গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
সম্প্রতি গ্যাসের দাম বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব জমা দেওয়া শুরু করেছে গ্যাস সঞ্চালন, উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো। কিন্তু দাম বাড়ানোর উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচও বাড়বে; যা শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দেবে। মহামারীকালীন অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো ব্যাহত হবে। গতকাল বুধবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পাওয়ার, এনার্জি, ইউটিলিসবিষয়ক এফবিসিসিআইর স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চীন ও ভারত আরও ২০ বছর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখবে। বাংলাদেশেও শিল্পের বিকাশের স্বার্থে দেশে মজুদ থাকা কয়লার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত সরকারের। গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, বাপেক্স একা না পারলে বেসরকারি খাতের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে অনুসন্ধান কূপ খননে গতি আনা উচিত।
প্রসঙ্গত, আবাসিক, বাণিজ্যিকসহ সব খাতে গ্যাসের দাম বাড়াতে মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) চিঠি দিয়েছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। তারা গড়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আবাসিকের ক্ষেত্রে দুই চুলায় ৯৭৫ থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা, মিটার আছে এমন চুলায় প্রতি ঘনমিটার ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ২৭ টাকা ৩৭ পয়সা করতে চায় কোম্পানিগুলো। যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির প্রতি ঘনমিটার কমিশন ছাড়া দাম ৭৬ টাকা ৪৮ পয়সা করতে হবে। বর্তমানে এ দাম ৩৫ টাকা। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার বর্তমানে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৬৬ পয়সা করতে হবে।
শিল্পকারখানার নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে উৎপাদিত ক্যাপটিভ পাওয়ারের গ্যাসের দাম ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করার জন্য বলেছে কোম্পানিগুলো। শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের গ্যাসের দাম ১৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে ৩৭ টাকা ২৪ পয়সা, চা শিল্পের গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা করার জন্য বলা হয়েছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে খুচরা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। গতকালের সভায় স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর-ইন-চার্জ ও এফবিসিসিআইর পরিচালক আবুল কাশেম খান বলেন, দেশে জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ নয়। দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও শিল্পায়ন অব্যাহত রাখতে দেশীয় সম্পদকে কাজে লাগানো জরুরি। কয়লা উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে মত দেন আবুল কাশেম খান।
এফবিসিসিআইর পরিচালক মো. নাসের বলেন, বিতরণব্যবস্থায় চরম অব্যবস্থাপনার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুফল বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ওয়ান স্টপ সলিউশন, চরের অনাবাদি জমিতে সোলার প্যালেন স্থাপন, সরকারিভাবে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া, বর্জ্য ও চালের কুঁড়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হাতে নেওয়ার দাবি জানান কমিটির সদস্যরা।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের এমডি ও সিইও হুমায়ুন রশিদ। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশি ও বিদেশি উৎসের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা না গেলে দেশের জ্বালানি খাতের নিরাপত্তা বিঘি্নত হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দীন ইউসুফ, মোহাম্মদ আলী দ্বীন, নাজমুল হক ও এফবিসিসিআইর মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

সম্প্রতি গ্যাসের দাম বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব জমা দেওয়া শুরু করেছে গ্যাস সঞ্চালন, উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো। কিন্তু দাম বাড়ানোর উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচও বাড়বে; যা শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দেবে। মহামারীকালীন অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো ব্যাহত হবে। গতকাল বুধবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পাওয়ার, এনার্জি, ইউটিলিসবিষয়ক এফবিসিসিআইর স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চীন ও ভারত আরও ২০ বছর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখবে। বাংলাদেশেও শিল্পের বিকাশের স্বার্থে দেশে মজুদ থাকা কয়লার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত সরকারের। গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, বাপেক্স একা না পারলে বেসরকারি খাতের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে অনুসন্ধান কূপ খননে গতি আনা উচিত।
প্রসঙ্গত, আবাসিক, বাণিজ্যিকসহ সব খাতে গ্যাসের দাম বাড়াতে মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) চিঠি দিয়েছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। তারা গড়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আবাসিকের ক্ষেত্রে দুই চুলায় ৯৭৫ থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা, মিটার আছে এমন চুলায় প্রতি ঘনমিটার ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ২৭ টাকা ৩৭ পয়সা করতে চায় কোম্পানিগুলো। যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির প্রতি ঘনমিটার কমিশন ছাড়া দাম ৭৬ টাকা ৪৮ পয়সা করতে হবে। বর্তমানে এ দাম ৩৫ টাকা। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার বর্তমানে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৬৬ পয়সা করতে হবে।
শিল্পকারখানার নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে উৎপাদিত ক্যাপটিভ পাওয়ারের গ্যাসের দাম ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করার জন্য বলেছে কোম্পানিগুলো। শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের গ্যাসের দাম ১৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে ৩৭ টাকা ২৪ পয়সা, চা শিল্পের গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা করার জন্য বলা হয়েছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে খুচরা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। গতকালের সভায় স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর-ইন-চার্জ ও এফবিসিসিআইর পরিচালক আবুল কাশেম খান বলেন, দেশে জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ নয়। দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও শিল্পায়ন অব্যাহত রাখতে দেশীয় সম্পদকে কাজে লাগানো জরুরি। কয়লা উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে মত দেন আবুল কাশেম খান।
এফবিসিসিআইর পরিচালক মো. নাসের বলেন, বিতরণব্যবস্থায় চরম অব্যবস্থাপনার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুফল বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ওয়ান স্টপ সলিউশন, চরের অনাবাদি জমিতে সোলার প্যালেন স্থাপন, সরকারিভাবে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া, বর্জ্য ও চালের কুঁড়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হাতে নেওয়ার দাবি জানান কমিটির সদস্যরা।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের এমডি ও সিইও হুমায়ুন রশিদ। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশি ও বিদেশি উৎসের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা না গেলে দেশের জ্বালানি খাতের নিরাপত্তা বিঘি্নত হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দীন ইউসুফ, মোহাম্মদ আলী দ্বীন, নাজমুল হক ও এফবিসিসিআইর মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।