
মো. ফরিদুল হক খান
প্রতিমন্ত্রী , ধর্ম মন্ত্রণালয়
মডেল মসজিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রদর্শনের একটি নিদর্শন। ইসলাম চর্চার প্রসার, ইসলামের মূল্যবোধ ও মানবিক জাতি গঠনে এ প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হবে প্রকল্পের আওতায়। ২০২১ সাল থেকে চার পর্যায়ে ২০০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে।
দেশে প্রায় ৩ লাখ মসজিদ রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ দৃষ্টিনন্দন কোনো মসজিদ বা ইসলামি স্থাপনা নেই, যেখানে মুসলমানরা তাদের নামাজ আদায়সহ ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চা করতে পারেন। এসব বিবেচনায় ইসলামি মূল্যবোধ উন্নয়ন এবং ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়।
মডেল মসজিদের সুযোগ-সুবিধা দেখলে সহজে বোঝা যায়, প্রধানমন্ত্রী একটি উন্নত মনন ও মানবিক জাতি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। সারা দেশে একসঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণ একটি বিরল ঘটনা। ইসলামের প্রতি মমত্ববোধ ও মুসলমানদের ভালোবেসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের কথা জাতি চিরকাল কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।
মডেল মসজিদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এসব কথা বলেন। আলাপকালে মডেল মসজিদ ছাড়া বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য কাজ সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেন। মন্ত্রী জানান, মডেল মসজিদ প্রকল্পের বাজেট ধর্মীয় খাতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এই প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। এটা আলেম-উলামাদের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আশা করা যায়, ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হবে- ইনশাআল্লাহ। অন্যান্য ধর্মের প্রতি বর্তমান সরকারের অবদান সম্পর্কে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্মের মতো অন্যান্য ধর্মের জন্যও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মন্দির সংস্কার আর উন্নয়ন করা হয়েছে। হিন্দু শ্মশান উন্নয়নে টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অসচ্ছল ও দুস্থ হিন্দু ব্যক্তিদের অনুদান দেওয়া হয়েছে। মন্দিরভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের প্রাথমিক, ধর্মীয় শিক্ষা এবং গীতা শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। খ্রিস্টান ধর্মীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেও সরকার সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংস্কার মেরামত উন্নয়নের জন্য সারা দেশে শত শত গির্জা সেমেট্রির উন্নয়নে অনুদান দিয়েছে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে। ট্রাস্টের স্থায়ী আমানত ছিল ৩ কোটি টাকা। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তা ৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মীয় প্যাগোডা বা বিহারের সংস্কার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম প্যাগোডাভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করেন। বর্তমানেও এ প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
কাজী ওয়াছি উদ্দিন
সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত মডেল মসজিদ ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং ধর্ম পালনে বড় সহায়ক হবে। মানুষ এসব মসজিদে ইসলাম জানা-বোঝা ও আমল করার সুযোগ পাবেন। মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের জন্য মডেল মসজিদ এক অনন্য সৃষ্টি; দেশে একজন অনন্যা (শেখ হাসিনা) আছেন বলে এমন সব সৃষ্টি আমরা দেখতে পাচ্ছি। মডেল মসজিদগুলো পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও ধর্মচর্চার বড় সুযোগ তৈরি করেছে; এতে ধর্মীয় ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন ঘটবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন মডেল মসজিদ সম্পর্কে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধর্মের প্রতি যে অনুরাগ, বিচক্ষণতা ও মহান আল্লাহর প্রতি তার যে দৃঢ় বিশ্বাস ও ইমান রয়েছে; মডেল মসজিদ নির্মাণ তার বড় উদাহরণ। আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণকাজে হাত দিয়ে তিনি নিজে সম্মানিত হয়েছেন। দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহতায়ালা প্রধানমন্ত্রীকে ইজ্জত ও সম্মান দান করবেন। নিজস্ব অর্থায়নে সরকার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। অর্থাৎ, জনগণের টাকা দিয়ে এসব মডেল মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে।
কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে সৌদি আরব থেকে ১৩৪ কোটি টাকা দেওয়ার একটি প্রস্তাব এসেছিল। সরকার আগ্রহী হলেও পরে সে অনুদান কোনো এক কারণে পাওয়া যায়নি। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কষ্ট পেলেন। কিন্তু মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ থেকে তিনি সরে আসেননি। বরং তিনি নির্দেশনা দিলেন চারটি বিভাগীয় শহর, প্রত্যেক জেলা এবং উপজেলা একটি করে মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৫৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এভাবে চিন্তা করলে দাঁড়ায়, মসজিদ নির্মাণে সরকার ১৭ কোটি জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। এতে প্রত্যেক নাগরিকের আর্থিক অবদানও থাকছে। দেশবাসী মসজিদ নির্মাণকাজে সহায়তা করলেন; প্রত্যেকে জান্নাত পাওয়ার কাজের ভাগীদার হয়ে গেলেন। প্রধানমন্ত্রী শুধু দুনিয়াবি উন্নতির চিন্তা করেন না, তিনি জনগণের পরকালের মুক্তির কথাও চিন্তা করেন।’ তিনি আরও বলেন, মডেল মসজিদগুলোর নকশাও দৃষ্টিনন্দন করে করা হয়েছে। মসজিদগুলোয় নারীদেরও নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের দেশে অধিকাংশ মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয় না। দেশের মডেল মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের সুন্দর আয়োজনের মাধ্যমে মসজিদেও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেন শেখ হাসিনা। মসজিদের গম্বুজ ও মিনারগুলো দৃষ্টিনন্দন রূপে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রত্যেক মসজিদে তিনটি গম্বুজ ও সুউচ্চ মিনার রয়েছে। মিনার থেকে দূর-দূরান্তের সবকিছু দেখা যায়। এ ছাড়া মডেল মসজিদগুলো চমৎকার আইডিয়া না থাকলে এটা কেউ করতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জন্য এটা চিন্তা করেন বলে করতে পেরেছেন। মসজিদগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনায় কার্যক্রম চলছে। প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী ৩০ জুনে। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কারণে কিছু মসজিদ নির্মাণকাজের পুনঃদরপত্র করে কাজ করতে হচ্ছে। এসব বাধার কারণে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। এজন্য আর্থিক খরচ না বাড়লেও নির্ধারিত সময়ের পর আবারও সময় বাড়ানো লাগতে পারে।
মোহাম্মদ শামীম আখতার
প্রধান প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তর
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার বলেছেন, সরকার দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ২০০টি মডেল মসজিদ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। আর আগামী ৩০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর আরও ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এরপর সেপ্টেম্বরে আরও ৫০টি মসজিদ উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। মডেল মসজিদগুলো বহুমুখী সেবার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, এটা শুধু মসজিদ নয়, এখানে নানা ধরনের সেবা কার্যক্রম থাকবে। সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইমামদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, হজের নিবন্ধনধারীদের প্রশিক্ষণ, শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক ইসলামি শিক্ষা, কোরআন মুখস্থ করানোর সুযোগ। এ ছাড়া লাইব্রেরি ও মেহমানখানাও রয়েছে। মসজিদের বেসমেন্টে গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। নামাজ আদায়ের পাশাপাশি অন্যান্য সেবা যুক্ত হওয়ায় এটাকে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ও সার্বিক নির্দেশনায় এসব কাজ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ প্রকল্পের বিশেষ মনিটরিং করা হচ্ছে। এটা সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প।
তিনি আরও বলেন, মডেল শব্দের অর্থ আদর্শ। মডেল মসজিদগুলো দেশের মসজিদের আদর্শ হিসেবেই গড়ে তোলা হচ্ছে। সাধারণ মসজিদ ও মডেল মসজিদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মডেল মসজিদে পুরুষরা যেমন নামাজ পড়তে পারবেন, নারীরাও নামাজ পড়তে পারবেন। নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক সিঁড়ি ও অজুখানার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, মডেল মসজিদ নির্মাণের চিন্তাটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প। আর বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের। এর কারণ হলো; দেশব্যাপী গুণগত মান বজায় রেখে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সংস্থা হচ্ছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
তিনি বলেন, নির্মাণকাজ চলমান থাকা মসজিদগুলোর মধ্যে ১৫১টি মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে। বাকিগুলোর কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জায়গা নির্ধারণে দেরি হওয়ায় ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি মডেল মসজিদ নির্মাণকাজের পুনঃদরপত্র করতে হয়েছে। কয়েকটির জায়গাও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এজন্য নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে কোনো ব্যয় বাড়ার প্রয়োজন হবে না।
তিনি আরও বলেন, মডেল মসজিদ কাজটি দৃষ্টিনন্দন। অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের নকশা রয়েছে মডেল মসজিদে। দেশব্যাপী গণপূর্তের প্রকৌশল কাজ বাস্তবায়নের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকায় এটা করা সম্ভব হচ্ছে।
প্রকৌশলী শামীম আখতার বলেন, স্থাপত্যনকশার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মসজিদের নকশা ধারণ করা হয়েছে। মসজিদের স্থাপত্যশৈলী তুরস্ক বা মুঘল আমলেও এ ধরনের ছিল। মসজিদে গম্বুজ আছে, মিনার আছে। বৈশ্বিক মসজিদের নকশার আদলে করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই প্রকল্প বাস্তবায়নে জমির ব্যবস্থা করতে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। বেশিরভাগ মসজিদের জায়গা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজের বিশিষ্টজনরা দান করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণও করতে হয়েছে। প্রকল্প শুরুর পর একটা সময় টাকার সংকট দেখা দিয়েছিল। এখন আর টাকার কোনো সংকট নেই।
মসজিদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ইবাদত-বন্দেগির স্থান। মন খুলে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কথা বলার জায়গা। তাই মসজিদকে বলা হয় ‘বায়তুল্লাহ’ বা আল্লাহতায়ালার ঘর। পৃথিবীতে মসজিদ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস মানব ইতিহাসের সমান পুরনো। পৃথিবীর প্রথম মসজিদ কাবা শরিফ। আল্লাহপাকের নির্দেশে এ মসজিদ নির্মাণ করেন প্রথম মানব হজরত আদম আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠার উল্লেখ রয়েছে। এর অন্য নাম মসজিদুল হারাম।
শেষ নবীর জন্মের আগে প্রতিষ্ঠিত আরেকটি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ বায়তুল মোকাদ্দাস। মেরাজে যাওয়ার পথে এ মসজিদে নবী-রাসুলদের সঙ্গে নিয়ে নামাজ আদায় করেন নবী কারিম (সা.)। মদিনায় নবীর প্রতিষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ হচ্ছে মসজিদে নববি। এ মসজিদ থেকে ধর্ম প্রচারসহ শাসনকাজ পরিচালনা করতেন তিনি।
নবী কারিম (সা.)-এর নির্দেশে তার জীবদ্দশায় ও পরবর্তী সময়কালে ইসলামের বাণী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেন সাহাবারা। আরও পরে তাদের নির্দেশ পালন করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েন অলি-আউলিয়ারা। যেখানে তারা ধর্ম প্রচারে গেছেন, সেখানেই স্থাপন করেছেন মসজিদ। সে সময় ইবাদতের পাশাপাশি শাসনকাজের মূলকেন্দ্রও ছিল এসব মসজিদ।
বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার প্রতিষ্ঠিত সেই চারাগাছ আজ মহীরূহে পরিণত হয়ে প্রচার করছে ইসলামের আদর্শ।
জাতির পিতার সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো দেশ গড়ার হাল ধরেন তারই সুযোগ্যতম কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি তার দূরদর্শী নেতৃত্ব, কুশলী পরিকল্পনা এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশ আজ পেয়েছে বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেলের স্বীকৃতি।
দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ভিত শক্তিশালী করে এরই মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পর জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যার লক্ষ্য উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশ। এজন্য এরই মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করে এগিয়ে চলেছেন তিনি। পাশাপাশি একজন আদর্শ মুসলমান হিসেবে ধর্মীয় চেতনা অব্যাহত রাখতে ইসলাম ধর্মের বিকাশে অব্যাহত ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। কওমি মাদ্রাসাগুলোর স্বীকৃতি, জাতীয় মসজিদ হিসেবে বায়তুল মোকাররমের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি, আধুনিক হজ ব্যবস্থাপনা, দেশ জুড়ে মসজিদ-মাদ্রাসা-এতিমখানায় সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তার সরকারের এমনই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ। ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৫ সালে এ প্রতিশ্রুতি পালনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো মুসলিম শাসক বা সাম্রাজ্যের একসঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণের ঘটনা নজিরবিহীন।
উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, বিশ্বে এখন ৪৬ লাখের বেশি মসজিদ রয়েছে। আর বাংলাদেশে মসজিদ রয়েছে ৩ লাখ ৩১ হাজারের বেশি। তবে দেশে আগে কখনো একই মসজিদে একই সঙ্গে ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়নি। সে হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে নির্মীয়মাণ মডেল মসজিদগুলো একেবারেই অভিনব।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশব্যাপী ৬৪টি জেলা সদর ও ৫টি সিটি করপোরেশনে ৬৯টি চারতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ৪৭৫টি উপজেলা সদরে সমসংখ্যক তিনতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নিচতলা ফাঁকা রেখে ১৬টি চারতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। মোট মসজিদের সংখ্যা ৫৬০টি।
অনেক এলাকায় স্থানীয় মানুষ স্বেচ্ছায় মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গা দান করেছেন। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণকারী সংস্থারূপে কাজ করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তর। দেশ জুড়ে ৫৬৪টি মসজিদে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ জন পুরুষ এবং ৩১ হাজার ৭০০ জন নারী একই সময়ে নামাজ আদায় করতে পারবেন। অত্যাধুনিক ইসলামি স্থাপত্যশৈলী, নান্দনিক নকশা এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের চৌকস বাস্তবায়নে নির্মিত মসজিদগুলোর অবস্থান ভূমি থেকে খানিকটা উঁচুতে। ফলে দূর থেকেই এর সৌন্দর্য সবাইকে আকৃষ্ট করে। বাংলাদেশের জেলা-উপজেলাগুলোতে এ মসজিদগুলোই বর্তমানে সবচেয়ে সুদর্শন স্থাপনা। সমতলে ব্যস্ত শহরের বুকে, পাহাড়ঘেরা এলাকায় বা সাগর দ্বীপে একই নকশা মসজিদগুলো ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রকাশ করে যাচ্ছে এদের নির্মাণকলার সৌন্দর্য।
ধর্ম প্রচারের শুরুতে মসজিদ থেকেই পৃথিবী শাসন করেছেন নবী কারিম (সা.) ও তার সাহাবিরা। ফলে মসজিদ শুধুই নামাজের জায়গা নয়। শিক্ষাগ্রহণ, শাসনকাজ পরিচালনাসহ সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আগে মসজিদেই নেওয়া হতো। উমাইয়া শাসনামলে এসে নিরাপত্তাসহ নানা কারণে মসজিদ থেকে প্রাসাদে চলে যায় শাসনব্যবস্থা। তবে এখনো মূলধারার ইসলামচর্চার মাধ্যমে মসজিদকেন্দ্রিক শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টির কাজগুলো অনায়াসে করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে মডেল মসজিদগুলোর সঙ্গে অডিটরিয়ামসহ অন্যান্য সুবিধা যুক্ত করেছেন। এজন্য এ মসজিদগুলোকে বলা হয় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স। মডেল মসজিদে মূলত নিচতলাটি ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে রয়েছে ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সেমিনার বা ওয়ার্কশপ আয়োজনের জন্য কনফারেন্স হল, অটিজম সেন্টার, শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য পৃথক অজুখানা ও টয়লেটের ব্যবস্থা, তাদের নামাজের স্থান, হুইলচেয়ারে চলাচলের জন্য প্রশস্ত র্যাম্পের ব্যবস্থা। এসব সুবিধা দেশের বড় মসজিদগুলোতেও বিরল।
ইসলামে মসজিদের নির্মাণ এবং মসজিদ সংরক্ষণের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এজন্য আছে পরকালে পুরস্কার।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মকর্ম পালন করেছেন, ধর্মের অমীয় বাণীসমূহ তার প্রাত্যহিক জীবনমানে রেখাপাত করেছে এবং ধর্মীয় বিধিবিধান ও আচার-অনুষ্ঠানের বিষয়াবলি তার সম্ভ্রান্ত পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে তাকে প্রভাবিত করেছে। বঙ্গবন্ধু তার ব্যক্তিজীবনকে কখনই ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরের বিষয় বলে ভাবেননি, বরং যতটুকু পেরেছেন প্রাত্যহিক কর্মকান্ডে ধর্মীয় নীতিবিধানের ফরমাবরদারি করেছেন; যা তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের নানা ঘটনাপ্রবাহে প্রকাশিত হয়েছে।
পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের বেদনাদায়ক ও নারকীয় হত্যাকা-ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বিয়োগান্ত ঘটনার পর থেকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তার নানা বিষয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষোদ্গার, ভিত্তিহীন অপপ্রচার ও জঘন্য কুৎসা রটানো হয়েছে। এটি অপ্রত্যাশিত হলেও আমাদের সমাজ-বাস্তবতার দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ভয়াল রূপ। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যেসব বিষয়ে অপপ্রচার হয়েছে তার অন্যতম হলো ধর্মীয় অঙ্গন। স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নিজেদের ষোলো আনা ফায়দা হাসিলের মানসিকতায় ধর্মীয় নানা বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের ধর্মীয় নেতৃত্বের কিছু জায়গা থেকেই বহুকাল ধরে লাগাতার এসব অপপ্রচার চলেছে। অপপ্রচারের পরিমাণ কিছুটা হ্রাস পেলেও তা যে একবারেই বন্ধ হয়ে গেছে, সেটি ভাবা সত্যের অপলাপ বৈকি। সময়, সুযোগ, পরিবেশ আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তা আবারও পূর্বাপেক্ষা অধিক পরিমাণে যে চালু হবে না, তা বলা মুশকিল।
অথচ বঙ্গবন্ধুর জীবনের সঙ্গে ধর্মের বিশেষত শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামের যে কোনো সংঘাত নেই, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। অথচ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনার সময় মাঝেমধ্যে শুনতাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ ভারত হয়ে যাবে, মসজিদে আজানের আওয়াজ ধ্বনিত হবে না; উলুধ্বনি শোনা যাবে। কিন্তু এখন দেখা গেল, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ কয়েকবার ক্ষমতায় এলেও দেশ ভারত হয়ে যায়নি আর মসজিদেও উলুধ্বনি শোনা যায়নি। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বিরোধিতার খাতিরে কিছু মানুষ বলতেন, বেটা আওয়ামী লীগও করে আবার নামাজও পড়ে। মানে, আওয়ামী লীগ করলে নামাজ পড়া যাবে না। কিছু মানুষ তো আরও অনেকটু অগ্রগামী হয়ে বলতেন, বেটা মুসলমান আবার করে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ তাদের দৃষ্টিতে মুসলমান আর আওয়ামী লীগ পরস্পর বিপরীতধর্মী দুটি বিষয়; যেন কোনো মুসলমান আওয়ামী লীগ করলে সেটি তাদের কাছে রীতিমতো বিস্ময়ের ও নিন্দনীয় বিষয়।
কিন্তু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অকুতোভয় নেতৃত্বে ৩০ লাখ মানুষের আত্মাহুতি আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সমাজচিত্র ও বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। আর সেটি হলো গোটা দেশের সর্বত্রই দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকরা শুধু মুসলমান বলে দাবি করে বসে থাকেন না; তারা মসজিদে নামাজের যান, সামনের কাতারে বসেন, মসজিদ কমিটির সভাপতিসহ নানা দায়িত্বও পালন করেন। মসজিদের ইমামের ভরণপোষণের চিন্তায় তারাও সময় ব্যয় করেন, মসজিদ পরিচালনায় নানাভাবে সহযোগিতার হাতও প্রসারিত করেন। তারা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসায় যেন ভালোভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চলে, সেজন্য সাধ্যমতো সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষজনের ইসলাম-সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড এমন হওয়া ঐতিহাসিক কারণেই স্বাভাবিক। কেননা, ঐতিহ্যবাহী এই দলটির মহান নেতা, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শান্তির ধর্ম ইসলাম ও এর মূল্যবোধ প্রচার-প্রসারে যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন, তা ইতিহাসে বিরল।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে এ দেশে মদ, জুয়া ও হাউজির লাইসেন্স বাতিল করেছিলেন, ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করেছিলেন, তাবলিগ জামাতের নিরবচ্ছিন্ন ইসলাম প্রচারের স্বার্থে কাকরাইল মসজিদের জমি বরাদ্দ, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের জায়গা নির্ধারণ, মাদ্রাসা বোর্ডের সংস্কার ও আধুনিকায়ন, বেতার-টিভিতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা, জাতীয় পর্যায়ে সিরাত মজলিস ও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন, শবেকদরের মহিমান্বিত রজনীতে সংবিধান পাস, হজযাত্রীদের ভ্রমণ কর রহিতকরণ, রাশিয়ায় তাবলিগ জামাতের প্রতিনিধি প্রেরণ এবং একেকজন সদস্যকে স্বদেশের পক্ষে কূটনীতিকের ভূমিকা পালনের আহ্বান, আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখদের সঙ্গে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন, বিশুদ্ধ আকিদার দরবার ও খানকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, অহংকারমুক্ত বিশাল হৃদয় নিয়ে সত্যনিষ্ঠ অবস্থান গ্রহণ করা, মেহনতি মানুষের জন্য কাজ করা ও মানবতার খেদমতে আত্মনিয়োগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান রচনা ও প্রণয়নে ঐতিহাসিক মদিনার সনদের বিভিন্ন ধারার সঙ্গে সাযুজ্য রক্ষা ও তার প্রভাব প্রতিবিম্বিত করা, ‘কুনু মাআস সাদেকিন’ পবিত্র কোরআনের এ নির্দেশনা অনুযায়ী সত্যনিষ্ঠ, বিবেকবান ও দেশপ্রেমিক মানুষদের সাহচর্য ও বন্ধুত্ব গ্রহণ, ছাত্রজীবন থেকেই ধর্মপ্রাণ ও নামাজি শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ নজর দান ও নানাবিধ কাজে তাদের অগ্রাধিকার প্রদান, ধর্মীয় সভা-সমিতি, ওয়াজ মাহফিলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে দায়িত্ব নিয়ে সেই মাহফিল অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে দেওয়া, অধ্যয়নকালীন অবস্থায়ও প্রিয় স্ত্রীকে লেখা চিঠি-পত্রাবলিতে মহান আল্লাহর ওপর অকৃত্রিম বিশ্বাসের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা, আল্লাহ যা করেন তা মঙ্গলের জন্যই করেন মর্মে সবকিছু তাকদিরের অংশ হিসেবে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া, জীবনের প্রথমবারের মতো জেলে যাওয়ার কারণটিকে ধর্মীয় চেতনার অংশ হিসেবে স্মরণীয় করে রাখা, জীবনের সমগ্র ভাষণে উদারতা, কল্যাণকামিতা আর সীমাহীন আন্তরিকতার স্বাক্ষর রেখে আদম সন্তানদের ‘ভায়েরা আমার’ বলে সম্বোধন করা, যাবতীয় জুলুম ও অনিয়ম-অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার অসীম সাহসিকতা প্রদর্শন, বৈষম্য ও নিপীড়নের দিক থেকে বাঙালি সমাজকে মক্কার সমাজের প্রতিচ্ছবি করা, তমদ্দুন মজলিসসহ অন্যদের সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে ইসলামি চেতনাবোধের প্রতি সহমত থাকা, সত্য ও ন্যায়ের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হয়েও অন্যায় আদেশের সামনে মাথানত না করা, মুচলেকা ও জরিমানা না দেওয়া ও আত্মসম্মান আর আত্মমর্যাদাবোধের ওপর অবিচল থাকা, সত্তরের নির্বাচনের প্রাক্কালে দেওয়া বিশেষ ভাষণে ও অন্যান্য সময়ে ‘কোরআনবিরোধী কোনো আইন করা হবে না’ মর্মে ঘোষণা দেওয়া, কথাবার্তায় ও বক্তৃতা-ভাষণে অনুপম ভঙ্গিতে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলে ইসমে আজমের অসীম ক্ষমতার প্রতি আস্থা জ্ঞাপন, কওমি ঘরানার আলেমদের নিয়ে ভারতের ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ প্রকৃতির ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা এবং মুসলিম মিল্লাতের বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণের তাগিদে ওআইসির সম্মেলনে অংশগ্রহণসহ নানাবিধ কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তার ইসলামবিষয়ক কীর্তি ও ধর্মীয় চেতনার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তবে বাংলাদেশে ইসলামের তরে চিরস্মরণীয় ও নজিরবিহীন যে কাজটি তিনি করেছেন সেটি হলো ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা। সমগ্র বিশ্বে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও গবেষণা আর প্রকাশনার ক্ষেত্রে এটি সর্ববৃহৎ এক অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত।
এ বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই যে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ও এর জনগণের ওপর কোনো ক্ষেত্রেই আদল ও ইনসাফ তথা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেনি। বরং তারা এতদঞ্চলের মানুষের ওপর রীতিমতো অবিচার তথা জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা সর্বক্ষেত্রে খারাপ কাজের নজির স্থাপন করেছিল।
ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসুল হজরত মোহাম্মদ (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ যখনই কোনো খারাপ বা মন্দ কাজ প্রত্যক্ষ করবে, তাৎক্ষণিক সেটি প্রতিহত করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করো। আর শক্তি প্রয়োগে যদি তুমি সামর্থ্য না হও তবে তোমার ভাষণে-বক্তব্যে বা কথায় সেটির প্রতিবাদ করো। তাও যদি না পারো, তবে সেই কুকর্ম বন্ধকরণে তুমি তোমার অন্তঃকরণের দ্বারা কোনো একটি পরিকল্পনা বের করো, যাতে করে সেটি বন্ধ হতে পারে। আর এটি হলো ইমানের একেবারে সর্বনিম্ন স্তর।’
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জালেম ও স্বেচ্ছাচারী শাসকগোষ্ঠীর সকল প্রকার অপকর্মের দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে ইমানের প্রথম স্তরের পরিচয়ই পেশ করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভাষণেও তিনি তার মূল শক্তি ও সম্পদ হিসেবে যা বিবৃত করেছিলেন, তার অন্যতম ছিল সেই ইমান ও ইমানি তেজোদীপ্ততা। অন্যদিকে বাঙালিরা ছিল মজলুম তথা নির্যাতিত। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, উদার ও মহানুভব একজন বিশ্বনেতা। সব ধর্মের সমান অধিকার তিনি নিশ্চিত করেছিলেন। প্রত্যেকেই যেন তার নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী স্বাধীনভাবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারেন, তিনি প্রকৃত অর্থে সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছি। প্রকৃতপক্ষে সব ধর্মমতের মানুষের সহাবস্থান ইসলামেরই মহান শিক্ষা; বঙ্গবন্ধু মদিনা সনদের আলোকে সেই শিক্ষারই বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে ঘোষণা করে বলেছিলেন ‘আমি এ দেশে ইসলামের অবমাননা চাই না।’ স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি বিধান করেন। কেননা, মুক্তিযুদ্ধকালীন মুসলিমবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল নেতিবাচক। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার গতিশীল নেতৃত্ব আর প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দিয়ে অল্পকালের ব্যবধানে সে সম্পর্ক এমন এক জায়গায় উপনীত করেন যে, তাদের অনেকেই তখন বাস্তবতা উপলব্ধি করেন এবং পুরো বিষয়ে তারা যে অন্ধকারে ছিলেন ও তাদের ভাবনা যে সঠিক ছিল না, তা তারা স্বীকার করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামি সম্মেলন সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন, তাতে বিশ্ব মুসলিমের মধ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয় এবং মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু কর্র্তৃক ইসলামের কল্যাণে যেসব কার্যসূচি সম্পন্ন করা হয়েছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সত্যিকার অর্থেই অতুলনীয়। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে পিতার আদর্শকে আক্ষরিক অর্থে প্রতিপালন করে চলেছেন।
দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে ১০১০টি দারুল আরকাম মাদ্রাসার কার্যক্রম চালু, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সনদের সরকারি স্বীকৃতি, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্যবর্ধন ও সম্প্রসারণ, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে আলেম-ওলামার কর্মসংস্থান, শিশু গণশিক্ষা ও কোরআন শিক্ষা কার্যক্রমে মহিলাদের কর্মসংস্থান, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা, আন্তর্জাতিক হিফজ, কিরাত ও তাফসির প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন, হালাল সনদ প্রদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হালাল ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি স্থাপন, অভিজ্ঞ মুফতিদের সমন্বয়ে ফতোয়া দানের বৈধতা প্রদান, করোনাকালে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান দেওয়া, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন দেশে পবিত্র কোরআন অবমাননায় জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাশের মাধ্যমে দেশের ইসলামপ্রিয় জনমানুষের হৃদয়ে তিনি বিশেষ স্থান দখল করে আছেন।
লেখক : চেয়ারম্যান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মাধ্যমে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। মসজিদ নির্মাণ ও যাবতীয় ব্যয় বহন করলেও মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব পায়নি ইফা। স্থানীয় প্রশাসনই পরিচালনা করবে মসজিদগুলো। মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র পরিচালনা নীতিমালা ২০২১ অনুসারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাই মসজিদের জনবল নিয়োগ দেবেন।
জানা গেছে, সারা দেশে চারটি মসজিদ সরকারি বেতন-ভাতা ও সুবিধা ভোগ করে। এগুলো হচ্ছে, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ, আন্দরকিল্লা মসজিদ ও রাজশাহীর হেতেম খাঁ মসজিদ। এছাড়া বঙ্গভবন জামে মসজিদ, গণভবন জামে মসজিদ ও সচিবালয়ের মসজিদটিও কিছু সরকারি সুবিধা পায়। এ ছাড়া দেশের অন্য মসজিদগুলো স্থানীয়ভাবে পরিচালিত হয়। এমতাবস্থায় মসজিদগুলো সমন্বিতভাবে পরিচালনা এবং মডেল মসজিদের সুফল নিশ্চিত করতে ইমাম হিসেবে যোগ্য আলেম নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি একটি গ্র্যান্ড মসজিদ থাকা দরকার। যেখান থেকে মডেল মসজিদগুলো পরিচালনার যাবতীয় বিষয় দেখভাল করা হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করতে একযোগে খুতবা কিংবা খুতবাপূর্ব বয়ানসহ সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নানাবিধ কর্মসূচি পালন করা সহজ হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্র্যান্ড মসজিদ রয়েছে, ওই মসজিদের অধীনে দেশের অন্য মসজিদগুলো পরিচালিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো গ্র্যান্ড মসজিদ নেই, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। কিন্তু মডেল মসজিদের কাক্সিক্ষত সুফল পেতে একটি গ্র্যান্ড মসজিদের অধীনে মডেল মসজিদগুলো পরিচালনা হওয়া দরকার বলে আলেম-উলামারা মনে করছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতি অনেকটাই কূটনৈতিক পরিম-লে আবর্তিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন অংশীদার বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার নানামুখী কর্মকান্ড ও তার প্রভাব নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : ভোটের আগে বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা বাংলাদেশে নতুন নয়। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনপূর্ব রাজনীতিতে বিদেশিদের বিভিন্ন তৎপরতা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
ইমতিয়াজ আহমেদ : এটা তো নতুন না। আগেও হয়েছে, এবারও হচ্ছে। কিন্তু একটা জিনিস হলো যে মিডিয়ার সংখ্যা যেহেতু অনেক বেড়েছে, তারপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসার ঘটেছে বলে এখন আলোচনা অনেক বেশি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি এটা নতুন না, এটা কমবেশি আগেও হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এই ধরনের তৎপরতা বাংলাদেশের গণতন্ত্রে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে। আমাদের বড় বড় যেসব পরিবর্তন হয়েছে, এখন পর্যন্ত যতটুকুই গণতন্ত্র আছে সেসব জনগণের মাধ্যমেই এসেছে, জনগণের স্যাক্রিফাইসের মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে সেটা ৭১ থেকে শুরু করে বড় ধরনের ত্যাগের মাধ্যমে কিন্তু এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রের চর্চা করে আসছে। এখানকার জনগণ যেভাবে গণতন্ত্রকে বুঝেছে, তারা সেভাবেই সেটা অর্জন করেছে। এখানে বাইরের শক্তি বিশেষ করে কূটনীতিকদের তৎপরতায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক হয়েছে তার নজির পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে বিদেশিরা এখন এসব কেন করছে। অনেক দেশই তো আছে যেখানে সেই ধরনের গণতন্ত্র নেই। কিন্তু তাদের সঙ্গে তো যারা এদেশে তৎপরতা দেখাচ্ছে তারা ভালো সম্পর্ক রাখছে। বোঝাই যাচ্ছে যে, এখানে অন্য কারণ থাকতে পারে।
দেশ রূপান্তর : তারা তো বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসনের মতো বিষয়কে যুক্ত করেছে...
ইমতিয়াজ আহমেদ : তারা সেগুলোর প্রচার করে। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, অনেক দেশেই, যাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আছে, সেখানে তো সেই ধরনের গণতন্ত্রের চর্চা বলতে গেলে একেবারেই নেই। কিন্তু তারপরও তারা সম্পর্ক রাখে এবং সেখানে গণতন্ত্রের জন্য তাদের কোনো ভূমিকা রাখতেও দেখি না। যেমন পাকিস্তানের কথা যদি ধরি বা মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক এমন দেশ রয়েছে যাদের সঙ্গে তাদের বিরাট সম্পর্ক রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে যে এর কারণ কী? হতে পারে যে তাদের উদ্দেশ্য হয়তো সৎ। এটা ধরে নিলেও আপনি যেসব বললেন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসন ইত্যাদির জন্য তাদের চেয়ে আমার মনে হয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই দায়ী। এখানে যেহেতু বড় ধরনের বিভাজন আছে এবং বিশেষ করে যারা অপজিশনে থাকে তারা এই জিনিসগুলোকে সামনে নিয়ে আসে, তা সে যে দলেরই হোক না কেন। যখন যারা অপজিশনে থাকে তখন তারা এই বিদেশি কূটনীতিক বা বিদেশিদের একটা হস্তক্ষেপ চান বা তাদের কাছে এসব নিয়ে নালিশ করেন। বিদেশি হস্তক্ষেপ বা তাদের কথা বলার স্পেসটা দেশের রাজনীতিবিদরাই করে দেয়।
দেশ রূপান্তর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভিসানীতির যে ঘোষণা দিয়েছিল সেটা প্রয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া শুরুর কথাও জানিয়েছে তারা। তারা তো সেখানে পুলিশ, প্রশাসন, বিরোধী দলের কথাও বলেছে। বিচার বিভাগ, এমনকি সাংবাদিকদেরও এর আওতায় এনেছে। এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার চাপ কি কোনো ধরনের প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন?
ইমতিয়াজ আহমেদ : এটা তো একটা অসম্মানের ব্যাপার। মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সবাই একেবারে আমেরিকায় যাওয়ার জন্য রীতিমতো রেডি। সাংবাদিক থেকে শুরু করে পুলিশ, একেবারে সবাই। এই ধারণাটা কেন হয়েছে আমি জানি না।
দেশ রূপান্তর : এই ধারণার কি বাস্তবতা নেই? রাজনীতিবিদ ছাড়া যেসব পেশাজীবীকে ভিসানীতির আওতায় আনার কথা বলা হচ্ছে তাদের বিদেশমুখিতা বা তাদের পরিবারের বিদেশে সেটেল হওয়ার একটা প্রবণতা তো আছেই।
ইমতিয়াজ আহমেদ : কথা হচ্ছে এর পার্সেন্টেজটা কত? আমরা তো ১৭০ মিলিয়ন মানুষের একটা দেশ। আমি যদি সংখ্যা হিসেবে ধরি, সেই দেশের কয়জন আছে যারা বিদেশে চলে যেতে চাচ্ছে। কাজেই এসব কথাবার্তা খুবই হিউমিলিয়েটিং। আমি জানি না তাদের ধারণা কেন হয়েছে, যে বাংলাদেশের সবাই আমেরিকা যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে। এই চিন্তাভাবনা বা মানসিকতাটার কথা আমি জানি না। এটা কি তারাই তৈরি করে নিয়েছে নাকি আমাদের লোকেরা তাদের এমন বুঝিয়েছে? সেজন্যই বলছি যে তাদের হয়তো সৎ ইচ্ছা থাকতে পারে যে আমাদের একটা গণতান্ত্রিক কাঠামো হোক। কিন্তু এ ধরনের কথাবার্তায় আমাদের যে বিভাজনের রাজনীতি সেটা কমছে না বাড়ছে? সহজ উত্তর হবে, এটা তো বাড়ছে। এটা তারা বাড়াচ্ছে কেন। এটা কি তারা জেনেশুনেই বাড়াচ্ছে, নাকি না জেনেশুনে বাড়াচ্ছে? সেই জায়গায় আমার মনে হয় একটু চিন্তা করা দরকার। কারণ যেই গণতন্ত্র তারা চাচ্ছে বা যেই গণতন্ত্র আমরা চাচ্ছি সেটা যদি হয় পশ্চিমা কাঠামোর গণতন্ত্র, তাহলে তো প্রথমে দরকার বড় বড় দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম আস্থা। এটা হচ্ছে ন্যূন্যতম শর্ত। এখন এই ন্যূন্যতম শর্তের ব্যাপারে তো তারা কোনো কন্ট্রিবিউট করছে না। আমার শেষ কথা হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র বাংলাদেশের জনগণকেই ঠিক করতে হবে। বাইরের শক্তি এসে এটা ঠিক করে দেবে, এমন নজির পৃথিবীতে নেই। আমাদের মিডিয়া যে একজনকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে, দেখা হলেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করছে, এখন তাকে একটা কিছু তো বলতে হবে। তাকে যদি বলা হয়, ভিসানীতিতে কি মিডিয়াও পড়বে, সে স্বাভাবিকভাবেই বলবে যে হ্যাঁ, মিডিয়াও পড়বে। বিভিন্নভাবে এখন যে নাম ছড়ানো হচ্ছে, যেখানে সে বলেছে যে, আমাদের আইনে কোনোভাবেই নাম দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু একাধিক পত্রিকা নাম দিয়ে বলে যাচ্ছে অমুকের বিরুদ্ধে স্যাংশন হয়েছে, তমুকের ভিসা বাতিল হয়েছে। আমরা যে এগুলো করছি, এটা তো আত্মঘাতী ব্যাপার। পলিটিক্যালি এক পক্ষ আরেক পক্ষের নাম বলে যাচ্ছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, এটা করে তারা এদেশে বিভাজনটা আরও বাড়াল। আমার মনে হয় তাদের খোলাখুলিভাবে বলা উচিত যে তোমরা যেটা করছ তাতে করে তো বাংলাদেশে কোনোভাবেই গণতন্ত্র বাড়বে না, বরং দিন দিন অবস্থা আরও জটিল হবে। তবে শেষ বিচারে ওই জনগণের ওপরই ভরসা।
দেশ রূপান্তর : এমন আলাপও রয়েছে যে নির্বাচন কেন্দ্র করে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সেনা সদস্য প্রেরণে এবং পশ্চিমা বিশ্বে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে বাধা আসতে পারে। এর সম্ভাবনা কতটুকু, বাধা আসলে কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে?
ইমতিয়াজ আহমেদ : কোনোই সম্ভাবনা নেই। কারণ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কোনো এক সদস্যের কারণে এটা বন্ধ হয়ে যাবে না। আমরা ভুলে যাই যে, নিরাপত্তা পরিষদে চীন-রাশিয়াও আছে। বিশ্বে অনেক দেশ আছে যেখানে পশ্চিমা কাঠামোর গণতন্ত্র নেই। যারা এটা বলে প্রচার করছে, তারা এটা কেন করছে সেটা আমার জানা নেই। জাতিসংঘের পিস কিপারদের মধ্যে পাকিস্তানের মতো দেশও রয়েছে। বাংলাদেশ সেখানে এক নম্বরে গিয়েছে তাদের পেশাদারিত্বের কারণে। পিস কিপিংয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যারা প্রশ্ন করে তারা জেনেশুনে করে নাকি না জেনে করে? আর গার্মেন্টস সেক্টরে বাংলাদেশ আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যে মার্কেট তৈরি করেছে সেটা কোনো মানবিক কারণে হয়নি। এটা খেয়াল রাখতে হবে। এটা একেবারেই ধণতান্ত্রিক প্রিন্সিপাল মেনে হয়েছে। আমাদের থেকে পণ্য নিয়ে তারা বেশি প্রফিট পাচ্ছে বলেই আমরা সেখানে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি। আমাদের গার্মেন্টস ওনাররা যতটা না প্রফিট পান সেখানকার ওনাররা আরও অনেক অনেক বেশি প্রফিট পান এখান থেকে পণ্য নিয়ে। আমাদের ওনাররা যদি ৬ ডলার লাভ পান, সেখানকার ওনাররা ৩০ ডলার প্রফিট করেন। এটা একেবারে তাদেরই হিসাব করা। মিয়ানমারের কথা যদি ধরেন, যেখানে আমেরিকা বলছে যে তারা একটা জেনোসাইড করেছে, তারা বার্মা অ্যাক্ট নামে একটা অ্যাক্টও করেছে সেখানে তারা বলেছে কোনোভাবেই মিয়ানমার থেকে ইমপোর্ট বন্ধ করা যাবে না। এটা তাদের যারা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট বা আমদানিকারক তাদের চাপেই হয়তো করেছে। ফলে এসব বুঝতে হবে।
দেশ রূপান্তর : সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়া, হাইতি, সুদান ও নিকারাগুয়াকে মার্কিন ভিসানীতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। অনেকের মতে, তাদের ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস ভ্যালু’ বাংলাদেশের চেয়ে কম। তারাই এই ভিসানীতি আমলে নেয়নি, ফলে এ নিয়ে বাংলাদেশের শঙ্কিত হওয়ার কোনোও কারণ নেই। আপনার মত কী?
ইমতিয়াজ আহমেদ : একেবারেই, এটা একটা ভালো প্রশ্ন এবং প্রকৃত উদাহরণ। যেসব দেশে তারা ভিসা রেস্ট্রিকশন দিয়েছে কোনোটাই, কোনোটাই কাজে লাগেনি। এটা যে কেবল এখন তা না, কিউবাতে তারা কত বছর ধরে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। তাই বলে কিউবা কি বসে রয়েছে? ইরান, নর্থ কোরিয়া কি বসে আছে। কথা হচ্ছে যে, এই চিন্তাটা, এটা কেন হয় আমি জানি না। কোন কাঠামোতে এটা আসে সেটা আমি বুঝি না, কারণ আমেরিকাকে বোঝা খুবই মুশকিল। আসলে ওই ধরনের রেস্ট্রিকশন দিয়ে একটা দেশের মধ্যে পরিবর্তন আনার চিন্তাটাই একটা কলোনিয়াল চিন্তাভাবনা। যেখানে বাংলাদেশের জনগণ যথেষ্ট সচেতন, তারা প্রচুর স্যাক্রিফাইস করেছে। তো সেই জায়গায় ভরসা রাখতে হবে। যখন জনগণ চাইবে, বড় রকমের পরিবর্তন তখন কেউ থামাতে পারবে না।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বৃদ্ধির মধ্যে ঢাকা সফর করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ধারণা করা হচ্ছে তিনি পুতিনের বার্তা দিতে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যখন চাপ দিচ্ছে তখন রাশিয়ার বার্তা মার্কিন অবস্থানকে নমনীয় নাকি আরও কঠোর করবে?
ইমতিয়াজ আহমেদ : আসলে যে জিনিসটা খেয়াল রাখতে হবে পৃথিবী একটা বহুমাত্রিকতার দিকে যাচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশকে চীনের আধিপত্যের প্রভাবমুক্ত রাখতে ভূরাজনৈতিক স্বার্থে বাইডেন প্রশাসনের চাপ। এটাও তো বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। আপনার মন্তব্য কী?
ইমতিয়াজ আহমেদ : হ্যাঁ, আমি সেটাই বলছি। বাংলাদেশের যারা এটা বলেন তাদের মেন্টালিটি এখনো কলোনাইজড হয়ে আছে। তারা মনেই করে যে বাংলাদেশকে একটা না একটা বলয়ের মধ্যেই থাকতে হবে। আমরা যেহেতু সবসময় একটা পরাধীনতার মধ্যে থেকেছি, সেহেতু আমাদের মানসিকতাও পরাধীন হয়ে গেছে। আমার মনে হয় না যে একাত্তরের ওই স্বাধীনতা আমাদের মস্তিষ্কে এখনো ঠিকমতো ঢুকতে পেরেছে। কথা হলো এককেন্দ্রিক যে পৃথিবীটা হয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে সেই জায়গাতে পৃথিবীটা এখন নেই। একটা পরিবর্তন হচ্ছে এবং একটা বহুমাত্রিক বা যেটাকে আমরা মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড বলছি, পৃথিবীটা সেদিকে যাচ্ছে। এবং সেখানে কিন্তু একাধিক দেশের উত্থান বা পুনরুত্থান হচ্ছে। সেখানে চীনের যেমন উত্থান হচ্ছে, ভারতেরও হচ্ছে। টার্কিরও পুনরুত্থান ঘটছে। তারপর সাউথ আফ্রিকা আছে, এখানে রাশিয়ারও একটা পুনরুত্থান হচ্ছে। মাল্টিপোলারে একাধিক দেশ কিন্তু উঠে আসছে। এবং এটা থামানোর কোনো উপায় নেই। সেই জায়গাতে লাভরভের আসা, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক করা, ভারতের সঙ্গে বড় আকারে সম্পর্কিত থাকা... এ সবই হলো নিউ নরমাল। এটাকে ওইভাবে দেখা ঠিক হবে না যে ইনি আসছেন, তারমানে আমরা এই বলয়ে চলে যাচ্ছি বা আমরা আমেরিকাকে একটা জবাব দিচ্ছি, তা না। আমাদের সঙ্গে আমেরিকার বহুমাত্রিক সম্পর্ক আছে। একাধিক কাঠামোগত সম্পর্ক তৈরি করা আছে। আমার মনে হয় না, বর্তমান যে সরকার আছে দেশটিতে, তার অপজিশন এভাবে বিষয়গুলো দেখে। দেখা যাবে, যদি রিপাবলিকানরা আগামীতে ক্ষমতায় আসে তাহলে দেখা যাবে পুরো বিষয়টাই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এটাকে নিউ নরমাল হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই দেখা দরকার। এটাই স্বাভাবিক যে বাংলাদেশের ওপর একটা এটেনশন তৈরি হচ্ছে, এর কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ এই ১৫/২০ বছরে একটা কাঠামো তৈরি করতে পেরেছে, যার একটা ভবিষ্যৎ আছে। ফলে সবাই চাচ্ছে সেই কাঠামোর সঙ্গে পার্টনারশিপ করে যেন প্রফিট করতে পারে। আমরা তো একটা ক্যাপিটালিস্ট ওয়ার্ল্ডে বসবাস করছি, এখানে কোনো কাঠামোই আদর্শ না। কম্পিটিশন আছে, আবার কো-অপারেশনও আছে। সেই জায়গায় জাপান যেভাবে চাইবে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চীনও চাইবে, আমেরিকাও চাইবে এমনকি টার্কি, রাশিয়াও চাইবে। এটাই নিউ নরমাল। এবং আমি মনে করি বিভিন্ন ডেলিগেশন আসাটাও এ কারণে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁর বাংলাদেশ আসাটাও এর অংশ। আমেরিকার আশা হয়তো আমরা বোয়িং কিনব। কিন্তু আমরা বোয়িং কিনব না এয়ারবাস কিনব, সেই নেগোশিয়েশনটা তো রাখতে হবে। মাল্টিাপোলারাইজেশন, এটাই নতুন বাস্তবতা।
দেশ রূপান্তর : হঠাৎ করে ড. ইউনূস সামনে আসার কারণ কী? মার্কিন ভিসানীতির পেছনে ফ্রেন্ডস অব ইউনূসের ভূমিকা কতটুকু?
ইমতিয়াজ আহমেদ : এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো এভিডেন্স নেই। অ্যাকাডেমিশিয়ানদের এটা একটা সমস্যা। রাজনীতিবিদ হলে একটা কথা বলে দেওয়া যেত। কথাটা হচ্ছে ওনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে আশা করা যায় আদালত বিষয়গুলো দেখবে। আমার মনে হয় না এখানে সরলীকরণ করা ঠিক হবে। ড. ইউনূসের বা তাকে নিয়ে সমস্যাটা অনেক আগে থেকেই ছিল। একেকটা সময়ে আমরা একেকভাবে বিষয়গুলোর সমাধান করতে দেখেছি। তার যে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হিসেবে থাকার বিষয়টা একভাবে সমাধান হয়েছে। আবার ট্যাক্সের বিষয়টার সমাধান হলো আরেকভাবে। তাই না? তো কথা হচ্ছে গিয়ে এই প্রসেসটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমভাবে ছিল। তার কারণেই যে এখন আমেরিকা ভিসানীতি দিয়েছে এটা বেশি সরলীকরণ হয়ে যায়। এটার কোনো এভিডেন্সও নেই, ধরেন এটা নিয়ে যদি কোনো রিপোর্টও হতো, বা এ নিয়ে কেউ বলাবলি করেছে সেটা প্রকাশ পেল তেমনও তো এভিডেন্স এখন পর্যন্ত পাইনি। কারণ, তার প্রতি তাদের সাপোর্ট সবসময়ই ছিল, এটা নতুন না, যেটাকে ফ্রেন্ডস অফ ইউনূস বলা হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : ভারতের অবস্থান অনেকটা নীরব ছিল। অবশ্য জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ ও সেখানে প্রধানমন্ত্রীর তৎপরতার মধ্যে অনেকে এক ধরনের বার্তা খুঁজেছেন। সার্বিকভাবে এখানে ভারতের ভূমিকা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
ইমতিয়াজ আহমেদ : একটা হলো ভারতের সঙ্গে এই সরকারের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এটা এই বিজেপি সরকারের সঙ্গে না, সম্পর্কটা ভারতের সঙ্গে। ভারতের একটা বড় ধরনের কন্সাসনেস তৈরি হয়েছে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে। সেটা হলো ভারতের অন্যতম যে সমস্যা, বিশেষ করে দেশটির নর্থ-ইস্টের যে জঙ্গিবাদ বা মিলিটেন্সি বা ইনসার্জেন্সি বলি সে বিষয়ে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্সের ফলে তার একটা সমাধান হয়েছে। বলতে গেলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা মৌলিক পরিবর্তন এই সরকার করতে পেরেছে। এটা অন্য সরকার করতে পারেনি বরং অন্য সরকারের সময় বিশেষ করে বিএনপির সরকার যখন ছিল, তখন এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করেছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের অন্য রাজনৈতিক দল ভবিষ্যতে সেটা পারবে কি না, তা আমরা জানি না। করে দেখাব, আর করে দেখানোটা তো এক না। যার কারণে জি-২০ তে বাংলাদেশকে ভারতের আমন্ত্রণ জানানোটা খুবই স্বাভাবিক। যারা আগে বলেছিল যে, ভারত বোধ হয় এবার অন্য চিন্তা করছে, আমি মনে করি এক্ষেত্রে অন্য চিন্তা করার অবস্থাই নেই। এটা খুবই স্বাভাবিক আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রণ করা এবং ভারতের পক্ষ থেকে তাকে বড় ধরনের একটা প্ল্যাটফর্ম দেওয়া।
দেশ রূপান্তর : বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেলফি নিয়ে আমাদের এখানে তো বেশ আলোচনা হয়েছে। এই সেলফি ডিপ্লোমেসির কী প্রভাব?
ইমতিয়াজ আহমেদ : পত্রিকায় যেভাবে খবর দেয় সেটা দুঃখজনক। আমেরিকানরাও যারা আছেন তারাও মনে করেন যে, আমার ছবি পত্রিকায় ছাপিয়েছে সেটা তো সাংঘাতিক ব্যাপার। হা হা হা। ফলে, মিডিয়া, অ্যাকাডেমিশিয়ান, গবেষক, টক শোয়ের গেস্ট আমাদের সবারই পেশাদারিত্ব বাড়ানো দরকার যে কোনটা আমরা নিরুৎসাহিত করব আর কোনটা না। সেই জায়গায় আমরা যদি না যেতে পারি, তাহলে মনে হবে যে সাংঘাতিক কিছু একটা হয়ে যাচ্ছে। এই ভিসা রেস্ট্রিকশন, তারপর নানা রকম বিবৃতিকে আমরা যদি কম গুরুত্ব দিতে পারতাম।
দেশ রূপান্তর : গুরুত্বের ব্যাপারটা তো দিপক্ষীয়। বিরোধীরা যেমন ভিসানীতিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে, সরকার দলীয়রাও বাইডেন-হাসিনার সেলফিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে।
ইমতিয়াজ আহমেদ : কারা কীভাবে কাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সেদিকে আমি যাচ্ছি না। কেউ নেগেটিভলি দিচ্ছে, কেউ পজিটিভলি দিচ্ছে। কথা হচ্ছে, আমি অ্যাকাডেমিশিয়ান হিসেবে বলছি, যে আমরা গুরুত্বটা যদি একটু কম দিতাম তাহলে ভালো হতো। মানে একটা দেশের প্রেসিডেন্ট আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলতেই পারেন, সেটা তো অস্বাভাবিক কিছু না। মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক সরকারপ্রধান। সেই জায়গাতে তিনি নিজেই তো একটা বড় আকর্ষণ। আমি মনে করি যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটা দেশের নারী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেলফিটা বাইডেনও দেখাতে চাইবেন। আমাদের নেগেটিভটা দিয়েই আমরা দেখছি। হয়তো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নারী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবিটা বাইডেন তো মধ্যপ্রাচ্যে দেখাতে চাইতে পারে। এগুলোকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমেরিকার সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। তারা অনেক সময় অনেক পদক্ষেপ নেয়, সেগুলো যে তারা সব বুঝেশুনে নেয় তা না, সেটা তো পরিষ্কার। আফগানিস্তানের ব্যাপরেই আমরা জানি যে তার পলিসিতে ভুল ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে অনেক বছর পরে তারা বুঝতে পারে যে তারা ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের গুরুত্ব কতটুকু?
ইমতিয়াজ আহমেদ : আমি মনে করি না যে এর কোনো গুরুত্ব আছে। নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসা না আসায় গণতন্ত্রের তেমন কিছু যায় আসে না। আমি নিজেই ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে গিয়েছিলাম। যে নির্বাচনে নওয়াজ শরিফ জিতল। তাতে কি পাকিস্তানের গণতন্ত্রে বড় কোনো পরিবর্তন হয়েছে? অনেকেই বলবেন যে পাকিস্তানের গণতন্ত্র আরও পেছনে চলে গিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি না যে এই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দিয়ে বাংলাদেশের বা যে কোনো দেশের গণতন্ত্র ঠিক করা যায়। আর এখন যে টেকনোলজি তৈরি হয়েছে, তারা আসুক বা না আসুক, এমনিতেই তো খবরাখবর রাখা যায়। আর তারা এসেই বা কী করবে? ভোটের দিনেই তো আর নির্বাচন হয় না। নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া, তাতে ভোটের অনেক আগেই কিন্তু নির্বাচন শুরু হয়ে যায়। নমিনেশনের একটা সমস্যা রয়েছে, আমেরিকাতেই তো মিলিয়নিয়ার ছাড়া কেউ নমিনেশন পান না। তো আমেরিকার গণতন্ত্রের মধ্যেই বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটারের মতো ইত্যাদি বিষয় আছে। কাজেই ওই ভোটের দিন পর্যবেক্ষণ করে গণতন্ত্রকে ঠিক করা যাবে না। প্রসেসটা অনেক বড়। আমি মনে করি, আমেরিকানদের চেয়ে বাংলাদেশের জনগণ যথেষ্ট সচেতন বিশেষ করে রাজনীতির ব্যাপারে অনেক সচেতন, ঐতিহাসিকভাবেই। তারাই ঠিক করবেন। ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষক দিয়ে বা ভিসানীতি দিয়ে এটা ঠিক হবে না, এদেশের জনগণই ঠিক করবেন, যেখানে ঘাটতি আছে।
চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আদালতে গিয়ে অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য তাকে (খালেদা জিয়া) আবারও কারাগারে যেতে হবে বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকাকে (ভিওএ) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। ভিওএর বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়ার নেওয়া ওই সাক্ষাৎকারটির ভিডিও গতকাল শনিবার প্রকাশ হয়।
ওই সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা, গুম, মানবাধিকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংবিধান সংশোধন, সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন কি না, প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করি, পৃথিবীর কোন দেশ সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে? পৃথিবীর কোনো দেশ দেবে? তাদের যদি চাইতে হয় তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার সাজা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের সব থেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর যদি বাইরে যেতে হয়, তখন তার বাসায় থাকার অনুমতি প্রত্যাহার করতে হবে। তাকে আবার জেলে যেতে হবে এবং কোর্টে যেতে হবে। কোর্টের কাছে আবেদন করতে হবে। কোর্ট যদি রায় দেয়, তখন তিনি যেতে পারবেন।’
আরও স্যাংশন দিতে পারে, এটা তাদের ইচ্ছা : বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাসহ মানবাধিকার ও ভোটসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করেন শতরূপা বড়ুয়া। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার এটাই প্রশ্ন যে হঠাৎ কথা নেই, বার্তা নেই তারা আমাদের ওপর ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে? আর মানবাধিকার বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলে, তাহলে আমরা আওয়ামী লীগ, আমরাই তো বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে, এই ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয়, তার জন্য যত রকমের সংস্কার, সেটা আমরাই তো করেছি আজ ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এ সেøাগান তো আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। আমাদের দেশে বেশির ভাগ সময় মিলিটারি ডিক্টেটর (সামরিক স্বৈরাচার) দেশ শাসন করেছে। তখন তো মানুষের ভোট দেওয়া লাগেনি। তারা ভোটের বাক্স নিয়ে গিয়ে শুধু রেজাল্ট ঘোষণা দিয়েছে। এরই প্রতিবাদে আমরা আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম করে নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি। কাজেই সেই ক্ষেত্রে হঠাৎ এ ধরনের স্যাংশন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমরা মনে করি না।’
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, আমাদের দেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সেটা র্যাব হোক, পুলিশ বা যেটাই হোক, কেউ যদি কোনো রকম অন্যায় করে, আমাদের দেশে কিন্তু তাদের বিচার হয়। এই বিচারে কিন্তু কেউ রেহাই পায় না। অনেক সময় কোনো কাজ তারা অতিরিক্ত করে, করতে পারে। কিন্তু করলে আমাদের দেশের আইনেই সেটার বিচার হচ্ছে। যেখানে এমন বিচার হচ্ছে, এ ধরনের ব্যবস্থা আছে, সেখানে এই স্যাংশনে কী কারণে?’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার প্রতিটি সুষ্ঠুভাবে হয়েছে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এসব নির্বাচনে মানুষ তার ভোট দিয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এই নির্বাচনগুলো নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাস্তবতাটা কী, বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার নিয়ে সব সময় সচেতন। কেউ ভোট চুরি করলে তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।’
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন। তিনি কিন্তু দেড় মাসও টিকতে পারেননি। ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ জনগণের রুদ্ররোষে পড়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন তিনি। আবার ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল। সেই ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করে তিনি যখন সরকার গঠনের ঘোষণা দিলেন...এরপর ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা) জারি করা হলো। সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে গেল। কাজেই আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু এখন ভোট সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। কাজেই একটা নির্বাচন সুষ্ঠু হবেএটা তো আমাদেরই দাবি ছিল। আন্দোলন করে আমরাই সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি। তো আজ এখন তারা স্যাংশন দিচ্ছে, আরও দেবে, দিতে পারে। এটা তাদের ইচ্ছা। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের যে অধিকার; তাদের ভোটের অধিকার, তাদের ভাতের অধিকার, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার, তাদের শিক্ষা-দীক্ষার অধিকারসহ সব মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি।’
‘২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল, বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। তার কথা, ‘এখন আর বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেই, এখন মানুষের সে রকম হাহাকার নেই, এমনকি আমাদের যে বেকারত্ব, সেটাও কিন্তু কমে এখন মাত্র ৩ শতাংশ। সেটাও তারা ইচ্ছা করলে কাজ করে খেতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওয়াই-ফাই কানেকশন সারা বাংলাদেশে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি; মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে। আমাদের বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং; আমরা এগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এভাবে দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে এভাবে স্যাংশন দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেওয়া...। তো ঠিক আছে, স্যাংশন দিলে (বাংলাদেশিরা) আমেরিকা আসতে পারবে না, আসবে না। না আসলে কী আসবে-যাবে? আমাদের দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কাজেই আমরা দেখি, কী করে তারা। কেন তাদের এই স্যাংশন জারি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে গুমের ঘটনার যে অভিযোগগুলো করেছে, সে ব্যাপারে তার সরকারের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারে তিনি সদ্য পাস হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনের যে ধারাগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তারও জবাব দেন।
৩৫ মিনিটের এ সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আগামী জাতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার জন্য বিরোধী দলগুলোর দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ ব্যবস্থায় ফেরত যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বিরোধী দলগুলোর, বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অপরাধ করলে মামলা হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার সংকট নিয়েও তিনি প্রশ্নের উত্তর দেন।
বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের জন্য ‘ডেঙ্গু’ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়াতে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি। শীতপ্রধান দেশের চেয়ে নিরক্ষীয় এলাকাতেই এডিস মশা বেশি জন্মানোর ফলে দক্ষিণ এশিয়াতে এর প্রকোপ বাড়ছে। এই রোগে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত হন লাখ লাখ মানুষ, মৃত্যু হয় হাজার হাজার।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এই নিয়ে পুলিশের কানাঘুষা চলছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়েও দুশ্চিন্তা বেড়েছে পুলিশের। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশ সদর দপ্তরও ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আদালতে গিয়ে অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য তাকে (খালেদা জিয়া) আবারও কারাগারে যেতে হবে বলেও জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকাকে (ভিওএ) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে দলটির নেতাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাদের নেত্রীকে বিদেশে যেতে হলে আবারও আদালতে যেতে হবে, জেলে যেতে হবে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর পরিস্থিতি বদলে গেছে বলে তারা মনে করছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরটি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে কার্যকর কোনো আইন না থাকায় এই মন্তব্য হাওর-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। এমন মন্তব্যের সূত্র অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ আইন-১৯৫০-এর ৯০(২) ধারা এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল-১৯৯০-এর ৩২৬ ধারার বিধান অনুযায়ী কৃষিজমিকে অকৃষি শ্রেণিতে পরিবর্তন করে শিল্প, বাণিজ্যিক বা আবাসিক কাজে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তারা বলে আর অনুমতি নেবে না। অবৈধ সরকার থেকে অনুমতি নেবে না। তাহলে অবৈধ সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন কেন করে? এ সরকার যদি অবৈধ হয়, এখানে কেন আবেদন?’ বিএনপিকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিটিং করতে গেলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিলে খবর আছে। পালাবার পথ পাবেন না।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলা নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব তথ্য উল্লেখ করেছেন সেগুলো ‘মিথ্যাচার’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ভয়েস অব আমেরিকাকে প্রধানমন্ত্রী কিছু কথা বলেছেন, যেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা নেই। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’ নামে একটি ছাত্রজোট। ৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে এই ছাত্রঐক্য হয়। যার বেশিরভাগই বাম ধারার ছাত্র সংগঠন এবং নামসর্বস্ব। ক্যাম্পাসগুলোতে যাদের তেমন কোনো অবস্থান নেই। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এসব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে আদৌও আন্দোলন সফল করা যাবে কি না।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতি অনেকটাই কূটনৈতিক পরিম-লে আবর্তিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন অংশীদার বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার নানামুখী কর্মকান্ড ও তার প্রভাব নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সৌদি আরব ও ইসরায়েল ঐতিহাসিক চুক্তির রূপরেখা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। হোয়াইট হাউস গত শুক্রবার এ কথা জানায়। কয়েক দশকের শত্রুতামূলক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি প্রণয়নে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চুক্তি চূড়ান্ত করতে সব পক্ষই তৎপর রয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠছে কানাডা, যা দিন দিন দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে দিল্লির। যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক সংস্থা হাডসন ইনস্টিটিউটে দেওয়া এক বক্তব্যে এই অভিযোগ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম গতকাল শনিবার জানায়, গত শুক্রবার হাডসন ইনস্টিটিউটে বক্তব্য দেন জয়শঙ্কর। তার বক্তব্য শেষে একজন সাংবাদিক কানাডার সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক টানাপোড়েন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি কিছু অভিযোগ করেছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
হৃদরোগ বললে হৃৎপিন্ডের অসুস্থতা বোঝায়। হৃদরোগকে দুই ধরনের। এক জন্মগত হৃদরোগ জন্মের পর হৃৎপিন্ডের দেয়ালে ছিদ্র, ভাল্বের গঠনে ত্রুটিজনিত সমস্যা। এ ধরনের সমস্যা দেখা যায় ১ থেকে ২ ভাগ। দুই অর্জিত হৃদরোগ বাতজ্বরজনিত, যাকে রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ (জঐউ) বলা হয়। এটা হার্টের ভাল্বের ক্ষতি করে। অবশিষ্ট প্রায় ৯৭-৯৮% হৃদরোগই মূলত হার্টের নিজের রক্তনালির প্রতিবন্ধকতা বা ব্লকজনিত।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এ প্রকল্পে ঋণ দিয়ে আসছে জাপান। ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটির এ প্রকল্পে প্রায় ৪৪ হাজার কোটিই ঋণ দেওয়ার কথা জাইকার। এরই অংশ হিসেবে সপ্তম পর্যায়ে জাপানের সঙ্গে আরও ১৫০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ঋণের সুদের হারের সীমা। এতে ব্যাংকগুলোতে ঋণের বিপরীতে সুদের হার বেড়েছে। কিন্তু আমানতে সুদের হার বাড়ায়নি ব্যাংকগুলো। এতে ব্যাংকে ঋণ এবং আমানতের সুদের হার দিন দিন বাড়ছে। গত আগস্টে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড বেড়ে ১৯ মাসে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। এই সময় স্প্রেড ছিল ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
গত শুক্রবার দেশের ১৮টি হলে মুক্তি পেয়েছে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এস ডি রুবেল অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘বৃদ্ধাশ্রম’। এই ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ হয়েছে তার। ছবিতে তার নায়িকা ইয়ামিন হক ববি। আপাতত সিনেমার প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও নিয়মিত নতুন গান প্রকাশ করছেন। নতুন সিনেমার কাজেও হাত দিয়েছেন। সমসাময়িক বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন মাসিদ রণ
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ‘নিশাত বাহিনীর’ সদস্যরা ভাড়ায় খেটে তান্ডব চালিয়ে বালু লুট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর প্রতিবাদ করায় একই পরিবারের নারীসহ চারজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ নিশাত বাহিনীর চার সদস্যকে আটক করেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার হাটাবো শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। এ ঘটনার পর নিশাত বাহিনীর অব্যাহত হুমকির মুখে বালুর গদির মালিক মোবারক হোসেনসহ পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
অপেক্ষা আর মাত্র ৪ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই। শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ায় বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের ১২ বছর বয়সী ছেলের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে জামগড়া জামগড়া ফকিরবাড়ির মোড় এলাকার মেহেদী হাসানের মালিকানাধীন ছয়তলা ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
‘জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে আমার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলাম সুস্থ করতে। কিন্তু ফিরে এলো লাশ হয়ে। কয়েকজন আনসার সদস্যের কারণে মাত্র এক সপ্তাহে আমার পুরো পরিবার এলোমেলো হয়ে গেছে। অভিযোগ করেছিলাম হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের কাছে। তারা তদন্ত কমিটি গঠন করে আনসার টিমকে বদলি করে দায় সারতে চায়। কিন্তু আমার সংসার যে এলামেলো হয়ে গেল, এর বিচার কি শুধু বদলি?’ কথাগুলো বলছিলেন, রাজধানীর শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা সেলিম রেজা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
১৯ শতকে স্পেনে খনিশ্রমিকরা একটি গুহায় খননকাজ চালানোর সময় জুতার মতো কিছু বস্তু খুঁজে পান। পরে সেগুলো ঘাসের তৈরি জুতা বলে নিশ্চিতও হওয়া যায়। তবে জুতাগুলোর বয়স কত তখন ধারণা ছিল না গবেষকদের। সম্প্রতি কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ায় গেছে, আবিষ্কৃত জুতাগুলো কম করে হলেও ছয় হাজার বছর আগের।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
এক দফা দাবিতে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ জেলায় নতুন করে ২২টি মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় প্রায় পৌনে তিন শো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। এ ছাড়া সাভারের আমিনবাজারে বিএনপির সমাবেশ শেষে হেমায়েতপুর এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে উপজেলায় বিএনপির ৪০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বিরোধীদলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ মুইজু (৪৫)। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে প্রাথমিক ফলাফলে তাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সান এমবি। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ২ লাখ ৮২ হাজার ৮০৪ জনের ভোট দেওয়ার কথা ছিল। তবে নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৮৬ শতাংশ, যা প্রথম দফার ৭৯ শতাংশের চেয়ে বেশি।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কুমিল্লার বটগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নুরুল হক। আলেমদের অবস্থান সুসংহত করাসহ জেলার মাদ্রাসাগুলোকে একতাবদ্ধ রাখা ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। সাদাসিধে চলাফেরায় অভ্যস্ত আশি বছর বয়সী এই আলেম বেশ কয়েকটি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বোখারি শরিফের দরস দেন। তার বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লিখেছেন শামসুদ্দীন সাদী
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।