
চট্টগ্রামে অপারেশনের পর রোগীর শরীরের অংশবিশেষে ক্যানসারের জীবাণু রয়েছে কি না পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হতো টেস্টের জন্য। আর সেই রিপোর্ট আসতে সময় লাগত ১০ থেকে ১৫ দিন। এ সময়টায় রোগীদের খুব টেনশনে থাকতে হতো। এই টেনশন দূর করতে এপিক হেলথ কেয়ারে দুই বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে হিস্টোপ্যাথলজি ল্যাব। আর এতে এখন তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে পরীক্ষার রিপোর্ট। ঢাকামুখী নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা এখন সম্ভব। এর পথ দেখিয়েছে ‘এপিক হেলথ কেয়ার’।
এপিক হেলথ কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক টিএম হান্নান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন রোগী আমাদের কাছে হিস্টোপ্যাথলিজ টেস্টের জন্য আসে। চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম আমরাই এ ধরনের টেস্ট চালু করলেও এখন আরও দুটি প্রাইভেট হাসপাতালে এই টেস্ট করা যায়।’
২০১৫ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান গেটের বিপরীত পাশে ‘এপিক হেলথ কেয়ার’ নামক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছিল। এটি গড়ে তোলার ইতিহাস চমকপ্রদ। মূলত তা বাণিজ্যিক স্থাপনা হিসেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে প্রথম তিনতলা বাণিজ্যিক এবং তারপর ওপরের দিকে নবমতলা পর্যন্ত ছিল আবাসিক। কিন্তু রিয়েল এস্টেট শিল্পে তখন মন্দাভাব চলছিল। আর তখন ফ্ল্যাট বিক্রি করতে না পেরে এপিক প্রপার্টিজ কর্তৃপক্ষ সেখানে ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়। শুধু পরিকল্পনা নিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি তারা দ্রুত বাস্তবায়নও করে। রিয়েল এস্টেট শিল্পের মন্দার যুগে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে তোলে আধুনিক মানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এটা যে আধুনিক মানের এবং বিশে^র সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম তা টের পাওয়া যায় ২০১৮ সালে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি আইএসও সনদ পায়। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আইএসও সনদ নেই। ফলে দেশের বাইরে চট্টগ্রামের ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট আমলে নেওয়া হতো না। এপিক হেলথ কেয়ার সেই যোগ্যতা অর্জন করে।
করোনাকালে সবাই যখন ঘরে বসে ছিল, তখন এপিক হেলথ কেয়ার হোম সার্ভিসের মাধ্যমে ঘর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করত। নগরবাসীকে সেবা দিতে সেই যে এগিয়ে চলা শুরু করে এরই ধারাবাহিকতায় তারা নগরীর আন্দরকিল্লায় আরেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্বগেটে আরও একটি চালু করে।
প্রতিদিন কী পরিমাণ রোগী সেবা নিতে আসে জানতে চাইলে এপিক হেলথ কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক টিএম হান্নান বলেন, ‘এখন প্রায় দুই হাজার রোগী হয় প্রতিদিন। এসব রোগী ১০টি বিভাগে প্রায় তিন হাজার ধরনের ল্যাব টেস্ট করে থাকে। এ ছাড়া এখানে ৭০ জন ডাক্তারের চেম্বারও রয়েছে।’
দক্ষ জনবল পাওয়া যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। আমরা ঢাকা থেকে ল্যাব টেকনোলজিস্ট এনে নিয়োগ দিয়েছি।’ এপিকে দিন দিন সেবাপ্রার্থী বাড়ছে। মামুন হোসাইন মামুন নামে হালিশহর হাউজিং এস্টেটের ‘জে’ ব্লকের বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে সবার জন্য সব পরীক্ষায় ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট রয়েছে। অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিচিত থাকলে কিংবা কোনো ডাক্তার সুপারিশ করলে ডিসকাউন্ট সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে গণহারে সবাই পেয়ে থাকে।’
সরাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা তারেকুল ইসলাম এসেছিলেন এমআরআই করাতে। তিনি বলেন, ‘এখানকার মেশিনগুলো নতুন হওয়ায় রিপোর্ট পরিষ্কার আসে বলে শুনেছি। তাই এখানে পরীক্ষা করতে এলাম।’
যেহেতু ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে রোগীদের টেস্ট দেওয়া হয়ে থাকে। তাই ভালো মানের ডাক্তার চেম্বার না থাকলে রোগীরা সেসব ডাক্তারের কাছে যাবে না আর ল্যাব টেস্টও সেখানে করাবে না। কিন্তু এখানে ভালো মানের ডাক্তারদের চেম্বার থাকাও রোগী বাড়ার অন্যতম কারণ বলে জানান এপিক হেলথ কেয়ারের কর্মকর্তারা।
২০০৩ সালে এপিক প্রপার্টিজ আবাসন ব্যবসায় আত্মপ্রকাশ করার পর নগরীতে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। এসব প্রকল্পে আড়াই হাজারের বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। এসবের বাইরে বর্তমানে ১৫টি প্রকল্প (রেডি ও চলমান) রয়েছে, যেখানে বিক্রয়যোগ্য অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে ২০০-এর বেশি। এপিক সৃষ্টির পর থেকেই ক্রিটিক্যাল ডিজাইনে আগ্রহী ছিল এবং এখনো সেই অবস্থায় রয়েছে। এপিকের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো পাহাড়ে ভবনের ডিজাইন ও এর সফল বাস্তবায়ন।
আবাসনে যে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামে সদর্পে এগিয়ে রয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্যসেবায় কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দিতেই আমাদের হেলথ সেক্টরের যাত্রা। আর যাত্রার পর থেকে আমাদের আর পেছনে তাকাতে হয়নি।’
কিন্তু হেলথ সেক্টরে আপনারা ল্যাব টেস্টের ক্ষেত্রে করপোরেট গ্রাহক গড়ে তুলেছেন। এটার উদ্দেশ্য কী ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান আমাদের করপোরেট গ্রাহক। এই করপোরেট গ্রাহকদের প্রায় অনেকেই ভিআইপি। বিশে^র বিভিন্ন দেশে ল্যাব টেস্ট করানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গ্রাহকদের সুপারিশগুলো আমাদের ল্যাবের উন্নতির জন্য কাজে লেগেছে। এতে পর্যায়ক্রমে গ্রাহকও বেড়েছে।’
এপিক প্রপার্টিজের আওতায় বিডকো, এপিক এগ্রো, এপিক এনার্জি, এপিক হেলথ কেয়ার, হোটেল সি ইন, এপিক ইঞ্জিনিয়ারিং ‘এন’ আর্কিটেক্টস, এপিক রেডিমিক্স অ্যান্ড কনক্রিট নামে প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
আশির দশকের গোড়া থেকে শুরু হওয়া দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিক যেমন বেড়েছে, তেমনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারও বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্যসেবার ৬৫-৬৭ শতাংশই দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাডব্যাংক। বাকি ৩৩-৩৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে সরকারি হাসপাতাল।
এ ছাড়া গত ২২-২৩ বছরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বেড়েছে ৮১০ শতাংশ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৮৯৫ শতাংশ। এ সময় এসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শয্যা বেড়েছে ৮২৫ শতাংশ।
এ সময় সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। ২০০০ সালের আগে দেশের সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি ৩৭ শতাংশ মানুষের আস্থা ছিল। সেটা এখন কমে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ধীরে ধীরে মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার দিকে ঝুঁকেছে।
১৯৯৭ সালে যেখানে মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেতে পকেট থেকে ব্যয় করত ৫৬ শতাংশ অর্থ, সেটা এখন বেড়ে ৬৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে এ সময় সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় ৩৬ থেকে কমে ২৩ শতাংশ হয়েছে।
দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের এমন প্রসারকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এ খাতের বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশের মানুষের জন্য যে পরিমাণ ও ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দরকার, সরকার তা পূরণ করতে পারছে না। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত সেই অভাব পূরণ করছে। এতে একদিকে যেমন দেশেই সব ধরনের চিকিৎসা পাচ্ছে মানুষ, তেমনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া কমেছে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে দেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের অবদান আছে। এখন যদি দেশে বেসরকারি হাসপাতাল না থাকত, তাহলে সরকারি হাসপাতাল কি আমাদের সব চিকিৎসার সংকুলান করতে পারত? নিশ্চয় না। তাহলে রোগীরা কোথায় যেত? হয় বিদেশে, নতুবা সরকারি খাতে সেবার পরিমাণ আরও বাড়াতে হতো। মোটকথা, দেশে স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের প্রয়োজন আছে এবং তারা সেবাও দিচ্ছে।’
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন বেসরকারি খাত থেকেই বেশি স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে। তবে এই সেবা নিতে গিয়ে ব্যক্তির পকেট থেকে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। তার পরও মানুষ এই ব্যয় করছে কারণ সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি তাদের আস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তারা মনে করে বেশি টাকা খরচ করলে ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাবে। সেটা করতে গিয়ে কষ্ট করে হলেও বেসরকারি খাত থেকেই বেশি স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে।’
স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের অবদান ৬৫-৬৭ শতাংশ
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের উদ্যোক্তা ও স্বাস্থ্য খাতের গবেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্যসেবার ৬৫-৬৭ শতাংশ আসছে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত থেকে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিসিডিওএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. এবিএম হারুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের অবদান অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার ৬৫ শতাংশ দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বাকিটা দিচ্ছে সরকারি খাত।’ শমরিতা হাসপাতাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. হারুন বলেন, ‘এই খাত থেকে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে, যা জিডিপিতে অবদান রাখছে।’
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশে ১৫ শতাংশ মানুষ সরকারি খাত থেকে চিকিৎসা নেয়। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের চেম্বার থেকে নেয় ২৫ শতাংশ। বাকি যারা তারা কোয়াকের (ফার্মেসির দোকান ও হাতুড়ে চিকিৎসক) কাছে যায়। সে অর্থে বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসাসেবা নেয় বেসরকারি খাত থেকে।’
অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান কত জানতে চাইলে এই স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, ‘আমরা পকেট থেকে চিকিৎসার জন্য যে ব্যয় করছি, সেটাই দেশের জিডিপিতে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের অবদান। এখন আমরা স্বাস্থ্যসেবা নিতে ব্যক্তির পকেট থেকে (আউট অব পকেট) ব্যয় করছি প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। বেসরকারি খাত হয়ে সেটাই জিডিপিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ওষুধ, ডাক্তারের চেম্বার ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের ব্যয় আছে।’
বিদেশ যাওয়া কমছে, হচ্ছে সব ধরনের চিকিৎসা
দেশে এখন হৃদরোগ, ক্যানসার ও মস্তিষ্কের চিকিৎসা, কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও গবেষকরা। পাশাপাশি চিকিৎসার মান বাড়ায় রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে বলে মনে করেন তারা।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান বৃদ্ধির কারণে বাইরে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে এখনো যাচ্ছে। ধনীরা আগেও যেত, এখনো যায়। কিন্তু যাদের অতটা সচ্ছলতা নেই, তারা খুব কষ্ট করে পাশের দেশ ভারতে চলে যাচ্ছে। নতুন করে এখন মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে আগে থেকেই যায়। এই বিদেশ যাওয়া রোধ করতে হলে দেশের চিকিৎসার প্রতি আস্থার জায়গা ফেরাতে হবে। চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যকার সম্পর্ক ভালো করতে হবে।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, দেশে ভালোমানের হাসপাতাল থাকলে বিদেশে যাওয়া কমবে। যেগুলো জটিল রোগী, অনেক দিন ধরে অসুখে-বিসুখে ভুগছে, এখানে সেবা পাচ্ছে না, তারা বিদেশ যাবে। কিন্তু হঠাৎ করে দেখা দেওয়া রোগের চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। যাদের টাকা আছে, তারা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে, সেবাও পাচ্ছে। আমাদের এখানে যা আছে সেটা আরও কীভাবে ভালো করা যায়, সেটা চিন্তা করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি দুই জায়গায় দুর্বলতা আছে। সেটা কাটাতে হবে।
শুরুটা আশির দশকের গোড়ার দিকে
স্বাস্থ্যসেবা গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার শুরু আশির দশকের গোড়ার দিক থেকে। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই খাত এখন দেশের মানুষের চিকিৎসাসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে ডা. এবিএম হারুন বলেন, ২০০০ সালের আগে মাত্র কয়টা বেসরকারি হাসপাতাল ছিল। এখন তো প্রায় ১৫ হাজার হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ক্যানসার, কিডনি, গলব্লাডার, হার্ট, ব্রেইন, লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপনসহ সব ধরনের রোগের চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালে হচ্ছে। উপজেলা পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতাল হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষায়ও বেসরকারি খাত অবদান রাখছে।
এ খাতের অন্যতম এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত এত উন্নতি হয়েছে যে ৯৫ শতাংশ চিকিৎসা এখানেই সম্ভব। মাত্র ৫ শতাংশের জন্য বাইরে যেতে হয়। তবে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়ন হয়েছে একান্তই ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সেবা দিতে গিয়ে, সরকারের যে সহযোগিতা প্রয়োজন সেটা পাই না। সরকার ট্যাক্স ও বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসের বিল বাড়াচ্ছে। এসব কারণে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এটা এই খাতের প্রসারে সংকট।’
অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের প্রসারটা শুরু এই সেঞ্চুরির গোড়ার দিক থেকেই। তবে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাও সব জায়গায় ও সব সেবার প্রসার ঘটেনি। সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না করে ঢাকার বাইরেও করতে হবে।
হাসপাতাল বেড়েছে ৮১০% ও শয্যা ৮২৫%
দেশ রূপান্তরকে দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত বুধবারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬৪৩টি। এ ছাড়া সরকারি সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আরও ২ হাজার ২৭৭টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে। এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে শয্যা রয়েছে ৭১ হাজার। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে ৫ হাজার ৫৭৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শয্যা রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৮৩। এর বাইরে সারা দেশে নিবন্ধিত বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ১০ হাজার ৭২৭টি ও ব্লাডব্যাংক আছে ১৪০টি।
সে হিসেবে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৯ গুণ ও সরকারি শয্যার তুলনায় বেসরকারি শয্যা প্রায় দেড় গুণ বেশি।
বর্তমানে সরকারি আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১ হাজার ১০১টি ও বেসরকারি আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৯৭৩টি।
এ ছাড়া বর্তমানে দেশে সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে ৪ হাজার ৩৫০টি ও ৭২ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৪০০টি আসন রয়েছে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকারিতে প্রায় ৪০ ও ৬০ শতাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছে।
এ ছাড়া দেশের ১১টি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে মাত্র ৬৬০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে পরিচালিত একই ধরনের ২০০টি প্রতিষ্ঠানে ৪ হাজার ৩৪১ জন শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ ২০০৫ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে দেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছিল মাত্র ৬১৩টি, শয্যাসংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৩৭১। আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছিল ১ হাজার ৪২টি।
সে হিসেবে গত ২২-২৩ বছরে দেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ৮১০, শয্যা ৮২৫ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৮৯৫ শতাংশ বেড়েছে।
মানুষ কেন ঝুঁকছে বেসরকারি হাসপাতালে
অধ্যাপক ডা. শারমীন ইয়াসমীন বলেন, সরকারি হাসপাতালে রোগীদের চাপ বেশি। সেবা নিতে বেশ সময় লাগে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে গেলেই স্বাস্থ্যসেবা মেলে। এসব ঝামেলা এড়াতে কষ্ট হলেও টাকার বিনিময়ে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা পেতে বেসরকারি হাসপাতালেই যাচ্ছে।
এই গবেষক আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের অবকাঠামোগত উন্নতি ও সিস্টেমেও মানুষ প্রভাবিত হয়। সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু সেখানকার বাহ্যিক ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধা মানুষকে টানতে পারছে না। সরকারি হাসপাতালে রোগীন অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক, টেকনোলজিস্টের সংখ্যাও কম। এসব কারণেই বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষ বেশি ঝুঁকছে।
এই চিকিৎসক বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন চিকিৎসক অনুপাতে তিনজন নার্স ও পাঁচজন টেকনোলজিস্ট থাকবেন। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র উল্টো। আমরা শুধু চিকিৎসক বানাচ্ছি, কিন্তু নার্সের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। এ কারণে সরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবা সহজ হচ্ছে না। গোছানোভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার পরও সরকারি খাতে মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এখন উপজেলা পর্যন্ত চিকিৎসক পাওয়া যায়। অন্যদিকে, বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে গুণগত মান বেড়েছে। তবে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দক্ষতার ক্ষেত্রে সংকট কিছুটা রয়ে গেছে। এসব ঘাটতি পূরণে সবাই মিলে নজরদারি বাড়াতে পারলে ভালো হয়।
দেখভাল ও নজরদারির পরামর্শ
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বেসরকারি খাতের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এই খাতে স্বাস্থ্যসেবা কতটুকু বাড়ানো উচিত, সেটা বিবেচনায় রাখা উচিত। তিনি বলেন, ‘আমরা কি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাত লাগামহীন বাড়াব এবং এই বাড়ানোর ভবিষ্যৎ পরিণতি কী সেই জায়গাটা চিন্তা করা উচিত। যে বেসরকারি খাত গড়ে উঠেছে, সেই বেসরকারি খাত গুণগত সেবা দিচ্ছে কি না সেটাও দেখতে হবে। এখানে সবাই আসতে চাইলেও তাদের সবাইকে হাসপাতাল করতে দেওয়া উচিত না। যাচাই-বাছাই করে অনুমতি দেওয়া উচিত।’
এই গবেষক আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে বেসরকারি ভালো হাসপাতাল যেমন আছে, তেমনি ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতাল-ক্লিনিকও আছে। সবগুলো মান রক্ষা করতে পারছে না। এখানে ডাক্তারের রোগী দেখা ও সময় দেওয়া নিয়ে সমস্যা আছে। এখানে সেবার দামও বেশি। এসব বিবেচনায় নিতে হবে।
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় ভালো অবদান রাখছে। এই খাতের পরিধি অনেক বেড়েছে। এখানে তারা অনেক ভালো হাসপাতাল তৈরি করেছে। যেখানে মানুষ উন্নত চিকিৎসাও পাচ্ছে। বাইপাস সার্জারিসহ অনেক কঠিন সার্জারিও তারা করছে। যে সেবাটা মানুষ দেশের বাইরে থেকে নেয়, এখন সেটা দেশেই পাচ্ছে।
বেসরকারি খাত শুধু বড় হাসপাতালই তৈরি করেনি; তারা এই হাসপাতালের মাধ্যমে সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবা ছড়িয়ে দিয়েছে। জেলা, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে তারা।
সব চিকিৎসা সরকার দিতে পারে না। কারণ ১৭ কোটি মানুষের চিকিৎসা দিতে সরকারকে অনেক বেগ পেতে হয়। এই বেসরকারি খাতের মাধ্যমে তারা সরকারের স্বাস্থ্যসেবার কাজকেও অনেকটা লাঘব করে দিচ্ছে।
আরেকটা দিক হলো, তারা অনেক মেডিকেল কলেজও স্থাপন করেছে। সেখানে অনেক চিকিৎসক তৈরি হচ্ছেন। যারা দেশের সেবা করছেন, বিদেশেও যাচ্ছেন, চাকরি করছেন। তারা নার্সিং ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে। সেখানে নার্স তৈরি হচ্ছেন।
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছে। ৬০-৭০টি মেডিকেল কলেজ, শত শত ডায়াগনস্টিক সেন্টার করেছে, কয়েক হাজার হাসপাতাল করেছে। সেখানে মানুষ সেবা পাচ্ছে। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে।
করোনার সময়ও তারা ভালো ভূমিকা রেখেছে। করোনা পরীক্ষার জন্য তারা অসংখ্য ল্যাব তৈরি করেছিল। সেসব ল্যাবে লোকজন টেস্ট করতে পারছেন। তারা করোনার চিকিৎসা দিয়েছে। অনেক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) প্রয়োজন ছিল। তারা সেটারও ব্যবস্থা করেছে।
আবার অন্যদিকও আছে। সেখানটায় তাদের শোধরাতে হবে। যেমন তারা চার্জটা বেশি রাখে। আমি মনে করি যেন চার্জটা অতিরিক্ত না রাখা হয়, সেটা তাদের দেখা প্রয়োজন। অনেক সময় ভুল চিকিৎসাও হয়। সেটাও আমাদের শোধরাতে হবে, ঠিক করতে হবে। অনেক সময় অতিরিক্ত টেস্ট দেয় ও তাতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে টেস্টের হয়তো প্রয়োজন নেই, তারপরও টেস্ট দিয়ে দিল। ওষুধ বেশি দিল, অত ওষুধের হয়তো দরকার নেই। আমি মনে করি এদিকে তাদের অনেকটা ইমপ্রুভ করতে হবে।
এ ছাড়া অনেক জায়গায় অপারেশন করে, হয়তো সেখানে অপারেশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা নেই। এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
দেশের জিডিপিতে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুভাবেই অবদান আছে। তারা আয় করে। সে আয় থেকে ট্যাক্স দেয়। সেই ট্যাক্স সরাসরি জিডিপিতে অবদান রাখে। আরেকটা হলো, আপনি যদি ভালো স্বাস্থ্যসেবা দেন, মানুষ সুস্থ থাকে, তাহলে মানুষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও তারা বেশি উৎপাদনশীল হয়। এতে যে যেখানেই থাকুক না কেন, দেশের জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন অফিসে কাজকর্ম দ্রুতগতিতে হবে, শিল্পের উৎপাদন ভালো হবে, কৃষিতে উৎপাদন ভালো হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। এসব তো সরাসরি জিডিপিতে অবদান রাখে। আর যদি জাতি অসুস্থ থাকে, বেশি লোক অসুস্থ থাকে, চিকিৎসা না পায়, তখন তো অর্থনৈতিক উন্নয়ন কমে যাবে।
ভালো হাসপাতাল তৈরি হলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মানুষ কম যাবে। সেই টাকা দেশেই থাকবে। এসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা তো পড়াশোনা করে ও ডাক্তার হয়। আবার বিদেশ থেকেও অনেক ছাত্রছাত্রী আসে। তারা এসব প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করে। তাতে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। সেটাও দেশের জিডিপির জন্য একটা ভালো ভূমিকা রাখে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আমি মনে করি সবমিলে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত ভালো।
সরকার বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন পর্যায়ে যে ট্যাক্স (কর) নির্ধারণ করে, সেটা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী করে। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে সরকারের যেসব সার্ভিস গ্রহণ করবে, সেসবের জন্য তো পয়সা দিতে হবে। প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সময় যন্ত্রপাতির ওপর ট্যাক্স কমানো হয়েছে। চিকিৎসা-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ওপর তো ট্যাক্স কম ধরা হয়েছে। কাজেই সরকার তো তাদের সাহায্য করছেই।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের এক নতুন পালক যোগ করল ইউনাইটেড হসপিটাল। ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারের স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল’ (জেসিআই) স্বীকৃতি অর্জন করেছে। আর এই অর্জনটি আরও গুরুত্ব বহন করছে কারণ প্রথমবারের মতো জেসিআই সার্ভেতে অংশগ্রহণ করে নির্ধারিত ১ হাজার ২৭১টি মান ও মাপকাঠির প্রত্যেকটিতে ইতিবাচক ফলাফল (জিরো নট মেট) অর্জন করেছে ইউনাইটেড হসপিটাল, যা শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও বিরল। আর তাই ইউনাইটেড হসপিটাল অঙ্গীকার করে ‘স্বাস্থ্যসেবায় জিরো কম্প্রোমাইজ’।
জেসিআই হচ্ছে এমন একটি স্বীকৃতি যেটিকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার স্বর্ণমান হিসেবে ধরা হয়। এই স্বীকৃতিটি সেই হাসপাতালগুলোকেই দেওয়া হয়, যারা রোগীদের জন্য আপসহীন স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। এই মর্যাদা অর্জন করতে হাসপাতালগুলোকে হাজারেরও বেশি কঠোর মান বজায় রাখতে হয়। জেসিআই স্বীকৃতি একটি হাসপাতালের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার প্রতিফলন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই স্বীকৃতি অর্জন একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, অন্যদিকে রোগীর নিরবচ্ছিন্ন সেবা, নিরাপদ চিকিৎসা প্রদান করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে প্রথমসারির স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউনাইটেড হসপিটালের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগীর সুরক্ষা ও যত্নের গুণমান রক্ষা করা। জেসিআই স্বীকৃতি প্রমাণ করে ইউনাইটেড হসপিটাল বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। তারা এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করছে, যা তাদের রোগী ও কর্মীদের জন্য ঝুঁকি কমিয়ে আনছে। জেসিআই স্বীকৃতি অর্জন করতে গিয়ে ইউনাইটেড হসপিটাল দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের ধারায় অবদান ও পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মান রক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করেছে।
ইউনাইটেড হসপিটালের জেসিআই অর্জনের নেপথ্যের যাত্রা অনেক দিন ধরেই চলমান, যেটি এই হসপিটালের ক্রমাগত উন্নতির সাক্ষীস্বরূপ। হাসপাতালটি কৌশলগতভাবে অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছে। যে কারণে সেবার মান আরও উন্নত, সম্প্রসারিত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। হাসপাতালটি সেবার মান উন্নীতকরণের প্রচেষ্টায় সেবার প্রতিটি ধাপে আমূল পরিবর্তন এনেছে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড হসপিটালে প্রায় ছয় লাখ মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে আর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল প্রফেশনাল এবং সেবাদাতার হাতেই নিশ্চিত হচ্ছে এই জেসিআই মানের স্বাস্থ্যসেবা।
ইউনাইটেড হসপিটালের ভিশন হচ্ছে দেশের সব জায়গায় সর্বস্তরের মানুষের জন্য, তাদের সাধ্যের মধ্যে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি দেশের চিকিৎসা খাতকে সমৃদ্ধ করা। যে কথাই বারবার ব্যক্ত করেছেন ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন হাসান রশীদ ও ইউনাইটেড হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান।
আমরা যদি রোগীদের দিক থেকে দেখি, কীভাবে এই স্বীকৃতিটি উচ্চমানের সেবা নিশ্চিত করছে, আমাদের কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে যেগুলো সরাসরি রোগীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হসপিটালে প্রবেশ থেকে শুরু করে চিকিৎসা শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রোগীকে দেওয়া সেবাগুলোর টাইম ট্র্যাক নিশ্চিত করে রোগীর সঠিক চিকিৎসা। হসপিটালে ভর্তির সময় ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য ফল প্রিভেনশন ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়, সঙ্গে নিশ্চিত করা হয় রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট সার্ভিস। হুইলচেয়ারে বসা রোগীদের জন্য বিশেষ প্রবেশ থেকে শুরু করে বাথরুমে হ্যান্ডেল এবং রয়েছে হুইলচেয়ার নিয়ে প্রবেশ করার মতো বাথরুমও। ইউনাইটেড হসপিটালে রোগীদের পড়ে যাওয়া ঠেকাতে ও প্রবেশের পর থেকে রোগীর যতœ নিশ্চিত করতে দক্ষ নার্সিংব্যবস্থা রয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে রোগীর কক্ষ এবং বাথরুমের মেঝেতে লক্ষ রাখে, যাতে সেগুলো পরিষ্কার এবং শুকনো থাকে।
হসপিটালে ভর্তি হওয়ার পর একজন রোগী ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকে। আর রোগী যদি ইমার্জেন্সিতে আসে সে ক্ষেত্রে জেসিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী ১৫ মিনিটের মধ্যে তার প্রাথমিক অ্যাসেসমেন্ট নিশ্চিত করা হয়। ইমার্জেন্সিতে রোগীর দ্রুত মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চসংখ্যক ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন। ইউনাইটেড হসপিটাল সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনার পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে রোগীদের সুস্থ করে তোলার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
হসপিটালে ভর্তি প্রতিটি রোগী দিনে সাতবার খাবার পেয়ে থাকে এবং সঠিক চিকিৎসা প্রটোকল নিশ্চিত করার জন্য একজন সার্টিফায়েড ডায়েটিশিয়ানের চার্ট অনুযায়ী খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন করা হয়।
ইউনাইটেড হসপিটালের ডাক্তারের দেওয়া সব ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের ব্র্যান্ড নামের পরিবর্তে জেনেরিক নাম ব্যবহার করা হয়, যা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। হসপিটালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ সরবরাহের সময় একজন ‘এ’ গ্রেড ফার্মাসিস্ট ওষুধের ডোজ, সুবিধা-অসুবিধা ও সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে অবগত করেন। ওষুধের গুণগতমান ও কার্যকারিতা বজায় রাখতে এই মডেল ফার্মেসিতে প্রত্যেকটি ওষুধ কোল্ড চেইন মেনে সংরক্ষণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। ওষুধের প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে সংগ্রহ থেকে শুরু করে গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যেকটি স্তরে সঠিকভাবে এই চেইন মেনে চলা হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা পরীক্ষাও করা হয়। হসপিটালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম মানা হয়। এ ছাড়া ওষুধের আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত ধারা অনুযায়ী ডোজেজ লেবেলিং করা হয়, পাশাপাশি যেসব ডোজে উচ্চ সতর্কতা মানা জরুরি সেগুলোতে বিশেষ লেবেলিং ট্যাগ লাগানো হয়। এখানে জরুরি ওষুধের ১০০% সরবরাহ থাকে এবং ওষুধ সংরক্ষণের জন্য মানসম্পন্ন ফ্রিজের ব্যবস্থা রয়েছে।
ইউনাইটেড হসপিটাল প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মেডিকেল রেকর্ড সংরক্ষণ করে। যদি কোনো রোগীর কাছ থেকে তথ্য হারিয়ে যায়, তিনি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করার পর তার মেডিকেল রেকর্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
ইউনাইটেড হসপিটালে একটি সেন্ট্রাল স্টেরাইল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্ট (সিএসএসডি) রয়েছে, হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় যাতে কোনো ধরনের সংক্রমণ না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এই ইউনিটটি স্টেরিলাইজেশন ও হসপিটালের সব জায়গায় যেকোনো সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিসপত্র ফেলে দেওয়ার জন্য ইউনাইটেড হসপিটালে নিয়মিত অডিট হয়ে থাকে।
কীভাবে একটি জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতাল অন্য যেকোনো হাসপাতালের তুলনায় সেবার মানের দিক থেকে অনেক এগিয়ে, চলুন সে সম্পর্কে জেনে নিই। এখানে জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতালের মাত্রাগুলো কী কী এবং আপনি কীভাবে বুঝতে পারবেন যে আপনি সর্বোচ্চ সেবা পাবেন সে সম্বন্ধে জানতে পারবেন। যে তথ্যগুলো আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি, সেগুলো ছাড়াও এখানে আরও কিছু বিষয় রয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে ইউনাইটেড হসপিটাল তাদের সেবার মান উন্নত করেছে।
ইউনাইটেড হসপিটাল জেসিআই মান অনুযায়ী মৃত্যুর হার কমাতে ও রোগীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ইউনাইটেড হসপিটালে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার শূন্য শতাংশ, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।
একজন রোগীর হাসপাতালে অবস্থান একটি নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি হওয়া উচিত নয়। বৈশ্বিক মান অনুযায়ী এটি পাঁচ দিন, তবে এটি প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তিত হয়। ইউনাইটেড হসপিটাল দ্রুত এবং কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিতের মাধ্যমে রোগীর সুবিধার্থে হসপিটালে তাদের অবস্থানের সময় যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করে।
জেসিআই মান অনুযায়ী প্রতিটি রোগীর আগমনের সময় থেকে খুব কম সময়ের মধ্যে (সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট) একজন নার্স এবং পরে একজন ডাক্তারের দ্বারা রোগীর মূল্যায়ন খুব যতœসহকারে করা উচিত। ইউনাইটেড হসপিটাল ধারাবাহিকভাবে এই পদ্ধতি খুব কঠোরভাবে অনুসরণ করে আসছে।
ইউনাইটেড হসপিটাল সঠিক পোস্ট সার্জিক্যাল চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছে। সঠিক, নির্ভুল ও সংক্রমণমুক্ত অস্ত্রোপচার নিশ্চিতের মাধ্যমে রোগীদের আবার ফেরত আসা প্রতিরোধ করা হয়। প্রায় শতভাগ অস্ত্রোপচার সঠিক প্রস্তুতির সঙ্গে টাইম-আউট (অস্ত্রোপচারে টাইম-আউট হলো একটি সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি, যা অপারেশন শুরু করার আগে সঠিক রোগী, পদ্ধতি এবং স্থান নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ভুল সাইট, ভুল পদ্ধতি এবং ভুল ব্যক্তির অস্ত্রোপচার প্রতিরোধের জন্য একটি নিরাপত্তাব্যবস্থা) পদ্ধতি মেনে ও বৈশ্বিক মান অনুসরণ করে করা হয়। অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইউনাইটেড হসপিটাল কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সঠিক রোগ নির্ণয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষার মান নিশ্চিতকরণের একটি চাবিকাঠি।
ইউনাইটেড হসপিটালের ওঝঙ স্বীকৃত ল্যাবরেটরি রয়েছে, যেখান থেকে সার্বক্ষণিক সেবা পাওয়া যায়। ২০১৪ সাল থেকে টানা আইএসও স্বীকৃতি পেয়ে আসছে এই ল্যাব, যেটি নিশ্চিত করে এই হসপিটালের রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা। হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে একসঙ্গে ২২ জনকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন স্বনামধন্য চিকিৎসকরা। জরুরি প্রয়োজনে এখানে মাত্র তিন ঘণ্টায় ব্লাড টেস্ট করা সম্ভব।
জেসিআই স্বীকৃতি ইউনাইটেড হসপিটালে রোগীদের সেবাদানের জন্য উচ্চমান ও নিরাপদ যত্ন প্রদানে তাদের প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ হিসেবে দেখা যায়। হাসপাতালটি ক্রমাগত সেবার মান উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। জেসিআই স্বীকৃতি তার কৃতিত্বের একটি স্মারক। যেসব স্বাস্থ্যসেবার জন্য মানুষ বিদেশে যাচ্ছে, তাদের জন্য বিকল্প হতে পারে ইউনাইটেড হাসপাতাল।
বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিতে যারা উদ্যোগ নিয়ে অগ্রগণ্য হয়েছেন তাদেরই একজন মো. লোকমান হোসেন। ১৯৯৫ সালে গড়ে তোলেন মিরপুর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। পরে যার নামকরণ করা হয় আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড। এরপর দিনে দিনে আলোক হেলথ কেয়ারের শাখা-প্রশাখা বিকশিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় রয়েছে মিরপুর-১০-এ ১০০ শয্যার হাসপাতাল ও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর পাশাপাশি পল্লবী, মিরপুর-১, কচুক্ষেত, মহাখালী ও টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে আলোকের শাখা রয়েছে। সেই সঙ্গে টাঙ্গাইলে একটি ফাউন্ডেশন হাসপাতালও পরিচালিত হচ্ছে। নির্মাণাধীন রয়েছে আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার। দেশের চিকিৎসাসেবার সার্বিক পরিস্থিতি ও বেসরকারি খাত নিয়ে আলোক হেলথ কেয়ারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. লোকমান হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের ফারুক হোসাইন।
দেশ রূপান্তর : দেশের চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের অবদান কতটুকু?
মো. লোকমান হোসেন : সরকার একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তৈরি করেছে। আমরা বেসরকারিভাবে এত প্রান্তিক পর্যায়ে যেতে পারিনি। তবে দেশের স্বাস্থ্যসেবার বড় একটা অংশ বেসরকারিভাবে দেওয়া হয়ে থাকে।
দেশ রূপান্তর : মোট চিকিৎসাসেবার কতটুকু বেসরকারি চিকিৎসা খাত থেকে আসে?
লোকমান হোসেন : মোট চিকিৎসাসেবার প্রায় ৭০ শতাংশ বেসরকারিভাবে হয়ে থাকে। আপনারা দেখবেন উপজেলা বা উপশহরগুলোতে বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ সেবা পেয়ে আসছে।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে আছে?
লোকমান হোসেন : দেশের উচ্চবিত্তরা এখনো চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। এর ফলে প্রতি বছর দেশ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ চিকিৎসাব্যবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এখন সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে রোগের সুচিকিৎসা মিলছে। সরকারের পাশাপাশি আমরা যদি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হাসপাতাল বানাতে পারতাম, তাহলে ভালো হতো। আমাদের হাতেগোনা কিছু হাসপাতাল আছে, সেখানেও কিন্তু পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। আমাদের যে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনা আছে এতে মানুষ সন্তুষ্ট হচ্ছে না। এর কারণ সংখ্যায় কম। সরকারি হাসপাতালে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। বেসরকারিতে আমরা যারা ভালো করছি সেখানেও ভিড়। তাই যাদের টাক-পয়সা আছে তারা বাইরে চলে যাচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসা নিতে প্রতি বছর কী পরিমাণ রোগী দেশের বাইরে যায়? এতে কত টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে? এই বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কী করতে পারে ও করছে?
লোকমান হোসেন : চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা। বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রতি বছর এর চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় হচ্ছে। সরকারের সুপরিকল্পনা ও বেসরকারি খাত-সহায়ক নীতিমালা এই চিত্রকে পাল্টে দিতে পারে। চিকিৎসার জন্য প্রতি বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই বিশাল অঙ্কের টাকাটা যদি আমরা সেভ করতে চাই, তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মতো আরও ১০টি ইউনিভার্সিটি আমাদের দরকার। প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহরে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল হতে পারে।
দেশ রূপান্তর : অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে রয়েছে?
লোকমান হোসেন : এখন দেশেই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা দেশের স্বাস্থ্যসেবাতেই আস্থা রাখছেন। পাশের দেশের সঙ্গে আমাদের দেশে স্বাস্থ্য খাতে খরচ তুলনা করলে কম। আর মান দিন দিন আরও বাড়ছে আমাদের।
দেশ রূপান্তর : জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি হাসপাতালের অবদান কতটুকু? বিনিময়ে বেসরকারি খাত কী পাচ্ছে সরকার থেকে?
লোকমান হোসেন : দেশে আধুনিক সেবা দেওয়ার মাধ্যমে বিদেশে অর্থ চলে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে। যার ইতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে। তবে কী পরিমাণ আর্থিক অবদান আমাদের রয়েছে সেটি সঠিকভাবে বলতে পারছি না। তবে আমরা সেবার পরিধি বাড়াতে চাই। এজন্য যেমন আমাদের এ মুহূর্তে প্রয়োজন একটি পরিশীলিত স্পেস বা প্লট। আমরা ছিন্নবিচ্ছিন্ন জায়গায় সেবা দিয়ে আসছি। আলোকের এখন দরকার পাঁচ একর জায়গা। তাহলে আগামী দশ বছরের মধ্যে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি ও বিশ্বমানের হাসপাতাল আমি তৈরি করতে পারব। কিন্তু সেই জায়গাটা আমার নেই। তাহলে সরকারের কোনো জায়গা থাকলে সেটা যদি আমাকে দিত, তাহলে ভালো হতো। সেখানে যদি সরকার শর্ত দেয় যে, মেডিকেল কলেজের একটা অংশে জনগণকে ফ্রি সার্ভিস দিতে হবেÑ তাতেও কোনো সমস্যা নেই। আমি তো জনগণের সেবা করতে চাই, সেই সুযোগটা দরকার। এর বাস্তবায়নের ফলে যেটা হবে, যেসব মানুষ বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে তাদের আমি দেশেই সেবা দিতে পারব।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় সরকারি নিয়মনীতি ঠিক আছে কি না? নাকি কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে? লোকমান হোসেন : নিয়মনীতি তো আছেই। বেসরকারি খাত যাতে এগিয়ে যায়, সরকার সেদিকে খেয়াল তো রাখছেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের ট্যাক্সের ব্যাপারে সরকার আরেকটু শিথিল হলে ভালো হয়।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন আছে। অনেকেই বলে থাকেন সেখানে রোগীদের গলা কাটার মতো অর্থ আদায় করা হয়। বেসরকারি চিকিৎসা ব্যয় কি মানুষের নাগালের মধ্যে আছে?
লোকমান হোসেন : বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসার ব্যয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। সরকার শতভাগ বিনামূল্যে সেবা দেয়। অন্যদিকে আমরা যখন টাকা নিই, তখনই মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। উন্নতবিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। সেখানে লাখ লাখ মানুষ ইন্স্যুরেন্সে টাকা দেয়, আর তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয় তারা সেবা পায়। এখন নিম্ন আয়ের মানুষ টাকার জন্য সেবা নিতে পারছে না, উচ্চবিত্তরা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর আমরা মাঝপর্যায়ে যারা আছে তাদের সেবা দিচ্ছি। তাই উন্নত দেশের মতো আমাদেরও ইন্স্যুরেন্সের মধ্যে আসতে হবে। তবে পাশের দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় কম।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী ধরনের সংকট হচ্ছে?
লোকমান হোসেন : বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা করতে গিয়ে সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যায় না। আমরা বেসরকারিভাবে মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছি। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন সকালে কিন্তু আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাচ্ছি না। দেশের অধিকাংশ ডাক্তারের চিন্তা থাকে তারা সরকারি চাকরি করবেন। আমাদেরও কমতি আছে, বেসরকারিভাবে তাদের চাকরির নিরাপত্তা দিতে পারিনি। আমরা যদি সরকারের চেয়ে বেশি বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দিই তারপরও তারা আমাদের নিরাপদ মনে করছেন না। তাদের জন্য ওই আস্থার জায়গাটা আমরা অর্জন করতে পারিনি। ফলে সরকারি ডাক্তাররা সকালে সরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন, আবার বিকেলে আমাদের এখানে আসছেন। বিকেলে এসে বা সন্ধ্যায় এসে তারা আমাদের প্রতিষ্ঠানে সেবা দিচ্ছেন। এটা কিন্তু শোভনীয় নয়।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসকদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা দিতে আগ্রহী করতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?
লোকমান হোসেন : কীভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিতে সরকারকেও কাজ করতে হবে। যেমন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে। এটি খুবই কার্যকর উদ্যোগ। পাশাপাশি আমরা যারা বেসরকারিভাবে কাজ করি, আমাদের আয়ের একটা অংশ জনশক্তি তৈরিতে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের আয়ের ৫ শতাংশ যদি আমরা জনশক্তি উন্নয়নে ব্যবহার করি, তাহলে সরকারের যে লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসাসেবাকে আরও এগিয়ে নিতে আপনার পরিকল্পনা কী?
লোকমান হোসেন : চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞান-সংশ্লিষ্ট মানবসম্পদ তৈরি করতে চাই। এজন্য একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার চিন্তা আছে। নিজে চিকিৎসক না হলেও আমি দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবার সঙ্গে আছি। আমি মনে করি, একজন মানুষ সুস্থ হলেই সুন্দর পৃথিবী গড়তে পারবে। আমার লক্ষ্য হলো একটি গুণগত মানের মেডিকেল কলেজ করা। আরেকটি হলো আমি বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল করতে চাই। আস্থা অর্জন করে দেশের টাকা যে বিদেশে চলে যাচ্ছে এটি রোধ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে চাই।
বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী। স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি হাসপাতালের অবদান ও মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা সেসব নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
দেশ রূপান্তর : দেশের স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের অবদান কতটুকু?
ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী : সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলো দেশের স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। গত এক দশকে অথবা এক যুগে যদি বলা হয়, উন্নত বিশে^র সব চিকিৎসা-সুবিধা বাংলাদেশে বিদ্যমান। একসময় শুধু একটা এনজিওগ্রাম করার জন্য পাশের ভারত অথবা বিদেশে যেতে হতো। কিন্তু এখন দেশে অর্ধশতাধিক পূর্ণাঙ্গ কার্ডিয়াক সেন্টার রয়েছে। একদম ছোট নার্সিং হোম থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হাসপাতাল দেশে রয়েছে, যেসব হাসপাতাল শুধু বিদেশেই দেখা যায়। সুতরাং বেসরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
দেশ রূপান্তর : মোট চিকিৎসাসেবার কতটুকু দেয় বেসরকারি চিকিৎসা খাত?
ডা. আশীষ : মোট চিকিৎসাসেবার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ অবদান বেসরকারি খাতের। কারণ সরকারের যে সেবা ও যে শয্যাসংখ্যা তা দিয়ে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং এতে বেসরকারি খাত বিরাট ভূমিকা পালন করছে।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী ধরনের সংকট হচ্ছে?
ডা. আশীষ : চিকিৎসাসেবায় আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে হাসপাতালে রোগীদের অনাকাক্সিক্ষত স্বজনদের কারণে। প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন এসে ঝামেলা করছে। বিদেশে হাসপাতালে একদম একান্ত স্বজন ছাড়া কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। সেই সঙ্গে বেসরকারি চিকিৎসা খাতে ব্যাংকঋণের অর্থ সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে হয়। একদম সাধারণ ব্যবসায়ীদের মতো আমাদের ঋণের বোঝা বহন করতে হয়। চিকিৎসা খাত হয়েও আমরা কোনো প্রকার বিশেষ সুবিধা পাই না। এমনি বিদ্যুৎ বিল, পানির বিলসহ যাবতীয় বিলও ব্যবসায়ীদের মতো আমাদের পরিশোধ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যদি বিদেশের মতো আমাদের জন্যও ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবার দিক বিবেচনা করা হয় তাহলে সেবার মান উন্নত হবে, কোনো বিঘœ ঘটবে না।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি চিকিৎসা খাতে সরকার কীভাবে সহযোগিতা করছে? এই সহযোগিতা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত কি না?
ডা. আশীষ : সরকার আমাদের দেখভাল করছে, এ বিষয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে একমত এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে সর্বদা প্রস্তুত। কিন্তু এখানে সহযোগিতা আরও বাড়ানো উচিত। মেডিকেল যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়া দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে এবং পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির প্রয়োজন। হাসপাতালগুলোতে টহল থাকা দরকার, যাতে রোগীর অনাকাক্সিক্ষত স্বজনরা হাসপাতালে এসে পরিবেশের বিঘœ ঘটাতে না পারে। পাশাপাশি চিকিৎসক এবং কাজের পরিবেশ যেন নিশ্চিত হয়। পাশর্^বর্তী দেশগুলোতে কিন্তু চিকিৎসা কিংবা চিকিৎসাসেবা দানকারী কোনো কর্মীকে যদি গালমন্দ কিংবা আঘাত করা হয় তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। এসব দেশে আইন আছে। আমরাও চাই দেশে চিকিৎসাসেবায় কোনো দুর্বৃত্তায়ন যেন না ঘটে। এ ব্যাপারে সরকারের গভীর দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় সরকারি নিয়মনীতি ঠিক আছে, নাকি কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে?
ডা. আশীষ : এখানে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক শাখাটি রয়েছে, সেটির নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। কারণ নিম্নমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। নিম্নমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের অনুমোদন দেওয়া না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি, দেশের সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব হাসপাতালগুলোর নেতিবাচক নিউজকে অতিরঞ্জিত করে ছাপা ঠিক নয়। পাশাপাশি ইতিবাচক খবরও ছাপা দরকার। অতিরিক্ত নেতিবাচক সংবাদের কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাত ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
বিদেশে চিকিৎসা কিংবা স্বাস্থ্যসেবা হচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। আমাদের দেশে আমরা মানুষকে স্বল্পমূল্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি। মানুষের দোরগোড়ায় ডাক্তার রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে ডাক্তার রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে রোগী এলে আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং ও টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন চলছে? ডা. আশীষ : এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত। এখানে ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ নেই। কোনো একসময় ছিল শুধু পয়েন্ট থাকলেই ভর্তি হওয়া যেত। কিন্তু এখন জাতীয়ভাবে মেধাতালিকার মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার একই সময় একই দিনে পরীক্ষা হয়। এ বছর থেকে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর কনফার্ম করে লিস্ট পাঠিয়ে দিচ্ছে মেডিকেল কলেজগুলোতে যে ৬০ জন ছাত্র ভর্তি হবে। কোনো ছাত্র যদি অন্য কোনো মেডিকেলে যেতে চায়, তখন যে শূন্যস্থানটি হয় সে ক্ষেত্রে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো সুযোগ নেই পরিবর্তন করার। সেটিও অটো মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ায় মেডিকেল কলেজের নীতিমালায় হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি খাতে প্রতি বছর কী পরিমাণ চিকিৎসক ও নার্স তৈরি হচ্ছে?
ডা. আশীষ : বেসরকারি খাতে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার চিকিৎসক এবং ৩০ হাজারের বেশি নার্স তৈরি হচ্ছে; বিশেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা নার্সের সংখ্যা সরকারির চেয়ে কয়েকগুণ।
দেশ রূপান্তর : জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি হাসপাতালের অবদান কতটুকু? বিনিময়ে বেসরকারি খাত কী পাচ্ছে সরকারের কাছ থেকে?
ডা. আশীষ : জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি হাসপাতাল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। অনেক চিকিৎসক একসময় বিদেশ চলে যেতেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারি চাকরিতে যাদের প্রমোশন হচ্ছে না কিংবা বঞ্চিত মনে করছেন, তারা বেসরকারিতে অনেক উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন। তাদের কষ্টার্জিত অর্থ আবার দেশেই বিনিয়োগ হচ্ছে। বেসরকারি খাত সরকারের সহযোগিতা পেলেও গেলেও মাঝে মাঝে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমাদের নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়। যেমন কভিডের সময় দুই তিন ধাপে কভিড টেস্টের মূল্য কমানো হয়েছে। ডেঙ্গুর সময়ও সরকার কয়েক দফায় খরচ বেঁধে দিয়েছে। যদিও এতে আমাদের অনেকাংশে মুনাফা কমে যায়। তবু আমরা জনগণের স্বার্থে কিংবা সরকারকে সহযোগিতা করতে সাড়া দিই।
দেশ রূপান্তর : বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে। চিকিৎসা ব্যয় কি মানুষের নাগালের মধ্যে?
ডা. আশীষ : আগেই বলেছি, বাংলাদেশে এখন উন্নত বিশ্বের সব চিকিৎসাসেবা বিদ্যমান। সুতরাং ভালো মানের যে হাসপাতালগুলো রয়েছে, বিশেষ করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চিকিৎসাব্যবস্থা দিয়ে যাচ্ছে। আমি যদি ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কথা বলি তো, আমাদের একটি ৫০০ শয্যার অনুমোদিত হাসপাতাল রয়েছে, যার মধ্যে ৩৫০ শয্যার হাসপাতাল অপারেশনে রয়েছে। আমাদের এখানে ওয়ান স্টপ কার্ডিয়াক সেন্টার রয়েছে, যেখানে মধ্যরাতে এবং ভোররাতেও প্রাইমারি পিসিআই করা হয়। আমরা ট্রমা এবং অ্যাকসিডেন্ট ম্যানেজমেন্টের জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছি, কমপ্লিকেটেড প্রেগনেন্সি এবং নিওনেটাল আইসিইউ, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, আইসিইউতে ২৪ ঘণ্টা স্পেশালিস্ট রয়েছেন। আমাদের সার্বক্ষণিক ডায়ালাইসিস বিদ্যমান। আমি আবারও বলছি, পৃথিবীর সবচেয়ে কম খরচে বাংলাদেশে চিকিৎসা হয়। যাদের আর্থিক সমস্যা আছে, যারা নিম্নবিত্ত তাদের অতিরিক্ত খরচ থেকে পরিত্রাণ দিতে স্বাস্থ্যবীমা চালু করা প্রয়োজন।
দেশ রূপান্তর : চিকিৎসা নিতে প্রতি বছর কী পরিমাণ রোগী দেশের বাইরে যায়। এতে কত টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কী করতে পারে এবং করছে?
ডা. আশীষ : বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কী করতে পারে তা এককথায় বলা কঠিন। কারণ কিছু মানুষ রয়েছে যারা হাঁচি-কাশির জন্যও বিদেশে যায়, এটা তাদের প্রেস্টিজ ইস্যু। আমরা এমনও দেখেছি যেসব রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে হাজারের ঘরে করা যায়, সেগুলো বিদেশে গিয়ে লাখ বা কোটির ঘরে মানুষ খরচ করে আসে। বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসা কিন্তু উন্নত বিশ্বের সব সুবিধাসম্পন্ন। অথচ আমি এমনও মানুষ দেখেছি যিনি তার মাকে বিদেশ থেকে ৬টি কেমোথেরাপি দিয়ে এনেছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে। এর সঙ্গে থাকা, খাওয়া বা প্লেন ভাড়া তো বাদই দিলাম। এই একই চিকিৎসা বাংলাদেশে মাত্র কয়েক লাখ টাকায় করা যায়। বেসরকারি হাসপাতালকে আরও বেশি পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে, তবে সেই সঙ্গে দেশের মানুষেরও আমাদের প্রতি আস্থা দেখাতে হবে। আমার খুব অবাক লাগে যে দেশের মানুষ নিজের দেশের ডাক্তারের ওপর ভরসা না করে বিদেশের ডাক্তারের ওপর ভরসা রাখছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট ও হতাশার। বাংলাদেশের মানুষকে নিশ্চয়তা দিতে চাই যে প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী হাসপাতাল দেশে রয়েছে এবং এখানে বিশ্বমানের চিকিৎসা হয়। কিছু কিছু অঙ্গ প্রতিস্থাপন যেমন লিভার, কিডনি বা হার্টের জন্য রোগীরা বিদেশে গেলেও এখন এই চিকিৎসা দেশেই শুরু হয়েছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনটিও শিথিল করা হয়েছে। বাংলাদেশে মাত্র দুই লাখ টাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন হয়। কিন্তু একই চিকিৎসা কলকাতায় করতে গেলেও বোধ হয় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে দেশে চিকিৎসা খরচ অনেকটাই নাগালের মধ্যে। আমি জনগণকে অনুরোধ করব, আপনারা দেশের চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রাখুন। অবশ্যই স্বাস্থ্যবীমা করবেন।
দেশ রূপান্তর : অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসার মান কোন পর্যায়ে রয়েছে?
ডা. আশীষ : লন্ডনে যদি একটা মানুষের হঠাৎ করে শরীর খারাপ হয়, তবে তাদের যে ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার সার্ভিস রয়েছে, তাদের নিয়মে প্রথম একজন জেনারেল প্র্যাকটিশিয়ানের (জিপি) কাছে যেতে হবে এবং তার অনুমতি ব্যতীত চাইলেও কেউ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে পারবেন না। হ্যাঁ, বেসরকারি চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসাব্যয় কল্পনাতীত। উদাহরণ দিয়ে বলি, আমার একজন আত্মীয়কে একজন অর্থোপেডিক সার্জনের কাছে নিয়ে গেলাম। ভিজিট হিসেবে তাকে ২৫০ পাউন্ড দিতে হয়েছে, যার বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। অথচ বাংলাদেশে ডাক্তারভেদে ভিজিট ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকা। সুতরাং দেশে কতটা কম খরচে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়।
চিকিৎসাসেবায় শুধু একা ডাক্তারের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে জড়িত নার্স, পিসিএ, ক্লিনার, অ্যাম্বুলেন্স, ড্রাইভার। সবাইকে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা। তাই সরকার, সাধারণ মানুষ সবাইকে আন্তরিক হতে হবে যাতে স্বাস্থ্য খাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
নেক সন্তান আল্লাহর অপূর্ব নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে সন্তান-সন্ততিকে জীবনের শোভা বলা হয়েছে। হাদিসের ভাষায় তাদের আখ্যা দেওয়া হয়েছে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল (জারি থাকে)। (প্রথম) সদকায়ে জারিয়া; (দ্বিতীয়) ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৫১
সন্তানকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তাকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় এই সন্তানই মা-বাবার ইহকাল-পরকালের অশান্তির কারণ হতে পারে। এখানে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো- যা সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গোনাহমুক্ত পরিবেশ : শিশুদের নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি যতœবান হতে হবে। তার মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। তার জন্য গোনাহমুক্ত পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো।’ -সুরা তাহরিম : ৬
একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত।
তাই তাদের সামনে কোনো ধরনের অসৌজন্যমূলক কথা ও কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের সামনে ঝগড়াঝাটি, পরনিন্দা ইত্যাদি কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা : ছোটবেলা থেকেই শিশুদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিচ্ছন্নতাকে ইমানের অঙ্গ বলেছেন। ছোট মানুষ বলে তাদের যেনতেনভাবে লালন-পালন করা উচিত নয়। কারণ এটিও ব্যক্তিত্ব গঠনে জোরালো ভূমিকা পালন করে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বলেন, ‘রাসুল (সা.) দিনের এক অংশে বের হন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তার সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কাইনুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতেমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসলেন। অতঃপর বলেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? হজরত ফাতেমা (রা.) তাকে কিছুক্ষণ সময় দিলেন। আমার ধারণা হলো, তিনি তাকে পুঁতির মালা, সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন (সাজিয়ে দিচ্ছিলেন)। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাকে (হাসানকে) ভালোবাসো এবং তাকে যে ভালোবাসে তাকেও ভালোবাসো।’ -সহিহ বোখারি : ২১২২
সৃজনশীল খেলনা : শিশুর খেলনা হতে হবে আবিষ্কারধর্মী ও সৃজনশীল। বয়সভেদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। ঘরে ও বাইরে দুই জায়গায়ই খেলা যায়- এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিকাশে বেশি সহায়ক। শিশুকে এমন ধরনের খেলনা দিতে হবে, যা তার বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ খেলনা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
অনেকে সন্তানকে ঘরে নিরাপদে রাখতে ভিডিও গেম বা কার্টুনের প্রতি আকৃষ্ট করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিনিয়ত ভিডিও গেম খেললে শরীরে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। এতে শিশু সব কিছু নিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। মা-বাবার অবাধ্য হয়ে যায়। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সব কিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া কারও সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম তো রয়েছেই।
দীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া : দীনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, আল্লাহ-রাসুল ও ইসলামের সাধারণ জ্ঞানগুলো অল্প অল্প করে শেখাতে হবে। কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি তাকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন গোনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও মা-বাবার দায়িত্ব।
নামাজে অভ্যস্ত করা : শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুললে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যতœবান হতে পারবে না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যতœবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’ -সুনানে বায়হাকি : ৫০৯৪
উল্লেখ্য, ১০ বছর বয়সে সন্তানের বিছানা আলাদা করে দেওয়ার বিষয়টিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা ঘুমিয়ে গেলেও তাদের অবচেতন মন বড়দের অনেক কার্যক্রমই অনুসরণ করতে পারে।
এক কথায় সন্তানকে দীনদার হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদেরও অত্যন্ত সচেতনভাবে চলতে হবে। ঘরে আমলের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে পরিবেশের কারণে তাদের মধ্যে আমল করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো বয়সে ঘাড়, পিঠ বা কোমরের বাত-ব্যথা ভোগেন। কোনো আঘাত পাওয়া ছাড়াই মেরুদণ্ডের এসব অংশে ব্যথা হতে পারে।
ব্যথার উৎস : মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর ভেতর দিয়ে মাথার খুলি থেকে নেমে আসা নার্ভে বা স্পাইনাল কর্ডে দুই হাড়ের মধ্যবর্তী ডিস্কের কিছু অংশ বের হয়ে গিয়ে চাপের সৃষ্টি করলে ওই স্নায়ুমূলে ও সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া নার্ভের বিচরণ অঙ্গে ব্যথা হয়। এ জাতীয় ব্যথার নাম মেরুদণ্ড হাড়ের ক্ষয়। হাড়ের ফাঁক হয়ে যাওয়া বা হাড়ের বৃদ্ধিও বলা হয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে এ জটিলতা ডিস্ক প্রোল্যাপ্স, হার্নিয়েটেড ডিস্ক বা স্পাইনাল স্টেনোসিস বলা হয়। ডিস্কের সরে যাওয়া মাত্রার ওপর নির্ভর করে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স বা পিএলআইডি রোগের জটিলতা।
লক্ষণ : দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া, ঘাড় থেকে ব্যথা হাতে ছড়িয়ে পড়া, প্রাথমিক পর্যায়ে কাঁধ ও হাতে ব্যথা, হাতের বিভিন্ন অংশে ঝিনঝিন, শিনশিন করা, হাতের বোধশক্তি কমে আসা, পর্যায়ক্রমে হাতের অসাড়তা, ধীরে ধীরে হাত দুর্বল হয়ে হাতের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা। মেরুদণ্ডের পিঠের অংশে ব্যথার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে বসা ও দাঁড়ানো অবস্থায় পিঠব্যথা ও পিঠ থেকে বুকের চারপাশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া। আর কোমরের দিকের মেরুদণ্ডে ব্যথার লক্ষণ হলো দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় কোমর ব্যথা অনুভূত হওয়া, কোমর থেকে উৎপন্ন ব্যথা পায়ে ছড়িয়ে পড়া, নিতম্ব ও পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা, পায়ের বিভিন্ন অংশে ঝিনঝিন, শিনশিন করা, পায়ের বোধশক্তি কমে আসা, পর্যায়ক্রমে পায়ের অসাড়তা, ক্রমে পা দুর্বল হয়ে কার্যক্ষমতা হারানো।
চিকিৎসা : ব্যথায় রোগী সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে উপশমের চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু এ ধরনের ওষুধ নিয়মিত ও দীর্ঘদিন খেলে কিডনিতে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ব্যথা বাড়লে অপারেশনের মাধ্যমে ব্যথা নিবারণের ব্যবস্থা করা হয়। লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে মেরুদণ্ডের ব্যথা নিরাময়ের ব্যবস্থা করা যায়।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।