লাখ কোটি টাকা আমানতের পথে অগ্রণী
পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রীয় অগ্রণী ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়ে ব্যাংকের দৃশ্যমান অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আমানত সংগ্রহ ও রেমিট্যান্স আহরণসহ অনেক কার্যক্রমে বড় ধরনের অগ্রগতি এসেছে। কীভাবে এটা সম্ভব করলেন?
দেশ স্বাধীনের পর তৎকালীন হাবিব ব্যাংক ও কমার্সকে একত্রীকরণের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় অগ্রণী ব্যাংকের। ‘অগ্রণী’ নামটিও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই দেওয়া। জাতির পিতার প্রতি আমরা সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানাতে পারব সেই দিন, যেদিন আমরা অগ্রে বা প্রথম দিকে থাকতে পারব। এটাই আমি সব কর্মীর মাথার ভেতর ঢোকানোর চেষ্টা করেছি। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নামটিকে সার্থক করতে চেষ্টা করেছি।
স্বাধীনতার পর অগ্রণী ব্যাংকের সংগৃহীত আমানত ছিল মাত্র ৯৭ কোটি টাকা। সেখান থেকে গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির আমানত বেড়ে ৯৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এখন আমাদের লক্ষ্য ১ লাখ কোটি টাকা আমানতের মাইলফলক অতিক্রম করা। মার্চ শেষ হলে যে তথ্য পাওয়া যাবে তাতে হয়তো এমনই চমক রয়েছে।
বর্তমানে মাত্র দুটি ব্যাংকের হাতে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক।
সম্পদের দিক দিয়েও এই মুহূর্তে আমরা তৃতীয় বৃহত্তর ব্যাংক। স্বাধীনতার পর ১৩৭ কোটি টাকা মোট সম্পদ নিয়ে শুরু হয় অগ্রণীর যাত্রা। ২০২০ এর ডিসেম্বর শেষে অগ্রণীর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। এই মুহূর্তে অগ্রণী ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।
রেমিট্যান্স আহরণে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যেও শীর্ষে অগ্রণী। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রেমিটাররা তো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সরকারি ব্যাংক হিসেবে কীভাবে এটা সম্ভব হলো?
আমরা গত বছরের ১৭ মার্চে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য একটি অ্যাপ চালু করি। করোনার মধ্যে ওই অ্যাপটি ব্যাপকভাবে কাজ করেছে। এই অ্যাপটি পরে মানিটারি অথোরিটি অফ সিঙ্গাপুরের একটি আন্তর্জাতিক ফিনটেক প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পেয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংক ২০২০ সালের জুলাই মাসে রেকর্ড ৪২ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে আনে। যা অগ্রণী ব্যাংকের ইতিহাসে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ। ওই মাসে দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ছিল ৬২.৭১ শতাংশ, অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫৩ শতাংশ।
এই রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত ডলার দিয়ে আমরা পদ্মা সেতুর অর্থায়নে ১৩০ কোটি ডলার জোগান দিয়েছি।
করোনার মধ্যে আমরা রেমিট্যান্সের ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে আরও এক শতাংশ প্রণোদনা যোগ করি। এটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। রমজান উপলক্ষে আবার দুই মাসের জন্য চালু হচ্ছে।
ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংক অনেক পিছিয়ে। এর কারণ কী? অগ্রণী ব্যাংকের ডিজিটাল সেবার কী কী অগ্রগতি রয়েছে?
কোর ব্যাংকিং সলিউশন (সিবিএস) সফটওয়্যারের সর্বশেষ ভার্সন নিয়ে আসছি আমরা। এতে আমাদের অনলাইনভিত্তিক লেনেদেনের সক্ষমতা আরও বাড়বে। গ্রাহকরা অনেক দ্রুত লেনদেন করতে পারবেন।
এছাড়া সরকারি ব্যাংকের মধ্যে আমরাই প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে আন্তঃলেনদেন চালু করি। আগে এ ধরনের সেবা একমুখী ছিল। আমরাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানো আবার আনার ব্যবস্থা চালু করি। অন্যান্য ব্যাংক এক্ষেত্রে আমাদের অনুসরণ করেছে।
তাছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়েও আমরা সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছি। আমাদের বর্তমানে ৪০০-এর মতো এজেন্ট আউটলেট রয়েছে। এসব এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা দেওয়া হচ্ছে। বৃত্তির টাকা বিতরণেও এগিয়ে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।
সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা শোনা যায়। আপনাদের ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমাতে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
গত বছর অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি খেলাপি ঋণ কমেছে। বর্তমানে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার মোট ঋণের তুলনায় ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। যা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা, গুণগত মান, উত্তম গ্রাহক সেবা ও স্থিতিশীল তারল্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। আর এজন্য গত বছরের ১৫ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) অর্জন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অগ্রণী ব্যাংককে প্রথম স্থান অর্জনকারী ব্যাংক হিসেবে ঘোষণা দেয়। এটা অগ্রণী ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত মর্যাদার একটি বিষয় বলে আমি মনে করি।
কৃষকদের জন্য অগ্রণী ব্যাংক কী করছে?
অবকাঠামো খাতে অবদানের পাশাপাশি কৃষি খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা করছি। অন্যান্য ব্যাংক কৃষকদের যেখানে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে, অগ্রণী ব্যাংক দিচ্ছে ৮.৫০ শতাংশ। ফলে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে। দেশে এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। অগ্রণীর ৯৬০টি শাখা থেকে এই কৃষিঋণ দেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জ্ঞানের বিস্তার ঘটাতে প্রথম বঙ্গবন্ধু কর্নার চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এটা এখন দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কীভাবে এই চিন্তা মাথায় এলো?
হ্যাঁ, এখন তো ব্যাংক খাতের বাইরেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক বড় ধরনের গবেষণা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনায়, বিদ্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। তবে এই উদ্যোগের শুরুটা এতটা সহজ ছিল না। একটা সময় তো বঙ্গবন্ধুর নামও নেওয়া যেত না।
তবে আমরা এত কিছু চিন্তা করে করিনি। হৃদয় থেকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য করেছি। ২০০৯ এর শেষ দিকে আমি যখন অগ্রণীর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হয়ে মৌলভীবাজার জেলায় বদলি হয়ে গেলাম, তখন থেকেই চিন্তা করছিলাম কীভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমি আমার শ্রদ্ধা জানাব। এই চিন্তা থেকে আমি ২০১০ সালে ছোট পরিসরে মৌলভীবাজার শাখায় বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা কিছু বই নিয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার গড়ে তুলি।
শুরুতে অনেক সমালোচনা হয়েছে। অনেকে বলেছে, আওয়ামী লীগ সরকারে না থাকলে চাকরি থাকবে না। কিন্তু আমি তো আওয়ামী লীগের জন্য করিনি। ব্যক্তি মুজিবের জন্য করেছি। বঙ্গবন্ধু না থাকলে দেশও স্বাধীন হতো না, আর এই অঞ্চলের ছেলেদের কখনো জিএম করা হতো না।’
ব্যক্তিগত জীবনে আমরা যেমন কাউকে শ্রদ্ধা জানাতে দোয়া করি বা কোনো ধরনের নৈবেদ্য প্রকাশ করি। তেমনি করপোরেট পর্যায়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আমি বঙ্গবন্ধু কর্নার গড়ে তোলার প্রয়াস নিই।
যখন ২০১৫ সালে আনসার-ভিডিপি ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দিলাম, তখন সেখানে দেখলাম চেয়ারম্যানের রুমের সামনের জায়গাটা প্রায় ফাঁকা পড়ে থাকে। তখন ওই জায়গাটায় বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রকাশিত বই, গান, ভাষণের সিডি এসব দিয়ে একটি লাইব্রেরির মতো গড়ে তুলি। সেখানে প্রথম গ্লাস ফাইবার দিয়ে বানানো বঙ্গবন্ধুর একটি আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়। যাতে সব সময় বঙ্গবন্ধুকে দেখছি বলে মনে হয়।
পরে ২০১৬ সালে অগ্রণী ব্যাংকে এমডি হয়ে এখানেও একটি কর্নার করেছি। এখানেও একটি আবক্ষ মূর্তি বসাই। ব্রোঞ্জের এই মূর্তিটির ওজন ১১৭ কেজি। এরপর ব্যাংক খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানই এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে জানা সম্ভব হচ্ছে। আর তাকে না জানা হলে বাংলাদেশকে জানা সম্ভব নয়।
শেয়ার করুন

পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রীয় অগ্রণী ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়ে ব্যাংকের দৃশ্যমান অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আমানত সংগ্রহ ও রেমিট্যান্স আহরণসহ অনেক কার্যক্রমে বড় ধরনের অগ্রগতি এসেছে। কীভাবে এটা সম্ভব করলেন?
দেশ স্বাধীনের পর তৎকালীন হাবিব ব্যাংক ও কমার্সকে একত্রীকরণের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় অগ্রণী ব্যাংকের। ‘অগ্রণী’ নামটিও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই দেওয়া। জাতির পিতার প্রতি আমরা সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানাতে পারব সেই দিন, যেদিন আমরা অগ্রে বা প্রথম দিকে থাকতে পারব। এটাই আমি সব কর্মীর মাথার ভেতর ঢোকানোর চেষ্টা করেছি। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নামটিকে সার্থক করতে চেষ্টা করেছি।
স্বাধীনতার পর অগ্রণী ব্যাংকের সংগৃহীত আমানত ছিল মাত্র ৯৭ কোটি টাকা। সেখান থেকে গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির আমানত বেড়ে ৯৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এখন আমাদের লক্ষ্য ১ লাখ কোটি টাকা আমানতের মাইলফলক অতিক্রম করা। মার্চ শেষ হলে যে তথ্য পাওয়া যাবে তাতে হয়তো এমনই চমক রয়েছে।
বর্তমানে মাত্র দুটি ব্যাংকের হাতে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক।
সম্পদের দিক দিয়েও এই মুহূর্তে আমরা তৃতীয় বৃহত্তর ব্যাংক। স্বাধীনতার পর ১৩৭ কোটি টাকা মোট সম্পদ নিয়ে শুরু হয় অগ্রণীর যাত্রা। ২০২০ এর ডিসেম্বর শেষে অগ্রণীর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। এই মুহূর্তে অগ্রণী ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।
রেমিট্যান্স আহরণে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যেও শীর্ষে অগ্রণী। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রেমিটাররা তো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সরকারি ব্যাংক হিসেবে কীভাবে এটা সম্ভব হলো?
আমরা গত বছরের ১৭ মার্চে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য একটি অ্যাপ চালু করি। করোনার মধ্যে ওই অ্যাপটি ব্যাপকভাবে কাজ করেছে। এই অ্যাপটি পরে মানিটারি অথোরিটি অফ সিঙ্গাপুরের একটি আন্তর্জাতিক ফিনটেক প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পেয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংক ২০২০ সালের জুলাই মাসে রেকর্ড ৪২ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে আনে। যা অগ্রণী ব্যাংকের ইতিহাসে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ। ওই মাসে দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ছিল ৬২.৭১ শতাংশ, অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫৩ শতাংশ।
এই রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত ডলার দিয়ে আমরা পদ্মা সেতুর অর্থায়নে ১৩০ কোটি ডলার জোগান দিয়েছি।
করোনার মধ্যে আমরা রেমিট্যান্সের ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে আরও এক শতাংশ প্রণোদনা যোগ করি। এটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। রমজান উপলক্ষে আবার দুই মাসের জন্য চালু হচ্ছে।
ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংক অনেক পিছিয়ে। এর কারণ কী? অগ্রণী ব্যাংকের ডিজিটাল সেবার কী কী অগ্রগতি রয়েছে?
কোর ব্যাংকিং সলিউশন (সিবিএস) সফটওয়্যারের সর্বশেষ ভার্সন নিয়ে আসছি আমরা। এতে আমাদের অনলাইনভিত্তিক লেনেদেনের সক্ষমতা আরও বাড়বে। গ্রাহকরা অনেক দ্রুত লেনদেন করতে পারবেন।
এছাড়া সরকারি ব্যাংকের মধ্যে আমরাই প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে আন্তঃলেনদেন চালু করি। আগে এ ধরনের সেবা একমুখী ছিল। আমরাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানো আবার আনার ব্যবস্থা চালু করি। অন্যান্য ব্যাংক এক্ষেত্রে আমাদের অনুসরণ করেছে।
তাছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়েও আমরা সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছি। আমাদের বর্তমানে ৪০০-এর মতো এজেন্ট আউটলেট রয়েছে। এসব এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা দেওয়া হচ্ছে। বৃত্তির টাকা বিতরণেও এগিয়ে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।
সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা শোনা যায়। আপনাদের ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমাতে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
গত বছর অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি খেলাপি ঋণ কমেছে। বর্তমানে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার মোট ঋণের তুলনায় ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। যা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা, গুণগত মান, উত্তম গ্রাহক সেবা ও স্থিতিশীল তারল্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। আর এজন্য গত বছরের ১৫ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) অর্জন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অগ্রণী ব্যাংককে প্রথম স্থান অর্জনকারী ব্যাংক হিসেবে ঘোষণা দেয়। এটা অগ্রণী ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত মর্যাদার একটি বিষয় বলে আমি মনে করি।
কৃষকদের জন্য অগ্রণী ব্যাংক কী করছে?
অবকাঠামো খাতে অবদানের পাশাপাশি কৃষি খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা করছি। অন্যান্য ব্যাংক কৃষকদের যেখানে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে, অগ্রণী ব্যাংক দিচ্ছে ৮.৫০ শতাংশ। ফলে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে। দেশে এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। অগ্রণীর ৯৬০টি শাখা থেকে এই কৃষিঋণ দেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জ্ঞানের বিস্তার ঘটাতে প্রথম বঙ্গবন্ধু কর্নার চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এটা এখন দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কীভাবে এই চিন্তা মাথায় এলো?
হ্যাঁ, এখন তো ব্যাংক খাতের বাইরেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক বড় ধরনের গবেষণা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনায়, বিদ্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। তবে এই উদ্যোগের শুরুটা এতটা সহজ ছিল না। একটা সময় তো বঙ্গবন্ধুর নামও নেওয়া যেত না।
তবে আমরা এত কিছু চিন্তা করে করিনি। হৃদয় থেকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য করেছি। ২০০৯ এর শেষ দিকে আমি যখন অগ্রণীর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হয়ে মৌলভীবাজার জেলায় বদলি হয়ে গেলাম, তখন থেকেই চিন্তা করছিলাম কীভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমি আমার শ্রদ্ধা জানাব। এই চিন্তা থেকে আমি ২০১০ সালে ছোট পরিসরে মৌলভীবাজার শাখায় বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা কিছু বই নিয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার গড়ে তুলি।
শুরুতে অনেক সমালোচনা হয়েছে। অনেকে বলেছে, আওয়ামী লীগ সরকারে না থাকলে চাকরি থাকবে না। কিন্তু আমি তো আওয়ামী লীগের জন্য করিনি। ব্যক্তি মুজিবের জন্য করেছি। বঙ্গবন্ধু না থাকলে দেশও স্বাধীন হতো না, আর এই অঞ্চলের ছেলেদের কখনো জিএম করা হতো না।’
ব্যক্তিগত জীবনে আমরা যেমন কাউকে শ্রদ্ধা জানাতে দোয়া করি বা কোনো ধরনের নৈবেদ্য প্রকাশ করি। তেমনি করপোরেট পর্যায়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আমি বঙ্গবন্ধু কর্নার গড়ে তোলার প্রয়াস নিই।
যখন ২০১৫ সালে আনসার-ভিডিপি ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দিলাম, তখন সেখানে দেখলাম চেয়ারম্যানের রুমের সামনের জায়গাটা প্রায় ফাঁকা পড়ে থাকে। তখন ওই জায়গাটায় বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রকাশিত বই, গান, ভাষণের সিডি এসব দিয়ে একটি লাইব্রেরির মতো গড়ে তুলি। সেখানে প্রথম গ্লাস ফাইবার দিয়ে বানানো বঙ্গবন্ধুর একটি আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়। যাতে সব সময় বঙ্গবন্ধুকে দেখছি বলে মনে হয়।
পরে ২০১৬ সালে অগ্রণী ব্যাংকে এমডি হয়ে এখানেও একটি কর্নার করেছি। এখানেও একটি আবক্ষ মূর্তি বসাই। ব্রোঞ্জের এই মূর্তিটির ওজন ১১৭ কেজি। এরপর ব্যাংক খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানই এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে জানা সম্ভব হচ্ছে। আর তাকে না জানা হলে বাংলাদেশকে জানা সম্ভব নয়।