
চলতি অর্থবছরে দেশে ছয়টি বিভাগে ‘বিভাগীয় এসএমই পণ্যমেলা’ আয়োজন করবে এসএমই ফাউন্ডেশন। প্রথম ‘বিভাগীয় এসএমই পণ্যমেলা’ রাজশাহীতে আজ বৃহস্পতিবার শুরু হবে। চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় এসএমই ফাউন্ডেশন। এ ছাড়া ১ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে, ৫ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি সিলেটে ও ১২ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি রংপুর বিভাগের দিনাজপুরে ‘বিভাগীয় এসএমই পণ্যমেলা’ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী মার্চে ময়মনসিংহ ও খুলনায় ‘বিভাগীয় এসএমই পণ্যমেলা’ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশনের। এ মেলা রাজশাহী সিটি মেয়র কার্যালয়ের গ্রিন প্লাজা চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১টায় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
শবেবরাত-রমজান-ঈদে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এরই মধ্যে বিশেষ কিছু পণ্য আমদানিতে ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এবারে সব ধরনের পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে রিজার্ভ থেকে তহবিল নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের জন্য এলসি বা ঋণপত্র খোলার সুবিধাও চেয়েছে এফবিসিসিআর।
ব্যবসায়ীদের এমন দাবিতে এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি অর্থবছরের ছয় মাস পার হয়েছে। এরই মধ্যে রাজস্ব ঘাটতি ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এরই মধ্যে ঢালাওভাবে সব পণ্য আমদানিতে ছাড় দেওয়া হলে রাজস্ব আদায় কমে যাবে। এতে বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।
অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে পণ্যমূল্যে কিছুটা স্বস্তি দিতে হলে শবেবরাত-রমজান-ঈদে রাজস্ব সুবিধা দিতে হবে। তবে কতটা ছাড় দেবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সব পণ্য আমদানিতে ছাড় না দিয়ে শবেবরাত-রমজান-ঈদে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে তাতে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। এতে বিক্রি বেশি হবে এবং রাজস্ব আদায় বাড়বে।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তকে বলেন, শবেবরাত-রমজান-ঈদে এদেশে বিশেষ কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে। এসব পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হলে বিক্রি বাড়বে। বিক্রি বাড়লে ভ্যাট আদায় বেশি হবে। ব্যক্তি পর্যায়েও প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে আয়কর আদায় বাড়বে। তবে আমদানিতে ছাড় দেওয়া হলে শুল্ক কমবে এটা ঠিক আছে। তবে আয়কর ও ভ্যাট আদায় বাড়লে মোট রাজস্ব আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এরই মধ্যে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে শবেবরাত-রমজান-ঈদে পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে করণীয় নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বিশেষভাবে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই), ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার (ফিকি), বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিসিসিআই), বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডব্লিউসিসিআই), উইমেন এন্টারপ্রেনার নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট (ওয়েন্ড)-এর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়েছে। সবাই শবেবরাত-রমজান-ঈদে পণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় চেয়েছেন। একই সঙ্গে রিজার্ভ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে বিশেষ তহবিল গঠন করে এলসি বা ঋণপত্র খোলার সুবিধা চেয়েছে।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তকে বলেন, বড় অঙ্কের রিজার্ভ রয়েছে এখনো। রপ্তানি আয় বাড়ছে। অর্থনীতি নিয়ে এত চিন্তা না করে সামনে শবেবরাত-রমজান-ঈদে বাজার স্বাভাবিক রাখতে রাজস্ব ছাড়সহ এলসি সুবিধা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে তহবিল নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে পণ্য সংকট হবে। দাম বেড়ে যাবে।
ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, শবেবরাত-রমজান-ঈদে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হলে এনবিআরের আদায় কমবে না বরং বাড়বে। কারণ বছরের যে কোনো সময়ের তুলনায় শবেবরাত-রমজান-ঈদে ব্যবসা ভালো হয়। ব্যবসা ভালো হলে ব্যবসায়ীরা রাজস্ব জমা দিতে সমস্যায় পড়বে না। এতে এনবিআরের আদায় বাড়বে। ব্যবসায়ীরা রাজস্ব পরিশোধ করে বলেই এনবিআর রাজস্ব পায়। তাই ব্যবসায়ীদের ওপর আস্থা রাখতে হবে।
ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে এরই মধ্যে এনবিআর থেকে ভোজ্য তেল আমদানিতে ছাড় দিয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সই করা আলাদা আদেশে এসআরও জারি করে ভোজ্য তেল আমদানিতে ভ্যাট সুবিধা আরও ৪ মাস বাড়িয়েছে।
গত সোমবার আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাপ্লাই-চেইন নিরবচ্ছিন্ন ও মূল্য সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে আমদানিকারকদের বিশেষ কর সুবিধা প্রদানের দাবি জানিয়ে ডিসিসিআই প্রতিনিধিরা বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ব্যবসায়ী নেতারা মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, অনেক উন্নয়নশীল দেশে পণ্য রপ্তানিতে ৮ থেকে ১৬ শতাংশ হারে শুল্ক প্রদান করতে হয়।
ডলার সংকটে আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ায় এরই মধ্যে ছয় পণ্যের আমদানি কমে গিয়েছে। যেসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে তার মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত চিনি, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, সয়াবিন বীজ, অপরিশোধিত পাম তেল, ছোলা ও খেজুর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে অপরিশোধিত পাম তেল ও সয়াবিন বীজ আমদানি। আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে চিনির সংকট দেখা দিয়েছে। দামও আগের চেয়ে বেড়েছে।
এনবিআর সদস্য মইনুল খান দেশ রূপান্তকে বলেন, শবেবরাত-রমজান-ঈদ সামনে রেখে এনবিআর সব ধরনের সুবিধা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হলে আরও সুবিধা দেবে। তবে ঢালাওভাবে সব পণ্যের রাজস্ব সুবিধা দেওয়া হলে রাজস্ব আদায় বেশি পরিমাণে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পাওয়া সাময়িক হিসাব অনুসারে দেখা যায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬২০ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা। যদিও এ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ।
মোহাম্মদ আলী পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর আগে তিনি পূবালী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আলী ২০০৮ সালে মহাব্যবস্থাপক ও চিফ টেকনিক্যাল অফিসার পদে পূবালী ব্যাংকে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন। তিনি পূবালী ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সময়ে ক্যামেলকোর চিফ রিস্ক অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বিভিন্ন বিভাগের নেতৃত্ব দেন। তিনি রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসিতে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান অর্জনসহ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, আইবিএ থেকে এক্সিকিউটিভ এমবিএ (মার্কেটিং) এবং এইউএসটি থেকে এমবিএ (ফিন্যান্স) বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিতে উদ্যোগ নিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এ জন্য বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে সংগঠনটি।
গতকাল বুধবার এফবিসিসিআইয়ের বোর্ডরুমে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়। নতুন হওয়া এই চুক্তির আওতায় দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য সহজ শর্তে ঋণসহায়তা দেবে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।
এফবিসিসিআইয়ের পক্ষে মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক মোর্শেদ এই চুক্তিতে সই করেন।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান খুব বড় না হলেও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই খাতের অনেক বড় অবদান রয়েছে। প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান হচ্ছে এ খাতে। তাই এসএমই উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে ঋণ পেলে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের ব্যবসার পরিধি বড় করতে পারবেন। ফলে আরও নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) গ্রামাঞ্চল থেকে উচ্চ সুদে দিয়েও ঋণের প্রায় শতভাগ তুলে নিয়ে আসছে। আমাদের ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখালে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেও সহজে ঋণ তুলে নিয়ে আসা সম্ভব। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা খেলাপি হতে চান না। সহজ শর্তে ঋণ পেলে এসএমই খাত সমৃদ্ধ হবে, যা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনসহ সরকারের অন্যান্য লক্ষ্য অর্জনকে সহজ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় সহজ শর্তে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে ঋণ পৌঁছে দিতে চেম্বার অ্যাসোসিয়েশনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, দেশে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যবসা করছেন। এখনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে গেলে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হন। নতুন উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে আর্থিক নীতিমালা সহজীকরণ দরকার বলে জানান তিনি। এই চুক্তি গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক মোর্শেদ বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিতে আমরা ইতিমধ্যে ১৫টি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে চুক্তি করেছি। গত বছর আমাদের প্রদানকৃত ঋণের প্রায় ২৩ শতাংশ গেছে এসএমই খাতে। আমরা চলতি বছর এসএমই খাতে অন্তত ৫৫ শতাংশ ঋণ বরাদ্দের লক্ষ্য ঠিক করেছি। এ জন্য আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে উপশাখা, প্রান্তিক পর্যায়ে শাখা-উপশাখা স্থাপনে জোর দিয়েছি। সেই ধারাবাহিকতায় এ মাসে আমরা রংপুরে নতুন একটি শাখা খুলতে যাচ্ছি।’
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি এম এ মোমেন, পরিচালক এম জি আর নাসির মজুমদার, শফিকুল ইসলাম ভরসা, বিজয় কুমার কেজরিওয়াল, হাফেজ হারুন, আমজাদ হোসেন, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. নাসের, সৈয়দ সাদাত আলমাস কবীর, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিও কে এম আওলাদ হোসেন।
মাস্টার পাইলটের সংকটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথে লাইটারেজ জাহাজে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরিবহন করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। অদক্ষ পাইলট দিয়ে এসব জাহাজ চালাতে দিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। নৌপথ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকায় কখনো কখনো ডুবোচরে আটকা পড়ছে জাহাজ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশ থেকে বড় জাহাজে করে আনা আমদানি পণ্যগুলো প্রথমে বহির্নোঙরে ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজে লোড করা হয়। এরপর এসব জাহাজে করে তা আমদানিকারকের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌপথে বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহনকালে লাইটার জাহাজগুলোতে মাস্টার পাইলট সরবরাহ দেওয়ার কথা বিআইডব্লিউটিএর। প্রতিজন মাস্টার পাইলটের জন্য ট্রিপ অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়াও রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিআইডব্লিউটিএ লাইটার জাহাজগুলোতে চাহিদানুযায়ী পাইলট দিতে পারছে না। এর ফলে ঝুঁকি মাথায় নিয়ে অদক্ষ-অনভিজ্ঞ পাইলট দিয়েই নৌপথে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে জাহাজগুলো চলছে।
লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩০০ লাইটারেজ জাহাজ তাদের আওতায় অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের মালিকানাধীন লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে আরও প্রায় ৫০০টি। এসব জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে দেশের ২৯টি গন্তব্যে পণ্য পরিবহন করে। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টি জাহাজ বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সময় প্রতিটি জাহাজে বিআইডব্লিউটিএ থেকে একজন করে মাস্টার পাইলট দেওয়ার কথা। কিন্তু এসব জাহাজ পরিচালনার জন্য বিআইডব্লিউটিএর কাছে মোট পাইলট রয়েছে ২৭ জন। এর মধ্যে স্থায়ী পাইলটের সংখ্যা ১৩ জন। বাকিরা অস্থায়ী হিসেবে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে জাহাজ চালায়। পর্যাপ্ত পাইলট না থাকার কারণে লাইটারেজ জাহাজগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী পাইলট সরবরাহ করতে পারছে না সরকারি এ সংস্থাটি। ফলে অদক্ষ পাইলট দিয়েই জাহাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহনের নৌপথ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে মাস্টার পাইলটদের। কোথায় ডুবোচর রয়েছে, কোথায় নতুন ডুবোচর উঠেছে, কোন এলাকায় পানির গভীরতা কেমন সবকিছু একজন মাস্টার পাইলটের নখদর্পনে থাকার কথা। কিন্তু অনভিজ্ঞ পাইলটদের সেই ধারণা থাকে না। আর অদক্ষ পাইলটের কারণে প্রায়ই বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহনকালে লাইটারেজ জাহাজ ডুবোচরে আটকা পড়া, জাহাজের তলা ফেটে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, নৌপথে নিরাপদে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য পরিবহনের জন্য মাস্টার পাইলটের বিকল্প নেই। নদী পথে বিভিন্ন সময় পলি জমে নতুন নতুন চর জমে। যে কারণে এ পথে জাহাজ চালাতে গেলে অনেক সময় চ্যানেল পরিবর্তন করতে হয়। আবার কোনো কোনো জায়গায় পানির গভীরতা কম থাকে। এসব পথে জাহাজ চালাতে গেলে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এ ব্যাপারে পাইলটের যথাযথ ধারণা না থাকলে জাহাজ আটকা পড়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি জানান, বিআইডব্লিউটটিএর দায়িত্ব হচ্ছে লাইটারেজ জাহাজগুলোতে মাস্টার পাইলট সরবরাহ করা। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে চাহিদানুযায়ী মাস্টার পাইলট দিতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে অদক্ষ পাইলটের মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে অধিকাংশ লাইটারেজ জাহাজ নৌপথে পণ্য পরিবহন করছে।
বিআইডব্লিউটিআইএ সূত্র জানায়, জনবল কাঠামো অনুযায়ী সংস্থাটির চট্টগ্রাম কার্যালয়ের আওতায় একজন মাস্টার পাইলট সুপারভাইজার, ৩২ জন সিনিয়র মাস্টার পাইলট ও ৫ জন মাস্টার পাইলটের পদ রয়েছে। কিন্তু তার বিপরীতে স্থায়ী পাইলট রয়েছে ১৩ জন। এর বাইরে অস্থায়ী ভিত্তিতে আরও ১৪ জন পাইলট জাহাজ পরিচালনা করে আসছে। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. সবুর খান পাইলট সংকটের কথা স্বীকার করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী মাস্টার পাইলট নিয়োগ না হওয়ায় লাইটারেজ জাহাজগুলোতে চাহিদানুযায়ী পাইলট সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন অবসরে যাওয়ায় তাদের পদগুলোও শূন্য হয়ে পড়েছে। পাইলট সংকটের কথা ও জনবল কাঠামো সংশোধন করে নতুন পাইলট নিয়োগের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে এবং প্রথমে শূন্যপদগুলো পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর ও বে-টার্মিনালকে সামনে রেখে জনবল কাঠামোতে পরিবর্তন আনা এবং পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করা হলে বিরাজমান সংকট কেটে যাবে বলে আশা করি।’
ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসির (ডিবিএইচ) শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির (এসএসসি) প্রথম সভা ৯ জানুয়ারি ডিবিএইচের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান মুফতি ও ইসলামি শরিয়াহ আইন বিশেষজ্ঞ ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সভা হয়। সভায় শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. আব্দুল আওয়াল সরকার, সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক; ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক, অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; নাসিমুল বাতেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি; তানবীর আহমাদ, ডিএমডি ও প্রধান, ইসলামিক ফাইন্যান্সিং ডিভিশন (চলতি দায়িত্ব) এবং মো. আবু ইউসুফ, সিএসএএ ও সদস্য সচিব, ডিবিএইচ শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি। বিজ্ঞপ্তি
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কো-স্পোর্টস যতটা না তাদের কর্মগুণে সমাদৃত, তার চেয়ে বেশি আলোচিত নানা নেতিবাচক কারণে। একটা সময় কে-স্পোর্টস ও এর প্রধান নির্বাহী ফাহাদ করিমে আস্থা রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বড় বড় সব চুক্তিও সে সময় হয়েছিল দুই পক্ষের। তবে চুক্তির নানা শর্ত ভঙ্গ করে বিসিবির গুড বুক থেকে কাটা গেছে তাদের নাম।
বিসিবিতে সুবিধা করে উঠতে না পেরে গেল কয়েক বছর ফাহাদ করিম সওয়ার হয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনে। বাফুফের এই আলোচিত সভাপতি একটা সময় বড় গলায় ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, বিসিবির বিপিএলের কঠোর সমালোচনা করে বলেছিলেন, ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মতো সস্তা আয়োজনের প্রয়োজন নেই।
অথচ ফাহাদের পাল্লায় পড়ে সেই সালাউদ্দিনই নিজের বলা কথা ভুলে গেছেন। তৎপর হয়েছেন নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনে। যদিও এমন আয়োজনের জন্য কোনো রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না কে-স্পোর্টসের। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত না করেই আসর মাঠে গড়ানোর তারিখ ঘোষণা করা এবং অনুমিতভাবেই ঘোষিত তারিখে খেলা শুরু করতে না পারা।
কে-স্পোর্টসের সিইও ফাহাদ করিমের সঙ্গে সালাউদ্দিনের দহরম মহরম বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। সেটা কখনো কখনো ফুটবলের স্বার্থ ছাড়িয়ে চলে যায় ব্যক্তিস্বার্থে। সাফল্যপ্রসবা নারী ফুটবলে বেশি আগ্রহ সালাউদ্দিনের। ক্রীড়া-বেনিয়া ফাহাদও সালাউদ্দিনের নারী ফুটবলের প্রতি বাড়তি অনুরাগটা ধরে ফেলে ২০১৯ সালে বাফুফেতে প্রবেশ করেন ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক নারী টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
এর পরের বছর টিভি সম্প্রচারস্বত্ব পাইয়ে দিতে বাফুফের সঙ্গে তিন বছরের বড় অঙ্কের চুক্তি করে কে-স্পোর্টস। চুক্তি অনুযায়ী বাফুফেকে ফি-বছর আড়াই কোটি টাকা করে দেওয়ার কথা কে-স্পোর্টসের। সেই অর্থ বুঝে না পেয়ে সম্প্রতি ফাহাদ করিমকে চিঠি দেয় বাফুফে।
বিষয়টি সমাধান না হলে নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে চুক্তি না করার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছিল চিঠিতে। তবে এই চিঠি দেওয়া যে শুধুই আনুষ্ঠানিকতার, তা সালাউদ্দিন-ফাহাদ করিমের হাবভাবেই বোঝা যায়। চুক্তির বিষয়টাকে এক পাশে রেখে আসলে তাদের বড় দুর্ভাবনা নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।
পাঁচ তারকা হোটেলে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানীদের নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে নামীদামি নায়ক-নায়িকা-মডেল ভাড়া করে এনে ফাহাদ করিম এর মধ্যেই আসরের লোগো, ট্রফি ও বল উন্মোচন করেছেন একাধিক অনুষ্ঠানে। ১ মে হওয়ার কথা ছিল আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফটস। সেদিন ড্রাফটসের জায়গায় হয়েছে ট্রফি ও বল উন্মোচন অনুষ্ঠান। কে-স্পোর্টস যে ফ্র্যাঞ্চাইজিও চূড়ান্ত করতে পারেনি, প্লেয়ার ড্রাফটসটা হবেই বা কাদের নিয়ে?
এই অবস্থা এখনো চলমান। ১৫ মে শুরু হওয়ার কথা ছিল খেলা। সেই তারিখও ভেস্তে গেছে। আসলে অনিয়ম-জালিয়াতির আখড়ায় রূপ নেওয়া বাফুফের প্রতি আস্থা হারিয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। যেচে কেউই চায় না ফাহাদ-সালাউদ্দিনের দেওয়া টোপ গিলতে। এমনকি ফুটবলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে এমন কোম্পানিগুলোও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শুরুতে এ আসরটি ছয় দল নিয়ে আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল কে-স্পোর্টস। পরে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে দলসংখ্যা নামিয়ে আনা হয় চারে। জানা গেছে, বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে বারবার গিয়েও খেলতে রাজি করাতে পারেননি ফাহাদ। অথচ তারপরও এই ফাহাদে সালাউদ্দিনের আস্থা টলেনি।
সম্প্রতি সালাউদ্দিন, বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ও বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে দীর্ঘ সভা করেন। বৈঠক শেষে বাফুফে ভবন ছাড়ার সময় ফাহাদ করিম যা বলেছিলেন, তাতে পরিষ্কার নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কোনো অগ্রগতিই হয়নি।
দেশ রূপান্তরকে ফাহাদ বলেছেন, ‘দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই হয়ে যাবে। বড় কোনো অগ্রগতি হলে আমি সবাইকে ডেকে জানাব।’
গত সোমবার বাফুফের জরুরি সভা শেষে কাজী সালাউদ্দিন নতুন করে লিগ শুরুর তারিখ ঘোষণা করেন। পরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ওমেন্স ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ১০ জুন থেকে শুরু হবে। ১২ দিনে হবে ১৩ টি ম্যাচ। এটা এখন বলা দরকার যে, ফিফা উইন্ডোতে লিগ করছি। যেন বিদেশি খেলোয়াড় আসতে পারে। না হলে আসতে পারবে না।’
নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন ঠিকই। তবে আদৌ নির্ধারিত তারিখে খেলা হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট শঙ্কা।
গত বছর নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই মাঠে ফেরার দিন গুনছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। সাফ জয়ের পর সালাউদ্দিন শুনিয়েছিলেন গালভরা বুলি। সাবিনাদের নিয়মিত খেলার ব্যবস্থা করবেন। অথচ লিগের কিছু ম্যাচ ছাড়া আর খেলারই সুযোগ আসেনি। অথচ অর্থ সংকটের খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে বাফুফে মেয়েদের মিয়ানমারে পাঠায়নি অলিম্পিক বাছাই খেলতে।
ফিফা উইন্ডোতেও বাফুফে পারেনি দলের জন্য প্রতিপক্ষ জোগাতে। পাঁচ তারকা হোটেলের চোখ ঝলসানো মায়াবী আলো আর সুরের মূর্ছনায় ফাহাদ করিম আয়োজন করেছিলেন লোগো, ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান। সেখানে গিয়ে সাবিনারাও দেখেছিলেন বাড়তি কিছু উপার্জনের রঙিন স্বপ্ন। তবে বাফুফের অদূরদর্শী সভাপতি অপ্রস্তুত এক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের দায়িত্ব তুলে দিয়ে যেন সাবিনাদের স্বপ্নটাকেই আরেকবার গলাটিপে ধরতে চাইছেন।
জার্মানির ফুটবল দলে বায়ার্ন মিউনিখের আধিপত্যটা পুরনো। পেপ গার্দিওলা ক্লাবটির কোচ হওয়ার পর ২০১৪ সালে দেশটি বিশ্বকাপ জিতে। সেসময় দলে ভারি ছিল মিউনিখের এই ক্লাবটি। এই ক্লাবের কোচ ছিলেন হ্যান্সি ফ্লিক। তার অধীনেই সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছে দলটি।
মিউনিখ মিশন শেষে এখন জার্মান জাতীয় ফুটবল দলকে সামলাচ্ছেন ফ্লিক। প্রাক্তন ক্লাবের প্রতি বাড়তি দরদ কাজ করাটা স্বাভাবিক। ক্লাবসহ সমর্থকদেরও প্রত্যাশা তাই থাকে। তবে পেশাদারিত্ব অনেক নিষ্ঠুর যে! আবেগকে নয়, বরং পারফরম্যান্সকে মূল্যায়ন করতে হয়। সেটাই প্রকাশ পেয়েছে ঘোষিত স্কোয়াডে।
আগামী ১২ জুন (সোমবার) প্রীতি ম্যাচ ইউক্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি হচ্ছে জার্মানি। সেই ম্যাচের আগে ২৬ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন হ্যান্সি ফ্লিক। সেখানে ফ্লিকের প্রাক্তন ক্লাব বায়ার্ন থেকে আছেন মাত্র ৪ জন খেলোয়াড়। ঘোষিত এই দলে নেই থমাস মুলার ও সার্জিও গিনাব্রের নাম। তাছাড়া চোটের কারণে দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যার।
বায়ার্ন থেকে নেওয়া ৪ ফুটবলারও অবশ্য নিয়মিত মুখ। তারা হলেন মিডফিল্ডার জশুয়া কিমিচ, লিওন গোরেটজকা, ফরোয়র্ড লেরয় সানে ও জামাল মুসিয়ালা।
ঘোষিত সেই দলে আছেন-
গোলরক্ষক : বার্ন্ড লেনো, মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন, কেভিন ট্র্যাপ। ডিফেন্স : ম্যাথিয়াস জিন্টার, রবিন গোসেনস, বেঞ্জামিন হেনরিকস, থিলো কেহরের, লুকাস ক্লোস্টারম্যান, ডেভিড রাউম, আন্তোনিও রুডিগার, নিকো শ্লোটারবেক, ম্যালিক থিয়াও, মারিয়াস উলফ। মিডফিল্ড/আক্রমণ : জুলিয়ান ব্র্যান্ডট, এমরে ক্যান, নিকলাস ফুলক্রুগ, লিওন গোরেটজকা, ইকাই গুনদোয়ান, কাই হেভার্টেজ, জোনাস হফম্যান, জোশুয়া কিমিচ, জামাল মুসিয়ালা, লেরয় সানে, কেভিন শেড, টিমো ওয়ার্নার, ফ্লোরিয়ান উইর্টজ।
ইউক্রেন মিশন শেষে চলতি মাসে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে জার্মানি। বাকি আগামী ১৭ জুন পোল্যান্ডের বিপক্ষে এবং ২১ জুন কলোম্বিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে জার্মানি।
টানা চার দিন ধরে বাড়ছে তাপমাত্রা। গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন সে তুলনায় না বাড়ায় লোডশেডিং ক্রমে বাড়ছে। এ অবস্থার মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা কয়লার অভাবে এক-দুই দিনের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনটা হলে লোডশেডিং চরমে পৌঁছানোর আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
আগে রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং তেমন না হলেও এখন বিভিন্ন এলাকায় চার-পাঁচবার করে পাঁচ-সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ঢাকার বাইরের শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় শিশু ও বয়স্কদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিদ্যুতের অভাবে কারখানার উৎপাদন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এবং অফিস-আদালতে কাজের ব্যাঘাত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের চালক ও অটোচালকরা ঠিকমতো চার্জ দিতে না পারায় তাদের আয় কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়ও মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। মোটকথা জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গরম থেকে আপাতত নিস্তার নেই। ৮ বা ৯ জুন বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ ৭ জুন পর্যন্ত দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার শঙ্কা রয়েছে। আগামী এক মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে।
বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখছিল পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু কয়লার অভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের একটি গত ২৫ মে বন্ধ করা হয়। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার অন্য ইউনিটটি থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও সেটিও এক-দুই দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কয়লা কেনার অর্থের অভাবে।
বিল বকেয়া থাকায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে চীনা কোম্পানি সিএমসি। কয়লা আমদানি বাবদ বর্তমানে পায়রার ২৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার বকেয়া আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আপাতত ১০০ মিলিয়ন ডলার সংস্থান করা গেলেও কেন্দ্রটির জন্য নতুন করে কয়লা আমদানি করা যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৮৮ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে। বাকি অর্থ এ সপ্তাহে পাওয়ার কথা রয়েছে। এরপর কয়লা আমদানির জন্য এলসি ওপেন করা হবে। এলসি খোলার পর কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগবে। কয়লা এলেও সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ কেন্দ্র পুরোদমে চালু করা যাবে না। দ্রুত অর্থ সংস্থান হলেও অন্তত এক মাস এটি বন্ধ থাকবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানির অভাবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ডলার সংকটে জ্বালানি তেল, এলএনজি ও কয়লা আমদানি কমায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাইলেও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। সংকট সামলাতে এখন আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির অপেক্ষা করছে কর্তৃপক্ষ। তারা আশা করছে, এ সপ্তাহ শেষে গরম অনেকটা কমবে। গরম কমলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মনে করেন, বৈশ্বিক কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা পরিকল্পনা মাফিক চললেও প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহের ধারাবাহিকতা চ্যালেঞ্জে পড়েছে। কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে। তবে দেশে কয়লা নিয়ে যে সংকট চলছে সেটা থাকবে না। আমরা চেষ্টা করছি; সে সঙ্গে আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে বকেয়া রয়েছে তা তারা পাবে। তবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘আজকের এ পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতির চেয়ে সরকার বেশি দায়ী। ভুলনীতির কারণে প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান না করে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাড়ছে। ফলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। অতিরিক্ত দাম দিয়েও মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। সামনে লোডশেডিং আরও বাড়বে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম এখন অনেক কম। তারপরও জ্বালানি নিয়ে আমাদের দেশে কেন এ দুরবস্থা তা বোধগম্য নয়।’
পিডিবি সূত্রমতে, বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের ঘাটতি দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস্তবে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট।
এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। জ্বালানির অভাবে গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের সক্ষমতা ব্যবহার করা যায় না। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াটের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। পিডিবির হিসাবে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট। গড়ে উৎপাদন করা হচ্ছে ৬ হাজার ২২১ মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু উৎপাদন করা হচ্ছে দৈনিক ৩ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট। উৎপাদিত হচ্ছে ২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট।
প্রাথমিক জ্বালানিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া না হলে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১৮ হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া হয়ে আছে। সরকার এ বকেয়া কমিয়ে না আনলে কয়েকটি কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে কয়েকটিতে উৎপাদন কমেছে।
গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি এবং লোডশেডিংয়ের কারণে অধিকাংশ শিল্পে ৩০-৪০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমালিকরা। ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে অনেক কারখানায় উৎপাদন ঠিক রাখতে গিয়ে খরচ বাড়ছে। তারা বলছেন, অনেক সম্ভাবনা থাকলেও কারখানার চাকা ঠিক রাখতে না পারায় ব্যবসা গুটিয়েছেন বা উৎপাদনের পরিমাণ কমাচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা।
ডলার সংকটে পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানির বিল, এলএনজি টার্মিনালের চার্জ এবং বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) বিল দিতে পারছে না। সময়মতো বিল দিতে না পারায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটিকে। পেট্রোবাংলার মোট বকেয়া প্রায় ২৫ কোটি ডলার।
একই কারণে আমদানিকৃত জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না বিপিসি। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তেলবাহী কার্গো না পাঠানোর হুমকি দিয়েছে। গত ১১ মে পর্যন্ত বিপিসির কাছে সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ডলার।
বিপিসি জানিয়েছে, বকেয়া পরিশোধ না করায় ৩০ হাজার টনের একটি ডিজেল কার্গো বাতিল করেছে ভিটল সিঙ্গাপুর। আন্তর্জাতিক তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, এ মাসে তারা ১৫০ হাজার টন ডিজেল, ৫০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করবে না। বিপিসি জ্বালানি বিভাগকে জানিয়েছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।