
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ২৭তম বইমেলায় কিশোর লেখক নাজমুল হাসানের‘তনু ও লিলিপুট’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে বাংলানামা।
সোমবার (৬ মার্চ ) বিকেল ৫টায় ২৭তম উলিপুর বইমেলায় বিজয় মঞ্চে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন উলিপুর মহারানী স্বর্ণময়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম সরদার। লেখক নাজমুল হাসান উলিপুর মহারানী স্বর্ণময়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মোড়ক উন্মোচনে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক স.ম আল মামুন সবুজ, উলিপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা উম্মে হাবীবা পলি, সাংবাদিক আসলাম উদ্দিন, সাজাদুল ইসলাম, অক্সফোর্ড পাবলিক স্কুলের পরিচালক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাংস্কৃতিক কর্মী মাসুম করিম, ফ্রেন্ডস ফেয়ারের স্থায়ী কমিটির সদস্য জুলফিকার আলী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, নাজমুল হাসানের লেখালেখি শুরু একদম ছোটবেলায়। এরই মধ্যে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫টি। সব বইগুলো শিশুকিশোর পাঠক মহলে বেশ সমাদৃত হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেছেন, পঁচাত্তরের পর ছিয়ানব্বই পর্যন্ত যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন তারা বাঙালির ইতিহাসকে উল্টে দিতে চেয়েছিলেন।
শুক্রবার (১৯ মে) রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে 'ফিরে দেখা ১৯৭১ এর চিঠি ও কথা' শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বইটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন ড. এ কে এম এ কাদের, অ্যাডভোকেট মো. সুলতান মাহমুদ এবং ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ।
বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, এমন একটি আলোচনায় আজ আমরা মিলিত হয়েছি যে আলোচনার কোনো শেষ নেই। আজকের মোড়ক উন্মোচিত হওয়া বইটি শুধু বই নয়, এটি একটি সংগ্রহ। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন ক্যাম্পে থেকে যে চিঠি লিখেছেন এই বইটিতে সেসব তুলে ধরা হয়েছে। এই বই ইতিহাসের কথা বলে, একাত্তরে আমাদের ইচ্ছা, কষ্ট, দাবি আদায় ও অবস্থানের কথা বলে।
তিনি বলেন, বইটি যখন পড়ছিলাম তখন আমি ফিরে গিয়েছিলাম একাত্তর সালে। সে সময় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের ছাত্র ছিলাম। সেখান থেকে ৮ মার্চ গ্রামে চলে যাই। এরপর থেকে আমাদের ইতিহাস এলো, স্বাধীনতার ইতিহাস। স্বাধীনতার যুদ্ধে জয়লাভ করে ডিসেম্বরে আবার ঢাকায় ফিরলাম। ১০ জানুয়ারি আবার বঙ্গবন্ধু ফিরলেন এবং বাংলাদেশ তার পূর্ণ স্বাধীনতায় ফিরল। তারপর থেকে যার যার কাজ আমরা শেষ করে বিভিন্ন পেশায় চলে গেলাম।
তিনি আরও বলেন, আমরা কী সেই সময় ভেবেছিলাম মানুষের মুক্তির কথা, তাদের বেঁচে থাকার কথা– কিন্তু তার কতটুকু আমরা করতে পেরেছি? সেই কথাই যদি জিজ্ঞাস করি তার কোনো ভালো উত্তর আমরা পাব না। পঁচাত্তরের পর ছিয়ানব্বই পর্যন্ত যারা ছিলেন তারা বাঙালির ইতিহাসকে উল্টে দিতে চেয়েছিলেন, চেষ্টা করেছিলেন। তারপর আবার সময় এসেছে, তারপর অসময়, তারপর আবার সময়। এর ভেতরেই আমরা এগিয়ে চলেছি। কিন্তু সেই যে স্বাধীনতার কথা, যেই কথায় বিশ্বাস করে সাধারণ মানুষ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে আমরা যারা অংশগ্রহণ করেছিলাম, আমরা যদি আজ প্রশ্ন করি– আমরা কি সব পেয়েছি? দুঃখের সঙ্গে বলছি, কিছু পেয়েছি সব পাইনি।
মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, যেটুকু পেয়েছি তা গ্রহণ করে তার মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আগামীতে সব অর্জন করতে হবে আমাদের। আজকের উন্মোচিত বইটি পড়লে অনেক ইতিহাসের কথা জানা যাবে। অনেক কিছুই আমরা জানতে ও বুঝতে পারব, সর্বোপরি মানুষের কথা, আমাদের দেশের কথা ও দেশকে কীভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবো সে সম্পর্কে ভাবা যাবে।
উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই দেশটির সেবা করে দেশটির উন্নয়ন করতে পারে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেটিই হবে আমাদের চেষ্টা ও উদ্দেশ্য।
মোড়ক উন্মোচনের সময় ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনা মাজেদা বেগম, বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনা জোগমায়া মালো এবং যুদ্ধশিশু সামসুন নাহার।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক (অব.) ড. এ কে এম এ কাদের অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. সুলতান মাহমুদ, ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ প্রমুখ।
বাংলা নববর্ষে কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদের নতুন উপন্যাস 'বুনো ওল' প্রকাশ করছে প্রকাশনা ও বিক্রয় সংস্থা বাতিঘর।
বই প্রকাশ উপলক্ষে পহেলা ও দোসরা বৈশাখ যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ এপ্রিল দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বুক সাইনিং ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকার বাংলা মোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে বাতিঘরের বিক্রয় কেন্দ্রে পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে প্রকাশনা সংস্থাটি।
অনুষ্ঠানে লেখকের অটোগ্রাফসহ বইটি সংগ্রহ করা যাবে বিশেষ কমিশনে। সঙ্গে থাকবে আড্ডা ও কথোপকথনের আসর।'বুনো ওল' মাহবুব মোর্শেদের পঞ্চম উপন্যাস। সমকালীন জীবনের বিচিত্র জটিলতা নিয়ে ঘনীভূত হয়েছে এ উপন্যাসের গল্প।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদর্শ থেকে প্রকাশিত হয়েছে মাহবুব মোর্শেদের থ্রিলার উপন্যাস 'মিনোল্টা ম্যাক্সাম ৭০০০'।
বরেণ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিক হায়দার আলীর বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সংবলিত গ্রন্থের ‘আমার অনুসন্ধান’প্রথম খণ্ড পাঠ উন্মোচিত হয়েছে। শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোর মিলনায়তনে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন বসুন্ধরা গ্রুপ ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।
প্রধান অতিথি সায়েম সোবহান আনভীর তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, হায়দার আলী আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত একজন তুখোড় অনুসন্ধানী সাংবাদিক। তিনি কালের কণ্ঠে একের পর এক সাড়া জাগানো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন। আমরা সবসময় হয়দার আলীর দুর্নীতি, অনিয়ম, অবব্যস্থাপনা নিয়ে করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পক্ষে ছিলাম, আছি এবং ভবিষতেও থাকবো। বইটি তাঁকে উৎসর্গ করায় তিনি লেখককে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এর আগে তিনি কেক কেটে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন এবং বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, প্রায় ১৪ বছর ধরে হায়দার আলী দারুণ সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে চলেছে। ‘বিরল ভালোবাসা’ শিরোনামে তার দেশকাঁপানো মানবিক প্রতিবেদনটির কথা আলাদা করে বলতেই হয়। কেননা, ওই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে হায়দার আলী সাংবাদিকতার অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের দাসত্বের জীবন নিয়ে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানের মতো দুঃসাহসিক কাজও করেছেন হায়দার, যা নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের উৎসাহিত করবে।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে হায়দার আলী বলেন, আমার সাংবাদিকতার যৌবন পার করেছি কালের কণ্ঠে। পত্রিকাটিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ও সহযোগিতা পেয়েছি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে। এই দুজন মানুষের সহযোগিতা, উৎসাহ, ভালোবাসা না পেলে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা সম্ভব হতো না। আমি উনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ সম্পাদক শাহেদ মোহাম্মদ আলী, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরডটকম সম্পাদক জুয়েল মাজাহার, ডেইলি সানের নির্বাহী সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনলাইন ইনচার্জ শামসুল হক রাসেল, নির্বাহী সম্পাদক আবু তাহের, কালের কণ্ঠের সিটি এডিটর কাজী হাফিজ, নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের ডেপুটি সিএনই আশিকুর রহমান শ্রাবণ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিজনেস এডিটর রুহুল আমিন রাসেল, চিফ রিপোর্টার মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।
হায়দার আলী বর্তমানে কালের কণ্ঠ’র উপ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০১ সালে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’য় নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। কাজ করেছেন দৈনিক সমকালেও। তবে পেশাগত জীবনের দীর্ঘ সময় কাটছে দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায়। ২০০৯ সালে নির্মাণপর্বেই যুক্ত হন পত্রিকাটির সঙ্গে। স্টাফ রিপোর্টার থেকে সিনিয়র রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি হয়ে বর্তমানে তিনি পত্রিকাটির উপ-সম্পাদক। একইসঙ্গে তিনি দৈনিকটির দুর্নীতি বিরোধী অনুসন্ধানী সেলের প্রধান এবং এর পাঠক সংগঠন শুভসংঘ-এর উপদেষ্টা।
জট খোলা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেন ইউনেস্কো-বাংলাদেশ জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দাসত্বের জীবন নিয়ে আলোচিত আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান করে পান মালয়েশীয় প্রেস ইনস্টিটিউটের বিশেষ পুরস্কার।
‘আমার অনুসন্ধান’ বইটিতে পাঠকরা পাবেন এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকের দুর্দান্ত সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। যা পড়ে দেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা নিজেদেরকে আরো সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে পরবেন। সেই সঙ্গে এই বইটি নতুন প্রজন্মকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা শেখাতে ও চর্চা করতে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করবে।
‘আমার অনুসন্ধান’ বইতে পাঠকরা পাবেন জুলুমবাজ-অর্থলোভী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আমলা, ব্যাংক লুটেরা, প্রতারক, সন্ত্রাসী, গডফাদার, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, এমনকি এমপি-মন্ত্রীদের অপকর্ম নিয়ে একের পর এক দুঃসাহসিক সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।মানবিক সাংবাদিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত হায়দার আলীর সাড়া জাগানো 'বিরল ভালোবাসা’ প্রতিবেদনও রয়েছে এই গ্রন্থে। রাজপথেই এক নাটকীয় ঘটনার সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে হায়দার আলী দারুণ হৃদয়স্পর্শী এই প্রতিবেদনটি করেন। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভিখারি রমিজা পান নতুন জীবনের সন্ধান আর রিপোর্টার হায়দার আলী পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বিরল পুরস্কার, স্বীকৃতি আর একটি একান্ত সাক্ষাৎকার।
হায়দার আলী ১৯৭৬ সালের ২৩ মে ঢাকার শ্যামলীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রয়াত সামসুদ্দিন মিয়া, মা সালমা বেগম।
আমিনুল মোহায়মেন গবেষণামূলক লেখালেখির পাশাপাশি উপন্যাসও রচনা করেছেন। সম্প্রতি তার ‘অপরাহ্ণ’ উপন্যাস পড়েছি। বইটি অবশ্য প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালে। সাদামাটা একটি কাহিনির ভেতর আমিনুল মোহায়মেন চলমান সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটকে যুক্ত করেছেন।
উপন্যাসের মূল চরিত্র ইশতিয়াক। সঙ্গে আছে তার স্ত্রী ইলা। তাদের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে কাজ করা ইশতিয়াক আর ইলার সংসার আর দশটি পরিবারের মতোই। নারীর গার্হস্থ্য কাজ আর ইশতিয়াকের বাহ্যিক শ্রম মিলিয়ে উপন্যাসের শুরুর দিকে কোনো জটিলতার আভাস পাওয়া যায় না।
তবে কাহিনি যত আগাতে থাকে, পাঠক চলমান বিভিন্ন সামাজিক সংকটের দেখা পায়। শহর ছেড়ে উপন্যাস চলে যায় গ্রামে। গ্রামীণ পরিবেশ, সেখানকার মানুষের জীবন ও দর্শনের সংগ্রাম ফুটিয়ে তোলা হয়। আর এর ভেতরেই আবির্ভূত হয় পারু নামে এক নারীর। ইশতিয়াকের সঙ্গে যার সম্পর্ক ‘বিশেষ’। অবশ্য এই বিশেষ সম্পর্কের কোনো সুনির্দিষ্ট আদল পাওয়া যায় না।
তবে এ সম্পর্ক নিয়ে শুরু হয় ইলা ও ইশতিয়াকের টানাপোড়েন। এর মধ্যেই নিখোঁজ হয়ে যান ইশতিয়াক। তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। কোথায় তিনি খুঁজে পাওয়া যায় না। আতঙ্কগ্রস্ত ইলা হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। তখন তার সামনে পরিত্রাতা হয়ে আসে সেই পারু। যাকে শত্রু ভেবেছিল, সে-ই পরম বন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হয়।
উপন্যাসের কাহিনি এখানে এসে সরাসরি রাজনৈতিক বিভিন্ন ইঙ্গিত হাজির করে। একটি জটিল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সঙ্গে এই ইশতিয়াকের নিখোঁজ হওয়ার কী সম্পর্ক তা জানতে পারবেন পাঠক যদি উপন্যাসটি পাঠ করেন।
উপন্যাসের শুরুতে লেখকের ভেতর কিছু জড়তা কাজ করতে দেখা যায়। সাধারণত লেখকরা উপন্যাসের শুরুর দিকে আড়ষ্ট থাকেন। এখানেও সেটি দেখা গেল। কিছু কিছু সংলাপ পড়তেও খাপছাড়া এবং খুব সাদামটা লাগে।
তবে গ্রামে ঢোকার পর থেকে আমিনুল মোহায়মেন উপন্যাসের ঘটনা ও চরিত্রকে যুতমতো বাঁধতে পেরেছেন।
তার লেখার ভাষা সহজ ও প্রাঞ্জল। কোথাও তেমন শব্দের ঝকমারি নেই। ফলে পড়তে কষ্ট হয় না।
উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে নালন্দা। প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। গায়ের মূল্য ২৫০ টাকা।
গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ পড়তে পড়তে হাঁপিয়ে ওঠা পাঠকমগজে ভ্রমণবিষয়ক যেকোনো লেখা এক আলাদা আনন্দের সঞ্চারণ ঘটায়। আর তা যদি হয় ছোট ছোট গল্পের আকারে বিশ্বদেখা- তাহলে তো কথাই নেই। এমনই এক গল্পে গল্পে বিশ্বদেখার বই মোস্তফা মহসীন এর 'রাইনের তীরে শুভসন্ধ্যা'। এ শুধু ভ্রমণকাহিনি নয়, এ হলো গল্পে গল্পে আনন্দ-উদযাপন।
বিশ্বকে দেখার এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা, ইউরোপ-এশিয়ার ফাগুন ও শীতের ওম চেখে দেখা থেকেই 'রাইনের তীরে শুভসন্ধ্যা'র জন্ম। এসব দেখা ও প্রেম কখনও তত্ত্বের, কখনও তথ্যের। ভ্রমণগল্পগুলোর বিস্তার ঘটেছে দেশ-কাল ছাড়িয়ে প্রকৃতির অনাবিল সঙ্গনির্মাণের কৌশলে। ভ্রমণলেখায় আবিষ্কৃত সেই সুন্দরের পাশে মোস্তফা মহসীনের গদ্য বরাবরই অবিকল্প।
আপাদমস্তক কবি মোস্তফা মহসীনের আছে দুটি কবিতার বই। 'মননের মধু' ও 'তৃষ্ণার প্রথম পাঠ'। শূন্য দশকে সম্পাদনা করতেন একটি লিটল ম্যাগও। নাম 'সংশপ্তক'। মূলত কবিতা ছাপা হতো সে ম্যাগে। এর পর জীবন ও জীবিকার তাগিদে বেরিয়ে পড়তে হয় তাকে। ঘুরেছেন এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশ। আর তারই ফসল 'রাইনের তীরে শুভসন্ধ্যা'। বইতে তো এ নামে কোনো গল্প নেই, তাহলে? লেখক বললেন, মূলত রাইনের তীরে বসেই গল্পগুলো লেখা, তাই এ নাম। কবিতা থেকে সোজা ভ্রমণগল্পে? বললেন- কবিতা লেখার জন্য কল্পনাবিলাসী হওয়া খুব জরুরি। আমি মনে করি, কবিদেরই ভ্রমণগল্প লেখা উচিত, লেখা উচিত ছোটগল্পও। কেননা, তারাই পাঠককে কল্পনার ভেলায় ভাসাতে সবচেয়ে বেশি পারদর্শী।
'এরপর আমি আমাদের দেশের কিছু স্থান বা জেলা ভ্রমণ নিয়ে একটি ভ্রমণগল্পের বই লিখতে চাই।' বললেন মোস্তফা মহসীন। 'আমি এমনভাবে লিখতে চাই যাতে আপনার বহুদেখা স্থানটিও নতুন মনে হয়। আমার এই লেখাগুলো হবে দেখা-অদেখা এবং না-দেখার ঠিক মাঝখানে। ভবিষ্যতে কবিতা লিখব, লিখব ছোটগল্পও। আমি আসলে আমার লেখা দিয়ে পাঠকের মননে ঢুকে পড়তে চাই, সন্তর্পণে।'
বইটিতে থাকা ভ্রমণগল্পগুলো হলো- নয়নাভিরাম নিসর্গের শহর, বরফশহরে শীতকাতরতায়, বার্লিনের স্বপ্নধূলি ছুঁয়ে ..., ছুঁয়ে আইফেল আর আর্দনেসের সবুজ পাহাড়, বুকপকেটে জাপানি সূর্য, প্রমোদতরিতে ভেসে যাওয়ার গল্প, পুলক জাগানো বিনোদন শহরে, নাগরকোট: হিমালয়-কন্যা, তুমি পাতার সবুজ অরণ্যে ও নাড়ির বন্ধনে হৃদয় পড়েছে বাঁধা, কলকাতা!
'রাইনের তীরে শুভসন্ধ্যা'র গায়ের দাম ২০০ টাকা। বইটির নির্মেদ প্রচ্ছদ করেছেন মামুন হোসাইন। বইটি প্রকাশ করেছে শুভবিডি। বইটি শুভবিডির অনলাইন বুকশপেও পাওয়া যাবে।
অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে মাহফুজ ফারুকের প্রথম গল্পগ্রন্থ গল্পগ্রন্থ বালিকারাশি। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। দাম রাখা হয়েছে ১৭০ টাকা।
বালিকারাশি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দাঁড়িকমা। ঢাকা বইমেলায় ৪৮৮ নম্বর স্টল এবং চট্টগ্রাম বইমেলায় ৩৯-৪০ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। এছাড়া অনলাইন বুকশপেও পাওয়া যাচ্ছে বইটি ।
বইটিতে রয়েছে ৭টি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ ও বিষয়-বৈচিত্র্যের গল্প। এসব গল্পের ভেতর দিয়ে উঠে এসেছে যাপিত জীবনের প্রেম-বিরহ-দ্রোহ, সংস্কৃতি, জীবনাচার, সংকট, সম্ভাবনা আর লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। যা পাঠকের মনে দাগ কাটবে। গল্পের প্রয়োজনে গল্প নয় বরং মাহফুজ ফারুক তার নিজের মতো করে গল্প বলার চেষ্টা করেছেন।
পেশায় গণমাধ্যমকর্মী মাহফুজ ফারুক লেখালেখি করছেন ২ দশক ধরে। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৫টি।
সৃজনশীল কর্মতৎপরতার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে পেয়েছেন ইউনিসেফ কর্তৃক 'মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড' প্লান ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক 'গার্ল পাওয়ার মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড' এবং এনবিসিজেএফ কর্তৃক 'কোভিড-১৯ বেস্ট রিপোর্ট অ্যাওয়ার্ড।'
রাশান লেখক লিও তলস্তয়ের ‘রেজারেকশন’ উপন্যাসটি পড়েছিলাম অনেক আগে। সম্প্রতি একটি বাংলাদেশি উপন্যাস পড়তে গিয়ে মনে পড়ল তার কথা।
অন্তর্দহন বা অনুশোচনায় জর্জরিত মানবসত্ত্বাকে উপজীব্য করে লেখা উপন্যাস রেজারেকশন। মানুষের ভেতর-বাহির, অর্থাৎ তার মনোজগতে সু এবং কু-এর ডাক এর সঙ্গে সমাজ-পরিবার ইত্যাদির বুঝাপড়া রাশিয়ার উপন্যাসে বেশ দেখতে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই মনোজগৎ বা মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস খুব একটা লেখা হয় না। কেউ কেউ আছেন মনোবিদ, তারা নানা মানসিক সংকটকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের কাহিনি লেখেন। তবে তারা লেখেন কোনো নির্দিষ্ট চরিত্র বা ঘটনা নিয়ে। একটা সমাধানও পাওয়া যায় সেসব উপন্যাসে।
কিন্তু সমাধান নাই কোনো, চরিত্রও সুনির্দিষ্ট নয় বরং একটা সর্বজনীন অবস্থা নিয়ে উপন্যাস পড়ার অভিজ্ঞতা ভিন্ন হওয়ার কথা।
আমার সেই অভিজ্ঞতা হলো ‘আহাম্মক অহমের গল্প’ পড়তে গিয়ে। এ উপন্যাসের লেখক মোহাম্মদ আলী। তার উপন্যাসটি ২০২৩ সালের বইমেলায় প্রকাশিত।
বই বের হওয়ার আগে উপন্যাস পড়ে ফেলার অনুভূতিও দারুণ। সেই সুযোগ আমাকে যারা করে দিয়েছেন তাদের একটা ধন্যবাদ দিতেই হয়। ধন্যবাদ না দিয়েও পারা যায় না, কারণ উপন্যাসটি সুখপাঠ্য এবং ভাবনা উদ্রেককারী।
এ উপন্যাসে কাহিনি আছে। কী হয় কী হয় এরপর-এমন একটা টান টান ভাবও আছে। ঝরঝরে গদ্য, উপভোগ্য সংলাপ মিলিয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা দারুণ।
এখনকার জনপ্রিয় উপন্যাসগুলো সাধারণত প্যাঁচ প্যাঁচে আবেগ, ব্যক্তিগত প্রেম অথবা সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে লেখা। পাঠক যে কেন এ ধরনের লেখা পছন্দ করে তা নিয়ে গবেষণা চলতে পারে। তবে এসব উপন্যাসের অন্যান্য যে গুণ, যেমন গদ্য-সেগুলোও বেশ আড়ষ্ট থাকে দেখেছি।
‘আহাম্মক অহমের গল্প’ মোটেও তেমন নয়। বরং এটি আরো ভিন্ন। উপন্যাস লেখার যে অভ্যস্ততা তা থেকে ভিন্ন। এই উপন্যাসের ‘ফর্ম’ আলাদা। লেখক শুরু থেকেই পাঠকের সঙ্গে বুঝাপড়ায় নেমে যান। কাহিনি বলার মাঝে মাঝেই তিনি এসে হাজির হন। এতে পাঠের মজা নষ্ট হয় না, বরং লেখক নিজেই চরিত্র হয়ে ওঠেন।
যে কোনো বই নিয়ে আলোচনা করতে গেলে পাঠকের আগ্রহ জাগে কাহিনি নিয়ে। তবে আমি তাদের সেই আগ্রহ এখানে মেটাতে চাই না। শুধু এটুকু বলব, একজন সৎ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার একটি পরকীয়া সম্পর্ক এখানে আছে। যৌনতা, মাদক, আমাদের সরকারি অফিস বা প্রজেক্ট কীভাবে চলে, ঘুষ লেনদেন কীভাবে হয়, বর্তমান সময়ের ভার্চুয়াল প্রেম-এসবও আছে।
যার পড়বেন তারা এক বসায় যদি শেষ না করতে না পারেন, তাহলে উপন্যাসটি ‘ভার্চুয়ালি’ তার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে-ফিরতে থাকবে। যেমন কেউ যদি প্রেমে পড়েন তাহলে কী হয়। প্রেমের অনুভূতি প্রিয় মানুষটি সঙ্গে না থাকলেও ঘুর ঘুর করে। এ উপন্যাসও ঘুর ঘুর করবে।
আর যদি সেই প্রেম হয় গোপন, সমাজ মেনে নেবে না এমন, পরিবারে জানানো যায় না কিছুতে-তখন?
তখন এক দুই ধারি তলোয়ারের মতো দুদিক থেকে কাটতে থাকে সে প্রেম। একদিকে সুখ অপরদিকে ঘৃণা। কথা হলো এই সুখ না ঘৃণাকে জয়ী হয় মানুষের জীবনে? কেউ আসলে স্থায়ীভাবে জয়ী হয় না।
লেখকের ভাষায় পরিস্থিতিটা এমন, ‘যাদের তাস খেলার অভিজ্ঞতা আছে, শুধু অভিজ্ঞতা নয়, যারা তাস খেলার কারণে বাসায় ফিরে বকা খেয়েছে, তারা জানে, খেলার কি নেশা। যারা তাস খেলে বকা খায়নি বা অনুতাপে ভোগেনি তাদের তাস খেলার নেশাও হয়নি কখনো । নেশা জিনিসটাই এই। একদিকে ভোগ বা মজা আর অন্যদিকে অনুতাপ বা শান্তি। এই বিপরীত দুই মেরু যেখানে আছে সেখানে নেশা হবেই। নিরীহ কাগজের তৈরি তাসও যে নেশার বস্তু হয়ে উঠে তা এই ভোগ আর অনুতাপের সংঘর্ষের কারণে। একই কারণে নেশার বস্তু হয়ে উঠে সিগারেট, গাঁজা, মদ, জুয়া, সমেহন, যৌনতা প্রভৃতি।’
এ ভোগ আর অনুতাপ ভার্চুয়াল রিয়্যালিটিতে আরো প্রবল। যা এ উপন্যাসের কিছু কিছু ঘটনায় পাঠকের কাছে আরো স্পষ্ট হবে। অর্থাৎ ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কেউ সেক্স করে ফেলছে, ভাবছে তারা তো আর সত্যি সত্যি করছে না কাজটা, সমাজ-সংসার ঠিকই থেকে যাচ্ছে। আসলে কী তাই? এভাবে করতে করতে তা যখন অভ্যাস বা নেশায় পরিণত হয় তখন?
এ প্রশ্ন থাকুক পাঠকের জন্য। আরেকটা প্রশ্ন করা যাক। কেন এমন পরিস্থিতি হয়?
লেখক বলছেন, ‘মেহেকের দোষ নেই এই সমাজ যদি অবদমিত না হত, তাহলে এইরকম প্রেমের হয়ত জন্মই হত না। হলেও সহজেই সোহেল মেহেককে বিয়ে করে ফেলত। মেহেক জানে যে সোহেল কোনদিনই তাকে বিয়ে করবে না। কাজেই তার নিজের শরীরের প্রয়োজনে টুটুলকে সাথে রাখতে হয়েছে। এটা মেহেকের দোষ নয়। দোষ হল এই অবদমিত সমাজের’।
এই মেহেক বা সোহেল এবং তাদের প্রেম ও টুটুলের পরিচয় পাঠক উপন্যাসটি পড়ে জেনে নেবেন।
তবে আমি শুরুর আলোচনা দিয়ে শেষ করব ‘আহাম্মক অহমের গল্প’ নিয়ে আমার বুঝাপড়া।
মানুষের যে ইগো বা অহম, তা কত ধরনের হয়? সিগমুন্ড ফ্রয়েডকে এ উপন্যাসের লেখক মোহাম্মদ আলী কতটা পছন্দ করেন তা আমি জানি না। তবে তিনি ফ্রয়েডের মতো ইগো নিয়ে ডিল করেছেন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় এ ইগো বা অহম খুব সমস্যাজনক। অনেক সামাজিক ও ব্যক্তিগত সংকটের মূলে এ অহম। এ উপন্যাসের নামের সঙ্গে মিলিয়ে অহমই মূল চরিত্র। ভালো অহম, খারাপ অহম, সামাজিক-পারিবারিক এমেন কয়েক ধরনের অহমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে না পেরে দিশাহীন হয়ে পড়া একাধিক চরিত্র নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘আহাম্মক অহমের গল্প’।
এ উপন্যাসে আমরা ফ্রয়েডের ‘ইড’কে পাই। ইড হলো সেই ইগো যা আদিম, অবুঝ শিশুর মতো। সে যখন যা চায় তা না পাওয়া পর্যন্ত শান্ত হয় না। পাওয়ার পর পরিতৃপ্ত হয়। এ পরিতৃপ্তি পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কী হয়, যখন সে লালসা চরিতার্থ করতে থাকে তখন হুঁশ থাকে না।
মানুষের ভেতরে আরো নানা সত্ত্বার উপস্থিতি আর তাদেরই চরিত্র হিসেবে হাজির করা অর্থাৎ মানুষ নয়, অস্তিত্বহীন হয়ে থাকা মন কিংবা ভাবনা-চেতনাকে চরিত্র করে তোলার ঘটনা বাংলাদেশের সাহিত্যে পাইনি আগে।
শেষ পর্যন্ত নিজের ইস্যুতে ঠিক থেকে কাহিনি গড়ে তোলার দক্ষতাও এ লেখকের আছে।
তবে উপন্যাসটিতে ঘন ঘন ঘটনা ঘটে এবং চরিত্রদের দিকে আরেকটু নজর দেওয়ার ঘাটতির কথা এখানে বলে রাখলাম। আরেকটু দীর্ঘ উপন্যাসের চেষ্টা নিশ্চয় মোহাম্মদ আলী করবেন।
গীতিকার, উপন্যাসিক, চলচ্চিত্র প্রযোজক সোহানী হোসেনের লেখা ‘একজন আমি’ শিরোনামে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে বইমেলায়।
শুক্রবার বিকেলে সোহানী হোসেনের নিজের আত্মজীবনী নিয়ে লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। অনন্যা প্রকাশনী বইটি বাজারে এনেছে। এ সময় প্রকাশক মনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
লেখকের ‘মা এবং অন্যান্য গল্প’, ‘শূণ্য রেখা’, ‘সমুদ্র তরঙ্গ’, ‘বিদায় ছুটিপুর’, ‘মন শিথানে বৃষ্টি নামে অশ্রুধারা হয়ে, ‘ভরা জোৎস্নায় পঙতিমালা’, ‘সমুদ্র তরঙ্গ’ শিরোনামে একাধিক বই বাজারে রয়েছে।
সোহানী হোসেন শিল্প, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি যে ক’জন নারী বিশেষ অবদান রেখেছেন তাদের অন্যতম।
তিনি ইউনিভার্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন নারী শিল্প উদ্যোক্তা। সোহানী হোসেন ১৯৬৭ সালের ২২ জুন নাটোর জেলা শহরের কানাইখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করার আগে ১৯৮৯ সালে পাবনার বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্যুটার আলহাজ মোবারক হোসেন রত্ন’র সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
গীতিকার ও গল্পকার হিসাবেও তিনি নিজেকে তুলে ধরেছেন মানুষদের মাঝে।
তার লেখা বেশ কয়েকটি গান এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। তার ‘মা’ গল্প থেকে তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্র ‘সত্তা’। ছবিতে অভিনয় করেছেন হালের সুপারস্টার শাকিব খান ও ওপার বাংলার পাওলি দাম। আর ছবিটি পরিচালনা করেছেন হাসিবুর রেজা কল্লোল।
অমর একুশে বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে আফিয়া সিদ্দিকা রাঈসার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মেরুন রঙের উল্লাসে’। দাঁড়িকমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। মূল্য ১৮৮ টাকা।
কবি জানান, বইয়ের কবিতাগুলো যেমন পাওয়া যাবে গভীরতা ও আত্মবিশ্বাসের রঙ, তেমনি আছে শান্তি, প্রতিবাদ, প্রেম ও স্মৃতির রঙ।
আফিয়া সিদ্দিকা রাঈসা বলেন, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন আমার লেখালেখির শুরু। বর্তমানে বুয়েটে পড়ছি, পুরকৌশল বিভাগে। প্রকৌশলবিদ্যার দ্রুততা ও ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যে থেকে ধীর, গভীর সাহিত্যকে আঁকড়ে ধরা আমার জন্যে খুব সহজ নয়। তবু চেষ্টা থামাই না। আমি মূলত আনন্দের জন্য লিখি, কবিতা লিখি। আমার মনে হয়, কবিতার মধ্যে ভিন্ন নন্দনে অনেক রহস্য লুকিয়ে থাকে। স্বভাবে বেশ কিছুটা অনুসন্ধিৎসু হওয়ায় সেই রহস্যের রস গ্রহণে আগ্রহ কাজ করে, ভীষণ শান্তি পাই। পাশাপাশি কবি-লেখকদের সৃষ্টিশীলতা কেবল যে তাদের পাঠকদের কাছে পরিচিত করাচ্ছে তা নয়, লেখকের বই একটি যুগের প্রতিনিধিও। এ ভাবনা থেকেই লেখালেখি চালিয়ে যাবার প্রেরণা পাই।
বাংলা ভাষার জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের কারণে একটি গল্প বহুল প্রচারিত। সেটি রাশিয়ার মহান লেখক লিও তলস্তয়কে নিয়ে। হুমায়ূন লিখেছিলেন, ‘পৃথিবীর তাবৎ ঔপন্যাসিক যাঁর কোটের পকেট থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তার নাম দস্তয়ভস্কি। আরেকজন আছেন মহামতি টলস্টয়। এক রেলস্টেশনে যখন টলস্টয় মারা গেলেন, তখন তাঁর ওভারকোটের পকেটে একটি বই পাওয়া গেছে। বইটি ছিল টলস্টয়ের খুব প্রিয়। সব সময় সঙ্গে রাখতেন। সময় পেলেই পড়তেন। বইটি হজরত মোহাম্মদ সা.-এর বিভিন্ন সময়ে বলা গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো নিয়ে গ্রন্থিত। আমি বিনয়ের সঙ্গে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের কাছে জানতে চাইছি, আপনাদের ক’জন বইটি পড়েছেন? টলস্টয় যে বইটি পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন, সেই বই আমাদের প্রত্যেকের একবার কি পড়া উচিত নয়? আমার মতে, প্রতিটি শিক্ষিত ছেলেমেয়ের বইটি পড়া উচিত।’
তলস্তয় খ্রিষ্টান ধর্মকে তার উপন্যাসে উপজীব্য করলেও হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি ছিল তার অগাধ আস্থা ও শ্রদ্ধা। বিভিন্ন সময়ে তিনি কিছু কিছু মন্তব্যে তার প্রকাশও ঘটিয়েছেন।
তিনি মহানবী (সা.)-কে বলেছিলেন একজন ‘রিফরমার’। তার এ মন্তব্যের সঙ্গে একমত না হয়ে উপায় নেই যে হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে আসার পর থেকে বদলে গেছে অনেক কিছু। যার ধারাবাহিকতা এখনো বজায় আছে। যুগে যুগে পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু মানুষের মৌলিক সত্তা ও বিশ্বাসের জায়গায় মহানবীর (সা.) গুরুত্ব আরো বেড়েছে।
বিভিন্ন বিভেদ ও ফ্যাসাদের যুগে মহানবীকে উপলব্ধি করতে পারা তাই আরো জরুরি। সেই জরুরি কাজ সহজ করেছেন আমিনুল মোহায়মেন। তার লেখা ‘বিশ্বনবী (সা.) বইটি ইতিমধ্যে বইমেলায় বেশ সাড়া জাগিয়েছে। প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই বইটি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এ বই নিছক ধর্মতাত্ত্বিক নয় বরং জীবনঘনিষ্ঠ।
যারা ইদানিং ‘মোটিভেশনাল’ বই পড়তে আগ্রহী, জীবনকে কীভাবে সাজিয়ে তুলবেন তা নিয়ে ভাবেন, তাদের জন্যও বইটি উপকারী হয়ে উঠবে।
এর ভূমিকায় লেখক লিখেছেন, ‘কোরআন মজিদে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসুলে করিম হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে রাহমাতুল্লিল আলামীন বা বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে অভিহিত করেছেন। রাসুল (সা.) যে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত, পরলৌকিক বিবেচনায় তা সহজেই বোধগম্য। কিন্তু মানুষের পার্থিব জীবনের জন্য তিনি কী করেছিলেন যাতে দুনিয়ার বিচারেও তাঁকে সর্বকালের, সকল অঞ্চলের মানুষের জন্য রহমত বলা হয়েছে?’
সব মানুষের অনুপ্রেরণা বা জীবনের বিহিত দিয়ে যেতে পেরেছিলেন বলে তিনি হয়ে উঠেছেন বিশ্বনবী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যাকে বলেছিলেন ‘মহাঋষি’।
সাধারণ বা ব্যক্তি মানুষের জীবনে আজো মহানবী (সা.) কীভাবে অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করতে পারে তা সহজভাবে তুলে ধরেছেন আমিনুল মোহায়মেন। তিনি মহানবীর (সা.) জীবনের সব ঘটনা উল্লেখ করে তার প্রেক্ষিতে বর্তমান আধুনিক মানুষ কী শিখতে পারে সেগুলোও উল্লেখ করে করেছেন।
প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার এ বইয়ে সাতটি অধ্যায় রয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ের আবার ছোট ছোট ভাগ রয়েছে। এসব ভাগে আমিনুল পুরো পৃথিবীকে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন বিশ্বনবী (সা.) এর জন্মের আগে ও পরের পৃথিবীর রূপ। তাতে করে একটা সহজ দাগ টানা যায় যে ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রভাব কোথায় কী প্রভাব পড়েছে। তার নুরের আলোয় কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে মানব সভ্যতায়।
‘বিশ্বনবী (সা.)’ বইটি যে কারণে বহুমাত্রিক। তা একসঙ্গে বিশ্ব ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত রূপ যেমন দেখায় পাঠককে, তেমনি বিশ্বনবীর (সা.) জীবনের নানা ঘটনায় পাঠক আবেগাপ্লুত হবে ও উদ্বুদ্ধ হবে। সেসব ঘটনার প্রেক্ষিতে আধুনিক ব্যক্তি নিজের জীবনকেও বদলে দিতে পারেন।
বইটি প্রকাশ করেছে নালন্দা, গায়ের মূল্য ৮৫০ টাকা।
আকুপাংচারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং পুলিশ সুপার ডা. এস এম শহিদুল ইসলামের বই 'বাংলাদেশে আকুপাংচার চিকিৎসা ও নিরাময়' অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে।
রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. তাসলিম উদ্দিন।
সাড়ে সাতশ টাকা দামে বইটি মেলার ২৪৮-২৪৯ নম্বর স্টলে চন্দ্রছাপ প্রকাশনীতে পাওয়া যাবে। একইসঙ্গে, কলকাতার ১৩ বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রিট, ১৭ সূর্যসেন স্ট্রিট এবং রিড বেঙলি বুকস, নিউইয়র্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রেও মিলবে আকুপাংচারের বইটি। এ ছাড়া, অনলাইনে রকমারি এবং দারাজ ডট কমে গিয়ে বইটি কেনা যাবে।
বই প্রকাশে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন মোহাম্মদ সজিব শেখ, জিয়াউদ্দিন মানিক, সুলতান সালাহ উদ্দিন, তরফদার রাজীবুর রহমান এবং পাণ্ডুলিপি তৈরিতে সহযোগিতা করেন আলিমুজ্জামান আবির।
অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে মোস্তফা মাহবুব বাবুর একক কাব্যগ্রন্থ 'অনন্য অনুভূতি'। নব সাহিত্য প্রকাশনী বইটি বাজারে এনেছে।
৬৪ পৃষ্ঠার বইটিতে রয়েছে অর্ধশতাধিক রোমান্টিক কবিতা। বইটি পাওয়া যাবে ৩১-৩২ নম্বর স্টলে। এছাড়াও এনবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড এর হেড অফিস রহমত টাওয়ার (৫ম তলা) ১৯ দিলকুশা বা/এ ঢাকা ১০০০ এই ঠিকানায় ও পাওয়া যাবি বইটি।
লেখক মোস্তফা মাহবুব বলেন, কবি এবং কবিতার পাঠকদের প্রতি রইলো শুভেচ্ছা,অভিনন্দন,এবং ভালোবাসা। আপনার কেনা বই একজন কবিকে আগামী বই প্রকাশনায় অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করবে।
লিওনেল মেসি ঘোষণা দিলেন, ‘আমি ইন্টার মিয়ামিতে যাচ্ছি।’
রাতে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে এ ঘোষণা দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
ডারিও স্পোর্টকে তিনি জানান, ‘আমার ইউরোপের আরেক ক্লাব থেকে প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাব দেখিওনি, কারণ আমি ইউরোপে খেললে বার্সেলোনায় খেলতে চেয়েছে। বিশ্বকাপ জেতার এবং বার্সাতে না যেতে পারায়, এখন সময় যুক্তরাষ্ট্র লিগে খেলার এবং ভিন্নাভাবে ফুটবলকে উপভোগ করার। তবে দায়িত্ব থাকবে একই এবং আকাঙ্খা থাকবে জেতার এবং অবশ্যই ভালো করার। তবে আরো শান্তিপূর্ণভাবে।’
মেসি জানান, ‘বুসকেটস আর জর্ডি আলবার সাথে যোগাযোগ ছিল, কখনো তাদের সাথে একই জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়নি। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছি।’
শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা থেকে মনের কষ্ট নিয়েই ২০২১ সালে স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সের পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। দু'বছর পর আবার বার্সেলোনায় ফিরতে চেয়েছিলেন খুব করে। তার জন্য বাধা হয়ে দাড়ানো লা ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে'র অনুমোদনও দিয়েছিল লিগা কর্তৃপক্ষ। মেসি চাচ্ছিলেন আগের বার তাকে যেভাবে চলে যেতে হয়েছিল বার্সেলোনা ছেড়ে, সেটা যেন না হয় পরে।
দুদিন ধরে এ নিয়ে কথাবার্তা হলেও বার্সেলোনা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। মেসির কাছে ছিল দুটি অপশন- সৌদি ক্লাব আল-হিলালের দুবছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব গ্রহণ করা নয়তো মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মিয়ামির প্রস্তাব গ্রহণ করা। আল হিলালকে এক বছরের জন্য অপেক্ষায় থাকবে বলেছিলেন মেসি দুদিন আগে। বাকি ইন্টার মিয়ার প্রস্তাব। সেটাই গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাব ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন।
মেসির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হচ্ছে ইন্টার মায়ামির। প্রতিবছর শেষ মেসি ক্লাব ছেড়ে দিতে পারবেন, না দিলে সয়ংক্রিয় ভাবে তিনি পরের বছর খেলবেন। বছর প্রতি ৫৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পাবেন তিনি।
এবার অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ।
বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২২-২৩ হিসাববছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভ্যাংশের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ১ জুন কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। উৎপাদন, পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় সমন্বয়ের পর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এতে করে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা (ইপিএস) দাঁড়ায় ৮৭ পয়সার কিছুটা বেশি।
তবে এফআরসির বিধান অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে নতুন ইস্যু করা শেয়ার বিবেচনায় নয় মাসে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫৮ পয়সা। এই আয় থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের। এ কারণে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে টানা পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। মিনোরির তত্ত্বাবধানে এখন লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে কোম্পানিটি।
মিনোরির নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার যুক্ত হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
ফুটবল কিংবদন্তী পেলের গোটা জীবন কেটেছে ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসে। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে যিনি আলো ছড়িয়েছেন, তিনি ক্যারিয়ারের সেরা সময় যাননি ইউরোপের কোনো ক্লাবে।
তবে ১৯৭৪ সালে ৩৪ বছর বয়সে সান্তোসের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানেন ফুটবল সম্রাট। পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
১৯৭৫ সালে নিউ ইয়র্ক কসমসে যোগ দেন। সেই বছরের ১৫ জুন ক্লাবটিতে নাম লিখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন।
যে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষজন একটা সময় ফুটবল খেলাই দেখতে যেতেন না, পেলে যোগ দেওয়ার পর ৮০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। সেদিনই পেলে নিউইয়র্ক জয় করেছিলেন।
পেলে কসমসে যাওয়ার ১৫ বছর পর ফের বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টুর্নামেন্টের অভিষেক আসরের তৃতীয় স্থান অর্জনকারী যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে শুধুমাত্র ২০১৮ সাল ছাড়া প্রতিটি বিশ্বকাপেই খেলেছে তারা। ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন। কাতার বিশ্বকাপেও শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়ে হয়েছে ১৪তম দল হয়ে।
বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে দারুণ একটা মৌসুম কাটিয়েছেন জুড বেলিংহাম। অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে নজর কেড়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের। আর তাই তো নতুন মৌসুম শুরু করবেন এই ক্লাবের জার্সি গায়ে। ইংল্যান্ডের এই মিডফিল্ডারকে দলে নিতে ১০৩ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে রাজি হয়েছে ব্ল্যাঙ্কোরা।
এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ডর্টমুন্ড। তারা জানিয়েছে, স্প্যানিশ দলটি ১০৩ মিলিয়ন ইউরো দিতে সম্মত হয়েছে। যেখানে আনুসাঙ্গিক আরও অনেক বিষয় জড়িয়ে। যদি সেটা অর্জন করা সম্ভব হয়, তবে চুক্তিটি ১৩৩.৯ মিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছতে পারে।
২০২০ সালের জুলাইয়ে বার্মিংহাম সিটি থেকে ডর্টমুন্ডে যোগ দেন ১৯ বছর বয়সী বেলিংহাম। কাতার বিশ্বকাপেও ইংলিশদের সেরা পারফরমার ছিলেন তিনি। ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুল উভয় ক্লাবই তাকে পাওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত মাদ্রিদে পাড়ি দিচ্ছেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে বেলিংহামে বিশ্বের তৃতীয় দামি তরুণ ফুটবলার হতে চলেছেন। ২০১৯ সালে ইডেন হ্যাজার্ড ১১৫ মিলিয়ন ইউরোতে চেলসি থেকে রিয়ালে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
বেলিংহাম এই মৌসুমে তার ক্লাবের হয়ে ৪২ ম্যাচ খেলে ১৪ গোল করেছেন। সাতটি গোল তিনি করিয়েছেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।