বিজ্ঞানীরা যখন বাংলায় লেখেন
আবদুল্লাহ আল-মুতী | ২ মার্চ, ২০২২ ০০:০০
জগদীশচন্দ্র ও প্রফুল্লচন্দ্র দুজনই যথাক্রমে ফরিদপুর ও খুলনার গ্রাম্য বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন আরম্ভ করেন। আর পাশ্চাত্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও দুজনের মধ্যেই বিজ্ঞানকর্মে ও সাহিত্যচর্চায় এক গভীর স্বাদেশিকতা বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রফুল্লচন্দ্রের বিজ্ঞানের ইতিহাসবিষয়ক গবেষণা গ্রন্থ ‘নব্য রসায়নীবিদ্যা ও তাহার উৎপত্তি বাংলা সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে ১৯০৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। রাসায়নিক পরিভাষা (১৩১৯) গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেছেন, বাঙালি মাতৃভাষায় বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রচার না করিলে কখনই ভাষার ও বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের পুষ্টিসাধন হইবে না।’
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার অবশ্য-প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এই দৃঢ় প্রত্যয় অবশ্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১৮৯৪-১৯৭৪), কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭-১৯৮১), মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা (১৯০০-৭৭) প্রমুখ সমকালীন অন্যান্য বিজ্ঞানীর রচনাতেও দেখা যায়। সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার আরও ক’জন সহকর্মীর উদ্যোগে ১৯৪১ সালে ‘বিজ্ঞান-পরিচয়’ নামে একটি দ্বিমাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি কলকাতায় বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন ও মাসিক ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই পরিষদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জনসমাজকে বিজ্ঞানসচেতন করা, জনকল্যাণে বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ও মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচলন।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর একটি বিখ্যাত উক্তি হলো, ‘যারা বলেন বাংলায় বিজ্ঞান হয় না, তারা বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।’
অনুরূপ মনোভাব থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগেই মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা লেখেন:
বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী লোকদের সংখ্যা গণনায় প্রতিপন্ন হয়েছে যে, বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য ভাষাভাষীর তুলনায় পঞ্চম স্থান অধিকার করে, সুতরাং বিশ্বসাহিত্য ক্ষেত্রে বাংলার যে আসন, ভারত, বাংলা, পাকিস্তানের অন্য কোনো ভাষাই সেখানে পৌঁছায় না। এমন যে ভাষা তাকে জগতের অন্যান্য ভাষার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পুরোভাগে দাঁড়াতে হবে। বর্তমানের বৈজ্ঞানিক জগতে বিজ্ঞানের পরিভাষা দিয়ে তার সমৃদ্ধি তাই অত্যন্ত আবশ্যক। আমাদের সাহিত্য কোনো ক্ষুদ্র দেশের অবহেলিত সাহিত্যের সঙ্গে স্থান নিতে পারে না। তাকে তার যোগ্য স্থান বিশ্বের দরবারে অধিকার করতে হবে। বৈজ্ঞানিকের চিন্তাধারায় এই ভাষার পরিপুষ্টি তাই একান্তভাবে দরকার।
''
* লেখকের আজকের বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ২০০৫ থেকে চয়িত
শেয়ার করুন
আবদুল্লাহ আল-মুতী | ২ মার্চ, ২০২২ ০০:০০

জগদীশচন্দ্র ও প্রফুল্লচন্দ্র দুজনই যথাক্রমে ফরিদপুর ও খুলনার গ্রাম্য বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন আরম্ভ করেন। আর পাশ্চাত্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও দুজনের মধ্যেই বিজ্ঞানকর্মে ও সাহিত্যচর্চায় এক গভীর স্বাদেশিকতা বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রফুল্লচন্দ্রের বিজ্ঞানের ইতিহাসবিষয়ক গবেষণা গ্রন্থ ‘নব্য রসায়নীবিদ্যা ও তাহার উৎপত্তি বাংলা সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে ১৯০৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। রাসায়নিক পরিভাষা (১৩১৯) গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেছেন, বাঙালি মাতৃভাষায় বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রচার না করিলে কখনই ভাষার ও বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের পুষ্টিসাধন হইবে না।’
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার অবশ্য-প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এই দৃঢ় প্রত্যয় অবশ্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১৮৯৪-১৯৭৪), কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭-১৯৮১), মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা (১৯০০-৭৭) প্রমুখ সমকালীন অন্যান্য বিজ্ঞানীর রচনাতেও দেখা যায়। সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার আরও ক’জন সহকর্মীর উদ্যোগে ১৯৪১ সালে ‘বিজ্ঞান-পরিচয়’ নামে একটি দ্বিমাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি কলকাতায় বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন ও মাসিক ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই পরিষদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জনসমাজকে বিজ্ঞানসচেতন করা, জনকল্যাণে বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ও মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচলন।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর একটি বিখ্যাত উক্তি হলো, ‘যারা বলেন বাংলায় বিজ্ঞান হয় না, তারা বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।’
অনুরূপ মনোভাব থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগেই মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা লেখেন:
বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী লোকদের সংখ্যা গণনায় প্রতিপন্ন হয়েছে যে, বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য ভাষাভাষীর তুলনায় পঞ্চম স্থান অধিকার করে, সুতরাং বিশ্বসাহিত্য ক্ষেত্রে বাংলার যে আসন, ভারত, বাংলা, পাকিস্তানের অন্য কোনো ভাষাই সেখানে পৌঁছায় না। এমন যে ভাষা তাকে জগতের অন্যান্য ভাষার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পুরোভাগে দাঁড়াতে হবে। বর্তমানের বৈজ্ঞানিক জগতে বিজ্ঞানের পরিভাষা দিয়ে তার সমৃদ্ধি তাই অত্যন্ত আবশ্যক। আমাদের সাহিত্য কোনো ক্ষুদ্র দেশের অবহেলিত সাহিত্যের সঙ্গে স্থান নিতে পারে না। তাকে তার যোগ্য স্থান বিশ্বের দরবারে অধিকার করতে হবে। বৈজ্ঞানিকের চিন্তাধারায় এই ভাষার পরিপুষ্টি তাই একান্তভাবে দরকার।
''
* লেখকের আজকের বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ২০০৫ থেকে চয়িত