বাংলা ভাষায় ধর্মচর্চা
মুফতি এনায়েতুল্লাহ | ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির দিকে দৃষ্টি দিলে তার নিপুণ দক্ষতার পরিচয় মেলে। বিশাল এই সৃষ্টির মাঝে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। ভাষাও তেমন একটি বৈচিত্র্যময় দান। পৃথিবীতে যতগুলো ভাষা রয়েছে, প্রত্যেক ভাষা তার জাতিসত্তার পরিচয় বহন করে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে সুরা আর রাহমানে ইরশাদ হয়েছে, ‘পরম করুণাময় (আল্লাহতায়ালা), তিনি তোমাদের কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন; তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আর তিনি তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন।’
প্রত্যেক মানুষের কাছে মনের ভাব প্রকাশের জন্য মাতৃভাষা অত্যন্ত প্রিয় ও সহজতর। ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের দাওয়াত তথা আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে স্পষ্ট ও বোধগম্য ভাষায় পৌঁছানোর জন্য ইসলাম মাতৃভাষাকে শুধু গুরুত্বই দেয়নি বরং মাতৃভাষাকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছে। মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক নবীকেই তার স্ব-জাতির (মাতৃ)-ভাষায় প্রেরণ করেছি, যাতে করে সে তাদের কাছে আমার (বিধান, আদেশ, আয়াত) স্পষ্ট করে বর্ণনা করতে পারে।’সুরা ইবরাহিম : ৪
কোরআনে কারিমের এই শাশ্বত আয়াত প্রমাণ করে, আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছাতে মাতৃভাষার গুরুত্ব কতখানি। নবী-রাসুলরা যদি নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মাতৃভাষায় আল্লাহর বাণী প্রচার না করে নির্দিষ্ট কোনো ভাষা চাপিয়ে দিতেন, তবে তাদের উম্মতরা হয়তো হেদায়েতের বাণী গ্রহণ করত না। এজন্য তারা অজুহাত হিসেবে ভাষা না বোঝাকে দায়ী করত।
সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে, ইসলামকে আরবি ভাষায় চর্চা করতে হবে। হ্যাঁ, ইসলামের কোনো বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা, বিষয়ের গভীরে যেতে হলে, নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাইলে আরবি ভাষা জানা আবশ্যক। কারণ, কোরআন-হাদিসের সরল অনুবাদ কিংবা দুই একটি কিতাব কিংবা তাফসির পড়া এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। আরবি ভাষা জানলে ইসলামি জ্ঞানের বিশাল রাজ্যে পদচারণার সুযোগ মিলবে, নতুন বিষয় আবিষ্কার সম্ভব হবে। তবে, আচরণীয় ইসলাম শিখতে, স্বাভাবিক ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় কোরআনের অনুবাদ, তাফসির, নবী জীবনী, ইসলামের বিধিবিধান সংবলিত লিখিত গ্রন্থ থেকে শেখার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আরব। তৎকালীন সময়ে আরবি ছিল বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত ভাষা। তাই কোরআন আরবিতে নাজিল হয়েছে। এমনকি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস ও ইসলামি শরিয়তের হুকুম-আহকাম সংবলিত গ্রন্থাদিও আরবিতে রচিত হয়। পরবর্তী সময়ে ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার হওয়ায় তা অনারবীয়দের কাছে পৌঁছে। অনারবীয়দের মধ্যে ইসলামকে সহজ ও বোধগম্য করে তুলতে তাদের নিজেদের ভাষার বিকল্প নেই। ইসলাম এতে উৎসাহ দিয়েছে। সুতরাং কেউ যদি নিজের মাতৃভাষায় ইসলাম বোঝার চেষ্টা করে, তাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। আবার কেউ যদি শরিয়তের মূল উৎস থেকে দ্বীন বুঝে তবে তা অধিকতর উত্তম। তাই সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামকে সহজভাবে উপস্থাপনের জন্য মাতৃভাষার বিকল্প নেই। এটাই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি।
আমরা জানি, বাংলাদেশে প্রথমে মৌখিকভাবে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে। ১২০৩ সালে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূত্রপাত ঘটে। তবে, ১৩৫০ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্য শাসকদের আনুকূল্য পায়নি। মূলত ইলিয়াস শাহী আমল থেকে মুসলিম শাসকরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া শুরু করেন। হুসাইন শাহী আমলে (১৪৯৩- ১৫৩৮) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। তবে সে সময়কার ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় ইসলামের প্রভাব ছিল প্রায় অনুপস্থিত। তবে, সুলতানি আমলে সোনারগাঁ, পা-ুয়া, সীতাকু- প্রভৃতি স্থান ছিল ইসলামের ব্যাপক চর্চাকেন্দ্র। এগুলোর প্রভাবও বাংলা ভাষায় পড়েছে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
মোগল আমল থেকেই বাংলা ভাষায় ইসলামের চর্চা ও মুসলিম ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সাহিত্য রচনার প্রয়াস চলে আসছে। পুঁথি সাহিত্যের যুগটাই হচ্ছে, বাংলা ভাষায় তথা জনগণের আটপৌরে ভাষায় মুসলিম ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সাহিত্যচর্চার যুগ। এতদসত্ত্বেও বাংলা ভাষায় ইসলামের পঠন-পাঠন ও চর্চা ছিল অত্যন্ত সীমিত। ব্রিটিশ আমলের প্রথম দিকে ইসলাম চর্চা ছিল দিল্লিকেন্দ্রিক তথা ফারসিনির্ভর। মধ্যভাগে ছিল কলকাতা ও দেওবন্দকেন্দ্রিক তথা উর্দুনির্ভর। ফলে তখন বাংলা ভাষায় ইসলাম চর্চা ও মুসলিম সাহিত্য সৃষ্টি খুবই অনুল্লেখযোগ্য। বিশ শতকের প্রথমার্ধে ও পাকিস্তান আন্দোলনের গোড়ার দিকে বাংলা ভাষায় ইসলামি ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনের প্রয়াস চলে। তবুও ইসলাম চর্চার মূল মাধ্যম উর্দু-ফার্সিই থেকে যায়।
পাকিস্তান আমলে ইসলাম চর্চায় উর্দুর প্রাধান্যের তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশ আমলে মাতৃভাষায় ইসলাম চর্চার ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হলেও এখন পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষার সর্বস্তরে ও সর্বমহলে মাতৃভাষার গুরুত্ব উপযুক্তভাবে স্বীকৃত হয়নি। যদিও সচেতনতা ও উদ্যোগ দিন দিন বাড়ছে। এমতাবস্থায় বাংলা ভাষায় ইসলাম চর্চা এ পর্যন্ত যা হয়েছে তা যথেষ্ট না হলেও একেবারে অল্পও নয়। বাংলায় ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে নানাবিধ বাধা-বিপত্তি ছিল। এর অন্যতম হলো বাংলা ভাষা ইসলাম চর্চার মাধ্যম কোনো কালেই ছিল না। এমনকি এককালের সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত মুসলমানরা বাংলা ভাষা, মুসলমানদের ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হতে পারে বলে বিশ্বাসই করতে পারেননি। এই মনোভাবের দিন দিন পরিবর্তন ঘটছে, কিন্তু বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা কমেনি। ফলে ইসলামি জ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্র এখানেও সীমিত। বাংলা ভাষায় মৌলিক ইসলামি চিন্তানায়ক ও প্রতিভার আবির্ভাব অত্যন্ত কম। এতসব বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও বাংলা ভাষায় ধর্মচর্চা এগিয়ে চলেছে।
আগেই বলা হয়েছে, এ উপমহাদেশে মৌখিকভাবে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটেছে। মানুষ ধর্মচর্চাও শুরু করে শ্রুতিনির্ভরভাবে। ফলে কিছু দিন পর প্রকৃত ধর্মের বাইরে গিয়ে আচার ও কুসংস্কারনির্ভর ধর্মচর্চা জায়গা করে নেয় মুসলিম সমাজে। মূলত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনা সমাজে যেভাবে বিস্তার লাভ করে, ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে তেমন প্রাতিষ্ঠানিকতা না থাকায় এমন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। কিন্তু ওই সময়টাতেও সমাজের পণ্ডিতরা হাতগুটিয়ে বসেছিলেন, এমন নয়। তখন অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নানা ধরনের সাহিত্য তৈরি হয়েছে।
১২০০-১৮০০ সাল পর্যন্ত শত শত পুঁথি ও কবিতার বই পাওয়া যায়। তবে হ্যাঁ, এর মধ্যে কোরআন-হাদিসের চর্চা অনুপস্থিত এটা বলাবাহুল্য। এই ৬০০ বছরের মধ্যে বাংলায় কোরআন-হাদিস চর্চার উপস্থিতি কেন হয়নি, সেটা এক বিরাট প্রশ্ন। যাই হোক, ১৮০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে কাজগুলো হয়েছে তাও খুব সন্তোষজনক বলা যাবে না। বাংলায় কোরআন অনুবাদের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে এই সময় পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ-পঁয়ত্রিশটা অনুবাদ হয়েছে। মৌলিক তাফসিরের সংখ্যা দশ-বারোটি। অনুবাদ-তাফসির বিশটির মতো। সে হিসেবে বলা যায়, বাংলাভাষায় কোরআন চর্চার অবস্থা তথৈবচ।
কোরআন অনুবাদের ক্ষেত্রে গিরিশ চন্দ্র সেন অভূতপূর্ব সাহস দেখিয়েছেন, এজন্য তিনি স্মরণীয়। ১৮৮১ সালে তিনি খ- খ- কোরআনের অনুবাদ প্রকাশ করেন। বই আকারে প্রকাশ করেন ১৮৮৬ সালে। ওই সময়ে কয়েকজন মুসলিম প-িতও কোরআন অনুবাদে এগিয়ে আসেন। শুরু হয় কোরআনের ওপর বিষয়ভিত্তিক কাজ। পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ পর্ব শেষে বাঙালি আলেমরা শুরু করেন বাংলা ভাষায় কোরআন তাফসির রচনার কাজ। এ ব্যাপারে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতি স্মরণ করে থাকে মুজাহেদে আজম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) কে। প্রায় সাড়ে ষোলো হাজার পৃষ্ঠায় ‘হক্কানি তাফছির’ নামে রচিত মাওলানা ফরিদপুরীর তাফসির বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক পূর্ণাঙ্গ তাফসির। যদিও তার জীবদ্দশায় পুরোটা ছাপানো সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে বাংলা ভাষায় আরও কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ তাফসির রচিত হয়। এগুলো বাংলাভাষী পাঠকের কাছে দারুণভাবে সমাদৃত।
পবিত্র কোরআন চর্চার তুলনায় বাংলা ভাষায় হাদিস চর্চার ইতিহাস কিছুটা এগিয়ে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন আমলের ফজিলতকেন্দ্রিক হাদিসগুলো তুলনামূলক বেশি চর্চা হয়। আরবি, ফারসি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাবার্থের আলোচনা করে সমাজের লোকদের ইবাদতমুখী করাই ছিল উদ্দেশ্য। এরই মধ্যে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ১৯৫৭ সালে বোখারি শরিফ অনুবাদ শুরু করেন। ১১ খণ্ডে তিনিই প্রথম বোখারি শরিফ অনুবাদ করেন। পরে মাওলানা নুর মোহাম্মদ আজমী ‘মিশকাত শরিফ’ ও মাওলানা মুহাম্মদ রিজাউল করীম ইসলামাবাদী ‘মুয়াত্তা মালিক’ অনুবাদ করেন।
কোরআন হাদিসের পাশাপাশি বাংলা ভাষায় সিরাত চর্চাও শুরু হয়। ইসলামি পরিভাষায় নবী কারিম (সা.)-এর সার্বিক জীবন চরিতকে সিরাত বলা হয়। বাংলা ভাষায় সিরাত চর্চা কবে থেকে শুরু হয়েছে তা সন-তারিখ ঠিক করে বলা অবশ্য দুরূহ ব্যাপার। বাংলা ভাষায় সিরাত চর্চার ক্ষেত্রে মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের নাম ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। পরবর্তী সময়ে নবী জীবনী বিষয়ক প্রচুর গ্রন্থ, প্রামাণ্য গ্রন্থ রচিত হয়েছে।
ইংরেজ কর্তৃক উপমহাদেশের শাসন ক্ষমতা দখলের পর মুসলমানদের ওপর নানা প্রকার দমন-নির্যাতন শুরু হয়। বৈরী মনোভাবের কারণে মুসলমানরাও ইংরেজদের অসহযোগিতা করতে থাকে। ফলে মুসলমানরা দিন দিন শিক্ষাদীক্ষা, চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়ে। মুসলমানদের একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম ফারসিও রাজকীয় মর্যাদা হারায়। পরে তারা ইংরেজি ও বাংলা ভাষার প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে পড়ে। এই সময়ে কলকাতাকেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্য নানাভাবে বিকশিত হতে থাকলেও পিছিয়ে পড়ে আলেমরা। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে প্রচুর সময় লাগে। তবে আশার কথা হলো, ধর্মচর্চা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট লেখকরা তাদের হারানো জমি অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।
স্বাধীন বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায়ও ধর্ম বিষয়ক লেখা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ হতে থাকে। বিষয়ভিত্তিক নিবন্ধ, প্রশ্নোত্তর, জীবনীর পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয়ে ইসলামি ভাবাদর্শের লেখা পাঠকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। এ কারণে এখনকার সময়ের প্রায় দৈনিক কাগজগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে, পরিকল্পনা ও যতœ করে ইসলাম বিষয়ক লেখা ছাপানো হয়। এছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ইসলামবিষয়ক রেজিস্টার্ড অনেকগুলো মাসিক পত্রিকা বের হয়। এসব মাসিক পত্রিকার কোনো কোনোটার বয়স পঞ্চাশ বছরের বেশি।
এভাবে নানা প্রচেষ্টায় বাংলা ভাষায় ধর্ম বিষয়ক পঠন-পাঠন সামগ্রীর বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম চত্বরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতি রবিউল আউয়াল মাসে পক্ষকালব্যাপী ইসলামি বইমেলা, জেলায় জেলায় বিভিন্ন সংগঠন ও ইসলামি প্রকাশনীর আয়োজনে ইসলামি পুস্তক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ব্যাপক আকারে।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলা ভাষায় ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিগত সময়ে কোরআনের অনুবাদ ও তাফসির প্রকাশের সঙ্গে সিহাহ সিত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বিভিন্ন কিতাব অনুবাদ করে। বিশাল আকারের ‘ইসলামি বিশ্বকোষ’ প্রণয়নও তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিগত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিভিন্ন পেশাদার ইসলামি প্রকাশনী সংস্থা গড়ে ওঠে। এসব প্রকাশনী দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান গবেষক ও লেখকদের বই বাংলায় অনুবাদের পাশাপাশি মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ কাজও করছে।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলাম বিষয়ক লেখক
শেয়ার করুন
মুফতি এনায়েতুল্লাহ | ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির দিকে দৃষ্টি দিলে তার নিপুণ দক্ষতার পরিচয় মেলে। বিশাল এই সৃষ্টির মাঝে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। ভাষাও তেমন একটি বৈচিত্র্যময় দান। পৃথিবীতে যতগুলো ভাষা রয়েছে, প্রত্যেক ভাষা তার জাতিসত্তার পরিচয় বহন করে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে সুরা আর রাহমানে ইরশাদ হয়েছে, ‘পরম করুণাময় (আল্লাহতায়ালা), তিনি তোমাদের কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন; তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আর তিনি তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন।’
প্রত্যেক মানুষের কাছে মনের ভাব প্রকাশের জন্য মাতৃভাষা অত্যন্ত প্রিয় ও সহজতর। ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের দাওয়াত তথা আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে স্পষ্ট ও বোধগম্য ভাষায় পৌঁছানোর জন্য ইসলাম মাতৃভাষাকে শুধু গুরুত্বই দেয়নি বরং মাতৃভাষাকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছে। মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক নবীকেই তার স্ব-জাতির (মাতৃ)-ভাষায় প্রেরণ করেছি, যাতে করে সে তাদের কাছে আমার (বিধান, আদেশ, আয়াত) স্পষ্ট করে বর্ণনা করতে পারে।’সুরা ইবরাহিম : ৪
কোরআনে কারিমের এই শাশ্বত আয়াত প্রমাণ করে, আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছাতে মাতৃভাষার গুরুত্ব কতখানি। নবী-রাসুলরা যদি নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মাতৃভাষায় আল্লাহর বাণী প্রচার না করে নির্দিষ্ট কোনো ভাষা চাপিয়ে দিতেন, তবে তাদের উম্মতরা হয়তো হেদায়েতের বাণী গ্রহণ করত না। এজন্য তারা অজুহাত হিসেবে ভাষা না বোঝাকে দায়ী করত।
সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে, ইসলামকে আরবি ভাষায় চর্চা করতে হবে। হ্যাঁ, ইসলামের কোনো বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা, বিষয়ের গভীরে যেতে হলে, নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাইলে আরবি ভাষা জানা আবশ্যক। কারণ, কোরআন-হাদিসের সরল অনুবাদ কিংবা দুই একটি কিতাব কিংবা তাফসির পড়া এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। আরবি ভাষা জানলে ইসলামি জ্ঞানের বিশাল রাজ্যে পদচারণার সুযোগ মিলবে, নতুন বিষয় আবিষ্কার সম্ভব হবে। তবে, আচরণীয় ইসলাম শিখতে, স্বাভাবিক ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় কোরআনের অনুবাদ, তাফসির, নবী জীবনী, ইসলামের বিধিবিধান সংবলিত লিখিত গ্রন্থ থেকে শেখার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আরব। তৎকালীন সময়ে আরবি ছিল বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত ভাষা। তাই কোরআন আরবিতে নাজিল হয়েছে। এমনকি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস ও ইসলামি শরিয়তের হুকুম-আহকাম সংবলিত গ্রন্থাদিও আরবিতে রচিত হয়। পরবর্তী সময়ে ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার হওয়ায় তা অনারবীয়দের কাছে পৌঁছে। অনারবীয়দের মধ্যে ইসলামকে সহজ ও বোধগম্য করে তুলতে তাদের নিজেদের ভাষার বিকল্প নেই। ইসলাম এতে উৎসাহ দিয়েছে। সুতরাং কেউ যদি নিজের মাতৃভাষায় ইসলাম বোঝার চেষ্টা করে, তাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। আবার কেউ যদি শরিয়তের মূল উৎস থেকে দ্বীন বুঝে তবে তা অধিকতর উত্তম। তাই সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামকে সহজভাবে উপস্থাপনের জন্য মাতৃভাষার বিকল্প নেই। এটাই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি।
আমরা জানি, বাংলাদেশে প্রথমে মৌখিকভাবে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে। ১২০৩ সালে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূত্রপাত ঘটে। তবে, ১৩৫০ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্য শাসকদের আনুকূল্য পায়নি। মূলত ইলিয়াস শাহী আমল থেকে মুসলিম শাসকরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া শুরু করেন। হুসাইন শাহী আমলে (১৪৯৩- ১৫৩৮) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। তবে সে সময়কার ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় ইসলামের প্রভাব ছিল প্রায় অনুপস্থিত। তবে, সুলতানি আমলে সোনারগাঁ, পা-ুয়া, সীতাকু- প্রভৃতি স্থান ছিল ইসলামের ব্যাপক চর্চাকেন্দ্র। এগুলোর প্রভাবও বাংলা ভাষায় পড়েছে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
মোগল আমল থেকেই বাংলা ভাষায় ইসলামের চর্চা ও মুসলিম ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সাহিত্য রচনার প্রয়াস চলে আসছে। পুঁথি সাহিত্যের যুগটাই হচ্ছে, বাংলা ভাষায় তথা জনগণের আটপৌরে ভাষায় মুসলিম ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সাহিত্যচর্চার যুগ। এতদসত্ত্বেও বাংলা ভাষায় ইসলামের পঠন-পাঠন ও চর্চা ছিল অত্যন্ত সীমিত। ব্রিটিশ আমলের প্রথম দিকে ইসলাম চর্চা ছিল দিল্লিকেন্দ্রিক তথা ফারসিনির্ভর। মধ্যভাগে ছিল কলকাতা ও দেওবন্দকেন্দ্রিক তথা উর্দুনির্ভর। ফলে তখন বাংলা ভাষায় ইসলাম চর্চা ও মুসলিম সাহিত্য সৃষ্টি খুবই অনুল্লেখযোগ্য। বিশ শতকের প্রথমার্ধে ও পাকিস্তান আন্দোলনের গোড়ার দিকে বাংলা ভাষায় ইসলামি ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনের প্রয়াস চলে। তবুও ইসলাম চর্চার মূল মাধ্যম উর্দু-ফার্সিই থেকে যায়।
পাকিস্তান আমলে ইসলাম চর্চায় উর্দুর প্রাধান্যের তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশ আমলে মাতৃভাষায় ইসলাম চর্চার ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হলেও এখন পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষার সর্বস্তরে ও সর্বমহলে মাতৃভাষার গুরুত্ব উপযুক্তভাবে স্বীকৃত হয়নি। যদিও সচেতনতা ও উদ্যোগ দিন দিন বাড়ছে। এমতাবস্থায় বাংলা ভাষায় ইসলাম চর্চা এ পর্যন্ত যা হয়েছে তা যথেষ্ট না হলেও একেবারে অল্পও নয়। বাংলায় ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে নানাবিধ বাধা-বিপত্তি ছিল। এর অন্যতম হলো বাংলা ভাষা ইসলাম চর্চার মাধ্যম কোনো কালেই ছিল না। এমনকি এককালের সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত মুসলমানরা বাংলা ভাষা, মুসলমানদের ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হতে পারে বলে বিশ্বাসই করতে পারেননি। এই মনোভাবের দিন দিন পরিবর্তন ঘটছে, কিন্তু বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা কমেনি। ফলে ইসলামি জ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্র এখানেও সীমিত। বাংলা ভাষায় মৌলিক ইসলামি চিন্তানায়ক ও প্রতিভার আবির্ভাব অত্যন্ত কম। এতসব বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও বাংলা ভাষায় ধর্মচর্চা এগিয়ে চলেছে।
আগেই বলা হয়েছে, এ উপমহাদেশে মৌখিকভাবে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটেছে। মানুষ ধর্মচর্চাও শুরু করে শ্রুতিনির্ভরভাবে। ফলে কিছু দিন পর প্রকৃত ধর্মের বাইরে গিয়ে আচার ও কুসংস্কারনির্ভর ধর্মচর্চা জায়গা করে নেয় মুসলিম সমাজে। মূলত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনা সমাজে যেভাবে বিস্তার লাভ করে, ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে তেমন প্রাতিষ্ঠানিকতা না থাকায় এমন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। কিন্তু ওই সময়টাতেও সমাজের পণ্ডিতরা হাতগুটিয়ে বসেছিলেন, এমন নয়। তখন অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নানা ধরনের সাহিত্য তৈরি হয়েছে।
১২০০-১৮০০ সাল পর্যন্ত শত শত পুঁথি ও কবিতার বই পাওয়া যায়। তবে হ্যাঁ, এর মধ্যে কোরআন-হাদিসের চর্চা অনুপস্থিত এটা বলাবাহুল্য। এই ৬০০ বছরের মধ্যে বাংলায় কোরআন-হাদিস চর্চার উপস্থিতি কেন হয়নি, সেটা এক বিরাট প্রশ্ন। যাই হোক, ১৮০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে কাজগুলো হয়েছে তাও খুব সন্তোষজনক বলা যাবে না। বাংলায় কোরআন অনুবাদের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে এই সময় পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ-পঁয়ত্রিশটা অনুবাদ হয়েছে। মৌলিক তাফসিরের সংখ্যা দশ-বারোটি। অনুবাদ-তাফসির বিশটির মতো। সে হিসেবে বলা যায়, বাংলাভাষায় কোরআন চর্চার অবস্থা তথৈবচ।
কোরআন অনুবাদের ক্ষেত্রে গিরিশ চন্দ্র সেন অভূতপূর্ব সাহস দেখিয়েছেন, এজন্য তিনি স্মরণীয়। ১৮৮১ সালে তিনি খ- খ- কোরআনের অনুবাদ প্রকাশ করেন। বই আকারে প্রকাশ করেন ১৮৮৬ সালে। ওই সময়ে কয়েকজন মুসলিম প-িতও কোরআন অনুবাদে এগিয়ে আসেন। শুরু হয় কোরআনের ওপর বিষয়ভিত্তিক কাজ। পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ পর্ব শেষে বাঙালি আলেমরা শুরু করেন বাংলা ভাষায় কোরআন তাফসির রচনার কাজ। এ ব্যাপারে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতি স্মরণ করে থাকে মুজাহেদে আজম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) কে। প্রায় সাড়ে ষোলো হাজার পৃষ্ঠায় ‘হক্কানি তাফছির’ নামে রচিত মাওলানা ফরিদপুরীর তাফসির বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক পূর্ণাঙ্গ তাফসির। যদিও তার জীবদ্দশায় পুরোটা ছাপানো সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে বাংলা ভাষায় আরও কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ তাফসির রচিত হয়। এগুলো বাংলাভাষী পাঠকের কাছে দারুণভাবে সমাদৃত।
পবিত্র কোরআন চর্চার তুলনায় বাংলা ভাষায় হাদিস চর্চার ইতিহাস কিছুটা এগিয়ে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন আমলের ফজিলতকেন্দ্রিক হাদিসগুলো তুলনামূলক বেশি চর্চা হয়। আরবি, ফারসি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাবার্থের আলোচনা করে সমাজের লোকদের ইবাদতমুখী করাই ছিল উদ্দেশ্য। এরই মধ্যে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ১৯৫৭ সালে বোখারি শরিফ অনুবাদ শুরু করেন। ১১ খণ্ডে তিনিই প্রথম বোখারি শরিফ অনুবাদ করেন। পরে মাওলানা নুর মোহাম্মদ আজমী ‘মিশকাত শরিফ’ ও মাওলানা মুহাম্মদ রিজাউল করীম ইসলামাবাদী ‘মুয়াত্তা মালিক’ অনুবাদ করেন।
কোরআন হাদিসের পাশাপাশি বাংলা ভাষায় সিরাত চর্চাও শুরু হয়। ইসলামি পরিভাষায় নবী কারিম (সা.)-এর সার্বিক জীবন চরিতকে সিরাত বলা হয়। বাংলা ভাষায় সিরাত চর্চা কবে থেকে শুরু হয়েছে তা সন-তারিখ ঠিক করে বলা অবশ্য দুরূহ ব্যাপার। বাংলা ভাষায় সিরাত চর্চার ক্ষেত্রে মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের নাম ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। পরবর্তী সময়ে নবী জীবনী বিষয়ক প্রচুর গ্রন্থ, প্রামাণ্য গ্রন্থ রচিত হয়েছে।
ইংরেজ কর্তৃক উপমহাদেশের শাসন ক্ষমতা দখলের পর মুসলমানদের ওপর নানা প্রকার দমন-নির্যাতন শুরু হয়। বৈরী মনোভাবের কারণে মুসলমানরাও ইংরেজদের অসহযোগিতা করতে থাকে। ফলে মুসলমানরা দিন দিন শিক্ষাদীক্ষা, চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়ে। মুসলমানদের একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম ফারসিও রাজকীয় মর্যাদা হারায়। পরে তারা ইংরেজি ও বাংলা ভাষার প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে পড়ে। এই সময়ে কলকাতাকেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্য নানাভাবে বিকশিত হতে থাকলেও পিছিয়ে পড়ে আলেমরা। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে প্রচুর সময় লাগে। তবে আশার কথা হলো, ধর্মচর্চা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট লেখকরা তাদের হারানো জমি অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।
স্বাধীন বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায়ও ধর্ম বিষয়ক লেখা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ হতে থাকে। বিষয়ভিত্তিক নিবন্ধ, প্রশ্নোত্তর, জীবনীর পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয়ে ইসলামি ভাবাদর্শের লেখা পাঠকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। এ কারণে এখনকার সময়ের প্রায় দৈনিক কাগজগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে, পরিকল্পনা ও যতœ করে ইসলাম বিষয়ক লেখা ছাপানো হয়। এছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ইসলামবিষয়ক রেজিস্টার্ড অনেকগুলো মাসিক পত্রিকা বের হয়। এসব মাসিক পত্রিকার কোনো কোনোটার বয়স পঞ্চাশ বছরের বেশি।
এভাবে নানা প্রচেষ্টায় বাংলা ভাষায় ধর্ম বিষয়ক পঠন-পাঠন সামগ্রীর বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম চত্বরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতি রবিউল আউয়াল মাসে পক্ষকালব্যাপী ইসলামি বইমেলা, জেলায় জেলায় বিভিন্ন সংগঠন ও ইসলামি প্রকাশনীর আয়োজনে ইসলামি পুস্তক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ব্যাপক আকারে।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলা ভাষায় ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিগত সময়ে কোরআনের অনুবাদ ও তাফসির প্রকাশের সঙ্গে সিহাহ সিত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বিভিন্ন কিতাব অনুবাদ করে। বিশাল আকারের ‘ইসলামি বিশ্বকোষ’ প্রণয়নও তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিগত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিভিন্ন পেশাদার ইসলামি প্রকাশনী সংস্থা গড়ে ওঠে। এসব প্রকাশনী দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান গবেষক ও লেখকদের বই বাংলায় অনুবাদের পাশাপাশি মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ কাজও করছে।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলাম বিষয়ক লেখক