পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ ছাড় দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
কয়েক মাসের টানাপড়েনের পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নিয়ে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে বিবেচনার আশ^াস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে পুুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) দাবি অনুযায়ী বন্ডকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমার বাইরে রাখার বিষয়টিতেও সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন এসইসির কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ।
গতকাল মঙ্গলবার পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ডেপুটি গভর্নর সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল অংশগ্রহণ করে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এজেন্ডা ছিল পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অদাবিকৃত লভ্যাংশ হস্তান্তর ও কোনো কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান থাকার পরও লভ্যাংশ ঘোষণা বিষয়ে এসইসির পূর্বের নির্দেশনা। গতকাল এ দুই বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও এসইসি সূত্র জানিয়েছে।
সূচকে টানা ঊর্ধ্বমুখী ধারা তৈরি হলে গত আগস্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রণোদনার ঋণের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ফলে সূচক টানা ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে বলেও অভিযোগ তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের বিনিয়োগেও কড়াকড়ি আরোপসহ কঠোর নজরদারির উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংককেও জরিমানা করে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন কঠোর অবস্থানের পর গত দেড় মাস ধরে পুঁজিবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা ও আতঙ্ক দেখা দেয়। বিনিয়োগকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শেয়ার বিক্রি করে সাইড লাইনে ফিরে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এসইসিও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়।
দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে নিয়মিত দরপতন দেখা দেয়। দেড় মাসের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ৯ শতাংশের বেশি পয়েন্ট হারায়। বাজারে আরও পতনের শঙ্কায় দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে আলোচনার দাবি উঠে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুটি বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিলে গতকাল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসির কর্মকর্তারা একমত পোষণ করেছেন বলে এসইসির কমিশনার জানিয়েছেন।
গতকালের বৈঠকে এসইসির পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে গণনা করা, বন্ডে বিনিয়োগ ব্যাংকের পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখাসহ বিভিন্ন পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক দরপতন বিষয় তুলে ধরা হয়। এছাড়া করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড (সিজিসি) পরিপালনের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
গতকালের বৈঠক শেষে এসইসির কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আলোচনা খুবই আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়েছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ। বর্তমানে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজারমূল্যে গণনা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে দাবি ছিল এটি যাতে ক্রয়মূল্যে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এটি বিবেচনা করবে বলে সম্মত হয়েছে। এছাড়া বন্ডে বিনিয়োগ ব্যাংকের ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোজারের বাইরে রাখার বিষয়টিও তারা মেনে নিয়েছে। তবে আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখাবে।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে আপত্তি ছিল, আমরাও তা মেনে নিয়েছি। এ বিষয়ে সংজ্ঞা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া পুঞ্জীভূত লোকসান থাকলেও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যাতে সর্বশেষ হিসাব বছরের মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিতে পারার বিষয়টিও তারা মেনে নিয়েছে। এর বাইরে পুঁজিবাজারের স্বার্থে আইসিবির ক্ষেত্রে একক ঋণগ্রহীতার সীমায় ছাড়ের বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্মত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল ও লভ্যাংশ বিষয়ে দুপক্ষ একমত হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে ব্যাংকের বিনিয়োগ ক্রয়মূল্যে বিবেচনা কিংবা বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখার বিষয়টিতে শুধু আলোচনা হয়েছে। কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা জানিয়েছি, এ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করা হবে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

কয়েক মাসের টানাপড়েনের পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নিয়ে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে বিবেচনার আশ^াস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে পুুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) দাবি অনুযায়ী বন্ডকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমার বাইরে রাখার বিষয়টিতেও সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন এসইসির কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ।
গতকাল মঙ্গলবার পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ডেপুটি গভর্নর সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল অংশগ্রহণ করে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এজেন্ডা ছিল পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অদাবিকৃত লভ্যাংশ হস্তান্তর ও কোনো কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান থাকার পরও লভ্যাংশ ঘোষণা বিষয়ে এসইসির পূর্বের নির্দেশনা। গতকাল এ দুই বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও এসইসি সূত্র জানিয়েছে।
সূচকে টানা ঊর্ধ্বমুখী ধারা তৈরি হলে গত আগস্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রণোদনার ঋণের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ফলে সূচক টানা ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে বলেও অভিযোগ তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের বিনিয়োগেও কড়াকড়ি আরোপসহ কঠোর নজরদারির উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংককেও জরিমানা করে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন কঠোর অবস্থানের পর গত দেড় মাস ধরে পুঁজিবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা ও আতঙ্ক দেখা দেয়। বিনিয়োগকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শেয়ার বিক্রি করে সাইড লাইনে ফিরে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এসইসিও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়।
দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে নিয়মিত দরপতন দেখা দেয়। দেড় মাসের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ৯ শতাংশের বেশি পয়েন্ট হারায়। বাজারে আরও পতনের শঙ্কায় দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে আলোচনার দাবি উঠে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুটি বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিলে গতকাল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসির কর্মকর্তারা একমত পোষণ করেছেন বলে এসইসির কমিশনার জানিয়েছেন।
গতকালের বৈঠকে এসইসির পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে গণনা করা, বন্ডে বিনিয়োগ ব্যাংকের পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখাসহ বিভিন্ন পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক দরপতন বিষয় তুলে ধরা হয়। এছাড়া করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড (সিজিসি) পরিপালনের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
গতকালের বৈঠক শেষে এসইসির কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আলোচনা খুবই আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়েছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ। বর্তমানে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজারমূল্যে গণনা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে দাবি ছিল এটি যাতে ক্রয়মূল্যে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এটি বিবেচনা করবে বলে সম্মত হয়েছে। এছাড়া বন্ডে বিনিয়োগ ব্যাংকের ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোজারের বাইরে রাখার বিষয়টিও তারা মেনে নিয়েছে। তবে আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখাবে।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে আপত্তি ছিল, আমরাও তা মেনে নিয়েছি। এ বিষয়ে সংজ্ঞা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া পুঞ্জীভূত লোকসান থাকলেও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যাতে সর্বশেষ হিসাব বছরের মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিতে পারার বিষয়টিও তারা মেনে নিয়েছে। এর বাইরে পুঁজিবাজারের স্বার্থে আইসিবির ক্ষেত্রে একক ঋণগ্রহীতার সীমায় ছাড়ের বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্মত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল ও লভ্যাংশ বিষয়ে দুপক্ষ একমত হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে ব্যাংকের বিনিয়োগ ক্রয়মূল্যে বিবেচনা কিংবা বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখার বিষয়টিতে শুধু আলোচনা হয়েছে। কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা জানিয়েছি, এ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করা হবে।