
তালিকাভুক্ত বেশকিছু কোম্পানি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ধারণ করা শেয়ার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ধারণা করা হয়, ফ্লোর প্রাইসের ফাঁদে পড়ে থাকার থেকে এসব শেয়ার ছেড়ে দেওয়াতেই তারা বেশি মনোযোগী ছিলেন। যথারীতি সেসব শেয়ার গেছে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে। গত নভেম্বর শেষে বিনিয়োগকারী ভেদে প্রকাশিত শেয়ার ধারণের হার পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩৫৩ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ১৬৭ কোম্পানি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় প্রায় ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ কমেছে ৬২ কোম্পানি থেকে। বিপরীতে ১০৭ কোম্পানিতে কম-বেশি প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার বেড়েছে। তবে মোট শেয়ার বিবেচনায় প্রায় ১ শতাংশ থেকে প্রায় ১০ শতাংশ শেয়ার বেড়েছে ১৮ কোম্পানিতে।
যেমন গত নভেম্বরে কোনো কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে সবচেয়ে বেশি। গত অক্টোবরেও এ কোম্পানির ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু নভেম্বর শেষে তা মাত্র ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে তা ৭ দশমিক ২০ শতাংশ এবং অক্টোবর শেষে তা ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশে উন্নীত হয়। এরপর নভেম্বরেই এখান থেকে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইতে সিনোবাংলার শেয়ারের দর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ২৪ অক্টোবরও এ শেয়ারটি ৫৮ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। হঠাৎ দর বেড়ে তা ১৮ নভেম্বর ৯৩ টাকা ৮০ পয়সাতে উন্নীত হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার শেয়ারটি ফের ৫৮ টাকার নিচে নেমেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে ইস্টার্ন কেবলসের ক্ষেত্রে। গত অক্টোবর শেষেও এ কোম্পানির মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশের বেশি ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু নভেম্বর শেষে তা ১২ শতাংশে নেমেছে। এছাড়া ইনফরমেশন সার্ভিসেস কোম্পানিতে গত সেপ্টেম্বর শেষে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। অক্টোবর শেষে তা ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশে উন্নীত হয়। এক মাসের ব্যবধানে গত নভেম্বর শেষে ফের তা ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশে নেমেছে। প্রায় একই রকম চিত্র ছিল নাভানা ফার্মা, ইন্ট্রাকো সিএনজি রিফুয়েলিং, আমরা টেকনোলজিস, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, জেমিনি সি ফুডস, আইটি কনসালটেন্টস, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ইন্দোবাংলা ফার্মা, হাক্কানি পাল্প এন্ড পেপার কোম্পানির ক্ষেত্রে। এই সবগুলো কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে মোট শেয়ার বিবেচনায় ৫ থেকে ১৩ শতাংশ। তাছাড়া খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, বিডি কম, ঢাকা ডাইং, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ফারইস্ট লাইফ, জেনেক্স ইনফোসিস, বিবিএস, ল্যুবরেফ, এইচআর টেক্সটাইল, সানলাইফ, প্রগতি লাইফ, আমান ফিড, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট, কেয়া কসমেটিক্স, আল-হাজ্ব টেক্সটাইল, পেপার প্রসেসিং, ওরিয়ন ফার্মা, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, লাভেলো, বসুন্ধরা পেপারের ক্ষেত্রে কমেছে ২ থেকে প্রায় ৫ শতাংশ।
খাদ্য উৎপাদন নিয়ে সারা বিশে^ই উদ্বেগ রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তার উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। উচ্চমূল্যে খাদ্য আমদানি করতে গিয়ে অনেক দেশই বিপাকে পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আমদানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে নানান উদ্যোগ। কিন্তু অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে কৃষির ব্যাপক অবদান থাকলেও ঋণপ্রাপ্তিসহ অনেক জায়গায় অবহেলিত কৃষি খাত।
সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগের পরও অনেক ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে অনীহা প্রকাশ করছে। ফলে প্রযুক্তি ও অর্থের সরবরাহ বাড়িয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে মাত্র ৬৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে কৃষি খাতে। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের মোট বিনিয়োগের মাত্র ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কৃষি খাতে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান মাত্র ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে মাত্র ছয় বছর আগেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান কমছে। বরাবরের মতোই এই খাতকে উপেক্ষিত চোখে দেখায় এর উৎপাদন কমেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু আমদানি নির্ভরতার কারণে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে পণ্য আমদানিতে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গম, সয়াবিনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য অস্বাভাবিক মূল্যে আমদানি করতে হয়েছে। ২০২০ সালের শেষ দিকে ভারতে বন্যার প্রভাবে দেশটি রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। এতে দেশের বাজারে পেঁয়াজ, রসুনসহ বেশ কয়েকটি মসলা জাতীয় পণ্যের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২০ সালের আইপিইর জরিপ অনুযায়ী, ভারতে দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে ৬০ শতাংশ মানুষ। সে হিসাবে দেড় কোটি মানুষের দেশটি আসন্ন খাদ্য সংকটে নিজেদের রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। এতে বাংলাদেশ বড় ধরনের খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে পড়বে। তাই আসন্ন খাদ্য সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট জমির ৭০ শতাংশই আবাদযোগ্য, শতাংশের হিসাবে যা বিশ্ব রেকর্ড। এ ছাড়া কৃষিতে উৎপাদনশীলতাও বেশি। এক জমিতে বছরে চার থেকে পাঁচবার ফসল ফলানো যায়। এত সুবিধা সত্ত্বেও জিডিপিতে কৃষির অবদান কমছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী, দেশের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এই খাতটিতে দেশের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশই শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। অথচ, আসন্ন সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি খাতের বিনিয়োগে মনোযাগ দেওয়া হচ্ছে না। এতে দেশজ খাদ্য উৎপাদনে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যদিও সরকার বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে, কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে করোনা মহামারীর পর থেকেই বিভিন্ন প্রণোদনা স্কিম ঘোষণা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত নভেম্বরে কৃষকদের জন্য আরও ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০২০ সালে কভিড-১৯ এর প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আরও ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববাজারে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম। এ কারণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ২০২৩ সালে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য ঘাটতি তৈরি হওয়ার বিষয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও কৃষিতে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজনে ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত হয় বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ডের ১৪তম আসর। বছরব্যাপী দেশে সবচেয়ে সমাদৃত ও গ্রাহকপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোকে পুরস্কৃত করতে প্রতি বছর একটি গালা আয়োজনের মাধ্যমে বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড আয়োজিত হয়। এতে দেশের ১৫টি ওভারঅল টপ ব্র্যান্ডকে পুরস্কৃত করা হয়। আয়োজনের ১৪তম আসরে ৩৮টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটেগরিতে ১ম, ২য় ও ৩য় ক্রমে গ্রাহকপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোকে সমাদৃত করা হয়।
নিয়েলসেন আইকিউর পরিচালিত একটি গ্লোবাল মডেল (উইনিং ব্র্যান্ডসটিএম) অনুসরণ করে বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ডের সেরা ব্র্যান্ডগুলোকে বাছাই করা হয়। এ বছর দেশব্যাপী প্রায় ১০ হাজার ভোক্তার ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে সেরা ব্র্যান্ড বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়।
এ বছরের অ্যাওয়ার্ডে বাংলাদেশের ওভারঅল টপ ব্র্যান্ডস র্যাংকে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর অসাধারণ অবস্থান ছিল লক্ষণীয়। এ বছর বিকাশ দেশের সেরা ব্র্যান্ডের মর্যাদা লাভ করে। এ ছাড়া আরএফএল হাউজওয়্যার এবং গ্রামীণফোন যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেরা ব্র্যান্ডের মর্যাদা অর্জন করে।
এ ছাড়া সেরা ১৫ ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ওরস্যালাইন-এন, ক্লোজআপ, রাঁধুনি, লাক্স, ম্যাগি, ফ্রেশ, স্বপ্ন, ইস্পাহানি মির্জাপুর, দারাজ, এসিআই পিউর সল্ট, স্যামসাং টিভি ও প্রাণ ফ্রুটো।
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ২০২২-এর পার্টনার হিসেবে ছিল নিয়েলসন আইকিউ এবং সহযোগিতায় দ্য ডেইলি স্টার, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার-বাংলাদেশ ক্রিয়েটিভ ফোরাম; নলেজ পার্টনার-মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ; টেকনোলজি পার্টনার-আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড; পিআর পার্টনার-ব্যাকপেজ পিআর। বিজ্ঞপ্তি
গত ২০ ডিসেম্বর টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদশের (টিটিএবি) নবনির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সভায় ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ মেয়াদের জন্য মেসার্স ইস্পাহানি টি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক শাহ মঈনুদ্দীন হাসান সভাপতি এবং মো. আমিরুল ইসলাম সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন গোলাম মোস্তফা, এম সাইফুল ইসলাম, এইচএসএম জিয়াউল হক আহসান, তাসবির হাকিম, মো. ফরহাদ রহমান, মো. শফিকুল ইসলাম, কাজী মো. ইমতিয়াজ, মো. ইকবাল চৌধুরী, শারিদ হোসাইন, জিয়া মো. মাহফিজ ভুঁইয়া, মো. ইকবাল হোসাইন, আক্তার হোসাইন, মো. মঈনউদ্দিন শরিফ ও দেলওয়ার হোসাইন। বিজ্ঞপ্তি
রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের উন্নয়নে ২০১৮ সালে ‘রংপুর বিভাগ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে যৌথভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ও এলজিইডি। কিন্তু চার বছরেও প্রকল্প কাজের মূল অংশের দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি এলজিইডি। যদিও এ সময়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। এলজিইডির কারণে এখন প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বিলম্ব হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সংস্থাটি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটির প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে একনেক সভায় মোট ৩২১ কোটি ২২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়। সে সময় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন। প্রকল্পটির উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে রয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জন্য লিডিং সংস্থা হিসেবে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এবং অঙ্গ সহযোগী সংস্থা হিসেবে রয়েছে এলজিইডি।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রংপুর বিভাগে কৃষি উৎপাদন বা ধান, গম ও ভুট্টার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা; রংপুর বিভাগের কমবেশি ৩০ শতাংশ জনগণের গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামো সুবিধাদি সৃষ্টি এবং প্রকল্প এলাকার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক পরিবারের আয় ১০ শতাংশ বাড়ানো।
সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পটি রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৩৯টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির ডিএই খাতে ক্রমপুঞ্জীভূত আর্থিক অগ্রগতি ৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ও ভৌত অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ এবং এলজিইডি খাতে আর্থিক অগ্রগতি ৩১ কোটি টাকা ও ভৌত অগ্রগতি ২২ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক সভায় জানান, প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী ইরিগেশন স্কিমের জরিপ, ডিজাইন পরামর্শকের দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। ডিজাইন ও সুপারভিশন পরামর্শক নিয়োগে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের ইরিগেশন স্কিম চূড়ান্ত করতে দেরি হচ্ছে। এছাড়া ডিএই দিনাজপুর আঞ্চলিক অফিসের জন্য ৫ তলা ভবনের ডিজাইন ও প্রাক্কলন শেষ হয়েছে এবং দরপত্র আহ্বানের জন্য বিড ডকুমেন্টস আইডিবিতে অনাপত্তি গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। আইডিবির অনাপত্তি পাওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করা হবে।
ইরিগেশন স্কিম ও দিনাজপুর আঞ্চলিক অফিস ভবন নির্মাণের জন্য ন্যূনতম ২ বছর সময় আবশ্যক। প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইরিগেশন স্কিম, দিনাজপুর আঞ্চলিক অফিস নির্মাণ ও লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার ৯৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। প্রকল্প সমন্বয়কারী পরিচালক সভাকে জানান যে, ডিএই খাতের প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী মোট বরাদ্দ ১১৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার মধ্যে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট খরচ ৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা, বাকি ৪০ কোটি টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক (এলজিইডি খাত) সভায় জানান যে, অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী তালিকাভুক্ত সব স্কিম নানাবিধ কারণে হুবহু গ্রহন করা সম্ভব হয়নি। ছোটখাটো কিছু সংশোধন এবং দিনাজপুর ডিএই আঞ্চলিক অফিস ভবন নির্মাণকাজের ডিজাইন পরিবর্তন ও দুই তলার পরিবর্তে ৫ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হওয়ায় ভবনটির প্রাক্কলিত মূল্য ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা হয়েছে। এ সমস্ত পরিবর্তনজনিত কারণে ডিপিপি সংশোধন করা প্রয়োজন।
প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়া ১ বছর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আইডিবির অনুমোদন গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে ডিপিপি সংশোধন করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রতি বছরই বাণিজ্যমেলায় ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব চলে। শত শত কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হলেও সঠিক ভ্যাট পায় না এনবিআর। তবে এবার ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ভ্যাট পরিশোধে বড় ধরনের অনিয়মে সংশ্লিষ্ট স্টল মালিক বা প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যমেলায় রমরমা বিক্রি করেও হিসাব মতো ভ্যাট পরিশোধ করে না। এবার ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে বাণিজ্যমেলা শুরুর আগেই এনবিআর থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটির কর্মকর্তারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে বাণিজ্যমেলা থেকে ভ্যাট আদায় করবেন। সকাল থেকে দুপুর এক শিফট এবং বিকাল থেকে রাত আরেক শিফটÑ এভাবে দুই ধাপে বাণিজ্যমেলায় উপস্থিত থাকবেন তারা। কোনো প্রতিষ্ঠানের স্টলে বড় ধরনের ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেলে কমিটির কর্মকর্তারা এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানিয়ে দেবে। এরপর এনবিআর ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে রাজস্ব পরিশোধের আয়, ব্যয় ও বিক্রির তথ্য যাচাই করবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে হিসাব জব্দের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, প্রতিদিন বিক্রি শেষে বিকালে হিসাব কষে মেলার অভ্যন্তরে ব্যাংকের অস্থায়ী কার্যালয়ে (বুথে) ভ্যাট জমা দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে। মেলায় বিক্রীত সব পণ্যের ওপর একই হারে ভ্যাট প্রযোজ্য নয়। পণ্যভেদে ৪ থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য আছে।
প্রতি বছরই শুধু রাজধানীতে নয়, অনেক বিভাগীয় শহরেও মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা হয়। রাজধানীর বাইরে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলা থেকেও এনবিআর কর্মকর্তারা ভ্যাট আদায়ে নজর রাখছেন। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হতে যাচ্ছে।
এবার বাণিজ্যমেলার শেষ দিকে ভ্যাট আদায়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত কমিটির সংখ্যা বাড়ানো হবে। কমিটির কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্টলে গিয়ে বিক্রির রসিদ এবং ভ্যাট পরিশোধের চালান খতিয়ে দেখবে। গত কয়েক বছরের প্রতি বছর বাণিজ্যমেলায় গড়ে ১৫০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করা হয়েছে এবং গড়ে ২৫০ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ পাওয়া গিয়েছে। সাধারণত প্রতি বছর বাণিজ্যমেলায় ছোট ও মাঝারি স্টল মালিকরা গড়ে দৈনিক ‘হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার ভ্যাট জমা দিয়ে থাকেন। বড় প্যাভিলিয়নগুলো গড়ে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত ভ্যাট পরিশোধ করেছে। এর আগে মেলায় প্রথম দিকের তুলনায় শেষ দিকে ভ্যাট আদায় বাড়তে থাকে। গড়ে প্রতি বছর বাণিজ্যমেলা থেকে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ ৭ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। এর আগে ভ্যাট ফাঁকি দায়ে বাণিজ্যমেলায় স্টল নিয়েছে এমন ২৫ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনবিআর মামলা করে।
প্রতি বছর বাণিজ্যমেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গড়ে পাঁচ শতাধিক স্টল বরাদ্দ করা হয়। এসব স্টলের মধ্যে প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন, রিজার্ভ প্যাভিলিয়ন, বিদেশি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন, রিজার্ভ মিনি প্যাভিলিয়ন, ফুড স্টল ও রেস্টুরেন্ট থাকে। স্টলগুলো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাণিজ্যমেলা সাধারণত সকাল ৯টা/১০টা থেকে রাত ৮টা/৯টা পর্যন্ত সাধারণের জন্য খোলা থাকে। এবার বাণিজ্যমেলা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এক মাস চলবে। বাণিজ্যমেলাতে ই-টিকিটিং সিস্টেম থাকার কথা রয়েছে।
করোনার মতো বড় রোগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে গত কয়েক বছরে বাণিজ্যমেলায় আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। এবার ব্যবসায়ীরা আশা করেছেন বাণিজ্যমেলায় ভালো বেচাকেনা হবে। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিদেশি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কম আসার আশংকা রয়েছে বলেও তারা জানান। অন্যদিকে এনবিআর কর্মকর্তারা হিসাব কষে বলেছেন, এবারে ভালো ব্যবসা হবে এবং রাজস্ব আদায়ও ভালো হবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনার মতো রোগের কারণে এবং করোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর তার প্রভাবে গত কয়েক বছরে বাণিজ্যমেলা ভালো জমেনি। আশা করছি এবারে বাণিজ্যমেলায় ভালো বেচাকেনা হবে। সৎ ব্যবসায়ীরা ভালো বিক্রি করে সঠিক হিসাবে রাজস্ব পরিশোধ করবেন বলে তিনি আশা করেন। তবে এনবিআর কর্মকর্তারা যেন অহেতুক হয়রানি না করেন সেজন্য ব্যবসায়ী এ নেতা সতর্ক করেন।
এনবিআর সদস্য (মূসক মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন) মইনুল খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারে প্রথম থেকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে বাণিজ্যমেলার বিক্রির প্রতি এনবিআর নজর রাখবে। আগেও দেখা গিয়েছে বাণিজ্যমেলায় ভালো বিক্রি করেও হিসাব মতো ভ্যাট পরিশোধ করে না অনেক রাজস্ব ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। এবার এনবিআর থেকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো বিক্রি করেও হিসাব মতো ভ্যাট পরিশোধ না করলে রাজস্ব আইন অনুসারে কঠোরতম অবস্থানে যাবে এনবিআর।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
কুষ্টিয়ায় আবারও এনআইডি জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্যে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জমির মালিকরা। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালীর মদদ, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরি, দলিল লেখক ও অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এসব চলছে নির্বিঘেœ। এরা ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে অন্যের জমির দাতা-গ্রহীতা বা ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে একের পর এক দলিল সম্পাদন করে যাচ্ছে। এর আগে কুষ্টিয়ায় একাধিক এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নড়ে-চড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। প্রশাসনের তৎপরতায় জালিয়াত চক্র কিছুদিন গা-ঢাকা দিলেও আবারও চক্রটি নতুন করে জালিয়াতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আগের জালিয়াতির ঘটনায় ডজনখানেক মামলা হলেও সেগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো ইতিবাচক দৃষ্টান্ত না থাকায় চক্রটি আবারও মাঠে নেমেছে। প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘শর্তানুযায়ী দলিল সম্পাদনের সময় দাতা-গ্রহীতারা যে এনআইডি আমাদের দেখায় তা আদৌ সঠিক কি না তা যাচাই করার মতো তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না থাকার সুযোগ নিয়ে একটি অসাধু চক্র একের পর এক জাল দলিল তৈরি করছে।’
তবে এই কর্মকর্তার মন্তব্যকে নাকচ করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ‘এনআইডি যাচাইয়ের সুযোগ নেই বলে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা দায় এড়িয়েছেন। কুষ্টিয়াতে যে হারে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে তাতে ছোট্ট একটা ডিভাইস হলেই এনআইডি যাচাই করা সম্ভব।’
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জাল এনআইডি নম্বর (৬৪০২৬৬৯৪০৯) ও আমমোক্তারনামা দলিল (১১২১২/১৭ নম্বর) ব্যবহার করে কুষ্টিয়া শহরের প্রায় দুই কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি হস্তান্তরে ২৭ লাখ টাকার একটি দলিল রেজিস্ট্রি হয়। যার নম্বর ১৭৯৪/২৩। কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডকিপার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ওই আমমোক্তারনামা দলিলের সমর্থনে কোনো ধরনের যাচাইকরণ কাগজপত্র সংযুক্ত নেই এবং জালিয়াতির অভিযোগে মামলা বিচারাধীন থাকায় ওই দলিলও আদালতের আদেশে জব্দ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তা ছাড়া জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার অবস্থায় দলিলদাতারা ওই আমমোক্তারনামা দলিল জাল বলে এর আগে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। এরপরও ওই দলিলের সূত্র ধরে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের বাসিন্দা এমএম আবদুল ওয়াদুদদের পৈতৃক ভূ-সম্পত্তি জালিয়াতি করে দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয় চক্রটি।
এ বিষয়ে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস চত্বরের দলিল লেখক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী দলিল লেখক শরিফুল ইসলাম সোহেল আমার কাছে একটা দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। কিন্তু এর মধ্যে এত জটিলতা ছিল সে সময় আমি বুঝতে পারিনি।’
সহকারী দলিল লেখক সোহেল জানান, ‘এই দলিলের গ্রহীতা মিস শেফালী খানমের স্বামী মো. মারজুম খাঁন নিজে ওই দলিল অন্য লেখকের কাছ থেকে লেখা সম্পন্ন করে আমার কাছে এসে বলে, ‘তুমি শুধু দলিল লেখক হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে পেশ করবা, বাদবাকি সবাইকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।’ সেজন্য আমাকে ১০ হাজার টাকা দেবে বলে আমার সঙ্গে মিটমাট হয়।’
এ বিষয়ে কথা বলতে দলিলদাতা কুষ্টিয়া শহরের উত্তর লাহিনী এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেনকে (এনআইডি নম্বর : ৬৪০২৬৬৯৪০৯) মোবাইলে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
দলিল গ্রহীতা শেফালী খানমকে তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তা ব্যস্ত পাওয়া যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শেফালী খানমের ফোন থেকে তার স্বামী মারজুম খাঁন এই প্রতিবেদককে কল করেন। প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর মারজুম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আপনি কি শেফালী খানমকে চিনেন? দলিলে দেওয়া ঠিকানাটা ভালো করে দ্যাখেন, উনি শেখ সেলিমের বোন, আপনার এত স্পর্ধা? আপনি ওই দলিল নিয়ে টানাটানি করছেন?’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন বলেন, ‘উল্লিখিত (১৭৯৪/২৩ নম্বর) দলিলটি জাল বলে আবদুল ওয়াদুদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জমির নামজারি প্রক্রিয়া স্থগিত করে রাখা হয়েছে।’
কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ‘দলিলটিতে (১৭৯৪/২৩ নম্বর) দাতা দেলোয়ার হোসেন যে এনআইডি নম্বর (৬৪০২৬৬৯৪০৯) ব্যবহার করেছেন, তার কোনো বৈধ ডেটা নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নেই।’
এভাবে দলিল নম্বর ২৫৩৩/২০২২ দাতা জোবায়দা নাহার শেখ ও জামিলা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শাহ মো. মেজবাহুর রহমান, দলিল নম্বর ২৫৩৪/২০২২ দাতা জামিলা নাহার শেখ গ্রহীতা শামসুল ইসলাম, ইউসুফ হাসাইন ও মো. সাদ্দম খাঁ, দললি নম্বর ১১৪৮/২০২২, দাতা জামিলা নাহার শেখ ও জোবায়দা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শামসুল ইসলাম এসব দলিল এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া সিআইডির উপপরিদর্শক মাসুদ পারভেজ।
কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার কাওছার আলী বলেন, ‘এখানে কাজের চাপ সামলানোর মতো প্রয়োজনীয় জনবল সংকট মাথায় নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। এনআইডি নকল বা আসল কি না তা যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নেই। যে কারণে জালিয়াত চক্রের এনআইডি জালিয়াতি ঠেকানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছি না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমাদের কিছু করণীয় নেই।’
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।