
রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের উন্নয়নে ২০১৮ সালে ‘রংপুর বিভাগ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে যৌথভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ও এলজিইডি। কিন্তু চার বছরেও প্রকল্প কাজের মূল অংশের দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি এলজিইডি। যদিও এ সময়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। এলজিইডির কারণে এখন প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বিলম্ব হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সংস্থাটি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটির প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে একনেক সভায় মোট ৩২১ কোটি ২২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়। সে সময় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন। প্রকল্পটির উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে রয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জন্য লিডিং সংস্থা হিসেবে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এবং অঙ্গ সহযোগী সংস্থা হিসেবে রয়েছে এলজিইডি।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রংপুর বিভাগে কৃষি উৎপাদন বা ধান, গম ও ভুট্টার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা; রংপুর বিভাগের কমবেশি ৩০ শতাংশ জনগণের গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামো সুবিধাদি সৃষ্টি এবং প্রকল্প এলাকার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক পরিবারের আয় ১০ শতাংশ বাড়ানো।
সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পটি রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৩৯টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির ডিএই খাতে ক্রমপুঞ্জীভূত আর্থিক অগ্রগতি ৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ও ভৌত অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ এবং এলজিইডি খাতে আর্থিক অগ্রগতি ৩১ কোটি টাকা ও ভৌত অগ্রগতি ২২ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক সভায় জানান, প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী ইরিগেশন স্কিমের জরিপ, ডিজাইন পরামর্শকের দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। ডিজাইন ও সুপারভিশন পরামর্শক নিয়োগে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের ইরিগেশন স্কিম চূড়ান্ত করতে দেরি হচ্ছে। এছাড়া ডিএই দিনাজপুর আঞ্চলিক অফিসের জন্য ৫ তলা ভবনের ডিজাইন ও প্রাক্কলন শেষ হয়েছে এবং দরপত্র আহ্বানের জন্য বিড ডকুমেন্টস আইডিবিতে অনাপত্তি গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। আইডিবির অনাপত্তি পাওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করা হবে।
ইরিগেশন স্কিম ও দিনাজপুর আঞ্চলিক অফিস ভবন নির্মাণের জন্য ন্যূনতম ২ বছর সময় আবশ্যক। প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইরিগেশন স্কিম, দিনাজপুর আঞ্চলিক অফিস নির্মাণ ও লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার ৯৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। প্রকল্প সমন্বয়কারী পরিচালক সভাকে জানান যে, ডিএই খাতের প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী মোট বরাদ্দ ১১৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার মধ্যে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট খরচ ৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা, বাকি ৪০ কোটি টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক (এলজিইডি খাত) সভায় জানান যে, অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী তালিকাভুক্ত সব স্কিম নানাবিধ কারণে হুবহু গ্রহন করা সম্ভব হয়নি। ছোটখাটো কিছু সংশোধন এবং দিনাজপুর ডিএই আঞ্চলিক অফিস ভবন নির্মাণকাজের ডিজাইন পরিবর্তন ও দুই তলার পরিবর্তে ৫ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হওয়ায় ভবনটির প্রাক্কলিত মূল্য ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা হয়েছে। এ সমস্ত পরিবর্তনজনিত কারণে ডিপিপি সংশোধন করা প্রয়োজন।
প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়া ১ বছর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আইডিবির অনুমোদন গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে ডিপিপি সংশোধন করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
খাদ্য উৎপাদন নিয়ে সারা বিশে^ই উদ্বেগ রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তার উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। উচ্চমূল্যে খাদ্য আমদানি করতে গিয়ে অনেক দেশই বিপাকে পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আমদানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে নানান উদ্যোগ। কিন্তু অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে কৃষির ব্যাপক অবদান থাকলেও ঋণপ্রাপ্তিসহ অনেক জায়গায় অবহেলিত কৃষি খাত।
সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগের পরও অনেক ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে অনীহা প্রকাশ করছে। ফলে প্রযুক্তি ও অর্থের সরবরাহ বাড়িয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে মাত্র ৬৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে কৃষি খাতে। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের মোট বিনিয়োগের মাত্র ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কৃষি খাতে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান মাত্র ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে মাত্র ছয় বছর আগেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান কমছে। বরাবরের মতোই এই খাতকে উপেক্ষিত চোখে দেখায় এর উৎপাদন কমেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু আমদানি নির্ভরতার কারণে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে পণ্য আমদানিতে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গম, সয়াবিনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য অস্বাভাবিক মূল্যে আমদানি করতে হয়েছে। ২০২০ সালের শেষ দিকে ভারতে বন্যার প্রভাবে দেশটি রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। এতে দেশের বাজারে পেঁয়াজ, রসুনসহ বেশ কয়েকটি মসলা জাতীয় পণ্যের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২০ সালের আইপিইর জরিপ অনুযায়ী, ভারতে দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে ৬০ শতাংশ মানুষ। সে হিসাবে দেড় কোটি মানুষের দেশটি আসন্ন খাদ্য সংকটে নিজেদের রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। এতে বাংলাদেশ বড় ধরনের খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে পড়বে। তাই আসন্ন খাদ্য সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট জমির ৭০ শতাংশই আবাদযোগ্য, শতাংশের হিসাবে যা বিশ্ব রেকর্ড। এ ছাড়া কৃষিতে উৎপাদনশীলতাও বেশি। এক জমিতে বছরে চার থেকে পাঁচবার ফসল ফলানো যায়। এত সুবিধা সত্ত্বেও জিডিপিতে কৃষির অবদান কমছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী, দেশের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এই খাতটিতে দেশের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশই শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। অথচ, আসন্ন সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি খাতের বিনিয়োগে মনোযাগ দেওয়া হচ্ছে না। এতে দেশজ খাদ্য উৎপাদনে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যদিও সরকার বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে, কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে করোনা মহামারীর পর থেকেই বিভিন্ন প্রণোদনা স্কিম ঘোষণা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত নভেম্বরে কৃষকদের জন্য আরও ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০২০ সালে কভিড-১৯ এর প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আরও ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববাজারে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম। এ কারণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ২০২৩ সালে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য ঘাটতি তৈরি হওয়ার বিষয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও কৃষিতে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজনে ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত হয় বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ডের ১৪তম আসর। বছরব্যাপী দেশে সবচেয়ে সমাদৃত ও গ্রাহকপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোকে পুরস্কৃত করতে প্রতি বছর একটি গালা আয়োজনের মাধ্যমে বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড আয়োজিত হয়। এতে দেশের ১৫টি ওভারঅল টপ ব্র্যান্ডকে পুরস্কৃত করা হয়। আয়োজনের ১৪তম আসরে ৩৮টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটেগরিতে ১ম, ২য় ও ৩য় ক্রমে গ্রাহকপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোকে সমাদৃত করা হয়।
নিয়েলসেন আইকিউর পরিচালিত একটি গ্লোবাল মডেল (উইনিং ব্র্যান্ডসটিএম) অনুসরণ করে বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ডের সেরা ব্র্যান্ডগুলোকে বাছাই করা হয়। এ বছর দেশব্যাপী প্রায় ১০ হাজার ভোক্তার ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে সেরা ব্র্যান্ড বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়।
এ বছরের অ্যাওয়ার্ডে বাংলাদেশের ওভারঅল টপ ব্র্যান্ডস র্যাংকে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর অসাধারণ অবস্থান ছিল লক্ষণীয়। এ বছর বিকাশ দেশের সেরা ব্র্যান্ডের মর্যাদা লাভ করে। এ ছাড়া আরএফএল হাউজওয়্যার এবং গ্রামীণফোন যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেরা ব্র্যান্ডের মর্যাদা অর্জন করে।
এ ছাড়া সেরা ১৫ ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ওরস্যালাইন-এন, ক্লোজআপ, রাঁধুনি, লাক্স, ম্যাগি, ফ্রেশ, স্বপ্ন, ইস্পাহানি মির্জাপুর, দারাজ, এসিআই পিউর সল্ট, স্যামসাং টিভি ও প্রাণ ফ্রুটো।
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ২০২২-এর পার্টনার হিসেবে ছিল নিয়েলসন আইকিউ এবং সহযোগিতায় দ্য ডেইলি স্টার, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার-বাংলাদেশ ক্রিয়েটিভ ফোরাম; নলেজ পার্টনার-মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ; টেকনোলজি পার্টনার-আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড; পিআর পার্টনার-ব্যাকপেজ পিআর। বিজ্ঞপ্তি
গত ২০ ডিসেম্বর টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদশের (টিটিএবি) নবনির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সভায় ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ মেয়াদের জন্য মেসার্স ইস্পাহানি টি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক শাহ মঈনুদ্দীন হাসান সভাপতি এবং মো. আমিরুল ইসলাম সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন গোলাম মোস্তফা, এম সাইফুল ইসলাম, এইচএসএম জিয়াউল হক আহসান, তাসবির হাকিম, মো. ফরহাদ রহমান, মো. শফিকুল ইসলাম, কাজী মো. ইমতিয়াজ, মো. ইকবাল চৌধুরী, শারিদ হোসাইন, জিয়া মো. মাহফিজ ভুঁইয়া, মো. ইকবাল হোসাইন, আক্তার হোসাইন, মো. মঈনউদ্দিন শরিফ ও দেলওয়ার হোসাইন। বিজ্ঞপ্তি
প্রতি বছরই বাণিজ্যমেলায় ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব চলে। শত শত কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হলেও সঠিক ভ্যাট পায় না এনবিআর। তবে এবার ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ভ্যাট পরিশোধে বড় ধরনের অনিয়মে সংশ্লিষ্ট স্টল মালিক বা প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যমেলায় রমরমা বিক্রি করেও হিসাব মতো ভ্যাট পরিশোধ করে না। এবার ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে বাণিজ্যমেলা শুরুর আগেই এনবিআর থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটির কর্মকর্তারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে বাণিজ্যমেলা থেকে ভ্যাট আদায় করবেন। সকাল থেকে দুপুর এক শিফট এবং বিকাল থেকে রাত আরেক শিফটÑ এভাবে দুই ধাপে বাণিজ্যমেলায় উপস্থিত থাকবেন তারা। কোনো প্রতিষ্ঠানের স্টলে বড় ধরনের ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেলে কমিটির কর্মকর্তারা এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানিয়ে দেবে। এরপর এনবিআর ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে রাজস্ব পরিশোধের আয়, ব্যয় ও বিক্রির তথ্য যাচাই করবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে হিসাব জব্দের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, প্রতিদিন বিক্রি শেষে বিকালে হিসাব কষে মেলার অভ্যন্তরে ব্যাংকের অস্থায়ী কার্যালয়ে (বুথে) ভ্যাট জমা দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে। মেলায় বিক্রীত সব পণ্যের ওপর একই হারে ভ্যাট প্রযোজ্য নয়। পণ্যভেদে ৪ থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য আছে।
প্রতি বছরই শুধু রাজধানীতে নয়, অনেক বিভাগীয় শহরেও মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা হয়। রাজধানীর বাইরে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলা থেকেও এনবিআর কর্মকর্তারা ভ্যাট আদায়ে নজর রাখছেন। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হতে যাচ্ছে।
এবার বাণিজ্যমেলার শেষ দিকে ভ্যাট আদায়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত কমিটির সংখ্যা বাড়ানো হবে। কমিটির কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্টলে গিয়ে বিক্রির রসিদ এবং ভ্যাট পরিশোধের চালান খতিয়ে দেখবে। গত কয়েক বছরের প্রতি বছর বাণিজ্যমেলায় গড়ে ১৫০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করা হয়েছে এবং গড়ে ২৫০ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ পাওয়া গিয়েছে। সাধারণত প্রতি বছর বাণিজ্যমেলায় ছোট ও মাঝারি স্টল মালিকরা গড়ে দৈনিক ‘হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার ভ্যাট জমা দিয়ে থাকেন। বড় প্যাভিলিয়নগুলো গড়ে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত ভ্যাট পরিশোধ করেছে। এর আগে মেলায় প্রথম দিকের তুলনায় শেষ দিকে ভ্যাট আদায় বাড়তে থাকে। গড়ে প্রতি বছর বাণিজ্যমেলা থেকে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ ৭ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। এর আগে ভ্যাট ফাঁকি দায়ে বাণিজ্যমেলায় স্টল নিয়েছে এমন ২৫ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনবিআর মামলা করে।
প্রতি বছর বাণিজ্যমেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গড়ে পাঁচ শতাধিক স্টল বরাদ্দ করা হয়। এসব স্টলের মধ্যে প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন, রিজার্ভ প্যাভিলিয়ন, বিদেশি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন, রিজার্ভ মিনি প্যাভিলিয়ন, ফুড স্টল ও রেস্টুরেন্ট থাকে। স্টলগুলো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাণিজ্যমেলা সাধারণত সকাল ৯টা/১০টা থেকে রাত ৮টা/৯টা পর্যন্ত সাধারণের জন্য খোলা থাকে। এবার বাণিজ্যমেলা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এক মাস চলবে। বাণিজ্যমেলাতে ই-টিকিটিং সিস্টেম থাকার কথা রয়েছে।
করোনার মতো বড় রোগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে গত কয়েক বছরে বাণিজ্যমেলায় আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। এবার ব্যবসায়ীরা আশা করেছেন বাণিজ্যমেলায় ভালো বেচাকেনা হবে। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিদেশি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কম আসার আশংকা রয়েছে বলেও তারা জানান। অন্যদিকে এনবিআর কর্মকর্তারা হিসাব কষে বলেছেন, এবারে ভালো ব্যবসা হবে এবং রাজস্ব আদায়ও ভালো হবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনার মতো রোগের কারণে এবং করোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর তার প্রভাবে গত কয়েক বছরে বাণিজ্যমেলা ভালো জমেনি। আশা করছি এবারে বাণিজ্যমেলায় ভালো বেচাকেনা হবে। সৎ ব্যবসায়ীরা ভালো বিক্রি করে সঠিক হিসাবে রাজস্ব পরিশোধ করবেন বলে তিনি আশা করেন। তবে এনবিআর কর্মকর্তারা যেন অহেতুক হয়রানি না করেন সেজন্য ব্যবসায়ী এ নেতা সতর্ক করেন।
এনবিআর সদস্য (মূসক মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন) মইনুল খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারে প্রথম থেকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে বাণিজ্যমেলার বিক্রির প্রতি এনবিআর নজর রাখবে। আগেও দেখা গিয়েছে বাণিজ্যমেলায় ভালো বিক্রি করেও হিসাব মতো ভ্যাট পরিশোধ করে না অনেক রাজস্ব ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। এবার এনবিআর থেকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো বিক্রি করেও হিসাব মতো ভ্যাট পরিশোধ না করলে রাজস্ব আইন অনুসারে কঠোরতম অবস্থানে যাবে এনবিআর।
তালিকাভুক্ত বেশকিছু কোম্পানি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ধারণ করা শেয়ার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ধারণা করা হয়, ফ্লোর প্রাইসের ফাঁদে পড়ে থাকার থেকে এসব শেয়ার ছেড়ে দেওয়াতেই তারা বেশি মনোযোগী ছিলেন। যথারীতি সেসব শেয়ার গেছে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে। গত নভেম্বর শেষে বিনিয়োগকারী ভেদে প্রকাশিত শেয়ার ধারণের হার পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩৫৩ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ১৬৭ কোম্পানি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় প্রায় ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ কমেছে ৬২ কোম্পানি থেকে। বিপরীতে ১০৭ কোম্পানিতে কম-বেশি প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার বেড়েছে। তবে মোট শেয়ার বিবেচনায় প্রায় ১ শতাংশ থেকে প্রায় ১০ শতাংশ শেয়ার বেড়েছে ১৮ কোম্পানিতে।
যেমন গত নভেম্বরে কোনো কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে সবচেয়ে বেশি। গত অক্টোবরেও এ কোম্পানির ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু নভেম্বর শেষে তা মাত্র ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে তা ৭ দশমিক ২০ শতাংশ এবং অক্টোবর শেষে তা ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশে উন্নীত হয়। এরপর নভেম্বরেই এখান থেকে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইতে সিনোবাংলার শেয়ারের দর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ২৪ অক্টোবরও এ শেয়ারটি ৫৮ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। হঠাৎ দর বেড়ে তা ১৮ নভেম্বর ৯৩ টাকা ৮০ পয়সাতে উন্নীত হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার শেয়ারটি ফের ৫৮ টাকার নিচে নেমেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে ইস্টার্ন কেবলসের ক্ষেত্রে। গত অক্টোবর শেষেও এ কোম্পানির মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশের বেশি ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু নভেম্বর শেষে তা ১২ শতাংশে নেমেছে। এছাড়া ইনফরমেশন সার্ভিসেস কোম্পানিতে গত সেপ্টেম্বর শেষে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। অক্টোবর শেষে তা ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশে উন্নীত হয়। এক মাসের ব্যবধানে গত নভেম্বর শেষে ফের তা ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশে নেমেছে। প্রায় একই রকম চিত্র ছিল নাভানা ফার্মা, ইন্ট্রাকো সিএনজি রিফুয়েলিং, আমরা টেকনোলজিস, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, জেমিনি সি ফুডস, আইটি কনসালটেন্টস, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ইন্দোবাংলা ফার্মা, হাক্কানি পাল্প এন্ড পেপার কোম্পানির ক্ষেত্রে। এই সবগুলো কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে মোট শেয়ার বিবেচনায় ৫ থেকে ১৩ শতাংশ। তাছাড়া খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, বিডি কম, ঢাকা ডাইং, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ফারইস্ট লাইফ, জেনেক্স ইনফোসিস, বিবিএস, ল্যুবরেফ, এইচআর টেক্সটাইল, সানলাইফ, প্রগতি লাইফ, আমান ফিড, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট, কেয়া কসমেটিক্স, আল-হাজ্ব টেক্সটাইল, পেপার প্রসেসিং, ওরিয়ন ফার্মা, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, লাভেলো, বসুন্ধরা পেপারের ক্ষেত্রে কমেছে ২ থেকে প্রায় ৫ শতাংশ।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।