চোখের দুটি তারা বাঙালি ও বাংলা ভাষা
বর্ণালী ঘোষ দস্তিদার, কলকাতা থেকে | ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
ভাষা আসলে নদীর মতো। নদী যেমন পাড় ভাঙতে ভাঙতে এগোয় কোথাও জনপদ গড়ে কোথাও ভাঙে; ভাষারও তেমনি স্বভাব নিরন্তর ভাঙাগড়া। আর তার এই নিয়ত পরিবর্তমানতার সহযাত্রী আর কেউ নয় সংশ্লিষ্ট সমাজ ও সমাজঘনিষ্ঠ মানুষ। অর্থাৎ শেষপর্যন্ত ভাষার জন্ম বলি বা ভাঙন বা রূপান্তরণ সবই হয় সময় ও সমাজের দাবিতে এবং শেষপর্যন্ত মানুষের মুখে।
ঠিক এভাবেই দ্বাদশ শতাব্দীতে পাঠানরা এদেশে আসার পর বহু তুর্কি শব্দ বাংলার শব্দভা-ারে ঢুকেছিল। মোগলরা আসার পর বাংলার ভা-ার সমৃদ্ধ হয়েছিল আররি ফারসি শব্দে। দিল্লিসহ উত্তর-পশ্চিম ভারতে একসময় সেনাছাউনিতে তৈরি হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের তুর্কি আরবি-ফারসি-মিশ্রিত লোকায়ত উর্দুভাষা। যা ছিল খুবই মধুর। কাব্য সাহিত্য সংগীত সৃজনের পক্ষে অনুকূল। বাংলা ভূখ-ে ইসলামের আগমনের পরই সমাজে সাহিত্যে মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে তৎসম তদ্ভব দেশি শব্দের পাশাপাশি অসংখ্য আরবি-ফার্সি-উর্দু শব্দ ছড়িয়ে পড়ে। আর ভাষার কথা বলি বা জাতির কথা, যত মিলন মিশ্রণ তাতে ঘটে ততই একটি জাতি বা ভাষা ঋদ্ধ হয়। প্রসারিত হয়। তার ভেতরকার শক্তি ও ব্যাপ্তি বাড়ে। আর এই মিলনের সত্যকে যদি স্বীকৃতি দিতে পারি তো দেখব জাতি বা ভাষা তার ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে বহুদূর বিস্তৃত হয়েছে যা আমরা কৃত্রিম বিশুদ্ধতা রক্ষায় যতœবান হলে হয়তো ঘটতই না।
উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক কালে ইংরেজের আগমন ইংরেজি ভাষার নিয়ত চর্চা আর ব্যবহার বাংলাভাষা ও বাঙালি জাতিকে আন্তর্জাতিক স্তরে যে আরও বেশ কয়েকধাপ এগিয়ে দিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে, বাংলা ভাষাকে সত্যিকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে পূর্ববঙ্গের ভাষা আন্দোলন (১৯৫২)। পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন হলো এত দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে উদ্ধার করা মাতৃভাষার মূল্য মর্যাদা বাঙালি কতটা রাখতে পারল। আজ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছরে তার কিঞ্চিৎ মূল্যায়নের সময় এসেছে।
আগেই বলেছি সময় আর সমাজবদলের বাঁক বেয়ে ভাষা খুব সহজ আর স্বতঃস্ফূর্তভাবেই নিজেকে বদলে ফেলে। ভাষার অবয়ব তার গড়ন দেখেও সংশ্লিষ্ট সমাজকে চিনে নিতে অসুবিধা হয় না। চর্যাপদের ভাষা, মধ্যযুগের কবিদের সৃষ্টির ভাষা, রামমোহন-বিদ্যাসাগর-বঙ্কিমচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথের ভাষার সঙ্গে যে আজকের প্রতিদিনের ব্যবহারিক ভাষার ঢের তফাৎ হবে তা বোঝার জন্য দীর্ঘদিনের সমাজবদলের প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখাই যথেষ্ট। উনিশের পর বিংশ শতাব্দী ছিল প্রথম যুগসন্ধি যখন ভাষার জগতে বিপুল এক পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছিল। নগরায়ণ, দু’দুটি বিশ্বযুদ্ধ, যন্ত্রসভ্যতাকে কেন্দ্র করে জীবনযাপনের আধুনিকতা, গ্রামীণ স্বস্তি ও প্রশান্তি থেকে আপাত বিচ্ছিন্ন মানুষের নাগরিক যন্ত্রণা, নিত্যকার ক্লান্তি রুগ্ণতা বিষাদ-অবসাদ প্রখর জীবনসংগ্রামের ক্ষয়-অবক্ষয় অনিশ্চয়তা, ছিন্নমূল হওয়ার নিঃসঙ্গতা একধরনের নতুন ভাষার জন্ম দিয়েছিল। এই সময়কার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দেশভাগের অভিশপ্ত যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের স্বাধীনতাপ্রাপ্তি (১৯৪৭)। এই সময়কার সৃষ্টির ভাষারীতির মধ্যে আছে সময়ের উত্তাপ ও অস্থিরতার চিহ্ন। তারাশঙ্কর-বিভূতি-মানিক-সমরেশ-বুদ্ধদেব-বনফুল-সুবোধ ঘোষ-জগদীশগুপ্ত-সতীনাথ-ধূর্জটিপ্রসাদ, অতীন-বরেন -শ্যামল-সাবিত্রী-কমলকুমার-আশাপূর্ণা-মহাশ্বেতা থেকে দেবেশ রায়, নবারুণ পর্যন্ত বাংলা ভাষা বহন করে এসেছে এই সময়কার কণ্ঠস্বর।
আশি এবং নব্বই দশকে সমাজ কাঠামোয় আরও একধাপ রূপান্তর ঘটল। ব্যাপক রদবদল ঘটল মানুষের চিন্তা-ভাবনায়, ব্যবহারে মূল্যবোধে। সোভিয়েত ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো তাসের ঘরের মতো চুরমার হয়ে যাওয়ার পর নৈঃসঙ্গ নৈরাজ্য অবক্ষয় বিচ্ছিন্নতার বীজ দখল করল লেখ্য ও কথ্য উভয় ভাষারই অন্তরঙ্গ জগৎ। এই সময়কার ভাষা শুধু পরাক্রমই নয় দুঃসাহসী। সমস্ত রকম পিউরিটান মূল্যবোধ রক্ষণশীলতার বিধিবিধানকে সে ভেঙে ফেলে এক লহমায়। শব্দ ব্যবহারে কোনো ট্যাবু কোনো সোশ্যাল স্টিগমার ধার ধারেন না লেখকরা। কৃত্রিমতার অভিযোগে সাধুভাষা ততদিনে পিছু হটতে হটতে ইতিহাস হয়ে গেছে। আটপৌরে গেরস্থ ঘর-দুয়োর থেকে বাছাই করা চলতি বুলিতে বিনা সাজে সেজেছে সাহিত্য-শিল্পকলা জন ও গণমাধ্যম। লোকায়ত ভাষা যার কোনো শহুরে ভূষণ নেই সেও হীনতার লজ্জা ঝেড়ে ফেলে সহজিয়া মাটির গন্ধ নিয়ে শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে কড়া নেড়েছে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক, শওকত আলী, সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, আহমদ ছফা, সুবিমল মিশ্র, নবারুণ ভট্টাচার্য্য প্রমুখের সৃষ্টিতে সেই প্রথা ও পরম্পরা ভাঙার প্রগাঢ় প্রয়াস। এদের কেউই ভাষার তথাকথিত বেঁধে দেওয়া শালীনতা শ্লীলতার গ-িকে মানেননি। ভাষাজগতে অভিজাত ও ইতরকে একাসনে বসিয়েছেন। গ্রামীণ জনজাতীয় মানুষের মুখের লোকায়ত বচন, গ্রাম্য শব্দ যার মধ্যে শহুরে পালিশ নেই, ভদ্র এবং শিষ্ট সমাজে যাকে আমরা উচ্চারণ করতে সংকোচ বোধ করি সেসব অকুলীন ভাষাগুচ্ছও অকপটে উঠে এসেছে তাদের লেখনীতে। আসলে এখানেও রূপান্তরিত সমাজেরই নির্মাণ করা ছবি। সমাজের সংস্কৃতায়নের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার সংস্কৃতায়ন ও শুদ্ধিকরণের প্রশ্ন যখনই ইতিহাসে উঠে এসেছে তখনই কিন্তু সাধারণ ও নিম্নচারী মানুষের ঘরোয়া কণ্ঠস্বর জোরালো হয়েছে। কোনোদিনই চলতি সমাজে অন্ত্যজ ভাষা মূল্য হারায়নি।
ভাষার শরীরে বিশেষ করে দুই বঙ্গের বাংলা ভাষার মৌলিক কাঠামোয় সজোরে ধাক্কা লাগল একবিংশ শতকে। একুশ শতকের মূল পরিচয় হলো এ আদতে প্রযুক্তিবিশ্ব। এযুগে হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদকে পাশ কাটিয়ে সমাজে জীবনযাত্রার নানা ধারায় সাংস্কৃতিক আবহের সর্বত্র টেকনোলজি প্রধান হয়ে রক্তমাংসের মানুষের স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ আগলে দাঁড়াল। চোখের সামনে স্পষ্ট হলো দুইমেরু বিশ্ব। পুঁজির আগ্রাসন আর মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রতিদিনের যাপনযাত্রায় শুধু প্রভাব ফেলল না লেখ্যভাষা আর মৌখিক ভাষা দুটিতেই তার লক্ষণ স্পষ্টতর হলো। বিশেষ করে গণমাধ্যম, খবরের কাগজ, টিভি কম্পিউটার ল্যাপটপের ভাষার দুনিয়া থেকে শুরু করে আমজনতার মুখের ভাষাতেও আমূল বদল এলো। আর সেই বদলে সওয়ার হয়ে অতি দ্রুত বাংলা ভাষা একটি সম্পূর্ণ রূপান্তরিত পরিকাঠামো অর্জন করল। পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম সমাজ মাধ্যমের ভাষায় ভীষণভাবে পড়ল বলিউডি সংস্কৃতির ছাপ। বিশ্বসাহিত্যের ভাষান্তরে এতদিন পাঠক সাবলীলতা প্রাঞ্জলতা খুঁজতেন। এখন এই সহজ রূপ আর ধরা পড়ল না। ভাষান্তরিত হয়ে বাংলা তার মূল স্পন্দন হারাল।
হিন্দিভাষী মানুষ বলে ‘কিঁউ কি’...বাঙালি তার নকলে ‘এর কারণ’ না বলে বলল ‘কেন কী’। হিন্দিতে যেখানে বলা হয় ‘ইতনা টাইম মেরি পাস মে নেহি হ্যায়’...বাংলায় তার অক্ষম আর আড়ষ্ট অনুবাদ করে বলা হলো ‘এত সময় আমার কাছে নেই’। সহজ কথ্য বাংলায় আমরা এরকম শব্দ প্রয়োগ সাধারণত করি না। প্রত্যেক ভাষারই কোনো না কোনো ভঙ্গিগত নিজস্বতা থাকে। আমরা সাধারণত বলি ‘অত সময় আমার নেই’। কিন্তু ইদানীং এই ভাষাকাঠামোর ওপর এসে পড়েছে উত্তর-ভারতীয় বা বলিউড হিন্দির অপ্রতিরোধ্য প্রভাব। বলিউড ফিল্মের ঝাঁঝালো ডায়লগ ‘কান খোলকে শুন লো’। বাংলা ভাষার নিজস্বতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এর অবিকল তর্জমা হলো বাংলায় ‘কান খুলে শুনে রাখো’... ইত্যাদি।
বিশ্বায়নের কল্যাণে শুধু বাংলাভাষা কেন গোটা ভাষাচর্চারই অবনতি ঘটেছে। গোলোকায়নের দৌলতে এখন গোটা পৃথিবী অন্তর্জালের মুঠোয় বন্দি। টেকনোলজি-বোঝাই একটি স্মার্টফোন এক মুহূর্তে আপনাকে নিয়ে গিয়ে ফেলতে পারে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত থেকে মাদাগাস্কারের জনবিরল গ্রামে। এই প্রযৌক্তিক মাধ্যমের প্রধান ভাষা ইংরেজি। কিন্তু সে কোন ইংরেজি? বিচিত্র তার সিনট্যাক্স। চমকপ্রদ অ্যাব্রিভিয়েশন। ব্যাকরণের বালাই নেই। তবু এই ইংরেজির আভিজাত্যের পাশে বাংলার গায়ে কেমন দারিদ্র্য আর মালিন্যের ছাপ। ইংরেজি জানা না থাকলে প্রবেশাধিকার নেই চাকরির বাজারেও। ফলত অভিভাবকরাও সন্তানদের তেমন উৎসাহিত করেন না বাংলা চর্চায়। বাংলা ভাষার গবেষণাগারে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে বড়োই অন্ধকার। তার থেকে আলোক উৎসারিত হতে পারত যদি মাতৃভাষাপ্রেমিক নবীন প্রজন্ম বাংলাকে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার সৌষ্ঠবে লালন করত অন্তরের তাগিদে।
সমাজবদলের স্বাভাবিক নিয়মে ভাষার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। আমরা ভাষার স্বচ্ছন্দ স্রোতপ্রবাহকে কোনো আরোপিত রক্ষণশীলতা দিয়ে রুখে দিতে পারি না। বঙ্গদেশ-বাঙালিজাতি ও বাংলাভাষার মধ্যে এমন কিছু স্থিতিস্থাপকতা আছে যে তা সহজাত ঔদার্যের গুণেই যেমন সংস্কৃত তৎসম তদ্ভবকে আপন করেছে তেমনি পাঠান মোগলের তুর্কি আরবি ফারসি উর্দু ইংরেজি ফরাসি পর্তুগিজ, সব ভাষার বিচিত্র শব্দাবলিকে সমাদরে ঠাঁই দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয় তখনই যখন এক ভাষার আধিপত্যবাদ আর এক ভাষার ওপর আছড়ে পড়ে তার নিজস্ব প্রাণস্পন্দন আর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যকে লুট করে নেয়। আরও চিন্তা হয় যখন মাতৃভাষাকে মায়ের মর্যাদা না দিয়ে তাকে দিয়ে দাসীবৃত্তি করানো হয়। তাকে গভীর স্নেহে আদরে সম্ভ্রমে বুকে জড়িয়ে রক্ষা না করে ধর্ষক ও লুণ্ঠকের হাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন সত্যিই মনে হয় এখন থেকে সত্তর বছর আগে বাংলাভাষাকে লুটতরাজের হাত থেকে বাঁচাতে পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন যে রফিক বরকত সালাম আজাদ তারা কি আজ চোখের সামনে বাংলা ভাষার অসম্মান দেখলে ফের আত্মঘাতী হতেন?
বাংলাদেশের অধিবাসীদের সুবিধা আছে। রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানেই তারা বাংলা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তার নানা গোত্রের উদ্ভাবন উন্নয়ন করতে পারেন। কিন্তু বিপুল ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে এই কাজ যে রীতিমতো কঠিন তা আমরা যারা বাংলাভাষার পড়ুয়া এবং সামান্য অক্ষরকর্মী তারা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারি। কর্র্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রের প্রমত্ত ক্ষমতায়ন ও বলদর্পী শক্তির কাছে ভারতের আঞ্চলিক ভাষা বাংলা নিতান্তই ক্ষীণতনু। যদিও তার ইতিহাস হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন। যদিও মাইকেল-রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ-সমরেশ-আখতারুজ্জামান আমাদের গৌরবময় পরম্পরা তবুও ভারতবর্ষের রাষ্ট্রশক্তির কাছে আপাত ক্ষুদ্র বাংলা ভাষার লড়াইটা অসম লড়াই তা অস্বীকার করার জো নেই।
তবু ফি-বছর বইমেলা হয়। অসংখ্য পত্রপত্রিকা বই প্রতিমুহূর্তে আলোকিত আর সরগরম করে রাখে কলেজস্ট্রিট বইপাড়াকে। গত দু’বছর কভিড ও লকডাউনে মস্ত ক্ষতি হয়ে গেছে বইপাড়ার সঙ্গে যুক্ত অজস্র ছোটখাটো প্রকাশক, ক্ষুদে অক্ষরকর্মী, বাঁধাইয়ের কারিগর, প্রচ্ছদশিল্পী প্রমুখের। তবু বারবার ভস্মশয্যার মধ্য থেকে আগুনপাখির মতোই যেন জেগে ওঠে বাংলাদেশের ‘চোখের দুটি তারা’ বাঙালি ও বাংলাভাষা।
লেখক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অধ্যাপক, লেখক ও সংগীতশিল্পী
শেয়ার করুন
বর্ণালী ঘোষ দস্তিদার, কলকাতা থেকে | ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

ভাষা আসলে নদীর মতো। নদী যেমন পাড় ভাঙতে ভাঙতে এগোয় কোথাও জনপদ গড়ে কোথাও ভাঙে; ভাষারও তেমনি স্বভাব নিরন্তর ভাঙাগড়া। আর তার এই নিয়ত পরিবর্তমানতার সহযাত্রী আর কেউ নয় সংশ্লিষ্ট সমাজ ও সমাজঘনিষ্ঠ মানুষ। অর্থাৎ শেষপর্যন্ত ভাষার জন্ম বলি বা ভাঙন বা রূপান্তরণ সবই হয় সময় ও সমাজের দাবিতে এবং শেষপর্যন্ত মানুষের মুখে।
ঠিক এভাবেই দ্বাদশ শতাব্দীতে পাঠানরা এদেশে আসার পর বহু তুর্কি শব্দ বাংলার শব্দভা-ারে ঢুকেছিল। মোগলরা আসার পর বাংলার ভা-ার সমৃদ্ধ হয়েছিল আররি ফারসি শব্দে। দিল্লিসহ উত্তর-পশ্চিম ভারতে একসময় সেনাছাউনিতে তৈরি হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের তুর্কি আরবি-ফারসি-মিশ্রিত লোকায়ত উর্দুভাষা। যা ছিল খুবই মধুর। কাব্য সাহিত্য সংগীত সৃজনের পক্ষে অনুকূল। বাংলা ভূখ-ে ইসলামের আগমনের পরই সমাজে সাহিত্যে মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে তৎসম তদ্ভব দেশি শব্দের পাশাপাশি অসংখ্য আরবি-ফার্সি-উর্দু শব্দ ছড়িয়ে পড়ে। আর ভাষার কথা বলি বা জাতির কথা, যত মিলন মিশ্রণ তাতে ঘটে ততই একটি জাতি বা ভাষা ঋদ্ধ হয়। প্রসারিত হয়। তার ভেতরকার শক্তি ও ব্যাপ্তি বাড়ে। আর এই মিলনের সত্যকে যদি স্বীকৃতি দিতে পারি তো দেখব জাতি বা ভাষা তার ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে বহুদূর বিস্তৃত হয়েছে যা আমরা কৃত্রিম বিশুদ্ধতা রক্ষায় যতœবান হলে হয়তো ঘটতই না।
উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক কালে ইংরেজের আগমন ইংরেজি ভাষার নিয়ত চর্চা আর ব্যবহার বাংলাভাষা ও বাঙালি জাতিকে আন্তর্জাতিক স্তরে যে আরও বেশ কয়েকধাপ এগিয়ে দিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে, বাংলা ভাষাকে সত্যিকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে পূর্ববঙ্গের ভাষা আন্দোলন (১৯৫২)। পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন হলো এত দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে উদ্ধার করা মাতৃভাষার মূল্য মর্যাদা বাঙালি কতটা রাখতে পারল। আজ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছরে তার কিঞ্চিৎ মূল্যায়নের সময় এসেছে।
আগেই বলেছি সময় আর সমাজবদলের বাঁক বেয়ে ভাষা খুব সহজ আর স্বতঃস্ফূর্তভাবেই নিজেকে বদলে ফেলে। ভাষার অবয়ব তার গড়ন দেখেও সংশ্লিষ্ট সমাজকে চিনে নিতে অসুবিধা হয় না। চর্যাপদের ভাষা, মধ্যযুগের কবিদের সৃষ্টির ভাষা, রামমোহন-বিদ্যাসাগর-বঙ্কিমচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথের ভাষার সঙ্গে যে আজকের প্রতিদিনের ব্যবহারিক ভাষার ঢের তফাৎ হবে তা বোঝার জন্য দীর্ঘদিনের সমাজবদলের প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখাই যথেষ্ট। উনিশের পর বিংশ শতাব্দী ছিল প্রথম যুগসন্ধি যখন ভাষার জগতে বিপুল এক পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছিল। নগরায়ণ, দু’দুটি বিশ্বযুদ্ধ, যন্ত্রসভ্যতাকে কেন্দ্র করে জীবনযাপনের আধুনিকতা, গ্রামীণ স্বস্তি ও প্রশান্তি থেকে আপাত বিচ্ছিন্ন মানুষের নাগরিক যন্ত্রণা, নিত্যকার ক্লান্তি রুগ্ণতা বিষাদ-অবসাদ প্রখর জীবনসংগ্রামের ক্ষয়-অবক্ষয় অনিশ্চয়তা, ছিন্নমূল হওয়ার নিঃসঙ্গতা একধরনের নতুন ভাষার জন্ম দিয়েছিল। এই সময়কার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দেশভাগের অভিশপ্ত যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের স্বাধীনতাপ্রাপ্তি (১৯৪৭)। এই সময়কার সৃষ্টির ভাষারীতির মধ্যে আছে সময়ের উত্তাপ ও অস্থিরতার চিহ্ন। তারাশঙ্কর-বিভূতি-মানিক-সমরেশ-বুদ্ধদেব-বনফুল-সুবোধ ঘোষ-জগদীশগুপ্ত-সতীনাথ-ধূর্জটিপ্রসাদ, অতীন-বরেন -শ্যামল-সাবিত্রী-কমলকুমার-আশাপূর্ণা-মহাশ্বেতা থেকে দেবেশ রায়, নবারুণ পর্যন্ত বাংলা ভাষা বহন করে এসেছে এই সময়কার কণ্ঠস্বর।
আশি এবং নব্বই দশকে সমাজ কাঠামোয় আরও একধাপ রূপান্তর ঘটল। ব্যাপক রদবদল ঘটল মানুষের চিন্তা-ভাবনায়, ব্যবহারে মূল্যবোধে। সোভিয়েত ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো তাসের ঘরের মতো চুরমার হয়ে যাওয়ার পর নৈঃসঙ্গ নৈরাজ্য অবক্ষয় বিচ্ছিন্নতার বীজ দখল করল লেখ্য ও কথ্য উভয় ভাষারই অন্তরঙ্গ জগৎ। এই সময়কার ভাষা শুধু পরাক্রমই নয় দুঃসাহসী। সমস্ত রকম পিউরিটান মূল্যবোধ রক্ষণশীলতার বিধিবিধানকে সে ভেঙে ফেলে এক লহমায়। শব্দ ব্যবহারে কোনো ট্যাবু কোনো সোশ্যাল স্টিগমার ধার ধারেন না লেখকরা। কৃত্রিমতার অভিযোগে সাধুভাষা ততদিনে পিছু হটতে হটতে ইতিহাস হয়ে গেছে। আটপৌরে গেরস্থ ঘর-দুয়োর থেকে বাছাই করা চলতি বুলিতে বিনা সাজে সেজেছে সাহিত্য-শিল্পকলা জন ও গণমাধ্যম। লোকায়ত ভাষা যার কোনো শহুরে ভূষণ নেই সেও হীনতার লজ্জা ঝেড়ে ফেলে সহজিয়া মাটির গন্ধ নিয়ে শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে কড়া নেড়েছে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক, শওকত আলী, সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, আহমদ ছফা, সুবিমল মিশ্র, নবারুণ ভট্টাচার্য্য প্রমুখের সৃষ্টিতে সেই প্রথা ও পরম্পরা ভাঙার প্রগাঢ় প্রয়াস। এদের কেউই ভাষার তথাকথিত বেঁধে দেওয়া শালীনতা শ্লীলতার গ-িকে মানেননি। ভাষাজগতে অভিজাত ও ইতরকে একাসনে বসিয়েছেন। গ্রামীণ জনজাতীয় মানুষের মুখের লোকায়ত বচন, গ্রাম্য শব্দ যার মধ্যে শহুরে পালিশ নেই, ভদ্র এবং শিষ্ট সমাজে যাকে আমরা উচ্চারণ করতে সংকোচ বোধ করি সেসব অকুলীন ভাষাগুচ্ছও অকপটে উঠে এসেছে তাদের লেখনীতে। আসলে এখানেও রূপান্তরিত সমাজেরই নির্মাণ করা ছবি। সমাজের সংস্কৃতায়নের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার সংস্কৃতায়ন ও শুদ্ধিকরণের প্রশ্ন যখনই ইতিহাসে উঠে এসেছে তখনই কিন্তু সাধারণ ও নিম্নচারী মানুষের ঘরোয়া কণ্ঠস্বর জোরালো হয়েছে। কোনোদিনই চলতি সমাজে অন্ত্যজ ভাষা মূল্য হারায়নি।
ভাষার শরীরে বিশেষ করে দুই বঙ্গের বাংলা ভাষার মৌলিক কাঠামোয় সজোরে ধাক্কা লাগল একবিংশ শতকে। একুশ শতকের মূল পরিচয় হলো এ আদতে প্রযুক্তিবিশ্ব। এযুগে হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদকে পাশ কাটিয়ে সমাজে জীবনযাত্রার নানা ধারায় সাংস্কৃতিক আবহের সর্বত্র টেকনোলজি প্রধান হয়ে রক্তমাংসের মানুষের স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ আগলে দাঁড়াল। চোখের সামনে স্পষ্ট হলো দুইমেরু বিশ্ব। পুঁজির আগ্রাসন আর মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রতিদিনের যাপনযাত্রায় শুধু প্রভাব ফেলল না লেখ্যভাষা আর মৌখিক ভাষা দুটিতেই তার লক্ষণ স্পষ্টতর হলো। বিশেষ করে গণমাধ্যম, খবরের কাগজ, টিভি কম্পিউটার ল্যাপটপের ভাষার দুনিয়া থেকে শুরু করে আমজনতার মুখের ভাষাতেও আমূল বদল এলো। আর সেই বদলে সওয়ার হয়ে অতি দ্রুত বাংলা ভাষা একটি সম্পূর্ণ রূপান্তরিত পরিকাঠামো অর্জন করল। পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম সমাজ মাধ্যমের ভাষায় ভীষণভাবে পড়ল বলিউডি সংস্কৃতির ছাপ। বিশ্বসাহিত্যের ভাষান্তরে এতদিন পাঠক সাবলীলতা প্রাঞ্জলতা খুঁজতেন। এখন এই সহজ রূপ আর ধরা পড়ল না। ভাষান্তরিত হয়ে বাংলা তার মূল স্পন্দন হারাল।
হিন্দিভাষী মানুষ বলে ‘কিঁউ কি’...বাঙালি তার নকলে ‘এর কারণ’ না বলে বলল ‘কেন কী’। হিন্দিতে যেখানে বলা হয় ‘ইতনা টাইম মেরি পাস মে নেহি হ্যায়’...বাংলায় তার অক্ষম আর আড়ষ্ট অনুবাদ করে বলা হলো ‘এত সময় আমার কাছে নেই’। সহজ কথ্য বাংলায় আমরা এরকম শব্দ প্রয়োগ সাধারণত করি না। প্রত্যেক ভাষারই কোনো না কোনো ভঙ্গিগত নিজস্বতা থাকে। আমরা সাধারণত বলি ‘অত সময় আমার নেই’। কিন্তু ইদানীং এই ভাষাকাঠামোর ওপর এসে পড়েছে উত্তর-ভারতীয় বা বলিউড হিন্দির অপ্রতিরোধ্য প্রভাব। বলিউড ফিল্মের ঝাঁঝালো ডায়লগ ‘কান খোলকে শুন লো’। বাংলা ভাষার নিজস্বতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এর অবিকল তর্জমা হলো বাংলায় ‘কান খুলে শুনে রাখো’... ইত্যাদি।
বিশ্বায়নের কল্যাণে শুধু বাংলাভাষা কেন গোটা ভাষাচর্চারই অবনতি ঘটেছে। গোলোকায়নের দৌলতে এখন গোটা পৃথিবী অন্তর্জালের মুঠোয় বন্দি। টেকনোলজি-বোঝাই একটি স্মার্টফোন এক মুহূর্তে আপনাকে নিয়ে গিয়ে ফেলতে পারে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত থেকে মাদাগাস্কারের জনবিরল গ্রামে। এই প্রযৌক্তিক মাধ্যমের প্রধান ভাষা ইংরেজি। কিন্তু সে কোন ইংরেজি? বিচিত্র তার সিনট্যাক্স। চমকপ্রদ অ্যাব্রিভিয়েশন। ব্যাকরণের বালাই নেই। তবু এই ইংরেজির আভিজাত্যের পাশে বাংলার গায়ে কেমন দারিদ্র্য আর মালিন্যের ছাপ। ইংরেজি জানা না থাকলে প্রবেশাধিকার নেই চাকরির বাজারেও। ফলত অভিভাবকরাও সন্তানদের তেমন উৎসাহিত করেন না বাংলা চর্চায়। বাংলা ভাষার গবেষণাগারে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে বড়োই অন্ধকার। তার থেকে আলোক উৎসারিত হতে পারত যদি মাতৃভাষাপ্রেমিক নবীন প্রজন্ম বাংলাকে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার সৌষ্ঠবে লালন করত অন্তরের তাগিদে।
সমাজবদলের স্বাভাবিক নিয়মে ভাষার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। আমরা ভাষার স্বচ্ছন্দ স্রোতপ্রবাহকে কোনো আরোপিত রক্ষণশীলতা দিয়ে রুখে দিতে পারি না। বঙ্গদেশ-বাঙালিজাতি ও বাংলাভাষার মধ্যে এমন কিছু স্থিতিস্থাপকতা আছে যে তা সহজাত ঔদার্যের গুণেই যেমন সংস্কৃত তৎসম তদ্ভবকে আপন করেছে তেমনি পাঠান মোগলের তুর্কি আরবি ফারসি উর্দু ইংরেজি ফরাসি পর্তুগিজ, সব ভাষার বিচিত্র শব্দাবলিকে সমাদরে ঠাঁই দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয় তখনই যখন এক ভাষার আধিপত্যবাদ আর এক ভাষার ওপর আছড়ে পড়ে তার নিজস্ব প্রাণস্পন্দন আর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যকে লুট করে নেয়। আরও চিন্তা হয় যখন মাতৃভাষাকে মায়ের মর্যাদা না দিয়ে তাকে দিয়ে দাসীবৃত্তি করানো হয়। তাকে গভীর স্নেহে আদরে সম্ভ্রমে বুকে জড়িয়ে রক্ষা না করে ধর্ষক ও লুণ্ঠকের হাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন সত্যিই মনে হয় এখন থেকে সত্তর বছর আগে বাংলাভাষাকে লুটতরাজের হাত থেকে বাঁচাতে পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন যে রফিক বরকত সালাম আজাদ তারা কি আজ চোখের সামনে বাংলা ভাষার অসম্মান দেখলে ফের আত্মঘাতী হতেন?
বাংলাদেশের অধিবাসীদের সুবিধা আছে। রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানেই তারা বাংলা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তার নানা গোত্রের উদ্ভাবন উন্নয়ন করতে পারেন। কিন্তু বিপুল ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে এই কাজ যে রীতিমতো কঠিন তা আমরা যারা বাংলাভাষার পড়ুয়া এবং সামান্য অক্ষরকর্মী তারা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারি। কর্র্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রের প্রমত্ত ক্ষমতায়ন ও বলদর্পী শক্তির কাছে ভারতের আঞ্চলিক ভাষা বাংলা নিতান্তই ক্ষীণতনু। যদিও তার ইতিহাস হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন। যদিও মাইকেল-রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ-সমরেশ-আখতারুজ্জামান আমাদের গৌরবময় পরম্পরা তবুও ভারতবর্ষের রাষ্ট্রশক্তির কাছে আপাত ক্ষুদ্র বাংলা ভাষার লড়াইটা অসম লড়াই তা অস্বীকার করার জো নেই।
তবু ফি-বছর বইমেলা হয়। অসংখ্য পত্রপত্রিকা বই প্রতিমুহূর্তে আলোকিত আর সরগরম করে রাখে কলেজস্ট্রিট বইপাড়াকে। গত দু’বছর কভিড ও লকডাউনে মস্ত ক্ষতি হয়ে গেছে বইপাড়ার সঙ্গে যুক্ত অজস্র ছোটখাটো প্রকাশক, ক্ষুদে অক্ষরকর্মী, বাঁধাইয়ের কারিগর, প্রচ্ছদশিল্পী প্রমুখের। তবু বারবার ভস্মশয্যার মধ্য থেকে আগুনপাখির মতোই যেন জেগে ওঠে বাংলাদেশের ‘চোখের দুটি তারা’ বাঙালি ও বাংলাভাষা।
লেখক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অধ্যাপক, লেখক ও সংগীতশিল্পী