন্য সাঁতার শেখার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্কুলের কারিকুলামের মধ্যেই থাকবে সাঁতার শেখা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার একটা কথা বলি, আনন্দের মধ্যে এবং চারপাশের চেনা প্রতিবেশ ও পরিবেশের মধ্যে দিয়েই শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে।’
ডা. লেলিন বলেন, ‘একটি শিশু যখন স্কুলে গেল সেখানেই সাঁতার শেখানো সম্ভব। কারণ দেশের সব জায়াগায় সাঁতার শেখানোর যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। এ ছাড়া যেসব মহানগর বা শহরে সাঁতার শেখানোর জায়গার অপ্রতুলতা রয়েছে, সেসব জায়গায়ও বিশেষ ব্যবস্থায় সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করতে পারে। প্রাথমিক জীবনের অঙ্গ হিসেবে শিক্ষার শুরু থেকেই সাঁতার শেখানোটা বাধ্যতামূলক করলে এ সমস্যার বড় অংশ সমাধান করা যাবে। দ্বিতীয়ত অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। যেসব জায়গায় ছোট শিশু রয়েছে সেখানে জলাধারগুলোকে চারপাশে ঘেরাও দিতে হবে। যেন শিশু বাইরে থাকলেও সুরক্ষিত থাকে। এ ছাড়া সরকারকে এ বিষয়ে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। যে প্রকল্পগুলো রয়েছে, সেগুলো যেন কার্যকর ভূমিকা রাখে সেটা নজরদারিতে রাখতে হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেবে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি। এক দফার যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকা দলগুলোও এই কর্মসূচি পালন করবে। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির দুটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রের দাবি। যার প্রতিফলন দেখা গেছে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতেও।
সূত্রের দাবি, দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অন্তত তিন নেতা হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন নেতাকর্মীদের।
সূত্রগুলো বলছে, নভেম্বরের যেকোনো সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ওই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি চাচ্ছে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক ফয়সালা নিশ্চিত করতে। এ লক্ষ্যে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা রয়েছে তাদের। এসব কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে কর্মসূচিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে আলোচনা রয়েছে।
জানা গেছে, এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে ‘যদি পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে’ তাহলে এক পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনের দিকেও যেতে পারে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দুই ধাপে কর্মসূচি সাজিয়েছে বিএনপি। প্রতিটি ধাপের শেষ দিনের কর্মসূচি হবে শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। সরকার কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখতে চাইবে দলটি। পরিস্থিতি বিবেচনায় তফসিলের আগেই হরতালের কর্মসূচি আসতে পারে। তবে দলটির এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তফসিল ঘোষণা হলেই তারা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
এই কর্মসূচি ঘোষণার আগে আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। কীভাবে কর্মসূচি সফল করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ছক সাজানো হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের মতো কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যতদিন আপনি (শেখ হাসিনা) থাকবেন দেশ আরও সংঘাতের দিকে যাবে, খারাপের দিকে যাবে এবং সংঘাত আরও বাড়তে থাকবে। এখনো তো সংঘাত শুরু হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে জনগণ রুখে দাঁড়াবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘শত প্ররোচনার মুখেও আমরা একেবারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এটার শেষ পরিণতি কী হবে তা নির্ভর করবে সরকারের আচরণ কী হচ্ছে তার ওপর।’
একই দিন পৃথক কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেন। ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে সিলেট অভিমুখী রোডমার্চ কর্মসূচির প্রথম পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা হরতাল করিনি, কিন্তু করব না সেই প্রতিজ্ঞাও করিনি। জনগণের চাপের কারণে হরতাল অবরোধ যা যা করা দরকার, গণতান্ত্রিক পন্থায় এই অবৈধ সরকারকে মাটিতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য দল, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সব ধরনের কর্মসূচি হবে। সেই জন্য আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আমাদের এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় মরব, নয়তো লড়ব।’
আর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মেলনে প্রধান অতিথির বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। হরতাল অবরোধ শান্তির প্রবক্তারাই চালু করেছে। সরকার যদি আমাদের রোডমার্চ, মিছিলে জনগণের সম্পৃক্ততায় কোনো বার্তা না পায় বা না বোঝে তাহলে দিনের পর দিন হরতাল অবরোধ করে দেশ অচল করে দেওয়া হবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’
জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। চলতি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিন; অর্থাৎ আগামী ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত নির্বাচনের ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর। মাঝখানে ৪৫ দিন সময় রেখে ভোটের তারিখ ছিল ২৩ ডিসেম্বর। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ভোটের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। তফসিল ঘোষণা ও ভোট গ্রহণের মধ্যে সময় ছিল ৪০ দিন।০
আশ্বিন মাসের সন্ধ্যায় ঢাকায় নামল শ্রাবণের বৃষ্টি। আকাশ ভেঙে পড়া বর্ষণে তলিয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। মাঝরাত পর্যন্ত ওইসব সড়কে থমকে থাকে গাড়ি। অনেকেই যেমন বৃষ্টির কারণে কর্মস্থলেই আটকা পড়েন তেমনি অনেকের অপেক্ষার প্রহর কেটেছে জলমগ্ন সড়কে গাড়িতে বসেই।
এদিকে মিরপুরে সড়কের পাশে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গতকাল দিনভর মেঘলা আকাশ ও থেকে থেকে বৃষ্টির পর সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে। সঙ্গে থেমে থেমে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, এদিন সন্ধ্যার পর ঢাকা ছাড়াও রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে। আর ঢাকায় বৃষ্টি হতে পারে আজও।
গতকাল রাতের বৃষ্টিতে ঢাকার ফার্মগেট, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, মিরপুর, বনানী এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে যায়। রাজধানীর প্রায় সব সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। দীর্ঘ সময় স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যানবাহনকে। অনেকে জানান, তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। রাতে কখন তারা বাসায় ফিরতে পারবেন তা অনিশ্চিত।
জানা গেছে, মিরপুর ১০ নম্বরে প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে কোমরসমান পানি জমেছে। পানি প্রধান সড়কে চলাচলরত প্রাইভেট গাড়ির ভেতরেও ঢুকে গেছে।
গ্রিন রোড, নর্থ ধানমন্ডিসহ আশপাশের সব গলিতে পানি জমেছে। সেখানকার গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং ল্যাবএইডে আসা রোগীরা পড়েছেন বিপদে। একই অবস্থা রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, সিদ্ধেশ্বরী, বেইলি রোড এবং শান্তিনগরেও। মতিঝিলে রাতে লোক কম থাকলেও পানি হাঁটুর ওপরে উঠে গেছে।
হঠাৎ ভারী বৃষ্টির জন্য পথচারী ও ঘরমুখো মানুষরা মোটেও তৈরি ছিলেন না। এ সময় অনেকেই কাকভেজা হয়ে বাসায় ফেরেন আবার কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন যাত্রীছাউনি বা দোকানের নিচে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলা মোটর মোড়ে বাসে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন ফাহাদ হোসাইন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৃষ্টি শুরু হলে একটি উঁচু ভবনের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। বৃষ্টি কিছুটা কমলে বাসে উঠি। আধা ঘণ্টা হলো বাস একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
সরকার সৌরভ নামের একজন জানান, তার মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ আসতে ৩ ঘণ্টার বেশি লেগেছে। ফেরার পথে বাংলা মোটর মোড়েই আটকে আছেন এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টার সময়ও গুগল ম্যাপে দেখা যায় রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজটের সংকেত। বেশিরভাগ সড়ক রেড মার্ক ছিল সে সময়। গ্রিন রোড, মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ২৭, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ বেশ কয়েকটি সড়কেই ছিল যান চলাচল বন্ধের সংকেত। গুগলের তথ্য বলছিল, ওইসব এলাকায় সে সময় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
আহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শুক্রবারও রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় বজ্রপাতও হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
মিরপুরে চারজনের মৃত্যু : মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে আহতদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ দুর্ঘটনার বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেন মিরপুর থানার এসআই রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা, তাদের মেয়ে লিমা এবং এই তিনজনকে বাঁচাতে যাওয়া যুবক অনিক। মৃত মিজান পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক ছিলেন বলে জানা গেছে।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক যাত্রীর কাছ থেকে মূল্য দেড় কোটি টাকা মূল্যের ১৭০০ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ২৪ মিনিটে শারজাহ থেকে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে আসা মোহাম্মদ আলী নামের এক যাত্রীর রাইস কুকারে এসব স্বর্ণ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মো. আহসান উল্লাহ বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।