নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা ১.৭৬ লাখ
রিটার্ন দাখিল করে না অর্ধেকও
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০
যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকে (আরজেএসসি) বর্তমানে নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার, যার মধ্যে টিনধারী কোম্পানির সংখ্যা ৭০-৭৫ হাজার। মাত্র ৩৬ হাজার কোম্পানি প্রতি বছর রিটার্ন দাখিল করে থাকে। গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘অর্থ আইন ২০২০ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২’ শীর্ষক অনলাইন কর্মশালায় এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (আয়কর নীতি) মো. আলমগীর হোসেন।
তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখা, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান রাখা এবং কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলা প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখে এনবিআর চলতি বছরের বাজেট প্রণয়ন করেছে। তিনি বলেন, করদাতাদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিতে সরকার করকাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী বছর থেকে অনলাইনে ভ্যাট ও কর প্রদান প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব হবে। আলমগীর হোসেন বলেন, বছরের যেকোনো সময়ে এসআরও জারির মাধ্যমে করহার কমানো-বাড়ানোর ফলে ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচালনায় সমস্যা হয়। এ অবস্থা উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদে করনীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে এনবিআর কাজ করছে।
এ সময় করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে ভ্যাট প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বানও জানান ব্যবসায়ীরা। স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে এ বছর সারা বিশে^র মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় চলতি অর্থবছর জাতীয় বাজেটের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা এবং এ লক্ষ্যে এনবিআরের সঙ্গে ঢাকা চেম্বার কাজ করছে।
তিনি বলেন, এনবিআর চলতি বছর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করেছে, যা গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি।
শামস মাহমুদ বলেন, সরকারের বিশাল ব্যয়ের জন্য অর্থসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি এ বছর ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা কর ও ভ্যাট প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশকে উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিণত করার জন্য আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য করের আওতা বৃদ্ধি, ট্যাক্স ও ভ্যাট রিটার্ন পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইন করা, রিফান্ড পদ্ধতি সহজ করা প্রয়োজন।’
এ সময় শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে স্থাপিত নিবন্ধিত কারখানাগুলোকে লিজরেন্টের ওপর মূসক অব্যাহতি দেওয়ার আহ্বান জানান এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম কর হ্রাসের প্রস্তাব দেন তিনি। চেম্বারের সদস্যদের পাশাপাশি অন্যান্য করদাতার কর প্রদান প্রক্রিয়া বোধগম্য ও সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এ বছরও ‘ট্যাক্সগাইড ২০২০-২১’ প্রকাশ করা হয়েছে।
এনবিআর সদস্য (ভ্যাটনীতি) মো. মাসুদ সাদিক বলেন, দেশের ব্যবসায়ী সমাজের ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়া এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা প্রক্রিয়া সহজতর করার দাবি জানিয়ে আসছে এবং এনবিআরের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাবনাগুলো এনবিআরের কাছে লিখিতভাবে জমাদানের পাশাপাশি খাতভিত্তিক প্রস্তাবনাগুলো আলাদাভাবে সুনির্দিষ্ট বিভাগে জমাদানেরও প্রস্তাব করেন।
মাসুদ সাদিক জানান, ভ্যাট রিফান্ড প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক ক্ষেত্রেই বিলম্ব হচ্ছে, তবে এই প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে। এনবিআর ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প হাতে নিয়েছে যার মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে তা আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সবার ভোগান্তি লাঘব হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়নমূলক কর্মকা- পরিচালনার জন্য রাজস্ব আহরণের কোনো বিকল্প নেই, তবে সেটা যেন সবার জন্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তা নিশ্চিত করা হবে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০

যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকে (আরজেএসসি) বর্তমানে নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার, যার মধ্যে টিনধারী কোম্পানির সংখ্যা ৭০-৭৫ হাজার। মাত্র ৩৬ হাজার কোম্পানি প্রতি বছর রিটার্ন দাখিল করে থাকে। গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘অর্থ আইন ২০২০ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২’ শীর্ষক অনলাইন কর্মশালায় এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (আয়কর নীতি) মো. আলমগীর হোসেন।
তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখা, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান রাখা এবং কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলা প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখে এনবিআর চলতি বছরের বাজেট প্রণয়ন করেছে। তিনি বলেন, করদাতাদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিতে সরকার করকাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী বছর থেকে অনলাইনে ভ্যাট ও কর প্রদান প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব হবে। আলমগীর হোসেন বলেন, বছরের যেকোনো সময়ে এসআরও জারির মাধ্যমে করহার কমানো-বাড়ানোর ফলে ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচালনায় সমস্যা হয়। এ অবস্থা উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদে করনীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে এনবিআর কাজ করছে।
এ সময় করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে ভ্যাট প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বানও জানান ব্যবসায়ীরা। স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে এ বছর সারা বিশে^র মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় চলতি অর্থবছর জাতীয় বাজেটের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা এবং এ লক্ষ্যে এনবিআরের সঙ্গে ঢাকা চেম্বার কাজ করছে।
তিনি বলেন, এনবিআর চলতি বছর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করেছে, যা গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি।
শামস মাহমুদ বলেন, সরকারের বিশাল ব্যয়ের জন্য অর্থসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি এ বছর ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা কর ও ভ্যাট প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশকে উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিণত করার জন্য আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য করের আওতা বৃদ্ধি, ট্যাক্স ও ভ্যাট রিটার্ন পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইন করা, রিফান্ড পদ্ধতি সহজ করা প্রয়োজন।’
এ সময় শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে স্থাপিত নিবন্ধিত কারখানাগুলোকে লিজরেন্টের ওপর মূসক অব্যাহতি দেওয়ার আহ্বান জানান এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম কর হ্রাসের প্রস্তাব দেন তিনি। চেম্বারের সদস্যদের পাশাপাশি অন্যান্য করদাতার কর প্রদান প্রক্রিয়া বোধগম্য ও সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এ বছরও ‘ট্যাক্সগাইড ২০২০-২১’ প্রকাশ করা হয়েছে।
এনবিআর সদস্য (ভ্যাটনীতি) মো. মাসুদ সাদিক বলেন, দেশের ব্যবসায়ী সমাজের ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়া এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা প্রক্রিয়া সহজতর করার দাবি জানিয়ে আসছে এবং এনবিআরের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাবনাগুলো এনবিআরের কাছে লিখিতভাবে জমাদানের পাশাপাশি খাতভিত্তিক প্রস্তাবনাগুলো আলাদাভাবে সুনির্দিষ্ট বিভাগে জমাদানেরও প্রস্তাব করেন।
মাসুদ সাদিক জানান, ভ্যাট রিফান্ড প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক ক্ষেত্রেই বিলম্ব হচ্ছে, তবে এই প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে। এনবিআর ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প হাতে নিয়েছে যার মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে তা আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সবার ভোগান্তি লাঘব হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়নমূলক কর্মকা- পরিচালনার জন্য রাজস্ব আহরণের কোনো বিকল্প নেই, তবে সেটা যেন সবার জন্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তা নিশ্চিত করা হবে।