
আমানতের সুদের ওপর নির্ধারিত ৭ শতাংশ সুদের হারের বিধান বাতিল চায় দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। গতকাল বুধবার বিকেলে এফবিসিসিআইয়ের নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনসংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম বৈঠকে এ দাবি জানান এ খাতসংশ্লিষ্টরা।
সভায় বক্তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমানতের ওপর গ্রাহকদের ৭ শতাংশের বেশি সুদ দিতে পারছে না ব্যাংকবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো বাড়তি সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এতে অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ ছাড়াও তারা জানান, কভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঋণখেলাপিসংক্রান্ত নীতিতেও ব্যাংকগুলো বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও একই সুবিধার দাবি জানান তারা। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আকার আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান কমিটির সদস্যরা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সুদের সর্বোচ্চ হারের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা করবে এফবিসিসিআই। এ ছাড়াও ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তায় পার্থক্য থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এ ক্ষেত্রে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভূমিকা রাখতে পারে। এ সময় এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রান্তিক উদ্যোক্তা ও এসএমই খাতে ঋণ অর্থায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান জসিম উদ্দিন।
সীমিত নীতি সহায়তার মধ্যেও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিল্পায়নে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবদানের কথা তুলে ধরেন কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ এসএম জাহাঙ্গীর আলম (মানিক)। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে নীতি সহায়তায় সাম্যতা আনার আহ্বান জানান।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান মতিউর রহমান। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির কো-চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, কান্তি কুমার সাহা, অন্যান্য সদস্য, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক রেজাউল করিম রেজনু, বিজয় কুমার কেজরিওয়াল ও মহাসচিব মাহফুজুল হক।
আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রা অর্থায়নের সুদহার পুনর্নির্ধারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদ হারের চেয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি দিতে হবে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে মুদ্রার বেঞ্চ মার্ক রেটের সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ যুক্ত করে বার্ষিক সুদের হার নির্ধারণ করতে হবে। এর আগে গত ১৬ আগস্ট সুদহার কমানো হয়েছিল।
তখন বেঞ্চ মার্ক রেটের সঙ্গে ৩ শতাংশ যুক্ত করে এ হার নির্ধারণ করা হয়। গতকাল পর্যন্ত ওই রেট বহাল ছিল। এখন এটি দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, এখন বেঞ্চ মার্ক রেফারেন্স রেট গড় ২ দশমিক ৪০ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রায় স্বল্পমেয়াদি আমদানি-রপ্তানির সময় অর্থায়নে এ রেটের সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ সুদ যোগ হবে।
সিগারেট রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি জানিয়েছে দেশের শীর্ষ সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড (বিএটিবি)। প্রতিবেশী দেশ ভুটানে শুল্কমুক্ত কোটায় সিগারেট রপ্তানির এ সুবিধা চেয়েছে দেশে সিগারেটের বাজারের ৮০ শতাংশ দখলে থাকা এ কোম্পানিটি।
ভুটানে শুল্কমুক্ত কোটায় সিগারেট রপ্তানির বিষয়ে বিএটিবির হেড অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স শেখ শাবাব আহমেদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত আগস্টে বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সই হয়েছে। তাতে বাংলাদেশের ১০০টির বেশি পণ্য ভুটানে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। সেই তালিকায় সিগারেটকে আওতাভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে বিএটিবি।
বিএটিবি বলছে, বাংলাদেশ প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তামাক পাতা রপ্তানি করে, বর্তমানে বছরে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় করছে। যা চলতি বছর শেষে ১০ কোটি ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমবারের মতো ভুটানে বাংলাদেশে তৈরি সিগারেট রপ্তানি করবে। যার মাধ্যমে প্রথম বছরে ২০ লাখ ডলার আয় হবে। শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সিগারেট রপ্তানি করে বছরে ৯০ লাখ ডলার আয় করতে চায় বিএটিবি। এ জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের মতো ভুটানে শুল্কমুক্ত সুবিধা চায় বিএটিবি।
বহুজাতিক সিগারেট উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ভারতের সিগারেট রপ্তানিতে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা রয়েছে। বর্তমানে চীন, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপে সীমিত পরিসরে সিগারেট রপ্তানি করছে বিএটিবি। এতে বছরে ২ লাখ ডলার আয় হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, রপ্তানি বাড়াতে তারা দুই বছর আগে সাভারে একটি কারখানা করেছে। তাদের ঢাকা ও সাভারের দুটি কারখানায় এক হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। প্রায় দেড় লাখ তামাকচাষি, ১৫ লাখ সিগারেট বিক্রেতাসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮০ লাখ মানষের জীবিকা নির্বাহী হয়। বিএটিবির ৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকার।
বিএটি বাংলাদেশ থেকে তামাক পাতা ও প্রস্তুত সিগারেট রপ্তানি করে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তামাক পাতা রপ্তানিতে বিএটির আয় বাড়লেও সিগারেট রপ্তানি থেকে আয় কমেছে। ২০২১ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) কোম্পানিটি ১ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার সিগারেট রপ্তানি করে আয় করেছিল ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। আর চলতি ২০২২ সালের প্রথমার্ধে ১ কোটি ১৫ লাখ সিগারেট রপ্তানি করে আয় করে ১ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রায় একই পরিমাণের সিগারেট রপ্তানি হলেও চলতি প্রথমার্ধে রপ্তানি মূল্য ৬৫ শতাংশ কমে গেছে। এ সময় ২৪ লাখ কেজি তামাক পাতা রপ্তানি করে আয় হয় ৫৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ১৬ লাখ ৬০ হাজার কেজি তামাক পাতা রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৪১ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টিকারী ধূমপানের বিষয়ে জনসমক্ষে আলোচনা করা একটি সংবেদনশীল বিষয়। ধূমপানের কারণে ক্যানসার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস এবং ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), ক্রনিক ব্রংকাইটিসের মতো জটিল রোগ হয়।
২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটান এবং বাংলাদেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সই হয়। যা চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
গত মাসের শুরুর দিকে, দুই দেশের মধ্যে আগের চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ আরও ১৬টি ভুটানি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। গত ৪ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, বাংলাদেশ একটি পিটিএর অধীনে ভুটানের ৩৪টি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়।
এতে বলা হয়েছে, ভুটান থেকে দুধ, প্রাকৃতিক মধু, গমের আটা, জ্যাম, ফলের জেলি, মার্বেল শিট, সিমেন্ট ক্লিংকার, পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট, সাবান, পার্টিকেল বোর্ডসহ ১৬টি পণ্য আমদানিতে কোনো শুল্ক বা কর আরোপ করা হবে না।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সদর দপ্তরে মালয়েশিয়ার উপ-অর্থমন্ত্রী ইয়াদাতো আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানান তিনি।
ইয়াদাতো জানান, বাংলাদেশের এ প্রস্তাব নিয়ে তিনি তার দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। এডিবির বার্ষিক সভায় যোগ দিতে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল এখন ম্যানিলায় অবস্থান করছেন। সাধারণ সভায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তিনি মালয়েশিয়ার উপ-অর্থমন্ত্রী ও ভুটানের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন।
মালয়েশিয়ার উপ-অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জনশক্তি রপ্তানির প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেন মুস্তফা কামাল। সব খাতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মালয়েশিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি লোক নিয়োগের জন্য মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দিয়ে সহায়তা করার জন্য মালয়েশিয়ান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে মালয়েশিয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ চুক্তি হওয়ায় আমরা আনন্দিত। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর হবে।’
চাহিদা অনুযায়ী যাতে মালয়েশিয়া থেকে এলএনজি আনতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান অর্থমন্ত্রী। বৈঠকে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। বিনিয়োগ বাড়াতে দেওয়া হয়েছে অবারিত সুবিধা। মালয়েশিয়া প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) জন্য গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
এফডিআই আকর্ষণে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য মালয়েশিয়া সরকারকে আহ্বান জানান তিনি। বৈঠকে মালয়েশিয়ার উপ-অর্থমন্ত্রী ইয়াদাতো আবদুল্লাহ বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর মাধ্যমে আগামীতে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
মুক্তবাণিজ্য চুক্তি, আরও বেশি পরিমাণে এলএনজি আমদানি ও জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে মালয়েশিয়ার উপ-অর্থমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন। অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশকে ‘রাইজিং স্টার’ হিসেবে অভিহিত করেন ইয়াদাতো। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্ক দিন দিন আরও বাড়বে।’
এফটিএ করার প্রস্তাব বর্তমানে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি আছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল মাত্র ৩০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। একই সময়ে বাংলাদেশ আমদানি করে ১৫৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশ এ ঘাটতি কমাতে চায়। সে জন্য মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠকে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়াতে হলে আমাদের এফটিএ করতে হবে। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে তিনি মালয়েশিয়ার উপ-অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। একই দিনে ভুটানের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মুস্তফা কামাল। এ সময় দুই দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করেন তারা।
বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির ৩০০ কোটি টাকার সুকুক প্রস্তাবে শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। গতকাল বুধবার কমিশনের নিয়মিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস। কোম্পানির প্রস্তাবিত সুকুকটিতে জামানত থাকবে এবং এটি শেয়ারে রূপান্তর করা যাবে না। এই সুকুকটিতে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রাইভেট অফারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারবে। এর মুনাফার হার হবে ৮ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে। এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ এর মেয়াদ হবে ৬ বছর।
দেশের পুঁজিবাজারে প্রথম সুকুক বন্ড ছেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা তুলেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। এবার বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস সুকুকের অনুমোদন পেল। বেক্সিমকোর সুকুকটি মূল বাজারে লেনদেন হলেও বঙ্গ ম্যাটেরিয়ালসের সুকুকটি লেনদেন হবে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে, যেটি এখনো চালুর অপেক্ষায় আছে।
বঙ্গ ম্যাটেরিয়ালস সুকুকের মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে বিদ্যমান যন্ত্রাংশ পুনঃঅর্থায়নে ১৬০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও নতুন যন্ত্রাংশ ক্রয়ে ১৩৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় করবে। সুকুকটির প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য ৫ হাজার টাকা এবং ২০টিতে একটি লট। ন্যূনতম সাবসক্রিপশন ১ লাখ টাকা।
সৌদি আরব, কাতার ও দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৯০ হাজার টন ইউরিয়া সরকার ও ৩০ হাজার টন ফসফরিক এসিড ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৮৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইউরিয়া সার কিনতে ৫৯৮ কোটি ৫৭ লাখ ও ফসফরিক এসিড কিনতে ২৩৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল বারিক।
তিনি জানান, অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ছয়টি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এ প্রস্তাবগুলোর মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ২৭ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ২১৬ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৩৭৮ কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪৪৭ এবং দেশীয় ব্যাংক ও বৈদেশিক ঋণ ৬৪৯ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬৯ টাকা।
সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (কাফকো) কাছ থেকে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১৯৭ কোটি ৪৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বিসিআইসির মাধ্যমে কাতারের মুনতাজাত থেকে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ২০০ কোটি ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৯৫ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিসিআইসির মাধ্যমে সৌদি আরবের সেবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে নবম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ২০০ কোটি ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৯৫ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বৈঠকে বিসিআইসি মাধ্যমে ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএপিএফসিএল) জন্য ৩০ হাজার টন ডিএপি ২৩৩ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার টাকায় আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি তার ওপর সংঘটিত ছুরি হামলা নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসা রুশদি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। কিন্তু বেঁচে ফেরায় তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করছেন। পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতা।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া রুশদির একটি সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে একটি সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রুশদি। এ সময় মঞ্চে তার ওপর হামলা চালান ২৪ বছর বয়সী যুবক হাদি মাতার। নিউ জার্সির এই বাসিন্দা সেদিন রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন। এতে নিজের রক্তের ওপর লুটিয়ে পড়েন রুশদি। এর জের ধরে প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয় এই লেখককে। পরে এক চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।
দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদি বলেন, ‘আমি অনেকটাই ভাল হয়েছি। যা ঘটেছিল তা বিবেচনা করে দেখলে খুব একটা খারাপ নেই। বড় ক্ষতগুলো সেরে গেছে। তবে বুড়ো আঙুল, তর্জনী ও তালুর নিচের অর্ধেকটা অনুভব করছি। আমাকে প্রচুর হাতের থেরাপি নিতে হচ্ছে। যদিও আমাকে বলা হয়েছে শারীরিকভাবে আমি উন্নতি করছি’।
রুশদি জানান, আঙ্গুলের কিছু অংশে অনুভূতি না থাকায় লিখতে অসুবিধা হচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি। হাঁটতে পারছি চারপাশে। তবে আমার শরীরে এমন কিছু অংশ আছে যেগুলো নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এটা ছিল একটি মারাত্মক আক্রমণ’। তিনি জানান, ছুরি হামলার ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। এর ফলে তাকে নিরাপত্তার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন রুশদি। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার পর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন এই লেখক। এই উপন্যাস লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়। উপন্যাসটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা।
উপন্যাসটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ঘোষণা করেন ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার। রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হচ্ছে তার লেখা নতুন উপন্যাস ‘ভিক্টরি সিটি’। পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে এই নারী কীভাবে একটি শহরকে পরিচালনা করেছেন, সে গল্পই উঠে এসেছে বইটিতে।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।