
প্রতি বছরই বাণিজ্যমেলায় ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব চলে। শত শত কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হলেও সঠিক ভ্যাট পায় না এনবিআর। তবে এবার ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ভ্যাট পরিশোধে বড় ধরনের অনিয়মে সংশ্লিষ্ট স্টল মালিক বা প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যমেলায় রমরমা বিক্রি করেও হিসাব মতো ভ্যাট পরিশোধ করে না। এবার ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে বাণিজ্যমেলা শুরুর আগেই এনবিআর থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটির কর্মকর্তারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে বাণিজ্যমেলা থেকে ভ্যাট আদায় করবেন। সকাল থেকে দুপুর এক শিফট এবং বিকাল থেকে রাত আরেক শিফটÑ এভাবে দুই ধাপে বাণিজ্যমেলায় উপস্থিত থাকবেন তারা। কোনো প্রতিষ্ঠানের স্টলে বড় ধরনের ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেলে কমিটির কর্মকর্তারা এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানিয়ে দেবে। এরপর এনবিআর ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে রাজস্ব পরিশোধের আয়, ব্যয় ও বিক্রির তথ্য যাচাই করবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে হিসাব জব্দের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, প্রতিদিন বিক্রি শেষে বিকালে হিসাব কষে মেলার অভ্যন্তরে ব্যাংকের অস্থায়ী কার্যালয়ে (বুথে) ভ্যাট জমা দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে। মেলায় বিক্রীত সব পণ্যের ওপর একই হারে ভ্যাট প্রযোজ্য নয়। পণ্যভেদে ৪ থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য আছে।
প্রতি বছরই শুধু রাজধানীতে নয়, অনেক বিভাগীয় শহরেও মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা হয়। রাজধানীর বাইরে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলা থেকেও এনবিআর কর্মকর্তারা ভ্যাট আদায়ে নজর রাখছেন। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হতে যাচ্ছে।
এবার বাণিজ্যমেলার শেষ দিকে ভ্যাট আদায়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত কমিটির সংখ্যা বাড়ানো হবে। কমিটির কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্টলে গিয়ে বিক্রির রসিদ এবং ভ্যাট পরিশোধের চালান খতিয়ে দেখবে। গত কয়েক বছরের প্রতি বছর বাণিজ্যমেলায় গড়ে ১৫০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করা হয়েছে এবং গড়ে ২৫০ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ পাওয়া গিয়েছে। সাধারণত প্রতি বছর বাণিজ্যমেলায় ছোট ও মাঝারি স্টল মালিকরা গড়ে দৈনিক ‘হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার ভ্যাট জমা দিয়ে থাকেন। বড় প্যাভিলিয়নগুলো গড়ে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত ভ্যাট পরিশোধ করেছে। এর আগে মেলায় প্রথম দিকের তুলনায় শেষ দিকে ভ্যাট আদায় বাড়তে থাকে। গড়ে প্রতি বছর বাণিজ্যমেলা থেকে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ ৭ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। এর আগে ভ্যাট ফাঁকি দায়ে বাণিজ্যমেলায় স্টল নিয়েছে এমন ২৫ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনবিআর মামলা করে।
প্রতি বছর বাণিজ্যমেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গড়ে পাঁচ শতাধিক স্টল বরাদ্দ করা হয়। এসব স্টলের মধ্যে প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন, রিজার্ভ প্যাভিলিয়ন, বিদেশি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন, রিজার্ভ মিনি প্যাভিলিয়ন, ফুড স্টল ও রেস্টুরেন্ট থাকে। স্টলগুলো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাণিজ্যমেলা সাধারণত সকাল ৯টা/১০টা থেকে রাত ৮টা/৯টা পর্যন্ত সাধারণের জন্য খোলা থাকে। এবার বাণিজ্যমেলা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এক মাস চলবে। বাণিজ্যমেলাতে ই-টিকিটিং সিস্টেম থাকার কথা রয়েছে।
করোনার মতো বড় রোগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে গত কয়েক বছরে বাণিজ্যমেলায় আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। এবার ব্যবসায়ীরা আশা করেছেন বাণিজ্যমেলায় ভালো বেচাকেনা হবে। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিদেশি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কম আসার আশংকা রয়েছে বলেও তারা জানান। অন্যদিকে এনবিআর কর্মকর্তারা হিসাব কষে বলেছেন, এবারে ভালো ব্যবসা হবে এবং রাজস্ব আদায়ও ভালো হবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনার মতো রোগের কারণে এবং করোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর তার প্রভাবে গত কয়েক বছরে বাণিজ্যমেলা ভালো জমেনি। আশা করছি এবারে বাণিজ্যমেলায় ভালো বেচাকেনা হবে। সৎ ব্যবসায়ীরা ভালো বিক্রি করে সঠিক হিসাবে রাজস্ব পরিশোধ করবেন বলে তিনি আশা করেন। তবে এনবিআর কর্মকর্তারা যেন অহেতুক হয়রানি না করেন সেজন্য ব্যবসায়ী এ নেতা সতর্ক করেন।
এনবিআর সদস্য (মূসক মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন) মইনুল খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারে প্রথম থেকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে বাণিজ্যমেলার বিক্রির প্রতি এনবিআর নজর রাখবে। আগেও দেখা গিয়েছে বাণিজ্যমেলায় ভালো বিক্রি করেও হিসাব মতো ভ্যাট পরিশোধ করে না অনেক রাজস্ব ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। এবার এনবিআর থেকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো বিক্রি করেও হিসাব মতো ভ্যাট পরিশোধ না করলে রাজস্ব আইন অনুসারে কঠোরতম অবস্থানে যাবে এনবিআর।
খাদ্য উৎপাদন নিয়ে সারা বিশে^ই উদ্বেগ রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তার উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। উচ্চমূল্যে খাদ্য আমদানি করতে গিয়ে অনেক দেশই বিপাকে পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আমদানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে নানান উদ্যোগ। কিন্তু অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে কৃষির ব্যাপক অবদান থাকলেও ঋণপ্রাপ্তিসহ অনেক জায়গায় অবহেলিত কৃষি খাত।
সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগের পরও অনেক ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে অনীহা প্রকাশ করছে। ফলে প্রযুক্তি ও অর্থের সরবরাহ বাড়িয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে মাত্র ৬৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে কৃষি খাতে। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের মোট বিনিয়োগের মাত্র ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কৃষি খাতে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান মাত্র ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে মাত্র ছয় বছর আগেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান কমছে। বরাবরের মতোই এই খাতকে উপেক্ষিত চোখে দেখায় এর উৎপাদন কমেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু আমদানি নির্ভরতার কারণে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে পণ্য আমদানিতে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গম, সয়াবিনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য অস্বাভাবিক মূল্যে আমদানি করতে হয়েছে। ২০২০ সালের শেষ দিকে ভারতে বন্যার প্রভাবে দেশটি রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। এতে দেশের বাজারে পেঁয়াজ, রসুনসহ বেশ কয়েকটি মসলা জাতীয় পণ্যের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২০ সালের আইপিইর জরিপ অনুযায়ী, ভারতে দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে ৬০ শতাংশ মানুষ। সে হিসাবে দেড় কোটি মানুষের দেশটি আসন্ন খাদ্য সংকটে নিজেদের রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। এতে বাংলাদেশ বড় ধরনের খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে পড়বে। তাই আসন্ন খাদ্য সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট জমির ৭০ শতাংশই আবাদযোগ্য, শতাংশের হিসাবে যা বিশ্ব রেকর্ড। এ ছাড়া কৃষিতে উৎপাদনশীলতাও বেশি। এক জমিতে বছরে চার থেকে পাঁচবার ফসল ফলানো যায়। এত সুবিধা সত্ত্বেও জিডিপিতে কৃষির অবদান কমছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী, দেশের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এই খাতটিতে দেশের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশই শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। অথচ, আসন্ন সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি খাতের বিনিয়োগে মনোযাগ দেওয়া হচ্ছে না। এতে দেশজ খাদ্য উৎপাদনে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যদিও সরকার বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে, কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে করোনা মহামারীর পর থেকেই বিভিন্ন প্রণোদনা স্কিম ঘোষণা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত নভেম্বরে কৃষকদের জন্য আরও ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০২০ সালে কভিড-১৯ এর প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আরও ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববাজারে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম। এ কারণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ২০২৩ সালে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য ঘাটতি তৈরি হওয়ার বিষয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও কৃষিতে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজনে ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত হয় বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ডের ১৪তম আসর। বছরব্যাপী দেশে সবচেয়ে সমাদৃত ও গ্রাহকপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোকে পুরস্কৃত করতে প্রতি বছর একটি গালা আয়োজনের মাধ্যমে বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড আয়োজিত হয়। এতে দেশের ১৫টি ওভারঅল টপ ব্র্যান্ডকে পুরস্কৃত করা হয়। আয়োজনের ১৪তম আসরে ৩৮টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটেগরিতে ১ম, ২য় ও ৩য় ক্রমে গ্রাহকপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোকে সমাদৃত করা হয়।
নিয়েলসেন আইকিউর পরিচালিত একটি গ্লোবাল মডেল (উইনিং ব্র্যান্ডসটিএম) অনুসরণ করে বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ডের সেরা ব্র্যান্ডগুলোকে বাছাই করা হয়। এ বছর দেশব্যাপী প্রায় ১০ হাজার ভোক্তার ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে সেরা ব্র্যান্ড বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়।
এ বছরের অ্যাওয়ার্ডে বাংলাদেশের ওভারঅল টপ ব্র্যান্ডস র্যাংকে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর অসাধারণ অবস্থান ছিল লক্ষণীয়। এ বছর বিকাশ দেশের সেরা ব্র্যান্ডের মর্যাদা লাভ করে। এ ছাড়া আরএফএল হাউজওয়্যার এবং গ্রামীণফোন যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেরা ব্র্যান্ডের মর্যাদা অর্জন করে।
এ ছাড়া সেরা ১৫ ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ওরস্যালাইন-এন, ক্লোজআপ, রাঁধুনি, লাক্স, ম্যাগি, ফ্রেশ, স্বপ্ন, ইস্পাহানি মির্জাপুর, দারাজ, এসিআই পিউর সল্ট, স্যামসাং টিভি ও প্রাণ ফ্রুটো।
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ২০২২-এর পার্টনার হিসেবে ছিল নিয়েলসন আইকিউ এবং সহযোগিতায় দ্য ডেইলি স্টার, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার-বাংলাদেশ ক্রিয়েটিভ ফোরাম; নলেজ পার্টনার-মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ; টেকনোলজি পার্টনার-আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড; পিআর পার্টনার-ব্যাকপেজ পিআর। বিজ্ঞপ্তি
গত ২০ ডিসেম্বর টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদশের (টিটিএবি) নবনির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সভায় ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ মেয়াদের জন্য মেসার্স ইস্পাহানি টি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক শাহ মঈনুদ্দীন হাসান সভাপতি এবং মো. আমিরুল ইসলাম সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন গোলাম মোস্তফা, এম সাইফুল ইসলাম, এইচএসএম জিয়াউল হক আহসান, তাসবির হাকিম, মো. ফরহাদ রহমান, মো. শফিকুল ইসলাম, কাজী মো. ইমতিয়াজ, মো. ইকবাল চৌধুরী, শারিদ হোসাইন, জিয়া মো. মাহফিজ ভুঁইয়া, মো. ইকবাল হোসাইন, আক্তার হোসাইন, মো. মঈনউদ্দিন শরিফ ও দেলওয়ার হোসাইন। বিজ্ঞপ্তি
রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের উন্নয়নে ২০১৮ সালে ‘রংপুর বিভাগ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে যৌথভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ও এলজিইডি। কিন্তু চার বছরেও প্রকল্প কাজের মূল অংশের দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি এলজিইডি। যদিও এ সময়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। এলজিইডির কারণে এখন প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বিলম্ব হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সংস্থাটি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটির প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে একনেক সভায় মোট ৩২১ কোটি ২২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়। সে সময় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন। প্রকল্পটির উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে রয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জন্য লিডিং সংস্থা হিসেবে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এবং অঙ্গ সহযোগী সংস্থা হিসেবে রয়েছে এলজিইডি।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রংপুর বিভাগে কৃষি উৎপাদন বা ধান, গম ও ভুট্টার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা; রংপুর বিভাগের কমবেশি ৩০ শতাংশ জনগণের গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামো সুবিধাদি সৃষ্টি এবং প্রকল্প এলাকার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক পরিবারের আয় ১০ শতাংশ বাড়ানো।
সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পটি রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৩৯টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির ডিএই খাতে ক্রমপুঞ্জীভূত আর্থিক অগ্রগতি ৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ও ভৌত অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ এবং এলজিইডি খাতে আর্থিক অগ্রগতি ৩১ কোটি টাকা ও ভৌত অগ্রগতি ২২ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক সভায় জানান, প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী ইরিগেশন স্কিমের জরিপ, ডিজাইন পরামর্শকের দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। ডিজাইন ও সুপারভিশন পরামর্শক নিয়োগে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের ইরিগেশন স্কিম চূড়ান্ত করতে দেরি হচ্ছে। এছাড়া ডিএই দিনাজপুর আঞ্চলিক অফিসের জন্য ৫ তলা ভবনের ডিজাইন ও প্রাক্কলন শেষ হয়েছে এবং দরপত্র আহ্বানের জন্য বিড ডকুমেন্টস আইডিবিতে অনাপত্তি গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। আইডিবির অনাপত্তি পাওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করা হবে।
ইরিগেশন স্কিম ও দিনাজপুর আঞ্চলিক অফিস ভবন নির্মাণের জন্য ন্যূনতম ২ বছর সময় আবশ্যক। প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইরিগেশন স্কিম, দিনাজপুর আঞ্চলিক অফিস নির্মাণ ও লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার ৯৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। প্রকল্প সমন্বয়কারী পরিচালক সভাকে জানান যে, ডিএই খাতের প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী মোট বরাদ্দ ১১৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার মধ্যে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট খরচ ৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা, বাকি ৪০ কোটি টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক (এলজিইডি খাত) সভায় জানান যে, অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী তালিকাভুক্ত সব স্কিম নানাবিধ কারণে হুবহু গ্রহন করা সম্ভব হয়নি। ছোটখাটো কিছু সংশোধন এবং দিনাজপুর ডিএই আঞ্চলিক অফিস ভবন নির্মাণকাজের ডিজাইন পরিবর্তন ও দুই তলার পরিবর্তে ৫ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হওয়ায় ভবনটির প্রাক্কলিত মূল্য ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা হয়েছে। এ সমস্ত পরিবর্তনজনিত কারণে ডিপিপি সংশোধন করা প্রয়োজন।
প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়া ১ বছর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আইডিবির অনুমোদন গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে ডিপিপি সংশোধন করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তালিকাভুক্ত বেশকিছু কোম্পানি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ধারণ করা শেয়ার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ধারণা করা হয়, ফ্লোর প্রাইসের ফাঁদে পড়ে থাকার থেকে এসব শেয়ার ছেড়ে দেওয়াতেই তারা বেশি মনোযোগী ছিলেন। যথারীতি সেসব শেয়ার গেছে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে। গত নভেম্বর শেষে বিনিয়োগকারী ভেদে প্রকাশিত শেয়ার ধারণের হার পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩৫৩ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ১৬৭ কোম্পানি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় প্রায় ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ কমেছে ৬২ কোম্পানি থেকে। বিপরীতে ১০৭ কোম্পানিতে কম-বেশি প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার বেড়েছে। তবে মোট শেয়ার বিবেচনায় প্রায় ১ শতাংশ থেকে প্রায় ১০ শতাংশ শেয়ার বেড়েছে ১৮ কোম্পানিতে।
যেমন গত নভেম্বরে কোনো কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে সবচেয়ে বেশি। গত অক্টোবরেও এ কোম্পানির ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু নভেম্বর শেষে তা মাত্র ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে তা ৭ দশমিক ২০ শতাংশ এবং অক্টোবর শেষে তা ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশে উন্নীত হয়। এরপর নভেম্বরেই এখান থেকে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইতে সিনোবাংলার শেয়ারের দর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ২৪ অক্টোবরও এ শেয়ারটি ৫৮ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। হঠাৎ দর বেড়ে তা ১৮ নভেম্বর ৯৩ টাকা ৮০ পয়সাতে উন্নীত হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার শেয়ারটি ফের ৫৮ টাকার নিচে নেমেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে ইস্টার্ন কেবলসের ক্ষেত্রে। গত অক্টোবর শেষেও এ কোম্পানির মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশের বেশি ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু নভেম্বর শেষে তা ১২ শতাংশে নেমেছে। এছাড়া ইনফরমেশন সার্ভিসেস কোম্পানিতে গত সেপ্টেম্বর শেষে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। অক্টোবর শেষে তা ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশে উন্নীত হয়। এক মাসের ব্যবধানে গত নভেম্বর শেষে ফের তা ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশে নেমেছে। প্রায় একই রকম চিত্র ছিল নাভানা ফার্মা, ইন্ট্রাকো সিএনজি রিফুয়েলিং, আমরা টেকনোলজিস, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, জেমিনি সি ফুডস, আইটি কনসালটেন্টস, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ইন্দোবাংলা ফার্মা, হাক্কানি পাল্প এন্ড পেপার কোম্পানির ক্ষেত্রে। এই সবগুলো কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে মোট শেয়ার বিবেচনায় ৫ থেকে ১৩ শতাংশ। তাছাড়া খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, বিডি কম, ঢাকা ডাইং, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ফারইস্ট লাইফ, জেনেক্স ইনফোসিস, বিবিএস, ল্যুবরেফ, এইচআর টেক্সটাইল, সানলাইফ, প্রগতি লাইফ, আমান ফিড, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট, কেয়া কসমেটিক্স, আল-হাজ্ব টেক্সটাইল, পেপার প্রসেসিং, ওরিয়ন ফার্মা, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, লাভেলো, বসুন্ধরা পেপারের ক্ষেত্রে কমেছে ২ থেকে প্রায় ৫ শতাংশ।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় ১২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. রহুল আমিন (৫৬) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৯ জুন) শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় মামলা করলে তাকে আটক করা হয়।
আটক মো. রহুল আমিন উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে।
ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মার্চ ভোর আনুমানিক ৬টায় দিকে উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামে ১২ বছরের শিশুকে গোয়ালঘরের পেছনে ধর্ষণ করেন মো. রহুল আমিন। এবিষয়ে এতোদিন জানাজানি না হলেও ৪ জুন (রোববার) হঠাৎ শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পল্লী চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে কর্তবরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারপর ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে বিষয়টি জানান। ভুক্তভোগী শিশুটি এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’