ওমিক্রন ঠেকাতে বিজিএমইএর ১৭ নির্দেশনা
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
মহামারী করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ বিশ^ব্যাপী আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজার ইউরোপ ওমিক্রন আতঙ্কে সতর্কতামূলক বিশেষ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত ছড়াতে পারে এ আশঙ্কায় দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোর প্রতি ১৭টি নির্দেশনা দিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
গত সপ্তাহে দেওয়া বিজিএমইএর সচিব মো. ফয়জুর রহমান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পোশাক কারখানায় উৎপাদন শুরু ও ছুটির সময় শ্রমিকদের ভিড় এড়ানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণে জোর দিতে হবে। তা ছাড়া শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের ব্যবস্থা করা দরকার। সম্ভব হলে বিভিন্ন বিভাগের কর্মঘণ্টার জন্য আলাদা শিফটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কারখানায় প্রবেশের সময় শ্রমিকদের দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ এবং প্রয়োজনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে। কারখানায় প্রবেশের সময় প্রধান ফটকসংলগ্ন এলাকায় শ্রমিকদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। কাজের জায়গায় শ্রমিকদের ভিড় এড়িয়ে চলার জন্য শ্রমিকদের উৎসাহিত করতে পরামর্শ দিয়ে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দুপুরের খাবারের বিরতিসহ অন্যান্য বিরতির সময় বিভিন্ন বিভাগের শ্রমিকদের আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করতে হবে। এর পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সার্বক্ষণিকভাবে শ্রমিক-কর্মচারীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দিয়ে বিজিএমইএ সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য লোকসমাগম এড়িয়ে চলতে শ্রমিকদের পরামর্শ দিতে বলেছে।
বিজিএমইএর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হলে রোগীকে আইসোলেশনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রোগীর সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হবে কারখানা কর্তৃপক্ষকে।
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি পোশাকশিল্পে করোনার সংক্রমণের মাত্রা ছিল খুবই সামান্য উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা গাইডলাইন ও হেলথ প্রটোকল যথাযথভাবে অনুসরণ করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ৩৮ দেশে শনাক্ত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এই ধরনে আক্রান্ত কারোর মৃত্যু হয়নি। গতকাল শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এসব তথ্য জানিয়েছে। ডব্লিউএইচও বলেছে, ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণে এখনো কোনো মৃত্যুর কথা তারা জানাতে পারেনি। তবে নতুন এ ধরন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় সব দেশকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
ডব্লিউএইচও বলছে, আগামী কয়েক মাসে ইউরোপে মোট কভিড সংক্রমণের অর্ধেকই হতে পারে ওমিক্রনের কারণে।
প্রসঙ্গত গত বছর করোনা সংক্রমণের শুরুতে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের লকডাউন পরিস্থিতির কারণে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে দেশের ১ হাজার ৯২টি তৈরি পোশাক কারখানার প্রায় ৩০০ কোটি ডলার সমমূল্যের ৯৪ কোটি ৩১ লাখ পিস তৈরি পোশাক পণ্যের ক্রয়াদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত করে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এতে করে বড় অংকের লোকসানে পড়ে খাতটির বিভিন্ন উদ্যোক্তা। যদিও পরবর্তীতে রপ্তানি আয়ের প্রধান এই খাতটির জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করে সরকার। অবশ্য চলতি বছর তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় বাড়তে দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ব্যবসা-বাণিজ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে। উল্লেখ্য, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

মহামারী করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ বিশ^ব্যাপী আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজার ইউরোপ ওমিক্রন আতঙ্কে সতর্কতামূলক বিশেষ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত ছড়াতে পারে এ আশঙ্কায় দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোর প্রতি ১৭টি নির্দেশনা দিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
গত সপ্তাহে দেওয়া বিজিএমইএর সচিব মো. ফয়জুর রহমান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পোশাক কারখানায় উৎপাদন শুরু ও ছুটির সময় শ্রমিকদের ভিড় এড়ানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণে জোর দিতে হবে। তা ছাড়া শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের ব্যবস্থা করা দরকার। সম্ভব হলে বিভিন্ন বিভাগের কর্মঘণ্টার জন্য আলাদা শিফটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কারখানায় প্রবেশের সময় শ্রমিকদের দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ এবং প্রয়োজনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে। কারখানায় প্রবেশের সময় প্রধান ফটকসংলগ্ন এলাকায় শ্রমিকদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। কাজের জায়গায় শ্রমিকদের ভিড় এড়িয়ে চলার জন্য শ্রমিকদের উৎসাহিত করতে পরামর্শ দিয়ে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দুপুরের খাবারের বিরতিসহ অন্যান্য বিরতির সময় বিভিন্ন বিভাগের শ্রমিকদের আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করতে হবে। এর পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সার্বক্ষণিকভাবে শ্রমিক-কর্মচারীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দিয়ে বিজিএমইএ সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য লোকসমাগম এড়িয়ে চলতে শ্রমিকদের পরামর্শ দিতে বলেছে।
বিজিএমইএর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হলে রোগীকে আইসোলেশনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রোগীর সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হবে কারখানা কর্তৃপক্ষকে।
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি পোশাকশিল্পে করোনার সংক্রমণের মাত্রা ছিল খুবই সামান্য উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা গাইডলাইন ও হেলথ প্রটোকল যথাযথভাবে অনুসরণ করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ৩৮ দেশে শনাক্ত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এই ধরনে আক্রান্ত কারোর মৃত্যু হয়নি। গতকাল শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এসব তথ্য জানিয়েছে। ডব্লিউএইচও বলেছে, ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণে এখনো কোনো মৃত্যুর কথা তারা জানাতে পারেনি। তবে নতুন এ ধরন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় সব দেশকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
ডব্লিউএইচও বলছে, আগামী কয়েক মাসে ইউরোপে মোট কভিড সংক্রমণের অর্ধেকই হতে পারে ওমিক্রনের কারণে।
প্রসঙ্গত গত বছর করোনা সংক্রমণের শুরুতে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের লকডাউন পরিস্থিতির কারণে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে দেশের ১ হাজার ৯২টি তৈরি পোশাক কারখানার প্রায় ৩০০ কোটি ডলার সমমূল্যের ৯৪ কোটি ৩১ লাখ পিস তৈরি পোশাক পণ্যের ক্রয়াদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত করে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এতে করে বড় অংকের লোকসানে পড়ে খাতটির বিভিন্ন উদ্যোক্তা। যদিও পরবর্তীতে রপ্তানি আয়ের প্রধান এই খাতটির জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করে সরকার। অবশ্য চলতি বছর তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় বাড়তে দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ব্যবসা-বাণিজ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে। উল্লেখ্য, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।