৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০
করোনায় পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দিয়ে যে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল, তা ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার সর্বনিম্ন দরে আটকে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৬৬টির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করেছে কমিশন, যা আজ থেকে কার্যকর হবে। গতকাল কমিশনের নিয়মিত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়াতে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঝুঁকি নিয়েছে এসইসি। সর্বনিম্ন মূল্যের সীমারেখা প্রত্যাহারের ফলে তালিকাভুক্ত ৬৬টি কোম্পানির শেয়ার দর কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। যার প্রভাব অন্যান্য শেয়ারেও পড়তে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত এখন নেওয়া ঠিক হয়নি। গত তিন দিন বাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকলেও করোনার কারণে এখনো অস্থিরতা রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ এখনো সাইডলাইনে রয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষ সময়ে ফ্লোর তুলে নেওয়ার এমন পরীক্ষামূলক কাজটি করা যেত। সে সময়ে বাজারের টানা ঊর্ধ্বমুখী ধারার কারণে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানির সংখ্যা তিন-চারটিতে নেমেছিল। ফ্লোর প্রাইস থাকায় বাজারের মন্দার সময়েও বিনিয়োগকারীরা সুরক্ষা পেয়েছিল।
অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, শেয়ার দর কমলেও লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে, যা পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এসইসি সূত্র জানিয়েছে, দরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে গতকাল পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা যেসব শেয়ারের দর সর্বোচ্চ ৫০ টাকা রয়েছে, সেসব কোম্পানি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এসব কোম্পানির সম্মিলিত বাজার মূলধন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনের কত শতাংশ, তাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এসইসি জানিয়েছে, যে ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাজার মূলধন পুরো বাজারের ৫ শতাংশের সামান্য বেশি। তাই বাজারের বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকলে সূচকে তেমন নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে না। গত এক বছর ফ্লোর প্রাইসের কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কোম্পানির কোনো শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না।
এ বিষয়ে এসইসির মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস কোনো চিরস্থায়ী ব্যবস্থা নয়। বাজারে লেনদেন বাড়াতে চাইলে প্রতিটি শেয়ারের লিকুইডিটি থাকতে হবে। তাই পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা দেখেছি গত ৫ এপ্রিলে ১১০টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে ছিল। এর মধ্যে ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমরা পর্যালোচনায় করে দেখেছি, সীমারেখা তুলে দেওয়ায় এসব শেয়ারের মূল্য কমতে পারে। তবে ইতিবাচক দিকও রয়েছে। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কারণে টার্নওভার বাড়বে, লিকুইডিটি বাড়বে। এসব শেয়ারে যারা আটকে ছিলেন, তারা এখন এগুলো বিক্রি করে চাইলে মৌলভিত্তির অন্য শেয়ারেও যেতে পারবেন। ইনডেক্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এর পরিমাণ তুলনামূলক কম। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে এর প্রভাব তেমন দেখাও যাবে না বলে মনে করেন রেজাউল করিম। অবশ্য বাজারে পতন ঘটলে তখন ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার প্রভাব দৃশ্যমান হতে পারে।
দেশে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্তের পুঁজিবাজারে ২০২০ সালের ১২ মার্চ থেকে বড় ধরনের পতন দেখা দিলে সরকারের পরামর্শে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে তৎকালীন কমিশন। আগের পাঁচ কার্যদিবসের গড়মূল্য প্রারম্ভিক মূল্য নির্ধারণ করায় ওই বছরের ১৯ মার্চ বেশিরভাগ শেয়ারের দর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। সেদিন ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ বা ৩৭১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। শেয়ার দর বেড়ে যাওয়ার কারণে গত এক বছর বিভিন্ন সময়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার লেনদেন হয়নি।
গতকাল যে ৬৬টি কোম্পানির শেয়ার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বস্ত্র খাতের ২১টি, প্রকৌশল খাতের ১১টি ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের ১০ কোম্পানি রয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে পিপলস লিজিং, আর এন স্পিনিং মিলস, বাংলাদেশ সার্ভিসেস, আইএফএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, জাহিন স্পিনিং, রিংসাইন টেক্সটাইলস, অলিম্পিক একসেসরিজ, ডিবিএইচ মিউচুয়াল ফান্ড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, নুরানি ডাইং, রিজেন্ট টেক্সটাইল, ইভিন্স টেক্সটাইল, প্যাসিফিক ডেনিমস, মেট্রো স্পিনিং, কাট্টালী টেক্সটাইল, ফার কেমিক্যাল, দেশবন্ধু পলিমার, ইয়াকিন পলিমার, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, বিচ হ্যাচারি, সিমটেক্স, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, হামিদ ফেব্রিকস, সায়হাম কটন, বিবিএস, গোল্ডেন হারভেস্ট, এএফসি এগ্রো বায়োটেক, রতনপুর স্টিল, শাশা ডেনিমস, রূপালী ব্যাংক, নাভানা সিএনজি, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, এমএল ডায়িং, ডেসকো প্রমুখ।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০

করোনায় পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দিয়ে যে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল, তা ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার সর্বনিম্ন দরে আটকে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৬৬টির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করেছে কমিশন, যা আজ থেকে কার্যকর হবে। গতকাল কমিশনের নিয়মিত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়াতে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঝুঁকি নিয়েছে এসইসি। সর্বনিম্ন মূল্যের সীমারেখা প্রত্যাহারের ফলে তালিকাভুক্ত ৬৬টি কোম্পানির শেয়ার দর কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। যার প্রভাব অন্যান্য শেয়ারেও পড়তে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত এখন নেওয়া ঠিক হয়নি। গত তিন দিন বাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকলেও করোনার কারণে এখনো অস্থিরতা রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ এখনো সাইডলাইনে রয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষ সময়ে ফ্লোর তুলে নেওয়ার এমন পরীক্ষামূলক কাজটি করা যেত। সে সময়ে বাজারের টানা ঊর্ধ্বমুখী ধারার কারণে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানির সংখ্যা তিন-চারটিতে নেমেছিল। ফ্লোর প্রাইস থাকায় বাজারের মন্দার সময়েও বিনিয়োগকারীরা সুরক্ষা পেয়েছিল।
অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, শেয়ার দর কমলেও লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে, যা পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এসইসি সূত্র জানিয়েছে, দরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে গতকাল পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা যেসব শেয়ারের দর সর্বোচ্চ ৫০ টাকা রয়েছে, সেসব কোম্পানি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এসব কোম্পানির সম্মিলিত বাজার মূলধন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনের কত শতাংশ, তাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এসইসি জানিয়েছে, যে ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাজার মূলধন পুরো বাজারের ৫ শতাংশের সামান্য বেশি। তাই বাজারের বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকলে সূচকে তেমন নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে না। গত এক বছর ফ্লোর প্রাইসের কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কোম্পানির কোনো শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না।
এ বিষয়ে এসইসির মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস কোনো চিরস্থায়ী ব্যবস্থা নয়। বাজারে লেনদেন বাড়াতে চাইলে প্রতিটি শেয়ারের লিকুইডিটি থাকতে হবে। তাই পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা দেখেছি গত ৫ এপ্রিলে ১১০টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে ছিল। এর মধ্যে ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমরা পর্যালোচনায় করে দেখেছি, সীমারেখা তুলে দেওয়ায় এসব শেয়ারের মূল্য কমতে পারে। তবে ইতিবাচক দিকও রয়েছে। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কারণে টার্নওভার বাড়বে, লিকুইডিটি বাড়বে। এসব শেয়ারে যারা আটকে ছিলেন, তারা এখন এগুলো বিক্রি করে চাইলে মৌলভিত্তির অন্য শেয়ারেও যেতে পারবেন। ইনডেক্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এর পরিমাণ তুলনামূলক কম। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে এর প্রভাব তেমন দেখাও যাবে না বলে মনে করেন রেজাউল করিম। অবশ্য বাজারে পতন ঘটলে তখন ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার প্রভাব দৃশ্যমান হতে পারে।
দেশে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্তের পুঁজিবাজারে ২০২০ সালের ১২ মার্চ থেকে বড় ধরনের পতন দেখা দিলে সরকারের পরামর্শে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে তৎকালীন কমিশন। আগের পাঁচ কার্যদিবসের গড়মূল্য প্রারম্ভিক মূল্য নির্ধারণ করায় ওই বছরের ১৯ মার্চ বেশিরভাগ শেয়ারের দর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। সেদিন ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ বা ৩৭১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। শেয়ার দর বেড়ে যাওয়ার কারণে গত এক বছর বিভিন্ন সময়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার লেনদেন হয়নি।
গতকাল যে ৬৬টি কোম্পানির শেয়ার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বস্ত্র খাতের ২১টি, প্রকৌশল খাতের ১১টি ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের ১০ কোম্পানি রয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে পিপলস লিজিং, আর এন স্পিনিং মিলস, বাংলাদেশ সার্ভিসেস, আইএফএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, জাহিন স্পিনিং, রিংসাইন টেক্সটাইলস, অলিম্পিক একসেসরিজ, ডিবিএইচ মিউচুয়াল ফান্ড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, নুরানি ডাইং, রিজেন্ট টেক্সটাইল, ইভিন্স টেক্সটাইল, প্যাসিফিক ডেনিমস, মেট্রো স্পিনিং, কাট্টালী টেক্সটাইল, ফার কেমিক্যাল, দেশবন্ধু পলিমার, ইয়াকিন পলিমার, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, বিচ হ্যাচারি, সিমটেক্স, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, হামিদ ফেব্রিকস, সায়হাম কটন, বিবিএস, গোল্ডেন হারভেস্ট, এএফসি এগ্রো বায়োটেক, রতনপুর স্টিল, শাশা ডেনিমস, রূপালী ব্যাংক, নাভানা সিএনজি, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, এমএল ডায়িং, ডেসকো প্রমুখ।