৮৪% বেশি কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে
চিঠিতে সাড়া নেই আমদানিকারকদের
অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা
শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম | ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
ইয়ার্ডে জমে থাকা আমদানি পণ্যের কন্টেইনার নিয়ে দুশ্চিন্তায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নিতে আমদানিকারকদের চিঠি দিয়েও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার ৮৪ শতাংশের বেশি কন্টেইনার জমেছে সেখানে। ফলে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, সপ্তাহের তিন দিনই স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম কন্টেইনার ডেলিভারি নিচ্ছেন আমদানিকারকরা। বিশেষ করে বন্ধের দিনগুলোতে আমদানি পণ্য ডেলিভারি কম হচ্ছে। ফলে বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনারের পরিমাণ বাড়ছে। স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইয়ার্ডে যে পরিমাণ জায়গা খালি থাকা প্রয়োজন, অতিরিক্ত কন্টেইনারের কারণে তা কমছে। ডেলিভারির পরিমাণ না বাড়লে এ সংকট আরও বাড়বে। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও আমদানিকারকদের কাছ থেকে সাড়া মিলছে না।
বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার রাখার ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস (টুয়েন্টি ফিট ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিটস)। স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ধারণ ক্ষমতার ১৫ শতাংশ জায়গা খালি থাকতে হয়। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ইয়ার্ডে কন্টেইনার জমেছে ৪১ হাজার ২০৪ টিইইউস, যা ধারণক্ষমতার ৮৪ শতাংশের বেশি। আগামী তিন দিনে কন্টেইনারের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার গড়ে সাড়ে চার হাজার টিইইউসের বেশি কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। কিন্তু শুক্র, শনি ও রবিবার তা তিন হাজার টিইইউসে নেমে যায়। কিন্তু সপ্তাহের সাত দিনই জাহাজ থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার বন্দরে নামে। ফলে ওই তিন দিন বন্দরে কন্টেইনার আগমনের তুলনায় ডেলিভারি কম হয়। গত ১১-১৭ জানুয়ারির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে ৪৭৩৭ টিইইউস। আর শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ডেলিভারি হয়েছে গড়ে ৩ হাজার ৯ টিইইউস।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিছু আমদানিকারক আমদানি পণ্য যথাসময়ে ডেলিভারি না নিয়ে দীর্ঘ সময় রেখে দেন। এতে ইয়ার্ডে কন্টেইনার জমে যায়। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকলেও অন্য দিনের মতো কন্টেইনার ডেলিভারি হয় না। কিন্তু এ সময় জাহাজ থেকে কন্টেইনার স্বাভাবিক পরিমাণেই বন্দরে নামে।
তিনি বলেন, দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার জন্য আমদানি চেম্বার, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার তাগাদাপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও আশানুরূপ ফল মিলছে না। করোনা পরিস্থিতিতেও সপ্তাহের সাত দিন অপারেশনাল কার্যক্রম চালু রেখে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু দফায় দফায় তাগাদা দেওয়ার পরও আমদানিকারকরা যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারি না নেওয়ায় বন্দরে কন্টেইনার জট পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। জাতীয় স্বার্থে বিষয়টিকে আমদানিকারকদের গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। তেমনি বন্দরকে সার্বক্ষণিক গতিশীল রাখতে আমাদের সবার আন্তরিকতা প্রয়োজন। আমদানি পণ্য বন্দর ইয়ার্ডে জমিয়ে না রেখে দ্রুত খালাস নিতে আমদানিকারকদের আহ্বান জানান তিনি।
শেয়ার করুন
অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা
শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম | ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

ইয়ার্ডে জমে থাকা আমদানি পণ্যের কন্টেইনার নিয়ে দুশ্চিন্তায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নিতে আমদানিকারকদের চিঠি দিয়েও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার ৮৪ শতাংশের বেশি কন্টেইনার জমেছে সেখানে। ফলে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, সপ্তাহের তিন দিনই স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম কন্টেইনার ডেলিভারি নিচ্ছেন আমদানিকারকরা। বিশেষ করে বন্ধের দিনগুলোতে আমদানি পণ্য ডেলিভারি কম হচ্ছে। ফলে বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনারের পরিমাণ বাড়ছে। স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইয়ার্ডে যে পরিমাণ জায়গা খালি থাকা প্রয়োজন, অতিরিক্ত কন্টেইনারের কারণে তা কমছে। ডেলিভারির পরিমাণ না বাড়লে এ সংকট আরও বাড়বে। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও আমদানিকারকদের কাছ থেকে সাড়া মিলছে না।
বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার রাখার ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস (টুয়েন্টি ফিট ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিটস)। স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ধারণ ক্ষমতার ১৫ শতাংশ জায়গা খালি থাকতে হয়। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ইয়ার্ডে কন্টেইনার জমেছে ৪১ হাজার ২০৪ টিইইউস, যা ধারণক্ষমতার ৮৪ শতাংশের বেশি। আগামী তিন দিনে কন্টেইনারের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার গড়ে সাড়ে চার হাজার টিইইউসের বেশি কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। কিন্তু শুক্র, শনি ও রবিবার তা তিন হাজার টিইইউসে নেমে যায়। কিন্তু সপ্তাহের সাত দিনই জাহাজ থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার বন্দরে নামে। ফলে ওই তিন দিন বন্দরে কন্টেইনার আগমনের তুলনায় ডেলিভারি কম হয়। গত ১১-১৭ জানুয়ারির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে ৪৭৩৭ টিইইউস। আর শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ডেলিভারি হয়েছে গড়ে ৩ হাজার ৯ টিইইউস।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিছু আমদানিকারক আমদানি পণ্য যথাসময়ে ডেলিভারি না নিয়ে দীর্ঘ সময় রেখে দেন। এতে ইয়ার্ডে কন্টেইনার জমে যায়। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকলেও অন্য দিনের মতো কন্টেইনার ডেলিভারি হয় না। কিন্তু এ সময় জাহাজ থেকে কন্টেইনার স্বাভাবিক পরিমাণেই বন্দরে নামে।
তিনি বলেন, দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার জন্য আমদানি চেম্বার, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার তাগাদাপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও আশানুরূপ ফল মিলছে না। করোনা পরিস্থিতিতেও সপ্তাহের সাত দিন অপারেশনাল কার্যক্রম চালু রেখে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু দফায় দফায় তাগাদা দেওয়ার পরও আমদানিকারকরা যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারি না নেওয়ায় বন্দরে কন্টেইনার জট পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। জাতীয় স্বার্থে বিষয়টিকে আমদানিকারকদের গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। তেমনি বন্দরকে সার্বক্ষণিক গতিশীল রাখতে আমাদের সবার আন্তরিকতা প্রয়োজন। আমদানি পণ্য বন্দর ইয়ার্ডে জমিয়ে না রেখে দ্রুত খালাস নিতে আমদানিকারকদের আহ্বান জানান তিনি।