
বর্তমানে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (ই-টিআইএন) সংখ্যা ৭৬ লাখ। এর মধ্যে নিষ্ক্রিয় করদাতার সংখ্যা ২৭ লাখ, যা শতকরা হারে ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা প্রায় ৩৪ শতাংশ। এই ২৭ লাখ বাদ দিলে নিট টিআইএনধারীর সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ৫৩ লাখে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নিবন্ধন নেওয়ার পর খুঁজে পাওয়া যায়নি এমন টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৩৪ শতাংশ।
আইন অনুযায়ী, টিআইএনধারী প্রত্যেকের বার্ষিক রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারপরও রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়ছে না প্রত্যাশা অনুযায়ী। রাজস্ব বোর্ডের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বছরে আয়কর রিটার্ন জমার সংখ্যা ২৪ লাখ।
আয়কর রিটার্নের সংখ্যা বাড়াতে এ বছরের বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। রিটার্নের সঙ্গে অ্যাকনলেজমেন্ট বা প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয় ৩৪টি সেবা খাতে। এ উদ্যোগের ফলে এনবিআর আশা করছে, আগামী করবর্ষে আয়কর রিটার্ন বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ বাড়বে।
আয়কর বিভাগের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেকেই জমি ক্রয়, গাড়ি কেনা, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ বিভিন্ন সেবা নিতে ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন, কিন্তু বছরের পর বছর রিটার্ন জমা দেননি। আবার অনেকেই মারা গেছেন, কেউ আবার বিদেশ চলে গেছেন। ওইসব টিআইএন সিস্টেম থেকে বাতিল না করায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এ কারণে নিষ্ক্রিয় নম্বরগুলো কর বিভাগের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিষ্ক্রিয় ই-টিআইএন বাতিল করতে সম্প্রতি কর অঞ্চল থেকে এনবিআরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ই-টিআইএনের সঙ্গে রিটার্ন জমার পার্থক্য নিয়ে বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তোলে। ফলে নিষ্ক্রিয় টিআইএন বাতিল করা হলে রিটার্ন জমার হার বেড়ে যাবে। এনবিআর বলছে, ই-টিআইএন সার্ভারে এটি বাতিলের অপশন বা সুযোগ রাখা হয়নি।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বইয়ে করদাতার নাম ও তথ্য নিবন্ধন করা হতো। এতে যে নম্বর পড়ত, সেটাই হতো করদাতার নম্বর। একে বলা হতো জেনারেল ইনডেক্স রেজিস্ট্রেশন নম্বর। কোনো কারণে করদাতা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে যাচাই করে সেই নম্বর বন্ধ করে দেওয়া হতো। ১৯৯৩ সালে ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর চালু করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের জুলাই থেকে টিআইএন পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয় করা হয়। ১২ ডিজিটের এ নম্বরকে বলা হয় ইলেকট্রনিক ট্যাক্সপেয়ারস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা ই-টিআইএন। স্বয়ংক্রিয় এ পদ্ধতিতে টিআইএন নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের আগস্ট নাগাদ নিবন্ধিত ই-টিআইএনের সংখ্যা ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৫। গত বছর আগস্ট পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ৮৬৪। সে হিসাবে এক বছরে করদাতা বেড়েছে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯৬১ বা ১৮ শতাংশ।
দেশের কৃষির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত উত্তরবঙ্গের কৃষি খাত এখন পর্যন্ত নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের কৃষিকে আধুনিকায়ন করে তা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যাতে দেশের খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করতে পারেন কৃষকরা। এ লক্ষ্যে ৬৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন শীর্ষক’ একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের কথা রয়েছে। চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছিল। ১১ অক্টোবরের একনেক সভায় অনুমোদন পেলে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের জন্য ১ হাজার ৪৪০ জন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়নের প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ৩১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে শস্যের নিবিড়তা ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে।
এর উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, পরিবেশবান্ধব কৃষি উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা হবে। এটি হলে দামি ফসলের উৎপাদন ১২ শতাংশ বৃদ্ধি এবং জমির উৎপাদনশীলতা ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণসহ ফসল সংগ্রহ করে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা ও কৃষকদের। উদ্যোক্তারা এসব প্রশিক্ষণ পেলে উচ্চমূল্য ফসলের সংগ্রহ করে ক্ষতি ১০ শতাংশ হ্রাস করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, দিনাজপুর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ সমভূমির উঁচু ও মাঝারি উঁচু অঞ্চলে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ করা সম্ভব। এ অঞ্চলে নতুন ফসল অন্তর্ভুক্ত করা, উচ্চমূল্যের ফসল চাষসহ জলবায়ুঝুঁকি এড়াতে সক্ষম লাগসই কৃষি প্রযুক্তি নেওয়ার মাধ্যমে শস্যের নিবিড়তা বাড়ানোর পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন ও শিল্পায়নের প্রভাবে এ অঞ্চলে কৃষি পরিবেশ ক্রমেই হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। অন্যদিকে আর্থসামাজিক কারণে ক্রমান্বয়ে ধনী কৃষকেরা কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় কৃষি চলে যাচ্ছে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির হাতে। এতে মূলধনের অভাবে ফসলের ভালো ফলনের প্রয়োজনীয় উপাদান সঠিক সময়ে সরবরাহ করতে না পারায় ফলন কম হচ্ছে। দেশের শিক্ষিত নারী, তরুণ ও যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করে পুষ্টিকর উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন ও বিপণনের অঞ্চলভিত্তিক সম্ভাবনা, সুযোগ এবং সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিক কৃষিব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনে অবদান রাখার তাগিদ থেকে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, কৃষকদের কাছে আধুনিক কৃষির প্রযুক্তি প্রদর্শনী করা হবে। এ জন্য ১ হাজার ২২৪টি মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ প্রযুক্তি, ২ হাজার ৩৮০টি বিশেষ প্রযুক্তি প্রদর্শনী করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৫টি কৃষক কেন্দ্র নির্মাণ, ১৫৫টি বিদ্যুৎবিহীন কুলিং চেম্বার নির্মাণ, ৮টি পলিনেট বা শেড হাউজ নির্মাণ করা হবে।
শুধু তা-ই নয়, কৃষকদের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের মাধ্যমেও আধুনিক কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এ জন্য ৯২টি উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, ২ হাজার ১৩৫টি মাঠ দিবস, ১২টি কৃষি প্রযুক্তি মেলা এবং অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
দিনাজপুরের সদর উপজেলা, বিরল, বীরগঞ্জ, কাহারোল, বোচাগঞ্জ, চিরিরবন্দর, খানসামা, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট উপজেলা। ঠাকুরগাঁওয়ের ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী, রাণীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলা। পঞ্চগড়ের পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
রাজধানীর বাজারগুলোতে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ওজন দেড় কেজি হলে দাম ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা হাঁকা হচ্ছে। ওজন ৫০০ গ্রামের বেশি হলে দাম কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। আবার ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৫০০ টাকা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের চেয়ে আকার অনুযায়ী কেজ্রিতি ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ইলিশের দাম।
আগামীকাল ৭ অক্টোবর থেকে প্রজনন মৌসুমের কারণে মা ইলিশ ধরার পাশাপাশি বিক্রি ও পরিবহনসহ সব ধরনের কেনাবেচা আবার ২২ দিন বন্ধ হতে যাচ্ছে। এর আগেই অনেকে বেশি পরিমাণে কিনে মজুদ করায় এবং পূজায় মাছের চাহিদা বাড়ার সুযোগে রুপালি এ মাছ দামে চড়া হয়ে পড়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা অনেক বেশি হওয়ার কারণেই মূলত দাম বাড়ছে। নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে আড়তগুলোতে আগের চেয়ে আমদানি বাড়লেও এক সপ্তাহ আগের চেয়ে বেশি দামে আড়তেই মাছ সংগ্রহের কথা জানালেন আড়তদাররা। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
রাজধানীর সোয়ারিঘাটের আড়তগুলোতে পাইকারি ৩৫০ থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। গত তিন থেকে চার দিনে আড়তে আসার আগেই দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খুচরায় কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে শুরু করে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান।
আড়তদাররা জানান, নদীতে ও সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও আড়তেও আগের চেয়ে অনেক বেশি মাছ উঠছে। তবে চাহিদাও আগের চেয়ে বেশি।
কারণ হিসেবে তারা বলেন, ‘আগে এক কেজি সাইজের ইলিশ ৭০০ টাকায় কেনা গেলেও এখন সেটা ৯০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর দুই কেজি সাইজের ইলিশ আগে ১৮০০ টাকা কেজি আড়তদাররা কিনলেও এখন ২২০০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে।
রায়ের বাজারের স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদুল হক মাছ কিনতে এসেছেন সোয়ারীঘাটে। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে দেড় কেজির যে মাছ ১২০০ টাকা কেজি কিনেছি আজ কিনতে হলো ১৬০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে ইলিশের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই অন্য জায়গায় যাচ্ছেন মাছ কিনতে। আবার অনেকেই বড় মাছের বদলে কিনছেন ছোট ইলিশ।
ভাটারা থানার নতুন বাজারে গতকাল বুধবার ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে ৬০০ টাকায়। আবার ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। মাছের ওজন যত বেশি দামও তত বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
আগামীকাল ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর প্রতি বছরের মতো এ বছরও ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে সরকারি এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় কেনাবেচা, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। এ বছর ইলিশ উৎপাদন পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৫ হাজার টন।
ইলিশ ধরা বন্ধকালীন সময়েও কতিপয় অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করে। এতে বিপুল পরিমাণ জাটকাও ধরা পড়ে। সারা দেশের গ্রামগঞ্জে গোপনে বিক্রি হয় এসব মাছ। আবার অনেক সময় মৎস্য অধিদপ্তর নদীতে অভিযান চালিয়ে অনেক জেলেকে আটকও করে।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে সেবা গ্রহণের জন্য আয়কর-রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যক্তি করদাতাদের রিটার্ন জমা তিন গুণ বেড়েছে।
সারা দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অফিসগুলো গত তিন মাসে ব্যক্তি করদাতাদের কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার আয়কর রিটার্ন পেয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুসারে, গেল অর্থবছর একই সময়ে (১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১) আনুমানিক ১ লাখ আয়কর রিটার্ন জমা হয়েছিল।
এনবিআরের একজন জ্যেষ্ঠ কর কর্মকর্তা চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ আয়কর রিটার্ন জমা হওয়ার আশা করছেন। কারণ নতুন আর্থিক ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে ৩৮ ধরনের সেবা পাওয়ার জন্য রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আয়কর রিটার্নের সংখ্যা গত অর্থবছর ২৪ লাখ হলেও চলতি অর্থবছরে ৪০ লাখ হতে পারে বলে তিনি ধারণা করেছেন।
এনবিআর দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কৌশল প্রণয়ন ও আইনি সংস্কারের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে।
করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ধারীর সংখ্যা ৭৬ লাখে পৌঁছালেও গত অর্থবছর পর্যন্ত রিটার্ন জমা হয়েছে ২৪ লাখের।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর জন্য ট্যাক্স রিটার্ন সিøপগুলোর যাচাইকরণ বাধ্যতামূলক করেছে।
কর সদস্যরা বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্ভাবিত সিস্টেম ব্যবহার করে চলতি বছরের ২১ আগস্ট থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত আনুমানিক ২ লাখ ৫০ হাজার আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ যাচাই করেছে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো।
কর পরামর্শকরা জানিয়েছেন, এনবিআর রিটার্ন জমা দিতে বাধ্য করায় এ বছর করদাতা এবং কর প্রাপ্তি উভয়ই বাড়বে।
তারা বলেন, একটি বড় অংশ, যারা আয়কর দাখিলের আওতায় ছিল, তাদের কর রিটার্ন জমা দিতে হবে এবং কর দিতে হবে যদি তারা সেবা পেতে চায়।
করদাতারা প্রথমে এটিকে কঠিন মনে করলেও কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাইকে দেশের আইন মেনে চলতে হবে।
আগের অর্থবছর পর্যন্ত মানুষ সেবা পাওয়ার জন্য একবার করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) দিলেই হতো। তবে এখন থেকে প্রতি বছর কর জমার প্রমাণ সিøপ নিতে হবে।
ব্যক্তি করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় শুরু হয়েছে ১ জুলাই, শেষ হবে ৩০ নভেম্বর।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে বিভিন্ন সংকটের পাশাপাশি ডলার সংকট চরম আকার ধারণ করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিলাসপণ্যের আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলও পেয়েছে পরের মাসগুলোতে। গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি। জুন মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে এলসি খোলার হার কমেছে প্রায় ৩৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ৫৭০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। এটি গত জুন মাসের তুলনায় ৩২ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। এ এলসি খোলার পরিমাণ আগের মাস আগস্টের তুলনায় ৬৩ কোটি ডলার বা ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ কম। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে এলসি নিষ্পত্তি আগের মাসের চেয়ে ১৮ শতাংশের অধিক কমে ৬০০ কোটি ডলারে নেমেছে। গত বছরের একই সময়ের (সেপ্টেম্বর) চেয়ে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি দুটোই কমেছে।
চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ কমতে শুরু করে। গত জুন মাসে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৮৪৪ কোটি ডলার, জুলাইতে তা ৬৩৫ কোটি ডলারে নামে। আগস্টে এলসি খোলার পরিমাণ আরও কমে দাঁড়ায় ৬৩৩ কোটি ডলারে। আর সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে আরও কমে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭০ কোটি ডলারে।
তবে এলসি খোলার পরিমাণ যে হারে কমছে, সে তুলনায় এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ একই হারে কমেনি। গত জুনে এলসি নিষ্পত্তি হয় ৭৫০ কোটি ডলার। পরের মাস জুলাইতে এর পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৭৩৫ কোটি ডলারে। আগস্টে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ ৭৩২ কোটি ডলারে নেমে আসে। সবশেষ সেপ্টেম্বর মাসে তা আরও ১৩২ কোটি কমে ৬০০ কোটিতে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর জানুয়ারিতে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৮৫ কোটি ডলার। ফেব্রুয়ারিতে নিষ্পত্তি হয় ৬৫৬ কোটি, মার্চে ৭৬৭ কোটি, এপ্রিলে ৬৯৩ কোটি ও মে মাসে ৭০৫ কোটি ডলার। এ নিয়ে চলতি বছরের ৯ মাসে ৬ হাজার ৩৫৪ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে।
দর্শক-চাহিদার সঙ্গে মানানসই ভরপুর ফিচার নিয়ে দেশের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রি শুরু হলো ‘ব্রাভিয়া কে সিরিজ’-এর টেলিভিশন। বাংলাদেশে সনির প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশক স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লি. (সনি-স্মার্ট)-এর হাত ধরে বাজারে এলো নতুন এই সিরিজের ওএলইডি এবং গুগল টিভি। নতুন এই সিরিজে রয়েছে ৫৫ ও ৬৫ ইঞ্চি আকারের দুটি ওএলইডি মডেলসহ মোট ১৮টি মডেলের ৭টি স্ক্রিন সাইজের আকর্ষণীয় সব টেলিভিশন। ৩২ থেকে ৮৫ ইঞ্চি পর্যন্ত আকারে পাওয়া যাচ্ছে ‘কে’ সিরিজের টিভি।
বাংলাদেশের বাজারে সনি ব্রাভিয়া কে সিরিজের টেলিভিশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সনি-স্মার্ট।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শফিকুল ইসলাম, সনি সাউথ-ইস্ট এশিয়া, আরএমডিসি প্রেসিডেন্ট আতসুশি এন্দো, স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লি.-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, এমডি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।
নতুন ‘কে’ সিরিজের এই ফোরকে মডেলগুলো সনির দৃষ্টিনন্দন পিকচার প্রসেসিং টেকনোলজি ফোরকে প্রসেসর এক্স ওয়ানসমৃদ্ধ, ফোরকে এক্স-রিয়েলিটি টিএম প্রো, ট্রিলুমিনাস প্রো ডিসপ্লে। সনির গুগল টিভিতে স্মার্ট হোম ইন্টিগ্রেশনের জন্য থাকছে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গে হ্যান্ডস ফ্রি ভয়েস সার্চ সুবিধা, ইউটিউব টিএম, নেটফ্লিক্স, আমাজন ভিডিওসহ গুগল প্লে টিএম থেকে ৭০০০-এরো বেশি অ্যাপের মতো বিশাল সমাহার। ফোরকে এইচডিআর টিভি মডেলগুলোর ফ্লাশ সারফেস এবং ন্যারো বেজেল, যা টিভি দেখার আনন্দকে দেবে অনন্য এক মাত্রা। সনির এই নতুন মডেলগুলো এখন থেকে পাওয়া যাবে দেশব্যাপী সনি-স্মার্টের সব আউটলেট এবং অনলাইন স্টোর: সনিস্মার্টডটকমডটবিডিতে।
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আইসিসি মেনস টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ-২০২২ এবং কাতারে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ-২০২২ উপলক্ষে ‘কে’ সিরিজের নতুন মডেলগুলোর সঙ্গে থাকবে আকর্ষণীয় সব অফার ও উপহার। অতিসত্বর যা ঘোষণা করা হবে। সনি-স্মার্টের রয়েছে দেশব্যাপী শক্তিশালী আউটলেট ও সার্ভিস নেটওয়ার্ক। সনি-স্মার্টের জি৫ পলিসিতে জেনুইন প্রোডাক্ট কিনুন জেনুইন প্রাইসে, উপভোগ করুন জেনুইন সার্ভিস, সঙ্গে জেনুইন কেয়ার আর জেনুইন প্যাশনের নিশ্চয়তা। বিজ্ঞপ্তি
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি তার ওপর সংঘটিত ছুরি হামলা নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসা রুশদি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। কিন্তু বেঁচে ফেরায় তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করছেন। পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতা।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া রুশদির একটি সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে একটি সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রুশদি। এ সময় মঞ্চে তার ওপর হামলা চালান ২৪ বছর বয়সী যুবক হাদি মাতার। নিউ জার্সির এই বাসিন্দা সেদিন রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন। এতে নিজের রক্তের ওপর লুটিয়ে পড়েন রুশদি। এর জের ধরে প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয় এই লেখককে। পরে এক চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।
দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদি বলেন, ‘আমি অনেকটাই ভাল হয়েছি। যা ঘটেছিল তা বিবেচনা করে দেখলে খুব একটা খারাপ নেই। বড় ক্ষতগুলো সেরে গেছে। তবে বুড়ো আঙুল, তর্জনী ও তালুর নিচের অর্ধেকটা অনুভব করছি। আমাকে প্রচুর হাতের থেরাপি নিতে হচ্ছে। যদিও আমাকে বলা হয়েছে শারীরিকভাবে আমি উন্নতি করছি’।
রুশদি জানান, আঙ্গুলের কিছু অংশে অনুভূতি না থাকায় লিখতে অসুবিধা হচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি। হাঁটতে পারছি চারপাশে। তবে আমার শরীরে এমন কিছু অংশ আছে যেগুলো নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এটা ছিল একটি মারাত্মক আক্রমণ’। তিনি জানান, ছুরি হামলার ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। এর ফলে তাকে নিরাপত্তার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন রুশদি। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার পর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন এই লেখক। এই উপন্যাস লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়। উপন্যাসটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা।
উপন্যাসটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ঘোষণা করেন ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার। রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হচ্ছে তার লেখা নতুন উপন্যাস ‘ভিক্টরি সিটি’। পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে এই নারী কীভাবে একটি শহরকে পরিচালনা করেছেন, সে গল্পই উঠে এসেছে বইটিতে।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।