অনলাইনে ব্যাংকের শতভাগ শাখা
শেখ শাফায়াত হোসেন | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
দেশে বর্তমানে ১০ হাজার ৮০৫টি শাখা অনলাইনের আওতায় রয়েছে। বাকি ৭টি শাখায় রয়েছে আংশিক অনলাইন সেবা। ফলে কোনো শাখাই এখন আর পুরোপুরি অফলাইনে বা পুরনো ধারার লেজারভিত্তিক ব্যাংক সেবায় নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩০৮টি ব্যাংক শাখা আংশিক অনলাইন থেকে বেরিয়ে পূর্ণাঙ্গ অনলাইন সেবায় চলে এসেছে। বাকি রয়েছে মাত্র ৭টি। তাছাড়া গত বছরের নভেম্বর থেকে দেশের অফলাইন ব্যাংক শাখার সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারীর মধ্যে অনলাইন ব্যাংকিং শাখার প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে। এ কারণে গত এক বছরে তিন শতাধিক পুরনো শাখাকে পুরোপুরি অনলাইনে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে কভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪১টি নতুন শাখা চালু করেছে দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলো। গত বছরের একই সময়ে নতুন শাখা খোলা হয়েছিল ৬২টি। সেই হিসেবে চলতি বছরে ব্যাংকের নতুন শাখা বেড়েছে প্রায় ১২৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশে ব্যাংক শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার ৮১২টিতে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে ব্যাংক শাখার সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৬৭১টি। দেশে কার্যরত ব্যাংক শাখাগুলোর ৪৮ শতাংশই বর্তমানে গ্রামীণ জনপদে।
করোনা মহামারীর মধ্যে ব্যাংকসহ সব খাতের ব্যবসা কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রণোদনার ঋণ বিতরণসহ বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকের ব্যবসা ধীরে ধীরে স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে ফিরছে। তাছাড়া সরকারি বন্ডে বিনিয়োগসহ স্বল্পমেয়াদি অনেক ধরনের বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
ফলে চলতি ২০২১ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে ১টি ছাড়া বাকি ব্যাংকগুলো মুনাফার ধারায় ছিল। আলোচিত সময়ে এ খাতের ব্যাংকগুলোর কর-পরবর্তী মোট মুনাফা দাঁড়ায় ৬ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। যেখানে ২০২০ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর মোট মুনাফা ছিল ৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকগুলোর মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা।
গতকাল শনিবার (৪ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের উদ্যোগে অনেক দেশ আন্তর্জাতিক ব্যাংক দিবস পালন করে। তবে বাংলাদেশে এ দিবস পালনে আলাদা কোনো কার্যক্রম হাতে নিতে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, সদস্য দেশগুলোর মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ব্যাংকের অবদান বাড়াতে টেকসই প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক গঠনের গুরুত্ব বোঝাতে ২০১৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ব্যাংক দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ।
প্রসঙ্গত, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণ ও সব পর্যায়ের মানুষের ব্যাংকিং সেবায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা রয়েছে। বাংলাদেশও এসব লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক ব্যাংক থাকলেও বড় আকারের কোনো ব্যাংক নেই। বিশ্ব পরিমাপে কোনো ব্যাংক এখনো তহবিল করতে পারেনি। কারণ আমাদের চাহিদার তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি।’
‘আমাদের একটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ যে সম্পদ আছে, সেটা আপেক্ষিকভাবে অনেক কম। বহির্বিশ্বে ব্যাংকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের ওপর সম্পদ আছে। আমাদের একটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ সম্পদ ১০ বিলিয়ন ডলারেরও কম। আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদাশীল ব্যাংকের প্রয়োজন। পৃথিবীর অন্তত ৫০০টি ব্যাংকের মধ্যে যেন একটি আমাদের ব্যাংক হয়। সেই মাপের ব্যাংক আমাদের দরকার’ যোগ করেন তিনি।
অবশ্য দেশে ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য করতে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করে চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং ও বুথ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি অনেক ধরনের ডিজিটাল লেনদেন চালু হয়েছে। এর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাটি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেলেও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার এজেন্টরা কম কমিশন পাওয়ায় বিপাকে রয়েছে। যে কারণে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার কাক্সিক্ষত সুফল বয়ে আনতে পারছে না বলে জানিয়েছেন এ খাতের ছোট ছোট উদ্যোক্তারা।
বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সক্রিয় গ্রাহক রয়েছেন ৪ কোটি। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ২ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এজেন্টদের মাধ্যমে খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ।
শেয়ার করুন
শেখ শাফায়াত হোসেন | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

দেশে বর্তমানে ১০ হাজার ৮০৫টি শাখা অনলাইনের আওতায় রয়েছে। বাকি ৭টি শাখায় রয়েছে আংশিক অনলাইন সেবা। ফলে কোনো শাখাই এখন আর পুরোপুরি অফলাইনে বা পুরনো ধারার লেজারভিত্তিক ব্যাংক সেবায় নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩০৮টি ব্যাংক শাখা আংশিক অনলাইন থেকে বেরিয়ে পূর্ণাঙ্গ অনলাইন সেবায় চলে এসেছে। বাকি রয়েছে মাত্র ৭টি। তাছাড়া গত বছরের নভেম্বর থেকে দেশের অফলাইন ব্যাংক শাখার সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারীর মধ্যে অনলাইন ব্যাংকিং শাখার প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে। এ কারণে গত এক বছরে তিন শতাধিক পুরনো শাখাকে পুরোপুরি অনলাইনে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে কভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪১টি নতুন শাখা চালু করেছে দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলো। গত বছরের একই সময়ে নতুন শাখা খোলা হয়েছিল ৬২টি। সেই হিসেবে চলতি বছরে ব্যাংকের নতুন শাখা বেড়েছে প্রায় ১২৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশে ব্যাংক শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার ৮১২টিতে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে ব্যাংক শাখার সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৬৭১টি। দেশে কার্যরত ব্যাংক শাখাগুলোর ৪৮ শতাংশই বর্তমানে গ্রামীণ জনপদে।
করোনা মহামারীর মধ্যে ব্যাংকসহ সব খাতের ব্যবসা কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রণোদনার ঋণ বিতরণসহ বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকের ব্যবসা ধীরে ধীরে স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে ফিরছে। তাছাড়া সরকারি বন্ডে বিনিয়োগসহ স্বল্পমেয়াদি অনেক ধরনের বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
ফলে চলতি ২০২১ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে ১টি ছাড়া বাকি ব্যাংকগুলো মুনাফার ধারায় ছিল। আলোচিত সময়ে এ খাতের ব্যাংকগুলোর কর-পরবর্তী মোট মুনাফা দাঁড়ায় ৬ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। যেখানে ২০২০ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর মোট মুনাফা ছিল ৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকগুলোর মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা।
গতকাল শনিবার (৪ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের উদ্যোগে অনেক দেশ আন্তর্জাতিক ব্যাংক দিবস পালন করে। তবে বাংলাদেশে এ দিবস পালনে আলাদা কোনো কার্যক্রম হাতে নিতে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, সদস্য দেশগুলোর মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ব্যাংকের অবদান বাড়াতে টেকসই প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক গঠনের গুরুত্ব বোঝাতে ২০১৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ব্যাংক দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ।
প্রসঙ্গত, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণ ও সব পর্যায়ের মানুষের ব্যাংকিং সেবায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা রয়েছে। বাংলাদেশও এসব লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক ব্যাংক থাকলেও বড় আকারের কোনো ব্যাংক নেই। বিশ্ব পরিমাপে কোনো ব্যাংক এখনো তহবিল করতে পারেনি। কারণ আমাদের চাহিদার তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি।’
‘আমাদের একটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ যে সম্পদ আছে, সেটা আপেক্ষিকভাবে অনেক কম। বহির্বিশ্বে ব্যাংকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের ওপর সম্পদ আছে। আমাদের একটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ সম্পদ ১০ বিলিয়ন ডলারেরও কম। আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদাশীল ব্যাংকের প্রয়োজন। পৃথিবীর অন্তত ৫০০টি ব্যাংকের মধ্যে যেন একটি আমাদের ব্যাংক হয়। সেই মাপের ব্যাংক আমাদের দরকার’ যোগ করেন তিনি।
অবশ্য দেশে ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য করতে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করে চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং ও বুথ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি অনেক ধরনের ডিজিটাল লেনদেন চালু হয়েছে। এর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাটি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেলেও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার এজেন্টরা কম কমিশন পাওয়ায় বিপাকে রয়েছে। যে কারণে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার কাক্সিক্ষত সুফল বয়ে আনতে পারছে না বলে জানিয়েছেন এ খাতের ছোট ছোট উদ্যোক্তারা।
বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সক্রিয় গ্রাহক রয়েছেন ৪ কোটি। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ২ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এজেন্টদের মাধ্যমে খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ।