
মাস্টার পাইলটের সংকটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথে লাইটারেজ জাহাজে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরিবহন করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। অদক্ষ পাইলট দিয়ে এসব জাহাজ চালাতে দিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। নৌপথ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকায় কখনো কখনো ডুবোচরে আটকা পড়ছে জাহাজ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশ থেকে বড় জাহাজে করে আনা আমদানি পণ্যগুলো প্রথমে বহির্নোঙরে ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজে লোড করা হয়। এরপর এসব জাহাজে করে তা আমদানিকারকের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌপথে বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহনকালে লাইটার জাহাজগুলোতে মাস্টার পাইলট সরবরাহ দেওয়ার কথা বিআইডব্লিউটিএর। প্রতিজন মাস্টার পাইলটের জন্য ট্রিপ অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়াও রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিআইডব্লিউটিএ লাইটার জাহাজগুলোতে চাহিদানুযায়ী পাইলট দিতে পারছে না। এর ফলে ঝুঁকি মাথায় নিয়ে অদক্ষ-অনভিজ্ঞ পাইলট দিয়েই নৌপথে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে জাহাজগুলো চলছে।
লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩০০ লাইটারেজ জাহাজ তাদের আওতায় অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের মালিকানাধীন লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে আরও প্রায় ৫০০টি। এসব জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে দেশের ২৯টি গন্তব্যে পণ্য পরিবহন করে। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টি জাহাজ বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সময় প্রতিটি জাহাজে বিআইডব্লিউটিএ থেকে একজন করে মাস্টার পাইলট দেওয়ার কথা। কিন্তু এসব জাহাজ পরিচালনার জন্য বিআইডব্লিউটিএর কাছে মোট পাইলট রয়েছে ২৭ জন। এর মধ্যে স্থায়ী পাইলটের সংখ্যা ১৩ জন। বাকিরা অস্থায়ী হিসেবে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে জাহাজ চালায়। পর্যাপ্ত পাইলট না থাকার কারণে লাইটারেজ জাহাজগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী পাইলট সরবরাহ করতে পারছে না সরকারি এ সংস্থাটি। ফলে অদক্ষ পাইলট দিয়েই জাহাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহনের নৌপথ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে মাস্টার পাইলটদের। কোথায় ডুবোচর রয়েছে, কোথায় নতুন ডুবোচর উঠেছে, কোন এলাকায় পানির গভীরতা কেমন সবকিছু একজন মাস্টার পাইলটের নখদর্পনে থাকার কথা। কিন্তু অনভিজ্ঞ পাইলটদের সেই ধারণা থাকে না। আর অদক্ষ পাইলটের কারণে প্রায়ই বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহনকালে লাইটারেজ জাহাজ ডুবোচরে আটকা পড়া, জাহাজের তলা ফেটে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, নৌপথে নিরাপদে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য পরিবহনের জন্য মাস্টার পাইলটের বিকল্প নেই। নদী পথে বিভিন্ন সময় পলি জমে নতুন নতুন চর জমে। যে কারণে এ পথে জাহাজ চালাতে গেলে অনেক সময় চ্যানেল পরিবর্তন করতে হয়। আবার কোনো কোনো জায়গায় পানির গভীরতা কম থাকে। এসব পথে জাহাজ চালাতে গেলে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এ ব্যাপারে পাইলটের যথাযথ ধারণা না থাকলে জাহাজ আটকা পড়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি জানান, বিআইডব্লিউটটিএর দায়িত্ব হচ্ছে লাইটারেজ জাহাজগুলোতে মাস্টার পাইলট সরবরাহ করা। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে চাহিদানুযায়ী মাস্টার পাইলট দিতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে অদক্ষ পাইলটের মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে অধিকাংশ লাইটারেজ জাহাজ নৌপথে পণ্য পরিবহন করছে।
বিআইডব্লিউটিআইএ সূত্র জানায়, জনবল কাঠামো অনুযায়ী সংস্থাটির চট্টগ্রাম কার্যালয়ের আওতায় একজন মাস্টার পাইলট সুপারভাইজার, ৩২ জন সিনিয়র মাস্টার পাইলট ও ৫ জন মাস্টার পাইলটের পদ রয়েছে। কিন্তু তার বিপরীতে স্থায়ী পাইলট রয়েছে ১৩ জন। এর বাইরে অস্থায়ী ভিত্তিতে আরও ১৪ জন পাইলট জাহাজ পরিচালনা করে আসছে। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. সবুর খান পাইলট সংকটের কথা স্বীকার করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী মাস্টার পাইলট নিয়োগ না হওয়ায় লাইটারেজ জাহাজগুলোতে চাহিদানুযায়ী পাইলট সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন অবসরে যাওয়ায় তাদের পদগুলোও শূন্য হয়ে পড়েছে। পাইলট সংকটের কথা ও জনবল কাঠামো সংশোধন করে নতুন পাইলট নিয়োগের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে এবং প্রথমে শূন্যপদগুলো পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর ও বে-টার্মিনালকে সামনে রেখে জনবল কাঠামোতে পরিবর্তন আনা এবং পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করা হলে বিরাজমান সংকট কেটে যাবে বলে আশা করি।’
শবেবরাত-রমজান-ঈদে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এরই মধ্যে বিশেষ কিছু পণ্য আমদানিতে ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এবারে সব ধরনের পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে রিজার্ভ থেকে তহবিল নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের জন্য এলসি বা ঋণপত্র খোলার সুবিধাও চেয়েছে এফবিসিসিআর।
ব্যবসায়ীদের এমন দাবিতে এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি অর্থবছরের ছয় মাস পার হয়েছে। এরই মধ্যে রাজস্ব ঘাটতি ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এরই মধ্যে ঢালাওভাবে সব পণ্য আমদানিতে ছাড় দেওয়া হলে রাজস্ব আদায় কমে যাবে। এতে বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।
অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে পণ্যমূল্যে কিছুটা স্বস্তি দিতে হলে শবেবরাত-রমজান-ঈদে রাজস্ব সুবিধা দিতে হবে। তবে কতটা ছাড় দেবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সব পণ্য আমদানিতে ছাড় না দিয়ে শবেবরাত-রমজান-ঈদে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে তাতে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। এতে বিক্রি বেশি হবে এবং রাজস্ব আদায় বাড়বে।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তকে বলেন, শবেবরাত-রমজান-ঈদে এদেশে বিশেষ কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে। এসব পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হলে বিক্রি বাড়বে। বিক্রি বাড়লে ভ্যাট আদায় বেশি হবে। ব্যক্তি পর্যায়েও প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে আয়কর আদায় বাড়বে। তবে আমদানিতে ছাড় দেওয়া হলে শুল্ক কমবে এটা ঠিক আছে। তবে আয়কর ও ভ্যাট আদায় বাড়লে মোট রাজস্ব আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এরই মধ্যে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে শবেবরাত-রমজান-ঈদে পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে করণীয় নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বিশেষভাবে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই), ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার (ফিকি), বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিসিসিআই), বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডব্লিউসিসিআই), উইমেন এন্টারপ্রেনার নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট (ওয়েন্ড)-এর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়েছে। সবাই শবেবরাত-রমজান-ঈদে পণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় চেয়েছেন। একই সঙ্গে রিজার্ভ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে বিশেষ তহবিল গঠন করে এলসি বা ঋণপত্র খোলার সুবিধা চেয়েছে।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তকে বলেন, বড় অঙ্কের রিজার্ভ রয়েছে এখনো। রপ্তানি আয় বাড়ছে। অর্থনীতি নিয়ে এত চিন্তা না করে সামনে শবেবরাত-রমজান-ঈদে বাজার স্বাভাবিক রাখতে রাজস্ব ছাড়সহ এলসি সুবিধা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে তহবিল নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে পণ্য সংকট হবে। দাম বেড়ে যাবে।
ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, শবেবরাত-রমজান-ঈদে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হলে এনবিআরের আদায় কমবে না বরং বাড়বে। কারণ বছরের যে কোনো সময়ের তুলনায় শবেবরাত-রমজান-ঈদে ব্যবসা ভালো হয়। ব্যবসা ভালো হলে ব্যবসায়ীরা রাজস্ব জমা দিতে সমস্যায় পড়বে না। এতে এনবিআরের আদায় বাড়বে। ব্যবসায়ীরা রাজস্ব পরিশোধ করে বলেই এনবিআর রাজস্ব পায়। তাই ব্যবসায়ীদের ওপর আস্থা রাখতে হবে।
ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে এরই মধ্যে এনবিআর থেকে ভোজ্য তেল আমদানিতে ছাড় দিয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সই করা আলাদা আদেশে এসআরও জারি করে ভোজ্য তেল আমদানিতে ভ্যাট সুবিধা আরও ৪ মাস বাড়িয়েছে।
গত সোমবার আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাপ্লাই-চেইন নিরবচ্ছিন্ন ও মূল্য সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে আমদানিকারকদের বিশেষ কর সুবিধা প্রদানের দাবি জানিয়ে ডিসিসিআই প্রতিনিধিরা বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ব্যবসায়ী নেতারা মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, অনেক উন্নয়নশীল দেশে পণ্য রপ্তানিতে ৮ থেকে ১৬ শতাংশ হারে শুল্ক প্রদান করতে হয়।
ডলার সংকটে আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ায় এরই মধ্যে ছয় পণ্যের আমদানি কমে গিয়েছে। যেসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে তার মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত চিনি, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, সয়াবিন বীজ, অপরিশোধিত পাম তেল, ছোলা ও খেজুর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে অপরিশোধিত পাম তেল ও সয়াবিন বীজ আমদানি। আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে চিনির সংকট দেখা দিয়েছে। দামও আগের চেয়ে বেড়েছে।
এনবিআর সদস্য মইনুল খান দেশ রূপান্তকে বলেন, শবেবরাত-রমজান-ঈদ সামনে রেখে এনবিআর সব ধরনের সুবিধা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হলে আরও সুবিধা দেবে। তবে ঢালাওভাবে সব পণ্যের রাজস্ব সুবিধা দেওয়া হলে রাজস্ব আদায় বেশি পরিমাণে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পাওয়া সাময়িক হিসাব অনুসারে দেখা যায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬২০ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা। যদিও এ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ।
মোহাম্মদ আলী পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর আগে তিনি পূবালী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আলী ২০০৮ সালে মহাব্যবস্থাপক ও চিফ টেকনিক্যাল অফিসার পদে পূবালী ব্যাংকে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন। তিনি পূবালী ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সময়ে ক্যামেলকোর চিফ রিস্ক অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বিভিন্ন বিভাগের নেতৃত্ব দেন। তিনি রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসিতে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান অর্জনসহ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, আইবিএ থেকে এক্সিকিউটিভ এমবিএ (মার্কেটিং) এবং এইউএসটি থেকে এমবিএ (ফিন্যান্স) বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিতে উদ্যোগ নিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এ জন্য বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে সংগঠনটি।
গতকাল বুধবার এফবিসিসিআইয়ের বোর্ডরুমে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়। নতুন হওয়া এই চুক্তির আওতায় দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য সহজ শর্তে ঋণসহায়তা দেবে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।
এফবিসিসিআইয়ের পক্ষে মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক মোর্শেদ এই চুক্তিতে সই করেন।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান খুব বড় না হলেও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই খাতের অনেক বড় অবদান রয়েছে। প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান হচ্ছে এ খাতে। তাই এসএমই উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে ঋণ পেলে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের ব্যবসার পরিধি বড় করতে পারবেন। ফলে আরও নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) গ্রামাঞ্চল থেকে উচ্চ সুদে দিয়েও ঋণের প্রায় শতভাগ তুলে নিয়ে আসছে। আমাদের ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখালে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেও সহজে ঋণ তুলে নিয়ে আসা সম্ভব। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা খেলাপি হতে চান না। সহজ শর্তে ঋণ পেলে এসএমই খাত সমৃদ্ধ হবে, যা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনসহ সরকারের অন্যান্য লক্ষ্য অর্জনকে সহজ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় সহজ শর্তে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে ঋণ পৌঁছে দিতে চেম্বার অ্যাসোসিয়েশনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, দেশে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যবসা করছেন। এখনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে গেলে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হন। নতুন উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে আর্থিক নীতিমালা সহজীকরণ দরকার বলে জানান তিনি। এই চুক্তি গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক মোর্শেদ বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিতে আমরা ইতিমধ্যে ১৫টি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে চুক্তি করেছি। গত বছর আমাদের প্রদানকৃত ঋণের প্রায় ২৩ শতাংশ গেছে এসএমই খাতে। আমরা চলতি বছর এসএমই খাতে অন্তত ৫৫ শতাংশ ঋণ বরাদ্দের লক্ষ্য ঠিক করেছি। এ জন্য আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে উপশাখা, প্রান্তিক পর্যায়ে শাখা-উপশাখা স্থাপনে জোর দিয়েছি। সেই ধারাবাহিকতায় এ মাসে আমরা রংপুরে নতুন একটি শাখা খুলতে যাচ্ছি।’
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি এম এ মোমেন, পরিচালক এম জি আর নাসির মজুমদার, শফিকুল ইসলাম ভরসা, বিজয় কুমার কেজরিওয়াল, হাফেজ হারুন, আমজাদ হোসেন, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. নাসের, সৈয়দ সাদাত আলমাস কবীর, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিও কে এম আওলাদ হোসেন।
চলতি অর্থবছরে দেশে ছয়টি বিভাগে ‘বিভাগীয় এসএমই পণ্যমেলা’ আয়োজন করবে এসএমই ফাউন্ডেশন। প্রথম ‘বিভাগীয় এসএমই পণ্যমেলা’ রাজশাহীতে আজ বৃহস্পতিবার শুরু হবে। চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় এসএমই ফাউন্ডেশন। এ ছাড়া ১ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে, ৫ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি সিলেটে ও ১২ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি রংপুর বিভাগের দিনাজপুরে ‘বিভাগীয় এসএমই পণ্যমেলা’ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী মার্চে ময়মনসিংহ ও খুলনায় ‘বিভাগীয় এসএমই পণ্যমেলা’ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশনের। এ মেলা রাজশাহী সিটি মেয়র কার্যালয়ের গ্রিন প্লাজা চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১টায় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসির (ডিবিএইচ) শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির (এসএসসি) প্রথম সভা ৯ জানুয়ারি ডিবিএইচের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান মুফতি ও ইসলামি শরিয়াহ আইন বিশেষজ্ঞ ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সভা হয়। সভায় শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. আব্দুল আওয়াল সরকার, সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক; ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক, অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; নাসিমুল বাতেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি; তানবীর আহমাদ, ডিএমডি ও প্রধান, ইসলামিক ফাইন্যান্সিং ডিভিশন (চলতি দায়িত্ব) এবং মো. আবু ইউসুফ, সিএসএএ ও সদস্য সচিব, ডিবিএইচ শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি। বিজ্ঞপ্তি
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।