
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জামিয়া ইসলামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে ১০০ কম্পিউটার সেট দিয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এআইবিএল)।
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসন ব্লু সভাকক্ষে আয়োজিত অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে এ কম্পিউটার সেট হস্তান্তর করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুস সামাদ লাবু। এ সময় ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ফরমান আর চৌধুরীসহ শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
জামেয়া ইসলামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার পক্ষে কম্পিউটার সেট গ্রহণ করেন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা শাহ্ ছালাউদ্দিন পীরসাহেব নানুপুরী, কারী মাওলানা জাহাঙ্গীর, মাওলানা ইব্রাহীম ও মাওলানা সেলিম রেজা।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুস সামাদ লাবু বলেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত ও আধুনিক করা এখন সময়ের দাবি। এই দাবি পূরণে শিক্ষার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে ব্যাংক ১০০ কম্পিউটার সেট দেওয়া হলো। বিজ্ঞপ্তি।
বাগেরহাটের মোংলায় ভারতীয় উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়তে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য মোংলা বন্দর কর্র্তৃপক্ষের জমিতে এ অঞ্চল গড়ে তুলতে ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে ভারত সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ২৪২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বাকি দুই কোটি ৭৪ লাখ টাকা বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের ২০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে প্রস্তাবিত এ অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে বহির্বাণিজ্য তুলনামূলক সহজ হবে। অঞ্চলটিতে কৃষি, খাদ্য, হালকা প্রকৌশল ও রসায়ন খাতের শিল্প স্থাপন করা হবে। এ অঞ্চলে আট হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, মোংলায় ভারতীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার এ প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাতে ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। তবে পিইসি সভা এর সময়সীমা ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। প্রকল্প প্রস্তাবে বিদ্যমান পরামর্শক ব্যয় ১৫ কোটি টাকা থেকে কমানোর কথাও বলা হয়েছে। বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে যে অর্থ দেবে তা অনুদান হিসেবে দেওয়ার বদলে ১ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে পিইসি সভায়।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। নির্বাচনের কারণে বর্তমান একনেক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। নতুন সরকার দায়িত্ব নিলে জানুয়ারিতে প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্র্তৃপক্ষ (বেজা)।
পিইসি সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি-২) চুক্তির আওয়ায় মোংলা ও কুষ্টিয়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে দুই পক্ষ সম্মত হয়। মোংলায় ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শুধু ভারতীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারবেন। সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে ভারত তাদের নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অঞ্চলটির উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ করবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প প্রস্তাবে এক বছর ৯ মাসে কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছে। ইপিসি (প্রকৌশল, আহরণ ও নির্মাণ) চুক্তিতে বাড়তি সময় লাগার আশঙ্কা থেকে এর মেয়াদ ৯ মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রকল্প পরামর্শক ব্যয় ১৫ কোটি টাকা থেকে কমানোর সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, শিক্ষা সফর ও বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) স্থাপন না করার পক্ষে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে সিইটিপি নির্মাণের জন্য জায়গা রাখতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে ভারতীয় উদ্যোক্তারা কী ধরনের শিল্প স্থাপন করবেন, তা এখনো জানা যায়নি। বেশির ভাগ অর্থনৈতিক অঞ্চলেই পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপন হয়েছে। পরিবেশসম্মত শিল্পে সিইটিপি প্রয়োজন হয় না। তা ছাড়া শিল্পের প্রকৃতি না জেনে কেমন সিইটিপি স্থাপন হবেÑ এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এ অবস্থায় প্রয়োজনে নতুন একটি প্রকল্পের আওতায় সিইটিপি স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছে কমিশন।
তেজস্ক্রিয় খনিজ ইউরেনিয়াম বাংলাদেশের ভূগর্ভে আছে কি নেই; সে বিষয়ে বড় ধরনের অনুসন্ধান চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ‘পরমাণু খনিজ ইনস্টিটিউট শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে ইউরেনিয়াম অনুসন্ধান করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ইউরেনিয়াম, থোরিয়ামের খোঁজে নেওয়া সর্বশেষ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৯৯৮ সালে। গত ২০ বছর ধরে এ বিষয়ে আর কোনো জরিপ পরিচালনা করেনি সরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অতীতে দু’দফা পর্যবেক্ষণমূলক রেডিওমেট্রিক জরিপে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেলেও আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল ও অনুসন্ধান চালানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে এতদিন তা সম্ভব হয়নি। সে জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করেছে।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বাপশক) সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ইউরেনিয়ামসহ বাংলাদেশে তেজস্ক্রিয় খনিজের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ১৯৭৬-১৯৮৫ সময়ে ‘এক্সপ্লোরেশন অব ইউরেনিয়াম অ্যান্ড থোরিয়াম ইন বাংলাদেশ (ইইউটিবি)’ প্রকল্পের মাধ্যমে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় পর্যবেক্ষণমূলক রেডিওমেট্রিক জরিপ পরিচালনা করা হয়। ১৯৯৫-১৯৯৮ সময়ে ‘এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেশন অব অ্যাটোমিক মিনারেলস : জয়পুরহাট-সিলেট এরিয়া ইন দ্য ডাউকি ফল্ট’ প্রকল্পের আওতায় ডাউকি চ্যুতি বরাবর সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জসহ বেশ কিছু সম্ভাবনাময় এলাকায় পর্যবেক্ষণমূলক রেডিওমেট্রিক জরিপ চালায় সরকার। তিনি জানান, জরিপ দুটির মাধ্যমে পরমাণু খনিজ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক ফলাফল থাকা সত্ত্বেও আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল ও অনুসন্ধান কাজে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বড় পরিসরে আর কোনো জরিপ করা হয়নি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বেশিরভাগ দেশই নিজস্ব ইউরেনিয়াম ব্যবহারের জন্য নতুন নতুন মজুদ অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লিতে জ্বালানি ব্যবহারের জন্য নিজস্ব উৎস থেকে ইউরেনিয়াম পাওয়ার অনুসন্ধানের কাজ ব্যাপক আকারে শুরু করতে হবে। সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রকল্পের পিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য (আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ) মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত। সভায় এ বিভাগের যুগ্ম-প্রধান ড. সেলিনা আক্তার বলেন, বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে তেজস্ক্রিয় ও অন্যান্য খনিজ অনুসন্ধানে মাঠ জরিপ পরিচালনা করা, পারমাণবিক স্থাপনার স্থান নির্বাচনে মাঠ জরিপসহ পরমাণু খনিজ ইনস্টিটিউট শক্তিশালীকরণে একটি প্রকল্প প্রস্তাব এসেছে। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ১৮৫ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যার পুরোটাই বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগানের কথা বলা হয়েছে। পিইসির সভায় বলা হয়, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো খনিজ অনুসন্ধান। প্রকল্পের আওতায় খনিজ অনুসন্ধানে ৫০ কোটি টাকা, জরিপ চালাতে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। সভায় এ খাতে ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরমাণু খনিজ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, খনিজ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে। সম্ভাব্য এলাকায় ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও ম্যাপিং কার্যক্রম, রেডিওমেট্রিক জরিপ ও উপযুক্ত গভীরতায় অনুসন্ধানমূলক বোরহোল লগিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ জরিপ প্রয়োজন।
আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক থাকায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রভাব পড়েনি দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। পেঁয়াজ, রসুন, চাল, ডালসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম রয়েছে ক্রয়সীমার মধ্যে।
গতকাল খাতুনগঞ্জে ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় নতুন পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৮-১৯, আর পুরোনোটি বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৭ টাকায়। খাজা ট্রেডার্সের মালিক আবদুল মান্নান জানান, এখন দেশি পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। তাই ভারতীয় পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন ‘প্রতি কেজি রসুন পাইকারিতে ৪৪-৪৭ টাকায় কিনছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া চীনা আদা ৬৮ এবং বার্মার আদা ৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মহাসড়কে যানজট না থাকায় সারা দেশে পণ্য সরবরাহ হচ্ছে দ্রুত। ফলে সরবরাহ ঘাটতি সৃষ্টি না হওয়ায় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, সংসদ নির্বাচন এলেই এক সময় এ বাজার থাকতো ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুর্হূতে পাইকারি ও খুচরা দুই বাজারেই ভোগ্যপণ্যের দাম তেমন বাড়েনি। ব্যবসায়ী সুমন কান্তি জানান, মসুর ডাল মানভেদে কেজিপ্রতি ৪২-৮০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি । বস্তাপ্রতি (৩৭ কেজি ) চিনি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭১৫ টাকায়। খাতুনগঞ্জের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বি আর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী অমল কান্তি দাশ জানান, প্রতি কেজি এলাচ ১ হাজার ১৫ টাকা এবং ব্রাজিলের লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ৬৭০ টাকায়। প্রতি কেজি সয়াবিন তেল ৮০-৮২ এবং পাম অয়েল ৫৫ টাকায় খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
এয়ার কন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত তামার পাইপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে অভিহিত মূল্যে ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করবে। গতকাল বিএসইসির নিয়মিত সভায় এ কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হয়।
পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ প্ল্যান্ট ও যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপন, ভবন নির্মাণ, ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও আইপিও খাতে ব্যয় করবে। ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১ টাকা ৩ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ১২ টাকা ৬ পয়সা। ভারিত গড় হারে ইপিএস দাঁড়ায় ৮৭ পয়সা। এ কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেড। কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত দুই বছরে কোম্পানির পণ্য বিক্রি হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি থেকে আয় ছিল ৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরের বছর ২০১৭ সালে পণ্য বিক্রি থেকে আয়ে চমক দেখা দেখা যায়। ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত কোম্পানির আয় এক লাফে ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এ হিসাবে এক বছরে কোম্পানির পণ্য বিক্রি থেকে আয় বাড়ে ২৮৪ শতাংশ। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির রেভিনিউ আসে ৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ। এ হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে কপারটেকের পণ্য বিক্রি থেকে আয় বেড়েছে ৫০৫ শতাংশ। কপারটেকের পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা, যা আইপিও পরবর্তী সময়ে ৬০ কোটি টাকায় উন্নীত হবে। ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল ১০ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের ৬ জুন পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে এ কোম্পানির পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ হচ্ছে ৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর সিলেটের হবিগঞ্জে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ২০১৪ সালের জুনে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় এ কোম্পানি। কোম্পানিটি মূলত এয়ার কন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত তামার পাইপ উৎপাদন করে থাকে। এছাড়া তার, বাস বার, স্ট্রিপ ইত্যাদি তামাপণ্য উৎপাদন করে থাকে। কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তা হচ্ছেন- আব্বাসি আদম আলী ও রশিদা আব্বাস। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে, যা আইপিও পরবর্তী সময়ে ৩০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে নেমে আসবে।
দ্যা ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) অ্যাওয়ার্ড ২০১৭ তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশ। ম্যানুফেকচারিং ক্যাটাগরিতে সেরা বার্ষিক প্রতিবেদনের জন্যে বিএটি বাংলাদেশকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
শেহজাদ মুনিম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিএটি বাংলাদেশ এবং তাহমিনা বেগম, অতিরিক্ত সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং নন-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, বিএটি বাংলাদেশ যৌথভাবে বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাত থেকে পুরস্কার নেন। গত সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে থাকা আর্সেনালের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান কমিয়ে আনার সুযোগ ছিল ম্যানচেস্টার সিটির। আজ বড় সেই সুযোগটা তারা হাতছাড়া করেছে। হ্যারি কেইনের রেকর্ড গড়া গোলে টটেনহামের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে গেছে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।
বল দখলে সিটি শুরু থেকে একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল। তবে ম্যাচের ১৫ মিনিটে সিটির রক্ষণের ভুলে বল পেয়ে টটেনহামকে এগিয়ে দেন কেইন। সিটির ডিফেন্ডার মানুয়েল আকনজির দুর্বল পাসে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পিয়া-এমিল হয়বিয়া বাড়ান কেইনকে। প্রথম স্পর্শে ডান পায়ের শটে গোলটি করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
এই গোলে তিনি টটেনহামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের মালিক হয়ে গেছেন। ২৬৭ গোল করে তিনি পেছনে ফেলেছেন টটেনহাম কিংবদন্তি জিমি গ্রিভসকে। ১৯৭০ সাল থেকে এই রেকর্ড নিজের করে রেখেছিলেন গ্রিভস।
ছন্দে থাকা সিটির তরুণ ফরোয়ার্ড আর্লিং হলান্ড এ দিন পুরোটা সময় নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। তার দিনটা আজ ভালো কাটেনি। গোল করার তেমন কোনো সুযোগই পাননি সিটির এই নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার।
এই হারে যদিও লিগ টেবিলে সিটির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে আজ জিতে গেলে আর্সেনালের সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধানটা কমিয়ে আনতে পারত তারা। ২১ ম্যাচ খেলে ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ৪৫। একটি ম্যাচ কম খেলে আর্সেনালের পয়েন্ট ৫০। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি হবে আর্সেনাল। ২২ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে টটেনহামের অবস্থান পঞ্চম। তৃতীয় স্থানে আছে নিউক্যাসল ইউনাইটেড (৪০ পয়েন্ট)।
অপেক্ষার অবসান হলো। হ্যারি কেইনের হাত ধরে যেন জিমি গ্রিভস সাম্রাজ্যের সাম্রাজ্যের পতন হলো। ৫৩ বছর ধরে যে রেকর্ড তিনি দখল করে রেখেছিলেন। সেটাই আজ ভাঙলেন হ্যারি কেইন। প্রিমিয়ার লিগের ইংলিশ ক্লাব টটেনহামের সর্বোচ্চ গোলের মালিক এখন হ্যারি।
রাতে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে টটেনহাম। জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক কেইন। ম্যাচের ১৫ মিনিটে সিটির ডিফেন্ডার মানুয়েল আকনজির দুর্বল পাসে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পিয়া-এমিল হয়বিয়া বাড়ান কেইনকে। প্রথম স্পর্শে ডান পায়ের শটে গোলটি করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
আর এই গোলে তিনি টটেনহামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের মালিক হয়ে গেছেন। ২৬৭ গোল করে তিনি পেছনে ফেলেছেন টটেনহাম কিংবদন্তি জিমি গ্রিভসকে। ১৯৭০ সাল থেকে এই রেকর্ড নিজের করে রেখেছিলেন গ্রিভস।
লন্ডনের ক্লাব টটেনহাম হটস্পার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কোনো শিরোপা জেতে না। তবুও ইংলিশ লিগে তারাই সেরা দল। দলটির অন্যতম ভরসার নাম হ্যারি কেইন। ইংলিশ এই স্ট্রাইকার ২০০৯ সালে যোগ দেওয়া ক্লাবটির হয়ে গড়ে চলেছেন একের পর এক রেকর্ড।
গত বছরের আগস্টে সার্জিও আগুয়েরোকে টপকে প্রিমিয়ার লিগে এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের কীর্তি গড়েন কেইন। গত ২৩ জানুয়ারি তিনি স্পর্শ করেছিলেন জিমি গ্রিভসকে। আজ ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে গোল করে তাকে ছাঁড়িয়ে যান তিনি। ভেঙে ফেলেন পাঁচ দশকের রেকর্ড।
রেকর্ডগড়া গোলে ম্যানসিটির বিপক্ষে টটেনহামকে জিতিয়ে ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান কেইন। তিনি ছাড়িয়ে যান জিমি গ্রিভসকে। কেইনের বর্তমান গোল সংখ্যা ২৬৭। সঙ্গে লন্ডন ডার্বিতে সবচেয়ে বেশি গোলের (৪৮) রেকর্ডও তার দখলে।
এই ম্যাচে প্রিমিয়ার লিগে ৩০০ ম্যাচ খেলার রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। সিটির বিপক্ষে গোল করে এই লিগে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ২০০ গোল করার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন কেইন। তার ওপরে আছেন শুধু অ্যালান শিয়ারার (২৬০) ও ওয়েন রুনি (২০৮)।
টটেনহাম ইতিহাসের শীর্ষ ৭ গোলদাতা
খেলোয়াড় |
গোল |
সময়কাল |
হ্যারি কেইন |
২৬৭ |
২০০৯-বর্তমান |
জিমি গ্রিভস |
২৬৬ |
১৯৬১-১৯৭০ |
ববি স্মিথ |
২০৮ |
১৯৫৫-১৯৬৪ |
মার্টিন গিভারস |
১৭৪ |
১৯৬৮-১৯৭৬ |
ক্লিফ জোন্স |
১৫৪ |
১৯৫৮-১৯৬৮ |
জারমেইন ডিফো |
১৪৩ |
২০০৩-২০০৮ |
সন হিউং-মিন |
১৩৯ |
২০১৫-বর্তমান |
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।