প্রধানের হাতে মুনাফায় ফেরে সোনালী ব্যাংক ইউকে
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ মে, ২০২২ ০০:০০
সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেডের ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এলসি অ্যাডভাইজিং, আমদানি পেমেন্ট ও মুনাফাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সূচক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই ১০ বছরে ব্যাংকটিতে দায়িত্ব পালন করা তিনজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) মধ্যে ব্যাংকটি সবচেয়ে ভালো চলে মো. আতাউর রহমান প্রধানের সময়ে।
মো. আতাউর রহমান প্রধান ব্যাংকটির সিইও হিসেবে যোগদানের আগে ও পরে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কেউই এমন সাফল্য পাননি। বরং প্রধান দায়িত্ব ছাড়ার পর মুনাফা তো দূরের কথা বিজনেস পারফরম্যান্স কমে যাওয়ার কারণে মারাত্মক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয় ব্যাংকটি।
ব্যাংকটির বার্ষিক প্রতিবেদন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেডে তিনজন সিইও দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ২০০৯’র আগস্ট থেকে ২০১২’র মার্চ পর্যন্ত খোন্দকার ইকবাল দায়িত্ব পালন করেন।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের বর্তমান সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান ২০১২ সালের মার্চে তৎকালীন সিইও খন্দকার ইকবালের (পরবর্তীতে বেসিক ব্যাংকের এমডি) কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ২০১৫ সালের মে মাসে এম সরোয়ার হোসেনের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করেন।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯ সালে ব্যাংকটির লোকসান ছিল ৪ লাখ ২৪ হাজার পাউন্ড। ২০১০ সালে এই লোকসান কমে ২ লাখ ৫৫ হাজার পাউন্ডে নেমে আসে। ২০১১ সালে মুনাফা হতে শুরু করে। ওই বছর মুনাফা হয় ৫ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড। ২০১২ সালে মুনাফা বেড়ে ১০ লাখ ২৭ হাজার পাউন্ড, ২০১৩ সালে মুনাফা আরও বেড়ে ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার পাউন্ডে উঠে আসে। ২০১৪ সালে মুনাফা হয় ২৭ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড। ২০১৫ সালে আবার লোকসানে যায় সোনালী ব্যাংক ইউকে। ওই বছর ১৫ লাখ ৩৩ হাজার পাউন্ড লোকসান হয়। ২০১৬ সালে লোকসান হয় ২ লাখ ৯৬ হাজার পাউন্ড, ২০১৭ সালে লোকসান হয় ১ লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ওই ব্যাংকটি ৫৫ হাজার পাউন্ড মুনাফা করে।
ব্যাংকটিতে ওই সময়ে কর্মরত সালাউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ হলে তিনি জানান, মূলত মো. আতাউর রহমান প্রধানের সময়ে রেমিট্যান্স, এলসি অ্যাডভাইজিংয়ের সঙ্গে ট্রেড ফাইন্যান্স সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিজনেস যেমন বিল ডিস্কাউন্টিং, অ্যাড কনফার্মেশন, রি-ইমবার্সমেন্ট বহুগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। ফলে ওই সময়ে সোনালী ব্যাংক ইউকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। লোকাল কমিউনিটিসহ সরকারের কাছে ব্যাংকটির ভাবমূর্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
২০১২ সালে ব্যাংকটির পারফরম্যান্স এতটাই ভালো হয়েছিল যে ২০১৩ সালের ১৩ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উপস্থিতিতে ডিভিডেন্ড -হস্তান্তর করা হয়।
সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেডে ২০১৩ সালে আগের বছরের তুলনায় প্রায় চারগুণ মুনাফা হয়। এই অভাবনীয় সাফল্য উদযাপন করা হয় আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে ডিভিডেন্ড হস্তান্তর করার মাধ্যমে। সেদিন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আজ আমাদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত আনন্দের দিন। মনে হচ্ছে এটি একটি ঈদের দিন। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক প্রতিষ্ঠান যখন লোকসান গুনছে তখন সোনালী ব্যাংক (ইউকে) আমাদের ডিভিডেন্ড দিচ্ছে।’
২০১৪ সালে ১০ লাখ ৩৭ হাজার পাউন্ড প্রভিশন সংরক্ষণ করায় ব্যাংকটির মুনাফা কিছুটা কমে আসে। বছর শেষে ইমপোর্ট পেমেন্টের সংখ্যা ছিল ২০৮৯৪টি, তা ২০১১ সালের ১০৩৬৩-এর দ্বিগুণের বেশি। অন্যদিকে ডিসেম্বরভিত্তিক পারফরম্যান্স মূল্যায়নে দেখা যায় (আতাউর রহমান প্রধান মে ২০১৫তে লন্ডনে দায়িত্বভার অর্পণ শেষে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, প্রধান কার্যালয়ে যোগদানের পর) পরের তিন বছর লোকসান করেছে ব্যাংকটি। মূলত আতাউর রহমান প্রধান বাংলাদেশে ফেরত আসার পর সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেড ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে থাকে। এ বিষয়ে ওই সময়ে ব্যাংকটিতে কর্মরত লুৎফর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ হলে তিনি জানান, ২০০১ সালে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মোট ১১ বছরে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) মুনাফা করেছিল ৮ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড। আর আতাউর রহমান প্রধান এখানে সিইও হিসেবে অবস্থানকালে তিন বছরে (২০১২-২০১৪ সাল পর্যন্ত) মুনাফা করেছিল ৭৭ লাখ ৫ হাজার পাউন্ড। অন্যদিকে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চার বছরে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড লোকসান করে ১৮ লাখ ৯৯ হাজার পাউন্ড।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ মে, ২০২২ ০০:০০

সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেডের ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এলসি অ্যাডভাইজিং, আমদানি পেমেন্ট ও মুনাফাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সূচক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই ১০ বছরে ব্যাংকটিতে দায়িত্ব পালন করা তিনজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) মধ্যে ব্যাংকটি সবচেয়ে ভালো চলে মো. আতাউর রহমান প্রধানের সময়ে।
মো. আতাউর রহমান প্রধান ব্যাংকটির সিইও হিসেবে যোগদানের আগে ও পরে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কেউই এমন সাফল্য পাননি। বরং প্রধান দায়িত্ব ছাড়ার পর মুনাফা তো দূরের কথা বিজনেস পারফরম্যান্স কমে যাওয়ার কারণে মারাত্মক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয় ব্যাংকটি।
ব্যাংকটির বার্ষিক প্রতিবেদন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেডে তিনজন সিইও দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ২০০৯’র আগস্ট থেকে ২০১২’র মার্চ পর্যন্ত খোন্দকার ইকবাল দায়িত্ব পালন করেন।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের বর্তমান সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান ২০১২ সালের মার্চে তৎকালীন সিইও খন্দকার ইকবালের (পরবর্তীতে বেসিক ব্যাংকের এমডি) কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ২০১৫ সালের মে মাসে এম সরোয়ার হোসেনের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করেন।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯ সালে ব্যাংকটির লোকসান ছিল ৪ লাখ ২৪ হাজার পাউন্ড। ২০১০ সালে এই লোকসান কমে ২ লাখ ৫৫ হাজার পাউন্ডে নেমে আসে। ২০১১ সালে মুনাফা হতে শুরু করে। ওই বছর মুনাফা হয় ৫ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড। ২০১২ সালে মুনাফা বেড়ে ১০ লাখ ২৭ হাজার পাউন্ড, ২০১৩ সালে মুনাফা আরও বেড়ে ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার পাউন্ডে উঠে আসে। ২০১৪ সালে মুনাফা হয় ২৭ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড। ২০১৫ সালে আবার লোকসানে যায় সোনালী ব্যাংক ইউকে। ওই বছর ১৫ লাখ ৩৩ হাজার পাউন্ড লোকসান হয়। ২০১৬ সালে লোকসান হয় ২ লাখ ৯৬ হাজার পাউন্ড, ২০১৭ সালে লোকসান হয় ১ লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ওই ব্যাংকটি ৫৫ হাজার পাউন্ড মুনাফা করে।
ব্যাংকটিতে ওই সময়ে কর্মরত সালাউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ হলে তিনি জানান, মূলত মো. আতাউর রহমান প্রধানের সময়ে রেমিট্যান্স, এলসি অ্যাডভাইজিংয়ের সঙ্গে ট্রেড ফাইন্যান্স সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিজনেস যেমন বিল ডিস্কাউন্টিং, অ্যাড কনফার্মেশন, রি-ইমবার্সমেন্ট বহুগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। ফলে ওই সময়ে সোনালী ব্যাংক ইউকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। লোকাল কমিউনিটিসহ সরকারের কাছে ব্যাংকটির ভাবমূর্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
২০১২ সালে ব্যাংকটির পারফরম্যান্স এতটাই ভালো হয়েছিল যে ২০১৩ সালের ১৩ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উপস্থিতিতে ডিভিডেন্ড -হস্তান্তর করা হয়।
সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেডে ২০১৩ সালে আগের বছরের তুলনায় প্রায় চারগুণ মুনাফা হয়। এই অভাবনীয় সাফল্য উদযাপন করা হয় আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে ডিভিডেন্ড হস্তান্তর করার মাধ্যমে। সেদিন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আজ আমাদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত আনন্দের দিন। মনে হচ্ছে এটি একটি ঈদের দিন। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক প্রতিষ্ঠান যখন লোকসান গুনছে তখন সোনালী ব্যাংক (ইউকে) আমাদের ডিভিডেন্ড দিচ্ছে।’
২০১৪ সালে ১০ লাখ ৩৭ হাজার পাউন্ড প্রভিশন সংরক্ষণ করায় ব্যাংকটির মুনাফা কিছুটা কমে আসে। বছর শেষে ইমপোর্ট পেমেন্টের সংখ্যা ছিল ২০৮৯৪টি, তা ২০১১ সালের ১০৩৬৩-এর দ্বিগুণের বেশি। অন্যদিকে ডিসেম্বরভিত্তিক পারফরম্যান্স মূল্যায়নে দেখা যায় (আতাউর রহমান প্রধান মে ২০১৫তে লন্ডনে দায়িত্বভার অর্পণ শেষে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, প্রধান কার্যালয়ে যোগদানের পর) পরের তিন বছর লোকসান করেছে ব্যাংকটি। মূলত আতাউর রহমান প্রধান বাংলাদেশে ফেরত আসার পর সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেড ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে থাকে। এ বিষয়ে ওই সময়ে ব্যাংকটিতে কর্মরত লুৎফর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ হলে তিনি জানান, ২০০১ সালে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মোট ১১ বছরে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) মুনাফা করেছিল ৮ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড। আর আতাউর রহমান প্রধান এখানে সিইও হিসেবে অবস্থানকালে তিন বছরে (২০১২-২০১৪ সাল পর্যন্ত) মুনাফা করেছিল ৭৭ লাখ ৫ হাজার পাউন্ড। অন্যদিকে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চার বছরে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড লোকসান করে ১৮ লাখ ৯৯ হাজার পাউন্ড।