ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ সহজ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের জন্য ‘বিজনেস পার্টনার (বিপি)’ আইডি খোলার প্রক্রিয়া সহজ করতে অভিন্ন আবেদন ফরম চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ফলে দেশি-বিদেশি ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একই ধরনের ফরম পূরণ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপি আইডি খুলতে পারবেন। আবেদনের জন্য কী কী নথিপত্র জমা দিতে হবে তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল সোমবার এ সংক্রান্ত এক সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নির্দেশনার ফলে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মার্কেটে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেমন বেনিফিশিয়ারি ওনার (বিও) অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়, তেমনি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বিপি আইডি বাধ্যতামূলক। এত দিন একেক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান একেক পদ্ধতি অনুসরণ করে গ্রাহকদের বিপি আইডি খুলে আসছিল। এতে প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছিল গ্রাহকদের। এবার এই ভোগান্তি দূর হবে বলে আশা করছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এই আবেদন ফরম চালুর সিদ্ধান্ত নেয় ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ‘সরকারি সিকিউরিটিজ বিনিয়োগ উইন্ডো’ থেকে এই ফরম সংগ্রহ করে বিপি আইডি খোলা যাবে।’
তিনি জানান, বিপি আইডি খোলার পর গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মার্কেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এমআই) মডিউলে ঢোকার সুযোগ পাবে। সেখানে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি উভয় মার্কেটের সরকারি সিকিউরিটিজের কেনাবেচার সুযোগ রয়েছে।
কোন কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের বিপি আইডি খুলতে পারবে তার একটি তালিকাও সার্কুলারের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় ৪৪টি দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও দুইটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর বিদ্যমান ২৬৯টি ট্রেজারি বন্ড থেকে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিটি ভাগ থেকে পাঁচটি করে মোট ৩০টি বন্ড বেঞ্চমার্কের জন্য নির্বাচন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ড বিক্রি করে তাৎক্ষণিকভাবে কী পরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিত হতে পারছেন গ্রাহকরা।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, এক বছরের নিচের সরকারি সিকিউরিটিজ ট্রেজারি বিল নামে পরিচিত এবং ট্রেজারি বন্ড ২, ৫, ১০, ১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদের হয়।
দেশের যেকোনো ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি, বীমা প্রতিষ্ঠান, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, প্রভিডেন্ড ফান্ড ও পেনশন ফান্ড ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত কর্র্তৃপক্ষ ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে।
দেশের ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেনের জন্য হিসাব আছে এমন প্রবাসীরাও বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদান্তে মুনাফার হার প্রায় ৩ শতাংশ এবং ২০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদান্তে মুনাফা প্রায় ৭ শতাংশ।
সার্কুলারে বলা হয়, ব্যক্তি গ্রাহকরা ব্যাংকের হিসাব বিবরণী, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি, ছবি, কর শনাক্তকরণ নম্বর, নমিনির ছবি ও পরিচয়পত্র জমা দিয়ে বিপি আইডি খুলতে পারবেন।
অনিবাসী বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে বিদেশি মুদ্রা বা স্থানীয় মুদ্রায় পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের বিবরণীসহ অন্যান্য তথ্য দিতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইনকরপোরেশন সনদ ও নিবন্ধিত ঠিকানাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে বিপি আইডি খোলার আবেদন করা যাবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বড় ক্রেতা প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকগুলো। নন-প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকগুলোও এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। তবে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ তুলনামূলক কম। বিনিয়োগ বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের জন্য ‘বিজনেস পার্টনার (বিপি)’ আইডি খোলার প্রক্রিয়া সহজ করতে অভিন্ন আবেদন ফরম চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ফলে দেশি-বিদেশি ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একই ধরনের ফরম পূরণ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপি আইডি খুলতে পারবেন। আবেদনের জন্য কী কী নথিপত্র জমা দিতে হবে তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল সোমবার এ সংক্রান্ত এক সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নির্দেশনার ফলে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মার্কেটে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেমন বেনিফিশিয়ারি ওনার (বিও) অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়, তেমনি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বিপি আইডি বাধ্যতামূলক। এত দিন একেক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান একেক পদ্ধতি অনুসরণ করে গ্রাহকদের বিপি আইডি খুলে আসছিল। এতে প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছিল গ্রাহকদের। এবার এই ভোগান্তি দূর হবে বলে আশা করছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এই আবেদন ফরম চালুর সিদ্ধান্ত নেয় ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ‘সরকারি সিকিউরিটিজ বিনিয়োগ উইন্ডো’ থেকে এই ফরম সংগ্রহ করে বিপি আইডি খোলা যাবে।’
তিনি জানান, বিপি আইডি খোলার পর গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মার্কেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এমআই) মডিউলে ঢোকার সুযোগ পাবে। সেখানে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি উভয় মার্কেটের সরকারি সিকিউরিটিজের কেনাবেচার সুযোগ রয়েছে।
কোন কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের বিপি আইডি খুলতে পারবে তার একটি তালিকাও সার্কুলারের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় ৪৪টি দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও দুইটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর বিদ্যমান ২৬৯টি ট্রেজারি বন্ড থেকে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিটি ভাগ থেকে পাঁচটি করে মোট ৩০টি বন্ড বেঞ্চমার্কের জন্য নির্বাচন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ড বিক্রি করে তাৎক্ষণিকভাবে কী পরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিত হতে পারছেন গ্রাহকরা।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, এক বছরের নিচের সরকারি সিকিউরিটিজ ট্রেজারি বিল নামে পরিচিত এবং ট্রেজারি বন্ড ২, ৫, ১০, ১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদের হয়।
দেশের যেকোনো ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি, বীমা প্রতিষ্ঠান, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, প্রভিডেন্ড ফান্ড ও পেনশন ফান্ড ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত কর্র্তৃপক্ষ ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে।
দেশের ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেনের জন্য হিসাব আছে এমন প্রবাসীরাও বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদান্তে মুনাফার হার প্রায় ৩ শতাংশ এবং ২০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদান্তে মুনাফা প্রায় ৭ শতাংশ।
সার্কুলারে বলা হয়, ব্যক্তি গ্রাহকরা ব্যাংকের হিসাব বিবরণী, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি, ছবি, কর শনাক্তকরণ নম্বর, নমিনির ছবি ও পরিচয়পত্র জমা দিয়ে বিপি আইডি খুলতে পারবেন।
অনিবাসী বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে বিদেশি মুদ্রা বা স্থানীয় মুদ্রায় পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের বিবরণীসহ অন্যান্য তথ্য দিতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইনকরপোরেশন সনদ ও নিবন্ধিত ঠিকানাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে বিপি আইডি খোলার আবেদন করা যাবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বড় ক্রেতা প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকগুলো। নন-প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকগুলোও এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। তবে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ তুলনামূলক কম। বিনিয়োগ বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা।