মিনোরি এখন ফু-ওয়াং ফুডসের মালিক
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
এমারেল্ড অয়েলকে সফলভাবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার পর পুঁজিবাজারের আরও এক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে জাপানি কোম্পানি মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড। এবার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থ ফু-ওয়াং ফুডস অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে জাপানি প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে বর্তমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের শেয়ার হস্তান্তরের চুক্তিতে অনুমোদনও দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে কমিশন। চলতি সপ্তাহে শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তি অনুষ্ঠিত হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, মিনোরি বাংলাদেশের কাছে ফু-ওয়াং ফুডসের তিন পরিচালক তাদের ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ৭৬২টি শেয়ার ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে বিক্রি করবেন। এর বিপরীতে কোম্পানির পাওনা প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করবেন বর্তমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা। এর বাইরে ফু-ওয়াং ফুডসের সাসপেন্ড হিসাবে থাকা শেয়ারহোল্ডারদের অবণ্টিত মুনাফার শেয়ারও তারা ফিরিয়ে দেবেন। শেয়ার হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরী, পরিচালক আফসানা তারান্নুম ও লুবাবা তাবাসসুম ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানা ছেড়ে দিচ্ছেন।
মিনোরি বাংলাদেশ ফু-ওয়াং ফুডসের শেয়ার অধিগ্রহণে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এর বাইরে কোম্পানিতে আরও অন্তত ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বলে এসইসি জানিয়েছে, যা শেয়ার মানি ডিপোজিট অথবা ‘পরিচালক ঋণ’ হিসেবে দেখানো হবে। পরে শেয়ার মানি ডিপোজিট মিনোরির নামে শেয়ারে রূপান্তর করা হবে, যা দিয়ে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় শর্তসহ এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে মিনোরি বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য শেয়ার অধিগ্রহণের আইনি বিধান অনুযায়ী আগাম ঘোষণা দিতে হবে।
মিনোরি বাংলাদেশ জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি মিয়া মামুনের প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানি। এ কোম্পানি গত বছর খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েল কোম্পানির শেয়ার কিনে মালিকানায় এসেছে। মালিকানায় আসার পর দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকা এমারেল্ড চলতি জানুয়ারিতে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে এনেছে মিনোরি।
এ বিষয়ে এসইসির কমিশনার অধ্যাপক সামসুদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফু-ওয়াং ফুডসের বর্তমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের শেয়ার মিনোরির কাছে হস্তান্তরের অনুমোদন কমিশন দিয়েছে। মিনোরি কোম্পানিটিতে আরও ন্যূনতম ২০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ করবে, যা শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে গণ্য হবে। শেয়ার মানি ডিপোজিটের এ অর্থ শেয়ারে কনভার্ট হবে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত থাকবে যে, কোম্পানিটি ভালোভাবে চালাতে পারলেই শেয়ার মানি ডিপোজিট শেয়ারে কনভার্টের অনুমোদন দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে কোম্পানিটির উদোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ হবে।
তিনি আরও বলেন, যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই, সেগুলোর সমাধানের আমরা চেষ্টা করছি। তবে এক এক কোম্পানির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা সমাধান করতে হবে। আমরা আশা করছি মিনোরি ফু-ওয়াং ফুডসকে ভালোভাবে সচল করতে পারবে। মিনোরি ইতিমধ্যেই আরেকটি বন্ধ থাকা কোম্পানি সফলভাবে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।
মালিকানা বদল হতে যাচ্ছে- এমন গুঞ্জনে গত দুই সপ্তাহে ফু-ওয়াং ফুডসের শেয়ারদর ১৫ টাকা থেকে বেড়ে গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ সাড়ে ২৩ টাকায় কেনাবেচা হয়। অবশ্য দিনশেষে শেয়ারটির সমাপনী মূল্য দাঁড়ায় ২১ টাকা ৮০ পয়সায়।
রুগ্ণ ও বন্ধ কোম্পানিগুলোকে আবার ব্যবসায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মিনোরি বাংলাদেশকে ফু-ওয়াং ফুডসের ব্যবসা অধিগ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকার শর্ত পূরণে ব্যর্থতার দায়ে গত বছরের জুলাই মাসে কোম্পানিটিতে পাঁচ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়।
কোম্পানিটিকে পুনরায় ব্যবসায় ফিরিয়ে আনতে নতুন বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছিল। মিনোরি রাজি হওয়ায় কমিশন এ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। এসইসি সূত্রে জানা গেছে, আরিফ আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফু-ওয়াং ফুডস কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারের ৯ লাখেরও বেশি বোনাস শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল এসইসির। তবে এরই মধ্যে বাজার থেকে শেয়ার কিনে তা ‘সাসপেন্ড অ্যাকাউন্ট’-এ জমা করায় সে পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে সংস্থাটি।
শেয়ার হস্তান্তরে এসইসি যেসব শর্ত দিয়েছে, তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- শেয়ার মানি ডিপোজিটের অর্থ কোম্পানিটির নামে একটি পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে এবং শুধুমাত্র ব্যাংকের দায়বদ্ধতা নিয়মিতকরণ, জমি অধিগ্রহণ, কার্যকরী মূলধন ও উৎপাদন সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এ অর্থ ব্যবহার করা যাবে। আর ফু-ওয়াং ফুডসের পরিচালনা পর্ষদের দ্বারা ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের শর্ত পূরণের জন্য শেয়ার মানি ডিপোজিটের শেয়ারের অর্থের বিপরীতে মূলধন বাড়ানোর জন্য কমিশনের সম্মতি নিতে হবে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

এমারেল্ড অয়েলকে সফলভাবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার পর পুঁজিবাজারের আরও এক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে জাপানি কোম্পানি মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড। এবার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থ ফু-ওয়াং ফুডস অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে জাপানি প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে বর্তমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের শেয়ার হস্তান্তরের চুক্তিতে অনুমোদনও দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে কমিশন। চলতি সপ্তাহে শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তি অনুষ্ঠিত হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, মিনোরি বাংলাদেশের কাছে ফু-ওয়াং ফুডসের তিন পরিচালক তাদের ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ৭৬২টি শেয়ার ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে বিক্রি করবেন। এর বিপরীতে কোম্পানির পাওনা প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করবেন বর্তমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা। এর বাইরে ফু-ওয়াং ফুডসের সাসপেন্ড হিসাবে থাকা শেয়ারহোল্ডারদের অবণ্টিত মুনাফার শেয়ারও তারা ফিরিয়ে দেবেন। শেয়ার হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরী, পরিচালক আফসানা তারান্নুম ও লুবাবা তাবাসসুম ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানা ছেড়ে দিচ্ছেন।
মিনোরি বাংলাদেশ ফু-ওয়াং ফুডসের শেয়ার অধিগ্রহণে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এর বাইরে কোম্পানিতে আরও অন্তত ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বলে এসইসি জানিয়েছে, যা শেয়ার মানি ডিপোজিট অথবা ‘পরিচালক ঋণ’ হিসেবে দেখানো হবে। পরে শেয়ার মানি ডিপোজিট মিনোরির নামে শেয়ারে রূপান্তর করা হবে, যা দিয়ে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় শর্তসহ এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে মিনোরি বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য শেয়ার অধিগ্রহণের আইনি বিধান অনুযায়ী আগাম ঘোষণা দিতে হবে।
মিনোরি বাংলাদেশ জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি মিয়া মামুনের প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানি। এ কোম্পানি গত বছর খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েল কোম্পানির শেয়ার কিনে মালিকানায় এসেছে। মালিকানায় আসার পর দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকা এমারেল্ড চলতি জানুয়ারিতে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে এনেছে মিনোরি।
এ বিষয়ে এসইসির কমিশনার অধ্যাপক সামসুদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফু-ওয়াং ফুডসের বর্তমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের শেয়ার মিনোরির কাছে হস্তান্তরের অনুমোদন কমিশন দিয়েছে। মিনোরি কোম্পানিটিতে আরও ন্যূনতম ২০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ করবে, যা শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে গণ্য হবে। শেয়ার মানি ডিপোজিটের এ অর্থ শেয়ারে কনভার্ট হবে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত থাকবে যে, কোম্পানিটি ভালোভাবে চালাতে পারলেই শেয়ার মানি ডিপোজিট শেয়ারে কনভার্টের অনুমোদন দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে কোম্পানিটির উদোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ হবে।
তিনি আরও বলেন, যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই, সেগুলোর সমাধানের আমরা চেষ্টা করছি। তবে এক এক কোম্পানির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা সমাধান করতে হবে। আমরা আশা করছি মিনোরি ফু-ওয়াং ফুডসকে ভালোভাবে সচল করতে পারবে। মিনোরি ইতিমধ্যেই আরেকটি বন্ধ থাকা কোম্পানি সফলভাবে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।
মালিকানা বদল হতে যাচ্ছে- এমন গুঞ্জনে গত দুই সপ্তাহে ফু-ওয়াং ফুডসের শেয়ারদর ১৫ টাকা থেকে বেড়ে গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ সাড়ে ২৩ টাকায় কেনাবেচা হয়। অবশ্য দিনশেষে শেয়ারটির সমাপনী মূল্য দাঁড়ায় ২১ টাকা ৮০ পয়সায়।
রুগ্ণ ও বন্ধ কোম্পানিগুলোকে আবার ব্যবসায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মিনোরি বাংলাদেশকে ফু-ওয়াং ফুডসের ব্যবসা অধিগ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকার শর্ত পূরণে ব্যর্থতার দায়ে গত বছরের জুলাই মাসে কোম্পানিটিতে পাঁচ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়।
কোম্পানিটিকে পুনরায় ব্যবসায় ফিরিয়ে আনতে নতুন বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছিল। মিনোরি রাজি হওয়ায় কমিশন এ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। এসইসি সূত্রে জানা গেছে, আরিফ আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফু-ওয়াং ফুডস কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারের ৯ লাখেরও বেশি বোনাস শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল এসইসির। তবে এরই মধ্যে বাজার থেকে শেয়ার কিনে তা ‘সাসপেন্ড অ্যাকাউন্ট’-এ জমা করায় সে পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে সংস্থাটি।
শেয়ার হস্তান্তরে এসইসি যেসব শর্ত দিয়েছে, তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- শেয়ার মানি ডিপোজিটের অর্থ কোম্পানিটির নামে একটি পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে এবং শুধুমাত্র ব্যাংকের দায়বদ্ধতা নিয়মিতকরণ, জমি অধিগ্রহণ, কার্যকরী মূলধন ও উৎপাদন সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এ অর্থ ব্যবহার করা যাবে। আর ফু-ওয়াং ফুডসের পরিচালনা পর্ষদের দ্বারা ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের শর্ত পূরণের জন্য শেয়ার মানি ডিপোজিটের শেয়ারের অর্থের বিপরীতে মূলধন বাড়ানোর জন্য কমিশনের সম্মতি নিতে হবে।