
ড. ইঞ্জিনিয়ার রশিদ আহমেদ চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি), চট্টগ্রামের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চিটাগং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান। বিজ্ঞপ্তি
সংকটে থাকা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্য বাড়াতে মুদ্রানীতিতে বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। আমানতের তুলনায় ঋণের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হওয়া ও সরকারকে ঋণ দিতে গিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই তারল্যের জোগান দিতে নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৪২৬তম সভা শেষে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন একাধিক বোর্ড সদস্য। সভায় সভাপতিত্ব করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের প্রথম বোর্ড সভায় বিষয়টি সরকারের কছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক, ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউয়ের প্রধান কর্মকর্তা, চিফ ইকোনমিস্ট ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
২০২২ সালের শুরুতে কভিড পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এতে করে বিশ^ব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন হওয়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। এতে করে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে বাজারে টাকার সরবরাহ ঠিক রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নানামুখী চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে রবিবার আসছে নতুন মুদ্রানীতি। বৈশ্বিক মন্দায় দেশের বাজারে টাকার সরবরাহ ঠিক রাখতে যথাযথ সিদ্ধান্ত আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের বৈঠকে মুদ্রানীতির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি চলতি অর্থবছরের বাকি ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণার কথা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২২) ব্যাংক থেকে সরকারের নিট বা প্রকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিয়েছে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ শোধ করেছে ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট বা প্রকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। আবার আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় গত এক বছরে রিজার্ভ থেকে ডলারের জোগান দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে বিপুল পরিমাণের টাকা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোষাগারে জমা পড়েছে। এর বাইরে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে আমানতকারীদের আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। যার কারণে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে বিপুল পরিমাণের টাকা চলে গেছে। সবমিলিয়ে ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তারল্য জোগান দিতে আসন্ন মুদ্রানীতিতে বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে যা ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা বিশ্লেষণ করে মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন কিছুটা কমানো হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবর শেষে যা ছিল ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগস্টে ছিল ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং জুলাইয়ে মাসে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এদিকে গতকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসিকে শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সদ্য অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবসা করতে আইনগত বিশেষ ছাড় চেয়ে যে আবেদন করেছে, তা বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্ষদ। সরকারের অনুমোদন পেলে ডাক বিভাগের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক পরিচালিত মোবাইল ব্যাংকিং ‘নগদ’ নিজেরাই পরিচালনা করতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমএফএস ব্যবসার সুযোগ নেই বলে লিজিং কোম্পানিটি শর্ত শিথিলের জন্য আবেদন করেছে। বিষয়টি বোর্ডে উত্থাপিত হয়েছে। যেহেতু আইনগত ছাড় দেওয়ার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই, তাই সরকারের কাছে বিষয়টি সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হবে। সরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত জানাবে।
জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের লাইসেন্স ছাড়াই ডাক বিভাগের ব্র্যান্ড ব্যবহার করে ব্যবসা শুরু করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘নগদ’। স্বল্প সময়ে তারা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানের বাইরে থেকে যায় এমএফএস প্রতিষ্ঠানটি। ফলস্বরূপ সন্দেহজনক লেনদেন, বিধিবহির্ভূত ব্যাংক লোন ও মূলধনের অতিরিক্ত ই-মানি তৈরির মতো বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ডাক বিভাগের মালিকানায় নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে ব্যাংকের সঙ্গে না গিয়ে নিজেরই আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে নগদ কর্তৃপক্ষ। নাম প্রস্তাব করা হয় ‘নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি’।
নতুন ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও অনলাইন সেবাসহ অন্যান্য ফি প্রক্রিয়াকে অটোমেশনের মাধ্যমে ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে নগর ভবনে সাক্ষাৎকালে এ দাবি জানান সামীর সাত্তার।
সামীর সাত্তার দাবি করেন, ‘ইন্টিগ্রেটেড পেমেন্ট গেটওয়ে’র প্রদত্ত নতুন ট্রেড লাইসেন্স প্রদানসহ অন্যান্য ফি প্রদান প্রক্রিয়াকে অটোমেশনের মাধ্যমে ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স সেবা ঢাকা চেম্বার কার্যালয় থেকে দেওয়ার জন্য ডিসিসিআইতে একটি বুথ স্থাপনের আহ্বান জানান এবং এ লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরেরও প্রস্তাব করেন তিনি।
তিনি বলেন, ঢাকার ট্রাফিক সমস্যার সমাধান করা গেলে মানুুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না, জ¦ালানি খরচ হ্রাস পাবে, সেই সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় অনেকাংশে কমে আসবে। স্টার্টআপ তরুণদের উদ্যোক্তাদের অনেকেরই ব্যবসায়িক কার্যালয় নেই, এমতাবস্থায় তরুণ উদ্যোক্তারা যেন সহজ শর্তে ট্রেড লাইসেন্স পেতে পারেন এ বিষয়টি বিবেচনার জন্য সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে’-এর কার্যক্রম পুরোমাত্রায় চালু হলে, সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ফি-সহ অন্যান্য সব সেবা অনলাইনে গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ডিসিসিআইতে একটি সপ্তাহব্যাপী ‘রেভিনিউ ক্যাম্প’ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, যার মাধ্যমে বিশেষ করে ডিসিসিআই’র সদস্যরা ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম সহজেই সেখানে সম্পন্ন করতে পারেন।
মেয়র জানান, কোনো কর বৃদ্ধি না করেই দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত অর্থবছরে ৮৭৯ কোটি টাকার রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় করেছে। তিনি আরও বলেন, ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য ঢাকাকে একটি আদর্শ ‘স্মাট সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শহরের যানজট নিরসন ও পরিবহন চালাচলে শৃঙ্খলা আনয়নে শিগগিরই ‘আইওটি’ ভিত্তিক ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান), সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পর্ষদের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বীমা খাতের উন্নয়নে মানুষের আস্থার সংকট কাটানো এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য উদ্যোক্তাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। গতকাল বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বীমা খাত বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বীমা খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ খাতে আস্থাহীনতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই অবস্থান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। মানুষের মধ্যে বীমা বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পাল্টাতে এই খাতের সংশ্লিষ্ট সবার সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘বীমা খাতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনো আমরা সেসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারিনি। দীর্ঘমেয়াদে ভালো করতে তরুণ শিক্ষার্থীদের এই খাতে সম্পৃক্ত করে তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’
এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি এম এ মোমেন বলেন, ‘সময়ের পরিবর্তন হলেও বীমা খাত সনাতন প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়ে গেছে। এই খাতের আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি।’ এসময় আকর্ষণীয় পণ্য ও সেবা নিয়ে আসার মাধ্যমে নতুন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার পরামর্শ দেন তিনি।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রস্তাবগুলো লিখিতভাবে উপস্থাপন করলে এফবিসিসিআই সেগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানান এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী।
বীমা খাতের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ এ.কে.এম. মনিরুল হক। বীমা খাতের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় এ খাতের সব অংশীজনদের সহযোগিতা চান সাবেক সাংসদ ও কমিটির চেয়ারম্যান ফরিদুন্নাহার লাইলী।
এফবিসিসিআইর মহাসচিব ও জীবন বীমা করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, এই খাতের অটোমেশন করা গেলে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর বহুলাংশে সমাধান হবে।
এসময় এফবিসিসিআই’র পরিচালক বিজয় কুমার কেজরিওয়াল, হাফেজ হারুন, কমিটির কো-চেয়ারম্যান মজিবুল ইসলান, ইসহাক আলি খান পান্না, জালালুল আজিমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক পর্ষদের ৩৫৪তম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মোহাম্মদ ইউনুছ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের চেয়ারম্যান পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। একই সভায় মহিউদ্দিন আহমেদ পরিচালক পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান পুনর্নির্বাচিত এবং আব্দুল করিম (নাজিম) ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
পুনর্নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ১৯৫৮ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ইউনুছ তিন দশক কাগজ, আইটি, ইন্স্যুরেন্স, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাগ্রো সেক্টর, বস্ত্র ও হিমাগার শিল্প-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। তিনি সোবহান আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ লি., ইউনুছ কোল্ড স্টোরেজ, অনন্ত পেপার মিলসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
পুনর্নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ চার দশক যাবৎ ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মহিউদ্দিন আহমেদ রূপসা ট্রেডিং করপোরেশন এবং মহিউদ্দিন অটো হাউজের স্বত্বাধিকারী। অপর ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল করিম (নাজিম) তিন দশক যুক্তরাজ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ বিডির চেয়ারম্যান। বিজ্ঞপ্তি
দেশের রপ্তানি আয়ের বেশিরভাগই আসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার বাজার থেকে। বিশেষ করে এসব অঞ্চলে পোশাকের রপ্তানিই সবচেয়ে বেশি। ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি প্রতি মাসেই বাড়ছে। কিন্তু বিপরীতে রাশিয়া ও চীনের বাজারের রপ্তানি আয়ে প্রতি মাসেই পিছু হটছে বাংলাদেশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে রপ্তানি পণ্যের প্রধান প্রধান বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মাত্র চারটি বাজারে মোট রপ্তানি আয়ের ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি, ৪৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ বাজার থেকেই আয় হয় ১২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার, যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এরপরের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের, এ বাজার থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আসে মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশ। এ দুই অঞ্চলের পরই রপ্তানি সবচেয়ে বেশি আসে জাপান ও কানাডা থেকে। জাপান থেকে আসে ৯১ কোটি ডলার, যেখানে প্রবৃদ্ধি ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। কানাডা থেকে ৮৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার রপ্তানি আয় এসেছে। সব মিলিয়ে এসব বাজার থেকে মোট ১৯ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে।
তবে এক সময় রপ্তানি আশা জাগিয়েও পিছুটান দিয়েছে চীন ও রাশিয়ার বাজারে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাশিয়াতে ১৯ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে দেশটি থেকে রপ্তানি আয় ছিল ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ দেশটিতে গত বছরের তুলনায় ৪৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ কম হয়েছে। এ সময়ে রাশিয়াতে রপ্তানিকৃত প্রধান প্রধান পণ্য হলো নিটওয়্যার থেকে এসেছে ১১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার, ওভেন গার্মেন্টস ৬ কোটি ৪৮ লাখ ডলার এবং হোম টেক্সটাইল শূন্য দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার, ক্রাস্টেসিয়ানস ৩৩ লাখ ডলার, পাট ও পাটজাত পণ্য ৬৯ লাখ ডলার।
রাশিয়ার মতো একই পথে চীনের বাজারও। এ সময়ে চীনে ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে দেশটি থেকে রপ্তানি আয় ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ কম।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপ-আমেরিকার প্রধান বাজারগুলো ছাড়াও অপ্রচলিত কিছু বাজারে জায়গা করে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। অপ্রচলিত বাজারে দেশের পোশাক রপ্তানি চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াতে ৩১ কোটি ডলার, হংকংয়ে ৭ কোটি ৫৭ লাখ ডলার, ইউএইতে ৩৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, ব্রাজিলে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, সৌদি আরবে ১৬ কোটি ২৯ লাখ, মেক্সিকোতে ২০ কোটি, মালয়েশিয়ায় ১৯ কোটি ৮৯ লাখ, সিঙ্গাপুরে ৯ কোটি এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬ কোটি ৯২ ডলারের পণ্য সামগ্রী রপ্তানি হয়েছে।
এ ছাড়াও নরওয়ে, চিলি, সুইজারল্যান্ড, ইরান, পাকিস্তান, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি দেশে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে। এসব দেশে রপ্তানিকৃত প্রধান প্রধান পণ্যসমূহ হলোÑ তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, টেরিটাওয়েল, কটন ও কটন পণ্য, ম্যানমেড ফিলামেন্টস ও স্টেপল ফাইবার, চামড়া-চামড়াজাত পণ্য ও ফুটওয়্যার, কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য, কার্পেট, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ, ক্রাস্টেসিয়ানস, শাকসবজি ও আলু, ফলমূল, শুকনা খাবার, গুঁড়ো মসলা, রাবার, তামাক, প্লাস্টিক-মেলামাইন দ্রব্যাদি, হ্যান্ডিক্রাফট, সিরামিক টেবিলওয়্যার, ফার্মাসিউটিক্যালস, বাইসাইকেল, জাহাজ, কপারওয়্যার, লোহার পাত, ফার্নিচার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ও গলফ শ্যাফট।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
ত্রাসবুর্গের মাঠে তাদের বিপক্ষে ড্র করে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের শিরোপা নিশ্চিত করেছে পিএসজি। তাই সময়টা এখন তাদের উৎসবের। সময়টা উপভোগ করতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন পিএসজি গোলরক্ষক সার্জিও রিকো। কিন্তু সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন তিনি।
বর্তমান রিকোকে ইনটেনসিভ কেয়ারে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। পিএসজির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘রিকোর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ পরে ক্লাব থেকে জানানো হয়, তার প্রিয়জনদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
লিগ ওয়ান শিরোপা নিষ্পত্তি হওয়ার পর প্যারিসে ছুটি না কাটিয়ে নিজ দেশ স্পেনের সেভিয়ায় ফিরে যান রিকো। সেখানেই দুর্ঘটনার শিকার হোন তিনি।
স্পেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সী রিকো স্পেনের হুয়েলভা অঞ্চলের এল রোসিওতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দৌড়ে থাকা আরেকটি ঘোড়ার সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হোন তিনি। রিকোকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সেভিয়ার এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় হেলিকপ্টারে করে।
সেভিয়ার সাবেক এই গোলরক্ষক ২০২০ সালে পিএসজিতে যোগ দেন। তার আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ধারে কাটান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ফুলহামে। পিএসজির হয়ে রিকো ২৯ ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেভিয়া থেকে চলে যান তিনি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।