বন্ধ কোম্পানি এমারেল্ড অয়েলের শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
ঋণ জালিয়াতির মামলায় পলাতক উদ্যোক্তাদের কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাষ্ট্রিজের শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। অর্থ সংকটে আড়াই বছর ধরে বন্ধ এ কোম্পানির শেয়ারদর এক মাসে ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও শেয়ারদর বাড়ার মতো মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২৭ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এমারেল্ড অয়েলের। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৪৪ টাকা। তবে সহসাই উৎপাদনে আসার সম্ভাবনা না থাকায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানির শেয়ারদর নেমে আসে ৮ টাকা ৩০ পয়সায়। এরপর শেয়ারদর কিছুটা বেড়ে গত ২৫ নভেম্বর ৯ টাকা ১০ পয়সায় উন্নীত হয়। মালিকানা বদল কিংবা উৎপাদনে আসার কোনো সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও গত ২৫ নভেম্বর থেকে শেয়ারদর বাড়তে থাকে, যা গতকাল ১৪ টাকা ১০ পয়সায় উন্নীত হয়। এ হিসেবে গত এক মাসে প্রায় ৫৫ শতাংশ দর বেড়েছে।
এমারেল্ড অয়েলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল হক তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, মূলধন সঙ্কটে ২০১৬ সালে কোম্পানির উৎপান বন্ধ হয়ে যায়। খুব শিগগিরই এ সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনাও নেই। বিভিন্ন ধরনের জটিলতার অন্য কেউ কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ার নিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারদর বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ডিএসই আমাদের কাছে কারণ জানতে চেয়েছিল। আমরা তাদেরকে জানিয়েছি যেকোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। আমরা আশঙ্কা করছি, শেয়ারটি নিয়ে কোনো গ্রুপ কারসাজি করছে। প্রসঙ্গত রাষ্ট্রায়ত্ব বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলায় জড়িয়ে পড়েন এমারেল্ড অয়েলের উদ্যোক্তা পরিচালকরা। এতে মূলধন সংকটে বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির দুই বছরের মধ্যে কোম্পানির অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। তালিকাভুক্তির সময় পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির দায়ে ২০১৬ সালে কোম্পানিটির পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, অনিয়মের মাধ্যমে এমারেল্ড অয়েল বেসিক ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ৭৪ কোটি টাকার ঋণসুবিধা নেয়। পরে ওই ঋণ পরিশোধ না করায় কোম্পানিটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ একাধিক পরিচালক মিলিয়ে মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ মামলায় কোম্পানির প্রধান উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব কিছুদিন জেলও খেটেছেন। পরবর্তীতে জামিন নিয়ে গনিসহ মোট তিন উদ্যোক্তা পরিচালক বিদেশে পালিয়ে যান, যাদের হাতে কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ারের বড় অংশ রয়েছে। এরপর থেকেই চরম সঙ্কটে পড়ে কোম্পানিটি। আহসানুল হক তুষার জানান, দুদকের মামলাসহ কোম্পানির ব্যাংক ঋণ নিয়ে যে ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে, তাতে বিদেশে চলে যাওয়া উদ্যোক্তারা সহসাই দেশে ফিরতে পারবেন, এমন সম্ভাবনাও কম। ২০১৭ সালের এপ্রিলে সর্বশেষ ‘চলতি মূলধন সংকটের কারণে স্বল্প পরিসরে উৎপাদন চলছে’ বলে কোম্পানিটি জানালেও পরবর্তীতে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ২০১৬ সালের পর কোনো নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি। ওই বছরের জুন শেষে কোম্পানিটির বকেয়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৯৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য, এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৫৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

ঋণ জালিয়াতির মামলায় পলাতক উদ্যোক্তাদের কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাষ্ট্রিজের শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। অর্থ সংকটে আড়াই বছর ধরে বন্ধ এ কোম্পানির শেয়ারদর এক মাসে ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও শেয়ারদর বাড়ার মতো মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২৭ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এমারেল্ড অয়েলের। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৪৪ টাকা। তবে সহসাই উৎপাদনে আসার সম্ভাবনা না থাকায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানির শেয়ারদর নেমে আসে ৮ টাকা ৩০ পয়সায়। এরপর শেয়ারদর কিছুটা বেড়ে গত ২৫ নভেম্বর ৯ টাকা ১০ পয়সায় উন্নীত হয়। মালিকানা বদল কিংবা উৎপাদনে আসার কোনো সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও গত ২৫ নভেম্বর থেকে শেয়ারদর বাড়তে থাকে, যা গতকাল ১৪ টাকা ১০ পয়সায় উন্নীত হয়। এ হিসেবে গত এক মাসে প্রায় ৫৫ শতাংশ দর বেড়েছে।
এমারেল্ড অয়েলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল হক তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, মূলধন সঙ্কটে ২০১৬ সালে কোম্পানির উৎপান বন্ধ হয়ে যায়। খুব শিগগিরই এ সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনাও নেই। বিভিন্ন ধরনের জটিলতার অন্য কেউ কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ার নিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারদর বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ডিএসই আমাদের কাছে কারণ জানতে চেয়েছিল। আমরা তাদেরকে জানিয়েছি যেকোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। আমরা আশঙ্কা করছি, শেয়ারটি নিয়ে কোনো গ্রুপ কারসাজি করছে। প্রসঙ্গত রাষ্ট্রায়ত্ব বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলায় জড়িয়ে পড়েন এমারেল্ড অয়েলের উদ্যোক্তা পরিচালকরা। এতে মূলধন সংকটে বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির দুই বছরের মধ্যে কোম্পানির অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। তালিকাভুক্তির সময় পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির দায়ে ২০১৬ সালে কোম্পানিটির পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, অনিয়মের মাধ্যমে এমারেল্ড অয়েল বেসিক ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ৭৪ কোটি টাকার ঋণসুবিধা নেয়। পরে ওই ঋণ পরিশোধ না করায় কোম্পানিটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ একাধিক পরিচালক মিলিয়ে মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ মামলায় কোম্পানির প্রধান উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব কিছুদিন জেলও খেটেছেন। পরবর্তীতে জামিন নিয়ে গনিসহ মোট তিন উদ্যোক্তা পরিচালক বিদেশে পালিয়ে যান, যাদের হাতে কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ারের বড় অংশ রয়েছে। এরপর থেকেই চরম সঙ্কটে পড়ে কোম্পানিটি। আহসানুল হক তুষার জানান, দুদকের মামলাসহ কোম্পানির ব্যাংক ঋণ নিয়ে যে ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে, তাতে বিদেশে চলে যাওয়া উদ্যোক্তারা সহসাই দেশে ফিরতে পারবেন, এমন সম্ভাবনাও কম। ২০১৭ সালের এপ্রিলে সর্বশেষ ‘চলতি মূলধন সংকটের কারণে স্বল্প পরিসরে উৎপাদন চলছে’ বলে কোম্পানিটি জানালেও পরবর্তীতে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ২০১৬ সালের পর কোনো নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি। ওই বছরের জুন শেষে কোম্পানিটির বকেয়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৯৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য, এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৫৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে।