তেলের দরপতনে শ্লথ হতে পারে প্রবৃদ্ধি
রূপান্তর ডেস্ক | ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০
২০১৮ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতন নতুন বছরেও থাকতে পারে বলে মনে করছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। তারা বলছে, এটি হলে ২০১৯ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও শ্লথ হতে পারে।
ভবিষ্যৎ বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বোঝা যায় জ্বালানি তেলের ব্যবহারের ওপর। জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়লে অর্থনীতি চাঙা থাকে। আর তেলের চাহিদা কমলে উৎপাদন কমে যাওয়ার আভাস মিলে। বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য তুলে ধরে সিএনএন বলেছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোয় আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের ঘটনাও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় তেলের দরপতন অব্যাহত থাকলে প্রবৃদ্ধি আরো শ্লথ হয়ে পড়তে পারে।
বৈশ্বিক বাজারে তেলের দরপতনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও দুর্বল বৈশ্বিক অর্থনীতিকে দায়ী করা হচ্ছে। তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও তেলের দর বাড়ানোর লক্ষণ মিলছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ২০১৮ সালে বিশ্ব প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও ২০১৯ সালে তা ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার অর্থ হলো, জ্বালানি তেলের চাহিদা আরো কমে যাওয়া।
২০১৯ সালে ইউরোপ ও এশিয়ার উন্নত দেশগুলোতে তেলের চাহিদা আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। তারা বলেছে, ডলার কিংবা ইউরোর তুলনায় স্থানীয় মুদ্রার দরপতনের কারণে নতুন বছর ভারত, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাতেও তেলের চাহিদা কমবে।
সিএনএন বলেছে, গত অক্টোবরে ব্যারেলপ্রতি ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম ৭৬ ডলারে পৌঁছানোর পর ৪০ শতাংশ দরপতন হয়েছে। বৈশ্বিক বেঞ্চমার্কে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ব্রেন্ট জ্বালানি তেলের দর ২০১৭ সালের আগস্টের পর এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। দরপতন ঠেকাতে নভেম্বরে দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ কমাতে ছয় মাস মেয়াদি চুক্তি করে ওপেক ও সহযোগীরা। নতুন বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে দৈনিক ৮ লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ কমানোর কথা বলেছে তারা। রাশিয়া ও তেল রপ্তানিকারক অন্য দেশগুলোও প্রতিদিন বাড়তি চার লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ কমাবে। এসব ঘোষণার পর দর ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার লক্ষণ দেখা গেলেও তা স্থায়ী হয়নি।
ইনভেস্টমেন্ট প্লাটফর্ম এজে বেলের বিশ্লেষক রস মৌল্ড বলেন, ব্যারেলপ্রতি তেলের দর ৬০ ডলারের কম হলে ওপেক চুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়াতে পারে। দর ৮০ ডলারে উঠলে উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে পারে তারা।
নতুন বছরে বৈশ্বিক তেলের বাজারে কী হবে, তা নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন-মন্তব্য করেছেন আইএইচএস মার্কেটের তেলবাজার বিভাগের নির্বাহী পরিচালক স্পেন্সার ওয়েলচ। সিএনএনকে তিনি জানান, ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। গ্যাসোলিনের দাম বাড়–ক, তা চায় না বড় অর্থনীতির দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বাজার পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করবে। ওপেকের উৎপাদন কমানোর ওপরও বাজার পরিস্থিতি নির্ভর করবে। ১৯৭৩ সালের পর গত সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো তেল উৎপাদনে রাশিয়া ও সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদক দেশ তারা। জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চালচিত্র পাল্টে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শেল থেকে বিপুল তেল উৎপাদন। এ অবস্থায় ওপেক তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এফএক্সটিএমের বিশ্লেষক জামিল আহমাদ বলেন, ওপেকবহির্ভূত দেশগুলোর তেল উৎপাদনসক্ষমতা বেড়েছে। ফলে তেলের বাজারে ওপেকের প্রভাব কমেছে। এ ছাড়া তেলের বাজারে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কেউই এগিয়ে নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে ভবিষ্যৎ বাজার।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০

২০১৮ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতন নতুন বছরেও থাকতে পারে বলে মনে করছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। তারা বলছে, এটি হলে ২০১৯ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও শ্লথ হতে পারে।
ভবিষ্যৎ বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বোঝা যায় জ্বালানি তেলের ব্যবহারের ওপর। জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়লে অর্থনীতি চাঙা থাকে। আর তেলের চাহিদা কমলে উৎপাদন কমে যাওয়ার আভাস মিলে। বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য তুলে ধরে সিএনএন বলেছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোয় আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের ঘটনাও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় তেলের দরপতন অব্যাহত থাকলে প্রবৃদ্ধি আরো শ্লথ হয়ে পড়তে পারে।
বৈশ্বিক বাজারে তেলের দরপতনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও দুর্বল বৈশ্বিক অর্থনীতিকে দায়ী করা হচ্ছে। তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও তেলের দর বাড়ানোর লক্ষণ মিলছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ২০১৮ সালে বিশ্ব প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও ২০১৯ সালে তা ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার অর্থ হলো, জ্বালানি তেলের চাহিদা আরো কমে যাওয়া।
২০১৯ সালে ইউরোপ ও এশিয়ার উন্নত দেশগুলোতে তেলের চাহিদা আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। তারা বলেছে, ডলার কিংবা ইউরোর তুলনায় স্থানীয় মুদ্রার দরপতনের কারণে নতুন বছর ভারত, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাতেও তেলের চাহিদা কমবে।
সিএনএন বলেছে, গত অক্টোবরে ব্যারেলপ্রতি ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম ৭৬ ডলারে পৌঁছানোর পর ৪০ শতাংশ দরপতন হয়েছে। বৈশ্বিক বেঞ্চমার্কে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ব্রেন্ট জ্বালানি তেলের দর ২০১৭ সালের আগস্টের পর এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। দরপতন ঠেকাতে নভেম্বরে দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ কমাতে ছয় মাস মেয়াদি চুক্তি করে ওপেক ও সহযোগীরা। নতুন বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে দৈনিক ৮ লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ কমানোর কথা বলেছে তারা। রাশিয়া ও তেল রপ্তানিকারক অন্য দেশগুলোও প্রতিদিন বাড়তি চার লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ কমাবে। এসব ঘোষণার পর দর ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার লক্ষণ দেখা গেলেও তা স্থায়ী হয়নি।
ইনভেস্টমেন্ট প্লাটফর্ম এজে বেলের বিশ্লেষক রস মৌল্ড বলেন, ব্যারেলপ্রতি তেলের দর ৬০ ডলারের কম হলে ওপেক চুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়াতে পারে। দর ৮০ ডলারে উঠলে উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে পারে তারা।
নতুন বছরে বৈশ্বিক তেলের বাজারে কী হবে, তা নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন-মন্তব্য করেছেন আইএইচএস মার্কেটের তেলবাজার বিভাগের নির্বাহী পরিচালক স্পেন্সার ওয়েলচ। সিএনএনকে তিনি জানান, ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। গ্যাসোলিনের দাম বাড়–ক, তা চায় না বড় অর্থনীতির দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বাজার পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করবে। ওপেকের উৎপাদন কমানোর ওপরও বাজার পরিস্থিতি নির্ভর করবে। ১৯৭৩ সালের পর গত সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো তেল উৎপাদনে রাশিয়া ও সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদক দেশ তারা। জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চালচিত্র পাল্টে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শেল থেকে বিপুল তেল উৎপাদন। এ অবস্থায় ওপেক তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এফএক্সটিএমের বিশ্লেষক জামিল আহমাদ বলেন, ওপেকবহির্ভূত দেশগুলোর তেল উৎপাদনসক্ষমতা বেড়েছে। ফলে তেলের বাজারে ওপেকের প্রভাব কমেছে। এ ছাড়া তেলের বাজারে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কেউই এগিয়ে নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে ভবিষ্যৎ বাজার।