২০ বছর পর ইউরেনিয়াম থোরিয়ামের খোঁজে বাপশক
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
তেজস্ক্রিয় খনিজ ইউরেনিয়াম বাংলাদেশের ভূগর্ভে আছে কি নেই; সে বিষয়ে বড় ধরনের অনুসন্ধান চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ‘পরমাণু খনিজ ইনস্টিটিউট শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে ইউরেনিয়াম অনুসন্ধান করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ইউরেনিয়াম, থোরিয়ামের খোঁজে নেওয়া সর্বশেষ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৯৯৮ সালে। গত ২০ বছর ধরে এ বিষয়ে আর কোনো জরিপ পরিচালনা করেনি সরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অতীতে দু’দফা পর্যবেক্ষণমূলক রেডিওমেট্রিক জরিপে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেলেও আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল ও অনুসন্ধান চালানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে এতদিন তা সম্ভব হয়নি। সে জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করেছে।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বাপশক) সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ইউরেনিয়ামসহ বাংলাদেশে তেজস্ক্রিয় খনিজের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ১৯৭৬-১৯৮৫ সময়ে ‘এক্সপ্লোরেশন অব ইউরেনিয়াম অ্যান্ড থোরিয়াম ইন বাংলাদেশ (ইইউটিবি)’ প্রকল্পের মাধ্যমে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় পর্যবেক্ষণমূলক রেডিওমেট্রিক জরিপ পরিচালনা করা হয়। ১৯৯৫-১৯৯৮ সময়ে ‘এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেশন অব অ্যাটোমিক মিনারেলস : জয়পুরহাট-সিলেট এরিয়া ইন দ্য ডাউকি ফল্ট’ প্রকল্পের আওতায় ডাউকি চ্যুতি বরাবর সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জসহ বেশ কিছু সম্ভাবনাময় এলাকায় পর্যবেক্ষণমূলক রেডিওমেট্রিক জরিপ চালায় সরকার। তিনি জানান, জরিপ দুটির মাধ্যমে পরমাণু খনিজ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক ফলাফল থাকা সত্ত্বেও আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল ও অনুসন্ধান কাজে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বড় পরিসরে আর কোনো জরিপ করা হয়নি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বেশিরভাগ দেশই নিজস্ব ইউরেনিয়াম ব্যবহারের জন্য নতুন নতুন মজুদ অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লিতে জ্বালানি ব্যবহারের জন্য নিজস্ব উৎস থেকে ইউরেনিয়াম পাওয়ার অনুসন্ধানের কাজ ব্যাপক আকারে শুরু করতে হবে। সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রকল্পের পিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য (আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ) মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত। সভায় এ বিভাগের যুগ্ম-প্রধান ড. সেলিনা আক্তার বলেন, বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে তেজস্ক্রিয় ও অন্যান্য খনিজ অনুসন্ধানে মাঠ জরিপ পরিচালনা করা, পারমাণবিক স্থাপনার স্থান নির্বাচনে মাঠ জরিপসহ পরমাণু খনিজ ইনস্টিটিউট শক্তিশালীকরণে একটি প্রকল্প প্রস্তাব এসেছে। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ১৮৫ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যার পুরোটাই বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগানের কথা বলা হয়েছে। পিইসির সভায় বলা হয়, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো খনিজ অনুসন্ধান। প্রকল্পের আওতায় খনিজ অনুসন্ধানে ৫০ কোটি টাকা, জরিপ চালাতে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। সভায় এ খাতে ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরমাণু খনিজ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, খনিজ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে। সম্ভাব্য এলাকায় ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও ম্যাপিং কার্যক্রম, রেডিওমেট্রিক জরিপ ও উপযুক্ত গভীরতায় অনুসন্ধানমূলক বোরহোল লগিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ জরিপ প্রয়োজন।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

তেজস্ক্রিয় খনিজ ইউরেনিয়াম বাংলাদেশের ভূগর্ভে আছে কি নেই; সে বিষয়ে বড় ধরনের অনুসন্ধান চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ‘পরমাণু খনিজ ইনস্টিটিউট শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে ইউরেনিয়াম অনুসন্ধান করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ইউরেনিয়াম, থোরিয়ামের খোঁজে নেওয়া সর্বশেষ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৯৯৮ সালে। গত ২০ বছর ধরে এ বিষয়ে আর কোনো জরিপ পরিচালনা করেনি সরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অতীতে দু’দফা পর্যবেক্ষণমূলক রেডিওমেট্রিক জরিপে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেলেও আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল ও অনুসন্ধান চালানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে এতদিন তা সম্ভব হয়নি। সে জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করেছে।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বাপশক) সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ইউরেনিয়ামসহ বাংলাদেশে তেজস্ক্রিয় খনিজের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ১৯৭৬-১৯৮৫ সময়ে ‘এক্সপ্লোরেশন অব ইউরেনিয়াম অ্যান্ড থোরিয়াম ইন বাংলাদেশ (ইইউটিবি)’ প্রকল্পের মাধ্যমে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় পর্যবেক্ষণমূলক রেডিওমেট্রিক জরিপ পরিচালনা করা হয়। ১৯৯৫-১৯৯৮ সময়ে ‘এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেশন অব অ্যাটোমিক মিনারেলস : জয়পুরহাট-সিলেট এরিয়া ইন দ্য ডাউকি ফল্ট’ প্রকল্পের আওতায় ডাউকি চ্যুতি বরাবর সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জসহ বেশ কিছু সম্ভাবনাময় এলাকায় পর্যবেক্ষণমূলক রেডিওমেট্রিক জরিপ চালায় সরকার। তিনি জানান, জরিপ দুটির মাধ্যমে পরমাণু খনিজ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক ফলাফল থাকা সত্ত্বেও আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল ও অনুসন্ধান কাজে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বড় পরিসরে আর কোনো জরিপ করা হয়নি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বেশিরভাগ দেশই নিজস্ব ইউরেনিয়াম ব্যবহারের জন্য নতুন নতুন মজুদ অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লিতে জ্বালানি ব্যবহারের জন্য নিজস্ব উৎস থেকে ইউরেনিয়াম পাওয়ার অনুসন্ধানের কাজ ব্যাপক আকারে শুরু করতে হবে। সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রকল্পের পিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য (আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ) মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত। সভায় এ বিভাগের যুগ্ম-প্রধান ড. সেলিনা আক্তার বলেন, বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে তেজস্ক্রিয় ও অন্যান্য খনিজ অনুসন্ধানে মাঠ জরিপ পরিচালনা করা, পারমাণবিক স্থাপনার স্থান নির্বাচনে মাঠ জরিপসহ পরমাণু খনিজ ইনস্টিটিউট শক্তিশালীকরণে একটি প্রকল্প প্রস্তাব এসেছে। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ১৮৫ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যার পুরোটাই বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগানের কথা বলা হয়েছে। পিইসির সভায় বলা হয়, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো খনিজ অনুসন্ধান। প্রকল্পের আওতায় খনিজ অনুসন্ধানে ৫০ কোটি টাকা, জরিপ চালাতে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। সভায় এ খাতে ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরমাণু খনিজ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, খনিজ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে। সম্ভাব্য এলাকায় ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও ম্যাপিং কার্যক্রম, রেডিওমেট্রিক জরিপ ও উপযুক্ত গভীরতায় অনুসন্ধানমূলক বোরহোল লগিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ জরিপ প্রয়োজন।