গোল্ড ব্যাংক, এক্সচেঞ্জ চায় বাজুস
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
দেশে সোনা আমদানির নীতিমালা ও পরিশোধন কারখানার পর এবার গোল্ড ব্যাংক ও গোল্ড এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস। গোল্ড ব্যাংক হলে সোনা ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন সহজ হবে। আর গোল্ড এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা হলে পণ্যটির প্রতিদিনের দর নির্ধারণ হবে, যা সোনা চোরাচালান ও পাচার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে গোল্ড ব্যাংক ও গোল্ড এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন বাজুস নেতারা।
গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বাজুসের নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে বসুন্ধরা সিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। সভাপতিত্ব করেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। সঞ্চালনা করেন বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগারওয়ালা।
বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, দেশের জুয়েলারি শিল্পের বিকাশে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এ খাতের সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সভা করার সুযোগ চেয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান তিনি।
সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশে সোনা বন্ধক রেখে ব্যাংকঋণ নেওয়া যেত, যা পরে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি নীতিমালা দরকার, যার আওতায় বাজুসের মাধ্যমে দেশে গোল্ড ব্যাংক এবং গোল্ড এক্সচেঞ্জ করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। গোল্ড এক্সচেঞ্জে প্রতিদিনের মূল্য নির্ধারণ হবে। এটা হলে সোনা চোরাচালান, পাচারের যেসব কথা শোনা যায়, তা বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা প্রয়োজন। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এ খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
জুয়েলারি শিল্প মালিকদের উদ্দেশ্যে আনভীর বলেন, শুধু আমদানি নয়, এখন সময় হয়েছে সোনা রপ্তানি করার। এজন্য জুয়েলারি কারখানা করতে হবে। আমাদের অনেক শ্রমিক রয়েছেন, যারা বিশে^র বিভিন্ন দেশে জুয়েলারি শ্রমিক হিসেবে চমৎকার কাজ করছেন। এখন দেশে যদি এসব কারখানা হয়, তাহলে তারা দেশের কারখানায় কাজ করবেন এবং উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, দেশে সোনা পরিশোধনের কারখানার অনুমোদন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। একটা রিফাইনারি হচ্ছে, আরও হবে। দেশে রিফাইনারি হলে সোনা রপ্তানির সুযোগও তৈরি হবে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রধান পণ্য হলেও এ খাতে মূল্য সংযোজন কম। কিন্তু জুয়েলারি পণ্যে মূল্য সংযোজনের হার বেশি। কিছু কিছু জুয়েলারি পণ্যে মূল্য সংযোজন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশও হয়ে থাকে। তাই সোনা রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, জুয়েলারি শিল্পে আজ গোল্ড ব্যাংক, গোল্ড এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার যে দাবি উঠেছে, তা প্রতিষ্ঠায় বাণিজ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই সহায়তা করবেন। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীও দ্রুততম সময়ে সম্মতি দেবেন, আমি নিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা অনুযায়ী আগামীতে ডায়মন্ডের কারখানাও হবে বলে আশা করেন বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সোনা নীতিমালা করার সময় বাজুসের বর্তমান প্রেসিডেন্টসহ অন্য নেতারা বহুবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে সরকারি কাজে অনেক বাধা-বিপত্তি থাকে। সেসব বাধা অতিক্রম করে সবার কঠোর পরিশ্রমে নীতিমালাটি হয়েছে। এখন গোল্ড ব্যাংক, গোল্ড এক্সচেঞ্জ করার যে দাবি উঠেছে, তা এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে নিশ্চয় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এটা ঠিক যে বাংলাদেশের যারা স্বর্ণকার, স্বর্ণশিল্পী, তাদের হাতের কাজ অনেক সুন্দর। যা দিয়ে আর্ন্তজাতিক বাজারেও খ্যাতি লাভ করা সম্ভব। স্বর্ণ শিল্পে মূল্য সংযোজনের হার বেশি থাকায় রপ্তানিতে আমাদের ভালো সুযোগ তৈরি হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, স্বর্ণ শিল্পের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে বাজুস প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথসভার অনুরোধ জানিয়েছেন। এ ধরনের সভা হয়তো আগামীতে হবে, কিন্তু এই মুহূর্তে কভিডের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য এ সময়ের মধ্যে কাগজপত্র তৈরি করে আমরা যেকোনো ভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে পারি। তারপরে যখন সময় হবে, সুদিন ফিরবে সবাই সবার সামনে বসতে পারব তখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসব। বললেই তিনি রাজি হয়ে যাবেন।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

দেশে সোনা আমদানির নীতিমালা ও পরিশোধন কারখানার পর এবার গোল্ড ব্যাংক ও গোল্ড এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস। গোল্ড ব্যাংক হলে সোনা ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন সহজ হবে। আর গোল্ড এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা হলে পণ্যটির প্রতিদিনের দর নির্ধারণ হবে, যা সোনা চোরাচালান ও পাচার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে গোল্ড ব্যাংক ও গোল্ড এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন বাজুস নেতারা।
গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বাজুসের নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে বসুন্ধরা সিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। সভাপতিত্ব করেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। সঞ্চালনা করেন বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগারওয়ালা।
বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, দেশের জুয়েলারি শিল্পের বিকাশে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এ খাতের সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সভা করার সুযোগ চেয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান তিনি।
সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশে সোনা বন্ধক রেখে ব্যাংকঋণ নেওয়া যেত, যা পরে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি নীতিমালা দরকার, যার আওতায় বাজুসের মাধ্যমে দেশে গোল্ড ব্যাংক এবং গোল্ড এক্সচেঞ্জ করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। গোল্ড এক্সচেঞ্জে প্রতিদিনের মূল্য নির্ধারণ হবে। এটা হলে সোনা চোরাচালান, পাচারের যেসব কথা শোনা যায়, তা বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা প্রয়োজন। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এ খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
জুয়েলারি শিল্প মালিকদের উদ্দেশ্যে আনভীর বলেন, শুধু আমদানি নয়, এখন সময় হয়েছে সোনা রপ্তানি করার। এজন্য জুয়েলারি কারখানা করতে হবে। আমাদের অনেক শ্রমিক রয়েছেন, যারা বিশে^র বিভিন্ন দেশে জুয়েলারি শ্রমিক হিসেবে চমৎকার কাজ করছেন। এখন দেশে যদি এসব কারখানা হয়, তাহলে তারা দেশের কারখানায় কাজ করবেন এবং উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, দেশে সোনা পরিশোধনের কারখানার অনুমোদন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। একটা রিফাইনারি হচ্ছে, আরও হবে। দেশে রিফাইনারি হলে সোনা রপ্তানির সুযোগও তৈরি হবে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রধান পণ্য হলেও এ খাতে মূল্য সংযোজন কম। কিন্তু জুয়েলারি পণ্যে মূল্য সংযোজনের হার বেশি। কিছু কিছু জুয়েলারি পণ্যে মূল্য সংযোজন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশও হয়ে থাকে। তাই সোনা রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, জুয়েলারি শিল্পে আজ গোল্ড ব্যাংক, গোল্ড এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার যে দাবি উঠেছে, তা প্রতিষ্ঠায় বাণিজ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই সহায়তা করবেন। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীও দ্রুততম সময়ে সম্মতি দেবেন, আমি নিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা অনুযায়ী আগামীতে ডায়মন্ডের কারখানাও হবে বলে আশা করেন বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সোনা নীতিমালা করার সময় বাজুসের বর্তমান প্রেসিডেন্টসহ অন্য নেতারা বহুবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে সরকারি কাজে অনেক বাধা-বিপত্তি থাকে। সেসব বাধা অতিক্রম করে সবার কঠোর পরিশ্রমে নীতিমালাটি হয়েছে। এখন গোল্ড ব্যাংক, গোল্ড এক্সচেঞ্জ করার যে দাবি উঠেছে, তা এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে নিশ্চয় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এটা ঠিক যে বাংলাদেশের যারা স্বর্ণকার, স্বর্ণশিল্পী, তাদের হাতের কাজ অনেক সুন্দর। যা দিয়ে আর্ন্তজাতিক বাজারেও খ্যাতি লাভ করা সম্ভব। স্বর্ণ শিল্পে মূল্য সংযোজনের হার বেশি থাকায় রপ্তানিতে আমাদের ভালো সুযোগ তৈরি হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, স্বর্ণ শিল্পের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে বাজুস প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথসভার অনুরোধ জানিয়েছেন। এ ধরনের সভা হয়তো আগামীতে হবে, কিন্তু এই মুহূর্তে কভিডের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য এ সময়ের মধ্যে কাগজপত্র তৈরি করে আমরা যেকোনো ভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে পারি। তারপরে যখন সময় হবে, সুদিন ফিরবে সবাই সবার সামনে বসতে পারব তখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসব। বললেই তিনি রাজি হয়ে যাবেন।