মন্দায় বছর পার পুঁজিবাজারের
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
পুঁজিবাজার ২০১৮
ডিএসইর দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৩৮ শতাংশ
-বিদেশি নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহার ৫৯৩ কোটি টাকা
-ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ
-২০ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে সিমেন্ট, ব্যাংক, এনবিএফআই ও রিয়েল এস্টেট খাত
টানা লোকসানে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা কমে যাওয়ায় পুঁজিবাজারের লেনদেন পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমেছে ৮৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অধিকাংশ শেয়ারের দরহ্রাসে ২০১৮ সালে সব ধরনের সূচকও কমেছে। বাজার মূলধনের পাশাপাশি কমে গেছে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ। সবমিলিয়ে ২০১৮ সাল পুঁজিবাজার কেটেছে মন্দায়। পুঁজিবাজারের মন্দার নেপথ্য কারণ ছিল, আসন্ন নির্বাচন, ব্যাংকের নগদ অর্থের সংকট ও বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার।
মন্দার বছর ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারের একমাত্র অর্জন ছিল ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা জোটের কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি। তবে চীনা জোটকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পেতে ডিএসইকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বিরোধিতা ও ভারতীয় চাপ উপেক্ষা করেই চীনা জোটের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে সংগ্রাম করতে হয়েছে ডিএসইকে। শেষ পর্যন্ত ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার ৯৬২ কোটি টাকায় কিনে নেয় চীনারা।
২০১৭ সালে কয়েকটি ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে পুরো পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সে সময় ব্যাংকসহ বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে সূচক ও লেনদেনে ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয়।
তবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত ঋণ প্রদান ও নগদ টাকার সংকটে পুঁজিবাজার আক্রান্ত হয়। এর প্রভাব পুরো বছরই ছিল। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিবর্তে শেয়ার বিক্রি করে। টানা সাত বছর নিট বিনিয়োগের পর ২০১৮ সালে বিদেশিরাও কিছু বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেন। ফলে বিক্রিচাপে পড়ে ২০১৮ সালের শুরু থেকেই মূল্যসূচক কমতে দেখা যায়। কমে যায় লেনদেনের পরিমাণও।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৮ সালে ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৮৩ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা বা ৩৮.৪৩ শতাংশ কম। ২০১৮ সালে দৈনিক গড়ে লেনদেন হয় ৫৫২ কোটি ৩ লাখ টাকাÑ যা আগের বছর ছিল ৮৭৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। চলতি বছর বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণও কমেছে।
২০১৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি লাখ টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ১১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা।
চলতি বছর বিদেশিরা নিট ৫৯৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অথচ আগের বছর বিদেশিরা ১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ করেন। সবমিলিয়ে ২০০৪ সাল থেকে বিদেশিদের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ রয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।
২০১৮ সালের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময় সূচকে প্রভাব বিস্তারকারী অধিকাংশ কোম্পানি দর হারিয়েছে। বর্তমানে শীর্ষ মূলধনী খাত ব্যাংকের ফ্রি-ফ্লোট (লেনদেনযোগ্য) শেয়ার বেশি থাকায় সূচকের এর প্রভাবও বেশি। ২০১৭ সালে এ খাতটি প্রায় ৬০ শতাংশ দর বাড়ে, যার ওপর ভিত্তি করে সূচকও সে সময় বেড়েছিল।
তবে ২০১৮ সালে এ খাতটি প্রায় ২১ শতাংশ দর হারিয়েছে। এর বাইরে ২০১৮ সালে সিমেন্ট, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিযোগাযোগ, রিয়েল এস্টেট, ফার্মাসিউটিক্যালস ও প্রকৌশলসহ অধিকাংশ শেয়ার দর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দর হারিয়েছে।
এরমধ্যে সিমেন্ট, ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট ও টেলিযোগাযোগ খাত ১৭ থেকে প্রায় ২৪ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে। ২০১৭ সালে এসব খাতের অধিকাংশের দর বেড়েছিল।
বড় মূলধনী শেয়ারের দরহ্রাসে ২০১৮ সালে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৮৫৮ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বা ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৫৩৮৫.৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যদিও এ বছরের প্রথম দিনে ডিএসইএক্স মূল্যসূচক সর্বোচ্চ ৬,৩১৮.২৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল।
এছাড়া ২০১৮ সালে ডিএসই ৩০ সূচক (ডিএস৩০) ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১৮৮০.৭৮ পয়েন্টে ও ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক (ডিএসইএস) ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ পয়েন্ট খুইয়েছে।
২০১৮ সালে লেনদেন ও সূচকের পাশাপাশি ডিএসই’র বাজার মূলধনও কমেছে।
এ সময় ডিএসই বাজার মূলধন আগের বছরের তুলনায় ৩৫ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ কমেছে। যদিও ২০১৮ সালে মোট ১২টি সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্ত হয়েছে। ২০১৮ সালের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ সমূহের মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ০৯, যা আগের বছর ছিল ১৪ দশমিক ২৯।
২০১৮ সালের শেষে জিডিপিতে বাজার মূলধনের অনুপাত দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ২১ শতাংশ, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।
থাইল্যান্ড (এসইটি) মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপির অনুপাত ১১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ইন্ডিয়া (বিএসই) ৮৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, পাকিস্তান (কেএসই) ২৮ দশমিক ২৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা (সিএসই) ২৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ, নেপাল (এনইপিএসই) ৭০ দশমিক ০১ শতাংশ এবং মালয়েশিয়া (বুরসা মালয়েশিয়া) ১৪২ দশমিক ২৪ শতাংশ। মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধির জন্য ভালো মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়ানো জরুরি।
২০১৮ সালে ২৯৬টি কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়, যার মধ্যে ১৭৯টি কোম্পানি ২ শতাংশ থেকে ৭৯০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, আগের বছর ১৮৭টি কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল।
চলতি বছর একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ মোট ১৪টি সিকিউরিটিজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র মাধ্যমে ৬০১ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৮টি সিকিউরিটিজ ২৪৯ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে।
এদিকে আইপিও অনুমোদন বাড়লেও রাইট ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ কমে গেছে। রাইট শেয়ার ইস্যু করে ২০১৮ সালে দুটি কোম্পানি ২৬৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। আগের বছর ৪টি কোম্পানি রাইট ইস্যুও মাধ্যমে ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। এর বাইরে বোনাস ইস্যুর মাধ্যমে ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা মূলধন বাড়িয়েছে ১৫৪টি কোম্পানি।
২০১৭ সালে ১৪২টি কোম্পানি বোনাস ইস্যুর মাধ্যমে ২ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার মূলধন বাড়ায়।২০১৮ সালের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে. এ. এম. মাজেদুর রহমান বলেন, নির্বাচনী বছর উপলক্ষে ২০১৮ সালে বাজার গতি কিছুটা মন্থর দেখা গেছে। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজার এমন একটি মাত্রায় অবস্থান করতে পেরেছে যার ফলে বাজারে তেমন কোনো সংকট দেখা দেয়নি।
কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে যুক্ত করা বাজারের জন্য ইতিবাচক দিক। তাদের অন্তর্ভুক্তি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আগামী বছর পুঁজিবাজার আরো সমৃদ্ধ হবে বলে জানান মাজেদুর রহমান। ২০১৯ সালে এমএমই ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালু হবে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

পুঁজিবাজার ২০১৮ ডিএসইর দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৩৮ শতাংশ -বিদেশি নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহার ৫৯৩ কোটি টাকা -ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ -২০ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে সিমেন্ট, ব্যাংক, এনবিএফআই ও রিয়েল এস্টেট খাত
টানা লোকসানে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা কমে যাওয়ায় পুঁজিবাজারের লেনদেন পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমেছে ৮৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অধিকাংশ শেয়ারের দরহ্রাসে ২০১৮ সালে সব ধরনের সূচকও কমেছে। বাজার মূলধনের পাশাপাশি কমে গেছে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ। সবমিলিয়ে ২০১৮ সাল পুঁজিবাজার কেটেছে মন্দায়। পুঁজিবাজারের মন্দার নেপথ্য কারণ ছিল, আসন্ন নির্বাচন, ব্যাংকের নগদ অর্থের সংকট ও বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার।
মন্দার বছর ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারের একমাত্র অর্জন ছিল ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা জোটের কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি। তবে চীনা জোটকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পেতে ডিএসইকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বিরোধিতা ও ভারতীয় চাপ উপেক্ষা করেই চীনা জোটের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে সংগ্রাম করতে হয়েছে ডিএসইকে। শেষ পর্যন্ত ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার ৯৬২ কোটি টাকায় কিনে নেয় চীনারা।
২০১৭ সালে কয়েকটি ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে পুরো পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সে সময় ব্যাংকসহ বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে সূচক ও লেনদেনে ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয়।
তবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত ঋণ প্রদান ও নগদ টাকার সংকটে পুঁজিবাজার আক্রান্ত হয়। এর প্রভাব পুরো বছরই ছিল। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিবর্তে শেয়ার বিক্রি করে। টানা সাত বছর নিট বিনিয়োগের পর ২০১৮ সালে বিদেশিরাও কিছু বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেন। ফলে বিক্রিচাপে পড়ে ২০১৮ সালের শুরু থেকেই মূল্যসূচক কমতে দেখা যায়। কমে যায় লেনদেনের পরিমাণও।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৮ সালে ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৮৩ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা বা ৩৮.৪৩ শতাংশ কম। ২০১৮ সালে দৈনিক গড়ে লেনদেন হয় ৫৫২ কোটি ৩ লাখ টাকাÑ যা আগের বছর ছিল ৮৭৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। চলতি বছর বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণও কমেছে।
২০১৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি লাখ টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ১১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা।
চলতি বছর বিদেশিরা নিট ৫৯৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অথচ আগের বছর বিদেশিরা ১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ করেন। সবমিলিয়ে ২০০৪ সাল থেকে বিদেশিদের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ রয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।
২০১৮ সালের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময় সূচকে প্রভাব বিস্তারকারী অধিকাংশ কোম্পানি দর হারিয়েছে। বর্তমানে শীর্ষ মূলধনী খাত ব্যাংকের ফ্রি-ফ্লোট (লেনদেনযোগ্য) শেয়ার বেশি থাকায় সূচকের এর প্রভাবও বেশি। ২০১৭ সালে এ খাতটি প্রায় ৬০ শতাংশ দর বাড়ে, যার ওপর ভিত্তি করে সূচকও সে সময় বেড়েছিল।
তবে ২০১৮ সালে এ খাতটি প্রায় ২১ শতাংশ দর হারিয়েছে। এর বাইরে ২০১৮ সালে সিমেন্ট, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিযোগাযোগ, রিয়েল এস্টেট, ফার্মাসিউটিক্যালস ও প্রকৌশলসহ অধিকাংশ শেয়ার দর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দর হারিয়েছে।
এরমধ্যে সিমেন্ট, ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট ও টেলিযোগাযোগ খাত ১৭ থেকে প্রায় ২৪ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে। ২০১৭ সালে এসব খাতের অধিকাংশের দর বেড়েছিল।
বড় মূলধনী শেয়ারের দরহ্রাসে ২০১৮ সালে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৮৫৮ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বা ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৫৩৮৫.৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যদিও এ বছরের প্রথম দিনে ডিএসইএক্স মূল্যসূচক সর্বোচ্চ ৬,৩১৮.২৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল।
এছাড়া ২০১৮ সালে ডিএসই ৩০ সূচক (ডিএস৩০) ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১৮৮০.৭৮ পয়েন্টে ও ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক (ডিএসইএস) ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ পয়েন্ট খুইয়েছে।
২০১৮ সালে লেনদেন ও সূচকের পাশাপাশি ডিএসই’র বাজার মূলধনও কমেছে।
এ সময় ডিএসই বাজার মূলধন আগের বছরের তুলনায় ৩৫ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ কমেছে। যদিও ২০১৮ সালে মোট ১২টি সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্ত হয়েছে। ২০১৮ সালের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ সমূহের মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ০৯, যা আগের বছর ছিল ১৪ দশমিক ২৯।
২০১৮ সালের শেষে জিডিপিতে বাজার মূলধনের অনুপাত দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ২১ শতাংশ, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।
থাইল্যান্ড (এসইটি) মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপির অনুপাত ১১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ইন্ডিয়া (বিএসই) ৮৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, পাকিস্তান (কেএসই) ২৮ দশমিক ২৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা (সিএসই) ২৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ, নেপাল (এনইপিএসই) ৭০ দশমিক ০১ শতাংশ এবং মালয়েশিয়া (বুরসা মালয়েশিয়া) ১৪২ দশমিক ২৪ শতাংশ। মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধির জন্য ভালো মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়ানো জরুরি।
২০১৮ সালে ২৯৬টি কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়, যার মধ্যে ১৭৯টি কোম্পানি ২ শতাংশ থেকে ৭৯০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, আগের বছর ১৮৭টি কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল।
চলতি বছর একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ মোট ১৪টি সিকিউরিটিজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র মাধ্যমে ৬০১ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৮টি সিকিউরিটিজ ২৪৯ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে।
এদিকে আইপিও অনুমোদন বাড়লেও রাইট ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ কমে গেছে। রাইট শেয়ার ইস্যু করে ২০১৮ সালে দুটি কোম্পানি ২৬৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। আগের বছর ৪টি কোম্পানি রাইট ইস্যুও মাধ্যমে ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। এর বাইরে বোনাস ইস্যুর মাধ্যমে ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা মূলধন বাড়িয়েছে ১৫৪টি কোম্পানি।
২০১৭ সালে ১৪২টি কোম্পানি বোনাস ইস্যুর মাধ্যমে ২ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার মূলধন বাড়ায়।২০১৮ সালের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে. এ. এম. মাজেদুর রহমান বলেন, নির্বাচনী বছর উপলক্ষে ২০১৮ সালে বাজার গতি কিছুটা মন্থর দেখা গেছে। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজার এমন একটি মাত্রায় অবস্থান করতে পেরেছে যার ফলে বাজারে তেমন কোনো সংকট দেখা দেয়নি।
কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে যুক্ত করা বাজারের জন্য ইতিবাচক দিক। তাদের অন্তর্ভুক্তি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আগামী বছর পুঁজিবাজার আরো সমৃদ্ধ হবে বলে জানান মাজেদুর রহমান। ২০১৯ সালে এমএমই ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালু হবে।