পাঠ্যবইয়ে বাংলায় বিজ্ঞান
ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী | ২ মার্চ, ২০২২ ০০:০০
ভাষার প্রতি আমাদের যে মমত্ববোধ, সেটা আমাদের সমাজ-সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত এক আবহমান আবেগ। দেশ সেখানে মাতৃতুল্য, মায়ের বাহন যেন ভাষা। এই জাগ্রত ভাষাপ্রেম তথা দেশপ্রেম থেকেই আমাদের ভাষা আন্দোলন, এবং সেই সূত্রে স্বাধীনতা অর্জন। এই ভূখণ্ডের মানুষের জন্য এ এক মহত্তম অর্জন। সেই অর্জন আমরা সাফল্যে ও শিখরে তুলতে পেরেছি কি? সেটা একটা প্রশ্ন বটে। এর একটা সালতামামি নেওয়া প্রয়োজন। ২০২১ সাল ছিল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কাল। কাজেই এই সময়ে ভেবে নেওয়া যেতে পারে বিগত ছয় যুগেরও বেশি সময় আমাদের অর্জন কতটুকু, যা প্রত্যাশা ছিল তার কতটুকু মিলল, আদৌ মিলল কি না, মেলার কথা ছিল কি না ইত্যাদি। বিগত ছয় যুগেরও বেশি সময়ে পৃথিবী এগিয়ে গিয়েছে বহুদূর। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় কৌশল উদ্ভাবনে মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে অচিন্তিতপূর্ব পরিবর্তন।
এই ছয় যুগেরও বেশি সময়ে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে আমরা ক্রমশ উত্তরিত হয়েছি তৈরি পোশাকশিল্পের এক সম্ভাবনাময় দেশে। এখন আমাদের জিডিপির একটা বড় অংশ আসে তৈরি-পোশাক খাত থেকে। শিল্প-কারখানা স্থাপনে আমরা বহুতর এগিয়েছি বটে, কিন্তু অনেক ফাঁকও রয়ে গেছে। বহু ক্ষেত্রে আজও মাইক্রো-ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন আছে, সেসবের অভাবে আন্তর্জাতিক মান ছুঁতে ব্যর্থ হচ্ছি আমরা। শিল্পে অগ্রগতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি চিহ্নিত করে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের পুরো শিল্পব্যবস্থা আমদানি করা যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভর করে। আমাদের সমাজে আজ চৌদ্দ কোটিরও বেশি (ডিসেম্বর ২০১৭) মানুষ মুঠোফোন সেবা গ্রহণ করছে। কিন্তু এই সমাজে মুঠোফোন নির্মাণ হয় না। আমাদের সেই প্রযুক্তি জানা নেই। আমরা মুঠোফোন সারাতে পারি, যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করতে পারি। কিন্তু এর একটি অংশও তৈরি করতে পারি না। যে সমাজ মুঠোফোন ব্যবহার করে শুধু, আর যে সমাজ মুঠোফোন বানাতে পারে এ দুটোর মধ্যে তফাত আছে। গত ছয় যুগের বেশি সময় আমরা সেই উন্নত সভ্যতায় পৌঁছাতে পারিনি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে আমাদের মৌখিক অবদান (লিপ সার্ভিস) যতটা বস্তু অবদান ততটা নয়। অথচ এ সময়ে ভারত এখন আন্তর্জাতিক নেতৃস্থানীয় দশায় পৌঁছে গেছে। সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত ‘মঙ্গলযান’ আজ মঙ্গলে পৌঁছে গেছে। মৌলিক বিজ্ঞান কিংবা ফলিত প্রযুক্তির চর্চা বাদই দিলাম। আমরা কি পেরেছি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কথা বাংলায় বোঝাতে-শেখাতে-পড়াতে? বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের আজ ৭০ বছর পেরিয়ে গেছে, অথচ উচ্চশিক্ষার বাহন আজও আমরা নিরঙ্কুশ বাংলায় করতে পারিনি। ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফসল ‘কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ড’ বাংলায় উচ্চশিক্ষায় অনেক পাঠ্যবই প্রণয়ন করার চেষ্টা করে। সেই ষাটের দশকে দেশের প্রথিতযশা বিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দিয়ে বিবিধ বিষয়ে বাংলায় আন্তর্জাতিকমানের পাঠ্যপুস্তক রচনা করানো হয়েছিল। গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ইত্যাদি বিষয়ে অনেক পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়েছিল। ড. মুহম্মদ কুদরত-ই-খুদার চার খণ্ডের ঢাউস ‘জৈব রসায়ন’ বইখানি এ সময়ের সৃষ্টি। অসাধারণ এক সৃষ্টি! একজন নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানীর বিপুল শ্রমে রচিত হয় এই বৃহৎ প্রয়াসটি। কিন্তু এটি জনপ্রিয় হতে পারেনি। বইটি লিখতে গিয়ে কুদরত-ই-খুদা নিজের সুবিধা এবং প্রয়োজনমতো পরিভাষা সৃষ্টি করে নিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেসব শব্দ এত দুরূহ এবং তৎসমঘেঁষা ছিল এবং জিহ্বার এত ব্যায়াম প্রয়োজন হতো যে স্বভাবতই সে প্রয়াস ফলপ্রসূ হয়নি। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যায় নাইট্রোজেনকে যবক্ষারজান, পার্শিয়াল ডিস্টিলেশনকে মৃদু তাকতীরন, অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনকে সুরভিচাক্রিক উদ-অঙ্গার বলা হলে সেটা যে শিক্ষার্থীরা নেবে না বলাই বাহুল্য। এ সমস্যা বুঝতে পেরে সত্তর ও আশির দশকে বাংলা একাডেমি মৌলিক বিজ্ঞানের বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করে দেয় যারা ওইসব বিষয়ে মান্য পরিভাষা তৈরি করবে। এভাবে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ে পরিভাষাকোষ সৃষ্টি হয়।
এই পরিভাষাকোষগুলোর সাহায্যে সত্তর ও আশির দশকে আরেক ঝাঁক নবীন শিক্ষক ও বিজ্ঞানী দল আরেক সেট নতুন পাঠ্যবই রচনায় প্রবৃত্ত হন। এ সময় আমরা দেখেছি কয়েকজন বিদগ্ধ পণ্ডিত চেষ্টা করেছেন বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যবই রচনা করতে। যেমন ড. মুনিবুর রহমান চৌধুরী, ড. ফররুখ খলিল, ড. এ এম হারুন-অর-রশীদ, ড. মফিজউদ্দিন আহমদ, ড. রমজান আলী সরদার প্রমুখ প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞ যথাক্রমে, আধুনিক বীজগণিত, সংনম্য প্রবাহ, পদার্থবিদ্যার বিবিধ বিষয়ে, জৈব রসায়ন এবং বিশ্লেষণী গণিতের বিবিধ বিষয়ে মান্য পাঠ্যগ্রন্থ রচনা করেন। এসব পাঠ্যবই আন্তর্জাতিক মানের বিবিধ প্রচলিত টেক্সটবইয়ের আলোকে এবং অনুসরণে লেখা হয়েছিল। যেমন মৌলিক সংখ্যা বিষয়ে হার্ডি এবং রাইটের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য থিওরি অব নাম্বার্স’ কিংবা চিরায়ত পদার্থবিদ্যা বিষয়ে গোল্ডস্টাইনের বিখ্যাত বই ‘ক্লাসিকাল মেকানিক্স’ অনুসৃত হলেও উল্লিখিত শিক্ষকরা তাদের নিজস্ব অনুধ্যান এবং অভিজ্ঞতার আলোকে এই বইগুলো রচনা করেছিলেন।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত, বাংলায় পাঠ্যপুস্তক রচনার ইতিহাসে এই লেখকদের বইগুলো মাইলফলক এবং একেকটি ক্ল্যাসিক। দুঃখের বিষয়, এই বইগুলোও পাঠ্য হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়নি। এগুলো কিছুটা সীমিত অর্থে জনপ্রিয় হয়েছিল, কেননা বিকল্প ছিল না, উপরন্তু কোনো কোনো শিক্ষক ক্লাসরুমে এসব বই ব্যবহারও করেছিলেন। কিন্তু বহুল প্রচলনের ব্যাপারটি ঘটেনি। সমস্যা বহুবিধ এখানেও। পরিভাষা একটা সমস্যা রয়েই গেল। পরিভাষা ব্যবহার করে লিখলে খটমট শোনায়। কারণ ভালো পাঠ্যবই লিখতে হলে ভালো বাংলা গদ্য জানতে হয়, যেটা সে সময়কার গুটিকয়েক শিক্ষকের জানা ছিল। এর চেয়ে ইংরেজিতে লেখা প্রচলিত পাঠ্যবই সহজ বোধ হয়। এর কারণটি কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক। শিক্ষার্থী শুধু একটা ভাষায় জারগন শিখতে চায় এবং সেটা ইংরেজিতেই। বাংলা শব্দের চমৎকার বিকল্প থাকলেও সেটা গ্রহণে সে অনিচ্ছুক। সে মাথাই খাটাবে না, মনোযোগই দেবে না। ইংরেজি ‘রেজিস্ট্যান্স’ শব্দের চমৎকার বাংলা প্রতিশব্দ ‘রোধ’ ব্যবহারে শিক্ষার্থী অনাগ্রহী। কিংবা ‘ডিফারেন্সিয়েশনের’ বাংলা ‘ব্যবকলন’ বা ‘অন্তরকলনে’ তার কোনো আগ্রহ নেই। সে দুটি ভাষায় পারঙ্গমতা অর্জনে অনাগ্রহী। কিংবা শিক্ষকরা শেখাতেও অনাগ্রহী।
বাংলা পাঠ্যবই অপ্রচলনের অন্যতম কারণ, ক্লাসরুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বাংলা পাঠ্যবই ব্যবহারে অনাগ্রহী। ইংরেজি টেক্সটবই তাদের কাছে অধিকতর প্রিয়। এর একটি কারণ হতে পারে এই যে, আমাদের কোর্সগুলোর আন্তর্জাতিক মান্যতা দিতে গেলে এ কথা লিখতে হয় যে পাঠদান ইংরেজি ভাষায় হয়েছে। নতুবা শিক্ষার্থীর ইংরেজি পারঙ্গমতা প্রশ্নবিদ্ধ থাকে। এই হেতু ইংরেজি টেক্সটবুক অধিকতর জনপ্রিয়, ফলে শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ভাবতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। সে বাংলাতে শিখতেই অনিচ্ছুক। শ্রমই দেবে না। আমার একজন বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক কিছুটা আত্মশ্লাঘায় বলেছিলেন, বোঝোই তো, বাংলায় ঠিক টেকনিক্যাল আলোচনাটা করা যায় না। কাজেই ব্যাপারটা মনস্তাত্ত্বিকও বটে।
পরিভাষা গ্রহণে অস্বাচ্ছন্দ্যের পেছনে একটি কারণ হতে পারে, আমাদের পরিভাষা তৎসম শব্দ ভারাক্রান্ত। যেমন রবার্ট রেসনিক ও ডেভিড হ্যালিডের বিপুল জনপ্রিয় ‘ফিজিক্স’ বইটি বাংলা একাডেমি যখন অনুবাদ করল, সেটা এতই সংস্কৃত-গন্ধী হলো যে শিক্ষার্থীরা সেটা গ্রহণ করল না। ‘সিস্টেমের’ বাংলা সেখানে ‘সুব্যবস্থা’ হলে ব্যাপারটা সহজেই বোধগম্য।
বইটির প্রথম চারটা বাক্য ছিল এমন
When plans were being made to lay the first Atlantic telegraph cable, the company in charge of the construction hired a young engineer, William Thomson (1824-1907), as a consultant. To solve some of the problems raised by this undertaking, Thomson made many accurate electrical measurements. Often he used instruments which he himself had invented.
এর বাংলা হলো এমন
যখন প্রথম অতলান্তিক টেলিগ্রাফ কেব্ল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছিল, সে সময় এ কার্যে ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি, উইলিয়াম থমসন (১৮২৪-১৯০৭) নামক একজন তরুণ প্রকৌশলীকে উপদেষ্টারূপে নিয়োগ করেন। এই প্রকল্পে উদ্ভূত কতগুলো সমস্যা সমাধানের জন্য থমসন অনেকগুলো নির্ভুল তড়িৎ সংশ্লিষ্ট পরিমাপন সমাধা করেন। প্রায়শঃ তিনি স্বোদ্ভাবিত যন্ত্রাদি ব্যবহার করেছিলেন।
অনুবাদ প্রাঞ্জল না হলে, সেটা পড়ে সহজে বোঝা সম্ভব না হলে শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করবে না। কাজেই আমাদের উচিত হবে, প্রেজুডিস ত্যাগ করে মুখের ভাষার কাছাকাছি ভাষায়, যেভাবে ক্লাসে পাঠদান করা চলে, তেমনভাবে বই লেখা। সেসব বই ক্লাসে ব্যবহার করা। ক্লাসে ব্যবহার না করলে বই প্রচলন হবে না। ইংরেজি শব্দের চমৎকার বাংলা প্রতিরূপ না থাকলে ইংরেজিতেই রাখা যেতে পারে অহেতুক বাতুলতা পরিহার করে। কেউ বলে না যে ‘হিমায়ক হতে কোক আনো’, সবাই বলে ‘ফ্রিজ খুলে কোক আনো’।
যেহেতু বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের নতুন বিষয় তৈরি হয় না, আমাদের দেশে পশ্চিমা বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় অতি নগণ্য গবেষণা হয়, কাজেই বৈজ্ঞানিক গবেষণার আবহটি তৈরি করতে না পারলে সমস্যাটা রয়েই যাবে।
বিজ্ঞান-বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় কেন বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে না তার কতগুলো কারণ রয়েছে। যার একটি প্রধান কারণ লিখিত উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তকের অভাব। এটা আমরা ওপরে বলেছি। এবং ব্যবহারিক দিক থেকেও এটা গুরুত্বপূর্ণ, কেননা শ্রেণিকক্ষে কীভাবে পড়াবেন তার একটা আর্কিটাইপ বা আদ্যরূপ শিক্ষককে দিতে হবে। কেননা তেমন একটা পাঠ্যবই পড়েই তিনি ক্লাসে পাঠদান করবেন এবং বইটি পাঠ্যবই হিসেবে ব্যবহৃত হতে নির্দেশ দেবেন। এখানে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। আমরা সহজ-লিখিত একটি ইংরেজি-ভাষায় রচিত বইকে ক্লাসরুমে দিতে পারি, এবং শিক্ষককে বলতে পারি, খুশিমতো বাংলায় পড়ান। আবার ন্যূনতম পরিভাষা ব্যবহার করে সহজ-ভাষায় লিখিত টেক্সটবই পরীক্ষামূলকভাবে লেখা যেতে পারে [আমার ‘ন্যানো’ (২০১০) বইটা এমনই একটি বই]। তারপর কয়েক বছরের ইটারেশনের মধ্য দিয়ে আমরা একটি মান্য শৈলীতে থিতু হতে পারি। পেশাভিত্তিক ডিগ্রি, যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, কৃষি ইত্যাদিতে আবার বিদেশের সঙ্গে তাল মেলাতে সার্টিফিকেটে লিখতে হয় ‘ইংরেজি ভাষায় শেখানো হয়েছে’। সে ক্ষেত্রে আমাদের একটা কম্প্রোমাইজে যেতে হবে। আমরা বুনিয়াদি কোর্সগুলো উপরোক্ত পদ্ধতিতে বাংলায় পড়াব, তবে তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের থেকে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি মানতে হবে। এভাবে আমরা একটা মধ্যপন্থায় পৌঁছাতে পারি। তবে ব্যবহারিক সুবিধার জন্যই আমাদের দু-এটি সেন্টার্স অব এক্সেলেন্স রাখতে হবে, যেখানে ভিন্নভাবে পঠন-পাঠন হবে।
আরেকটি কথা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আমাদের উচ্চশিক্ষা কিন্তু বাংলাতেই হচ্ছে। কিন্তু সেটাকে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই না। এটাও এক রকমের মানসিক ঊণতা, যেটা ত্যাগ না-করলে উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহার বিষয়ে কথা বলাই অনুচিত।
লেখক : গবেষক, সংগঠক, লেখক এবং অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, সেন্টার ফর এনার্জি স্টাডিজ, বুয়েট
শেয়ার করুন
ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী | ২ মার্চ, ২০২২ ০০:০০

ভাষার প্রতি আমাদের যে মমত্ববোধ, সেটা আমাদের সমাজ-সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত এক আবহমান আবেগ। দেশ সেখানে মাতৃতুল্য, মায়ের বাহন যেন ভাষা। এই জাগ্রত ভাষাপ্রেম তথা দেশপ্রেম থেকেই আমাদের ভাষা আন্দোলন, এবং সেই সূত্রে স্বাধীনতা অর্জন। এই ভূখণ্ডের মানুষের জন্য এ এক মহত্তম অর্জন। সেই অর্জন আমরা সাফল্যে ও শিখরে তুলতে পেরেছি কি? সেটা একটা প্রশ্ন বটে। এর একটা সালতামামি নেওয়া প্রয়োজন। ২০২১ সাল ছিল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কাল। কাজেই এই সময়ে ভেবে নেওয়া যেতে পারে বিগত ছয় যুগেরও বেশি সময় আমাদের অর্জন কতটুকু, যা প্রত্যাশা ছিল তার কতটুকু মিলল, আদৌ মিলল কি না, মেলার কথা ছিল কি না ইত্যাদি। বিগত ছয় যুগেরও বেশি সময়ে পৃথিবী এগিয়ে গিয়েছে বহুদূর। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় কৌশল উদ্ভাবনে মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে অচিন্তিতপূর্ব পরিবর্তন।
এই ছয় যুগেরও বেশি সময়ে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে আমরা ক্রমশ উত্তরিত হয়েছি তৈরি পোশাকশিল্পের এক সম্ভাবনাময় দেশে। এখন আমাদের জিডিপির একটা বড় অংশ আসে তৈরি-পোশাক খাত থেকে। শিল্প-কারখানা স্থাপনে আমরা বহুতর এগিয়েছি বটে, কিন্তু অনেক ফাঁকও রয়ে গেছে। বহু ক্ষেত্রে আজও মাইক্রো-ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন আছে, সেসবের অভাবে আন্তর্জাতিক মান ছুঁতে ব্যর্থ হচ্ছি আমরা। শিল্পে অগ্রগতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি চিহ্নিত করে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের পুরো শিল্পব্যবস্থা আমদানি করা যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভর করে। আমাদের সমাজে আজ চৌদ্দ কোটিরও বেশি (ডিসেম্বর ২০১৭) মানুষ মুঠোফোন সেবা গ্রহণ করছে। কিন্তু এই সমাজে মুঠোফোন নির্মাণ হয় না। আমাদের সেই প্রযুক্তি জানা নেই। আমরা মুঠোফোন সারাতে পারি, যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করতে পারি। কিন্তু এর একটি অংশও তৈরি করতে পারি না। যে সমাজ মুঠোফোন ব্যবহার করে শুধু, আর যে সমাজ মুঠোফোন বানাতে পারে এ দুটোর মধ্যে তফাত আছে। গত ছয় যুগের বেশি সময় আমরা সেই উন্নত সভ্যতায় পৌঁছাতে পারিনি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে আমাদের মৌখিক অবদান (লিপ সার্ভিস) যতটা বস্তু অবদান ততটা নয়। অথচ এ সময়ে ভারত এখন আন্তর্জাতিক নেতৃস্থানীয় দশায় পৌঁছে গেছে। সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত ‘মঙ্গলযান’ আজ মঙ্গলে পৌঁছে গেছে। মৌলিক বিজ্ঞান কিংবা ফলিত প্রযুক্তির চর্চা বাদই দিলাম। আমরা কি পেরেছি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কথা বাংলায় বোঝাতে-শেখাতে-পড়াতে? বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের আজ ৭০ বছর পেরিয়ে গেছে, অথচ উচ্চশিক্ষার বাহন আজও আমরা নিরঙ্কুশ বাংলায় করতে পারিনি। ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফসল ‘কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ড’ বাংলায় উচ্চশিক্ষায় অনেক পাঠ্যবই প্রণয়ন করার চেষ্টা করে। সেই ষাটের দশকে দেশের প্রথিতযশা বিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দিয়ে বিবিধ বিষয়ে বাংলায় আন্তর্জাতিকমানের পাঠ্যপুস্তক রচনা করানো হয়েছিল। গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ইত্যাদি বিষয়ে অনেক পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়েছিল। ড. মুহম্মদ কুদরত-ই-খুদার চার খণ্ডের ঢাউস ‘জৈব রসায়ন’ বইখানি এ সময়ের সৃষ্টি। অসাধারণ এক সৃষ্টি! একজন নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানীর বিপুল শ্রমে রচিত হয় এই বৃহৎ প্রয়াসটি। কিন্তু এটি জনপ্রিয় হতে পারেনি। বইটি লিখতে গিয়ে কুদরত-ই-খুদা নিজের সুবিধা এবং প্রয়োজনমতো পরিভাষা সৃষ্টি করে নিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেসব শব্দ এত দুরূহ এবং তৎসমঘেঁষা ছিল এবং জিহ্বার এত ব্যায়াম প্রয়োজন হতো যে স্বভাবতই সে প্রয়াস ফলপ্রসূ হয়নি। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যায় নাইট্রোজেনকে যবক্ষারজান, পার্শিয়াল ডিস্টিলেশনকে মৃদু তাকতীরন, অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনকে সুরভিচাক্রিক উদ-অঙ্গার বলা হলে সেটা যে শিক্ষার্থীরা নেবে না বলাই বাহুল্য। এ সমস্যা বুঝতে পেরে সত্তর ও আশির দশকে বাংলা একাডেমি মৌলিক বিজ্ঞানের বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করে দেয় যারা ওইসব বিষয়ে মান্য পরিভাষা তৈরি করবে। এভাবে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ে পরিভাষাকোষ সৃষ্টি হয়।
এই পরিভাষাকোষগুলোর সাহায্যে সত্তর ও আশির দশকে আরেক ঝাঁক নবীন শিক্ষক ও বিজ্ঞানী দল আরেক সেট নতুন পাঠ্যবই রচনায় প্রবৃত্ত হন। এ সময় আমরা দেখেছি কয়েকজন বিদগ্ধ পণ্ডিত চেষ্টা করেছেন বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যবই রচনা করতে। যেমন ড. মুনিবুর রহমান চৌধুরী, ড. ফররুখ খলিল, ড. এ এম হারুন-অর-রশীদ, ড. মফিজউদ্দিন আহমদ, ড. রমজান আলী সরদার প্রমুখ প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞ যথাক্রমে, আধুনিক বীজগণিত, সংনম্য প্রবাহ, পদার্থবিদ্যার বিবিধ বিষয়ে, জৈব রসায়ন এবং বিশ্লেষণী গণিতের বিবিধ বিষয়ে মান্য পাঠ্যগ্রন্থ রচনা করেন। এসব পাঠ্যবই আন্তর্জাতিক মানের বিবিধ প্রচলিত টেক্সটবইয়ের আলোকে এবং অনুসরণে লেখা হয়েছিল। যেমন মৌলিক সংখ্যা বিষয়ে হার্ডি এবং রাইটের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য থিওরি অব নাম্বার্স’ কিংবা চিরায়ত পদার্থবিদ্যা বিষয়ে গোল্ডস্টাইনের বিখ্যাত বই ‘ক্লাসিকাল মেকানিক্স’ অনুসৃত হলেও উল্লিখিত শিক্ষকরা তাদের নিজস্ব অনুধ্যান এবং অভিজ্ঞতার আলোকে এই বইগুলো রচনা করেছিলেন।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত, বাংলায় পাঠ্যপুস্তক রচনার ইতিহাসে এই লেখকদের বইগুলো মাইলফলক এবং একেকটি ক্ল্যাসিক। দুঃখের বিষয়, এই বইগুলোও পাঠ্য হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়নি। এগুলো কিছুটা সীমিত অর্থে জনপ্রিয় হয়েছিল, কেননা বিকল্প ছিল না, উপরন্তু কোনো কোনো শিক্ষক ক্লাসরুমে এসব বই ব্যবহারও করেছিলেন। কিন্তু বহুল প্রচলনের ব্যাপারটি ঘটেনি। সমস্যা বহুবিধ এখানেও। পরিভাষা একটা সমস্যা রয়েই গেল। পরিভাষা ব্যবহার করে লিখলে খটমট শোনায়। কারণ ভালো পাঠ্যবই লিখতে হলে ভালো বাংলা গদ্য জানতে হয়, যেটা সে সময়কার গুটিকয়েক শিক্ষকের জানা ছিল। এর চেয়ে ইংরেজিতে লেখা প্রচলিত পাঠ্যবই সহজ বোধ হয়। এর কারণটি কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক। শিক্ষার্থী শুধু একটা ভাষায় জারগন শিখতে চায় এবং সেটা ইংরেজিতেই। বাংলা শব্দের চমৎকার বিকল্প থাকলেও সেটা গ্রহণে সে অনিচ্ছুক। সে মাথাই খাটাবে না, মনোযোগই দেবে না। ইংরেজি ‘রেজিস্ট্যান্স’ শব্দের চমৎকার বাংলা প্রতিশব্দ ‘রোধ’ ব্যবহারে শিক্ষার্থী অনাগ্রহী। কিংবা ‘ডিফারেন্সিয়েশনের’ বাংলা ‘ব্যবকলন’ বা ‘অন্তরকলনে’ তার কোনো আগ্রহ নেই। সে দুটি ভাষায় পারঙ্গমতা অর্জনে অনাগ্রহী। কিংবা শিক্ষকরা শেখাতেও অনাগ্রহী।
বাংলা পাঠ্যবই অপ্রচলনের অন্যতম কারণ, ক্লাসরুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বাংলা পাঠ্যবই ব্যবহারে অনাগ্রহী। ইংরেজি টেক্সটবই তাদের কাছে অধিকতর প্রিয়। এর একটি কারণ হতে পারে এই যে, আমাদের কোর্সগুলোর আন্তর্জাতিক মান্যতা দিতে গেলে এ কথা লিখতে হয় যে পাঠদান ইংরেজি ভাষায় হয়েছে। নতুবা শিক্ষার্থীর ইংরেজি পারঙ্গমতা প্রশ্নবিদ্ধ থাকে। এই হেতু ইংরেজি টেক্সটবুক অধিকতর জনপ্রিয়, ফলে শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ভাবতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। সে বাংলাতে শিখতেই অনিচ্ছুক। শ্রমই দেবে না। আমার একজন বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক কিছুটা আত্মশ্লাঘায় বলেছিলেন, বোঝোই তো, বাংলায় ঠিক টেকনিক্যাল আলোচনাটা করা যায় না। কাজেই ব্যাপারটা মনস্তাত্ত্বিকও বটে।
পরিভাষা গ্রহণে অস্বাচ্ছন্দ্যের পেছনে একটি কারণ হতে পারে, আমাদের পরিভাষা তৎসম শব্দ ভারাক্রান্ত। যেমন রবার্ট রেসনিক ও ডেভিড হ্যালিডের বিপুল জনপ্রিয় ‘ফিজিক্স’ বইটি বাংলা একাডেমি যখন অনুবাদ করল, সেটা এতই সংস্কৃত-গন্ধী হলো যে শিক্ষার্থীরা সেটা গ্রহণ করল না। ‘সিস্টেমের’ বাংলা সেখানে ‘সুব্যবস্থা’ হলে ব্যাপারটা সহজেই বোধগম্য।
বইটির প্রথম চারটা বাক্য ছিল এমন
When plans were being made to lay the first Atlantic telegraph cable, the company in charge of the construction hired a young engineer, William Thomson (1824-1907), as a consultant. To solve some of the problems raised by this undertaking, Thomson made many accurate electrical measurements. Often he used instruments which he himself had invented.
এর বাংলা হলো এমন
যখন প্রথম অতলান্তিক টেলিগ্রাফ কেব্ল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছিল, সে সময় এ কার্যে ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি, উইলিয়াম থমসন (১৮২৪-১৯০৭) নামক একজন তরুণ প্রকৌশলীকে উপদেষ্টারূপে নিয়োগ করেন। এই প্রকল্পে উদ্ভূত কতগুলো সমস্যা সমাধানের জন্য থমসন অনেকগুলো নির্ভুল তড়িৎ সংশ্লিষ্ট পরিমাপন সমাধা করেন। প্রায়শঃ তিনি স্বোদ্ভাবিত যন্ত্রাদি ব্যবহার করেছিলেন।
অনুবাদ প্রাঞ্জল না হলে, সেটা পড়ে সহজে বোঝা সম্ভব না হলে শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করবে না। কাজেই আমাদের উচিত হবে, প্রেজুডিস ত্যাগ করে মুখের ভাষার কাছাকাছি ভাষায়, যেভাবে ক্লাসে পাঠদান করা চলে, তেমনভাবে বই লেখা। সেসব বই ক্লাসে ব্যবহার করা। ক্লাসে ব্যবহার না করলে বই প্রচলন হবে না। ইংরেজি শব্দের চমৎকার বাংলা প্রতিরূপ না থাকলে ইংরেজিতেই রাখা যেতে পারে অহেতুক বাতুলতা পরিহার করে। কেউ বলে না যে ‘হিমায়ক হতে কোক আনো’, সবাই বলে ‘ফ্রিজ খুলে কোক আনো’।
যেহেতু বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের নতুন বিষয় তৈরি হয় না, আমাদের দেশে পশ্চিমা বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় অতি নগণ্য গবেষণা হয়, কাজেই বৈজ্ঞানিক গবেষণার আবহটি তৈরি করতে না পারলে সমস্যাটা রয়েই যাবে।
বিজ্ঞান-বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় কেন বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে না তার কতগুলো কারণ রয়েছে। যার একটি প্রধান কারণ লিখিত উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তকের অভাব। এটা আমরা ওপরে বলেছি। এবং ব্যবহারিক দিক থেকেও এটা গুরুত্বপূর্ণ, কেননা শ্রেণিকক্ষে কীভাবে পড়াবেন তার একটা আর্কিটাইপ বা আদ্যরূপ শিক্ষককে দিতে হবে। কেননা তেমন একটা পাঠ্যবই পড়েই তিনি ক্লাসে পাঠদান করবেন এবং বইটি পাঠ্যবই হিসেবে ব্যবহৃত হতে নির্দেশ দেবেন। এখানে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। আমরা সহজ-লিখিত একটি ইংরেজি-ভাষায় রচিত বইকে ক্লাসরুমে দিতে পারি, এবং শিক্ষককে বলতে পারি, খুশিমতো বাংলায় পড়ান। আবার ন্যূনতম পরিভাষা ব্যবহার করে সহজ-ভাষায় লিখিত টেক্সটবই পরীক্ষামূলকভাবে লেখা যেতে পারে [আমার ‘ন্যানো’ (২০১০) বইটা এমনই একটি বই]। তারপর কয়েক বছরের ইটারেশনের মধ্য দিয়ে আমরা একটি মান্য শৈলীতে থিতু হতে পারি। পেশাভিত্তিক ডিগ্রি, যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, কৃষি ইত্যাদিতে আবার বিদেশের সঙ্গে তাল মেলাতে সার্টিফিকেটে লিখতে হয় ‘ইংরেজি ভাষায় শেখানো হয়েছে’। সে ক্ষেত্রে আমাদের একটা কম্প্রোমাইজে যেতে হবে। আমরা বুনিয়াদি কোর্সগুলো উপরোক্ত পদ্ধতিতে বাংলায় পড়াব, তবে তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের থেকে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি মানতে হবে। এভাবে আমরা একটা মধ্যপন্থায় পৌঁছাতে পারি। তবে ব্যবহারিক সুবিধার জন্যই আমাদের দু-এটি সেন্টার্স অব এক্সেলেন্স রাখতে হবে, যেখানে ভিন্নভাবে পঠন-পাঠন হবে।
আরেকটি কথা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আমাদের উচ্চশিক্ষা কিন্তু বাংলাতেই হচ্ছে। কিন্তু সেটাকে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই না। এটাও এক রকমের মানসিক ঊণতা, যেটা ত্যাগ না-করলে উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহার বিষয়ে কথা বলাই অনুচিত।
লেখক : গবেষক, সংগঠক, লেখক এবং অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, সেন্টার ফর এনার্জি স্টাডিজ, বুয়েট